#কি_করে_বোঝাই_ভালবাসি (শেষপর্ব)
১৭.
সকাল থেকেই লক্ষ্য করছে শান্ত, বাড়িতে কেমন উৎসব উৎসব ভাব। বাবা অনেক বাজার করে আনলেন। কাজের লোকেরা বাড়ি ঝেড়ে মুছে সব পরিস্কার করছে। সে ছাদের গাছগুলিতে নিড়ানি দিচ্ছিলো। কদিনেই বেশ সুন্দর হয়ে গেছে গাছগুলো। কাদের তার জন্য চা নিয়ে এল।
-কেউ আসবে নাকি রে আজ?
-তিথি আপার বিয়ের কথা কইতে লোক আসবে।
-কারা আসবে? কোথা থেকে?
-তা তো আমি জানি না ভাইজান।
-আচ্ছা তুই যা।
কাদের চলে যেতেই সে নেমে আসে। অটো স্ট্যান্ডেএসে অটো নিয়ে সোজা তিথিদের বাসায়। এই বাড়িতেও সাজ সাজ রব। তিথির ভাইকে দেখতে পেলো।
-তমাল।
ডাক শুনেই তমাল এগিয়ে আসে।
-তিথি কই রে?
-আপা তো ভেতরে।
-একটু ডেকে দে তো।
তমাল ভেতরে চলে যায়। আর সাথে সাথেই তিথি বেরিয়ে আসে।
-কি চাই আপনার?
-তোর নাকি বিয়ে?
-কেন বিয়ে করবো না এমন প্রতিজ্ঞা তো আমি কারো কাছে করি নাই।
-তুই না আমাকে ভালবাসতি? এত তাড়াতাড়ি চলে গেল তোর ভালবাসা।
-তা অবশ্য ঠিক বলেছেন। আপনাকেই ভালবাসতাম। কিন্তু ভালবাসার মানুষ যখন ঠকায় তখন তো সেই ভালবাসা অবশিষ্ট থাকে না।
-তা কে তোকে বিয়ে করছে তা কি জানতে পারি?
-সেটা তো দেখতেই পাবেন। আপনাকে ছাড়া তো আর কিছু হবে না। আপনাদের বাড়ির আশ্রিত মেয়েটার বিয়ে আপনার মা আপনাদের বাড়ি থেকেই দেবেন বলে ঠিক করেছেন।
-তুই এভাবে বিয়ে করতে পারিস না।
-কেন? আপনার সম্পত্তি নাকি আমি। এখানে দাড়িয়ে ঝামেলা করবেন না দয়া করে। বাড়ি চলে যান। আপনার সাথে আর কোনো সম্পর্ক নেই আমার।
তিথির ধকধকে চোখের দিকে তাকিয়ে আর কিছু বলে না শান্ত। আসলেই সে চোখে তার জন্য কোন ভালবাসা দেখতে পায় না। অটো নেবার কথাও আর মনে থাকে না। হাটতে শুরু করে।
বাসায় তার জন্য বিশাল চমক অপেক্ষা করছিল। বকুল গাছের তলায় রনি আর কৌশিকে দেখে শান্ত নিজেই দৌড়ে আসে। জড়িয়ে ধরে দুই বন্ধুকে।
-কি রে তোরা? হঠাৎ। কোনো খবর না দিয়ে?
রনি বলে,
-তোকে চমকে দেব বলেই ফোন না করে আসা। আর আরেকটা কারণ অবশ্য আছে সেটাই অবশ্য মুখ্য কারণ।
-কি সেটা?
-আমাদের কৌশিকের বিয়ে আজ সন্ধ্যায়।
শান্তর মুখ কালো হয়ে হয়ে যায়।
-কার সাথে বিয়ে?
-কেন তিথির সাথে।
কৌশিক লক্ষ্য করে শান্তর পরিবর্তন। সত্যি কি ও তিথিকে ভালবাসত? মনে হয় না। হয়তো ওর ইগোতে লাগছে।
১৮.
সকালের প্লেনেই রিয়াদ সাহেব, রাহেলা, রনি আর কৌশিক সৈয়দপুর এসেছে। আর দিনাজপুর পর্যন্ত গাড়িতে। গাড়ি ইমতিয়াজ সাহেব নিজেই পাঠিয়েছিলেন। তিথি যেহেতু রাজি ছিল তাই বিয়ের কথা খুব সহজেই পাকা হয়ে গিয়েছিল। আফরোজা বেগম ইচ্ছা করেই শান্তকে কিছু জানান নাই। যে ছেলে তার । কখন কি করে বসে তার নেই ঠিক।
মেহমানদের খাবার ব্যবস্হা সব ঠিক করে তিনি রাহেলার ঘরে গেলেন।
-আপা আসবো?
-কি যে বলেন না আপা। আপনি কেন অনুমতি চাইছেন।
-আপনারা যে আমার মেয়েটাকে আপনাদের বাড়ির উপযুক্ত ভেবেছেন তাতেই আমি এত খুশি হয়েছি যে আপনাকে বোঝাতে পারবো না।
-আরে কি যে বলেন। আমাদের পরিবার মানেই কৌশিক। ওর সুখের জন্য ওর বাবা সব কিছু করতে পারে। আজকে শুধু আকদ টা হয়ে নিক। তারপরে কিন্তু অনেক বড় করে রিসেপশন করবো আমরা। তখন কিন্তু আমাদের বাসাতেই গিয়ে থাকবেন। আচ্ছা আপনাকে তিথির জন্য আনা শাড়ীটা দেখাই আর গয়নাগুলো।
-তিথি আসার পর আমি সব দেখবো। আপনার কিছু লাগলে অবশ্যই আমাকে ডাকবেন।
বলেই তিনি শান্তর বাবাকে খুঁজতে বাহির হলেন। কৌশিকের বাবাকেও দেখছেন না কোথাও। দুজন মিলে আবার কোথায় গেল? ছেলেগুলোও তো কোথাও নেই।
-কাদের এই কাদের…
কাদের ছুটে এসে সামনে দাড়ায়।
-সবাই কোথায় রে?
-খালু তো বাইরে গেল নতুন খালুর সাথে। আর ভাইজানেরা সব ছাদে।
-আচ্ছা তুই যা।
তিনি নিজের ঘরে চলে এলেন। ঘর সাজানোর লোক কতদুর কি করেছে দেখতে হবে।
চিলেকোঠার ঘরে তিনজনে বসে। কৌশিক বেশ গম্ভির। রনি বাইরে বেরিয়ে আসলো। এমনটা তো হবারই কথা। কৌশিক কেন যে আগে সব জানালো না।
দুইজনের জোরে কথা শুনে রনি আবার ভেতরে আসে।
-কি শুরু করেছিস তোরা?
-কেন? ও কি জানতো না যে তিথির সাথে আমার সম্পর্ক ছিল।
-নিজেই তো বলছিস সম্পর্ক ছিল তবে কোন অধিকারে বাঁধা দিতে আসিস তুই?
-ঠিকই তো বলেছে ও শান্ত। কেন ঝামেলা করছিস। এটাকে যে মেয়েটার অপমান হয় বুঝছিস না। কৌশিকের বাবা আর ফুপি তো এসব জানে না।
-আচ্ছা ঠিক আছে তিথি আসুক এ বাড়িতে তখন আমি নিজে কথা বলবো ওর সাথে।
-কি কথা বলবি তুই? দুই দিনেই ভালবাসা আবার বিয়ে । এমন হয় নাকি?
-তুই অমন করতে পারলে আমি পারবো না কেন?
-নাহ তোরা দেখি বাচ্চা পোলাপানের মত আচরন করছিস। দেখ বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছ। কৌশিক তুই নীচে চল। আর শান্ত তুই ব্যাপারটা ভাল করে চিন্তা করে দেখ। নিশ্চই মেয়েটার খারাপ চাস না।
রনি কৌশিক কে নিয়ে নীচে নেমে আসে।
পার্লারে যাবে না যাবে না করেও রাহেলার কারনে যেতে হল তিথিকে পার্লারে। বাড়ির সামনে যখন তিথি গাড়ী থেকে নামলো, অফহোয়াইট বেনারসী আর সোনার গয়নায় তাকে ঠিক পুতুলের মত লাগছিল। বারান্দায় তখন কৌশিক সাদা পান্জাবী পায়জামা পরে দাড়িয়ে।
আচ্ছা সে কি কোনো ভুল করলো। আসলেই কি তিথি কখনও শান্তকে ভুলতে পারবে? তাকে কি কখনও মন থেকে ভালবাসতে পারবে?
সবাই ভেতরে যেতেই সে ছাদে আসে। শান্ত তখনও চিলেকোঠার ঘরে। সে তিথিকে ফোন করে,
-কিছু বলবেন?
-একটু ছাদে আসবে তিথি?
-এখন?
-হ্যাঁ এখুনি।
সিঁড়িতে পায়ের শব্দ হতেই কৌশিক সিঁড়িতে গিয়ে দাঁড়ায়। একরাশ বেলিফুলের গন্ধ নিয়ে তিথি উঠে আসে।
-এখন কেন ডাকলেন? কত লোকজন। কাজী সাহেবও এসে পড়েছে।
-তোমার সাথে খুব জরুরী কথা আছে। তুমি এদিকে এস।
বলেই কৌশিক শান্ত ঘরের দরজায় ধাক্কা দেয়। এলোমেলো হয়ে শান্ত বেরিয়ে আসে।
-কি বলবি বল? বলেই তিথিকে দেখতে পায়। চুপ করে যায় শান্ত।
-তিথি তুমি যদি সত্যি শান্তকে ভালবাস তবে আমি তোমাদের মাঝে এক মিনিটের জন্য থাকবো না। তুমি শুধু তোমার মন কি চায় সেটাই বলবে। সবার কথা চিন্তা করবার দরকার নেই।
-এ জন্য ডেকেছেন? এটা কি আমার পরীক্ষা? হ্যাঁ অবশ্যই আমি এই লোকটাকে ভালবেসেছিলাম। কিন্তু সে তো কোনো ভাবেই আমার ভালবাসার যোগ্য ছিল না। আর আমি এমন কারো সাথে আমার জীবন কাটাতে চাই যে শুধু আমাকেই ভালবাসবেই না, আমাকে তার জীবনের অংশ ভাববে। আমাকে সন্মান করবে। তবে আপনার যদি আমাকে আর শান্তকে নিয়ে কোনো রকম সন্দেহ থাকে তবে এখুনি সবাইকে বলা উচিত।
তিথি নিচে যাবার জন্য ঘুরতেই কৌশিক তিথির হাতটা ধরে।
-তোমাকে কিছু বলতে হবে না কাউকে। চল যাই।
ওরা এক সাথে নিচে নেমে যায়।
আফরোজা বেগম নিজের ঘরটাই নতুন বর কনের জন্য সাজিয়েছেন। সব টুকুই সাদা ফুলে সাজানো। আল্লাহর কাছে এটাই চাইছেন সেন ওদের জীবনে কোন কালিমা স্পর্শ না করতে পারে। ওদের ঘরে বসিয়ে তারা সবাই নিজেরা বিশ্রাম নিতে চলে গেল।
শান্ত পুরো অনুষ্ঠানে একটুর জন্য নীচে নামেনি। পুরোটা সময় ছাদেই ছিল। রনি এসে বসলো শান্তর পাশে।
-দোস্ত সবারই সুন্দর ভাবে বাঁচার অধিকার আছে। তুই আর ঝামেলা করিস না।
-আমি ঝামেলা করবো? কেন বলতো?
-তাহলে এসব করতে গেলি কেন?
-ওহ্ তুই ভেবেছিস বিয়ে ভাঙ্গতে করেছি এসব? আরে নাহ। আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম কৌশিক কতটা ভালবাসে তিথিকে। দেখলি তো ওদের মাঝে আমি পাত্তাই পেলাম না। তবে এটাও বুঝতে পারছি তিথিকে ছেড়ে আমিও ঠকে গেছি। সারা জীবন শুধু ভুল কেউ গেলাম। এখন থেকে ভাল হবার চেষ্টা করবো।
দুজন চুপচাপ আকাশের তারা দেখতে থাকে। রনি ভাবে এ কোন শান্ত। একে তো চেনে না সে।
ওদিকে..
-আপনি আমাকে সন্দেহ করেন না তো?
-না তো তা করবো কেন? আমি তো সব জেনেই তোমাকে ভালবেসেছি।
-তবে কেন ডেকে নিলেন?
-দেখতে চেয়েছিলাম কাকে ভালবাসো তুমি?
-কি করলে বুঝতে পারবেন আপনাকেই ভালবাসি?
-আপাতত আপনি থেকে তুমি বল… পরেরটা পরে দেখা যাবে।
সমাপ্ত