#কর্নেল_সাহেব
লেখিকা সুরিয়া মিম
পর্ব- ১৪
– সারা জীবন এভাবে ভালোবাসবে তো আমাকে? মিম মাথা নেড়ে হ্যাঁ সূচক উত্তর দেয় ওকে।অধরা মিমকে মেরুন কালারের শাড়িতে দেখে বলে,
– বাহ!
রে ছোটো খুব সুন্দর মানিয়ে তোকে এই শাড়ি টা তে।রাদ নিপা কে ডেকে বলে,
– তুমি তো খুব সংশয়ে ছিলে পরে কি পরেনা? এখন খুব সুন্দর লাগছে না দু’টোকে? নিপা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
– সাভিনের বাবা (রাদ) আমি তো ভেবেছিলাম।মিম আমার মন রাখার জন্যে কথা গুলো বলেছে আমাকে? রাদ মৃদু হেসে বলে,
– কোনো কিছু সামনে থেকে না দেখে বিচার কথা উচিত না।কতবার বলেছি তোমাকে? ইশান ইমানকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলে,
– কি রে ভাই একটু তোর বউয়ের পিঠে চুমু খেয়েছি? তাই বলা কথা বন্ধ করে দিবি আমার সাথে? ইমান রেগে গিয়ে বলে,
– যা তা,তাই না? তোমার তো খুব ইচ্ছে করছে আমার বউয়ের সন্তানের বাবা হাতে।বড় ভাসুরের সাথে পরকীয়া করার কি কি সুফল হতে পারে? সেটাই তো তুমি সেদিন বোঝাচ্ছিলে তাকে।শোন,আমি মিশনে যাওয়ার পরে যদি তুই ওকে অসম্মান করার চেষ্টা করো না।আমার থেকে কেউ খারাপ হবে না তোর কাছে।ইশান দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
– আমি জানি,
ও আমার ছোটো ভাইয়ের বউ।কাজেই সজ্ঞানে থাকলে এই কাজ টা আমি কখনো করতাম না ওর সাথে।মিম ওদের দু’ভাই কে খুঁজতে খুঁজতে এসে করিডরে দেখে বলে,
– আপনারা এখানে কেন? চলুন।বাবা খেতে ডেকেছে আপনাকে।মিম ঘরে এসে দরজা লাগিয়ে মাহি আলম চৌধুরী কে বলে,
– মা আমি আজকে কিছু চাইতে এসেছি তোমার কাছে।বাম হাতের উল্টো পিঠে মাহি আলম চৌধুরী চোখের জল মুছে স্বাভাবিক হয়ে বলেন,
– কি চাই মা তোর? আমার সাধ্য থাকলে।আমি অবশ্যই সেটা এনে দিবো তোমাকে।মিম মৃদু হেসে মাহিম আলম চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে বলে,
– মা আমি চাই তোমাকে আরো একবার বিয়ে দিতে।তুমি এভাবে একা একা কি করে সারাটা জীবন কাটাবে মা? দিন শেষে তোমারো তো একজন মনের মানুষের প্রয়োজন আছে? মেয়ের কথা শুনে মাহি আলম চৌধুরী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন তার একরত্তি মুখের দিকে।কিছুক্ষণ চুপ থেকে সে মেয়ের উদ্দেশ্য বলে ওঠে,
– মা তুমি কি ফাজলামো করছ আমার সাথে? মিম তার চোখে চোখ রেখে বলে,
– ফাজলামো না মা।আমি যেটা চাই,সেটাই বলছি তোমাকে।আমি তোমার জন্য পাএ ঠিক করে রেখেছি।তুমি চাইলে আমি তোমাকে দেখা করে নিয়ে যেতে পারি তার সাথে।মেয়ের কথা শুনে মাহি আলম চৌধুরীর চোখ দু’টো রক্তিম বর্ণ ধারন করে সাথেসাথে।হঠাৎ সে মেয়ের গালে কষিয়ে দু’টো থাপ্পড় মেরে বেড়িয়ে যায় সে ঘর থেকে।
ঘন্টাখানেক বাদে, সে গেস্ট রুম থেকে বেড়িয়ে এসে হৃদিকা এহসান কে ডেকে জিজ্ঞেস করে,
– বড় বেয়ান আমার মেয়ে কোথায়? কতক্ষণ ধরে দেখতে পাচ্ছিনা তাকে? রায়হান সাহেব মাহি আলম চৌধুরী কে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলেন,
– বেয়ান মেয়ে বিয়ে দিয়ে দিয়েছেন।মেয়ে এখন আমার।রাগ ঝাল যা করার আমি করবো ওকে।আপনি কেন মারতে গেলেন আমার মেয়ে টাকে? সকাল থেকে কাজের চাপে মেয়ে টা না খেয়ে আছে।এখন আবার কেউ ওকে জোর করে ও খাওয়াতে পারছেনা।সে খাবে না বলে জেদ ধরে আছে আর সত্যি বলতে আপনি এখনো যথেষ্ট সুন্দরী।তাই আরেক বার বিয়ে টা দেওয়া যায় আপনাকে।ইয়ে মানে আপনাকে দেখে এখনো মনে হয় না যে আপনার তিন তিন তিনটে বাচ্চা আছে? মাহি আলম চৌধুরী রায়হান সাহেবের কথা শুনে হাসতে হাসতে বলে,
– বেয়াই সাহেব আপনি কি ফ্লার্ট করার চেষ্টা করছেন আমার সাথে? রায়হান সাহেব চোখের চশমা ঠিক করতে করতে বলেন,
– নেভার মাইন্ড,আমার ছেলের মা (এনা) সুস্থ থাকলে এখন হয়েছতো কিছু একটা ছুড়ে মারতো আমার মুখে? কথা শেষ করে রায়হান সাহেব পিছনে ফিরে দেখে এনা খান একটা ঝাড়ু হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এগিয়ে এসে এনা খান খপ্প করে রায়হান সাহেবের হাত ধরে জিজ্ঞেস করে,
– ওই বুড়ো ব্যাটা ওই,তুই এখানে আলাদা ভাবে কি কথা বলছিস পরনারীর সাথে? মাহি আলম চৌধুরী হাসতে হাসতে রায়হান সাহেব কে বলে,
– পাগলের পাগলামি শুরু হয়েছে,এবার সামলান তাকে।ইমান এগিয়ে এসে মাহি আলম চৌধুরী কে বলে,
– আপনি কেন মা ওকে বকতে গেলেন? এখনো কোরবানির মাংস মুখে তোলেনি সে।
– প্লেট টা আমার কাছে দাও বাবা।ও খাবে আজ ওর বাপে ও খাবে।কথা টা শুনে আদিব সাহেব মাহি আলম চৌধুরীর দিকে চুপ করে চেয়ে আছে।মাহি আলম চৌধুরী ঘরে ঢুকে মেয়ে কে বুকে জড়িয়ে ধরে বলে,
– তুমি আমার একমাত্র মেয়ে না মা? আমি খুব ভালোবাসি তোমাকে।তোমার গায়ে এর আগে আমি কখনো হাত তুলেছি? প্লিজ ক্ষমা করে দাও আমাকে।মিম মুখ ভেংচে বলে,
– মাই লাইফ,মাই রুল’স আপনি এখন আসতে পারেন এখান থেকে।মাহি আলম চৌধুরী হঠাৎ মেয়ে কে জুতো দেখিয়ে বলেন,
– মাই জুতো ইন ইওর গাল।যদি এখন তুমি এই মুহূর্তে খাবার না খাও আমার হাতে।মিম উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে পরে বলে,
– তুমি কি মনে করো মা? তোমার মেয়ে শুধু সমাজের কথা ভাবে? আমি এতো মানুষের কথায় ভয় পাই না।প্লিজ তুমি একটু আমার কথা গুলো ভেবে দেখো শান্ত ভাবে।মাহি আলম চৌধুরী মৃদু হেসে বলেন,
– আমি রাজি তবে একটা শর্ত আছে।মিম কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করে,
– কি শর্ত মা?
– আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নানি হতে চাই ঠিক আছে? তুমি যদি আমাকে এই খুশি খবর টা দিতে পারো তাহলেই ভেবে দেখা যাবে।মিম আবারো মুখ ভেংচে বলে,
– আমি মানতে পারলাম না।আগে তোমাকে বিয়ে করতে হবে।দেখো আম্মু সন্তান দাওয়া না দেওয়া আল্লাহর ইচ্ছে।আমি তো আর জোর করতে পারি না তাকে।
রাতে,
রিক্ত ঘুমিয়ে যাওয়ার পর।ইমান মিমকে নিয়ে চলে আসে এটাচ বেডরুমের বিছানাতে।বেচারি কিছুটা লজ্জা পেয়ে ইমানকে বলে,
– কি অবস্থা? বাচ্চাদের মতো ব্লাউজ ধরে টানাটানি করছেন কেন এভাবে? ইমান ওর কানে ফিসফিস করে বলে,
– চুপ করো যেটা করছি,সেটা করতে দাও আমাকে।
মাঝরাতে,রিক্ত ঘুম থেকে উঠে দেখে মিম বা ইমান দু’জনের কেউ নেই ওর আশেপাশে।ও খুঁজতে খুঁজতে পাশের ঘরে এসে দেখে,
ওর রাঙা মা পাতলা কাঁথা গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে।ইমান হঠাৎ ওকে কোলে তুলে নিয়ে বলে,
– ওরে বুড়ি তুমি ঘুম থেকে উঠেছ কেন এতো রাতে?
– তুমি আর রাঙা মা এই ঘরে ছিলে দাদাভাই?
– হ্যাঁ আসলে তোমার রাঙা মায়ের গা,হাত ও পায়ে খুব ব্যাথা করছে।আমি ভাবলাম একটু টিপে দেই? রিক্ত চুপ করে তাকিয়ে আছে মিমের দিকে।এগিয়ে এসে লাইট জ্বালিয়ে মিমকে বলে,
– দেখি মা কোথায় ব্যাথা করছে? মিম ততক্ষণে শাড়ি টা গায়ে জড়িয়ে বলে,
– সমস্যা নেই মা।ব্যাথা কমে গেছে।আসো তুমি আমি ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছি তোমাকে।রিক্ত মিমকে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করে,
– ব্লাউজ কেন খুলেছ রাঙা মা? রাতে গরম লাগে? ইমানের দুষ্টু হাসি দেখে এই মুহূর্তে মিমের মনে হচ্ছে ওর টাক ফাটিয়ে দিতে।পরক্ষণে রিক্ত কি ভেবে ইমানকে বলে,
– নাইটি না কি যেন বলে? দাদাভাই তুমি ও গুলো পারো না মাকে কিনে দিতে? শাড়ি দেখলে তো আমারি গরম লাগে বুঝিনা বাপু মা এগুলো পরে কি করে ঘুমিয়ে থাকে? রিক্ত ঘুমিয়ে যাওয়ার পর ইমান খুঁতখুঁত করা শুরু করেছে আর আড়চোখে একবার মিমকে দেখে।মিম ইমান কে বুকের মধ্যে জড়িয়ে ধরে বলে,
– আপনার মতো ফাজিল প্রকৃতির লোক।আমি খুব কম দেখেছি আমার আশেপাশে।ইমান মৃদু হেসে মিমের নাকের ওপর চুমু খেয়ে বলে,
– আমার কাছে তো সুন্দরী বউ একটাই আছে।
– হয়েছে আর ঢং করতে হবে না আপনাকে।
– আমি খুব ভালোবাসি লক্ষী বউ,খুব ভালোবাসি তোমাকে।মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– হয়েছে হয়েছে এখন একটু ঘুমান।
– না আগে আদর করো আমাকে? মিম লজ্জা পেয়ে বলে,
– পারবোনা,এবার দেখি আপনি কি করেন আমার সাথে? ইমান হাসতে হাসতে মিমের গালে চুমু খেয়ে বলে,
– আল্লাহ দিয়ে হয়তো খুব তাড়াতাড়ি খুশির খবর শোনা যাবে।মিম দু’হাত দিয়ে ইমানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– কি অদ্ভুত আপনি? কিছু আটকায় না আপনার মুখে।
– লজ্জা পেলে তোমাকে দেখতে আরো বেশি সুন্দর লাগে আমার কাছে।মিম মনেমনে বলে,”উফফ,এই লোকটার জ্ঞান বুদ্ধি হবে কবে? যাক বাচ্চা টা তো শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে।”