একমুঠো সুপ্ত বাসনা পর্ব ২০+২১+২২

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
|পর্বঃ ২০+২১|

শিল্পিবানুর সাথে কিচেনে রুটি সেঁকছে ইয়ানা। মাত্রই শিল্পীবানু আপা এসেছে। তিনিও অবাকই হয়েছেন ইয়ানাদের এতো জলদি ফিরে আসতে দেখে। তাই সকাল সকাল ইয়ানাকে হেল্প করতে চলে এসেছেন। শিল্পী আপা মানুষ হিসেবে একদম সলিড। খুব মিশুক চিত্তের। তার সাথে কেউ কথা বলে অনায়াসেই মন ভালো হয়ে যায়। অন্যের মতামতের প্রতি বরাবরই যিনি শ্রদ্ধাশীল তিনিই শিল্পীবানু।
সকাল সকাল আনাজ হসপিটালে চলে গিয়েছে, ইয়ানাকে ঘুমন্ত অবস্থায় রেখে। ইয়ানার বিরক্তির কথা চিন্তা করে আর জাগানো হয় নি। তবে ইয়ানা ঘুম থেকে ওঠে পাশে আনাজকে না পেয়ে অস্থির হয়ে গিয়েছিলো। চটজলদি নিজের ফোনের নোটিফিকেশন চেইক করে দেখে আনাজ তাকে টেক্সট করেছে,

“তুমি ঘুমিয়ে আছো, বিরক্ত হবে তাই জাগাইনি। তোমাকে বলেছিলাম না? আমার আর্জেন্ট কাজ আছে? সেটা হচ্ছে, আজ দশটার দিকে একজন ক্যান্সারের পেশেন্টের অপারেশন আছে। খুবই রিস্কেবল একটা অপারেশন, তাই জলদি যেতে হয়েছে। আর হ্যা তুমি ঠিকঠাক ব্রেকফাস্ট করিও। আজকে ফিরতে লেট হতে পারে। আর ভয় লাগলে টেক্সট করবে কেমন? আমি এখানেই ব্রেকফাস্ট করেছি। খেয়াল রেখো।”

আনাজের টেক্সট দেখে কিঞ্চিৎ রাগ লাগে তার। তাই বলে সারাদিন একা থাকবে? তখনই শিল্পী আপাকে ফোন দিয়ে আসতে বলে সে। তারপর শিল্পী আপা আসলে তবেই নাস্তা বানাতে যায়।

–‘ তা আফা ব্যাপার কি? এতো জলদি কইরা চইলা আইলেন? আফনাগো সব ঠিকঠাক আছে তো? ‘

–‘জ্বি, সব ঠিকঠাক আপা, খালি আপনার ভাইয়ের একটু ইম্পর্ট্যান্ট কাজ আছে, বুঝেনই তো। ব্যস্ত মানুষ উনি’

–‘হো, তা বুঝবার পারতাছি। তয়, আফনের দুইদিন সিলেটে ঘুইরা কেমন লাগতাছে?’

–‘বেশ লেগেছে। সিলেটে আমাদের কোনো রিলেটিভ না থাকায়, যাওয়া হয় নি। তবে, মানুষের কাছে শুনেছি খুব সুন্দর। এখন আমি নিজেই দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারছি না!’

–‘হে হে আয়না আফার ব্যাডা আফনার কদরে কোনো কমতি রাখে নাই ধইরা নিলাম’

হাসতে হাসতে রুটি বানাচ্ছেন শিল্পী। ইয়ানার আবার মনে পড়ে যায় গত পরশুর কথা। আনাজের বিষ্ময়কর কীর্তি কলাপের কথা। শিল্পী আপা দেদারসে হেসে চললেও মুখের হাসিটা নিমিষেই গায়েব হয়ে যায় ইয়ানার। তার চিন্তিত মুখশ্রীর পানে দৃষ্টিপাত করেন শিল্পী। ইয়ানার বিষন্ন চাহনি দেখে বুঝতে পারেন কিছু একটা হয়েছে।

–‘আমার কেনো যেনো মনে হইতাছে, আফনের মনডা খুব খারাপ। কিছু একটা গরমিল তো বাঁধছেই। কি হইছে আফনাগো মধ্যে, কইয়া ফেলান’

–‘ওই আসলে না আপা হয়েছে কি, আনাজ সিলেটে রিসোর্টে ওঠার পর থেকে কেমন যেনো, ওভার রিয়্যাক্ট করছে। সব সময় তার কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। নিজেই বিড়বিড়িয়ে কি কি সব বলেন। তবে, আমায় দেখলেই স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেন। আমি বুঝতে পারি। তবে উনি ঠিক কি কারণে এরকম করছেন, তা আমার জানা নেই’

–‘আপনি তারে জিগান নাই? ‘

–‘ সম্ভব হয় নি! আমি এই প্রসঙ্গ তুলতেই হয় সে বাহানা বানায় নতুবা ছুটে পালায়, কোনো হালেই ব্যাপারটা বলতে চায় না সে।’

–‘আমার মনে হয়, আয়না আফার ব্যাডাগো জিনে ধরছে!’

শিল্পী আপার এমন যুক্তিহীন কথা শুনে ম্লান মুখে একটা মেকি হাসি দেয় ইয়ানা। তবে কোনো প্রতুত্তর দেয় না।

—————————-
নাস্তা বানানো শেষ হলে ডাইনিং টেবিলে নাস্তা করতে বসে পড়ে ইয়ানা আর শিল্পীবানু। জমিয়ে গল্প করতে করতে নাস্তা সারছে তারা। এমন সময় ফোনের রিংটোনের আওয়াজ কানে বাড়ি খেতেই চট করে রুমের বেডের কাছে ছুটে যায় সে। মোবাইলটা তুলে নিয়ে দেখতেই, সেটার স্ক্রিনে ভেসে ওঠে আয়নার নম্বর। তৎক্ষনাৎ তুলে রিসিভ করে নেয় সে। ফোনের ওপাশ থেকে আওয়াজ আসে,

–‘ ইয়ানা মা, তোমরা ঠিক আছো? ‘

–‘আসসালামু আলাইকুম মা, জ্বি আমরা ঠিক আছে। টেনশান নিয়েন না ‘

–‘ যাক, আলহামদুলিল্লাহ। কখন ঘুম থেকে উঠলে? আনাজ কি করে? ‘

-‘মা আমি মাত্রই নাস্তা করলাম। আনাজের ওই যে আর্জেন্ট ডিল ছিলো তাই, সকাল সকাল না খেয়ে বেড়িয়ে গিয়েছে।বলল বাহিরে নাকি খেয়ে নিবে।’

–‘হ্যা, তুমি নতুন তো তাই হয়তোবা জানো না। আনাজ আগেও মাঝে মাঝে এমন করতো। যেদিন সকাল সকাল অপারেশন থাকতো, সেদিন না খেয়ে বেড়িয়ে পড়তো। ওকে হাজারটা জোর করলেও বাসায় খাওয়াতে পারতাম না। ওই হসপিটালে একটা ক্যানটিন আছে। যেটা শুধুমাত্র তাদের মতো ডক্টরদের ট্রিট করে, সেখানে খেয়ে নিতো।’

–‘ওহ আচ্ছা। তবে উনি যে এতো হাইজিন মেইনটেইন করে চলে, ক্যানটিনের খাবার কতটুকুই বা হেলদি মা আপনিই বলুন? ‘

–‘একদম পাক্কা বউমার মতো খেয়াল রাখছো দেখি আমার ছেলের? (রম্যের সুরে)
তবে, ওই বললাম না, ওরা প্রপারলি হাইজিন মেইনটেইন করে যেহেতু শুধু ডক্টরদেরই জন্য তাই। শুধু খাবার স্বাস্থ্যকর কি-না, তা যাচাই করার জন্যই একজন ব্যাক্তি থাকেন…

–‘ওহ আচ্ছা, বুঝেছি। মা ওই শিল্পী আপাকে ডেকেছি। আমার সাথে আছেন, ভালো লাগছে।

–‘আচ্ছা, একদম ঠিক করেছো। আর হ্যা আমরা কয়দিনের মাঝেই ঢাকায় ব্যাক করছি,ওয়ারি নট। তোমাদের ও তো একটু প্রাইভেসি দরকার নাকি? তাই আরকি…

গলা খাকারি দিয়ে ওঠেন আয়না। আয়নার কথায় কিছুটা লজ্জা পেয়ে যায় ইয়ানা। পরক্ষনেই কথা শেষ করে শিল্পী আপার কাছে চলে যায়। যেতেই দেখে, শিল্পী আপা না খেয়ে তার জন্য অপেক্ষাকৃত।

–‘আরে আপা, আপনি আমার জন্য ওয়েট করতে গেলেন কেনো? খেতে শুরু করতেন’

–‘আফনারে ছাড়া আবার খাওন যায়? এডি কোনো কথা হইলো? ‘

–‘ হা হা আচ্ছা শুরু করেন’
সহাস্যে টেবিলে বসে পড়ে ইয়ানা।

———————————
রাত সাড়ে দশটা বাজতে চলেছে। আনাজের ফেরার কোনো নামগন্ধ নেই। ব্যালকোনিটায় ফোন হাতে অনবরত পায়চারি করে যাচ্ছে ইয়ানা। অনেকবার ফোনেও ট্রাই করেছে বাট, আনাজ রিসিভ করে নি। শিল্পী আপা ও অনেক আগেই বাসায় চলে গেছেন। ইয়ানার সেভাবে একা থাকার অভ্যেস নেই। তাও আবার রাতে। মনের মধ্যে কেমন যেনো অস্বস্তি কাজ করছে। অস্থিরতায় মাথা ছিড়ে যাওয়ার উপক্রম!
কিছুক্ষণ পরে টুংটাং আওয়াজে ডোরবেলটা বেজে উঠলেই আৎকে ওঠে সে। দৌড়ে গেটের কাছে ছুটে যায়। দরজার মাঝ অংশে থাকা ছোট গ্লাসটা দিয়ে দেখতেই দেখে আনাজ এসেছে। তপ্তশ্বাস ফেলে সে।গেটটা খুলে আনাজের দিকে দৃষ্টিপাত করে। আনাজের বিষন্ন মুখভঙ্গি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। আনাজ হুড়মুড়িয়ে ভেতরে ঢুকেই ইয়ানাকে নিজের বক্ষপিঞ্জরের সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে ধরে। আনাজের কান্ডে থমকে যায় ইয়ানা। সারা শরীরে শীতলতার পরশ একে দিয়ে যায়। আনাজ তাকে শক্তপোক্ত করে জড়িয়ে ধরে দ্রুত নিঃশ্বাস নিয়েই চলছে। ইয়ানার ঘাড়ের কাছে আনাজের তপ্তশ্বাসগুলো আছড়ে পড়ছে বারংবার। খানিকটা শিউরে ওঠে ইয়ানা। পরে নিজের হাতগুলো দিয়ে আনাজের পিঠ ছুঁইয়ে দেয়।

–‘কি হয়েছে আনাজ? আপনি ঠিক আছেন? ‘

–‘ ওই পেশেন্টটাকে আমি বাঁচাতে পারলাম না ইয়ানা! আমার সামনেই কষ্টে কাতরাতে কাতরাতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো!’

আনাজের কথায় মন খারাপ হয়ে যায় ইয়ানার। তার চাহনিতে স্তব্ধতা বিরাজমান।

–‘আসলে অনেক চেষ্টা করেছি বাঁচানোর কিন্তু রোগটা খুব বিরল ছিলো্। যেটা আমরা ধরতে পারিনি!’

–‘ আমি বুঝতে পারছি আনাজ। আপনি শান্ত হন। দেখুন একটা বলতে চাই। আপনি একটা ডক্টর বলেই আপনার কাছে সবার জন্ম মৃত্যুর শক্তি থাকবে না। এসব একান্তই সৃষ্টিকর্তার উপর নির্ভরশীল। এমনও হতে পারে, লোকটির আয়ুই এতোদিন ছিলো। মোরেভার, আপনি একটা ডাক্তার। এভাবে পেশেন্টের মৃত্যুতে শোকাভিভূত হয়ে পড়লে চলবে না।’

ইয়ানার কথায় খানিকটা শান্ত হয় আনাজ। তবে, মুখে বিষন্নতার ছাপটা এটেসেটে লেগে থাকে। একটুখানি প্রশান্তির জন্য শাওয়ার নিতে যায় সে্। ইয়ানা আনাজের জন্য পানি নিয়ে আসে দেখে, সে শাওয়ার নিতে চলে গেছে। কাবার্ডের উপর গ্লাসটা রাখতেই আনাজের ভাইব্রেশন দেওয়া ফোন ভো ভো শব্দর করে কেপে ওঠে । চোখ তুলে ফোনের দিকে তাকিয়েই দেখে….
#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ২২

গ্লাসের পর গ্লাস পানি খেয়েই যাচ্ছে আনাজ। তার অস্থির মনটা শান্ত হতে চাচ্ছে না কিছু তেই। চোখগুলো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। তাকে দেখে স্তব্ধ বেশে দাড়িয়ে আছে ইয়ানা। আনাজের ব্যবহার ঠিক বোধগম্য হচ্ছে না তার। এমনিতেই আনাজ কোনো কারণে ডিপ্রেসড ছিলো, আবার পেশেন্টের আকষ্মিক মৃত্যুতে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে সে।

–‘দেখুন আনাজ, বি পজিটিভ। আপনাকে বলেছি না? আপনি একটা ডাক্তার। একটা পেশেন্টের মৃত্যু নতুন কিছু নয়।তাই বলে এভাবে ভেঙে পড়লে তো চলবে না তাই না?’

–(…….নিশ্চুপ)

–‘আর লোকটি কষ্ট পাচ্ছিলো, কষ্টে কুপোকাত না হয়ে যখন মৃত্যুই হলো, ব্যাপারটা ভালো নয় কি? ‘

–‘জানিনা’
চিন্তিত সুরে আনাজ বলে।

–‘আমাকে কাইন্ডলি একা থাকতে দাও প্লিজ? ‘

–‘বাট, আপনি রাতে কিছুই খাননি। ক্ষুধা লাগছে না? ‘

–‘নাহ, লিভ মি এলোন ‘

–‘বাট….

–‘আমি বলেছি না??? এতোটাও জরুরি নয় তোমার কথা শোনা! ‘
উচ্চস্বরে ধমক দিয়ে বলে আনাজ। থেমে যায় ইয়ানা। একটা শুকনো ঢোক গিলে চলে যায় সেখান থেকে। সেদিকে দৃষ্টি নেই আনাজের। ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে সংযত চেষ্টায় আবদ্ধ।

বড় বড় পা ফেলে রুমের দিকে চলে যায় ইয়ানা। চোখের কার্নিশে নোনাজল জমা হয়েছে। কিছুক্ষণ এর মধ্যেই উপচে পড়বে। কাদতে চাইছে না ইয়ানা। তবুও মনের কোথায় যেনো আনাজের প্রতি অভিমান আর ক্রোধ জমা হয়ে আছে, আনাজের প্রতি।
বারবার কিছু একটা তাঁকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ‘নিলয়ের সাথে থাকলে আজ এই কষ্টটা পেতে হতো না!’
কষ্টের বাঁধ ভেদ করে অশ্রুজলগুলো বেড়িয়ে পড়তে থাকে। কেনো যেনো কষ্ট হচ্ছে তার, খুব কষ্ট। আপনমনে কেঁদে চলছে ইয়ানার। আনাজের করা ব্যবহার নিতে পারেনি সে। বেডের এক সাইডে বসে চোখের জল মুছছে সে। খানিকবাদেই কারো উষ্ণ পরশ অনুভব করে। চটজলদি অশ্রুসিক্ত নয়ন মুছে দেওয়ার প্রয়াস চালায়। বুঝতে বেগ পেতে হয়নি, আনাজের বাহুডোরে আবদ্ধ সে!
তার পাগলাটে চুলগুলো আনাজ সরিয়ে কানে গুঁজে দেয়। কপালে কপালে অধরজোড়া ছুঁইয়ে দিয়ে ভালেবাসার স্নিগ্ধ পরশ একে দেয়। আনাজের এমন স্পর্শে পাথর হয়ে আছে ইয়ানা।

–‘আ’ম সরি ইয়ানা! তখন তোমার সাথে রুড বিহেভিয়ার করা মোটেও ঠিক হয় নি আমার। আমি এর জন্য অনুতপ্ত! ‘

আনাজ ইয়ানার কানের কাছে ফিসফিসালো কন্ঠে বলে।অবাকের দৃষ্টি দেয় ইয়ানা। আনাজের মুখপানে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে আছে। অন্ধকার রুমের আবছা আলোয় অন্যরকম সুদর্শন লাগছে আনাজকে।

–‘আপনি খুব খারাপ আনাজ! নিলয় আমার সাথে কখোনই এমন করে নি। আপনি ভালোবাসা জিনিসটা একদম বোঝেন না। যখন যা ইচ্ছে হয় সেরকম বিহেভ করেন।’

ম্লান হাসি দেয় আনাজ।

–‘ঠিকই বলেছো। ভালোবাসা মানে কিছুই বুঝিনা। নাহলে তোমাকে এভাবে রাগিয়ে দিতাম না।’

তাচ্ছিল্যের হাসি হাসে আনাজ। ভরকে যায় ইয়ানা। তাকে বুকের সাথে চেপে ধরে আবার পাগলের ন্যায় হাসতে থাকে আনাজ। ইয়ানা খানিকটা বিষম খেয়ে যায়। আনাজ এরকম আচরণ কেনো করছে? তখনও ফোনে আননোন নম্বরে কার সাথে যেনো কথা বললো! ইয়ানা ছিলো বলেই ব্যালকোনি তে চলে গিয়েছিলো।
ইয়ানাও ঠিক ধরতে পারছে না। আনাজের হঠাৎ কি হলো। চুপচাপ আনাজের হৃদ মাঝারে নিষ্পলক চাহনিতে স্তব্ধ হয়ে থাকে সে।

চলবে,
[পাবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here