এক রক্তিম আলো পর্ব -০৯

#এক_রক্তিম_আলো
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৯

অবনি কান্না করে বললো ‘ ধ্রুব ভাইয়া আমাকে প্লিজ বিশ্বাস করো আমি গু’লি করিনি।’
অবনি চোখ বন্ধ করে এই গুলো বলতেছে হঠাৎ কেউ এসে অবনিকে বললো ‘ কি হয়েছে তোর?
ধ্রুবের কন্ঠ স্বর শুনে অবনি চোখ খুলে অবাক হয়ে মনে মনে বললো ‘ এইগুলো তাহলে ভ্রম ছিলো?

ধ্রুব ভ্রু কুচকে অবনিকে বললো ‘ কি বিরবির করছিস? আর তোর কি হয়েছে?

অবনি শ্বাস নিয়ে বললো ‘ কিছু হয়নি। ভালো লাগছে না।’

ধ্রুব তখন প্রশ্ন চাহনিতে বললো ‘ কেনো? চোখ মুখে চিন্তার ছাপ কেনো তোর? কি হয়েছে সত্যি বল?

অবনি হাসার চেষ্টা করে বললো ‘ কি হবে কিছু না। তুমি না একটু বেশিই ভাবছো।’

ধ্রুব অবনির হাত ধরে বললো ‘ তুই আজ একবারো আমার রুমে গেলি না কেনো?

ধ্রুবের কথায় অবনি তখন মুচকি হেসে বললো ‘ আরে আমার সেন্টি জামাই বুঝি আমাকে মিস করছিলো?

ধ্রুব কেশে বললো ‘ না মানে সারাক্ষণ তো আমার পিছনে ঘুর ঘুর করিস তাই আজ তোকে দেখলাম না তাই বললাম। এতে অন্য দিকে নেওয়ার কিছু নেই।’

অবনি হেসে বললো
‘ আমি খাই সুজি সব কিছুই বুঝি।’

অবনির কথায় ধ্রুব রেগে মেগে রুম থেকে চলে গেলো। ধ্রুবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অবনি মাথায় হাত দিয়ে বললো ‘ যা বাবা এ আবার রেগে গেলো কেনো, এই বলে অবনি ধ্রুবের পিছু পিছু নিচে আসলো। অবনি ড্রয়িং রুমে এসে আশেপাশে তাকিয়ে অবনির মাকে খুজতে লাগলো। অবনিকে কিছু একটা খুজতে দেখে ধ্রুবের মা ভ্রু কুচকে বললো ‘ কাকে খুজতেছিস অবনি?

অবনি তখন বললো ‘ মা কোথায়?
ধ্রুবের মা বললো ‘ রুমে আছে।’
অবনি চিন্তিত কন্ঠে বললো ‘ এই সময়?
এই বলে অবনি দ্রুততার সঙ্গে অবনির মায়ের রুমের সামনে আসতেই ভিতর থেকে শুনতে পেলো রাহির মা কাউকে ফোনে বলতেছে ‘ ভালো ভাবে কাজ করো। সব যেনো ঠিক হয়ে যায়।’
অবনি কথাটা শুনে কিছুটা অবাক হলো। অবনি দরজায় টোকা দিয়ে বললো ‘ মা ঠিক আছো তুমি?

অবনির কথা শুনে অবনির মা ফোন রেখে দরজা খুলে অবনিকে বললো ‘ তুই এইখানে কেনো? ওও বুঝেছি তুই দরজায় কান পেতে আমার কথা শুনতেছিস তাই না?
মুখ বাকা করে বললো রাহির মা।

অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ আমি তোমাদের মতো নয় বিনা অনুমতিতে অন্যর রুম সার্চ করা। তোমাকে নিচে দেখতে ছিলাম না ভাবলাম তোমার হয়তো কিছু হয়েছে সেই জন্য দেখতে আসছি।’

অবনি কথা শুনে রাহির মা অবনির মুখে থা’প্প’ড় দিতে যাবে তার আগেই অবনি হাতটা ধরে নরম কন্ঠে বললো ‘ মা হও তুমি আমার তাই তোমাকে কিছু বলছি না। যেদিন সহ‍্য করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবো সেই দিন বুঝবে আমি কি জিনিস।’
এই বলে অবনি ওইখান থেকে চলে গেলো। অবনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রাহির মা পৈশাচিক হাসি দিলো। অবনি নিজের রুমে এসে ফোন হাতে নিয়ে আনিসুল আহমেদ কে কল দিয়ে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো ‘ স‍্যার অনেক বড় চক্র চলছে আমাদের সাথে যেটা খুব তাড়াতাড়ি শেষ করতে হবে।’

আনিসুল আহমেদ বললো ‘ এইবার তাহলে তুমি শক্ত হয়েছো?

অবনি দীর্ঘ শ্বাস আড়াল করে বললো ‘ স‍্যার আপনি তো জানেন আমি কেমন মেয়ে।

আনিসুল আহমেদ মুচকি হেসে বললো ‘ সেই জন্যই তো তোমাকে এতো বিশ্বাস করি।

অবনি হেসে বললো ‘ হুম স‍্যার। কালকে দেখা হবে।’
আনিসুল আহমেদ আচ্ছা বলে কল কেটে দিলো। অবনি মুচকি হেসে বললো ‘ খেলা তো সবে শুরু।’

ধ্রুব অবনির রুমে এসে বললো ‘ কোন খেলার কথা বলছিস?

অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
‘ কোন খেলার কথা বলছো?

ধ্রুব তখন কিছুটা অবাক হয়ে বললো ‘ এই মাত্র শুনলাম তুই বলছিস যে খেলার কথা।’

অবনি দুষ্টু হেসে বললো ‘ তোমার মাথায় কি সব সময় খেলার কথা ঘুরে নাকি?

ধ্রুব অবনির দিকে বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললো ‘ না!তুই অন্য দিকে নিয়ে যাচ্ছিস কেনো?

অবনি তখন বললো ‘ আচ্ছা শুনো? ধ্রুব বললো ‘ হুম বল? অবনি প্রশ্ন চাহনিতে বললো ‘ রাহি কোথায় যানো?

ধ্রুব শান্ত কন্ঠ বললো
‘ রাহি দুই দিনের জন্য ইতালি গেছে বলে জরুরি কাজ আছে সেই জন্য।’

অবনি অবাক হয়ে বললো ‘ সিরিয়াসলি?
ধ্রুব ভ্রু কুচকে বললো ‘ হ‍্যাঁ কাকি তো সেটাই বললো। অবনি বিরবির করে বললো ‘ অংকটা কোনো ভাবেই মিলতেছে না।
অবনি এই বলে আবার নিচে গেলো।

পরের দিন
অবনি অফিসে এসে নিজের কেবিনে বসে কিছু ফাইল দেখতেছিলো হঠাৎ আনিসুল আহমেদ কে দেখে বললো ‘ স‍্যার বসেন।’

আনিসুল আহমেদ চেয়ারে বসে বললো ‘ কোনো তথ্য পেয়েছো?
অবনি শক্ত কন্ঠে বললো ‘ স‍্যার রাহির উপরে যখন বন্ধুক তাক করি ঠিক তখনই আমাদের পিছনে বাক্সের আড়ালে কেউ ছিলো আই এম শিউর।’

আনিসুল আহমেদ কিছুটা অবাক হয়ে বললো ‘ তুমি কিভাবে এতোটা নিশ্চিত হয়ে বলছো?

অবনি স্বাভাবিক কন্ঠে বললো ‘ স‍্যার রাহিকে যখন গু’লি করা হয় তখন আমার হঠাৎ পিছনে চোখ পরতেই দেখি কারো ছায়া।’

আনিসুল আহমেদ মুচকি হেসে বললো ‘ কার ছায়া তা দেখোনি?

অবনি থমথমে গলায় বললো ‘ না স‍্যার।’
আনিসুল আহমেদ হেসে বললো ‘ দেখেছো তো অবশ্যই? তোমার মতো বুদ্ধিমান সি আইডি অফিসার কার ছায়া এইটা দেখবে না এইটা হতে পারে নাকি?
অবনি চুপ করে রইলো। আনিসুল আহমেদ বললো
‘ ওইটা একটা মহিলা বা মেয়ের ছায়া ছিলো।’

আনিসুল আহমেদের কথায় অবনি অবাক হয়ে গেলো। আনিসুল আহমেদ অবনিকে অবাক হতে দেখে হেসে দিলো। তারপর গম্ভীর মুখ করে বললো ‘ তুমি যাওয়ার পর আমি ডাক্তারের কাছে রাহির লাশ দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু ওনি বলে লাশ এখন দেখানো যাবে না ব‍্যাপারটা হাস‍্যকর না?

অবনি তখন বলে উঠলো ‘ স‍্যার রাহিকে আমরা দ্রুত হসপিটালে নিয়ে গিয়েছি। ওর তো বেঁচে যাওয়ার কথা। আমার মনে হয় ডাক্তারটা মিথ্যা বলেছে আমাদেরকে।’

আনিসুল আহমেদ গম্ভীর কন্ঠে বললো ‘ হ‍্যাঁ। কিন্তু আমাদেরকে আর্থিক আহমদের বাড়িতে যেতে হবে।’

অবনি তখন বললো ‘ আচ্ছা স‍্যার।’ তারপর আনিসুল আহমেদ আর অবনি আর্থিক আহমদের বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলো।

কিছুক্ষন পর
অবনি আর আনিসুল আহমেদ আর্থিক আহমদের বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অবনি কলিং বেলে বাজানোর কিছুক্ষণ পরেই আর্থিক আহমদের স্ত্রী অনিতা দরজা খুলে দিলো। অনিতা ওদেরকে দেখে অবাক হয়ে বললো ‘ আপনারা এইখানে কেনো এখন?

অবনি গম্ভীর কন্ঠে বললো
‘ আপনাদের থেকে আর্থিক আহমদের বিষয়ে জানার আছে সেই জন্য আমরা এসেছি।’

অনিতা বললো ‘ ভিতরে আসুন আপনারা।’ অনিতার কথায় অবনিরা ভিতরে এসে সোফায় বসলো। আনিসুল আহমেদ অবনিকে বললো ‘ আপনার শ্বশুর শাশুড়ি কোথায়?

অনিতা বললো ‘ ওনারা রুমে আছে আমি ডেকে দিচ্ছি।’ এই বলে অনিতা তার শ্বশুর শাশুড়িকে ডেকে আনলো। অবনি শান্ত কন্ঠে বললো ‘ আন্টি আপনার ছেলে কি বিজনেসের পাশাপাশি অন্য কিছু কাজ করতো?

আর্থিকের মা ভিতু কন্ঠে বললো ‘ আপনারা এই তদন্ত বাদ দিন না। আমি চাই না আর কোনো বিপদ আমার পরিবারে হোক।’

অবনি স্বাভাবিক কন্ঠে বললো ‘ এইটা আমাদের কাজ। আপনি ভয় না পেয়ে আমাদেরকে বলেন।’

আর্থিকের মা অনিতার দিকে তাকিয়ে বললো ” ও একটা অনৈতিক কাজে যুক্ত ছিলো। ও যেইদিন মা’রা যায় তার দুইদিন আগে আমাদেরকে বলে।’

অবনি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বললো,,

#চলবে…
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। আমি রহস্য গুলো তাড়াতাড়ি বলে দিচ্ছি। যাইহোক পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ‍্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here