#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ১৩
.
সায়ান অফিসে এসে রিদিমা কে বাসার কথা গুলো বলল। রিদিমার মনে মনে রাগ হলেও খুব শান্ত ভাবে বলল, “আরে তাতে কি, নওশি জানতে চাইতেই পারে, তুমি শুধু শুধু…. ওর কাছে গিয়ে সরি বলবে”
“আচ্ছা ঠিক আছে, রিদিমা আমি তোমাকে ভীষণ ভালবাসি, ভীষণ!”
রিদিমার হাতের উপর হাত রেখে বলে সায়ান।
“হুম” বলেই মিষ্টি করে হাসে রিদিমা।
“আচ্ছা আমার প্রমোশন দেবে না তোমার অফিস? আমি কি কাজ ভালো করছি না?” পাল্টা প্রশ্ন করে রিদিমা।
“আরে হ্যাঁ অবশ্যই”
“আই লাভ ইউ সোওওও মাচ সায়ান”
খুশি হয়ে যায় রিদিমা।
দুইদিন পরে রিদিমাকে দেখতে গেলেন জাহরা, সাহরাফ, জয়, নিশিকা আর রায়ান।
রিদিমাকে বেশ পছন্দ হয় জাহরা আর সাওরাফ সাহেবের। বেশ গোছালো কথাবার্তা, হাসিখুশি, ট্যালেন্টেড মেয়ে।
রিদিমার বাবা মায়ের সাথে কথা হয় জাহরা আর সাহরাফ সাহেবের।
রিদিমার বাবা মা খুব ভাল আর সহজসরল মানুষ।
তাদের কথা এমন ছিল যে রিদিমার বিয়ে হলেও রিদিমার ছেলে অনিক তাদের কাছে থাকবে।
জাহরা আর সাহরাফ দুইজনেই বাঁধা দেন যে সেটা হবে না, অনিক তার মায়ের সাথেই থাকবে।
কিন্তু রিদিমার মা বলেন, অনিক রিদিমার চেয়ে তাদের কাছেই বেশি সময় কাটিয়েছে। তাই অনিক রিদিমাকে ছাড়া থাকতে পারলেও তারা অনিককে ছাড়া থাকতে পারবেন না।
অবশেষে রিদিমার বাবা মায়ের কথা মেনে নেন জাহরা আর সাহরাফ।
সবার সাথে কথা বলে ঠিক হয় এক মাসের মাঝেই বিয়ে হয়ে যাবে জয় আর নিশিকা অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার আগেই।
.
ভার্সিটিতে এসেই আজ সানজানাকে দেখতে পায় রায়ান। আরেকটা ছেলের সাথে কি যেন বলছিলো সে।
সানজানাকে দেখেই হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে আসে রায়ান।
“কি ব্যাপার রায়ান, কোথায় যাচ্ছিস, ছাড় আমাকে!”
“একদম চুপ থাকবি সানজু!”
রায়ানের কণ্ঠ শুনে ভয় পায় সানজানা। ভীষণ রেগে আছে রায়ান।
টানতে টানতে একটু নিরিবিলি জায়গায় সানজানাকে নিয়ে আসে রায়ান।
এসেই হাত ছেড়ে দিয়ে একটা চড় মারে সানজানাকে!!!
“কি ভেবেছিস তুই! কেন আসিসনি এতদিন? তুই জানিস আমি কতটা টেনশনে ছিলাম? মোবাইল অফ ছিল কেন তোর?”
রায়ান ঝোকের মাথায় ভুলেই গেছে সানজানার কোনো সমস্যা থাকতে পারে, যার জন্য সে আসেনি।
সানজানা এতটা অবাক কখনো হয়নি। মার খায়নি কখনো সে। গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।
“কি উত্তর দে কেন আসিস নি তুই? কি সমস্যা ছিল তোর, জানিস আমার কি কষ্ট হয়েছে এই কয়দিন?”
“কেন তোর কষ্ট হবে কেন?” বেশ জোরে বলে সানজানা।
“ভালবাসি তোকে তাই!!!”
বলেই রায়ান বুঝতে পারল সে সানজানাকে কি বলেছে। তাড়াতাড়ি ওখান থেকে চলে সোজা বাসায় চলে আসল।
সানজানা এখনো দাঁড়িয়ে আছে, বুঝতে পারছে না হাসবে নাকি কাঁদবে।
গাল ব্যথা হয়ে গেছে এক চড় খেয়েই, আবার এদিকে রায়ান তাকে ভালবাসে এটা অন্যসব কিছুর চেয়ে বড় আনন্দ তার কাছে।
ভেবেই সাথে সাথে কল দিল রায়ানকে।
রায়ান বুঝতে পারছে না ফোন রিসিভ করবে কিনা!
আজ সে সানজানাকে কিভাবে মারতে পারল! সে তো কখনো এতটা রাগেনা! তবে কি হলো! সানজানা তাকে ফেলে চলে যাবে হয়তো। খুব খারাপ লাগতে শুরু করল রায়ানের।
সানজানা বাধ্য হয়ে নওশির কাছে কল করল… নওশির সাথে পরিচয় আছে সানজানার।
সালাম দিয়ে নওশি জানতে চাইল সানজানা কেমন আছে,
“আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি রে আপু, তোমার ভাইয়ার কাছে একটু দরকার। ও তো ফোন ধরে না, ও কি বাসায় আছে?”
“হ্যাঁ আপু এসেছে কিছুক্ষণ হলো”
“ওর কাছে একটু নিয়ে যাও তো..”
“ওকে আপু”
নওশি গিয়ে দেখে তার ভাইয়ের হাতে মোবাইল আছে আর সে মোবাইলের দিকে তাকিয়েই আছে, কিন্তু ফোন কেন তুলছে কে জানে।
“ভাইয়া, সানজানা আপু… কথা বলো”
রায়ানের কাছে মোবাইল দিয়ে চলে গেল সানজানা।
“কিরে হাঁদারাম আমার ফোন তুলছিস না কেন!”
“কিছু বলবি?”
“আজ বিকালে আমার সাথে দেখা করবি, কোনো অজুহাত দিবি না। লোকেশন তোকে আমি টেক্সট করে দিচ্ছি, আল্লাহ হাফেজ।”
বলেই কেটে দেয় সানজানা। আজ অনেক দিন পর মন থেকে অনেক বেশি খুশি সে। খুব বেশি।
.
সাহরাফ সাহেব কলেজে আছেন। আজ নওশিকে নিয়ে বাড়িতে ফিরবেন তিনি।
আজ নওশির ভার্সিটিতে ডিবেট আর কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা আছে। নওশি অংশ নিবে।
আজ বসে বসে ছেলেমেয়েদের কথা ভাবছেন তিনি।
নিশিকা সুখে আছে এটা দেখে মন ভরে যায় সাহরাফ সাহেব। প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েকে ইসলামী নীতিমালা অনুসরণ করে বড় করেছেন তিনি আর জাহরা।
সবাই নামাজ আর কুরআনের বিষয়ে সতর্ক করেন সবসময়ই।
নওশির ভার্সিটিতে আসলেন। তিনিও যেহেতু একজন অধ্যক্ষ তাই অতিথি হিসেবেই তাকে অতিথিদের সাথে বসানো হলো…
যুদ্ধ বিষয়ক একটা কবিতা আবৃত্তি করছে নওশি…
“মা…
আমি তোমার খোকা
তুমি কাঁদছো? কেঁদো লক্ষ্মী মা আমার…”
কবিতাটি খুব সুন্দর করে আবৃত্তি করছে নওশি।
কখনো কাঁদোকাঁদো ভাবে, কখনো দৃঢ়স্বরে।
সাহরাফ সাহেবের ভীষণ ভাল লাগলো নওশির আবৃত্তি শুনে।
এরপর আরো কয়েকটি প্রোগ্রাম শেষে শুরু হল ডিবেট। তাদের বিতর্কের দলনেতা নওশি।
খুব সুচারুভাবে বিতর্কেও নিজের সফল চেষ্টা করে দেখালো নওশি।
সাহরাফ সাহেবের ধারণা সত্য করে দিয়ে নওশি কবিতাতে ফার্স্ট হলো, ডিবেটে শ্রেষ্ঠ বক্তা আর তার দল প্রথম হলো।
নওশির জন্য প্রচন্ড ভালো লাগা কাজ করতে লাগল সাহরাফ সাহেবের।
যেহেতু নওশির বাবা উপস্থিত ছিল তাই একটা পুরস্কার সাহরাফ সাহেবকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করল পুরস্কার বিতরণ কতৃপক্ষ।
বাবার হাত থেকে পুরস্কার নিতে গিয়ে নওশি যে কি আনন্দ হলো!
অন্য সবার মতো নওশিকে তার অনুভূতি সম্পর্কে কিছু বলতে বলা হলো…
“আমাদের জীবনে চলার শুরু এখান থেকেই, আমরা যা এখানে সংগ্রহ করছি সেটা আমাদের বাকিটা পথ চলার পাথেয় হয়ে থাকবে, আজ আমার অনুভূতি সম্পর্কে যদি বলি তবে বলতে হবে এটা আমার আনন্দের দিন গুলোর অন্যতম, আমার বাবার কাছে থেকে নিজের কৃত্বিতের পুরস্কার নেওয়া আমার ভাগ্য বলে মনে করি, ধন্যবাদ সবাইকে ধন্যবাদ আমার প্রতিষ্ঠানকে।”
এটুকু বলতেই চোখে পানি এসে গেল নওশির।
ভীষণ ভীষণ খুশি আজ নওশি।
নওশির দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছেন সাহরাফ।
মেয়েটা ছোট বেলা থেকেই সবদিক দিয়ে ভালো, হাতের লেখা, অংকন, আবৃত্তিতে সবসময়ই প্রথম হতো। আর লেখাপড়াতেও।
আজ তার মুখ উজ্জ্বল করেছে নওশি। সবাই সাহরাফ সাহেবের কাছে এসে প্রশংসা করছে নওশির। বাবামায়ের জীবনে অন্য সবার মুখে সন্তানের প্রশংসা শোনার চেয়ে আনন্দ আর কি হতে পারে!
.
সানজানার মেসেজের শব্দে ঘুম ভাঙলো রায়ানের। দ্রুত রেডি হয়ে ছুটলো সানজানার সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে..
.
(চলবে)