#কাছে_দূরে 💐
#moumita_meher
#পর্ব___৩৭
আচমকা হেঁচকা টান খেয়ে বিষ্ময়ে ফুলে ফেঁপে উঠেছে হীরের মুখ। চোখ দুটো কপালে তুলে সাবাবের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ মুখ করে তাকালো। মনেমনে প্রশ্নরা নাচ পেড়ে বেড়াচ্ছে, ‘এমন করে টেনে আনার মানে কি হ্যাঁ।’ কিন্তু মুখে কোনো কথা নেই। চুপ করে সাবাবের ভাবভঙ্গি পর্যবেক্ষণ করছে। সাবাবের চোখে মুখে চাপা আতংক। সে বড়বড় নিঃশ্বাস ফেলে হীরকে ভালো করে দেখতে লাগল। কিন্তু হঠাৎই মনে হলো তার এহেম আচরনে মনির সন্দেহ হতে পারে। তাই তৎক্ষনাৎ মুখের ভাবভঙ্গিমা পরিবর্তন করে ফেললো। আঁড়চোখে একবার মনিকার দিকে চেয়ে হীরের উদ্দেশ্যে বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ তোর কাঁধে ওটা কি রে?’
সাবাবের কথায় হীরের বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। কুঁচকানো কপাল চওড়া করে ভীত কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ ক..কি!’
—-‘ দেখ না চেয়ে। কিভাবে যেন নড়চড়া করছে।’
হীর ভয় পেয়ে চেঁচিয়ে উঠলো সাবাবের হাত খামচে ধরলো। চোখ জোড়া বন্ধ করে মৃদুস্বরে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
—-‘ আআআ ক,,কি নড়া,,চড়া করছে?’
সাবাব হীরকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে দিয়ে বলল,
—-‘ আমি দেখলেই কি চলে যাবে ওটা? তোর নিজের চোখে দেখতে হবে। দেখ দেখ।’
সাবাব হীরকে সরিয়ে দিতে চাইলে হীর আরও লেপ্টে গেলো সাবাবের সাথে। তার অসহায় মনটা ছটফট করে বারবার বলে উঠলো, আর যাই হোকনা কেন কেনো আরশোলা যেন না হয়।’
সাবাব হীরের মনের সংশয় সত্যি করে দিয়ে বলে উঠলো,
—-‘ আরে এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? এটা তো একটা আরশোলা।’
সাবাবের কথাটা বলতে দেরী হলেও হীরের তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে গলা ফাটিয়ে চেঁচাতে দেরী নেই। যা দেখে সাবাব হাসতে হাসতে আধমরা হয়ে যাচ্ছে। হীর আর সাবাবের কান্ড দেখে নাজমা বেগম হাসতে হাসতে এগিয়ে এলেন। হীরের পেছন এসে দাঁড়িয়ে সাবাবের কাঁধে একটা মার দিয়ে বকার সুরে বলে উঠলেন,
—-‘ বেয়াদব ছেলে। ভয় দেখাচ্ছিস কেন মেয়েটাকে শুধু শুধু?’
সাবাব হাসতে হাসতে বলল,
—-‘ কি করবো বলো তো। তোমার হীরপরি যে এতোটা ভীতু সেটা তো আগে জানতাম না।’
সাবাবের কথায় ছিটকে পড়লো হীর। রাগে ফুঁসে উঠে বলল,
—-‘ তুমি আমার সাথে মজা করছিলে এতক্ষণ?’
সাবাব হাসতে হাসতে পেট চেপে ধরে বলল,
—-‘ আগগেহ্!’
হীর রাগে সাবাবের দিকে তেড়ে যেতেই সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো সাবাব। হীরের দিকে এবার বেশ সিরিয়াস ভঙ্গিতে চেয়ে বলল,
—-‘ এবার কিন্তু আমি মজা করছিনা। এবার সত্যি সত্যিই কোনো পোকা এসে বসেছে তোর কাঁধে। দেখ? বিশ্বাস না হলে মাকে জিজ্ঞেস কর না?’
হীর বিশ্বাস করলো না সাবাবের কথা। তাই আর এবার ভয়ও পেলো না। সে সাহস নিয়েই ঘাড় ফিরিয়ে তাকালো তার কাঁধের উপর। এবার যদি কাঁধে সত্যিই কিছু না থাকে তাহলে সাবাবের আজ খবর করে ছাড়বে সে। হীর কাঁধের উপর তাকাতেই দেখলো কাঁধের উপর কিছুই নেই। তার মানে সাবাব তাকে এবারও বোকা বানিয়েছে। আজ তো হচ্ছে এই বদলোকের। বারোটা,তেরোটা সবঘন্টাই বাজাবে সে। হীর রাগান্বিত হয়ে সাবাবের দিকে তাকাতেই সাবাব বাঁধিয়ে ফেললো আরেক কান্ড। দু’হাত ভর্তি হলুদ একদম পুরোটাই লেপ্টে দিলো হীরের মুখে। আকষ্মিক ঘটনার জন্য হীর যে কোনকালেই প্রস্তুত ছিলো না। তব্দা খেয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো বেচারী। এটা সাবাব কি করলো? সাথে তো তার সাধের মেকআপের বারোটা বাজিয়ে দিলো। হীর প্রচন্ড রাগ নিয়ে চেঁচিয়ে উঠে তেড়ে গেলো সাবাবের দিকে। সাবাব হীরের তেড়ে আসা দেখে থতমত খেয়ে উল্টোদিকে ফিরে ছুট্টে পালালো। এদিকে মনিকা সাবাবের চালাকি ধরে ফেলে আর একদন্ডও থাকলো না এখানে। রাগে, ক্ষোভে একপ্রকার ফুঁসতে ফুঁসতে চলে গেলো এখান থেকে। আর বাকিরা তো তাদের দু’জনের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে কুল পাচ্ছে না।
—-‘ দাঁড়াও বলছি? একদম পালাবে না। দাঁড়াও ওখানে!’
সাবাব হীরের কাছ থেকে পালাতে নিজের রুমের ভেতর এসে ঢুকল। আর হীর তার পেছন পেছন তার রুমেই এলো। হীরের চোখ মুখ রাগের দরুন লাল হয়ে উঠেছে। যা দেখে সাবাব আরও ভীষণ ক্ষেপিয়ে তুলছে বেচারিকে।
—-‘ দাঁড়াও দাঁড়াও মানে কি হ্যাঁ? আমি দাঁড়ালেই তুই বুঝি হলুদ লাগাতে পারবি আমাকে?’
হীর ক্ষেপা কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ একবার দাঁড়াও না সাহস করে। তারপর দেখাচ্ছি মজা।’
—-‘ দাঁড়ালে কি করবি শুনি?’
—-‘ তোমায় এই হলুদ দিয়েই ভূত বানাবো। তুমি কতটা বাজে লোক। এভাবে আমার মেকআপ টা নষ্ট করে দিলে?’
—-‘ তুই কি রেগে যাচ্ছিস ভীতুর ডিম?’
হীর অতিরিক্ত রাগ চেপে অবাক দৃষ্টি মেলে তাকালো। চোখ বড়সড় করে ফুঁসে উঠে বলল,
—-‘ তুমি আমাকে ভীতুর ডিম বলছো? দাঁড়াও তুমি…’
এই বলে হীর সাবাবের পানে আবারও তেঁড়ে গেলে সাবাব তাকে ঘুরিয়ে দৌড়ে দরজার কাছে চলে আসে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
—-‘ তো? ভীতুর ডিমকে তো ভীতুর ডিমই বলবো। আর কি বলবো?’
—-‘ না। তুমি আমাকে ভীতুর ডিম বলবে না। আমি মোটেই ভীতুর ডিম নই।'(চেঁচিয়ে)
—-‘ তাহলে তুই কি শুনি?’
—-‘ শোনাচ্ছি তোমায়। ওখানেই দাঁড়াও।’
—-‘ এ..এই না। না। হীর না। ওখানেই দাঁড়া।’
হীর সাবাবের বারন না শুনে তার দিকে তেড়ে আসতেই সাবাবের পালানোর রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এবার আর সে হীরকে ওভারটেক করে যেতে পারেনা। হীরের দু’হাত ভর্তি হলুদ। যেটা সাবাব তাকে করুন ভাবে লাগিয়েছে। নিজের গাল থেকেই সেটা তুলেছে হীর। এখানে কম করেও হলে এক বাটির অর্ধেক হলুদ আছে। হীর সাবাবের সামনে এসে দাঁড়াতেই সাবাব পড়ল বিপাকে। ভয়ংকর মায়াবতীকে ছেড়েও পালাতে পারছেনা আবার দাঁড়িয়েও থাকতে পারছেনা। কিন্তু এতো সহজে হীরের হাতে ধরা দিলে কি করে হবে? ধরা দিলেই হীর এখান থেকে চলে যাবে আর মনি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশে হীরের আরেকটা ক্ষতি করে বসবে। তাই সাবাব সুযোগ বুঝে তার দরজার সবচেয়ে উপরের ছিটকিনিটা লাগিয়ে দিলো যেটা হীর চাইলেও খুলতে পারবেনা। হীর প্রতিশোধের নেশায় আর খেয়াল করে উঠতে পারেনি যে সাবাব দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। সে হলুদ মাখা হাত জোড়া সাবাবের দিকে এগিয়ে নিতেই সাবাব ক্ষপ করে তার হাত জোড়া ধরে ফেলে। হীর ভ্রু কুঁচকে সাবাবের দিকে তাকাতেই সাবাব অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ লক্ষি মেয়ে না তুই? এভাবে কি কেউ কাউকে হলুদ মাখায় বল?’
হীর তেতে উঠে বলল,
—-‘ তাহলে তুমি আমাকে কেন মাখালে? তুমি জানো আমি আমার কত সাধের মেকআপ টা একঘন্টা ধরে করেছি যা তুমি এক সেকেন্ডে শেষ করে দিলে।’
সাবাব ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরে দীর্ঘশ্বাস ফেললো। হীরের দিকে অসহায় চোখে তাকাতেই পুনরায় হীরের জোড়াজুড়ি শুরু হয়ে গেলো। সাবাব সরে যাচ্ছে হলুদ লাগাবেনা বলে আর হীর তেড়ে যাচ্ছে সাবাবকে হলুদ মাখাবে বলে। অবশেষে জোড়াজুড়ির পরিণতি হলো দু’জনেই হুমড়ি পড়ে গেলো বিছানার উপর। সাবাবের উপরের পড়ল হীর। তাই মোক্ষম হাতিয়ার হলো হীরের হাতে। সে সাবাবকে ওঠার বিন্দুমাত্র সুযোগ না দিয়ে তার উপরে চড়ে বসল। সাবাব চোখ জোড়া ডিম্বাকৃতির ন্যায় করে হীরের কান্ড দেখছে। হীর শয়তানি হাসি দিয়ে বলল,
—-‘ এবার কোথায় পালাবে চান্দু। এবার তো তোমাকে পুরো হলুদ মাখিয়েই ছাড়বো।’
হীরের কথায় সাবাব শুঁকনো ঢোক গিলল। জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলল,
—-‘ হীর… পাগল হয়ে গেছিছ তুই? দেখ আমাকে হলুদ মাখাস না। বাইরে কত আত্নীয়রা আছেন তাদের তো ভালোভাবে খাতিরদারি করতে হবে তাই না? আর এখন যদি এভাবে হলুদ মেখে তাদের সামনে যাই তাহলে তারা কি ভাবতে বলতো?’
হীর ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। সাবাবের দিকে খানিক ঝুকে পড়ে বলল,
—-‘ আমি জানি এসব হচ্ছে তোমার বাহানা। এক্চুয়েলি তুমি আমাকে ভয় পাচ্ছো। আর তাই আমার থেকে হলুদ লাগাতেও ভয় পাচ্ছো। আরে সত্যি করে বলো না তুমি একটা ভীতুর ডিম।’
সাবাব ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে বলল,
—-‘ আমি ভীতুর ডিম?’
—-‘ হ্যাঁ তুমি ভীতুর ডিম। আর সেটা তুমি নিজের মুখে স্বীকার করবে। যদি স্বীকার করো তাহলে আমি তোমাকে একটু খানি হলুদ মাখাবো। আর যদি স্বীকার না করো তাহলে আমি এই হলুদ দিয়ে তোমাকে ভূত বানিয়ে ছাড়বো।’
সাবাব চোখ কপালে তুলে বলল,
—-‘ মানে? আমি এখন স্বীকার করবো, আমি ভীতু?’
—-‘ হ্যাঁ। জলদি বলো আর নয়তো… আআআ।’
আকষ্মিক ঝড়ের বেগে মনে হলো উল্টে গেলো সব। হীর ভয় পেয়ে চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিলো। অতঃপর কয়েক সেকেন্ড বাদে চোখ খুলে দেখতে মনে হলো আসলেই উল্টে গেছে সব। সে এখন নীচে আর সাবাব তার উপরে। হীর চাপা আর্তনাদ করে বলে উঠলো,
—-‘ তুমি ওখানে কি করে গেলে?’
সাবাব ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। হীরের দিকে খানিক ঝুঁকে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল,
—-‘ ইট’স ম্যাজিক।’
সাবাব তার কাছে চলে আসতেই আবারও চোখ বন্ধ করে নিলো হীর। সাবাব মুচকি হাসল। খুব ভালো করে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল হীরের ভয়ার্ত মুখ খানা। ভয় পেলেও অতিরিক্ত মায়াবী লাগে হীরকে। যা এর আগেও প্রমান পেয়েছে সাবাব। হীর ভয় পাচ্ছে দেখে তার থেকে দূরে না গিয়ে আরও কাছে যেতে ইচ্ছে করল তার। কিন্তু গেলো না। আগের জায়গাতেই স্থির থাকল সাবাব। হীর ভয়ে ভয়ে চোখ খুলে ঢোক গিলল। কাচুমাচু করে বলতে লাগল,
—-‘ আ..আমি কিন্তু ত..তোমাকে কিছু বলিনি ভাইয়া। (সাবাব তাকাতেই) ন..না মানে বলতে চাইনি।’
সাবাব ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। বলল,
—-‘ হু তুই আমাকে কিছু বলিস নি, মানে বলতে চাসনি। কিন্তু আমি তো নিজের চোখে দেখেছি। তুই বেশ গর্ভের সাথে বলেছিস আমি নাকি তোকে ভয় পাচ্ছি। আর এও বলেছিস আমি নাকি ভীতু। আর সেটা আমাকে স্বীকার করতে হবে। যদি স্বীকার করি তবে তুই আমাকে একটু খানি হলুদ মাখাবি আর যদি স্বীকার না করি তাহলে?’
হীর শুঁকনো গলায় ঢোক গিলে বলল,
—-‘ ক…কিছুনা!’
—-‘ কিছু না মানে? কিছু তো একটা অবশ্যই। বল জলদি আর নয়তো…’
—-‘ তোমাকে হলুদ মাখিয়ে ভূত বা..বানা..বো!’
হীর ভয়ের দরুন এক দমে বলে ফেললো কথাটা। সাবাব মনে মনে হাসল। হীরের ভয়ার্ত চোখে তার ঘোর লাগানো দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। অতঃপর ধীরেধীরে আরও খানিকটা এগিয়ে গেলো হীরের মুখোমুখি। হীর দৃশ্য পটের বাকি সিন কল্পনা করে চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নিলো। আর বারবার শুঁকনো গলায় ঢোক গিলতে লাগল। সাবাব হীরের কান্ড দেখে মনে মনে না হেসে পারছেনা। সে হীরের মুখোমুখি হয়ে হীরের দুই হাতের আঙ্গুলে নিজের হাতের আঙ্গুল গুলো আঁটকে নিলো। যা উপলব্ধি হতেই চোখ খুলে তাকালো হীর। ভয়ার্ত দৃষ্টিতে সাবাবের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠলো,
—-‘ ক..কি করছো!’
সাবাব মাতাল হাসলো। হীরের প্রশ্নে জবাব না দিয়ে হীরের চোখে, গালে আর ওষ্ঠদ্বয়ে বারবার নজর বুলাতে লাগল। যা দেখতেই হীরের বুকের ভেতরে উচ্চশব্দে কেউ ঢোল পেটাতে লাগলো। সাবাব আর হীরের মাঝে দূরত্ব স্রেফ এক ইঞ্চির। হীর স্ব-ভয়ে পূনরায় চোখ বন্ধ করে নিলো। কিন্তু সে যা ভাবলো সাবাব সেটার কিছুই করল না। বরং তাকে অবাক করে দিয়ে তার কপালে ভালোবাসার পরশ আকলো। আর তারপর তার গালে গাল ছোঁয়ালো। দুইপাশের গালে সাবাব দুই গাল ঘষে স্বইচ্ছায় হলুদ মেখে নিলো। হীর অবাকের শীর্ষে পৌঁছে তাকিয়ে আছে সাবাবের দিকে। সাবাব মুচকি হেসে বলল,
—-‘ খুশি তো?’
হীর কেশে উঠল। সাবাবের প্রশ্নের জবাব তার কাছে নেই। সে ভয়ংকর রকমের বিষ্ময় নিয়ে দেখে চলেছে সবটা। সাবাব আবারও হাসল। হীরের উপর থেকে সরে গিয়ে হীরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। উঠতে ইশারা করল। হীর জবাব না দিয়েই হাত বাড়ালো সাবাবের দিকে। সাবাব তাকে উঠে বসিয়ে তার পাশ ঘেঁষে বসলো। আঁড়চোখে তাকে একবার দেখে নিয়ে মাথা চুলকে বলল,
—-‘ আজ একটা সত্যি কথা বলতে চাই?’
হীর আঁড়চোখে তাকালো। ভ্রু উঁচিয়ে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো, ‘কি?’
সাবাব ঠোঁটের কোনে হাসি রেখে আমতাআমতা করে বলল,
—-‘ এক্চুয়েলি আমার তরীর মধ্যে কোনো রিলেশন নেই। উই আর জাস্ট গুড ফ্রেন্ড। লাইক তুই আর আদ্র। ব্যস এটুকুই। আর তোকে এতদিন যা যা বলেছি সবটাই মিথ্যে। মজা করার জন্য বলেছি আর তোকে ক্ষেপাতে।’
হীর থতমত খেয়ে তাকালো। আশেপাশে তাকিয়ে চিন্তায় ডুব দিয়ে কপাল কুঁচকে বলল,
—-‘ মানে? তার মানে তরী আপু তোমার গার্লফ্রেন্ড নয়?’
সাবাব বাধ্য ছেলের মতো মাথা নেড়ে বলল,
—-‘ উঁহু।’
হীর ঠোঁট উল্টে বলল,
—-‘ তাহলে এতদিন ধরে আমাকে মিথ্যে বলেছো কেন?’
সাবাব ভদ্র সূলভ হাসি দিয়ে বলল,
—-‘ বললাম না তোকে ক্ষেপাতে!’
হীর ভ্রু কুঁচকে বলল,
—-‘ আমাকে ক্ষেপানোর জন্য এতো বড় মিথ্যে? কেন?’
সাবাব শান্ত কন্ঠে বলল,
—-‘ তুই যে কারনে ক্ষেপতিস আমিও সেই কারনেই ক্ষেপাতাম। এবার বল কেন ক্ষেপতিস তুই?’
হীর ধরা পড়া চোরের ন্যায় দৃষ্টি নামিয়ে নিলো সাবাবের থেকে। আমতাআমতা করে বলল,
—-‘ কিছুনা।’
এই বলে উঠে গেলো হীর। দরজার কাছে গিয়ে দরজা টান দিতেই দেখলো দরজা লক করা। আর দরজার ছিটকিনিও তার নাগালের বাইরে। এই মুহুর্তে সাবাবের সামনে থাকা মানে লজ্জার বানে ভেসে যাওয়া। এখান থেকে যেকোনো মুল্যে বের হতে হবে। তাই দরজার ছিটকিনি না খুলেই দরজা ধরে ধাক্কাতে লাগল। সাবাব তার কান্ড দেখে বলল,
—-‘ আরে বাবা করছিস টা কি? দরজাটা ভেঙে যাবে তো।’
—-‘ খুলে দাও।’
সাবাব মনেমনে হাসছে্। ধীরপায়ে উঠে এসে দুইহাত ভাজ করে দরজায় ঠেস দিয়ে দাঁড়ালো। হীর লজ্জা পাচ্ছে সাবাবের দিকে তাকাতে। তাই মাথা নীচু করেই দাঁড়িয়ে রইলো সে। সাবাব মৃদু হেসে বলল,
—-‘ আরেকটা সত্যি কথা বলতে চাই।’
হীর এবার মুখ তুলে তাকানোর চেষ্টা করলো। কিন্তু পারলো না। সাবাব হীরের লজ্জা মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে গাঢ় কন্ঠে বলল,
—-‘ ভীষণ মিষ্টি দেখতে লাগছে তোকে। আর…’
হীর মুখ তুলে তাকালো। বলল,
—-‘ আর?’
—-‘ তোর পেটের কাছে তিলটায় তোকে আরও বেশি মায়াবতী করে তুলেছে।’
সাবাবের এমন অদ্ভুত প্রশংসায় বিষম লেগে কাশি উঠে গেলো হীরের। কাশতে কাশতে নিজের পেটের খোলা অংশের দিকে তাকাতেই কাশির মাত্রা দিগুণ বেড়ে গেলে। মনেমনে ভাবল ‘কত সুন্দর করে ঢেকেছি সবটা। তবুও কি করে বেরিয়ে আসল?’
—-‘ আরেকটা সত্যি কথা বলতে চাই?’
সাবাবের কথায় এবার হীরের চোখ জোড়া কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম। লাফিয়ে উঠে সাবাবের মুখে হাত চেপে অসহায় কন্ঠে বলল,
—-‘ রক্ষে করো বাপু। আর কোনো সত্যি কথা শুনতে চাই না।’
#চলবে_
[ অসুস্থতার জন্য গল্প রেগুলার দেওয়া সম্ভব না। আর মনটাও খুব বেশি খারাপ। লেখার প্রতি মনোযোগ দিতে পারিনা ]
[ বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ। ]