কাছে দূরে পর্ব ৩৫

#কাছে_দূরে 💐
#moumita_meher
#পর্ব___৩৫

ভোরের সচ্ছ আলো চোখে পড়তেই ঘুমে ডুবে থাকা মস্তিষ্ক সামান্য বিরক্তবোধ করলো। আর সেই বিরক্তি প্রকাশ করতেই চোখ জোড়া অতিদ্রুত কুঁচকে গিয়ে মুহুর্তেই আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলো। হীর নড়েচড়ে চোখ বুঁজেই হাত রাখল চোখের সামনে। প্রকৃতি তার সঙ্গে লুকোচুরি খেলা খেলছে। হঠাৎ চোখে মুখে সূর্যের আলো ছড়িয়ে পড়ছে আবার হঠাৎ করেই অন্ধকারে ঢেকে যাচ্ছে ঘরময়। হীর অতিকষ্টে চোখ খুলে তাকালো। প্রকৃতির এই খেলা বড় বিরক্ত লাগছে তার। সকাল সকাল ফাজলামো হচ্ছে। হঠাৎ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় মাথা ঝিমঝিম করছে তার। মাথা ভার হয়ে আছে। গাঁয়ের চাদর সরিয়ে অলস শরীর নিয়ে উঠে বসল সে। ঘুম জড়ানো চোখে আপাতত একরাশ বিরক্তিরা উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। সেই বিরক্তির বহিঃপ্রকাশে কপাল কুঁচকে গিয়েছে। প্রকৃতির এমন লুকোচুরি খেলার প্রতিবাদ জানাতে কপাল কুঁচকেই চারপাশে নজর বুলালো সে। খোলা জানালা এবং ব্যালকনির দরজার ফাঁকফোকর থেকে অতিকষ্টে সরু আকার হয়ে সূর্যের আলো ছড়িয়েছে। এই আলোয় তো তার ঘুম ভাঙার কথা নয়! মনে হচ্ছে তো কেউ ইচ্ছে করেই তার চোখে আলো দিয়ে তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। এবার আর বিরক্তি নয়, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটল তার মুখে। তড়িঘড়ি বিছানা ছেড়ে এর একটা বিহিত করতে হবে। কাঁচা ঘুমের এমন বারোটা বাজিয়ে কি উদ্ধার হলো তার?

হীর তড়িঘড়ি বিছানা ছাড়তে নিলেই আচমকা কেউ তার সামনে এসে দাঁড়ালো। এমতাবস্থায় হীর তার সামনে আচমকা কাউকে আশা করেনি। প্রথম দফায় চমকে গেলেও পরের দফায় অবাক হলো। লম্বা সুঠাম দেহের অধিকারী সে। অফ হোয়াইট শার্ট ব্লু প্যান্টের সাথে ইন করা। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা। ডান হাতে সিলভার রঙের চিকন একটা ব্রেসলেট। আর বাঁ-হাতে কালো ঘড়ি। ডার্ক রেড ঠোঁটে স্নিগ্ধ কোমল হাসি। প্রগাঢ় গভীর চাহনি। সেই চাহনিকে বারবার বিদ্ধ করছে তার সিল্কি চুলগুলো। কপালের মাঝে আঁচড়ে পড়েছে তারা। ফুরফুরে বাতাসে তাদের সেকি গর্ভ। সবচেয়ে লজ্জাজনক ব্যাপার হলো এই ছেলে নির্লজ্জতার সর্ব সীমায় পৌঁছে শার্টের তিন তিনটে বোতাম নিদারুণ ভাবে খুলে রেখেছে। যার দরুন তার লোমহীন বুকটা উদার হয়ে আছে। হীরকে বারবার এটুকুই মারাত্মক লজ্জা দিয়ে মেরে ফেলছে। তার মন,মস্তিষ্ক সবই ক্রমশই তার বিপরীতে চলে যাচ্ছে। হয়ে উঠছে তার বিপক্ষ। হীর আর দেখতে না পেরে ঢোক গিলল। দুরুদুরু বুকে খানিক পিছিয়ে গেলো। বুকের ভেতর ঘন্টি বাজছে তার। কাঁপা কাঁপা হাত তুলে বুকের উপর রাখলো হীর। খুব বেশিই বেড়ে যাচ্ছে হৃৎস্পন্দন।
মনের স্বাভাবিক উত্তেজনাটুকু আরও দিগুণ করে দিয়ে সুদর্শন মহাদয় তার কোমর জড়িয়ে নিজের খুব কাছে নিয়ে এলো তাকে। হীর চমকে উঠে কুঁকড়ে গেলো। নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে উদ্যত হলেই সাবাব আলতো করে তার গালে হাত রাখলো। তাতে যেন হীরের দম বন্ধ হওয়ার পালা। সে দম বন্ধ করে দেখতে লাগল সাবাবের কার্যকলাপ। সাবাব হীরের গালে আলতো করে স্লাইড করতে করতে মৃদুস্বরে বলল,

—-‘ গুডমর্নিং হীরপরি।’

সাবাবের কথায় হেঁচকি উঠে গেলো হীরের। হীর দু’হাতে মুখ চেপে ধরল। চোখ জোড়া বড় বড় করে সাবাবের দিকে তাকাতেই সাবাব চমৎকার হাসলো। হীর মিইয়ে পড়লো সাবাবের মোহনীয় হাসিতে। তার মনেও ভর করল তীব্র অনুভূতি। কিন্তু মুহুর্তেই সেই অনুভূতির অবসান ঘটল। সাবাব উষ্ণ ঠোঁটের ছোঁয়া দিলো তার ঠোঁটে। হীরের দম আঁটকে গেলো। চোখ জোড়া গোলাকারের স্বাভাবিক আকার অতিক্রম করে এবার যেন বেরিয়ে আসবে। হীর নড়েচড়ে উঠতেই সাবাব সোজা হয়ে বসল। তার চোখে মুখে বিন্দুমাত্র পরিবর্তন নেই। একই অনুভূতিতে আবারও আঁকড়ে নিলো হীরের ওষ্ঠদয়। হীর খামচে ধরলো তাকে। মুহুর্তেই চিৎকার শুরু করলো কেউ। বিকট চিৎকার। সেই চিৎকারের উৎস হীর খুঁজে বের করতে পারছেনা। কিন্তু মুহুর্তেই আবার পেলো। মনে হচ্ছে তার কানের কাছে বসে কেউ বিকট আওয়াজে চিৎকার করছে। খুবই বিদঘুটে চিৎকার। হীর বিরক্ত হয়ে চোখ খুলতেই দেখলো এশা তার হাত চেপে ধরে চিৎকার করছে। হীর বুঝে উঠতে পারলো না। সে অদ্ভুত ভঙ্গিতে এশার চিৎকার শুনে যাচ্ছে। পাশ থেকে মিলি বলে উঠলো,

—-‘ হীর! কি করছিস তুই? ওকে এভাবে খামচে ধরলি কেন?’

হীরের বুকের ভেতরটা ধক করে উঠলো। এশার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে তার দৃষ্টি অনুসরণ করতেই দেখতে পেলো সে সত্যি সত্যি এশার হাত খামচে ধরেছে। তার মানে এতক্ষণ সে স্বপ্নে ছিলো!

—-‘ ওও শিট!’

হীর অদ্ভুত শব্দ করে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল। অস্বস্তি নিয়ে চারপাশে তাকাতে দেখলো ফকফকা হয়ে আছে। দিনের আলো ফুটেছে কম করে হলেও ঘন্টা তিন পেরিয়েছে। মানে ঘড়িতে এখন সময় হচ্ছে ৮টা ১০। হীর গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়লো নিজের অস্বস্তি লুকাতে। এতক্ষণ যাবত সাবাব আর তার ড্যাশিং লুক সবটাই স্বপ্নের মধ্যে ছিলো। আর সে সাবাবকে ভেবে এশার হাত খামচে… ছি ছি ছি! কি বিদঘুটে ব্যাপার। হীর এশার দিকে একবার অনুনয়ের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে দৌড়ে গিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো। এই স্বপ্নের কথা কেউ যদি কোনে ক্রমেও জানতে পারে তাহলে যে মানসম্মান পুরো পানি পানি হয়ে যাবে। বিশেষ করে সাবাব। অবশ্যই তার থেকে লুকিয়ে থাকতে হবে।

______________

১১টা বাজতেই রঙ খেলার ধুম পড়ে গেলো বিয়ে বাড়িতে। বাড়ির গার্ডেনে ছোটরা হৈ-হুল্লোড় করে রঙ খেলছে। ছোট বড় কাউকেই বাদ রাখছেনা, যে যাকে যেখানে পাচ্ছে সেখানে বসেই রঙের ভেতর চুবিয়ে দিচ্ছে।

সাবাবের পায়ের ব্যাথা এক রাতের মিরাকেল ঘটে ভ্যানিশ হয়ে গেছে। কখন কিভাবে ব্যাথা সেরে গেলো সে ব্যাতিত আর কেউ বলতে পারবেনা। সাবাব তার টিম মেম্বারদের গতকাল রাত থেকেই তার সঙ্গে রেখে দিয়েছে। বিয়ে না হওয়া পর্যন্ত তারা এ বাড়িতেই থাকবে অতিথি হিসেবে। সেই আদেশ নাজমা বেগমের। সারাজীবন কাজ কাজ করেই তো কাটাবে,তাহলে বিয়ের এই কয়টা দিন একটু কাজ মুক্ত থাকুক।
ভোরের আলো ফুটতেই তার আদেশ মেনে হীরের তার সঙ্গে দেখা করার কথা ছিলো। তার ঝুমকোজোড়া ফেরত নেওয়ার জন্য। কিন্তু হীর তার কথা অনায়াসে অমান্য করে গেল। তার সাথে দেখা তো দূর এখনও অব্দি তার সামনেই পড়লো না। এগুলো কি সব ইচ্ছেকৃত? নাকি কোনো সমস্যায় পড়লো! এসব ভাবনাকে প্রশ্রয় দিতে না চেয়েই চলে গেলো সাবাব। উদ্দেশ্য হীরকে খুঁজে বের করা। যদি সে তার আদেশ ইচ্ছে করেই অমান্য করে থাকে তবে তো খবর আছে তার।

সবার হৈ-হুল্লোড়ের মাঝেই এক কোনে মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে হীর। রঙ খেলতে তার ইচ্ছে করছে না। কারোর সাথে কথা বলতেও ইচ্ছে করছে না। সকালের সেই উদ্ভট স্বপ্নটা বড্ড জ্বালাচ্ছে তাকে। মাথা থেকে কিছুতেই বের হচ্ছে না। কেবল থেকে থেকে তাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে সেই মুহুর্তে। বারবার মনে পড়ছে সাবাব তার ঠোঁটে গভীর স্পর্শ এঁকেছে। ভীষণ অস্বস্তিতে মাথা ঝিমঝিম করছে তার। বুক চিঁড়ে তপ্ত দীর্ঘশ্বাস পড়তেই আবারও হলো দম আঁটকে যাওয়ার পালা। সেই একই ধরনের ড্রেসআপে সামনে এসে দাঁড়ালো সাবাব। অফ হোয়াইট শার্ট,ব্লু প্যান্ট, ডান হাতে ব্রেসলেট, বাঁ হাতে ঘড়ি, শার্টের তিন তিনটে বোতাম নির্লজ্জ ভাবে খোলা। তবে আগের বারের মতো এবার আর সেই গভীর চাহনি নেই। বা তার ডার্করেড ঠোঁটখানাও আকর্ষণীয় হয়ে নেই। এবার তার চোখে রাগ আছে। চাহনিতে তীক্ষ্ণতা আছে। কপাল কিঞ্চিৎ কুঁচকে আছে। হাত দুটো মুষ্টিবদ্ধ হয়ে আছে। আর কিছু পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হলো না। তার আগেই সাবাবের প্রশ্নের ঝড়ের প্রকোপ শুরু হলো,

—-‘ কাল তোকে বলেছি না ঘুম ভাঙতেই সর্বপ্রথম তুই আমার সাথে এসে দেখা করবি? আশেপাশে কেউ ডাকলেও শুনবি না। সোজা আমার রুমে এসে হাজির হবি। আমার বলা স্বত্তেও তুই এলি না! কত বড় সাহস হয়েছে তোর তুই আমার কথা অমান্য করিস? কি হলো? ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে কি দেখছিস? জবাব দে?(চিল্লিয়ে)

হীর ধমক খেয়ে চমকে উঠলো। আমতাআমতা করে কথা জোগাতে নিলেই সাবাব তার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলো বাসার উদ্দেশ্যে।

বাতাসের গতি আঁটকে রেখে তারও আগে সাবাব হীরকে নিয়ে বাসার ভেতরে চলে গেলো। মনিকা তীক্ষ্ণ নজরে সবটাই পর্যবেক্ষণ করলো। ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি। হাসতে হাসতেই না সূচক মাথা নাড়লো সে। পূনরায় সাবাব আর হীরের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মৃদুস্বরে বলল,

—-‘ এতো প্রটেকশন দিয়ে কি হবে ডিয়ার? শত্রু যখন ঘরের ভেতরেই থাকে?’

কথাটা বলেই হেসে উঠলো সে। বিভৎস, বিদঘুটে হাসি।

সাবাব কোনো জায়গাতেই থামলো না। হীরকে নিয়ে সরাসরি তার রুমের দিকে রওনা হলো। সামনে তরী,এশা,মিলি,আদ্র,আভিক,কিরন,ইভান আরও অনেকে পড়লো। কিন্তু তাঁদের দিকে সাবাবের তাকানোর সময় হলো না। হীর নিজের অবস্থায় লজ্জায় কুঁকড়ে গেলো। এতগুলো মানুষের সামনে সাবাব কেমন করে তাকে নিয়ে এলো। সবাই মনেমনে কি ভাবছে। আর তরী! সে তো হা করে তাকিয়েই ছিলো। তার নিশ্চয়ই খুব জেদ ধরেছে। সাবাব তাকে নিয়ে এভাবে চলে যাচ্ছিলো বলে। নিশ্চয়ই মনে মনে খুব করে বকছে। ভাবছে হয়তো, সুযোগ পেলে এর প্রতিশোধ সে তুলবে। নিশ্চয়ই ভাবছে।

—-‘ উফফ ছাড়ো তো।’

কথাটা বেশ জোরেশোরেই বলে উঠলো হীর। সাবাব হেঁচকা টানে হীরকে সামনে এসে দাঁড় করিয়ে অবাক চোখে বলল,

—-‘ কি বললি তুই?’

হীরের চোখ জোড়া গোলাকার হয়ে উঠলো। রাগের বশে সে চেঁচিয়ে উঠলো সাবাবের প্রতি। এবার সাবাব কি করবে? কি করে তুলবে এর শোধ? হীর চোখ জোড়া খিঁচে বন্ধ করে নিয়ে অতিদ্রুত নিঃশ্বাস ফেললো। বুকে বল এনে আবারও চোখ মেলে তাকালো সাবাবের দিকে। কিন্তু সাবাবের রক্তিম চোখের দিকে চোখ পড়লেই আর কিছু বলতে পারছেনা সে। কথাই আওড়াতে পারছেনা। অতিকষ্টে যেটুকু বের হলো সেটুকুই চোখ বুঁজে এক দমে বলে ফেললো,

—-‘ আ,,আ,,মি কিছু বলিনিইইই!!’

—-‘ দিন দিন বড্ড বেশি অবাধ্য হচ্ছিস তুই। একটা কথা একবার বলে শুনানো যায় না! বেশি পাখনা গজিয়েছে তাই না? বড্ড বেশি উড়ছিস আকাশে? ঐ পাখনা যদি আমি না কেটেছি তো আমার নামও সাদমান সাবাব নয়। মনের রঙ লাগা বের করবো আমি। ডেটল দিয়ে মনের সব রঙ ধুয়ে দিবো। ইডিয়ট!’

সাবাবের কথায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা হীরের। এ কেমন কথার ধরন বিলেত ফেরত বাবুর। ঐ দেশে থেকে কি এসব শিখলো? হীরের দম ফেটে হাসি চলে এলো। কিন্তু এই মুহুর্তে হাসির ‘হ’ টা উচ্চারণ করলেও যে সাবাব তার গর্দান নিবে। তাই নিজের অদম্য ইচ্ছেটাকে মাটিচাপা দিয়ে শক্ত হয়ে রইলো। সাবাব দাঁতে দাঁত চেপে হীরের উত্তরের প্রতীক্ষা করছে। কিন্তু হীর নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে। দেখে বোধ হচ্ছে সাবাবের কোনো কথাই তার মগজ ছুঁতে পারেনি। আর তাই তাকে অনুভূতি প্রবনও করতে পারেনি। সাবাব আরও চেতে গেলো। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। এই মেয়েটা বড্ড বেশি অবাধ্য! একটা মানুষ কথা বললেও তার কিছু যায় আসে না। একটা মানুষ কেন বলছে, সে তো ইচ্ছে করেই তার কথার উত্তর দেয় না। তবে এবার জবাব দিবে। কারন জবাব দিতে সে বাধ্য হবে। সাবাবের মস্তিস্ক শয়তানী বুদ্ধির পরিচালনা করে ঘটনা ঘটাতে বেশি সময় ব্যয় করলো না। সাবাব হঠাৎ করেই ঘটিয়ে ফেললো অদ্ভুত কান্ড। আকস্মিক হীরের কোমর জড়িয়ে তাকে কাছে টেনে এনে মুখ ডুবিয়ে দিলো তার গলায়। হীর কারেন্টের শক খেয়ে শক্ত হয়ে গেলো। মূর্তির মতো একই জায়গায় স্থীর থেকে উপলব্ধি করলো তার গলায় চিনচিনে ব্যথা। আর তৎক্ষনাৎ মনে পড়ে গেলো তার সঙ্গে কি ঘটে যাচ্ছে। ব্যাপারটা উপলব্ধি হতেই হা করলো বিকট চিৎকারের উদ্দেশ্যে। কিন্তু সেই মহান কাজও করতে দিলো না সাবাব। সে তার কাজ সম্পন্ন করার মাঝেই মুখ চেপে ধরলো হীরের। নিজে মুখ তুলে বিরক্ত কন্ঠে বলল,

—-‘ চেঁচাচ্ছিস কেন?’

হীর ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ভুলে গেলো সে কেন চেঁচাতে যাচ্ছিলো। হতবিহ্বল চোখে তাকিয়ে বোকা গলায় বলে উঠলো,,

—-‘ অ্যা?’

সাবাব হীরের কান্ড দেখে না পেরে হেসে উঠলো। হীরের গলার দিকে ইশারা করে বলল,

—-‘ উফফ, সেই লাগছে কিন্তু।’

হীর চেতে উঠলো সাবাবের আচরনে। রেগেমেগে গলায় হাত চেপে বলে উঠলো,

—-‘ ছি ছি! এটা তুমি কি করলে? বদ লোক কোথাকারে! আমি এক্ষনি বড় মাকে গিয়ে বলে দিবো।’

কথা বলতে বলতেই হীরের চোখ ছলছল করে উঠলো। তা দেখে সাবাব মৃদু হেসে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,

—-‘ যা। যাকে খুশি তাকে গিয়ে দেখা। আই ডোন্ট কেয়ার।’

হীর রেগে গিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

—-‘ তুমি এতো ফালতু কেন? সকালে ঘুমের মধ্যে এসে জোর করে কিস করে গেলে আর এখন… এখন আবার…’

—-‘ হোয়াট! সকালে আমি তোকে কখন কিস করলাম। মিথ্যে অপবাদ কেন দিচ্ছিস আমায়?’

হীর থমকে গেলো। মুখে কুলুপ এঁটে চুপসে গেলো সে। রাগের মাথায় ভুল করে স্বপ্নের কথাটাও বলে ফেলল। কি দরকার ছিলো?

—-‘ কি হলো চুপ করে আছিস কেন? বল?’

হীর নিজেকে কন্ট্রোল করতে বা পেরে রাগে ফুঁসে উঠে বলল,

—-‘ প্রেম করছো তরী আপুর সাথে অথচ চুমু খাচ্ছো আমাকে। জোর জবরদস্তি করছো আমায়, বকাঝকা করছো আমায়,রাগ দেখাচ্ছো আমায়! আবার কেয়ারও করছো আমায়। বলি সমস্যা টা কি তোমার বলবে একবার? এতো অধিকার কেন দেখাচ্ছো আমার উপর? যদি তরী আপুকেই ভালোবেসে থাকো তখন আমায় কেন এতো গভীর ভাবে স্পর্শ করে বুঝিয়ে দিচ্ছো, আমার প্রতি তোমার ঠিক কতটা ভালোবায়া,মায়া এবং অনুভূতি আছে! কেন করছো এমন? কি সুখ পাচ্ছো এমনটা করে? আবার যখন আমি কাঁদছি তখন আবার নিজে এসে চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছো। কেন? কি বোঝাতে চাও? তুমি তরী আপুকে ভালোবাসো আর আমাকে দয়ামায় দেখাও! কেউ চেয়েছে তোমার দয়ামায়া দেখতে? আমি চেয়েছি? আমি কি বলেছি প্লীজ আমায় তোমার মায়া দেখিয়ে বাঁচিয়ে নাও অন্যথা আমি মরে যাবো?’

কথা গুলো একদমে বলে থামলো হীর। সাবাব অবাকের চূড়ান্তে পৌঁছে হা করে রইলো। কি বলবে তৎক্ষনাৎ কিছু ভেবে পেলো না। শুধু আমতাআমতা করতে লাগল। হীর আবারও বলে উঠলো,

—-‘ তুমি যে এসব কিছু আমার সঙ্গে করছো না? আমি জানি তুমি আমাকে ক্ষেপানোর জন্য করছো! কখনও স্বপ্নে আবার কখনও বাস্তবে। কিন্তু তুমি কি বুঝতে পারো তোমার এই স্পর্শ কতটা… ক,,কতটা পাগল পাগল করে তোলে আমায়? কতটা অস্থির করে রাখে আমায়? তখন নিজেকে পাগল পাগল মনে হয়! তুমি বুঝবেনা এসব। তাই তোমাকে এসব আমি বলবোও না। আমি শুধু এটাই বলবো তরী আপুকে নিয়ে তুমি ভালো থাকো। আর আমার পেছন লাগা বন্ধ করো। প্লীজ!’

হীরের চোখ থেকে গড়িয়ে দুফোঁটা জল মাটিতে পড়তেই রক্তক্ষরণ হলো সাবাবের বুকে। সাবাব মাথা নীচু করে নিলো। বার কয়েক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুখে মেকি হাসি জুড়ে হীরের দিকে চেয়ে বলল,

—-‘ আম সরি হীর। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি তুই এসব ভাবছিস। ভাবলে হয়তো শুরু টা একটু অন্যরকম হতো। শুরুতেই সবটা অন্যরকম হতো। তুই এখানে দাঁড়া। তোর কিছু জিনিস আমার কাছে আছে। আমি সেগুলো তোকে দেওয়ার জন্যই সকালে আসতে বলেছিলাম। এখনই নিয়ে যা।’

সাবাব মলিন হেসে আলমারি থেকে হীরের লকেট,নেকলেস আর ঝুমকো গুলো বের করে এনে তার হাতে তুলে দিলো। হীর সেগুলো দেখে অবাক চোখে সাবাবের দিকে তাকাতেই সাবাব বলে উঠলো,

—-‘ তোর। সেদিন শপিংমল থেকে বাসায় ফিরে আর এগুলো তোকে দেওয়া হয়নি। ওয়েট,,,,’

সাবাব নেকলেস গুলোর মধ্যে থেকে একটা তুলে হীরের গলায় পরিয়ে দিয়ে ম্লান মুখে বলল,

—-‘ এটা পড়ে থাক আপাতত। তাহলে গলার দাগ টা বোঝা যাবেনা।’

হীর ছলছল চোখে তাকালো সাবাবের দিকে। সাবাব গাল ফুলিয়ে নিঃশ্বাস ছেড়ে মনেমনে ভাবল,

—-‘ শুরুতেই তোমাকে ভালোবাসি কথাটা বলে ফেললে হয়তো আজকের এমন একটা সময় আসতোই না হীরপাখি। আজ এসব করে তোমাকে যা বোঝাতে চাইলাম তুমি তো সেটা বুঝলেই না উল্টে ভুলই বুঝলে। ভুলটা অবশ্যই আমার। আমি ভেবেছিলাম তরীর সাথে মেলামেশা হয়তো তোমাকে জেলাস করবে আর তুমি সহ্য করতে না পেরে মুখ ফুটে বলেই ফেলবে, ‘ভালোবাসি।’ কিন্তু না। শেষ অব্দি হিতে বিপরীত হলো। আর না, এবারের ডিসিশনই হবে ফাইনাল ডিসিশন।’

হীর ভেজা গলায় বলল,

—-‘ আম সরি ভাইয়া। তুমি আমার কথায় কষ্ট পেয়োনা প্লীজ। আমি তোমাকে হার্ট করতে কিছু বলিনি।’

হীরের কথায় স্মিত হাসল সাবাব। গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,

—-‘ ছেলেদের থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবি। বাইরে অনেক ছেলেরা এসেছে। তোর দিকে কেমন বাঁকা চোখে তাকায়। আমার মোটেও পছন্দ নয় এসব। পরে দেখা যাবে আমার রাগ উঠে গেলে এক গুলিতে মার্ডার করে দেবো। আর শুনলাম রাবিবও এসেছে নাকি। তাই একটু সাবধানে থাকিস।’

হীর চোখ ঝাপটে বলল,

—-‘ আচ্ছা।’

#চলবে_♥

[বিঃদ্রঃ এতদূর কষ্ট করে পড়ে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করবেননা। যদি ছোট্ট একটা মন্তব্যে আপনার মতামত জানাতে কষ্ট হয়। ধন্যবাদ]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here