এলি ম্যান পর্ব -০৫

#গল্প – #এলি_ম্যান ( ৫ম #পর্ব )

সালাহউদ্দিন পিস্তলে বুলেট লোড করতেই দেখতে পেল স্টিফেন সাহেবের পালিত কুকুরটা তার রুমে ঢুকেছে। সে পিস্তল তাক করে কুকুরের রানে একটা গুলি করল। সাথে সাথেই লুটিয়ে পরল কুকুরটা। স্টিফেন সাহেব ওনার প্রিয় কুকুরের এই দশা দেখে দৌড়ে চলে এলো রুমে। সালাহউদ্দিন-এর দিকে তাকিয়ে রইল ভয়ানক চোখে।

সালাহউদ্দিন একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
‘ টেনশন নিবেন না। একটু পরেই ঠিক হয়ে যাবে। স্টিফেন সাহেবের মুখের আকার তখনও পরিবর্তন হয়নি। উনি রাগে ফেটে পড়ছেন। ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ স্টিফেন সাহেবের গালের ঝুলে যাওয়া চামড়া গুলোর সাথে এমন রাগী চেহারা এক অনন্য রূপ দিয়েছে ওনাকে। সালাহউদ্দিন যেন এই মুহুর্তের দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করার লোভ সামলাতে পারল না। সে টুক করে দুইটা ছবি তুলে নিয়ে, হাসতে হাসতে বলতে লাগল,
‘ আসুন আপনার চিন্তার সমাপ্তি ঘটাচ্ছি।’

কথাটা বলেই একটা ইনজেকশন আর ছোট কাঁচের শিশি নিয়ে কুকুরের কাছে গেল। কুকুরের পিছনের রানের উপরে ছোট সুঁইয়ের মতো কিছু একটা লেগে আছে। সালাহউদ্দিন সুঁইটা টেনে খুলে নিল। অতঃপর ইনজেকশনের সুঁইটা কাঁচের শিশি-র মুখে লাগানো রাবারের কর্কের ভিতর দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করিয়ে দিল। ভিতর থেকে মাত্র দুই ফোঁটা ওষুধ নিল সুঁচের আগায়। অতঃপর সেটা কুকুরের রানের পুশ করে দিতেই কিছুক্ষণ পরে কুকুরটা শরীর নাড়াচাড়া করে উঠে দাঁড়ালো। স্টিফেন সাহেব সালাহউদ্দিন-এর কাজ দেখে খুবই অবাক হয়েছেন। কিন্তু তাকে কিছু বলার মুডে তিনি নেই। এক লাফে গিয়ে কুকুরটাকে কোলে তুলে নিয়ে আদর করতে লাগলেন। চুমু দিতে দিতে নিজের নিজের ঘরে চলে গেলেন তিনি।

সালাহউদ্দিন কেবল বাঁকা চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসতে লাগলো। সে বুঝতে পারে যার পরিবার বলতে কেউ নেই সে তার আশে-পাশের লোকদের কেমন করে আগলে রাখে। আর যে পোষা প্রাণীটা সর্বক্ষণ ওনার পাশে থাকে। তার প্রতি ওনার এমন পাগলামি অবশ্যই সঠিক।

সালাহউদ্দিন নিজের জিনিস পত্র গুছিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। ফোনটা হাতে নিয়ে সময় দেখল রাত ৩টা বেজে গেছে। হবু স্ত্রীর কথা মনে পড়ল তার। দ্রুত একটা কল করল সে। কিন্তু অপর প্রান্ত থেকে ফোন অফ থাকার সংকেত আসছে। মেয়েটা যে খুব রাগ করেছে এটা সহজেই বুঝতে পারল সে। দুইশত শব্দের একটা বিশাল মেসেজ লিখে পাঠিয়ে দিলে ঘুমিয়ে পরল সে।
.
লেখকের iD- #সালাহউদ্দিন_তারিক (salahuddin.tarik)
.
ইভানা আজও বিকাল ৩টায় মিটিং ডেকেছিল। কিন্তু কোন কাজই হয়নি। কেউই খুনির চেহারার কোন ছবি অথবা বর্ণনা দিতে পারল না। TAC. COM টিমের সবাই হতাশ। পুলিশ বাহিনী হতাশ। কেউই কোন কুল কিনারা করতে পারল না।
শেষে ইভানা রাগ দেখিয়ে মিটিং বন্ধ করে দিল। রাতের খাবার শেষ করে একাকী টেবিলে বসে ভাবছিল কি করা যায়। সে কোন সমাধান পাচ্ছিল না। তবে গতরাতে ঘটে যাওয়া ঘটনাটাও তাকে খুব ভাবাচ্ছে। সে কেনই বা সেই এলি-ম্যান এর প্রেমে পড়ল। তাকে এলি-ম্যান বলার পিছনেই বা কি রহস্য। তার চোখ কেনই বা এতো সবুজ। আর সেই চোখে কি এমন আছে যার মায়া তাকে গ্রাস করেছে। সে কিছুই ভাবতে পারছে না যেন। কেন সে বারবার সেই অতিপ্রাকৃত মানবের প্রেমে পড়ছে । এই একই প্রশ্ন নিজেকে বারবার করছে সে।

টেবিল বরাবর উপরে দেয়ালে লাগানো ককো ক্লক জানান দিল রাত ৩টা বেজে গেছে। ইভানাও যেন আর থাকতে পারছে না। হেলতে দুলতে গিয়ে বিছানায় বসল। বাতিটা বন্ধ করে শুয়ে পড়তেই মনে হলো, ‘আজকেও যদি আসে সেই মায়াবী লোকটি!’

ভাবতেই যেন শিহরিত হয় সে। জানালা আজকে লাগানো আছে। কি মনে করে যেন সে উঠে গিয়ে জানালাটা খুলে দিল। আবারও শুয়ে পড়তেই ভাবতে লাগল, ‘আচ্ছা এই মুহুর্তে যদি সে চলে আসে! তবে কি হবে আমার! লজ্জা পাবো না আমি?’

নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে সে। আবার নিজেই উত্তর দেয়।
‘ নাহ্ আমি লজ্জা পাবো কেন! প্রিয় মানুষের কাছে কিসের আবার লজ্জা?!’

ইভানা এসব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়ে। কপালে কিছুর স্পর্শ পেতেই ঘুম ভেঙে যায় ইভানার। চোখ খুলতেই দেখে তার মাথার উপরে সেই সবুজ মায়াবী চোখ জ্বলজ্বল করছে। নিজের অজান্তেই যেন হেসে ফেলে সে। উঠে বসে লাইট জালিয়ে দেয় । লোকটিকে আজকে একটু বেশিই অন্য রকম মনে হচ্ছে তার। কত সুন্দর করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল। কতোটা আদর করে কপালে চুমু একে দিয়েছিল। আজকে আর তাকে মোটেও ভয় পায় না ইভানা। লোকটি নিজের মাথার টুপি খুলে ফেলে। মাথার ছোট্ট চুল গুলো পরিপাটি করতে করতে বলে।
‘ সারাদিন রাত হুডি পরে থাকতে আর ভালো লাগে না। চুল গুলো ব্যাথা করে। আর এভাবে কতদিন! ‘ মায়াবী কাতর গলায় কথাটা বলে এলি-ম্যান।

ইভানা কি বলবে ভেবে পায় না। তবুও সাহস করে বলে ফেলে, ‘ আপনি কে! আমাকে কিভাবে চিনলেন? ‘

‘ জানতে পেরেছি কোন একভাবে। সেটা সময় হলে বলব। আর আমার পরিচয় গতকাল যা দিয়েছি সেটাই যথেষ্ট। আরো বেশি এখন বলা যাবে না।’

‘ আমার পিছনে এভাবে পরলেন কেন! কেন আসেন প্রতিদিন? ‘

‘ ভালো লাগে তাই আসি। আসতে মানা আছে বুঝি?’

‘ তা নেই, কিন্তু আপনি কেমন যেন। আপনাকে তো মানুষ বলে মনে হয় না।’

‘ আমাকে মানুষ মনে হয় না। আবার আমি মানুষই। সব বলব একদিন। ‘

‘ প্রথম দিন কেমন ভাবে স্পর্শ করেছিলেন আমাকে। আমার গা ঘিনঘিন করছিল। আমি আপনাকে মেরেই দিতাম ঐদিন। কিন্তু আপনার চোখ দু’টো কেমন যেন! চোরাবালির মতো মায়া লুকিয়ে আছে চোখ দু’টোতে। আমি হুট করেই আটকে গেছি।’

‘ আমি জানি, তবে প্রথম দিনের জন্য আমি দুঃখীত। কিন্তু আমি এটা অবশ্যই বুঝি বর্তমানে আমি চাইলেই আপনাকে স্পর্শ করতে পারি। আপনি মোটেও রাগ করবেন না। ‘

মুহুর্তের মধ্যেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় ইভানা। লজ্জায় মাথায় নিচু করে নিয়ে অল্প স্বরে বলে,
‘ লজ্জা লাগছে আমার, এভাবে বলেন কেন? ‘

লোকটি আর কিছু না বলে ইভানার কপালে একটা চুমু একে দেয়। ইভানা যেন এরই অপেক্ষায় ছিল। সে দ্রুত গতিতে লোকটির বুকে মুখ লুকায়। সে ইভানার মাথার সিঁথিতে চুমু দিয়ে চুলে বিলি কেটে দিতে দিতে বলে। আমার মায়ায় পরে যাওয়া কী ঠিক হচ্ছে! পরে কষ্ট পাবে না তো?’

‘ কষ্ট কেন পাবো! আপনি শুধু একবার এভাবে জড়িয়ে ধরবেন আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। ‘

‘ থাক, এখন রোমান্টিক কথা বলতে আসিনি। কেস নিয়ে এসেছি তোমার কাছে।’

ইভানা বুক থেকে মাথা তুলে বলল, ‘ কিসের কেস? আমি যে টিমের প্রধান তা আপনি জানলেন কি করে?’

‘ জেনেছি এক ভাবে এখন মনোযোগ দিয়ে শোন নয়তো কিছুই বুঝবে না।’

‘ হ্যাঁ বলুন আমি শুনতেছি। ‘

‘ পৃথিবীবে মানব শূন্য করতে খুব সুক্ষ্ম প্ল্যানিং করা হয়েছে। খুব মেধা খাঁটিয়ে কাজটি করা হচ্ছে। আর এই কাজ অনেকটাই সফলতার পথে। আশাকরি তুমি তাদেরকে সফল হতে দিবে না। আমার মতো হুডি পরা লোকজন প্রায় রাতেই দেখতে পাবে শহরের রাজপথ গুলোতে। তবে ওরা হলো এজেন্ট। এবং স্পেশাল পাওয়ারের অধিকারী। আমিও হয়তো তাদের দলেই থাকতাম। কিন্তু আমি আমার পৃথিবীকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে পারি না। আশাকরি তুমি বুঝতে পেরেছ। সময় হলে বাকি সব কিছু বলব। এখন আপাদত তাদের আটকাও। সিসি টিভি বাড়িয়ে দাও। সিকিউরিটি জোরদার করো। ‘

‘ কি বলছেন এসব আপনি! এসব সত্যি?’

‘ সত্যি না হলে আর তোমরা টিম গঠন করে একটা খুনির খোঁজ করতে না। আশাকরি বুঝেছ। এবার কাজে লেগে পরো। আমি এখন যাব। ‘

‘ এখনই চলে যাবেন? আরেকটু থাকুন না প্লিজ।’

‘ এতো মায়ায় জড়িও না। পস্তাতে হতে পারে।’

ইভানা মনে কষ্ট পেলো। কিন্তু আর সেটা প্রকাশ করল না। লোকটি বিছানা ছেড়ে উঠে যেতেই ইভানা বলল,
‘ দেখি গুলির ক্ষত শুকিয়েছে কতটুকু।’

বলেই লোকটির কাপড় সরিয়ে ক্ষতটা দেখল সে। অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। ইভানা সরতেই লোকটি বলে উঠল,
‘ তুমি ক্ষত দেখতে চাওনি। বরং আমার স্পর্শ পেতে চেয়েছ। হাহা, এমন কেন তুমি?’

ইভানার মনে ঠিক এই ইচ্ছেটাই ছিল। কিন্তু এলি-ম্যান কিভাবে এটা বুঝে গেল তা সে বুঝতেই পারল না। কিছুটা লজ্জা পেলো সে। কিন্তু এই লজ্জা যেন তার জন্য কিছুই নয়। সে বেহায়ার মতো বলে ফেলল।

‘ চলে যাচ্ছেন! কালকের মতো একটু ভালোবাসা দিয়ে যাবেন না?’ ইভানার কন্ঠে কাতর আর্তনাত স্পষ্ট।

এলি-ম্যান এবার একটু ভিন্নতা অবলম্বন করল। সে হাসতে হাসতে বলল। তুমি আজকে ব্রাশ করোনি। তোমার মুখে বিশ্রী গন্ধ। তার এই অবস্থায় চুমু খাবো আমি! ছিহ্ ছিহ্।

ইভানার এতোবড় ইয়ার্কি সহ্য হলো না। সে টেবিল থেকে খালি জগ’টা নিয়ে তেড়েফুঁড়ে গেল তার দিকে। কাঁধ আর পিঠে প্লাস্টিকের জগ দিয়ে মারতে মারতে বলতে লাগল, ‘ কী! আমি দাঁত ব্রাশ করি না। তুই করিস না। তোর চৌদ্দ গোষ্ঠী করে না। ‘

কথা শেষে শান্ত হয়ে উল্টো দিকে ফিরে একটা কৃত্রিম রাগ দেখিয়ে চুপ করে রইল ইভানা। এলি-ম্যান বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেও ইভানার কোন পরিবর্তন না দেখে তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। দুই হাতে ইভানার গাল চেপে ধরে মুখটা উপরের দিকে তুলল। অতঃপর নিজেই নিচু হয়ে একটা লম্বা চুমু দিল ইভানার ঠোঁটে।

ইভানার মুখে আবারও হাসি ফুটে উঠল। এলি-ম্যান আর কিছু না বলে একটা মুচকি হাসি দিয়ে জানালা দিয়ে লাফ দিল নিচের দিকে।
.
( চলবে ইনশা আল্লাহ) (অনুমতি ছাড়া কপি নিষেধ )

© #লেখক — সালাহউদ্দিন তারিক ( জুনিয়র মুগলি )

.

.

#_গল্প

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here