এখানে আকাশটা ভালোবাসার পর্ব ৩০

#এখানে_আকাশটা_ভালবাসার
#লেখিকাঃ নয়নতারা নাতাশা
#পর্বঃ ৩০
.
“ভাইয়া তুমি কি মায়ার দিকে খেয়াল করেছ একটুও?”
“খেয়াল তো সবসময়ই করি। কিন্তু কেন কি হয়েছে মায়ার?” অধীর হয়ে প্রশ্ন করে সায়ান।
“ভাইয়া মায়া অনেক বেশি মন খারাপ করে থাকে…”
“কিন্তু কেন!”
“ভাইয়া ওর মনে মায়ের অভাববোধ আছে। সেটাই মনে হয় ওকে কষ্ট দিচ্ছে।”
“কিন্তু নাশু আমি তো চাইছিই ওকে সবটা দেওয়ার,
কিন্তু.. বুঝতে পারছি না কি করব!” মুষড়ে পড়ে সায়ান।
“শান্ত হও ভাইয়া” নরম কন্ঠে বলে নওশি।
“আমি মেয়েটার এই মানসিক অবস্থা সহ্য করতে পারছি না নওশি, আজ একটা ভুল আমার মেয়ের জীবনে এভাবে কষ্ট দিচ্ছে”
“ভাইয়া একটা কথা রাখবে?”
“কি?”
“তুমি আরেকটা বিয়ে কর…”
অবাক চোখে তাকায় সায়ান।
“কি বললি তুই! বিয়ে করব আমি! মাথা ঠিক আছে তোর!”
“ভাইয়া সারাজীবন এভাবে থাকা সম্ভব নয়, জীবনের কোনো একটা সময় তোমার মনে হবেই যে একটা শক্ত হাত তোমার খুব দরকার,
সময়ে অসময়ে যাকে আপন করে নিতে পারবে। আমি না বুঝে কিছু বলছি না ভাইয়া”
“আমি জানি নওশি কিন্তু দেখ আমি কারোর উপর বিশ্বাস করতে পারিনা। আর সব চেয়ে বড় কথা আমি আমার মায়াকে কোনো কষ্ট দিতে চাই না।
আর যে আসবে সে কি মায়াকে ভালবাসবে?
মায়া আর আমার মাঝে যদি দূরত্ব তৈরি হয়!…. নাহ অসম্ভব!” শেষ শব্দ দুটো জোরে বলে ওঠে সায়ান।
“ভাইয়া শান্ত হও! দেখ ভাইয়া তুমি জানো এইসব বিষয়ে আমি এমনি এমনি কখনো কথা বলিনা।
তোমাকে যে মেয়েটার কথা বলছি মেয়েটা আমার বান্ধবী।
আর আমার পছন্দে তোমার বিশ্বাস আছে কিনা জানিনা, তবে আমি যতদূর জানি তানহা খুব ভাল মেয়ে।
আর মায়ার কথা বলছ? মায়া কি এখন মায়ের অভাবটা বুঝতে পারছে না?
পারছে, অবশ্যই পারছে।
আর তুমি বিয়ের পর ও যদি একটা ভাল মা পায় তাতে কি সমস্যা? চেষ্টা কি করে দেখা যায় না? ভাইয়া…”
এমন সময় আরজু কান্না করে উঠতেই নওশি থেমে বলল,
“ভাইয়া আমি এক মিনিট আসছি”
নওশি আরজুকে মায়ার কাছে রেখে কিছুক্ষণ পর আবার আসল।
তাকিয়ে দেখল সায়ান বিছানা থেকে উঠে জানালার পাশে দাঁড়িয়েছে।
“ভাইয়া”
“বল বাবু”
“বাবুর মা হয়েও এখনো বাবু!” হেসে ফেলল নওশি।
“আজীবন বাবু ই থাকবি রে পাগলি”
এসব ভালবাসা গুলো খুব উপভোগ করে নওশি।
“ভাইয়া তুমি কি আমার কথাগুলো ভাবছ?”
“হুম”
নওশি বলল,
“ভাইয়া মায়া যদি আরেকটা ভাল মা পায় তবে ভাল, কিন্তু যদি ভাল মা না পায় তবে মায়ার দুর্ভাগ্য! কথা গুলো কঠিন শোনাচ্ছে খুব কিন্তু ভাইয়া এটাই বাস্তবতা।
হয়তো মায়ার এটা কাম্য ছিল না,
শুধু মায়া নয়, কারোরই কাম্য নয়।
আর ভাইয়া বাবা মা একসাথে পাওয়া একটা সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি!
কিন্তু বাস্তবতা সঙ্গ না দিলে কি করার বল!”
“বাবু দেখ আমি শুধু তোর উপরে ভরসা করতে পারি।
আমি নিজের ব্যাপারে ভাবি না কিন্তু মায়া আমার জান। তুই বল আমি কি করব!”
করুণ গলায় বলল সায়ান।
ভাইয়ের অসহায়তা দেখে কান্না উপচে পড়তে চাইল নওশির কিন্তু খুব কষ্টে নিজেকে সামলে নিল নওশি।
“ভাইয়া আমার উপর বিশ্বাস রাখো!
তুমি তানহার সাথে একদিন কথা বলো। আর হ্যাঁ তার আগে তুমি একটু ভাব, ভেবে বলো আমাকে।
জোর করে কোনো কিছুই করতে বলছি না আমি।”
.
রিদিমার আজ নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে।
বসে বসে আজকের ঘটনা গুলো ভাবছে সে।
অনিককে দেখতে গিয়েছিল সে।
মাতৃত্বের দাবি নিয়ে।
কিন্তু আজ!
রাব্বি তাকে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়ে অথচ শান্ত ভাবে।
“কেন এসেছ তুমি?”
“আমি একটু আমার ছেলেকে দেখব”
“সরি! কার ছেলে? আর কে ছেলে?”
“আমি একটু অনিককে দেখব, আমি অনিকের মা!” অধীর হয়ে বলে রিদিমা।
“সুমি…”
চমকে উঠে রিদিমা। রাব্বির স্ত্রী এই সময় অফিসে যায় সেটা জেনেই এসেছিলো সে।
“হ্যাঁ বলো”
রিদিমা চোখ তুলতে পারছে না।
ধীরে ধীরে চোখ তুলে তাকাল।
“পরিচয় করিয়ে দিই, এটা রিদিমা…. আর মিসেস সরি মিস… অহ তুমি মিস নাকি মিসেস জানিনা… এটা আমার স্ত্রী সুমি” তাচ্ছিল্য মেশানো কন্ঠে কথা গুলো বলে রাব্বি।
সুমিকে রাব্বি আগেই বলেছিল রিদিমার সম্পর্কে,
আর এটাও বলেছে কোনো না কোনো সময় রিদিমা আসবেই তার ছেলেকে দেখতে। রিদিমার ভুল ভাঙবেই।
তাই নিজের স্বামীর প্রাক্তনকে দেখে খুব বেশি বিচলিত হলো না সুমি।
“ওহ আচ্ছা আপনিই রিদিমা”
“রাব্বি আমি আমার ছেলেকে দেখেই চলে যাব”
“সেটা তো আপনি বাইরে থেকেও দেখতে পারতেন!”
“প্লিজ আমি রাব্বির সাথে কথা বলছি”
প্রচন্ড রাগ হলো সুমির।
“এক্সকিউজ মি! রাব্বি আমার স্বামী আর যাকে ছেলে ছেলে করছেন সে আমার ছেলে, জাস্ট মাইন্ড ইট!”
থমকে গেল রিদিমা।
আর তখনই ঘরে ঢুকলো অনিক।
“আমার মামনিটা কোথায়?”
“এইতো বাবা, চল খাবার দেই তোকে” বলে অনিককে তাড়াতাড়ি নিয়ে গেল সুমি।
‘কত বড় হয়ে গেছে ছেলেটা’ আপন মনেই বলে রিদিমা।
অনিকের বারবার মনে হচ্ছিল এই মহিলা সে কোথায় যেন দেখেছে।
মাকে প্রশ্ন করতেই বলল,
“আরে বাবা তোর বাবার পরিচিত।”
বুদ্ধিমান ছেলে অনিক। মনে হলো মা কিছু একটা লুকাচ্ছে।
মা কিছু লুকালে সে ভুলভাল কিছু বলে দেয় আর মা প্রতিবারই অসাবধানতা বশত সত্যিটা বলে দেয়।
দ্রুত বলল “ও আচ্ছা সায়মা আন্টি না? আন্টি খুব, চলো কিছুক্ষণ আন্টির কাছে গিয়ে বসি।”
সুমি অনিকের ভুল ভাঙাতে গিয়ে অসাবধানে বলে বসল,
“আরে সায়মা না রিদিমা” বলেই বুঝতে পারল কি ভুল সে করেছে!
অনিকের সার্টিফিকেট, স্কুল বা কোনো কাজে মায়ের নামের জায়গাটা রিদিমার নাম দিয়েও পূরণ হয়।
আর অনিক জানে সুমি তার নিজের মা নয় কিন্তু সৎমায়ের সাথে পরিচয় নেই অনিকের, সুমির মাঝেই নিজের মাকে পেয়েছে সে।
অনিক যথেষ্ট বড় হওয়ার পর তার নিজের মায়ের থেকে আলাদা হয়েছে তাই মাকে ভুলে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসেনা।
মূহুর্তের জন্য থমকে গেল অনিক। তার মা! তার নিজের মা!
কিন্তু মূহুর্তেই আবার সব মনে পড়ে গেল।
এই মা কখনো খোঁজ নেয়নি তার।
কখনো না।
ধীরে ধীরে উঠে আবার ড্রয়িংরুমের দিকে যেতে থাকল।
একপর্যায়ে শুনল, তার মা বলছে
“প্লিজ আমি একটু অনিকের সাথে কথা বলব!”
“সরি রিদিমা, আমার এখন খাওয়ার সময় হয়ে গেছে”
পরাজিত সৈনিকের মতো রিদিমা যখন উঠে দাঁড়াল, ঠিক তখনই অনিক রুমে ঢুকল,
অনিক কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাব্বি বললো,
“বাবা আমি জানি তুই চিনেছিস, কিন্তু এমন কিছু বলিস না যাতে কষ্ট পায়, তোর দেওয়া কষ্ট হজম হবে হয়তো ওর!”
এতটাই শ্লেষাত্মক ছিল কথাগুলো রিদিমা অনিকের দিকে একবার তাকিয়ে সোজা বাইরে বেরিয়ে এল।
অনিকের চোখে তার জন্য যে না বলা ঘৃণা দেখেছে রিদিমা তা সে কোনোভাবেই সহ্য করতে পারছে না!
অনেক কিছুই বলার ইচ্ছে ছিল অনিকের, কিন্তু হলো না।
ধীরে ধীরে বাবার পাশে গিয়ে বসল, আর মাকে ডাকল।
সুমি এলে অনিক তাদের দুজনকে পাশাপাশি বসিয়ে দুজনের পায়ের কাছে বসে বলল,
“এই তো আমার বাবা, এই তো আমার মা, আমার আর কাউকে চাই না, তোমরা ছিলে, তোমরা আছ আর তোমরাই থাকবে, কেন মন খারাপ করে আছ?”
“অনিক তোর জন্য আমার খারাপ লাগা নেই, কারণ তুই সুমির মতো একজন মা পেয়েছিস,
কিন্তু রিদিমা শেষ যেখানে বিয়ে করেছে সেখানেও একটা বাচ্চা আছে, আর ও তাকেও ফেলে এসেছিল, মায়া!” কথা গুলো বলেই রাব্বির মনে হলো ভুল জায়গায় বলেছে সে।
অনিকের মা হাজার খারাপ হলেও সেটা শুনলে ওর মনে প্রভাব পড়বে।
“যাক বাবা তুই এসব নিয়ে ভাবিস না”
অনিক এই বিষয়ে আর কোনো কথা বলল না।
“আচ্ছা মা খেতে দাও, বাবা যাও ফ্রেশ হয়ে খাবে চলো!”
বাবা মা দুইজন উঠে গেলে অনিক ছোট একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
সেটা কেউ জানেনা।
আর কেউ জানবেও না।
লোকচক্ষুর অন্তরালে যে কষ্ট গুলো থেকে যায়, তার হিসেব কেউ রাখে না।
তখন নিজের সামনে চোখের জল ফেলতে ভয় হয়, এই বুঝি কেউ দেখে ফেলল!
.
“সানজুউউউ”
“এক আলিফ টেনে কথা বলছ কেন সাহেব?” হাসতে লাগল সানজানা।
সানজানার কথা শুনে হেসে ফেলল রায়ান।
“কি করো?”
“রান্না করিইইইইই”
এবার দুজনেই হাসতে লাগল।
হঠাৎ মনে পড়ায় সানজানা মোবাইলের টাইম দেখে বলল
“মায়াকে আনতে যেতে হবে”
“আচ্ছা যাব, ছুটি কখন?”
“১০ মিনিট পরেই”
“ওকে, যাচ্ছি, আর বড় আপুরা কবে আসবে তোমাকে কিছু বলেছে?”
“একমাস পরে”
“ওকে”
সানজানার মাঝে মাঝে খুব ভাল লাগে। তার মনে তার বয়স পর্যন্ত একজীবনে যা পাওয়ার তার সবই সে পেয়েছে। সিকি ভাগ ও বাদ যায়নি।
রায়ানের মতো ভাল একটা মানুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছে,
এত সুন্দর একটা পরিবার পেয়েছে।
একজীবনে আর কি লাগে!
“ভাবি শুনো”
নওশির ডাকে ফিরে তাকাল সানজানা।
“ভাবি তুমি কি ব্যস্ত?”
“না হাতের কাজ শেষ, কি হয়েছে?”
“একটু কথা ছিল”
“বলো…”
নওশি তানহা আর সায়ানের বিয়ের ব্যাপারে বলল সানজানাকে।
সানজানা সব শুনে বলল,
“নাশু এভাবে কখনো ভাবিনি, মায়ার জন্য আমারো খুব খারাপ লাগে”
“সে তো ঠিক আছে। আমি তোমাকে বলছি তুমি ভেবে দেখো”
“ওকে”
.
সবাইকে রাজি করিয়ে ফেলল নওশি।
তবে মায়ার কি ভাবছে এটা নওশি বুঝতে পারছে আবার পারছে না।
তবে মায়া তার মায়ের ব্যাপারে জানে যে মায়ের বাবার সাথে মিল হয়নি তাই তারা আলাদা।
কিন্তু এই বিয়েটা কতটা মানতে পারবে সেটা নিয়ে অস্বস্তি হচ্ছে নওশির।
ঈশানের সাথে এটা নিয়ে কথা বলছে
“মায়ার কাছে বাবার বিয়েটা মোটেই ভাল লাগবে না ঈশান।
কিন্তু হয়তো মায়া বুঝতে দেবে না। অনেক ভাল বোঝে ও।”
“বিষয় টা নিয়ে আমিও ভাবছি নওশি।”
কিছুক্ষণ চুপ থাকলো নওশি।
তারপর ভেবে ভেবে বলল,
“শুনো বিয়েতে তোমার থাকার দরকার নেই, তুমি ওইদিন মায়া আর আরজুকে নিয়ে সারাদিন ঘোরাবে আর চকলেট চিপস যা হয় খাওয়াবে।
মানে ওকে আনন্দের মাঝে রাখবে, ওর মন ভাল থাকবে বাসায় ফিরলে আমি ম্যানেজ করে নিবো যতটা সম্ভব”
“বাব্বাহ, ইন্সট্যান্ট সল্যুশন!”
মুচকি হাসল নওশি।
ঈশান বলল,
“কপাল করে একটা বউ পেয়েছিলাম,
একেবারে অলস্কয়ার গার্ল!”
ঈশানের চোখের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলল নওশি।
তারপর আবার কিছুক্ষণ চুপ করে রইল।
হঠাৎ ঈশানের হাত দুটো ধরে বলে উঠল,
“আমি যদি এখন মারা যাই তুমি এভাবে কষ্ট পাবে? আমার বাচ্চাটাও এভাবে কষ্ট পাবে?”
চমকে উঠে ঈশান।
নওশি ছাড়া নিজেকে কল্পনা করতে পারেনা সে।
বিয়ের প্রথম দিকে অনেক অবহেলা করেছে।
আহামরি চোখধাঁধানো রূপ নওশির ছিল না, কিন্তু নিজে হ্যান্ডসাম বলে একটা চাপা অহংকার ছিল ঈশানের।
নওশি তাকে বুঝিয়ে দিয়েছে নিজের জীবনের মানে,
জীবনের পরম সত্যটা কখনো বাহ্যিক সৌন্দর্যে থাকে না।
তবে পাশাপাশি এটাও সত্য কিছুটা বাহ্যিক সৌন্দর্যের প্রয়োজন হয়।
সেটুকু থেকে অনেক বেশি নওশির আছে।
তবে নওশি কি এখনো কষ্ট পাচ্ছে তার থেকে?
কিন্তু সে তো নিজের সবটা দিতে চেষ্টা করে নওশিকে।
“বললে না যে!”
নওশির কথায় বাস্তবে ফিরে আসে ঈশান।
“এসব বলে না নওশি!”
“আরে মানুষ তো চিরকাল বেঁচে থাকে না।”
“হুম তাই বলে যদি আমি এখনই বলি আমি মারা যাব তোমার কেমন লাগবে?”
“হোয়াট দ্যা হেল আর ইউ টকিং এব্যাউট!”
নওশির এই একটা বিষয়, সেটা হল রেগে গেলে ও বেশ কিছুক্ষণ ইংলিশে বকবক করে।
ঈশানের হাসি পেল।
হাসতে হাসতে বলল,
“রাগছ কেন!”
“তুমি কেন বাজে বকছ?”
“আমি বাজে বকছি কিন্তু তুমি এসব বললে আমার কষ্ট হয় না?
ভালবাসি আমি তোমাকে”
শিহরিত হয়ে ওঠে নওশি।
সত্যিকারের ভালবাসার অনুভূতি হয়তো কখনো নষ্ট হয় না।
নওশির হাত দুটো শক্ত করে ধরে কাছে টেনে নেয় ঈশান,
“এভাবে আর কখনো বলো না, যা হবে তা হবে আগে থেকে বলে কি লাভ বলো?”
“হুম আচ্ছা” গাঢ় স্বরে বলল নওশি।
“বলবে না তো?”
“না”
“এইতো আমার বউটা বুঝে সব!”
নওশির নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়।
খুব!
“এই ভালবাসা চাই সারাজীবন”
ঈশান জোরে হেসে ফেলল নওশির কথায়।
“সময় বলবে”
“কেন তুমি জানো না? যাও কথা নেই”
কপট রাগ দেখালো নওশি।
“এই শুনোওওওওওও…..”
এভাবেই মিষ্টি মধুর হয়ে ওঠে ওদের চলার পথ গুলো।
.
নওশির যদিও মনে হয়েছিল মায়াকে আগে থেকে জানাবে না কিন্তু তবুও তার মনে হলো মায়াকে না জানানো এক ধরনের অপরাধ।
বিশেষ করে মায়া তাকে সব থেকে বেশি বিশ্বাস করে আস্থা রাখে।
তাই সেই কথা গুলো মায়াকে বলার সিদ্ধান্ত নিলো নওশি।
“রাফসানা…” মায়াকে মাঝে মাঝেই রাফসানা বলে ডাকে নওশি।
“জ্বি ফুপি…”
“মা তুই তো সব বুঝিস, তোর যদি একটা মা এনে দেই তোর কি খারাপ লাগবে?”
মায়া বুদ্ধিমতী মেয়ে।
বুঝে গেল ফুপি কি বলতে চাইছে।
“না ফুপি, আমার কোনো অসুবিধা নেই, বুঝেছি তুমি কি বলতে চাইছ”
নওশি আসলে কথাটা ঠিকঠাক ভাবে আরো একটু গুছিয়ে বলতে চেয়েছিল কিন্তু মায়ার সামনে এসে কথা যোগাচ্ছে না কেন যেন।
হঠাৎ মায়া নওশিকে জড়িয়ে ধরল।
নওশি আস্তে আস্তে মায়ার মাথায় হাত বুলাতে লাগল। ‘মেয়েটার কি খুব খারাপ লাগছে ইদানিং? কিন্তু এর কারণ কি’ মনে মনে ভাবতে থাকে নওশি।
“আম্মু তোর কি খুব বেশি খারাপ লাগছে?”
“ফুপি, কেন এমন হল আমার সাথে!”
থমকে গেল নওশি।
এই প্রশ্নের কোনো উত্তর নওশির জানা নেই।
.
‘মায়া খুব অসুস্থ, বাবা মা পাশে বসে আছে।
একপাশে মা আর আরেকপাশে বাবা মায়ার হাত ধরে বসে আছে।
মায়ার খুব ভাল লাগছে।
বাবা মা কি সুন্দর একসাথে আছে!
আচ্ছা এভাবে থাকলে কি হতো!
ইশ আরেকটু আগে যদি বুঝতো আরো আগে অসুস্থ হতো ইচ্ছে করে।
মা বাবাকে বলছে
“মেয়ে যা খেতে চাই তাই এনে দাও”
বাবা জিজ্ঞাসা করলো,
“মা কি খাবে?”
মায়া ছলছল চোখে বলল,
“বাবা কিছু খাব না, তোমরা একটু বসো এখানে, আমি একটু দেখি তোমাদের!”
মায়ার কথায় চুপ হয়ে গেল মায়ার বাবা।
তার মাও মুখ নিচু করে ফেলল।
তারপর মা বলল,
“আমার ক্ষমা করে দে মা, আমি খুব অন্যায় করেছি মা”
মায়া কোনো কথা না বলে বাবা মাকে দেখতে থাকল।
বাবা মায়ার হাতের উপর হাত রেখেছে।
আর মা মাথায় জলপট্টি দিয়ে দিচ্ছে। উফ কি শান্তি। বাবা মা কে একসাথে কত্ত সুন্দর দেখাচ্ছে
“সরি মা” মায়ার মা আবার বলল।
মায়া তবুও কোনো উত্তর দিলো না।
এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছুই হয়না যখন বাবা কিংবা মা কাঙ্ক্ষিত অধিকার না দিয়ে শুধু ক্ষমা চায়!
কি বলার থাকে, সন্তানের কাছে বাবা বা মা যখন অপরাধীর চোখে তাকায়,
যে চোখে শুধু স্নেহ, শাসন, ভরসা আর ভালবাসা থাকার কথা সেই চোখ দুটো যখন ক্ষমা চায়!
বড্ড খারাপ লাগে হয়তো এই সময় টা, আর তাই মনে হয় মায়া কোনো উত্তর দেয়নি।
বাবা মা কে একসাথে দেখার মূহুর্ত গুলো সে অন্যকিছু দিয়ে নষ্ট করতে চায় না!’
“মায়া মামনি?”
ঈশানের ডাকে ঘুম ভাঙলো মায়ার।
তার মানে সে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল!
উফ!
পরপর দুইদিন এই স্বপ্নটা দেখেছে সে।
আর তার জন্যই মনটা খারাপ হয়ে আছে তার।
সেদিনও অত কষ্ট লাগেনি যেদিন তাদের ক্লাসের লামিসা বলেছিল তার মা বাবা আলাদা, বাবা মায়ের মিল নেই, যতটা স্বপ্নটা দেখার পর থেকে খারাপ লাগছে।
চোখ বন্ধ করে এসবই ভাবছিল মায়া।
“মায়া……” ঈশান আবার ডাকল মায়াকে।
“হুম আঙ্কেল বলো” ঘুম জড়ানো চোখে বলল মায়া।
“মামনি ঘুরতে যাব আজ আমি তুমি আর আরজু, তাহলে রেডি হয়ে থেক?”
“ঘুরতে যাব কেন হঠাৎ?”
“আরজু যেতে চাইছে তাই”
“ঠিক আছে আঙ্কেল।”
উঠে ফ্রেশ হতে গিয়ে মায়ার বারবার ওই স্বপ্নটার কথাই মনে হতে লাগল।
কেন দেখছে বারবার ওরকম স্বপ্ন!
সারাদিনের বেড়ানোটা উপভোগ করতে পারল না মায়া।
মায়ার অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া খেয়াল করলো ঈশান।
.
(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here