কিচিরমিচির পর্ব -০৫

#গল্প_কিচিরমিচির
#লেখিকা_আদিয়া_মির্জা_সানা(জ্যোতি)
#ক্যাটাগেরি_রোম্যান্টিক

৫.

কালো পাঞ্জাবির উপর শিমার কালো কটি পরেছে পর্বভাই।হাতে কালো মোটা বেল্টের ঘড়ি।চুলগুলো বরাবরের মতো চোখের উপর এসে পরছে।বেশ লাগছে দেখতে।আমাকে পর্বভাইয়ের দিকে এমন হা করে তাকাতে দেখে পর্বভাই গলা ঝাড়লো একটু তারপর কপাল চুলকে মুচকি হেসে আবার বললো,

“কিরে ইশুপাখি বল তোর কাহানিও খতম করে দিবো কি?”

আমি বেশ লজ্জা পেলাম লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছি মুখে কোনো কথা নেই।

————
পর্ব বেশ মনোযোগ দিয়ে তার ইশুপাখিকে দেখছে।শাড়ি পরে অনেক বেশি পরিপূর্ণ লাগছে মেয়েটাকে।ফর্সা গায়ে কালো শাড়িটা যে ফুটে উঠেছে। চোখে হালকা সাঝ মোটা ঠোঁটটা গাড় খয়েরী লিপস্টিক দিয়ে বোল্ড করা।বেশ আবেদনময়ী লাগছে।পর্বের কথায় লজ্জায় গুটিয়ে গিয়েছে মেয়েটা। পর্ব ইশুর থেকে চোখ সরিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো,

“থাক আর লজ্জা পেতে হবে না আপনাকে লজ্জাবতী রমনি। এমন ভাবে লজ্জা পাচ্ছিস যেন মনে হচ্ছে তোর বোনের না বিয়ে তোর আর আজই আমাদের বাসর।তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় নাফিসাকে”

কথাটা বলেই পর্ব চলে গেল নিচে।আর তার যাওয়ার দিক হা হয়ে তাকিয়ে আছে ইশিতা।

———
পর্বভাইয়ের কথা শুনে যেন আমি আকাশ থেকে পরলাম।কি বলে গেল আমার বিয়ে হলে পর্বভাইয়ের সাথে কেন বাসর হতে যাবে?অবশ্যই আমার বরের সাথে হবে বাসর মনে মনে এই সব প্যাচঘোচ ছাড়াচ্ছিলাম হঠাৎ নাফিসা আপু হাতের কোনায় গুতা দিতেই আমার হুশ ফেরে আমি ঝট করে ঘাড় ঘুরিয়ে আপু দিকে তাকায় আপু নিজের হাতে চুড়ি পরতে পরতে বলছে,

“আরে তাড়াতাড়ি চল আমার বর আমার জন্য ওয়েট করছে।তাড়াতাড়ি চল..”

আমি হ্যা করে আপুর দিকে তাকিয়ে আছি।মানে বিয়ের দিন যেখানে কনের ভ্যা ভ্যা করে কাঁদার কথা সেখানে এ বলছে বর নাকি তার জন্য নাকি বর ওয়েট করছে।আমার ভাবনার মাঝেই আপু আমার মুখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

“কিরে তুই কি যাবি নাকি আমি একাই চলে যাবো?”

আমি তড়িঘড়ি বলে উঠলাম,

“আরে না না একা যাওয়ার দরকার নাই আমিও যাচ্ছি চলো চলো..বুঝছি তোমার আর তর সইছে না বাসর করার জন্য”

আপু আমার দিকে তেড়ে এসে মারার ভঙ্গি করতেই আমি এক লাফে খাট থেকে নেমে পরলাম।দরজা দিয়ে চাচিমনিকে আসতে দেখে তার পিছনে গিয়ে লুকালাম।চাচিমণি রুমে ঢুকে আমাদের দেখে বললো,

“বাহ্ দুটো মেয়েকেই খুব সুন্দর দেখাচ্ছে নজর না লাগে কারও…এখন চল তাড়াতাড়ি তোদের জন্য অপেক্ষা করছে সবাই..”

আমি শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে আয়নার সামনে দাড়িয়ে বললাম,

“চাচিমণি তোমরা যাও আমি আসছি আমি একটু ওয়াশরুমে যাবো”

চাচিমণি আর আপু বের হতে হতে বললো,

“আচ্ছা তাড়াতাড়ি আয় তাহলে আমরা এগোতে থাকি..”

আমি ছোট করে হ্যা বলে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দরজাটা আটকে পিছন ফিরতেই চমকে উঠলাম।আবির এক হাটু গেড়ে আমার দিকে তাকিয়ে বসে আছে ঠোঁটে বাঁকা হাসি।দুই হাতই পিছনে।আমি তাকাতেই আমাকে বললো,

“বেবি..ইশু বেবি…”

আমি কিছু বললাম না।তবে আবির কি করতে চায়ছে তা ঠাওর করতে পারলাম।বুকের হার্টবিট বেড়ে দশগুণ হয়ে গিয়েছে।আবির নিজের সামনে আসা চুলগুলো হাত দিয়ে একবার পিছনে ঠেলে বললো,

“দেখো ইশু আমি সোজা কথা সোজাভাবে বলতে পছন্দ করি তো তুমি হয় তো বুঝতেই পারছো আমি কি বলতে চায়ছি আমি এখন তোমাকে প্রপোজ করতে চলেছি তো বলো মশলাপাতি এড করতে হবে না শুধু তিনটা ওয়ার্ড বললেই চলবে?”

আমি শান্ত চোখে আবিরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি।চুপচাপ আবিরের কথা শুনছি।আবির আমার কোনো প্রতিক্রিয়া না পেয়ে নিজেই আবার বললো,

“যায়হোক আমি জানি তুমি ফুল পছন্দ করো না।তাই ফুল আনিনি।তো আই লাভ ইউ ইশু বেবি।”

আমি এখনও একদম অনুভূতিহীনভাবে দাড়িয়ে আছি।আবির আমার দিকে তাকিয়ে আছে জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে। আমি কিছু বলছি না দেখে আবির নিজেই বললো,

“উফ্ বেবি এতো ওয়েট করতে পারবো না তাড়াতাড়ি লাভ ইউ ঠু বলে একটা কিস করো তো বেবি।আর হ্যা শুকনো কিস আমার একদম ভালো লাগে না বুঝতে পারছো কি বলছি ঐ টসটসে ঠোঁটের আদ্র ছোঁয়া চাই বেবি..তাড়াতাড়ি কিস করো আমার সবগুলো রিলেশনশিপ কিস দিয়ে শুরু হয়েছে এটাও কিস দিয়েই শুরু হবে।”

আমি আবিরের দিকে একটু এগিয়ে গেলাম আবিরও উঠে দাড়ালো।আমি কিছু বলবো তার আগে কোথা থেকে পর্বভাই এসে আবিরের নাকে ঘুষি দিলো।আবিরের নাক থেকে রক্ত পরছে আমি চোখ বড় বড় করে মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি।আবির নিজের নাক মুছতে মুছতে বাঁকা হেসে পর্বভাইয়ের দিকে তাকালো।পর্বভাইয়ের চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে।চোয়াল শক্ত করে হাত মুঠ করে দাড়িয়ে আছে।আবির বাঁকা হেসে পর্বভাইয়ের দিকে একটু এগিয়ে আসতেই পর্বভাই আবিরের পেটে ঘুষি মারে আবির পেটে হাত দিয়ে বসে পরে।পর্বভাই চিৎকার করে বললো,

“তোর সাহস হয় কি করে আমার ইশুপাখির দিকে বাজে নজর দেওয়ার? সাহস হয় কি করে আমার কলিজার দিকে হাত বাড়ানোর?তোকে তো আমি খুন করবো..”

বলেই পর্বভাই আবিরের দিকে আবার তেড়ে যায় মারতে।আমি এদের মারামারি দেখে যেন অনুভূতি শূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কিছু বলার শক্তি নেই আবিরের নাক থেকে একাধারে রক্ত পরছে।যা দেখে আমার শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।আমি দ্রুত পর্বভাইয়ের সামনে গিয়ে পর্বভাইকে আটকে নিই।তারপর দৌড়ে আবিরের কাছে গিয়ে আবিরকে তুলতে তুলতে বললাম,

“আবির ঠিক আছো তুমি…?”

আবির আমার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসলো তারপর পর্বভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,

“আমি ঠিক আছি কিনা জানতে তুমি এতো উদ্বিগ্ন তাহলে কি আমি ধরে নিবো তুমি আমাকে ভালোবাসো?”

আমি আবিরের হাত ছেড়ে দূরে গিয়ে দাড়ালাম পর্বভাইও জিজ্ঞেসু আর ভীত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আমি কি বলবো বুঝতে পারছি না।

#চলবে..?

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here