#একগুচ্ছ রক্তজবা
#লেখিকাঃ সাদিয়া সিদ্দিক মিম
#পর্বঃ১৩
“এভাবে নিজেকে নিজে কষ্ট দিলে হবে না ভাইয়া।তকে বউমনির কাছে যেতে হবে,ক্ষমা চেয়ে তাকে ফিরিয়ে আনতে হবে।”
সাদাফের হাত ব্যান্ডেজ করতে করতে কথাটা বলে উঠে সুজন।আর সাদাফ পাথরের মত নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
সকালে সুজন সাদাফকে খুঁজতে খুঁজতে ছাদে এসে দেখে সাদাফ রক্তাক্ত অবস্থায় ফ্লোরে পড়ে আছে।তারপর সাদাফকে রুমে নিয়ে এসে মুখে পানি ছিটানোর পরই জ্ঞান ফিরে আসে।
সাদাফ কিছু বলছে না তার জন্য সুজন আবারও বলে উঠে।
“ভাইয়া এভাবে চুপ করে থাকিস না,কিছু ত বল।”
সাদাফ এবার নিচু স্বরে বলে উঠে,,,
“আমাকে কী সাবিহা ক্ষমা করবে!”
সাদাফের এই একটা কথাতে সুজন খুব খুশি হয়।এটা ভেবে যে সাদাফ বুঝতে পেরেছে যে সে ভুল করেছে।সুজন খুশি হয়েই বলে।
“তুই গতকাল যা করেছিস তাতে মনে হয় না এত সহজে ক্ষমা করবে।কারন একবার বউমনি তকে ক্ষমা করে ঠকেছে,তাই আমার মনে হয় এবার এত সহজে তকে ক্ষমা করবে না।”
“তবে আমি এখন কী এভাবেই আজীবন অপরাধ বোধে ভুগব!”
“ভাইয়া তুই এখনই এত ভেঙ্গে পড়িস না,আমার কথা শোন তুই আজ বউমনির কাছে যা।তারপর বউমনির সাথে কথা বলে দেখ কী হয়!”
“সাবিহা যদি আমাকে অপমান করে!”
“দেখ ভাইয়া এত যদি যদি করবি না,রাগ লাগছে এবার আমার।তুই কী কম অপমান করেছিস বউমনিকে!”
সাদাফ মাথা নেড়ে বুঝায় সে অনেক অপমান করেছে সাবিহাকে।এবার সুজন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠে।
“ত এসব অপমান বোধ টোধ সাইডে রাখ.আর মনে একটা কথা গেঁথে রাখ বউমনির কাছে তকে ক্ষমা চাইতে হবে এবং বউমনিকে এই বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে হবে।সেটা যেভাবেই হোক তকে কাজটা করতেই হবে,বুঝতে পেরেছিস!”
“হুম।”
“আচ্ছা এবার আমি আসি ভার্সিটিতে যাব।”
কথাটা বলেই সুজন ফাস্টএইড বক্স নিয়ে চলে যায়।আর সাদাফ হাতের ব্যান্ডেজের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে।
“আমার জন্য তুমি এই বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছো।তুমি কথা বলতে পারো না তার জন্য বোবা বলে অপমান করেছি,গতকাল ভুল বুঝে গায়ে হাত তুলেছি।খুব কষ্ট দিয়েছি তোমাকে,এবার আমিই তোমার সব কষ্ট দূর করব।আমি যাব তোমার কাছে,তোমাকে ফিরিয়ে আনতে যাব আমি।তার জন্য আমাকে যা করা দরকার সেসব করব।”
_____________________________________
ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে মিসেস রোজা বসে আছে।অথচ কেউ এখন অবধি খাওয়ার জন্য নিচে আসল না।উনি এবার খাবার গুলো ঢাকনা দিয়ে ঢেকে নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
মিসেস রোজা রুমে এসে দেখে উনার স্বামী ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।উনি পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে শুনতে পায় আনোয়ার হোসেন ফোনে বলছেন।
“বন্ধু আমি বুঝতে পারি নি রে আমার ছেলে যে এতটা নিচ মনের।মেয়েটাকে বড্ড বেশি কষ্ট দিয়ে ফেলেছে সাদাফ,আর তোর পরিবারের সবাই যে বড্ড বেশি কষ্ট পেয়েছে সেটাও আমি বুঝতে পারছি।তবে তুই চিন্তা করিস না আমি সব ঠিক করে দিব।তুই আমাকে কয়টা দিন সময় দে,সব ঠিক করে দিব।”
“আমি কিছু ঠিক করতে চাই না,তোর কথা বিশ্বাস করে আমার কলিজার টুকরা মেয়েটাকে তোর বাড়ির বউ করে পাঠিয়েছি।এই ভেবে যে আমার মেয়েটা বিয়ের পর একটু সুখে থাকবে।কিন্তু তোর ছেলে যা করেছে তাতে আমার মেয়ে আগের থেকে বেশি কষ্টে আছে।মেয়েটার মুখের দিকে তাকালেই খুব কষ্ট হচ্ছে আমার,নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।আমাকে ক্ষমা করিস আমি তোর কথা রাখতে পারব না।আমি উকিলের সাথে আজ কথা বলব,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ডিভোর্স পেপার রেডি করে আমার মেয়েকে একটু শান্তি দিব।ভালো থাকিস,রাখি এখন।”
কথাটা বলেই সাবিহার বাবা ফোনটা কেটে দেয়,আর আনোয়ার হোসেন ফোনটা ডিল মেরে ফেলে দেয়।আনোয়ার হোসেনের এমন কাজে মিসেস রোজা এগিয়ে যায় আর বলে উঠে।
“কী করছো এসব!কী হয়েছে তোমার,এমন করছো কেন?”
আনোয়ার হোসেন হাতটা ছাড়িয়ে রেগে বলে উঠেন।
“ছাড়ো আমাকে,ভালো লাগছে না আমার।আজ তোমার ছেলের জন্য সব নষ্ট হয়ে গেলো।আমার এত বছরের বন্ধুর সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার পথে।শখ করে মেয়েটাকে বাড়ির বউ করে এনে মেয়ের আসনে বসিয়েছি আর তার সাথে তোমার ছেলে এসব কী করল!লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার।আর মেয়েটার জন্য বড্ড কষ্ট হচ্ছে,কয়দিনেই মেয়েটা মনের ভিতর অনেকটা জায়গা দখল করে ফেলেছিল।আর কী করল তোমার ছেলে এটা!”
মিসেস রোজা এবার মুখে আঁচল চেপে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠে।কাঁদতে কাঁদতেই বলে উঠে,,,
“একা কী তুমি কষ্ট পাচ্ছো!আমার কী কষ্ট হচ্ছে না!আর আমার ছেলে যা করেছে তার জন্য আমি কখনও ওকে ক্ষমা করব না।”
কথাটা বলেই মিসেস রোজা রুম থেকে বেরিয়ে যায়।রুম থেকে বেরোনোর সময় দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে আছে রুমের বাইরে।উনি কাব্যকে ক্রস করে চলে যায়,আর কাব্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আনোয়ার হোসেনের সামনে গিয়ে হাতের ক্যামেরাটা এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে।
“ফুপা এটা রেখে গেলাম এতে কালকের ভিডিওটা আছে,তুমি নষ্ট করে দিও।”
আনোয়ার হোসেন পিছন ফিরে কাব্যর দিকে তাকিয়ে বলে।
“এটা তুমি নিয়ে যাও কাব্য,আর তোমার দায়িত্ব তুমি পালন করো আমার কোন সমস্যা নেই।”
“না ফুপা আমি এটা করতে পারব না,আমি আসি।”
“এটা যখন করতে পারবেই না তবে গতকাল এসব করার কী খুব দরকার ছিল!”
কাব্য থেমে যায় আর বলে উঠে।
“হ্যাঁ দরকার ছিল কারন এমনটা না করলে সাদাফ নিজের ভুলটা বুঝতে পারত না।সাদাফ এভাবেই সাবিহাকে কষ্ট দিয়ে যেত,আর যেটা একদমই ঠিক হত না।”
“তবে এখন তুমি তোমার অফিসে কী জবাব দিবে?”
“আমি মেনেজ করে নিব,এখন আসি।”
“কই যাবে!”
“সাবিহার সাথে দেখা করতে,কাল আমার একটা মিথ্যার জন্য অনেক কষ্ট পেয়েছে মেয়েটা।ত আজ অর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইব।”
আনোয়ার হোসেন এবার কাব্যর কাছে এসে মাথায় হাত দিয়ে আদুরে স্বরে বলে।
“তোমার মত যদি আমার ছেলেটা হত তবে আজ এমন দিন দেখতে হত না আমাকে।”
আনোয়ার হোসেনের কথায় কাব্য মুচকি হেঁসে চলে যায় রুম থেকে।
______________________________________
আমি আর ভাইয়া একটা কফি-শপে বসে আছি।সকালে ভাইয়া আমাকে নিয়ে মর্নিং ওয়াকে বের হয়েছে।আর এখন আধা ঘন্টা ধরে এই কফিশপে এনে বসিয়ে রেখে কথার ঝুলি খুলে বসেছে।কথা বলছে আর খিলখিলিয়ে হেঁসে চলেছে।আমি বুঝতে পারছি ভাইয়া আমার মন ভালো করার জন্য এসব করছে।সত্যি ভাগ্য করে এমন বড় ভাই পেয়েছি,আমিও মুচকি হেঁসে ভাইয়ার কথা শুনে চলেছি।
উপরে মুচকি হাসলেও ভিতরটা জ্বলে যাচ্ছে,যত ভুলার চেষ্টা করছি ততই মনে পড়ছে পুরনো ক্ষত গুলো।বেশ কিছুক্ষণ এভাবে বসে থাকার পর ভাইয়া হঠাৎ করেই বলে উঠে,,,
“এবার বাড়িতে চল,কলেজে যেতে হবে ত।সময় হয়ে যাচ্ছে তোর কলেজের।”
ভাইয়ার কথায় আমি চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়াই তখন ভাইয়া বলে।
“তুই বাইরে গিয়ে দাড়া আমি বিল দিয়ে আসছি।”
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালে ভাইয়া চলে যায় বিল দিতে।আর আমিও বাইরে এসে দাঁড়াই।
অন্যদিকে সাদাফ বাইকে করে সাবিহাদের বাড়িতেই যাচ্ছিল তখন দেখে সাবিহার মত একজন মেয়ে কফিশপের সামনে দাঁড়িয়ে আছে।শিয়োর হওয়ার জন্য সাদাফ বাইকটা আরেকটু সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।আর দেখে সাবিহাই দাঁড়িয়ে আছে,সাবিহাকে দেখে সাদাফের ঠোঁটের কোনে হাসিঁ ফুটে উঠে।বাইকটা এক সাইডে রেখে সাবিহার দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ায়।
ভাইয়ার জন্য দাঁড়িয়ে আছি তখন কেউ একজন আমার সামনে এসে দাঁড়ায়।আমি মাথা তুলে যাকে দেখি তাকে দেখার জন্য আমি মোটেও প্রস্তত ছিলাম না।
#চলবে,,,