কাছে দূরে পর্ব ৩৬

#কাছে_দূরে 💐
#moumita_meher
#পর্ব___৩৬

গায়ে হলুদের তোড়জোড় শুরু হলো বিকেল গড়াতেই। ছাদে হয়েছে বিশাল প্যান্ডেল। বৃষ্টির জন্য আগের সাজগোছ সবই খুলে নিতে হয়েছিলো। এখন তাই পুনরায় সাজানো হলো বাড়ি সহ পুরো ছাদকে। এদিকে সানিয়াকে সাজাতে পার্লার থেকে লোক এলো। তারা সানিয়াকে সাজাতে সাজাতে বাকিদেরও সাজাচ্ছে। আর এই মহান কাজ সম্পন্ন হচ্ছে হীরের রুমে। বেচারি হীর এসবের মাঝে নেই। সে তার ড্রেস আর গয়নাগাটি নিয়ে আগেই সানিয়ার রুমে স্থান নিয়েছে। তার নিজের কাজ নিজে ব্যতীত অন্য কেউ করে দিলে পছন্দ হয়না। আর মেকাপ হচ্ছে মেয়েদের সব থেকে সেনসেটিভ জিনিস। এটা একবার ওলটপালট হয়ে গেলে পরবর্তীতে আর ইচ্ছে হয় না নতুন করে লাগাতে। তাই যা হওয়ার এক বারেই হওয়া চাই। হলুদরঙের ভারী পাথরের কাজ করা দুই পার্টের লেহেঙ্গা। সাথে একদম ফিনফিনে পাতলা তার ওড়না। তাকে আরেকটু আকর্ষণীয় করে তুলতে তার দুই মাথায় স্থান পেয়েছে ভারী পাথরের অসাধারণ কাজ। সিল্কি চুল গুলোর এক পাশে জায়গা পেয়েছে বেলীফুলের মালা। বাকি চুলগুলো পাশ ভাবেই কাঁধের উপর এনে রেখেছে হীর। চোখে সংমিশ্রণের আইশ্যাডো পড়েছে। তার উপর ঘনকালো মাশকারা। নাকে সাদা জলজল করা ছোট্ট একটা পাথর। ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক। হাইলাইটারে দুই গালের পাশে, নাকে এবং থুতনিতে চিকচিক করে জ্বলছে বারবার। ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি। কানে ভারি দুল এবং গলায় ভারি নেকলেস। যে পাশে চুল গুলো স্থান পেয়েছে তার বিপরীত পাশে উঠেছে ওড়না। লেহেঙ্গার উপরের পার্টটা বেশ ছোট। পেট এবং পেটের পাশে তিল সবটাই স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। এভাবে খোলা রাখা উচিৎ নয়। তাই সে প্রথমেই ওড়না দিয়ে পেট ঢেকে নিলো। আর তার উপর পড়ল কোমর বন্ধনী। নিজেকে আয়নার ভেতর থেকে ভালো করে একবার দেখে নিয়ে মুচকি হাসল। মনেমনে বলল,

—-‘ পারফেক্ট। আজ আমাকে তরীর থেকে নিশ্চয়ই বেশি সুন্দর লাগবে। আর মি. সাবাব, তোমার মাথা ঠিকই খারাপ হবে।’

কথাটা ভাবতে ভাবতেই আপন মনে হেসে উঠলো হীর। আরেকবার নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো। আয়নার ভেতর থেকে নিজের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। নিজেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে দেখতে ভাবল,

—-‘ সাজ কি বেশি হয়ে গেলো নাকি? আমিই তো নিজের প্রেমে পড়ে যাচ্ছি।’

কথাটা বলে এবার শব্দ করেই হেসে উঠলো সে। কিসব আবোলতাবোল বকছে। হাসতে হাসতে নিজেই নিজের মাথায় আস্তে করে চাটি মারলো। অতঃপর আয়নার দিকে একটু ঝুকে নিজের সাজগোজ দেখায় মনোনিবেশ করল।

দূর থেকে দাঁড়িয়ে তার এহেম কার্যকলাপ দেখে চলেছে সাবাব। নেকলেস আর কোমর বন্ধনীতে সিক্রেট ক্যামেরা লাগিয়ে যতটা না উপকার হবে ভেবেছিলো তার থেকেও বেশি অপকার হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে তার। সিক্রেট ক্যামেরা গুলো তার ফোনের সাথে কানেক্টেড। তাই হীর এখানে বসে এতক্ষণ যাবত কি করল বা কি বলল সবটাই অগত্যা রেকর্ড হয়েছে সেই ক্যামেরায়। সাবাব বেচারা নিরুপায় হয়েই একটু নির্লজ্জ হয়ে দেখেছে সবটা। বেশি না, একটুই দেখেছে। যখন আর দেখা সম্ভব হলো না তখন আস্তে করে ফোনটা বন্ধ করে দিলো। অতঃপর তাকে একটু চারিদিকে নজর রেখে সাজতে বলার উদ্দেশ্যই এখানে আসা। তবে ইতিমধ্যেই সাজ কমপ্লিট করে ফেলেছে হীর। আর তার এমন রূপ দেখে কি যে বলতে এসেছিলো সবটাই গুলিয়ে ফেলেছে। বলা যায় সে নিজের মধ্যে থেকে হারিয়ে গিয়ে মোহাচ্ছন্ন দৃষ্টিতে দেখতে লাগলো হীরকে। অপরূপ মায়াবতী লাগছে তাকে। হীরকে দেখে সাবাবের হার্ট এত দ্রুত বিট হচ্ছে যেন এক্ষনি ফাল পেড়ে বেরিয়ে আসবে তা। সাবাব বুকের বা পাশে হাত চেপে দরজার সাথে পিঠ ঠেকিয়ে দাড়িয়ে আছে। যা হীর এতক্ষণ দেখতে না পেলেও হঠাৎ দেখে যেন ভড়কে গেলো। হলুদ শেরওয়ানিতে অসাধারণ লাগছে সাবাবকে। শেরওয়ানিতে সুতোর নকশার উপর পাথরের কাজ। মাথায় একঝাঁক অগোছালো সিল্কি চুল। আকর্ষণীয় চোখ এবং ক্রাশিতো চাহনি। যেকোনো মেয়ে এই চাহনি অনায়াসে মরতে চাইবে। ঠোঁটের কোনে চমৎকার হাসি। আজ হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি নেই। এই ছেলে শেরওয়ানির হাতাও গুটিয়ে রেখেছে কনুই পর্যন্ত। ডান হাতে সুতো দিয়ে কিছু একটা বেঁধেছে আর বাঁ-হাতে ব্রেসলেট।
হীরের দৃষ্টি এখনও অব্দি আয়নাতেই আছে। আয়নার ভেতর থেকেই সে সাবাবকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। আচমকা বুকের ভেতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো তার। তৎক্ষনাৎ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে মিনমিন করে পেছন ফিরে তাকালো সাবাবের দিকে। হীর ফিরে তাকাতেই সাবাব বুকে হাত রেখে এক পা দু’পা করে এগিয়ে এলো হীরের পানে। হীর শুঁকনো গলায় ঢোক গিলে আমতাআমতা করতে লাগল। হীরের আচরণে সাবাবের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সে নিজের ভাবনাতেই বলে উঠলো,

—-‘ একটু সুশীল ভাবে রেডি হতে পারিস না?’

সাবাবের অদ্ভুত কথা বোধগম্য হলো না হীরের। সে বোকা গলায় প্রশ্ন করলো,

—-‘ মানে?’

—-‘ রেডি হওয়ার সময় একটু ভদ্র ভাবে রেডি হতে হয়। সে কথাও শিখিয়ে দিতে হবে তোকে?’

—-‘ মানে, এসব তুমি কি বলছো? রেডি হওয়ার সময় আবার ভদ্র ভাবে কি করে রেডি হয়?’

হীরের প্রশ্নে সাবাবের ঘোর কাটলো। সে কি বলছে ঘোরের মাঝে নিজেও বুঝতে পারছেনা। তাই নিজেকে সংযত করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। গলা খাঁকারি দিয়ে রাশভারি কন্ঠে বলল,

—-‘ এই যে রেডি হচ্ছিস অথচ রুমের দরজা খোলা। এটা কি অভদ্রতা নয়? কেউ যদি চলে আসতো? আর তোকে এভা,,বে.. এভাবে রেডি হতে দেখে নিতো!’

হীর নিজেকে একবার দেখে নিয়ে জবাব দিলো,

—-‘ আমি তো পুরো রেডি। তাহলে এখন দেখলে কি প্রবলেম?’

সাবাব ধমকের সুরে বলে উঠলো,

—-‘ আমি কি এখনের কথা বলেছি?’

হীর অবাক হওয়ার চেষ্টা করে বলল,

—-‘ তাহলে, কখনের কথা বলেছো?’

—-‘ আমি একটু আগের কথা বলেছি।’

হীর ভ্রু কুঁচকে জবাব দিলো,

—-‘ আমি যে একটু আগে রেডি হয়েছে সে কথা তোমাকে কে বলল? আমি তো আরও অনেক্ষন আগেও রেডি হতে পারি। বা দুপুরের পরেও চেঞ্জ করতে পারি। মোটকথা আমি যেকোনো সময় চেঞ্জ করে রেডি হতে পারি। আর যখন চেঞ্জ করেছি তখন তো অবশ্যই দরজা লক করেই চেঞ্জ করেছি।’

সাবাব আত্নবিশ্বাসের সহিত বলে উঠলো,

—-‘ না! তুই কোনো দুপুরের পর চেঞ্জ করিসনি। তুই একটু আগেই…’

—-‘ তুমি এতো কনফিডেন্স নিয়ে কি করে বলছো আমি কখন চেঞ্জ করেছি?’

—-‘ কারন আমি দেখেছি তাই….’

—-‘ হোয়াট!’

—-‘ নাআআ! না। না। আ,,আমি দেখিনি! ক…কে যেন এসেছিলো না তোর রুমে? ত,,তুই যখন চেঞ্জ করছিস!’

—-‘ মিলি এসেছিলো!’

—-‘ হ..হ্যাঁ! মিলি। মিলি যখন তোর রুমে নক করে তখন আ..আমি এখান থেকে যাচ্ছিলাম। দেখলাম ও নক করে ভেতরে ঢুকে গেলো। তার মানে আগে থেকেই দরজা খোলা ছিলো। কেবল চাপানো ছিলো। তাই তো?’

হীর সন্দিহান কন্ঠে বলল,

—-‘ হ্যাঁ তাই। কারন মিলিকে আমি ডেকেছিলাম একটা দরকারে। তাই আগে থেকেই খুলে রেখেছি।’

সাবাব আশেপাশে একবার নজর বুলিয়ে বলল,

—-‘ আমাকে ডাকলেই পারতিস।’

হীর ঝাটকা খেয়ে বলল,

—-‘ ছি!ছি! এসব কাজে তোমাকে কি করে ডাকবো?’

—-‘ কোন সব কাজে?'(এক ভ্রু উঁচিয়ে)

—-‘ আছে। তোমাকে বলা যাবেনা।’

—-‘ তো কাকে বলা যাবে?'(ভ্রু কুচকে)

হীর মুখ বাঁকিয়ে বলল,

—-‘ যাকে বলা যায় তাকেই ডেকেছিলাম।’

—-‘ কেন ও ছাড়া সেই কাজ কি পৃথিবীর বাকি কেউ করতে পারে না?’

হীর সাবাবের প্রশ্নে অধৈর্য্য হয়ে বলল,

—-‘ পৃথিবীর সবাই-ই সেই কাজ করতে পারে। কোনো সমস্যা নেই। এই যেমন আমার বিয়ের বিয়ের পর আমার হাজবেন্ড সেই কাজ করতে পারবে। অথবা, তোমার বিয়ের পর তোমার বউয়ের টা তুমি করে দিতে পারবে!’

—-‘ কি করে দিতে পারবো?’

—-‘ উফফ! ড্রেসের হুক লাগিয়ে দিতে পারবে। হয়েছে শান্তি।’

হীরের কথায় সাবাব হতবিহ্বল হয়ে তাকালো। কপাল কুঁচকে জবাব দিলো,

—-‘ ছি!ছি! তুই এতো অশ্লীল কেন? বড়দের সামনে কিসব বলছিস। লজ্জা লাগেনা?’

হীর আকাশ থেকে পড়লো। অবাক হয়ে বলল,

—-‘ লজ্জা! কি করে লাগবে?তোমার এতো এতো প্রশ্নের অত্যাচারে আমার লজ্জারা লজ্জা পেয়ে পালিয়েছে।’

—-‘ মানে।’

—-‘ মানে আমার মুন্ডু। সাইডে চাপো।’

হীর কথাটা শেষ করে মুখ ঝামটি দিয়ে চলে গেলো। সাবাব তার যাওয়ার পানে তাকিয়ে মুখ কুঁচকে বলল,

—-‘ তোমার আমার করছো কেন? বলবে আমাদের! কি বলবে? আমাদের। হুহ্ চলে গেলো।

______________♥

সানিয়াকে বিশাল স্টেজের মাঝে বড় চেয়ারে বসানো হয়েছে। চারপাশের ডেকোরেশন হয়েছে সব হলুদ ফুল,হলুদ রং,হলুদ লাইট এবং লাল হলুদ আল্পনাতে। সানিয়ার স্টেজের সামনে বড় কর আল্পনা আঁকা হয়েছে। নাজমা বেগমের ইচ্ছেয়। বাড়িতে কারোরই এই প্ল্যান ছিলো না হলুদের স্টেজের সামনে কোনো আল্পনা আঁকা হবে। কিন্তু হঠাৎ করেই সিদ্ধান্ত হলো এখানে ঠিক মাঝখানটাতে বড় করে আল্পনা দেওয়া হবে। আর সেই কাজ নাজমা বেগম নিজ হাতে করবেন। সাবাব অবাক কন্ঠে মাকে জিজ্ঞেস করলো,

—-‘ মা, হঠাৎ আল্পনা কেন? এগুলো কিন্তু অনেকটা ওল্ড ফ্যাশনে পরে মা।’

নাজমা বেগম জবাবে হেসে বললেন,

—-‘ কনিকার ভীষণ পছন্দ ছিলো আল্পনা। তোরা তো জন্মাসনি তখন। কনিকা আর রিয়াদের বিয়ের পর কনিকা বাড়ির যেকোনো অনুষ্ঠান হলেই এমন করে আল্পনা দিতো। আর ওর ভীষণ ইচ্ছে ছিলো আমার ছেলে বা মেয়ের বিয়ের সময় নিজ হাতে ও সারা বাড়িতে আল্পনা দিবে। কিন্তু সেই সৌভাগ্য তো আর হলো না আমাদের। আর সারা বাড়িতেও আল্পনা দেওয়া সম্ভব না। তাই ভাবলাম হলুদের এখানটাতেই দিয়ে দেই।’

মায়ের কথায় সাবাবের কোনো জবাব ছিলো না। সে স্রেফ মলিন হেসে মায়ের সাথে হাতে হাত মিলালো। টানা দুইঘন্টা বাদে তারা সম্পূর্ণ করলো অসাধারণ এক আল্পনা। আল্পনা দেওয়া সত্যি অসাধারণ হয়েছে। নাজমা বেগম মনে মনে ভাবলেন, ‘আজ কনিকা থাকলে সে এই আল্পনা দেখে কতটাই না খুশি হতো!’ কথাটা ভাবতেই বুক ভরে আসলো তার। ভারি নিঃশ্বাস ফেলে আর ভাবলেন না অতীত। সবার সাথে তালে তাল মিলাতে গিয়ে সেও স্বাভাবিক হয়ে গেলেন। আর মনোনিবেশ করলেন তার মেয়ের জীবনের এই বিশেষ মুহুর্তের প্রতি।

চারিধারে গান,হৈ-হুল্লোড় আর তার মাঝে সানিয়াকে একে একে হলুদ লাগানো সবটাই এক অসাধারণ মুহুর্ত হীরের কাছে। এমন একটা মুহূর্ত এলে যে মন খারাপ করে থাকাও দায়। তারা চার বন্ধু সানিয়ার পাশেই সেল্ফি এবং বিভিন্ন মোমেন্ট ক্যামেরায় বন্দি করায় ব্যস্ত।

এদিকে সাবাব, তরী এবং তাদের বাকি টিম মেম্বাররা সবাই আলাদা আলাদা জায়গায় থেকে মনি এবং শিলার প্রতি নজরদারি করছে। আর অন্যদিকে সিকিউরিটি গার্ডরা করা পাহাড়ায় আছে চারপাশে। যদিও এর কোনোটাই মনিকার চোখ এড়ায়নি। মনিকা জানে সাবাব তাকে সন্দেহ করে। তবে সেই যে আসল কালপ্রিট সেটা সাবাব জানেনা বলে তার ধারনা। তাই এই সুযোগে আজকের প্ল্যান টা কিছুতেই ফ্লপ হতে দেওয়া চলবে না। একদম না।

মনিকা সবার চোখের আড়ালে এসে দাঁড়ালো। আর তার পেছন পেছন হাতে করে হলুদের বাটি নিয়ে এলো শিলা। চারপাশে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করতে করতে হলুদের বাটিটা মনিকার হাতে তুলে দিলো। মনিকাও তার ন্যায় আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি নিক্ষেপ করল। শিলার দিকে আঁড়চোখে তাকিয়ে জলদি করার তাগাদা দিতেই শিলা ভয়ে ভয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। অতঃপর ছোট একটা বোতল থেকে হলুদের বাটিতে বেশখানিকটা কেমিক্যাল ঢাললো। এই ক্যামিলের গুন হলো মানুষকে ধীরে ধীরে এট্যাক করা। যেটা মানুষের শরীরে লাগতেই সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়বে এর গুন। উপর থেকে বোধগম্য না হলেও ভেতর থেকে তাকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিবে। তার মৃত্যুও হবে খুব স্বাভাবিক। দেখলে মনে হবে খুব স্বাভাবিক মৃত্যু ছিলো।

শিলা কেমিক্যালটা একটা চামচ দিয়ে ভালো ভাবে মিশিয়ে দিলো হলুদের সাথে। মনিকা কেমিক্যাল মিশ্রিত হলুদের দিকে তাকিয়ে বাঁকা ঠোঁটে হাসল। শিলার দিকে একবার তাকিয়ে পুনরায় হলুদের দিকে তাকিয়ে বলল,

—-‘ এবার খুব সুন্দর মাতৃ দরদী একটা নাটক করে এই হলুদ হীরের গালে,গলায় এবং হাতে সযত্নে লেপ্টে লেপ্টে মাখাতে হবে। আর তারপর? তারপর মাই ডিয়ার হীরপরীর মৃত্যু অনিবার্য।’

শিলা মনিকার ন্যায় বাঁকা হাসল। কিন্তু হঠাৎ করেই তার চোখে মুখে ফুটে উঠলো আতংক। সে আতংকিত গলায় বলে উঠলো,

—-‘ কিন্তু মেডাম, এই কেমিক্যাল আপনি যখন হীরের গায়ে লাগাবেন তখন যে আপনার হাতেও লাগবে। আর সেটা দিয়ে আপনারও…’

মনিকা খিলখিল করে হেসে উঠলো। শিলার গাল চাপরে বলল,

—-‘ এর মেডিসিন আমার কাছে আছে রে বোকা। এই কেমিক্যাল শরীরে লাগার ঠিক দশ মিনিটের মধ্যে যদি এর মেডিসিন দেওয়া না হয় তাহলে… তাহলে হীরের মতোই দশা হবে। আর কি? হাহাহা।’

মনিকার বিকট হাসির শব্দে শিলার ভয় কাটলো না। এই ভয় মনিকার মৃত্যুর ভয় নয়। এই ভয় হলো সাবাবের সন্দেহের ভয়। সাবাবের মস্তিষ্ক যে সেকেন্ডের কাটার থেকেও আগে চলে। মনিকার সাবাবের ভয় না থাকলেও তার আছে। প্রচন্ড ভয়।

—-‘ স্যার? শিলার হাতে ঐ হলুদের বাটিটা একবার দেখুন?’

আভিকের গলা। সাবাব তীক্ষ্ণ নজরে তাকালো শিলার হাতের দিকে। সানিয়ার চেয়ারের পাশে হাতে হলুদের বাটি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে শিলা। মনিকাকে আশেপাশে দেখা যাচ্ছে না। শিলাও এতক্ষণ ছিলো না। এক্ষনি এলো। আর আশ্চর্যজনক ভাবে তার হাতের বাটিটাও আশেপাশে কারোর কাছে ছিলো না। তার মতোই হঠাৎ করে উড়ে এসে জুড়ে বসল। পাশ থেকে তরী বলে উঠলো,

—-‘ মনি স্টেজের দিকে যাচ্ছে।’

তরীর কথায় সাবাব চমকে উঠে তার দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো। মনিকা মুখে মেকি হাসি জুড়ে সবার সাথে অল্পস্বল্প আলাপচারিতা পেরে স্টেজের দিকে যাচ্ছে। সাবাব কুটিল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,

—-‘ আমাদের ওখানটায় যাওয়া উচিৎ। আভিক, তুমি আশেপাশে নজর রাখো। তরী? তুমি আমার সাথে এসো।’

আভিক মাথা ঝুকিয়ে পাশে সরে গেলো। সাবাব হাঁটা ধরতেই তরী হ্যাঁ সূচক মাথা নেড়ে তার পেছন পেছন হাঁটা ধরলো।

নাজমা বেগম মনিকাকে এগিয়ে আসতে দেখেই অভিযোগের সুরে বলে উঠলেন,

—-‘ মনি? কোথায় ছিলে তুমি? মেয়েকে হলুদ লাগাবেনা?’

মনিকা হেসে জবাব দিলো,

—-‘ হ্যাঁ আপা। এইতো চলে এলাম। কই দেখি আমার মেয়েকে?’

সানিয়াকে উদ্দেশ্য করে হাতে খানিক হলুদ তুলে সানিয়ার দিকে তাকালো মনিকা। সানিয়া মিষ্টি হেসে গাল বাড়িয়ে দিলো মনিকার দিকে। মনিকা সানিয়ার দুই গালে হলুদ লাগিয়ে দিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে দোয়া করলো,’সুখী হও মামনি।’ সানিয়া চোখ ঝাপটে মনিকার দোয়া নিলো। পাশে দাঁড়িয়ে আছে হীরের দিকে তাকিয়ে মনিকা বলে উঠলো,

—-‘ মামনি? তোমাকেও একটু লাগিয়ে দেই হলুদ? কারন কিছুদিন বাদে তো আমার মেয়েটাকেও বিয়ে দিতে হবে নাকি?’

মনিকার কথা শুনে হীর চোখজোড়া রসগোল্লার মতো করে বলে উঠলো,

—-‘ মনি! ইশশ, আমি এই বিয়ে-ফিয়ে করবোনা বলে দিলাম।’

হীরের ঠোঁটে লজ্জা। তা বুঝেই উপস্থিত সবাই হো হো করে হেসে উঠলো। মনিকা শিলার ধরে রাখা বাটি থেকে বেশ খানিক হলুদ হাতে উঠিয়ে নিলো। যা দেখতেই সাবাব অদ্ভুত শব্দ করে ছুটে গেলো সেদিকে। মনিকা মুখে কতক্ষণ বাঁকা হাসি ঝুলিয়ে হলুদ মাখা হাত হীরের গাল বরাবর নিয়ে ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসির রেখা টানলো। হীর মনিকার হাতে হলুদের দিকে তাকিয়ে চোখ পিটপিট করে বলল,

—-‘ মনি, একটু লাগাবে। বেশি লাগালে আমার সাধের মেকআপ!!’

মনিকা চোখ ঝাপটে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ল। হলুদটা হীরের গালে স্পর্শ করার ঠিক এক মুহূর্ত আগেই কেউ হীরকে হেঁচকা টান মেরে সরিয়ে দিলো। চোখের পলকে হীরে সামনে থেকে গায়েব হয়ে যেতেই চোয়াল শক্ত হয়ে এলো মনিকার। পাশ ফিরে তাকাতেই দেখলো হীরের মুখোমুখি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সাবাব। যা দেখতেই রাগে তার সারা শরীরে আগুন জ্বলে উঠলো। এক্ষনি সম্ভব হলে হীরের সাথে সাথে তাকেও মার্ডার করে ফেলতো সে।

#চলবে_ 🌷

বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here