এখানে আকাশটা ভালোবাসার পর্ব ৩

#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ৩
.
সায়ান… সাহরাফ রহমানের বড় ছেলে, তার মতো হ্যান্ডসাম দেখতে।
সায়ানের মাঝে নওশির মতোই স্বভাবসুলভ চঞ্চলতা, দুই ভাই আর তিন বোন সবার বড় সে।
ছোট তিন বোন আর ভাইটা সায়ানের চোখের মনি, বিশেষত নওশি।
তবে তাই বলে নিশিকা, রায়ান আর রোশনির জন্য ভালবাসার কমতি নেই।
বারান্দায় বাবার কাছে থেকে ফিরে
রোশনির রুমের পাশে এসে সায়ান শুনতে পেল ওরা এখনো সেই চকলেট বক্স টা নিয়েই আছে!
হাতের বাকি চকলেট বক্সটা লুকিয়ে রুমে ঢুকে বলল,
“কি রে তোদের কি হলো রে? আমি আরেক বক্স চকলেট এনে দিব?”

ভাইকে একটু চোখের ইশারা করে নওশি বলল, “না ভাইয়া, রোশনিকে কেন দেবে, তুমি আমাকে দেবে, আমি তোমার বোন না?”

আদুরে রোশনি এবারে কেঁদেই ফেলল, “হ্যাঁ ভাইয়া তোর একার, আমার কেউ না, আমি কারোর না, যাহ তোরা সব চকলেট খা, আমি খাব না আমার চাই না”
বলেই চকলেট বক্সটা নওশির হাতেই দিয়ে রোশনি চলে যেতে নিলো…
অবস্থা বেগতিক বুঝে সায়ান তাড়াতাড়ি রোশনির হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলল,
“ধুর পাগলী, নে এটা তোর চকলেট বক্স।”

“এটা কি করে আসল? নাশু আপুর হাতে কার…??!!”
নওশি হাসতে হাসতে শেষ, আদর করে মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, “কিরে কাঁদুনি! তোর কান্না শেষ!?”
“আমি কাঁদুনি?”
“তো কি?”
“ভাইয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া”
সায়ান তাড়াতাড়ি বলল,
“আরে আল্লাহ রুশু সোনা তুই কাঁদুনি না তুই ভালো। নে এবার থাম সোনা।”

“হুম রুশু বুড়ি তুই ভালো।” বোনের কান্না থামাতে বলল নওশি।

আচ্ছা তোরা থাক বাবু, নওশির মাথায় হাত বুলিয়ে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াল সায়ান।
অফিসের অনেক কাজ বাকি।
এমবিএ করার পরই ব্যবসাটা হাতে নিয়েছে সে, দক্ষতার সাথে ব্যবসার পরিধি আরো বাড়িয়েছে। বাবা সারাজীবন প্রচন্ড পরিশ্রম করেছে
চাকরীটাই আপাতত করুক বাবা, ব্যবসা আমিই সামলাই। এটা ভেবেই বাবার ব্যবসা হাতে নিয়েছে সায়ান। ব্যবসার দিকটা সে খুব ভালো বুঝে।
কাল অফিসে নতুন একজন স্টাফ এপোয়েন্ট করার কথা রয়েছে।
অফিসে অনেক কর্মচারী থাকলেও সায়ান প্রত্যেকটা ব্যাপারেই বেশ সর্তক। নিজে সবদিক প্রত্যক্ষভাবে সামলাতে চেষ্টা করে।
কাল অনেক কাজ বাকি, নতুন প্রোজেক্টের প্রেজেন্টেশন এর জন্য এক ঝুড়ি কাজ, আবার ইন্টারভিউ বোর্ডে তাকে থাকতে হবে। ইন্টারভিউ নেওয়ার কাজটা অন্যদের দিয়ে চালিয়ে নেওয়া যেত কিন্তু নতুন দের সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত, নইলে তাদের গড়ে তোলা যাবে না বলে মনে করে সায়ান।
কালকের সবার সিভি গুলোতে আগেই একবার দেখে নেওয়া দরকার, কাজটা এগিয়ে থাকুক।
ভাবতে ভাবতে ল্যাপটপ এগিয়ে নিয়ে বসে যায় সায়ান।
.
.
“এই রায়ান? একটু দাঁড়া…”
রায়ানকে দেখতে পেয়ে ডাক দিলো সানজানা।
“কি ব্যাপার ডাকছিস কেন এভাবে?”
“কেন তোকে ডাকা যাবে না নাকি রে?”
“কথা প্যাঁচাচ্ছিস কেন, বল কি বলবি…”
“বাব্বাহ, এত তাড়া কিসের তোর? কোথায় যাবি? চল কোথাও বসে চা বা কফি খাই…”
“না রে সানজু আরেকদিন। তোর গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে, তুই চলে যা।”
বলেই চলে আসল রায়ান।

রায়ানের চলে যাওয়া দেখে সানজানা।
রায়ান কে খুব ভালো লাগে সানজানার, শুধু ভালো লাগা নয়, ভালবাসে খুব রায়ানকে…
“আম্মুজান বাসায় ফিরবেন না?”
“হ্যাঁ চলেন কাকু”
ড্রাইভারের পিছনে পিছনে গাড়িতে উঠল সানজানা।
বাড়ির প্রত্যেকের চোখের মনি সে, বাবা মা, ভাইয়া আর বাড়ির কাজের লোক গুলো পর্যন্ত প্রচন্ড স্নেহ করে তাকে।
বাবা একটু রাগী কিন্তু সেটা তার কাছে নয়।

গাড়িতে উঠেই সানজানার মনোযোগ আবার চলে গেছে রায়ান ভাবনায়।
“আমি তোমার বন্ধু হলে সেটা কি খুব বেমানান লাগবে?”
প্রথমে অবাক চোখে তাকিয়েছিল রায়ান, কিন্তু পরমূহুর্তেই মুচকি হেসে বলেছিল, “বেমানান লাগবে কিনা সেটা বন্ধু হওয়ার পরেই বলতে পারব”
“তাহলে বন্ধু হওয়ার পারমিশন পাওয়া গেল?”
“ফর্মালিটি ডোজ বেশি হয়ে যাচ্ছে না?”
এই ছিল তাদের সহপাঠী থেকে বন্ধু হয়ে পথ চলার শুরু।
আর এখন রায়ান ছাড়া কিছুই ভাবতে ইচ্ছে করে না সানজানার।
ছেলেটার মতো ভদ্র তাদের কেমিস্ট্রি ডিপার্টমেন্টে আর একটাও মিলবে কিনা সন্দেহ। খুব বেশি শান্ত স্বভাবের রায়ান অনেক ভাল স্টুডেন্ট, শুধু ভাল নয় একেবারে টপার।
সানজানার মনে আছে….
ওদের প্রাকটিক্যাল এক্সামের ভাইভা বোর্ডে টিচাররা অবাক হয়ে গিয়ে বলেছিল “Rayan, You have a photographic memory”
শুনতে পেয়ে অবাক হয়ে গিয়েছিল সানজানা।
সানজানাও অনেক ভাল স্টুডেন্ট, তাই প্রথম থেকেই রায়ানকে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবত, সেটা অবশ্য শুধুমাত্র পড়ার ক্ষেত্রে।
কিন্তু সানজানা দেখল ছেলেটা কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে না। পড়াশোনা করে নিজের নিয়মে।
সেদিন থেকে নিজে থেকেই রায়ানের সাথে বন্ধুত্ব করে নিয়েছে সে। ছেলেটা কথা কম বললেও মনটা খুব ভাল।
বড়লোক বাবামায়ের মেয়ে সানজানা। একভাই এক বোন ওরা।
এই পর্যন্ত ভালভাবে কাউকে বন্ধু ভাবার সুযোগ পাইনি ও। সবাই বন্ধু থেকে বেশি কিছু হওয়ার চেষ্টা করেছে। অধিকাংশের নজর ছিল সানজানার বাবার টাকা আর সানজানার নজর কাড়া চেহারাতে।
বিরক্ত লেগেছে ওর।
একমাত্র রায়ানই ব্যতিক্রম, গত দুই বছরের পরিচয়ে অভদ্রতা লেশ টুকু পায়নি সে। পাশাপাশি সানজানার সাথেও অন্য ছেলেদের মতো হ্যাংলামো করেনি সে।
প্রথম প্রথম সানজানা ভেবেছিল, রায়ান দাম্ভিকতা দেখিয়ে এড়িয়ে চলছে তকে। কিন্তু ভুল ভাঙতে বেশি সময় লাগেনি সানজানার।
পরিচয়ের একবছর পরেই ভাল লাগতে শুরু করে রায়ানকে। তারপর এটা ভাল লাগা নাকি ভালবাসা বুঝতে সময় লেগেছে আরো ছয় মাস। আর তখন থেকেই রায়ানের আশেপাশে থাকতে ইচ্ছে করে তার, ভালবেসে ফেলেছে রায়ানকে।
কি জানি ছেলেটা বোঝে কিনা… উফ! আমি যদি জানতে পারতাম!
“আম্মুজান এসে গিয়েছি”
ড্রাইভার কাকুর কথায় বাস্তবে ফিরে এলো সানজানা।
.
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here