কিচিরমিচির পর্ব -০৮

#গল্প_কিচিরমিচির
#লেখিকা_আদিয়া_মির্জা_সানা(জ্যোতি)
#ক্যাটাগেরি_রোম্যান্টিক

৮.

আমি আর এলমি পাশাপাশি শুঁয়ে আছি। আমি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি চোখ বরাবর অচেতন ফ্যানের দিকে।বর্তমানের আবহাওয়াটা যেন কেমন দিনের বেলা অস্বাভাবিক গরম আর রাতে শীত তাই আপাতত ফ্যান বন্ধই আছে।তবে আবহাওয়াটা আমার খুব ভালো লাগে একসাথে দুই ঋতুর অনুভূতি। কিছুক্ষণ আগে পর্বভাইয়ের সাথে কাটানো মুহুর্ত গুলো ঘুমাতে দিচ্ছে না আমাকে।এত কেয়ার কি শুধু চাচাতো বন হিসেবে করছে পর্বভাই নাকি অন্যকিছু।অন্যকিছু যে এর মধ্যে আছে তাতে কোমো সন্দেহ নেই।আমি বিছানা থেকে উঠে লাইট জ্বালালাম।তাতে এলমি নিজের চোখমুখ কুঁচকে নিল।আমি এলমির পাশে বসে এলমিকে ধাক্কা দিতে দিতে বললাম,

“এলমি উঠো…এলমি উঠো না প্লিজ…এলমি….”

এলমি চোখমুখ কুঁচকে বিরক্তি নিয়ে ঘুম ঘুম কন্ঠেই বললো,

“উফ্ ইশু কি হচ্ছে এই রাত দুপুরে তুমি কি শুরু করলে এসব?”

আমি এলমির কথায় পাত্তা না দিয়ে ওকে ডাকতে লাগলাম।একপর্যায়ে এলমি ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে উঠে বসলো আর বললো,

“কি হলো আবার তোমার এই রাতে?”

আমি এলমির দিকে আসন হয়ে বসে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,

“পাত্রী কে গো?”

এলমি ভ্রু কুঁচকে তাকালো তারপর বিরক্তির ‘চ্’ শব্দ করলো মুখ দিয়ে তারপর বললো,

“এটা তো সকালেও শোনা যেত আরে বিয়ের দিন শুনলেও কি হতো এই রাতে এমনভাবে ডেকে তোলার কোনো মানে হয়…?”

আমি ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে আবার ফিসফিসিয়ে বললাম,

“উফ্ এতো কথা বলতে বলেছি পাত্রী কে তার নাম বলেই শুয়ে পরো ব্যাস কাহিনি খতম..”

এলমি আবার বিরক্তি নিয়ে বললো,

“আরে রাখো তো তোমার কাহানি খতম আমার ঘুম খতম করে তুমি এখন পাত্রীর নাম শুনছো..? ”

আমি এবার একটু অনুনয়-বিনয় করে এলমিকে বললাম,

“এই এলমি বলো না কে আমি তোমাকে আরও এক প্যাকেট মিষ্টি খাওয়াবো নাম বললে…”

এলমি সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো আমার দিকে তারপর চাপা কন্ঠে বললো,

“সত্যি?খাওয়াবে?”

আমি ঝড়ের গতিতে মাথা উপর নিচ করে জানালাম সত্যি মিষ্টি খাওয়াবো।এলমি তা দেখে বললো,

“পাত্রী তুমি…!”

আমি ভ্রু কুঁচকে তাকালাম এলমির দিকে তারপর অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললাম,

“এই রাত দুপুরে মজা করো না তো আরে বলো না পাত্রীর নাম কি?”

এলমি আমার দিকে একটু এগিয়ে আসলো তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“তোমার সাথে কি আমার মজার সম্পর্ক বললাম তো পাত্রী তুমি আর তোমার নাম ইশিতা কবির যেটাকে তুমি মাতব্বরি করে কাবির বানিয়েছো।এবার আল্লাহর রস্তে আমাকে ঘুমাতে দাও প্লিজ কাল আবির কুমিল্লা চলে যাবে আমাকে সকাল সকাল উঠতে হবে…”

আমার যেন পুরো পৃথিবী ঘুরাচ্ছে কিহ্!পাত্রী আমি মানে আমি!মানে মানে আমি!আর কিছু ভাবার আগেই মাথাটা ঘুরে বিছানা থেকে পরে গেলাম ফ্লোরে বেশ জোরেই শব্দ হলো। এর পর আর কিছু মনে নেই…!

চোখের উপর পানি ছিটে পরতেই চোখ খোলার চেষ্টা করলাম কানে কিছু অস্পষ্ট শব্দ বাড়ি খাচ্ছে। আস্তে আস্তে নিজে হুঁশে আনার চেষ্টা করলাম। কিছু মনে পরছে না কেমন যেন লাগছে।রুমে কেউ নেই শুধু পর্বভাই ছাড়া।আমাকে চোখ খুলে তাকাতে দেখে পর্বভাই আমার দিকে ঝুকে গেল যা দেখে আমি দ্রুত আমার বুকের দিকে তাকালাম যা ভেবেছি তাই ওড়না নেই বুকে।আশে পাশে অস্থির দৃষ্টিতে ওড়না খুঁজতে লাগলাম। তা দেখে পর্বভাই আর একটু আমার দিকে ঝুকে এলো আর ফিসফিস করে বললো,

“এতো অস্থির হচ্ছিস কেন?ছোটবেলায় তো তোর সবকিছু আমি দেখেছি.. বিয়ের পরও আমিই দেখবো…এখন তুই একটু শান্ত হয়ে শুয়ে থাক…!”

আমি চোখ বড় বড় করে তাকালাম পর্বভাইয়ের দিকে। বিয়ের কথা শুনে কাল রাতে সব কথা মনে পরে গেল।আমি চোখ মুখ খিঁচে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলাম।তা দেখে পর্বভাই উত্তেজিত হয়ে বললো,

“কি হলো ইশুপাখি? এই ইশুপাখি কি হলো তোর কাঁদছিস কেন তুই?কোথাও কষ্ট হচ্ছে তোর?আমাকে বল কোথায় কষ্ট হচ্ছে? পেটে ব্যাথা করছে?বল কি হয়েছে?”

এমন হাজারো প্রশ্ন করতে করতে আমাকে নিজের বুকের মধ্যে আগলে নেয় পর্বভাই।আমাকে শক্ত করে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরে আছে পর্বভাই।আমি নাক টেনে কান্না করছি।পর্বভাই আমার পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।এবার শান্ত স্বরে বললো,

“পেটে ব্যাথা হয়েছে ইশুপাখি? গরম পানি করে দিবো?”

আমি নাক টেনে বরাবরের মতো পর্বভাইয়ের গেঞ্জিতে নাক মুখে নিলাম।তা দেখে পর্বভাই স্মিত হাসলো তারপর নিজেই গেঞ্জির কিছু অংশ নিয়ে আমার মাথার পিছনে ধরে নাক মুছিয়ে দিলো। আমি হাতের উল্টোপাশ দিয়ে নাকটা আরও একবার ডলা দিলাম।তারপর কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,

“আম্মু… আম্মু…আম্মুকে ডেকে দাও না..”

পর্বভাই ভ্রূকুটি করলো তারপর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,

“চাচিমা তো আবিররা আজ কুমিল্লা ফিরে যাচ্ছে তাই ওদের সব গোঁজ গাঁজ করে দিচ্ছে। তুই বস আমি ডেকে দিচ্ছি…”

আমি ডান দিকে মাথা কাত করে সম্মতি জানালাম। পড়বভাই বিছানা থেকে নেমে জুতো পায়ে দিয়ে চলে গেল।আমি এখনো বসে নাক টানছি।

“ওয়াও ওড়না ছাড়া তো তোমাকে অনেক বেশি সেক্সি লাগে ইশু বেবি…তো এপিসোড ব্রোকেই কি শুধু ট্রিট করো? আমাকেও তো একটু ট্রিট করতে পারো….!”

হঠাৎ আবিরের কন্ঠ পেতেই আমি তড়িঘড়ি বালিশের পাশে রাখা ওড়নাটা গায়ে দিয়ে বিছানা থেকে নেমে।কড়া কন্ঠে আবিরকে বললাম,

“তোমরা না চলে যাবে এখানে কি করছো তুমি?পারমিশন ছাড়া রুমে কেন ঢুকেছো তুমি?এখনই বের হও আমার রুম থেকে…”

আবির নিচের দিকে তাকিয়ে নিজের কপাল চুলকে ঝড়ের গতিতে আমার গলা ধরে আমাকে দেওয়ালের সাথে বাড়ি দিলো।আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। আবির আরও দুইবার গলা ধরে সামনে এনে দেওয়ালের সাথে বাড়ি দিলো।আমার কিছু বলার শক্তি নেই। মৃত্যু যেন আমার সামনে দাড়িয়ে আছে।এমন মনে হচ্ছে। আবির আমার কানের কাছে ঝুঁকে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,

“এতো অহংকার কিসের তোর?আমাকে বের হয়ে যেতে বলিস… আমাকে পারমিশন দেখাচ্ছিস তুই তোর শরীর টেস্ট করতেও আমার কারও পারমিশন লাগবে না।কি হলো এখন সব তেজ শেষ তোর…?”

আমি আবিরের বুকে দুই হাত দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছি আর হাসফাস করছি ছাড়া পাওয়ার জন্য।মুখ দিয়ে মৃদু আওয়াজও হচ্ছে।আমি অস্পষ্টভাবে বললাম,

“আব..আবির ছাড়ো.. পাগ..পাগল হয়ে গেলে নাকি..আ..আ…”

আবির আমার কথায় পাত্তা না দিয়ে আমার চুল মুঠি করে ধরলো তারপর আমার মুখের সামনে এসে বললো,

“আমি যাচ্ছি বলে যেন পাখা গজায় না না হলে কি হবে তা আমি নিজেও জানি না।একটা প্রবাদ আছে না পিপীলিকার পাখা গজায় মরিবার তরে তোরও যদি পাখা গজায় তাহলে মনে রাখবি তোর মরার সময় হয়ে গিয়েছে।”

আমার তল পেট পিঠ বুকের ভিতর প্রচন্ড ব্যাথা করছে। পুরুষের দেওয়া ধাক্কা আমি কি আর সহ্য করতে পারি।আবির নিজের মুখ আমার গলার কাছে নিয়ে আসছে আস্তে আস্তে আমি চোখমুখ খিঁচে আছি।আমার দুই হাত আবির দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে আছে।হঠাৎ আমার গলায় আবিরের ঠোঁটের স্পর্শ পেতেই কেঁপে উঠলাম আমি।সারা শরীর ঘৃণায় কাঁপছে আমার।

“আবির…”

হঠাৎ আম্মুর কন্ঠে আবির আমাকে ছেড়ে পিছনে তাকালো। আমি দেওয়ালের সাথে ঘেঁষতে ঘেঁষতে বুকে হাত দিয়ে সেখানেই বসে পড়লাম। আম্মুর পিছন থেকে পর্বভাই দৌড়ে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলো বিছানায় বসিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলো।আমি জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছি।আম্মু শক্ত কন্ঠে আবিরকে বললো,

“এখনই আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যা…আর কোনোদিন যেন আমার বাড়িতে তোকে না দেখি।আর যদি দেখি তাহলে তোকে আমি পুলিশে দেবো আমার বাড়িতে দাড়িয়ে আমার মেয়েরই সর্বনাশ করতে চাস তুই…! ”

আবির রক্ত চোখে তাকিয়ে আছে আমার আর পর্বভাইয়ের দিকে।আমাদের দিকে এগিয়ে আসতে যাবে তার আগেই আম্মু আবিরের সামনে এসে বললো,

“তোকে আমি আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিস তুই ঐদিকে কোথায় যাচ্ছিস?ভার্সিটি থেকে এসব শিখছিস তুই মেয়েদের মোলেস্ট করা শিখেছিস?”

আবির আম্মুর দিকে তাকিয়ে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,

“আরে খালামণি ভার্সিটিতে কি কেউ ভালো কিছু শিখে?”

আম্মু আবিরের গালে একটা চর দিলো তারপর চেচিয়ে বলে উঠলো,

“চুপ ভার্সিটি সম্পর্কে আমাকে কিছু শেখাতে আসবি না আমিও ভার্সিটিতে পড়েছি।পর্ব পড়ছে ইশু পড়ছে ওরা ভালো কিছু শিখে না?নিজেকে আর ইশুকে দেখেছিস ইশুর পা’র কাছে যাওয়ার যোগ্যতাও রাখিস না তুই…আর তাছাড়া আমরা ছোটবেলায় পর্বের জন্য ইশুকে ঠিক করে রেখেছি”

আবির গালে হাত দিয়ে আম্মুর দিকে একটু ঝুকে শান্ত কন্ঠে বললো,

“মেয়েকে নিয়ে এতো অহংকার!কি আছে তোমার মেয়ের চেহারা? সব অহংকার শেষ হয়ে যাবে.. তুমি নিজেই তোমার ঐ মেয়ের চেহারা দেখে ভয় পাবে কথা দিচ্ছি আমি….!”

#চলবে…

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here