#এতো_চাই_তোকে
#পার্ট_০৫
#Mst_Liza
হৃদ ভাইয়ার বুকের পাজরে আষ্টেপৃষ্টে নিজেকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছি আমি।সকাল হতেই আমাকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো সে।আমার চোখে মুখে পাশের গ্লাসে রাখা পানির ছিটা দিয়ে মুখে হাত রেখে ডাকলো আমাকে।আমি ঘুম ঘুম চোখ হালকা মেলতেই আমার মাথায় হাত রেখে বলল,
—“সকাল হয়েছে ফুল।কাপড় পরে নে।কাকিমা যে কোনো সময় তোকে ডাকতে চলে আসবে। এভাবে আমাদের একসাথে দেখে ফেললে বাড়িতে সমস্যা হবে।কিছুদিন যাক আমি নিজে সবাইকে সবটা বুঝিয়ে বলবো।”
কথাটা বলে উঠে বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো।আমি কিছু বললাম না।ভাবলাম হৃদ ভাইয়া যা করছে সব আমাকে ভালোবেসে করছে।আর আমিও তো ভালোবাসি।
হৃদ ভাইয়া রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সাথে আমি উঠে ওয়াশরুমে চলে এলাম।সাওয়ার নিয়ে রুমে আসতেই দেখি মা বসে আছে।আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মা।আজ এতো দ্রুত ঘুম কিভাবে ভাঙলো জানতে চাচ্ছে। সাথে জানতে চাচ্ছে এই শীতে এতো সকালে সাওয়ার কেন নিয়েছি।আমি যতটুকু পেরেছি কৌশলে মাকে কিছু একটা বলে রুম থেকে বেড়িয়ে এসেছি।
ব্রেকফাস্ট শেষে ক্লাস টাইম এগিয়ে দিয়েছে বলে অনেক আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছি আজ।এখন বসে আছি হৃদ ভাইয়ার গাড়িতে।সারপ্রাইজ দেবো বলে।হৃদ ভাইয়া এসে সামনের সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করতেই পেছনের থেকে ঝাঁপিয়ে আমি গলা জড়িয়ে ধরলাম।আমাকে দেখে হৃদ ভাইয়ার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মনে হলো।মুখে একটুও হাসি নেই।গাড়ি থেকে নেমে ঘুরে এসে আমাকে টেনে নামিয়ে বলল,
—“আমরা একসাথে হসপিটালে যেতে পারবো না। সবাই কি ভাববে?”
আমি বললাম,
—“কিছুই ভাববে না।আমি তো তোমার ফ্যামেলি মেম্বার। স্ত্রীর পরিচয় না দাও কাজিন হিসেবে নিয়ে চলো।একই বাড়িতে থাকি একই জায়গাতে যাবো। একসাথে গেলে প্রবলেম নেই।”
আমার কোনো কথায় বুঝলো না হৃদ ভাইয়া।যদিও আগের মতোন রেগে বলে নি।তবে ভালোবেসে বুঝিয়ে বলেছে আমাদের আলাদা যেতে হবে হসপিটালে।আর আমিও হৃদ ভাইয়ার মুখের উপরে কখনো কথা বলতে পারি না।এতো সুন্দর করে বললে না শুনে কি পারা যায়? আমাকে একটা ইজিবাইক ডেকে উঠিয়ে দিয়ে হৃদ ভাইয়া চলে গেলো।
আমি হসপিটালে পৌঁছালাম।হৃদ ভাইয়াকে খুঁজলাম।কিন্তু পেলাম না।এখনো হসপিটালে আসেনি মানুষটা।আমার খুব টেনশন হচ্ছে। আমার আগে চলে আসার কথা ছিলো তার।রাস্থায় কোনো বিপদ আপদ হয় নি তো তার?
হাজার প্রশ্ন মাথায় নিয়ে ক্লাস রুমে ঢুকলাম।দেখতে পেলাম ডা. মেঘ স্যারের ছোট বোন প্রিয়া এসেছে আজকে অনেক দিন পর।মেয়েটার আলাদা গ্যাং।মিনি, নিশি কাজিন হলেও ওদের সাথে তেমন একটা মেশে না সে।ওদের বাবা একটু গরিব বলে অনেক খোটা দেয়, কথা শোনায়।কখনো কখনো বলে এই হসপিটালটা আমার বাবার। আমার বাবা দয়া করেছিলো বলেই তোমরা ভিক্ষায় ডাক্তারি পরার সুযোগ পেয়েছো।আজও ওদের পিছনে লাগার সুযোগ ছাড়েনি। গ্যাং নিয়ে লেগে আছে ওদের ইনসার্ট করতে।প্রতিবারের মতো এবারও খুব ইচ্ছে করছিলো প্রতিবাদ করি কিন্তু আমার মনটা আজ খুব খারাপ।আনমনা হয়ে একটা ফাঁকা বেঞ্চে এসে বসে রইলাম।প্রথম ক্লাস হৃদ ভাইয়ার।ক্লাস টাইম শেষ হৃদ ভাইয়া আসলো না।পাশ থেকে একজন বলে উঠলো হোস্টেলের পাশের রেস্টুরেন্টে হৃদ ভাইয়াকে ঢুকতে দেখেছিলো।আমার মনে সন্দেহ আসলো।এইজন্য কি আমার সাথে হসপিটালে আসতে চাচ্ছিলো না সে? আমাকে জানতে হবে রেস্টুরেন্টে কার সাথে দেখা করতে গিয়েছে যা আমাকে জানাতে চাই না।এটা জানার অধিকার তো আমার আছে।এখন আমি তার স্ত্রী।
আমি আর দেরি করলাম না।ছুটে সেই মুহূর্তে রেস্টুরেন্টে চলে আসলাম। দেখতে পেলাম একটা টেবিলে নূর আপু আর হৃদ ভাইয়া মুখোমুখি বসে আছে।নূর আপুর চোখে পানি। হাত জোড় করে কিছু একটা বলছে হৃদ ভাইয়াকে।আমি শোনার জন্য সামনে আগালাম।তারপর যা শুনলাম সেটা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো।নূর আপু বলছে,
—“ফুলকে তুই ভুলে যা হৃদ।একটা সময় তো আমাকে তুই ভালোবেসেছিলি।নিজের মনকে শক্ত করে আমাকে ভুলে ফুলকে ভালোবাসতে পেরেছিলি।এবারও পারবি।একবার যখন পেরেছিস।তাছাড়া তোদের বিয়েটার কথা তো আমি ছাড়া কেউ জানে না।আমি তোকে কথা দিচ্ছি কাউকে বলবো না।তুইও আমাকে কথা দে ফুলকে ভুলে যাবি।ফুল বাচ্চা মেয়ে।আমার মনে হয় না ও তোকে ভালোবাসে।”
হৃদ ভাইয়া রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলছে,
—“তুই আমাকে অনেক কাঁদিয়েছিস।এখন এসব বলতে ডেকেছিস আমায়? মেঘ তো তোকে ভালোবাসে।তাহলে ওকে বোঝাতে পারছিস না কেন ব্যাপারটা?”
আপু বলল,
—“তোকে তো বললাম মেঘ কি বলেছে।”
হৃদ ভাইয়া অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ভেবে বলল,
—“ঠিক আছে এখন যা।আমি ভেবে দেখবো।কথা দিতে পারছি না তবে চেস্টা করবো।”
এটুকু শুনে আমার চোখে পানি চলে আসলো।আর এক মুহূর্ত এখানে আমি দাড়াতে পারছি না।এসব পারবো না দেখতে আমি।এতো বড় ধোঁকা।আমি চলে আসলাম রেস্টুরেন্ট থেকে।
সারাদিন হৃদ ভাইয়া আমার সামনে আসে নি।খুব কস্ট হচ্ছে আমার।আমার মনকে ভাবাচ্ছেও।হৃদ ভাইয়া আপুকে ভালোবাসতো।আর এখন ছিঃ আমি ভাবতে পারছি না। এতোদিন ভেবে এসেছি মেঘ স্যার আর আপু দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে।কিন্তু আজ এটা আমি কি শুনলাম? খুব কান্না পাচ্ছে আমার।কাঁদতে কাঁদতে বালিশে মুখ গুজে ঘুমিয়ে পরেছিলাম রাতে।ঘুমের ঘোরে কারও শরীরের গরম স্পর্শ অনুভব করলাম। চোখ মেলে মাথাটা উঁচু করে দেখলাম হৃদ ভাইয়া। আমাকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে আছে।চোখদুটো খোলা।আমি জেগে আছি বুঝতে পেরে উল্টো ঘুরিয়ে আমার বুকে নিজের মুখ গুজলো।মাথাটা উঁচু করে আমার মুখের কাছে এনে নাকে নাক ঘেঁষে বলল,
—“ছরি ফুল।আজ একটা ঝামেলার মধ্যে ছিলাম তাই তোর কাছে আসতে পারি নি।তবে আর কখনো তোর চোখের আড়াল হবো না দেখিস।”
আমি আর কিছু বলতে না দিয়ে এক ধাক্কায় আমার উপর থেকে হৃদ ভাইয়াকে সরিয়ে দিলাম।কস্টে, রাগে, ঘৃণায় দাঁত শক্ত করে বললাম,
—“রাতের ভালোবাসা আমাকে দেখাতে আসবে না।চলে যাও এখান থেকে।”
হৃদ ভাইয়া বুঝলো আমি হয়তো রেগে আছি।সারাদিনে একটা কল দিয়ে খোঁজ নিলে হয়তো এই রাগটা দেখাতাম না।তাই এগিয়ে এসে আমার পাশে বসে হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,
—“আমার ভুল হয়েছে।প্লিজ ক্ষমা করে দে।এই কান ধরছি আমি নিজের।”
আমি রাগি দৃস্টিতে তাকালাম।বিছানা থেকে নেমে দাড়িয়ে চিৎকার করে বললাম,
—“বেড়িয়ে যাও আমার রুম থেকে। একটা ধোঁকাবাজ, মিথ্যাবাদী আর দুশ্চরিত্রও।আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।আপু আর তুমি ছিঃ আজ রেস্টুরেন্টে কি কথা হচ্ছিলো আপুর সাথে তোমার সব শুনেছি আমি।”
হৃদ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে পরলো।দাড়িয়ে আমার দু’কাঁধে হাত রেখে বলল,
—“তুই সব শুনেছিস ফুল? ভালো হয়েছে শুনেছিস।আমি বুঝতে পারছিলাম না সবকিছু কিভাবে বললো।”
আমি ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললাম,
—“এসব নতুন নাটক অন্য কারও সাথে করও।আমি আর তোমাকে বিশ্বাস করবো না।”
কথাগুলো আমি চিৎকার করে বলছিলাম দেখে বাড়ির কেউ ঘুম থেকে উঠে যাবে বুঝতে পেরে আর কোনো কথা না বলেই হৃদ ভাইয়া চলে গেলো।আমি আমার রুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলাম। দরজার ওপাশ থেকে হৃদ ভাইয়া বললো শুনলাম,
—“আমি বুঝতে পারছি না তুই এমন কেন করছিস।তুই কি সব শুনেছিলি? সব কথা শুনলে এমন বিহেভ কেন করছিস?”
আমি বললাম,
—“আর কিছু শোনার দরকার নেই আমার।তুমি যা বলবে সবই নাটক।আমার বুঝে নেওয়া হয়ে গেছে তোমাকে।”
চলবে,,,,