‘ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৪৮|| 🔞
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
দিয়ারা আর কিছু বলতে পারে না তাঁর আগেই দেবাংশু ওর সামনে সজোরে হাতের বোতলটা ভেঙে ফেলে। দিয়ারা শুধু চোখ বুজে মাথাটা একটু সরিয়ে নেয় কিন্তু নিজের জায়গা থেকে সরে না।
দেবাংশু: চলে যা এখান থেকে। আমার চোখের সামনে আসার সাহস করিস না।
দিয়ারা ধীরে ধীরে নিজের চোখটা খুলে দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে দেখলো দেবাংশু নীচের দিকে তাকিয়ে আছে আর রাগে ফুঁসছে। দেবাংশুর চোখের সামনে শুধু এই ঘটনার দৃশ্যটা ভাসছে যেখানে দিয়ারা অর্জুনের সাথে ঘনিষ্ট হয়ে নাচ করছিলো।
দিয়ারা: কেন এমন করছো তুমি? কি করেছি আমি যে এত রাগ দেখাচ্ছো আমার উপর?
দেবাংশু নিজের চোয়াল শক্ত করে দিয়ারার দিকে তাকালে দিয়ারা ঘাবড়ে যায় দেবাংশুর রক্তচক্ষু চাহুনি দেখে। দেবাংশু দিয়ারার একদম কাছে গিয়ে দাঁতে দাঁতে চেপে বলে,
দেবাংশু: আই সেইড জাস্ট গেট আউট ফ্রম হেয়ার!
দেবাংশু পিছন ফিরে সিঁড়ি দিয়ে উঠে নিজের ঘরে চলে যায়। দিয়ারা কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো দেবাংশুর যাওয়ার পথে। দরজা বন্ধ হওয়ার বিকট শব্দে কেঁপে উঠে দিয়ারা মেইন গেটের দিকে পা বাড়ালো। দু পা এগোতেই কোনো কিছু ভাঙার আওয়াজ শুনতে পেলো দিয়ারা। এই আওয়াজ যে দেবাংশুর ঘর থেকেই আসছে ওর বুঝতে বাকি নেই। ও সিঁড়ির কাছে যাবে সেই সময় বাড়ির কেয়ারটেকার ছুটে এলো ওর কাছে আর বললো,
__ম্যাডাম যাবেন না প্লিজ।
দিয়ারা: কেন?
__ম্যাডাম স্যার রেগে গেলে আমরা কেউ যাইনা। এটা সুধাংশু স্যারের পরামর্শ বলতে পারেন। আজ অনেক বছর পর স্যারকে এভাবে রেগে যেতে দেখলাম। হয়তো মারাত্মক কোনো কারণে রেগে আছেন। আপনি যাবেন না।
দিয়ারা: শুনুন ও এমনিতেই নেশায় আছে। রাগের বশে যদি নিজের ক্ষতি করে ফেলে? আমাকে যেতে দিন।
__কিন্তু ম্যাডাম…
দিয়ারা কোনো কথা না শুনে দেবাংশুর ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। দেবাংশুর ঘরে ঢোকার আগে একটা বড়ো নিশ্বাস নিয়ে নিলো। তারপর দরজার লকে হাত দিতেই বুঝলো দরজা লক করা নেই, দেবাংশু শুধু দরজাটা বন্ধ করার জন্য বল প্রয়োগ করেছিলো। দিয়ারা ঘরে ঢুকতেই দেখে দেবাংশু হাতে একটা ফুলদানি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে তাকিয়ে। দিয়ারা দরজাটা বন্ধ করে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো দেবাংশুর কাছে আর দেবাংশুর পিছন থেকেই একটু পাশ হয়ে দাঁড়ালো যার ফলে আয়নায় দিয়ারার প্রতিচ্ছবি তৈরী হলো।
দেবাংশু আয়নার দিকে তাকিয়ে ছিলো কারণ আয়নায় সে নিজের অতীতকে দেখতে পাচ্ছিলো। ওখানে অন্যকাওর প্রতিচ্ছবি ছিলো হয়ে দেবাংশুর কাছে অপরাধী। সেই জায়গায় দিয়ারার প্রতিচ্ছবি দেখতেই সেটা মেনে নিতে পারলো না দেবাংশু। ফুলদানিটা ছুঁড়ে মারতেই যাচ্ছিলো ঠিক সেই সময় কেউ ওর হাত ধরে নিলে দেবাংশু সেদিকে তাকায় আর দিয়ারাকে দেখতে পায়। দিয়ারা ফুলদানিটা কেড়ে নিতে নিতে চিৎকার করে বলে,
দিয়ারা: ছাড়ো এটা…কেন করছো এমন?? কি হয়েছেটা কি?? আমি কি করেছি….
দিয়ারা আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না তার আগেই দেবাংশু দিয়ারার দু গালে হাত রেখে নিজের কাছে টেনে দিয়ারার ঠোঁটজোড়া নিজের আয়ত্তে নিয়ে নিলো। ঘটনচক্রে দিয়ারা অবাক হয়ে যাওয়ায় ওর হাত থেকে ফ্লাইভারের ফুলদানিটা পরে গেলো। সেই আওয়াজেও দেবাংশুর ঘোর কাটলো না। দিয়ারা দেখতে পেলো দেবাংশু চোখ বন্ধ করে দিয়ারাকে অনুভব করতে চাইছে। আবেশে দিয়ারার চোখ বন্ধ হয়ে আসে এবং দেবাংশুকে আরও ভালো করে সুযোগ করে দেয় ও’কে অনুভব করার।
দেবাংশুর কোনো দিকে কোনো খেয়াল নেই এখন। যখনই সে টের পেলো দিয়ারা তাঁকে সুযোগ করে দিয়েছে তখনই সে আরো বেশি করে দিয়ারাকে অনুভব করার জন্য উদ্যত হলো। এদিকে দিয়ারা নিজের জিভে দেবাংশুর জিভের স্পর্শ পেতেই শিউরে উঠলো। শক্ত করে দেবাংশুকে আকড়ে ধরলো নিজের দু হাত দিয়ে।
একটা সময় গিয়ে যখন দিয়ারার শ্বাসকষ্ট শুরু হলো ঠিক সেই সময় দিয়ারা সরে আসার চেষ্টা করতে লাগলো। কিন্তু দেবাংশু পাগলের মতো ও’কে কাছে চাইছে। দিয়ারা একপ্রকার জোর করে সরে আসে দেবাংশুর থেকে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
দিয়ারা: দেবদা!…কি করছো…কি করছো টা কি তুমি..পাগল হয়ে গেছো?
প্রতি উত্তরে দিয়ারা যত টুকু সরে গেছিলো দেবাংশু আবারও ওকে কাছে টেনে নিয়ে সেই দূরত্ব মুছে দিলো। দেবাংশু নিজেও ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। দেবাংশু বাম হাত দিয়ে দিয়ারার কোমর জড়িয়ে আছে। দিয়ারার বাম হাত নিজের কোমরের কাছে দেখে নিজের ডান হাত দিয়ে দিয়ারার বাম হাতে স্লাইড করতে শুরু করে। দিয়ারা শিউরে উঠে দেবাংশুর কোমরের কাছের জ্যাকেট আকড়ে ধরে। দেবাংশু ধীরে ধীরে নিজের আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে করতে হাতের উপরে উঠে কাঁধ হয়ে দিয়ারার গালের কাছে চলে যায়। দেবাংশুর চোখে পরে দিয়ারার বন্ধ, কম্পিত চোখ ও ঠোঁটজোড়া। দেবাংশু দিয়ারার কানের নীচ দিয়ে নিজের হাত প্রবেশ করিয়ে স্লো ভয়েসে বলে,
দেবাংশু: সাহস কি করে হয় ওই অর্জুনের তোকে ছোঁয়ার? হাউ ডেয়ার হি? তোকে ছোঁয়ার অধিকার আমি ছাড়া আর কাওর নেই। তুই শুধু আমার দিয়ু, শুধু আমার!
দিয়ারা চট করে চোখ খুলে ফেলে। হতবাক হয়ে গেছে সে। দেবাংশুর কথাগুলো সমানে কানে বাজছে ওর। সবথেকে বেশি করে বাজছে “তুই শুধু আমার দিয়ু, শুধু আমার!”
দিয়ারাকে অবাক করে দেবাংশু দিয়ারার কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে দিয়ারার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। ধীরে ধীরে আওড়াতে থাকে,
দেবাংশু: তুই শুধু আমার, শুধু আমার। অন্যকাওর সাহস নেই, কোনো অধিকার নেই তোকে ছোঁয়ার। তোকে ছোঁয়ার অধিকার শুধু আমার আছে। তোর উপর শুধু আমার অধিকার আছে, শুধু আমার।
দিয়ারার চোখে খুশিতে জল চলে আসে। দেবাংশুর থেকে সরে এসে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ওর চোখে চোখ রাখতে দেবাংশু আবার দিয়ারার দু গালে হাত রাখে। দিয়ারা জিজ্ঞেস করে,
দিয়ারা: তুমি, তুমি আমাকে ভালো…
দিয়ারা জিজ্ঞেস করতে পারে না তার আগেই দেবাংশু দিয়ারার ঠোঁটজোড়ার উপর দখল নেয়। কিছুক্ষণ পর ছেড়ে দিয়ে দিয়ারার সারা মুখে ঠোঁটের স্পর্শ দিতে দিতে স্লো ভয়েসেই বলে,
দেবাংশু: আমার তোকে চাই। আই নিড ইউ দিয়ু!
কথাটা বলতে বলতেই দেবাংশুর হাত দিয়ারার ওয়ান পিসের স্ট্রাপের কাছে চলে গেলো আর ঠোঁটজোড়া দিয়ারার ঘাড়ে স্পর্শ দিতে থাকলো। দিয়ারা আর বাঁধা দিতে পারেনি দেবাংশুকে। না পেরেছে নিজের মনের প্রশ্নটা করতে।
সকালে,
দিয়ারার ঘুমটা ভাঙতেই দিয়ারা পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। বার বার চোখের পলক ফেলে বোঝার চেষ্টা করলো ও ঠিক কোথায়। কারণ ওর ঘরের পরিবেশের সাথে কোনো মিল পাচ্ছে না ও। মাথাটা দিয়ারা একটু তুলতেই দেখলো দেবাংশুকে। কিছুক্ষণ দেবাংশুর দিকে তাকিয়ে থাকতেই ওর মনে পরলো গতরাতের ঘটনা। সঙ্গে সঙ্গে ও নিজের দিকে তাকালো যেখানে ও নিজেকে দেখতে পেলো দেবাংশুর বুকের উপর। ওরা দুজনের শরীর একটা চাদরের নীচে একে অপরের সাথে মিশে রয়েছে। দিয়ারা লজ্জা পেয়ে মুখ গুঁজে দিলো দেবাংশুর গলায়, তবে তাঁর কোনো টের নেই। সে ঘুমে মগ্ন। কিন্তু দিয়ারা গলায় মুখ গুঁজে দিতেই দেবাংশু নিজের হাত দিয়ে ও’কে জড়িয়ে ধরলো। দিয়ারা কিছুক্ষণ পর ভাবলো যে ওর চলে যাওয়া উচিত, কারণ ঘুম থেকে উঠে দেবাংশুর মুখোমুখি হবে এই অবস্থায় এটা ভাবলেই দিয়ারার লজ্জা লাগছে। তাই দেবাংশুর গেলে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ারা উঠে গেলো এবং ফ্রেশ হয়ে নিজের ড্রেস পরে বেরিয়ে গেলো।
কিছুক্ষণ পর,
দেবাংশুর ঘুমটা ভাঙতেই দেবাংশু উঠে বসলো। চোখটা ভালো ভাবে খুলতেই দেখলো ঘরের সবকিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে পরে আছে। সেসব দেখে দেবাংশুর রাতের কথা মনে পরে গেলো। দেবাংশু নিজের ফোনটা হাতে নেবে সময় দেখার জন্য সেই সময় ওর চোখ গেলো ফোনের নীচে চাপা থাকা একটা কাগজের উপর। কাগজটা হাতে নিয়ে খুলে পড়তেই দেবাংশুর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো কারণ কাগজে লেখা ছিলো, “গতরাতের কথা আমি কখনও ভুলবো না। আমি ভাবিনি তুমি এভাবে আমাকে নিজের মনের কথা জানাবে। আর এটা তো আমার কল্পনাতেও ছিলো না যে, মনের কথা জানানোর সাথে সাথে আমাকে নিজেরও করে নেবে। থ্যাংক ইউ গতরাতের জন্য, এই রাতটা আমার জন্য সবসময় স্পেশাল থাকবে।”
কাগজটা থেকে চোখ সরিয়ে ওর নিজের শরীরের দিকে চোখ যেতেই ধীরে ধীরে সবটাই মনে পরে গেলো। দেবাংশু দু হাত দিয়ে মুখ ঢেকে মাথা উপরের দিকে করে বললো,
দেবাংশু: ওহ গড! আমি এসব কি করে করে ফেললাম? এতো বড়ো একটা ব্লান্ডার কীভাবে আমি… শিট! এখন..এখন কি করবো আমি?
দেবাংশু নিজের মাথাটা ধরে বসে রইলো কারণ মাথাটা ধরে আছে ওর। উঠে ফ্রেশ গিয়ে নিয়ে নীচে আসতেই দেখলো কেয়ারটেকার ওর জন্য ব্ল্যাক কফি এনে দিলো।
দেবাংশু: থ্যাংক ইউ কাকা। এটার খুব দরকার ছিলো।
__হ্যাঁ হ্যাঁ, সে তো কালকেই বুঝেছি তোমার কি দরকার। ম্যাডাম কে কিন্তু তোমার সাথে খুব ভালো মানাবে, আর ম্যাডাম তোমাকে খুব ভালো সামলাতেও পারে। (মুখ টিপে হেসে)
ওনার কথা শুনে দেবাংশুর মুখ থেকে কফি বেরিয়ে এলো একপ্রকার। সেটা দেখে উনি যেমন মুখ টিপে হেসে কথাগুলো বলছিলেন সেভাবেই ওখান থেকে সরে গেলেন।
দেবাংশু: (কপালে দু আঙুল চেপে) জিসাস ক্রাইস্ট! সবটা এভাবে ঘেঁটে ফেললাম?
দেবাংশু কফি শেষ করে নিজের গাড়ির চাবি নিয়ে তৎক্ষণাৎ ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো। উদ্দেশ্য অর্জুনের ফ্যাশন হাউজ।
এদিকে,
অর্জুন: কি ব্যাপার দিয়ারা? তুমি এখানে একা দাঁড়িয়ে আছো যে? কাওর অপেক্ষা করছো নাকি?
দিয়ারাকে অফিসের ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অর্জুন দিয়ারাকে কথাটা জিজ্ঞেস করলো। দিয়ারা সাথে সাথে নিজেকে স্বাভাবিক করে বললো,
দিয়ারা: আব, আমি, আমি ওই দেবদার অপেক্ষা করছিলাম। ও না আসলে তো আমরা কাজ শুরু করতে পারবো না। আমি শুনলাম কিছু ডিজাইন এসে গেছে তো সেটা দিয়ে একবার ট্রায়াল দিয়ে নিলে ভালো হতো তাই আর কি…!!
অর্জুন: ওহ, ওকে। বাট তুমি ভিতরে গিয়ে ড্রেসগুলো দেখতে পারো যতক্ষণ না দেব.. দেবাংশু আসছে।
দিয়ারা: আব না না ঠিক আছে। আমি দাঁড়…
অর্জুন: ওই তো এসে গেছে দেবাংশু।
অর্জুনের কথা অনুযায়ী তাকাতেই দিয়ারা দেখতে পেলো দেবাংশু এসে গেছে। অর্থাৎ ওরা যখন কথা বলছিলো সেই ফাঁকেই দেবাংশু চলে এসেছে। দিয়ারা পিছন ফিরে দেবাংশুর দিকে তাকাতেই দেখলো দেবাংশু ওর দিকে তাকিয়েই এগিয়ে আসছে। দেবাংশুর সাথে চোখে চোখ পড়তেই দিয়ারা লাজুক হেসে চোখ নামিয়ে নিলো আর ওখান থেকে চলে গেলো নিজের মুখের অভিব্যক্তি আড়াল করার জন্য। কিন্তু একজন এসব ঠিকই লক্ষ্য করলো।
দিয়ারাকে চলে যেতে দেখে দেবাংশুও অর্জুনের সাথে আর কথা না বলে চলে গেলো সেদিকে। অর্জুনও নিজের কাজে ফেরত চলে গেলো আর না ভেবে। দিয়ারা স্টুডিওতে এসে সমানে নিজেকে প্রস্তুত করতে থাকে দেবাংশুর মুখোমুখি হওয়ার। ও বুঝতে পারছে না এতো কেন লজ্জা লাগছে ওর।
দেবাংশু: কাইন্ডলি আপনারা একটু বাইরে যাবেন?
দেবাংশু স্টুডিও তে ঢুকতেই কথাটা বললো আর দিয়ারার সারা শরীর জুড়ে একটা কাপুনি তৈরি হলো। ওর শরীরের সমস্ত লোমকূপ জেগে উঠেছে কথাটা শুনে। দেবাংশুর কথা মতো যে কয়েকজন ডিজাইনার ছিলো তাঁরা বেরিয়ে গেলো। দিয়ারা অনুভব করতে লাগলো দেবাংশু ওর কাছে এগিয়ে আসছে। ঠিক যেই সময় দেবাংশু দিয়ারার পিছনে এসে দাঁড়ালো সেইসময় দিয়ারা বললো,
দিয়ারা: আমি, আমি চেঞ্জ করে আসছি।
দিয়ারার বুকের ধুকপুকানি এমনিতেই দৌঁড়াচ্ছিল তার উপর ও’কে যেতে বাঁধা দেওয়ার জন্য দেবাংশু ওর হাত ধরলো তখন ওর হৃদয় বেরিয়ে আসার যোগান হলো।
দিয়ারা: কি..কিছু বলবে?
দেবাংশু: (কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে) গতরাতে যা কিছু হয়েছে সেটা একটা মিসটেক ছিলো দিয়া।
দেবাংশু দিয়ারার হাতটা ছেড়ে দেয় কিন্তু দিয়ারার হাতটা ওখানেই স্থির থাকে। দিয়ারা ধীরে ধীরে হাতটা সরিয়ে এনে দেবাংশুর দিকে ফিরে চোখের দিকে তাকায়। সেটা লক্ষ্য করে দেবাংশু মাথা নীচু করেই বলে,
দেবাংশু: আই অ্যাম সরি। আমার উচিৎ ছিল নিজেকে কন্ট্রোল করা। আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি।
দিয়ারা: ম..মা..মানে? তু..তুমি কি, কি বলছো এসব? আমি, আমি কিছু ব..বুঝতে পারছি না। (হতবাক হয়ে)
দেবাংশু: কালকে রাতে আমাদের মধ্যে যা হয়েছিলো সেটা ভুলবশত। আমি নেশার ঘোরে…আমি নেশার ঘোরে তোর ক্লোজ হয়েছিলাম। আমার কোনো উদ্দেশ্য ছিলো না ওরকম কিছু করার।
দিয়ারা জানো নিজের ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। ও দু পা পিছিয়ে গেলো দেবাংশুর কথা শুনে। চোখের সামনে সব কিছু কেমন জানো ঘুরছে দিয়ারার।
দেবাংশু: দিয়া আমি…
দিয়ারা: (দেবাংশুর কলার ধরে) কেন করলে তুমি আমার সাথে এমন? কেন করলে বলো? কে অধিকার দিয়েছে তোমাকে আমার সাথে এমন করার? আমার সাথে ক্লোজ হওয়ার পর, সারারাত কাটানোর পর এখন তুমি বলছো সেটা মিসটেক ছিলো? (চিৎকার করে)
দেবাংশু: (দিয়ারার হাত ঝাড়া নেড়ে সরিয়ে দিয়ে) ডোন্ট শাউট! আমার উপর চিৎকার করার কোনো অধিকার নেই তোর মত মেয়েদের। আমার মতো এরকম হাজারটা ছেলের সাথে ক্লোজ হোস তুই। একেকদিন একেকটা ছেলে লাগে তোর। তাঁদের উপর গিয়ে চিৎকার কর। আর চিৎকার করবিই বা কীভাবে তাঁদের উপর, তাঁদের কাছে আসতে তো তুই নিজে থেকে দিস আর তাই জন্যেই তাঁরা তোকে সরি বলতে আসে না ইউজ করে চলে যায়। আমাকেও তুই চাইলেই আটকাতে পারতিস কিন্তু আটকাসনি তারপরেও আমি যে তোর কাছে সরি বলতে এসেছি এটাই অনেক নয়? কিন্তু না তোর তো এটারও সুযোগ নিয়ে ড্রামা করা দরকার। (রেগে)
দিয়ারা কিছু বলার মত পরিস্থিতিতে নেই। দেবাংশুর কথাগুলো তীরের মতো বিঁধেছে ওর বুকে। দিয়ারার হয়তো উচিৎ এখন দেবাংশুকে কষিয়ে একটা থাপ্পর মারা কিন্তু দিয়ারার চোখের সামনে গতরাতের ঘটনা ভেসে উঠলো। আর নিজের আত্মসম্মান ভুলে ও জিজ্ঞেস করে বসলো,
দিয়ারা: কেন করলে এমন? গতরাতে যা ঘটেছে সবটা ভুলবশত? তোমার কোনো অনুভূতি ছিলো না তাতে?
দেবাংশু: না ছিলো না।
দিয়ারা: তার মানে আমিও তানিশার মতোই একজন তাইনা? স্পেশাল কেউ না?
দেবাংশু: আমি ভেবেছিলাম তোর সাথে বেশি থাকলে ওই তানিশা আমার ঘাড় থেকে নামবে। এখন সেটাও হবে না বরং উল্টে তুই আমার ঘাড়ে চেপে বসতে চাইছিস।
কথাটা বলেই দেবাংশু পিছন ফিরে গেলো। দেবাংশুর মাথায় সবকিছুর একটা মিশ্রণ চলছে। চোখ খুললে ওর সামনে ভেসে উঠছে বর্তমান আর বন্ধ করলে অতীত। কিছুক্ষণ পর দিয়ারা বললো,
দিয়ারা: আমি ভেবেছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো।
দেবাংশু তৎক্ষণাৎ নিজের চোখ খুলে ফেললো আর দিয়ারার দিকে ঘুরে গেলো। দিয়ারাকে কাঁদতে দেখে দেবাংশুর কিছুক্ষণ আগে নিজের বলা কথাগুলো মনে পরতে লাগলো। দেবাংশু কিছু বলতে যায়,
দেবাংশু: আমি কী বলেছিলেন এমন কিছু…
দিয়ারা: না। (হাত তুলে) আমি ভেবে নিয়েছিলাম। আমি ভেবে নিয়েছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো। এটা আমার ভুল। যা যা হয়েছে তার জন্য আমি দায়ী। আই অ্যাম সরি, নিজের ভুল থাকার পরেও তোমার উপর চিৎকার করার জন্য। আই অ্যাম এক্সট্রিমলি সরি।
দিয়ারা নিজের ব্যাগটা নিয়ে ওখান থেকে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেলো। এদিকে দেবাংশু ঠায় দাঁড়িয়ে দিয়ারার কথা গুলো ভাবছে। শেষের কথা গুলো!
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]’ কথা দিলাম ‘ 🌸❤️
||পর্ব ~ ৪৯||
@কোয়েল ব্যানার্জী আয়েশা
সিয়ারা একভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। এক মনে সে কাচের ওপাশে থাকা ব্যক্তিকে দেখছে যে নির্জীব ভাবে শুয়ে আছে। একটা সময় পর সিয়ারা ডুকরে কেঁদে উঠলো। সঙ্গে সঙ্গে ওর কাঁধে কেউ হাত রাখলো ও সেদিকে না তাকিয়েই বললো,
সিয়ারা: আমার একদম ভালো লাগছে না মা কে এভাবে দেখতে দিয়া। এমনটা কেন হলো বল ত? কেন হলো?
দিয়ারা: যেটা হওয়ার ছিলো সেটা হয়ে গেছে দি। তুই ভিতরে চল। মা তোর উপস্থিতি টের পাবে। এতে মা ভালো হয়েও উঠতে পারে। চল তুই, আর জেদ করিস না।
দিয়ারা এক প্রকার জোর করেই সিয়ারাকে টেনে কেবিনের ভিতর নিয়ে গেলো। সিয়ারা ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে বসলো ওর মায়ের পাশে। কিছুক্ষণ দেখার পর ওর মায়ের হাতটা নিজের হাতের ভাঁজে নিলো। নিজের কপালে মায়ের হাতটা ধরে বললো,
সিয়ারা: মা, আমি এসেছি। আমি এসেছি তোমার সাথে দেখা করতে। আমার ভুল হয়ে গেছিলো সেদিন ওভাবে চলে যাওয়া, তোমাদের সাথে যোগাযোগ না রাখা। আমার ভাবা উচিত ছিল তুমি যখন কাজটা করেছো তখন নিশ্চয় কিছু ভেবে চিন্তেই করেছো। আমার ভুল হয়ে গেছে মা, প্লিজ ওঠো এবার।
সিয়ারা কেঁদে ফেললে দিয়ারা চোখে জল নিয়েই সিয়ারার কাঁধে নিজের ভরসার হাত রাখে পিছন থেকে দাঁড়িয়ে থেকে। সিয়ারা নিজেকে একটু সামলে নিয়ে বলে,
সিয়ারা: প্লিজ তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো মা। অনেক তো এভাবে শুয়ে রইলে। আমার ভালো লাগছে না তোমাকে এভাবে দেখতে। তুমি সুস্থ হয়ে ওঠো, তারপর আমাকে বলো তুমি কেন করেছিলে অমন? আমার যে বিষয়টা জানা খুব দরকার মা, খুব দরকার। প্লিজ ঠিক হয়ে যাও, প্লিজ!
সিয়ারা আরও কিছুক্ষণ ওভাবে বসে থাকে ওখানে। দিয়ারা বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে সিয়ারাকে চুপ করে বসে থাকতে দেখে। সে কেবিনের বাইরে চুপচাপ একা নিজের মতো করে দাঁড়িয়ে থাকে। সিয়ারা বেরিয়ে এসে সেটা দেখতে পেলে একটু অবাক হয়। আজ সকাল থেকেই সে দেখছি দিয়ারা কেমন জানো একটা মনমরা হয়ে আছে। গতকাল সারাদিন ফোন ধরেনি, কথা বলেনি। অর্জুনের কাছ থেকে জেনেছে গতকাল সকালে অফিসে গেছিলো ঠিকই কিন্তু কোনো কিছু না বলেই বেরিয়ে গেছে। সব কিছু ভেবেই সিয়ারা বোনের কাঁধে হাত রাখলো আর জিজ্ঞেস করলো,
সিয়ারা: কি ব্যাপার বল তো তোর? সকাল থেকে দেখছি আপসেট হয়ে আছিস। কি হয়েছে? মন খারাপ?
দিয়ারা: (স্বাভাবিক ভাবে) আমার আবার কি হবে দি? মা কে নিয়েই একটু মনটা খারাপ। দেখতে দেখতে দু বছর হয়ে গেল এখনও কোনো ইমপ্রুভমেন্ট নেই। ভালো লাগে না মা কে ওভাবে শুয়ে থাকতে দেখে।
সিয়ারা: না খুব তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। (জড়িয়ে ধরে)
দিয়ারা: হ্যাঁ। (মনে মনে — আমার মন খারাপের কথা আমার কাছেই থাক দি। সদ্য তুই একটু শান্তি পেয়েছিস, ভালো আছিস। আমি আর চাই না এখন তুই আমার বিষয় নিয়ে ভাবতে শুরু করিস। আর যেখানে আমি যাকে ভালোবাসি সে আমাকে ভালোই বাসে না সেই বিষয় নিয়ে না ভাবাটাই ভালো।) আচ্ছা, চল এখন। আমাকে একটু অর্জুনের অফিসে যেতে হবে কালকে ট্রায়াল দেওয়া হয়নি। আমি এগোচ্ছি তুই আয়।
দিয়ারা এগিয়ে গেলে সিয়ারা ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। একবার মায়ের কেবিনের দিকে তাকিয়ে, কাচের ভিতরে মা কে দেখে নিয়ে আবার দিয়ারার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে নিজের মনে মনে বলে,
সিয়ারা: আমি তোর দিদি দিয়া। তুই সবার সাথে অভিনয় করতে পারলেও আমার সাথে অভিনয় করতে পারবি না। আমি ভালো ভাবেই বুঝতে পারছি কিছু একটা হয়েছে আর তুই সেটা এড়িয়ে যেতে চাইছিস। আর বিষয়টা খুব সম্ভবত দেবকে নিয়ে। নাহ, আমাকে জানতেই হবে ব্যাপারটা কোনো ভাবে।
সিয়ারার ফোন বেজে ওঠে। ফোনটা চোখের সামনে ধরতেই স্ক্রিনে নাম ভেসে ওঠে “আভি”। হালকা হেসে কল রিসিভ করে এগিয়ে যায় দিয়ারা যেদিকে গেছে সেদিকে।
কিছু সময় পর,
অর্জুনের অফিসে এসে দেবাংশু ব্যালকনি সাইডে দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। ওর দৃষ্টি বাইরের দিকে। মাথায় জানো অনেক চিন্তা চলছে। একটা সময় গিয়ে দেবাংশু নিজের মুখ ঢেকে নেয় দুহাত দিয়ে। মনে মনে ভাবতে থাকে,
দেবাংশু: (মনে মনে — দিয়া যাওয়ার সময় বলেছিলো ও ভেবেছিলো আমি ও’কে ভালোবাসি। তার মানে এই জন্যেই ও আমাকে আটকায়নি। এটার মানে এটাই দাঁড়াচ্ছে যে, দিয়াও আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু আমি তো ভেবেছিলাম দিয়া আমাকে ভালোবাসে না, আমি ফোর্স করেছিলাম তাই হয়তো আমাকে আটকাতে পারেনি। ওর কাছেও এটা একটা মিসটেক। আমার মাথাতেই আসেনি যদি ওর কাছে এটা মিসটেক হতো তাহলে ও ওভাবে আমাকে বলত না রাতটা ওর কাছে স্পেশাল ছিলো। কেন যে আমার মাথা কাজ করছিলো না গতকাল ভগবান জানে।)
দেবাংশু মুখ থেকে হাত সরিয়ে রেলিংয়ে দুহাত ভর দিয়ে দাঁড়ালো। বাইরের দিকে তাকাতেই আবারও ওর চোখের সামনে নিজের অতীতের ঘটনাগুলো ভেসে উঠলো আর সাথে সাথে ও নিজের চোখ বন্ধ করে মাথা ঝাঁকিয়ে নিলো।
দেবাংশু: আজ নিজের অতীতের জন্য আমি দিয়াকে এতটা হার্ট করে ফেললাম? ওর সামনে দাঁড়ানোর মত মুখ নেই আমার কথা কি করে বলবো আর ক্ষমা কীভাবে চাইবো? যেখানে ক্ষমা পাওয়ারই যোগ্য না আমি সেখানে ক্ষমা চাইতে যাওয়ার পথও বন্ধ করে দিয়েছি আমি নিজে। কীভাবে ওরকম খারাপ কথা গুলো ওকে বললাম আমি? কীভাবে? ওর ইমোশানকে, ফীলিংস কে মিসটেক বলেছি আমি। ওর আত্মসম্মানে আঘাত করেছি তারপরেও ও আমার সাথে কথা বলেছে এটাই তো অনেক। ওর জায়গায় অন্য কেউ থাকলে হয়তো সেই মুহুর্তে আমাকে যোগ্য জবাব দিতো আর কখনও কথা তো দূর মুখও দেখতো না আমার। সেখানে ও তো আমাকে কিছুই বলেনি আর…আচ্ছা দিয়া কি আর কথা বলবে না আমার সাথে? আর সামনেও আসবে না নিশ্চয়ই আমার?
দেবাংশুর চোখটা জলে ভরে উঠলো নিমিষে। দিয়ারা ওর সাথে কথা বলবে না, ওর সামনে আসবে না, ও আর দিয়ারাকে কাছ থেকে দেখতে পাবে না কথাটা ভাবতেই দেবাংশুর বুকটা মোচড় দিয়ে উঠছে। গতকাল থেকে সব কিছু ভাবার শেষে বারবার এই কথাটা মনে পরলেই দেবাংশুর চোখ থেকে জল পরছে আপনাআপনি। সারারাত সে ঘুমাতে পারেনি এইসব নিয়ে ভেবে ভেবে।
দেবাংশু: আজ শুধুমাত্র ওই মানুষের জন্য আমার জীবনটা আবারও নরকে পরিণত হলো। সারাজীবনের জন্য অপরাধী হয়ে গেলাম নিজের কাছে।
নিজের চোখের জলটা মুছে নিলো দেবাংশু। একটা বড়ো নিশ্বাস নিয়ে পিছন ফিরতেই দেখলো দিয়ারা দাঁড়িয়ে আছে। ওর সাথে চোখে চোখ পড়তেই দিয়ারা হুড়মুড় করে চলে গেলো স্টুডিওর দিকে।
দেবাংশু: দিয়া, দিয়া এসেছে? আমাকে ওর সাথে কথা বলতে হবে। আমি পারছি না, আমি পারছি না আর এভাবে থাকতে।
দেবাংশুর মাথায় এতক্ষণ যা কিছু চলছিলো, যেই ঝড় ওর মনে উঠেছিলো সেটা দিয়ারাকে দেখতেই এক নিমিষে থেমে গেলো। ওর মনে হলো ওর সব প্রশ্নের উত্তর এবং সব সমস্যার সমাধান একমাত্র দিয়ারার সাথে কথা বলা, ওর কাছাকাছি থাকা। একপ্রকার ছুটে চলে গেলো দেবাংশু দিয়ারার পিছনে। স্টুডিওতে দেবাংশু প্রবেশ করতেই সবাই এক এক করে বেরিয়ে গেলো। দেবাংশু দিয়ারার দিকে এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে দাঁড়ালো কিন্তু দিয়ারা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।
দেবাংশু: তুই, তুই যে আসবি আমি ভাবতে পারিনি। গতকাল ওভাবে চলে যাওয়ার পর, আমি ভেবেছিলাম তুই আসবি না। (আমতা আমতা করে)
দিয়ারা: আমি মনে করি আমি কোনো ভুল করিনি তাই আমি এসেছি। তাই আমি মুখোমুখি হওয়ার ক্ষমতা রাখি। এমন কোনো কাজ আমি করিনি বা কোনো কথা আমি বলিনি যাতে আমাকে পালিয়ে বেড়াতে হয় কিংবা আমার কথা বলার মুখ না থাকে, দুবার ভাবতে হয় কি মুখ নিয়ে যাবো কথা বলতে।
দেবাংশু আর কি বলবে ভেবে পেলো না। সে ধীরে ধীরে পিছিয়ে গেলো কারণ দিয়ারা ওর মনের অপরাধ বোধটা আবারও জাগিয়ে তুলেছে। মনে করিয়ে দিয়েছে ও ঠিক কতটা ভুল করেছে, অন্যায় করেছে কিংবা বলা ভালো অপরাধ করেছে। অর্জুন সেই মুহূর্তে ওখানে প্রবেশ করতেই দেবাংশু পিছন ফিরে গিয়ে নিজের চোখের কোণ থেকে জলটা মুছে নিলো।
অর্জুন: কি ব্যাপার দিয়া? এনি প্রবলেম?
দিয়ারা: না না। আমি চেঞ্জ করতে যাচ্ছি।
অর্জুন: ওকেই দ্যান, আমি আসছি। আমি জাস্ট দেখতে এসেছিলাম কোনো প্রবলেম হচ্ছে কি না বা হেল্প লাগবে কি না।
অর্জুন চলেই যাচ্ছিলো ঠিক সেই সময় দিয়ারা বললো,
দিয়ারা: আব অর্জুন! তুমি কি আমাকে একটা হেল্প করতে পারবে?
অর্জুন: ইয়াহ সিওর, বলো?
দিয়ারা: আমি চাই তুমি আমার ড্রেসটা সিলেক্ট করে দাও। আমি কনফিউজ কোনটা পরলে ভালো লাগবে।
অর্জুন: ওকেই, হোয়াই নট?
দিয়ারা: ওকে। আর আজকে একবার রাম্প ওয়াকটা করে নেবো এই আউটফিটে। ঠিক আছে?
অর্জুন: ফাইন!
দিয়ারা অর্জুনের সাথে ব্যস্ত হয়ে গেলো, লক্ষ্য করলো না একজন রাগ ও কষ্ট দুই নিয়ে ওর দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে। অর্জুন দিয়ারাকে ড্রেস সিলেক্ট করে দিলে দিয়ারা চেঞ্জ করতে চলে যায় আর অর্জুন দেবাংশুর দিকে তাকায় যে কি না ক্যামেরা সেটআপ করছে।
ফটো সেশন শেষ হয়ে গেলে দিয়ারা আর অর্জুন রাম্প ওয়াকের প্র্যাকটিস শুরু করো সেটাও আবার দেবাংশুর চোখের সামনেই। দিয়ারার অর্জুনের সাথে হেসে কথা বলা, অর্জুনের দিয়ারাকে বারবার স্পর্শ করা এই সব কিছু জানো দেবাংশুর সহ্যের সীমা অতিক্রম করে যায় তাই ও দ্রুত বেরিয়ে যায় ওখান থেকে।
দেবাংশু বেরিয়ে যেতেই দিয়ারা সরে আসে অর্জুনের থেকে আর বলে,
দিয়ারা: আজ এতটুকুই থাক অর্জুন? আমার খুব টায়ার্ড লাগছে। কালকে ঘুমটা ঠিক হয়নি।
অর্জুন: ইয়াহ ওকে, বাট তুমি ঠিক আছো তো?
দিয়ারা: হ্যাঁ, একটু রেস্ট প্রয়োজন। আমি আসি?
অর্জুন: ওকে।
দিয়ারা ড্রেস চেঞ্জ করতে চলে গেলো। নিজের ড্রেস পরে বেরিয়ে এসে আর এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করে বেরিয়ে গেলো ওখান থেকে। পার্কিং লটে যেতেই দেখলো দেবাংশু দিয়ারার গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাথা নীচু করে। অবাক হয়ে গেলো যখন দেবাংশুর হতে সিগারেটের সাথে সাথে নীচে সিগারেটের ফিল্টার পরে থাকতে দেখে। এই মানুষটাই একদিন ও’কে বলেছিলো সিগারেট খেতে না আর আজ এই মানুষটাই ওর জন্য সিগারেট খাচ্ছে?
দিয়ারা: (মনে মনে — সত্যি কি আমাদের মধ্যে যা হয়েছে সেটা মিসটেক ছিলো দেবদা? যদি তাই হয়ে থাকে, যদি তুমি আমাকে ভালো নাই বেসে থাকো তাহলে কেন আমার প্রতি তোমার এই অধিকার বোধ? কেন তুমি আমাকে অন্য ছেলের সাথে সহ্য করতে পারো না? আমি জানি, শুধু অর্জুন না। যেকোনো ছেলে আমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকালে তুমি সহ্য করতে পারো না। এর প্রমাণ আগেও আমি পেয়েছি আর এখনও চাইলেই আমি পেতে পারি কিন্তু আমি সেটা করবো না। কারণ এমনিতেই তোমার আমাকে খারাপ মেয়ে মনে হয়েছে আর ঠিক কি কারণে তোমার আমাকে খারাপ মেয়ে মনে হয়েছে এটা আমাকে জানতে হবে।)
দেবাংশু মাথাটা তুলতেই দিয়ারাকে দেখতে পেলো আর হাত থেকে সঙ্গে সঙ্গে সিগারেটটা ফেলে দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। দিয়ারা সেদিকে না তাকিয়ে এগিয়ে গিয়ে ওর সামনে এসে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো,
দিয়ারা: কি দরকার? না জেনে বুঝে এখনও অপমান করা, অসন্মান করা বাকি আছে?
দেবাংশু: (তাচ্ছিল্য হেসে) যাঁর কথা বলারই মুখ নেই সে আর অপমান, অসন্মান কীভাবে করবে? চোখে চোখ রাখার মতো ক্ষমতাটাও আর বেঁচে নেই নিজের অপরাধে।
দেবাংশু দিয়ারার সামনে থেকে সরে দাঁড়ায়। দেবাংশু এগিয়ে গেলে দিয়ারা পিছন ফিরে তাকায় আর কাকতালীয় ভাবে দেবাংশুর সাথে চোখে চোখ পরে যায়। দেবাংশু এইবার মুখ ঘুরিয়ে নেয় আর পকেট থেকে একটা সিগারেট বার করে সেটা জ্বালিয়ে নেয়। তারপর এগিয়ে যায় নিজের গাড়ির দিকে।
দিয়ারার চোখ থেকে জল গড়িয়ে পরে দেবাংশু চোখের আড়াল হতেই। দিয়ারা তা মুছে নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে গেলো ঠিকই কিন্তু দেবাংশুর ব্যবহার দিয়ারার মনে একটা আলাদাই ঝড় তুলে দিয়েছে।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে🥀]
অর্জুনকে নায়ক করেদি পাঠকগণ? দেবাংশু তো অপরাধ করেছে। কি বলেন?