এক্সিডেন্টলি প্রেম পর্ব ৩৫

#এক্সিডেন্টলি_প্রেম♥
#পার্ট-৩৫♥
#Ayanaa_Jahan(Nusraat)♥

বর্ষনের বেগ পূর্বের তুলনায় কমে এসেছে অনেকটা। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির আমেজে মাখোমাখো গাছ-গাছালি প্রকৃতির হিমেল হাওয়ায় গা ভাসিয়ে চলেছে অবলীলায়। পুলের পানিগুলোতে তরঙ্গের বিচরণে ঢেউ খেলানো অবয়বের খেলা চলছে মাঝথেকে। এই হিমশীতল হাওয়ায় প্রকৃতির মনমাতানো সৌরভে একজোড়া ডিবডিবে হৃদপিন্ড থেকে থেকেই কেঁপে উঠছে৷ উঠানামা শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুততর বেগে ছুটছে তাদের!

নিশান্তের মনে হাজার হাজার প্রশ্নের ফুলঝুরি। পরিস্ফুটিত কলির ন্যায় প্রশ্নগুলো উপচে পড়তে চাইছে তার। তবু নিজের অশান্ত মনটাকে শান্ত রাখবার কঠিনতম খেলায় অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে তাকে। অন্বিতার মায়াভরা মুখটা বড্ড বাঁধ সাজতে পারে যেকোনো কাজেই। হুটহাট মলিনতায় মাখা মুখে যেভাবে হাসি ফুটিয়ে তোলার মতো অসম্ভব ক্ষমতা রাখে তেমনই নিজের স্নিগ্ধতায় ভরা চাহনিতে থমকে ফেলে হাজারো প্রাণ। নিশান্ত অন্বিতার ভেঁজা চুলগুলো কানের পিঠে গুঁজে দিলো। গায়ের সাথে লেপ্টে থাকা অন্বিতার দু’বাহু ধরে ছাড়িয়ে নেবার চেষ্টা চালালো। অন্বিতা বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে আবারও জড়িয়ে ধরলো তাকে। নিশান্তক্র ঝাপটে ধরেই পড়ে রইলো তার বুকে। এই বৃষ্টি ভেজা রাতে ভালোবাসার মানুষটির বুকেই যে তার সর্বাঙ্গের ভালোলাগা। যেনো ছেড়ে দিলেই পালিয়ে যাবে দূর থেকে বহুদূর! সেই সুযোগ বুঝি প্রাণ থাকতে দেওয়া চলে? উহুম! একদম না।

নিশান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেললো! অন্বিতাকে এই মুহুর্তে স্বপ্ন বৈ কিছুই লাগছে না তার। যার বিয়ে হয়ে এতোক্ষণে বিদায়ও হয়ে যাওয়ার কথা ছিলো সে কী করে ফিরবে? সে তো জোরগলায় বলেই দিয়েছিল নিশান্তের কাছে ফিরবে না আর, নতুন ঠিকানাতেই পাড়ি জমাবে সে। যেই ঠিকানার কোনো কোণায় না থাকবে নিশান্ত, আর না থাকবে তার সাথে পরিচয়ের কিছু আলোকপাত! নিশান্তের বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ভাবনার মাঝেই তার বুক থেকে মাথা উঠাল অন্বিতা। বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা তাকে নিজের চাদরে মুড়িয়ে চলেছে নিঃসংকোচে! কাঁপাকাঁপা ওষ্ঠদ্বয়ে জমেছে বিন্দু বিন্দু জল। বৃষ্টির ছিটেফোঁটায় চোখদুটো যথাসম্ভব খুলবার চেষ্টা চালালো সে। নিশান্ত বিস্ময় মাখা চোখে চেয়ে আছে সেই তখন থেকে। তার অবিশ্বাস্য ভঙ্গিমায় মৃদু হাসলো অন্বিতা। নিশান্ত আবারও একরাশ চমক নিয়ে কেঁপে উঠলো। কুঁচকে রাখা ভ্রু আরো অধিক পরিমাণে কুঁচকিয়ে ডান হাতটা অন্বিতার গালে আলতো করে স্পর্শ করালো। অন্বিতা উদ্বীগ্ন চোখে চেয়ে সেই হাতের ওপর হাত ছোঁয়াতেই একপ্রকার ছিঁটকে কয়েকধাপ পেছনে সড়ে এলো নিশান্ত। অন্বিতা ভ্রু কুঁচকালো। ভ্রু নাচিয়ে হাতের ইশারায় “কী হলো?” বোঝাতেই নিজের হাতে নিজেই সজোরে চিমটে কেটে বসলো নিশান্ত। ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠতেই বুঝলো এটা আদৌ কোনো স্বপ্ন নয়। এতো কঠিন বাস্তব! সে ভুল দেখছেনা! অন্বিতা তার সামনে, তার মিথ্যে কোনো কল্পনা নয়!

অন্বিতা ঠোঁট উল্টালো। আবার চোখ-মুখ কুঁচকে প্রশ্ন ছুড়লো,

—– কী? আমি ফিরে এসেছি তাতে বুঝি আপনার ফিউচার প্লানিং এ এক বালতি গবর ঢালা হয়ে গেলো?

নিশান্ত বিস্ময়মাখা চোখ অস্ফুটস্বরে বলল,

—– তুই! মানে আপনি! এখানে কিভাবে?

—– যাক বাবা! এতোক্ষণ যাবৎ এসে যে আপনাকে নিজের অস্তিত্ব বুঝিয়ে চলেছি, আপনি কী সবটা কল্পনা ভেবেছিলেন?

নিশান্ত মাথা চুলকালো। ভেজা চুলগুলো থেকে বিন্দু বিন্দু জল ছিটিয়ে বলল,

—– ইয়ে না মানে আপনার তো বিয়ে হয়ে যাবার কথা ছিলো এতোক্ষণে, আপনি এখন এখানে কিভাবে?

অন্বিতা দুষ্টু হাসি হাসলো। ঠোঁটের হাসির রেখা প্রসারিত করে বলল,

—– বিয়ে তো ভেঙে গেছে!

—– ভেঙে গিয়েছে! মানে?

অন্বিতা কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো সড়ালো। মিটিমিটি হাসতে হাসতে বললো,

—– ভেঙে গিয়েছে মানে ভেঙে গিয়েছে। এতে না বুঝার কি আছে? দেখুন! কোন ফ্যামিলিই বা চাইবে তাদের বাড়ির বউ নিজের হাজবেন্ডের বদলে অন্যকারো নাম মনে মনে জপ করুক? তেমনটা মি. শাহীনও চাননি। হাজার হোক ১০ টা নয় ৫ টা নয় একটি মাত্র বউ, তাও যদি অন্য কাউকে ভেতরে ভেতরে ভালোবেসে সংসার করে সেটা কী আদৌ মানতে পারবে কেউ?

—– কিন্তু তখন তো সবাই জেনে শুনেই বিয়ের কাজ আবারও শুরু করেছিলো। তাহলে?

অন্বিতা দু’ধাপ এগিয়ে এলো। নিজের বা হাতের অবতল পৃষ্ঠ নিশান্তের দিকে ঘুরিয়ে বলল,

—– কারণ তখন তারা এটা দেখেনি!

নিশান্ত চমকে উঠলো। অন্বিতার হাতের নিজের নাম লেখা মেহেন্দির অস্তিত্ব আবিষ্কার করে অবাক কন্ঠে বলল,

—– একি! আমার নাম আপনার হাতে কি করছে?

অন্বিতা দু-কাঁধ উঁচু করলো। ঠোঁট বাকিঁয়ে বলল,

—– সেটাই তো প্রশ্ন! আমার হাতে আপনার নাম এলো কী করে বলুন তো? আমি তো আপনার নাম হাতে লেখাতে বলিনি তবে পার্লারের মেয়েগুলো কি মনের ভেতরে ঢুকে আপনার নাম আবিষ্কার করে নিজ থেকেই লিখেছে নাকি? স্ট্রেইঞ্জ!

নিশান্ত ভ্রু কুঁচকালো। আহত কন্ঠে বলল,

—– তারমানে শুধুমাত্র ওরা বিয়ে ভেঙেছে বিধায় আপনি ফিরেছেন? নাহলে দিব্যি বিয়ে করে নিতেন তাইতো?

অন্বিতা ফিক করে হেসে ফেললো৷ নিশান্ত সেই হাসির অর্থ না বুঝার দরুন আবারও প্রশ্ন ছুড়ল,

—– কী হলো হাসছেন কেনো আপনি? জবাব দিন!

অন্বিতা আরো কিছুক্ষণ হেসে নিলো। পর মুহুর্তে হাসি থামিয়ে ছোট্ট করে শ্বাস ফেলে বলল,

—– মজা করছিলাম! আসলে কী জানেন তো, আপনাকে শুধুমাত্র বাজিয়ে দেখছিলাম আমি। সত্যি বলতে আমিই আপনার ছোট্টবেলার সেই বন্ধু তা জেনে আমার ঠিক কেমন রিয়াকশন হওয়া উচিত ছিলো তা জানা নেই আমার। স্তব্ধ হয়ে পড়েছিলাম! বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। আর যদি বলেন খুশি হয়েছি কিনা তবে বলবো আম্মুকে হারাবার পর বোধহয় এই প্রথম এতোটা খুশি হয়েছি আমি! কিন্তু আপনি আমায় যতোটা আঘাত দিয়েছেন তার বিন্দুমাত্রও ভোগ করবেন না তা কি করে হয়? সেই জন্যই একটু আধটু উপদ্রবের অনুভূতি আপনাকেও উপহার দিলাম আরকি!

নিশান্ত বিস্ফোরিত চোখে তাকালো। সেই ১৪ টা বছর ধরে তার প্রেয়সীকে পাগলের মতো খুঁজে বেরোনো, অতঃপর এই কয়েকমাসে হুট করেই এক এক্সিডেন্ট থেকে অন্বিতার সাথে পরিচয়! তারপর থেকেই অদ্ভুত সব অনুভূতি! প্রথম থেকে ঝগড়াঝাটি লেগে থাকলেও ধীরে ধীরে অনাকাঙ্ক্ষিত সব নাম না জানা অনুভূতির মায়াজালে পিষ্ট হওয়া! না চাইতেও মনের মাঝে সুপ্ত অন্বিতার অস্তিত্বের বিচরণ, ধীরে ধীরে দূর্বল হয়ে পড়া। অবশেষে একদিন হঠাৎ করেই অন্বিতার নিজের মনের কথা আওড়ে ফেলা! মনের বিরুদ্ধে গিয়ে অঙ্গীকার রক্ষার তাগিদে প্রত্যাখ্যান, পাওয়া না পাওয়ার অনিশ্চয়তায় বন্দী হয়ে অতঃপর দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত! সবটা বুঝি এতোটাই সহজ? প্রতিক্ষণ, প্রতিসেকেন্ড জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে চলা হৃদয় নিয়ে বাঁচাটা বুঝি খুবই সরল? এসব আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস ফেললো নিশান্ত। অন্বিতার দিকে স্থির দৃষ্টি ফেলে মৃদু হাসলো। ভেজা গলায় অস্ফুটস্বরে বলে উঠলো,

—– আমার কোনো কষ্ট হয়নি বলছেন মিস অন্বিতা?

নিশান্তের বলা এই ছোট্ট বাক্যটাই অন্বিতার হৃদয়ে তোলপাড় শুরু করার জন্য যথেষ্ট ছিলো। অন্বিতা জলসিক্ত নয়নে তাকালো। নিশান্তের কাছে গিয়ে হাতটা মুঠোয় নিয়ে বলল,

—– আমায় নতুন করে কিছু বলতে হবেনা নিশান্ত। আপনি চলে আসার পর আমি এই নিয়ে ভেবেছি! আর ভেবেছি বলেই ছুটে এসেছি হন্তদন্ত হয়ে। আমি হয়তো আমার জায়গা থেকে ঠিক, আমার জায়গায় যে কেউ থাকলে এমনটাই রিয়াক্ট করতো! তার কারণটাও আপনার অজানা নয়। কিন্তু আমরা মানুষেরা শুধুই নিজের দিকটাই ভাবতে অভ্যস্ত! নিজের কেমন লাগছে, বা নিজেদের যাতে ভালো লাগে এমন পরিস্থিতিই চেয়ে বসি আমরা। আমাদের বিপরীতে যে দাঁড়িয়ে আছে তার কথা ভাবিনা মোটেই। আমাদের ভাবনাগুলো না বড়ই অদ্ভুত! কেউ কখনোও অন্যের ব্যথায় ব্যথিত হতে পছন্দ করিনা আমরা। আর ঠিক এই ভাবনাচিন্তাগুলোই পাছে গিয়ে আফসোসর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আজ যদি আমি শুধু নিজের দিকটা ভাবতাম তবে নির্ঘাত তিন তিনটে জীবন ভেসে যেতো! সুখী হতে পারতাম না আমরা কেউই।

এটুকু বলে সামান্য বিরতি নিলো অন্বিতা। নিশান্তের বিস্ময়ে মাখা চাহনির দিকে স্থির দৃষ্টি ফেলে বললো,

—– আমি আপনাকে রাইয়ান নামে চিনতাম না মি. নিশান্ত। আমার স্মরণশক্তি যতোটুকু তার দ্বারা এই কয়েকমাসের পরিচয়েই সীমাবদ্ধ ছিলেন আপনি, আর আমিও অন্বিতা হয়েই পরিচিত ছিলাম আপনার কাছে। ভালোওবেসেছি এই আপনাকেই। কিন্তু আপনার ভালোবাসা বহুদিনের! কম করে হলেও ১৫ টা বছর ধরে আপনি আপনার ছোট বেলার বন্ধুকেই ভালোবাসেন। তার জায়গাটা অক্ষুণ্ণ রেখেই এতোদিন যাবৎ বেঁচে আছেন আপনি! এতোগুলো বছরেও সেই জায়গাটায় রাজত্ব করবার জো হয়ে উঠেনি কারোরই। আপনার জায়গায় অন্য কেউ থাকলে এরকম অনিশ্চয়তা নিয়ে কখনোই থেমে থাকতো না। অন্য কাউকে সেই জায়গাটায় বসাতে দুবার ভাবতো কিনা তাতেও সন্দেহ যেহেতু বন্ধুত্বটা ছিলো সেই ছোট্টবেলার। সত্যি বলতে আমিও হয়তো এতোদিন অপেক্ষা করতাম না। সানি এবং রিভান ভাইয়ার কাছে আপনার প্রেয়সীর কথা শুনে প্রথমত অনেক বড় একটা ধাক্কা লেগেছিল অবশ্য। খারাপ লেগেছিলো ভীষণ, তবে রাগ বা অভিমান কোনোটিই হয়নি! কারণ আপনি আপনার জায়গা থেকে ঠিক, নতুন কাউকে পাওয়া মাত্রই পুরোনো আবেগ অনুভূতি ত্যাগ করার মতো ভুল আপনি করেননি। যার কারণে অজান্তেই আপনার প্রতি সম্মানটা আরো কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছিল আমার! সাথে সেই অচেনা মেয়েটির প্রতি সামান্য হিংসেও হয়েছিল বটে! আমি ভাবতাম মেয়েটা কতোটা সৌভাগ্যবতী যে আপনার মতো একজন মানুষ তার প্রেমিক হয়েছে। অথচ তাকে দেখো, কোন যে জঙ্গলে ঘাপটি মেরে বসে আছে তার কোনো খোঁজই নেই! অদ্ভুত! জানেন মাঝে মাঝে ইচ্ছে হতো মেয়েটিকে সামনে পেলে একদম নাক বরাবর ঘুষি মেরে দেই যেনো! কী বিচ্ছু মেয়ে ভাবা যায়? নিজে তো দিব্যি কোনো এক অজানা রাজ্যে ঘুরে বেরোচ্ছে আর এদিকে শুধু আপনাকে নয় বরং আমাকেও দহনের আগুনে জ্বালিয়ে মারছে।

অন্বিতা জিহ্ব দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো। নিশান্তকে বটগাছের মোটা শেকড়গুলোর ওপর বসিয়ে নিজেও তার পাশে বসলো। নিশান্ত টলমল চোখে অন্বিতার ভেজা স্নিগ্ধ মুখশ্রীর দিকে তাকালো। অন্বিতা মুচকি হেসে আবারও বলতে শুরু করলো,

—— তবে একটা দারুণ ব্যাপারও আছে বটে! আপনি যে না চাইতেও আমার প্রতি দূর্বল হয়ে পড়েছেন তাও কিন্তু উপলব্ধি করতে পেরেছি আমি। সেটা অবশ্য খুব সম্প্রতি জানতে পেরেছি। লোকে বলে “চোখের ভাষাই প্রকৃত ভাষা” আর এই প্রকৃত ভাষাটা বেশ ভালোই পড়তে জানি আমি। এইযে আজ আমার বিয়ের পূর্ব মুহুর্তে আপনি যখন আমার পায়ে পায়েল পড়িয়ে দিলেন তখন আপনার চোখে একবুক ভরা হাহাকার সাথে লুকোনো একগুচ্ছ ভালোবাসার মোহ দেখেছি আমি। তবে আপনি যেদিন আমায় প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সেদিন কিন্তু আপনার চোখে ভালোবাসা ছিলোনা। ছিলো একরাশ মায়া কিংবা সহানুভূতি! দুটি ভিন্ন সময়ে দুই ধরণের রূপের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম আপনার। আপনি না চাইতেও আমায় নিজের মনে জায়গা দিয়ে ফেলেছিলেন নিশান্ত। হয়তো নিজেই বুঝতে পারেননি, তাই তো পালাতে ভিনদেশে পাড়ি জমাতে চেয়েছিলেন! এখন প্রশ্ন জাগছে একটা মানুষ একই সঙ্গে দু দুটো মানুষকে কিভাবে ভালোবাসে? প্রথমত আমিই আপনার ছোট্টবেলার বন্ধু যা আমি বা আপনি কেউই জানতাম না, এবং দ্বিতীয়ত আমিই আপনার পরবর্তী দূর্বলতা৷ অদ্ভুত ভাবে দুবারই আপনি একই মানুষের প্রেমে পড়েছেন। আমার স্মরণশক্তি অনুযায়ী প্রেমটা জীবনে প্রথম হলেও সেই আপনারই প্রেমে পড়েছি আমি! যদিও এক্সিডেন্টলিই প্রেমে পড়েছি আমি আপনার! তবু ব্যাপারটা কিন্তু মোটেও কাকতালীয় নয়, সব কিছু ওপর থেকেই ফিক্সড করা ছিলো! নাহলে নির্ঘাত বিদেশ যাওয়া থেকে এবং কয়েক সেকেন্ডের মাঝে অন্য কারো বউ হয়ে যাওয়া থেকে কি নিয়তির মোড় ঘুরতে পারতো? সাক্ষাৎ মিরাকল ছাড়া কিন্তু আমাদের এক হওয়া কখনোই সম্ভব ছিলোনা “রাই ভাইয়া ওরফে মিস্টার নিশান্ত!”

নিশান্ত তীক্ষ্ণ শ্বাস ফেললো। চোখ দুটো বুজে নিয়ে দীর্ঘ শীতল শ্বাস টানলো। হাত-পা উত্তেজনায় রীতিমতো থরথর করে কাঁপছে তার। আজ শুধু তার ভালোবাসাকে নয় বরং পুরো পৃথিবীটাকেই যেনো নিজের করে পেয়েছে সে। এতোদিনের সুপ্ত অনুভূতি, বুকভরা আবেগ, ভালোবাসার আপ্লুত জোয়ার! সব যেনো আজ শত প্রতিক্ষারই ফসল! নিশান্ত অন্বিতার গলা জড়িয়ে ধরে ঘনঘন শ্বাস ফেলতে শুরু করলো। বৃষ্টির বিন্দু বিন্দু ফোঁটায় ঠান্ডা শিহরণ ছেয়ে গেলো দুটি হৃদয়েই! অন্বিতাও পরম আবেশে নিশান্তকে জড়িয়ে ধরলো। দিন শেষে প্রাপ্তির আনন্দটা যে এতো সুখকর হতে পারে তা কারোরই হয়তো জানা ছিলো না।
বেশ খানিকটা সময় একই ভাবে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে নেবার পর দুজন দুজনকে ছেড়ে বসলো। আড়চোখে একে-অপরের দিকে তাকাতেই ফিক করে হেসে ফেললো দুজনেই। অন্বিতার গালের সেই মনোমুগ্ধকর টোলে আবারও মোহিত হলো নিশান্ত। অন্বিতা মুগ্ধ হলো নিশান্তের স্নিগ্ধতায় ঘেরা ঘন পল্লব বেষ্টিত চোখদুটোর মাতাল করা চাহনিতে। নিশান্ত অন্বিতার কপালে কপাল ঠেকিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো, চোখ দুটো বুজে নিয়ে বলল,

—— আজ আমি পরিপূর্ণ অন্বিতা! সাচ্ছন্দ্যে বাঁচতে আর কিছু চাইনা আমার! কিচ্ছুটি না! জানিস যখন আমি খুব তারাহুরো করে সময় বাঁচাতে খাবার খেতাম তখন আম্মু বকতো ভীষণ। আমায় বুঝিয়ে বলতো “ধৈর্য্য রেখে সব কাজ করতে হয় বাবুই, ধীরেসুস্থে না খেলে খাবারের স্বাদ আর তৃপ্তি কোনোটাই ঠিক পাওয়া হয়ে ওঠেনা।” আমি তখন মায়ের কথাটা তেমন গায়ে লাগাইনি। তবে একদিন ধীরেসুস্থে ৫ মিনিটের খাবার ১০ মিনিটে খেয়ে দেখেছিলাম। শুধু যে টেস্ট কিংবা তৃপ্তিই অধিক হারে পেয়েছি তা নয় বরং অল্পতেই পেট ভরে গিয়েছিলো আমার। আসলেই আম্মু ঠিকই বলতো, আজ তার আরো জোড়ালো ভাবে প্রমাণ পেলাম আমি! এতোগুলো বছর প্রতিক্ষার পর অবশেষে প্রাপ্তির আনন্দটা যে এতোটাই তীব্রতর হবে তা সত্যিই কল্পনার বাহিরে ছিলো আমার!

অন্বিতা প্রশান্তির হাসি হাসলো। দুষ্টুমির ছলে নিশান্তের ভেজা চুলগুলো পূর্বের তুলনায় আরো খানিকটা এলোমেলো করে দিয়ে শীতল কণ্ঠে বলল,

—– ভালোবাসি ভীষণ! আজ উত্তরটা পাবো তো?

নিশান্ত অন্বিতার ডান হাতটা নিজের দু’হাতের মুঠোয় নিয়ে আলতো করে চুমু খেলো৷ চোখ তুলে চেয়ে বলল,

—– এতোকিছুর পরও ম্যাডামের ভালোবাসি কিনা তার উত্তর চাই? অদ্ভুত! আমি তো জানতাম মিস অন্বিতা ওরফে আমার আয়ুপাখি মাল্টি ট্যালেল্টেড!

অন্বিতা ঠোঁট উল্টালো, উত্তর জানা হলেও নিশান্তের মুখ থেকে শুনবার ইচ্ছেটা নিতান্তই অদম্য বিধায় আবারও বলল,

—– হ্যাঁ! আপনার জানায় ভুল আছে, আমি বড্ড বোকা! এবার তো বলুন!

নিশান্ত ফিক করে হেসে ফেললো। অন্বিতার নাকটা টেনে দিয়ে বলল আহ্লাদী গলায় বলল,

—– ভালোবাসি পাগলিটা!

#চলবে_____________________

(ভুলত্রুটি মার্জনা করবেন! মন্তব্য করতে ভুলবেন না অবশ্যই!)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here