কৃষ্ণচূড়ার রং লাল পর্ব ১৮+১৯

কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-১৮.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
ধপ করে সুইমিং পুলে পড়তেই তুতুল কিছু পানি ফ্রীতে খেয়ে নেয়।নাকে মুখে পানি ঢুকে যায়।কাশতে কাশতে তুতুল কিছুসময় ঝাপাঝাপি করি।চিৎকার করে বলে,
“ আমি ডুবে যাচ্ছি!!বাঁচান!রিঝ ভাই প্লিজ বাঁচান।”

দু’হাত বুকের উপরে গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে রিঝ।এক হাতের উপরে আর এক হাতের ভাজ।শান্ত গলায় তুতুলকে উদ্দেশ্য করে সে বলল,
“ শান্ত হয়ে দাঁড়াও।সুইমিংপুল এতো গভীর না যে তুমি ডুবে যাবে।নিচে ঠিক করে পা রাখো দেখবে দাড়াতে পারছো।”

তুতুল পা রাখার চেষ্টা করে।নিচে পা রাখে।দাড়াতে চায়।ঝুপ ঝুপ হয়ে আছে সে।রিঝ চলে যেতে নেয়।তুতুল চেঁচিয়ে বলে,
“ এটা কি হলো??এমন করলেন কেনো??”

রিঝ ঘুরে তাকায়।প্যান্ট একটু তুলে পুলের পাশে বসে।চশমা চোখে ঠেলে দিয়ে বলল,
“ এটা আমাকে না বলে পিছনের দিকে যাওয়ার শাস্তি।এমন ভুল আর করলে আরো ভয়ঙ্কর শাস্তি কপালে জুটবে।ভুলেও আমাকে না বলে কোথাও যাওয়ার সাহস করবে না।এটা আমার মোটেও পছন্দ না।এখন ভালো করে গায়ে পানি দেও।ভিজো।বালি গুলো পরিষ্কার করে তারপর উপরে চলে আসো।বাই।”

রিঝ মুচকি একটা হাসি দিয়ে আস্তে আস্তে ধীরে সুস্থে হেঁটে চলে যায়।তুতুল হা করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।ডুব দিয়ে উঠে দাড়ায়।রাগে ফস ফস করতে করতে সে উঠে ভেতরে আসে।রামিম তুতুলকে দেখে ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে,
“ তোমার এই অবস্থা কেনো??না মানে তুমি যদিও আগেই ভিজেছো তবে রিঝ তো তোমাকে অনেক আগেই কোলে করে নিয়ে এসেছিলো??”

রিঝের উপরের সব রাগ তুতুল রামিমকে দেখালো।চোখ গরম করে চেঁচিয়ে উঠে বলল,
“ আমার এই অবস্থা আপনার শয়তান বন্ধু ছাড়া আর কারো করার সাহস নাই।শয়তান একটা।আমি দেখে নিবো উনাকে।”

রামিম কিছু বুঝলো না।শান্ত করার জন্য বলল,
“ তুমি ওকে যেমন ভাবো ও কিন্তু তেমন না।ও প্রচন্ড ভালো তুতুল।”
“ আপনি তো উনার পক্ষ নিবেনই শত হোক আপনার বন্ধু বলে কথা।”
“ বন্ধু বলে বলছি না।ও সত্যিই ভালো।”
“ উনাকে আমি যখনই মনে করি উনি ভালো,যেমন দেখায় তেমন না, তখনই উনি আমার মন খারাপ করে দেয়।এতো খারাপ কেনো উনি??সব সময় এটিটিউড আর মুড নিয়ে চলা ফেরা করবে।যেনো দুনিয়া মুখিয়ে আছে উনাকে পাত্তা দেওয়ার জন্য।দুনিয়া পাত্তা দিলেও আমার কাছে উনার কোনা পাত্তা নেই।আমি একদমই পছন্দ করি না উনাকে।এবং করবোও না।যতো সব।এই এই একদম উনার পক্ষ নিয়ে কিছু বলবেন না।তাহলে আপনার কপালে খারাপ কিছু আছে।আমি তো এর প্রতিশোধ নিবোই।নিবো।”

তুতুল চুলের পানি ঝারে।রামিম আহাম্মকের মতো দাড়িয়ে দাড়িয়ে তুতুলের যাওয়া দেখে।রাগে লাল হয়ে ফুলছে সে।কপাল চাপড়ে রামিম বিড়বিড় করে বলল,
“ আহ রিঝ আহ কবে তুই ঠিক হবি।শালা তোর কপালে প্রেম এবং মেয়ে দুইটাই নাই।ওহহহ্।”

তুতুল নিজের রুমে যাওয়ার সময় দেখে রিঝ কারো সাথে ফোনে কথা বলছে।একটু দূরে দেখা যাচ্ছে রেয়ানাও কারো সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে।অদ্ভুত ব্যাপার দু’জনেই হাসছে।তুতুল মাথাটা একটু কাত করে কিছুসময় দেখে।তারপর কি যেনো হয়,রিঝের কাছে আসে।পা জোড়া উচু করে রিঝের কান থেকে ফোনটা নিয়ে নেয় এক টানে।রিঝ প্রথমে চমকায়।বলে,
“ এটা কি হলো???”

তুতুল কিছু বলে না।ফোটা ছুড়ে মারে ফ্লোরে।রিঝ বিস্মিত!!তার দামি ফোন!একেই এতো দিন ছুটি নিয়ে সে এখানে পরে আছে তার উপরে আলভী ঘন্টায় তিন চার বার কল করে।কল দেরিতে ধরলেই ক্যা ক্যা করে।এখন তো ফোনটা একদম ধপাস!!রিঝের চোখ মুখ লাল হচ্ছে ।গলার কাছের সবুজ রগ ভিসে উঠছে।তুতুল সুন্দর করে হাসে।ভেজা ঠোঁটে,সুন্দর হাসি।রিঝ কিছুসময়ের জন্য ভড়কায়।তাকিয়ে থাকে ঠোঁটজোড়ার দিকে।তুতুল এক গাল হেঁসে বলল,
“ এতো প্রেম করেন কেনো??বেশি প্রেম করলে তো মারা যাবেন ।একটু কম করার চেষ্টা করুন।”

তুতুল সোজা হাঁটে।রিঝ কোমড়ে দু হাত রেখে চেঁচিয়ে উঠে।বলে,
“ আমি প্রেম করছিলাম না।তুমি কোন সাহসে আমার ফোন ভাঙ্গলে।”

তুতুল ঘুরে তাকায়।চোখ ছোট করে বলে,
“ আপনি প্রেম করছিলেন না??”
“ না।এমন স্টুপিড কাজ আমি করি না।এগুলো তোমাকেই সুট করে।পাগল একটা।ফোন ভেঙ্গে দিলে কেনো??”
“ এই যে রেয়ানাও আপনার সাথে কথা বলছিলো ফোনে।আমি মনে করছি আপনিরা মনে হয় প্রেম করছিলেন।তাই,”
“ তোমার এমন মনে হয়!!!কেনো??” রিঝের কন্ঠে কৌতুহল।

তুতুল থমকায়।নারভাস হয়ে পরে।কি বলবে খুঁজে।আসলেই তো সে আজকে সব এলোমেলো আচরন করছে!কেনো??তুতুল নিজের চুল ঠিক করে নিজে নিজেই বিড়বিড় করে বলে,
“ তুতুল তুমি পাগল হয়ে গেছো।পাগল!!”

নিজে নিজে বিড়বিড় করে তুতুল চলে যেতে নেয়।রিঝ হাতটা টেনে ধরে।শান্ত চোখে তাকিয়ে বলে,
“ তোমার কিছুই আমি বুঝি না।কখনো মনে হয় তুমি অনেক পাগল,কখনো মনে হয় তুমি অনেক শান্ত,কখনো আবার মনে হয় তুমি পানির মতো।যে পাত্রে রাখা হয় সে পাত্রের রূপ ধারন করো।তুমি মাঝে মাঝে আমাকে অনেক ভাবাও!”

তুতুল ঘাড় সোজা করে রিঝের চোখের দিকে তাকায়।লাইটের আলো চোখে পড়ছে তাই কালো মনি সোনালি সোনালি লাগছে।তুতুল হেসে উঠে বলে,
“ আমাকে নিয়ে বেশি ভাবলে আপনিও আমার মতো হয়ে যাবেন।পাগল!আর আমি আপনার ফোন জেলাসির জন্য ভাঙ্গি নাই।এটা আমাকে পুলে ফেলার শাস্তি।”
“ আমি তো জেলাসির কথা বলিই না।”

তুতুল একহাতে নিজের মুখ চেপে ধরে।দ্রুত হাত ছাড়িয়ে চলে যায়।রিঝ সেভাবেই দাড়িয়ে থাকে।তুতুল নিজের কাজে নিজেই অবাক।সে আসলেই অসুস্থ।ফ্রেশ হয়ে একটু ঘুমাবে সে।কি সব করছে??
____________________
রিঝ তুতুলের রুমের সামনে এসে অবাক হলো।রুমের দরজা খোলা।তুতুল নেই।কোথায় গেলো??রিঝ বুঝে না এই মেয়ে এমন আপন খেয়ালি কেনো??অন্যের কথা ভাবার সময়ই নেই তার কাছে।বিকেল চারটা বাজে।তুতুলকে নিয়ে নিচে যাবে তারা।সবাই শপিং করবে।কালকে বান্দরবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।ইয়াজকে দেখলে রিঝের রাগ নিয়ন্ত্রনে থাকে না।নিজের এমন রাগি রূপ সে কাউকে দেখাতে চায় না।কিছু সত্ত্বা গোপনে থাকা ভালো।রিঝ সম্পূর্ন্য হোটেলে খুঁজে।তুতুল নেই।রিঝ সমুদ্রের পাড়ে আসে।এতো মানুষের মাঝে তুতুলকে কিভাবে খুঁজে বের করবে সে জানে না।কিন্তু সে জানে তুতুল এখানে আছে।একটা জায়গায় ভীর কম।অনেক কম বললেই চলবে।রিঝ হাজার মানুষের ভীরেও তুতুলকে খুঁজে পাবে।এটা সে জানে।দূর থেকে দেখা যাচ্ছে একটা ওড়না উড়ছে।রিঝ এগিয়ে যায়।তুতুল পাড়ে বসে আছে।গায়ে সাদা রঙ্গের কুর্তি।বিশাল উড়না গলায় মেলে দিয়েছে সে।সেই উড়নার মাথা উড়ছে।পা গুলো ভাজ করে বসে আছে সে।রিঝ পাশে বসে।তুতুলের চোখ তখন সমুদ্রে।রিঝ প্রশ্ন করে,
“ তোমাকে না বলেছি আমাকে না বলে কোথাও যেতে না??”

তুতুল পাশ ফিরে তাকায়।ঠোঁটে একটুকরো হাসি।কোণায় চিকচিক করছে কালো তিল।বড় বড় চোখ।কাঠি দিয়ে বাঁধা কোঁকড়া চুল।দুই মোটা ভ্রুর মাঝে কালো ছোট টিপ।তুতুল সাধারন টিপ তেমন পরে না।আজকে কি বিশেষ কিছু??রিঝ কপালে ভাজ ফেলে তাকিয়ে থাকে।তুতুল নিজের ছোট ছোট চুলগুলো কানের কাছে গুঁজে দিতে দিতে বলল,
“ আমি নিজের মতো চলতে পছন্দ করি।আপনার মতো চলতে পারবো না।”
“ সেটা আমি জানি।কিন্তু বলে না আসলে তোমার ভাই যে ঘন্টায় কয়েক বার কল করে তাকে কি বলবো?”
“ বলবেন খুঁজে পাচ্ছিনা।”
“ এমন বললে আমার মাথা মাথার জায়গায় থাকবে না।”
“ আপনাকে সবাই ভয় পায়।ভাইয়াও।একটু রাগ দেখিয়ে ,আমি কি জানি বললেই হয়ে যাবে।”

“ তুমিও ভয় পাও আমাকে??” রিঝের কন্ঠে শীতলতা।
তুতুল হাসে।শান্ত হাসি।সামনের সমুদ্রও শান্ত।আশেপাশের দুই একটা কথা সুরের মতো বাজচ্ছে।রিঝও মৃদূ হাসে।কালো জ্যাকেটের হাতা উপরে তুলে নেয়।পাশে বসে।দুই হাঁটুতে হাত রাখে।তুতুল বলে,
“ একটা সত্যি কথা বলি??”

রিঝ একটু অবাক হলো।আজকে তুতুল এতো শান্ত শান্ত কথা বলছে!!কারন কি??রিঝ কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“ আমি মিথ্যা পছন্দ করি না।সত্যিটাই শুনতে পছন্দ করি।”
“ আমি আপনাকে একটুও ভয় পাই না।”

তুতুল হু হা করে হাসে।রিঝ চোখ বাঁকিয়ে তাকিয়ে থাকে।বলে,
“ তোমার মনে হয় না আমি খুব রুড??”
“ সেটা অবশ্যই মনে হয়।কঠিন,রুড,বিরক্তিকর,পানসা টাইপের আপনি।কিন্তু হয় তো কোনো এক জায়গায় ভালো।তবে হ্যা এতো ফুলার কিছু হয় নাই আপনি একটা বেড কিং।এটা মানতেই হবে।”

রিঝ হাসলো।কিছুসময় দু’জনের মাঝেই নিরবতা।দু’জনেই কান পেতে সমুদ্রের শব্দ শুনে।গভীর গভীর একটা সুর।সমুদ্রের সুর!রিঝ বলল,
“ তুতুল ঘোড়ায় চড়বে??”

তুতুল বিস্মিত হয়ে তাকালো।বলল,
“ পড়ে গেলে তো আপনিই বেশি খুশি হবেন।”
“ মোটাও তেমন না।”
“ কেনো??আপনি তো আমাকে ফেলে দিতেই বেশি পছন্দ করেন।”
“ যা দেখা যায় তা সব সময় সত্য নয়।এখন চলো।”

রিঝ তুতুলের হাত টেনে নেয়।তুতুল উঠে দাড়ায়।যাওয়ার সময় সমুদ্রের বালিকণা থেকে ঝিনুক খুঁজে নেয় কিছু।তুতুল ঝিনুক কুড়াতে কুড়াতে প্রশ্ন করে,
“ আপনি সব সময় কালো সাদা জামাই কেনো পরেন??”
“ কোথায়।মাঝে মাঝে অন্য কালারও তো পরি।”
“ হ্যা কিন্তু বেশি কালো সাদা পরেন।যদিও এই প্রশ্ন অনেক আগের।কিন্তু এতো সুন্দর করে আমি আগে কখনো আপনাকে কথা বলতে দেখিনি।তাই এখনই করলাম।বলেন প্লিজ।”

রিঝ নিজের দিকে তাকায়।আজও সে সাদা কালো ড্রেস পরেছে।যদিও তার সাদা পছন্দ না।কালোই পছন্দ।তবুও মিলের জন্য সাদাটা পড়তে হয়।রিঝ তুতুলের জুতা গুলো নিজের এক হাতে নেয়।দুজনের প্যান্টই একটু উপরে তুলে রেখেছে তারা।নরম বালির উপরে হাঁটে দু’জনেই।পানের নিচেটা ঠান্ডা হয়ে আছে।বালি সরে যাচ্ছে।তুতুল সামনের দিকে মুখ করে পিছনের দিক করে হাঁটে।ভ্রু নাচিয়ে প্রশ্ন করেই চলে।অনেক সময় পরে রিঝ বলল,
“ যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তখন থেকে একটা কথাই রিয়েলাইজ করতে পেরেছি প্রতিটা মানুষের মধ্যে দুইটি রূপ থাকে।একটা কালো একটা সাদা।এই দুই রূপ এক সাথে কখনো প্রকাশিত হয় না।যদি না সে প্রেমে আক্রান্ত হয়।প্রেম মানুষকে একসাথে দুই রূপে তৈরি করে।সাদা কালো একসাথে।আমি এই দুই রূপকে সব সময় মনে রাখতে চাই।ভুলতে চাই না।আমি যদি আমার দূর্বলতা না চিনি তাহলে আমি জীবনের যুদ্ধে হেরে যাবো।সাদা কালোর এই খেলায় আমাকে পরিজিত হতে হবে।আমি পরাজয় মানতে পারি না।সব সময় চাই সাদাই জিতুক।যদিও আমি সাদা রং পছন্দ করি না।কিন্তু সাদা অংশকে পছন্দ করি।যা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র প্রয়োজন।তাই সব সময় সাদা কালোতে নিজেকে আবদ্ধ করে রাখি।এর জন্য সবচাইতে বেটার হচ্ছে পোশাক সাদা কালো করা।তাহলে সব সময় চোখে পড়বে।তাই আমি এমন ড্রেস পড়তে বেশি পছন্দ করি।”

তুতুল হেসে উঠে বলে,
“ আসলে আপনি প্রেমে পড়তে চান না তাই এমনটা করছেন।”
“ কিভাবে??”
“ এই যে প্রেমে পড়লে আপনার দুই রূপই প্রকাশ পাবে তাই আগেভাগে দুই রূপ নিজের মাঝে ধারন করছেন।ভালো ভালো।প্রেমে পড়া সত্যি ভালো না।এটা ভালো আইডিয়া।আমিও সাদা কালো পড়বো আজকে থেকে।তাহলে ভুলেও এই ভুল হবে না ২য় বার।”
“ না।তুমি সব সময় সাদাই পড়বে।সাদা ঘুঘুর মতো।যার চোখ হবে একদম কালো।যার চোখ দেখলেই মানুষ নিজের খারাপ সত্ত্বা কালোকে ভুলে যাবে।সাদার মাঝে ডুবে থাকতে চাইবে।তুমি সত্যি সাদা তুতুল।একদম সাদা সত্ত্বায় আঁকা।”
তুতুল শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকে।রিঝ সত্যি দারূন ভাবে কথা বলতে পারে।পৃথিবীতে এক এক মানুষের এক এক রূপ বিস্মিতকর হয়।রিঝের কথা বলার ধরন বিস্ময়ের মতো।রিঝ তুতুলের হাত ধরে।তুতুল বলে,
“ আর একটা প্রশ্ন আছে আমার???”
“ আরো??এতো প্রশ্ন করো কিভাবে??”
“ আমি পারি।”
“ আচ্ছা করো।”
“ আপনার Beautiful bird কই??”
“ তোমার মনে আছে ওর কথা??” রিঝের কন্ঠে অবাকতা।
“ আপনার সব কিছুই আমার মনে থাকে।একদম ছবির দৃশ্যের মতো।এটা তো বাস্তব দৃশ্য।বলেন না প্লিজ!”
“ এতো দিন আমার বিউটিফুল বার্ড আমার কাছে ছিলো না।তাই সেও ছিলো না।এখন আমার বিউটিফুল বার্ড আমার কাছে আছে সময় হলে সেও চলে আসবে।”
“ কি সব বলছেন বুঝতেই পারছি না।সুন্দর করে বলেন।”
“ আর ব্যাখা দিতে পারবো না চলো ঘড়ায় চড়ি।”

দুজনেই হাঁটে।এতক্ষণে তুতুলের খেয়াল হয় ওর জুত্তি রিঝের হাতে।তুতুল জুতা নিতে হাত বাড়ায়।রিঝ হাত সরিয়ে বলল,
“ নিজেকে নিয়ে হাঁটো।জুতা আমার কাছে থাক।তোমার চাইতে জুতার ভার কম।”

সাদা ঘোড়া।বড় অনেক।তুতুল আর কখনো ঘোড়ায় উঠে নি।সে জানে না কিভাবে উঠতে হয়।তবে ঘোড়ার মালিক বলেছে উঠতে সাহায্য করবে।তুতুল খুব এক্সাইটেড।ঘোড়ার পিঠে হাত বুলায় সে।প্রথমে ভয়ে হাত রাখতে চায় না।রিঝ হাত টেনে রাখে।দেখে,ঘোড়া কিছু করছে না।তাই সে হাত দিয়ে ঘোড়ার পিঠ আছড়ে দিচ্ছে।হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।ঘোড়াকে দেখতে রাজকীয় লাগছে।সব ঘোড়ার চাইতে এই ঘোড়া আলাদা।ঘোড়াকে প্রজাতির দিক থেকে সাধারন ভাবে তিন ভাগে ভাগ করা হয়:গতি এবং সহনশীলতা দিয়ে সজীব “উষ্ণ রক্ত”;”ঠান্ডা রক্ত”,যেমন ড্রাফট ঘোড়ারা ও কিছু হিসেবে টাট্টুগুলি,যারা একটু ধীর গতির, কিন্তু ভারী কাজের জন্য উপযুক্ত;এবং “মাঝারি মেজাজ”,যা প্রায়শই প্রথম দুটি প্রকারের মিশ্রন, সঙ্কর ঘোড়া।এই ঘোড়াটা তুতুলের মনে হচ্ছে শান্ত।ঠান্ডা রক্তের।গায়ের রংটাও সুন্দর সাদা।তার উপরে তুতুলের পছন্দের রং সাদা।সব মিলিয়ে তুতুল খুব উৎফুল্ল হয়ে আছে।রিঝ লোকটার সাথে কথা বলে।তারপর তুতুলের কাছে আসে।তুতুলকে বুট দেয়।পড়ে নিতে বলে।তুতুল পড়ে।তুতুলের পিছনে দাড়ায়।তুতুলের কোমড়ে হাত রাখে।তুতুল পিছনে তাকায়।রিঝ একটু উঁচু করে তুতুলকে তুলে তুতুল পা রাখে ঘোড়ার পেটের কাছে রাখা ছোট খোঁপে।তারপর উঠে বসে।আগে কখনো সে বসেনি।এটা প্রথম।রিঝ ও পিছনে উঠে।তুতুল ভারী অবাক।দুইজন কেনো??একজন করেই তো ঘুড়তে পারে।তুতুল বলল,
“ আপনি আর একটাতে বসেন।এটা আমার।”
“ তোমার বলতে কিছু নেই।যা হবে সব আমাদের।বাই দ্যা ওয়ে আমি ঘোড়া দৌড় করাবো।তুমি জীবনে আর করেছো??”
“ না।বাপরে আমার তো এখনই ভয় লাগছে।নামিয়ে দেন।”
“ ভয়ের কিছু নেই।তোমার হাত গুলো দেও।”

রিঝ তুতুলের হাত গুলো লাগামের লম্বা দোড়িতে রাখে।তারপর নিজের হাত রাখে তার উপরে।হুট করে তুতুলের মাথার কাঠি খুলে দেয়।তুতুল পিছনের দিকে তাকায়।চোখে প্রশ্ন।রিঝ মুচকি হেসে বলে,
“ খোলা চুলে বেশি ভালো লাগে তোমাকে।”

রিঝ ঘোড়া দৌড় শুরু করে।সবার মতো তুতুলও অবাক।এতো ভালো ঘোড়া দৌড়াতে পারা সহজ ব্যাপার না।রিঝ নিশ্চয়ই প্রশিক্ষিত।তুতুলের এখন প্রশ্ন করতে ইচ্ছে করছে না।সে এই সুন্দর পরিবেশে এই সুন্দর মুহূর্তকে উপভোগ করতে ব্যস্ত।ঝাকে ঝাকে বাতাস এসে উড়িয়ে দিচ্ছে তুতুলের খোলা চুল।রিঝের মুখে এসে মাঝে মাঝেই বাড়ি খাচ্ছে সেই চুল।একটা মিষ্টি জুইঁ ফুলের ঘ্রানে রিঝের সব ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।তীব্র সেই ঘ্রান।হিমশীতল ঝুরঝুরে বাসাত এসে নাড়িয়ে দিচ্ছে তুতুলের সমস্ত অস্তিত্বকে।যেনো সে ভাসছে।বাতাসে ভাসছে।যদি পাখা হতো তাহলে কি এভাবেই বাতাসের তীব্রতা অনুভব করতো??সে জানে না।কিন্তু এই মুহূর্তের এই অনুভুতি সে আগে কখনোই পায়নি।এটা সে জানে।অসাধারন মুগ্ধতায় তুতুল দিশাহারা।চোখ বুজে সে শ্বাস নেয়।রিঝ কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“ অনুভুতি কেমন??”

তুতুল পিছনের দিকে তাকায়।নিচু গলায় বলে,
“ শূন্য।”

রিঝ হাসে।তুতুলও ঠোঁট কামড়ে হাসে।তারপর অবার সামনে তাকায়।পাশের সমুদ্র গর্জন করে উঠে।পরিবেশ সুন্দরের থেকেও সুন্দর হয়।সব যেনো মনমুগ্ধকর।রিঝের শক্ত বুকে লেগে আছে তার সরু পিঠ।ঘোড়ার তালে দু’জনেই দুলছে।তুতুলের মনেই হচ্ছে না সে পড়ে যাবে।কারণ রিঝের দুইবাহু তাকে আবদ্ধ করে রেখেছে।পড়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।চারপাশের মানুষ মনোযোগ দিয়ে দেখছে।তুতুলের সব কিছুই সুন্দর লাগছে।এতো সুন্দর কেনো লাগছে সব!!তুতুল সত্যি পাগল হয়ে যাচ্ছে।বাতাসের রূপে!!
___________________
সন্ধ্যা ছয়টা ছুঁই ছুঁই।তীরের উপরে অনেক দোকান।লাইট জ্বলছে চারদিকে।তুতুল রিঝের পাশ ঘেঁষে প্রশ্ন করে,
“ আপনি কি Horse competitors???”
“ না তো।”
“ তাহলে এতো ভালো কিভাবে পারেন??”
“ আমি কিছুদিন শিখেছিলাম।আর যা একবার আয়ত্তে নিয়ে আসতে পারি তা আর ভুলি না।এটাও শিখেছিলাম।যদিও ভার্সিটি লাইফে।”
“ ওয়াও আপনি এখনো এতো ভালো পারেন।আপনি একটা ঘোড়া কিনে ফেলিয়েন।সাদা রঙের।তারপর আমিও শিখবো আপনার থেকে।তারপর আমিও কিনবো।ওয়াও।ভাবতেই খুশি খুশি লাগছে রিঝ ভাই আপনি এতো ভালো হর্স রেইসার।”

রিঝ চুল ঠিকরে নিয়ে হাসলো।এটা ওটা দেখতে শুরু করে সে।সবাই চলে আসে।কোথা থেকে যেনো রেয়ানাও এসে হাজির।সেই আগে আগে বলে,
“ You can run such a good horse. I didn’t know that! You are really great.
“ সব কিছু একজীবনে জানা তো যায় না রেয়ানা আপু।কিছু বিষয় না হয় আপনার অজানাই থাকুক।”

তুতুলের তরিৎ জবাব।মুখটা অন্যদিকে ঘুরিয়ে সে দোকানের জিনিস দেখতে শুরু করে।রেয়ানা প্রচন্ড বিরক্ত।মেয়েটা যখন তখন এমন করে কেনো??রেগে বলল,
“ আমি কি তোমাকে বলেছি??যাকে বলেছি সেই জবাব দিবে।রিঝ আমি তোমাকে বলেছি।আর তুমি মেয়ে পেলে না ওকে নিয়ে গেলে।আমিও তো ছিলাম।আমাকে বলতে আমিই তোমার সঙ্গী হতাম।কতো রোমান্টিক ছিলো।ওয়াও।”

রিঝ ভ্রু কুঁটি করে।মাথা কাত করে রেয়ানার দিকে তাকায়।তারপর হাতা ঠিক করতে করতে বলে,
“ সবাইকে সঙ্গী বানানো যায় না।যার সাথে যাকে যায় আর কি।যাই হোক তুমি এখানে একা??তোমার সঙ্গীরা কই??”
“ ওরা আসে নি।”
“ দুঃখ।” তুতুলের কন্ঠে হতাশা।
রেয়ানার অপমান বোধ হয়।তুতুলের দিকে একটা রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।তুতুল সাথে সাথে গালের সবকটি দাঁত বের করে হেঁসে দেয়।আসমা তুতুলের দিকে তাকিয়ে হাসে।আকাশ হাইপার হয়ে আছে।এটার আসলে তেমন কোনো কারন নেই।রিঝের কাছে এসে বলল,
“ সমস্যা কি ভাই??সব মাইয়াই তোর আগে পিছে কা??”

তুতুল দ্রুত সরে এসে আকাশের পাশে দাড়িয়ে বলল,
“ এই যে আমি আপনার পাশে।”
“ তুমি হলেই চলবো।”
“ তাহলে আমাকে আচার কিনে দেন।”

আকাশ আকাশ থেকে পড়ার মতো করে তাকায়।বলে,
“ আমি??”

তুতুল আশেপাশে তাকিয়ে বলে,
“ এখানে তো আপনিই আছেন।তাই তো বললাম।”
“ টাকা নিয়া আসি নাই।রিঝ ওরে কিন্না দে তো।শতো হোক আমার ছোট বোন।দে দে কিনে দে।আমি পরে টাকা দিয়ে দিমু।”

আকাশ এতটু কিপটা।টাকা পকেটে গাদা গাদা।কিন্তু খরচ করতে চায় না।এই কারনেই তার গার্লফ্রেন্ড নাই।তুতুলই ইচ্ছে করেই মজা করছে।আকাশও মজার ছলে নিয়েছে।তা না হলে সে কিনে দিতো।তুতুল মুখ বাকিয়ে বলল,
“ এবার বুঝেছি আপনি সিঙ্গেল কেনো।”

আকাশ দ্রুত বলল,
“ কেনো কেনো??”
“ কারন আপনি কিপটা।”

সবাই হাসে।আকাশ রাগি রাগি চোখে তাকায়।কেউ পাত্তা দেয় না।আকাশ সবাইকে থামাতে থামাতে বলল,
“ এতো হাসার কি হইলো??আরে ভাই কিপটামি করে আমি একদিন কোটিপতি হমু দেখে নিছ।রামিম তোর থেকেও বেশি টাকা আমার থাকবো দেখেনিছ।আর রিঝ তোমার থেকেও বেশি মেয়ে আমার পেছনে ঘুরবে।আগে একবার কোটিপতি হোইতে দেও।হুহ।”

রামিম এগিয়ে আসে।পিঠ চাপড়ে বলে,
“ তোর বাপ কি গরীব??না মানে আমরা তো জানতাম না।শুনছিলাম তোরা আমাদের চাইতেও বড় লোক।কাহিনী কি??”

আকাশ দুঃখি দুঃখি মুখ করে বলল,
“ দুঃখের কথা কি আর কইতাম।আসল কথা তো হইলো আমরা তোদের থেকেও গরীব।”

রিঝ তুতুলের জন্য অনেক গুলো মিষ্টি আঁচার নেয়।সবার জন্যও নেয়।তারপর এগিয়ে এসে সিরিয়েস একটা ভাব নিয়ে বলল,
“ যারা অনেক টাকার মালিক হয়েও নিজেদের গরীব বলে আল্লাহ একদিন সত্যি গরীব করে দেয়।এটা মিথ্যা কথা বলার শাস্তি।তুইও পাবি মনে হোইতাছে।”

আকাশ হতভম্ব হয়ে তাড়াতাড়ি বলে,
“ আরে না না আমার বাপের অনেক টাকা আছে।আসলে আমার নাই এই আর কি।আমারও আছে অতো বেশি না এই আর কি।”

রিঝ ভ্রুতে হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
“ সত্যি তো!”
“ হো বাবা সত্যি।”

সবাই হু হা করে হেসে উঠে।তুতুল ঘুরে ঘুরে সব দেখে।তেমন কিছু পছন্দ হয় না তার।আসমা একটা আয়না আর চিরুনির কম্ব সেট নিয়ে আসে।তুতুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
“ এটা তুমি নেও।অনেক সুন্দর।”

তুতুল খুলে দেখে।সত্যিই সুন্দর।সাদা সাদা ফুলের মাঝে লাল কাজ।সবুজ পাতা।তুতুল আয়না নিয়ে নিজেকে একবার দেখে।কি মনে করে বলে,
“ আমি আয়না কম দেখি।ভালো লাগে না।”

আসমা বিস্ময়ে হতবাক।বলে কি এই মেয়ে।দুনিয়ার সব মেয়েই মোটামটি আয়না দেখতে পছন্দ করে।আর এই মেয়ে বলে কিনা ভালো লাগে না??আসমার বিস্মিত মুখ দেখে তুতুল বলল,
“ আমি চুলও কম আঁচড়াই।কোঁকড়া চুল আঁচড়াতে ভালো লাগে না।আর এই চিরুনিটা ছোট।কষ্ট হবে অনেক।আপনি এটা নিয়ে নেন।”
“ আমার দেখা প্রথম মেয়ে তুমি যার আয়না দেখতে ভালো লাগে না।”
“ এমন অনেকই আছে।আপনি হয় তো জানেন না।”

তুতুল হাসলো।আসমা তাকিয়ে থাকলো।বলল,
“ তুমি খুব কিউট।একদম পুতুলের মতো।তোমার অনেক আয়না দেখা উচিঁত।”

তুতুল কথার উত্তরে শুধু হাসলো।যেনো আসমা অনেক মজার কৌতুক বলেছে।আসমা বলল,
“ হাসার কি হলো??আমি সত্যি বলছি।”
“ আপনার মন সুন্দর তাই আমাকে সুন্দর লাগছে।এটাই স্বাভাবিক।যার মন সুন্দর সে রূপ দিয়ে নয় মন দিয়ে বিবেচনা করে।তাই আপনার মনে হচ্ছে আমি পুতুলের মতো।আসলে তা নয়।আমি দেখতে একদম ভালো না।মেকাপ পারি না।কাজল দিতে পারি না।সাজতে জানি না।আরো কত কমতি আমার মাঝে।তাই আমি বলবো আমি সুন্দর না।তবে সৃষ্টিকর্তার সকল সৃষ্টি সেরা।আমিও সেরা।কিন্তু সুন্দর না।”

আসমা অবাক হলো।শেষের কথা গুলো তুতুল রেগে বলেছে।যেনো অনেক ক্ষোব।তুতুলকে তার মনে হয় একদম তুলার মতো।ফু দিলেই হওয়ায় মিলিয়ে যাবে।উড়ে বেড়াবে।তার একদমই তুতুলকে কঠিন মনে হয় না।কিন্তু এই কথা গুলো সে কঠিন হয়ে বলেছে।চেষ্টা করেছে বলার।

তুতুল খুব সুন্দর অনেক গুলো লকেট নিলো।সবার নামের প্রথম অক্ষর দিয়ে।আসমার” A” আকাশেরও” A” হিমেলের” H” মায়শার “ M” রামিমের” R” রিঝের” R” তুতুলের” T”।সাদা পাথর বসানো লকেটে।তুতুল লকেট গুলো সবাইকে এক এক করে দেয়।রিঝ একটু দূরে দাড়িয়ে কথা বলছিলো রেয়ানার সাথে।রেয়ানার কিছু গুরুত্বপূর্ন প্রশ্ন ছিলো চাকরীর ব্যাপারে।সেগুলোই বলছিলো।রেয়ানাকে রিঝের সামনে দেখেই তুতুলের ভালো সুন্দর ফুরফুরে মেজাজ পুরাই বিগড়ে গেছে।একবার ভাবলো লকেট ফেলে দিবে তখনই তারা সামনে এসে হাজির।রিঝ লকেটের ব্যাপারটা শুনে।নিজেরটা দাবি করে বলল,
“ আমারটা কই??দেও।”

রিঝ নিজে চেয়েছে অন্য সময় হলে দিতো না।কিন্তু রেয়ানাকে দেখাতে সে লকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,
“ নেন এটা আপনার।” R”

রেয়ানা লাফিয়ে উঠে বলল,
“ আমার নামেও R আছে।ওয়াও আমাদের কত মিল।সেম সেম অক্ষর।আমিও একটা নিবো।দাড়াও।নামের মিলটা দারুন।”

রেয়ানা আর একটা R কিনি নিয়ে আসে।তুতুল ফস করে উঠে।রিঝের হাত থেকে লকেট টেনে নিয়ে নিজের হাতেরটা দিয়ে বলে,
“ আপনি এটা পড়বেন।”

রিঝ লকেট দেখে।লেখা ” T” ।তুতুল রিঝের R অক্ষর নিজের গলায় ঝুলাতে নেয়।রিঝ বলল,
“ আমার নামের কোথাও T নেই।”
“ তো কি হয়েছে।না থাকলে পড়তে পারবেন না এমন কি কোনো হাদিসে লেখা আছে??”
“ সেটা না।তুমি তো সবাইকে নামের প্রথম লেটার্স দিয়েছো।কিন্তু আমাকে আলাদা কেনো??”
“ আমার মনে হয়েছে আপনাকে এই অক্ষরে বেশি সুন্দর লাগবে।তাই দিয়েছি।”

রিঝ কিছু বুঝলো না।তুতুল নিজের গলায় লকেট লাগাতে ব্যস্ত।কিন্তু লাগাতে পারছে না।রিঝ এগিয়ে যায়।বলে,
“ দেও আমি লাগিয়ে দি।”

তুতুল নাঁকচ করে বলল,
“ না লাগবে না।আমি নিজেই লাগিয়ে নিবো।”

রেয়ানা এগিয়ে এসে উতলা হয়ে বলল,
“ আমি লাগাতে পারছি না।আমাকে একটু লাগিয়ে দেও।”

রিঝ কিছু বলবে তার আগেই তুতুল বলল,
“ আমিকে লাগিয় দেন।”

রিঝ বিস্মেয়ে হতবম্ভ চোখে তাকিয়ে থাকে কয়েক সেকেন্ড।তুতুলের সাথে রেয়ানার কি এমন হলো যে তুতুল রেয়ানাকে এতো অপছন্দ করছে??তুতুলের তাড়া,
“ তাড়াতাড়ি করেন না।”

রিঝ তুতুলের এলোমেলো চুল কাঁধ থেকে সরিয়ে দেয়।যত্ন করে লকেট পড়িয়ে দেয়।অদ্ভুত ভাবে সে আবিষ্কার করে তুতুলের কাঁধের একটু নিচে একটা কালো তিল আছে।ফর্সা কাঁধের কালো তিল রিঝকে আরো বিস্মিত করে তুলে।বুকে একটা ভয়ংকর তোলপাড় শুরু হয়।দৃষ্টি আটকে যাচ্ছে।গলার পাশের নীলছে রগ গুলো নিঃশ্বাসের সাথে উঠানামা করছে।যেনো চুম্বকিয় শক্তি।তুতুলের সবকিছুই তাকে প্রচন্ড ভাবে টানে।চুলগুলো ঠিক করে রিঝ দ্রুত সরে যায়।আর দাড়িয়ে থাকে না।তুতুল রেয়ানার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দেয়।রেয়ানাও রাগে ফুলে।এর প্রতিশোধ সে নিবে।রাগে লকেট শক্ত করে ধরে।রিঝ আসমাকে বলে,
“ ওরে লকেটটা পড়াই দে তো।”

আসমা এগিয়ে আসে।রেয়ানা বলতে চায় লাগবে না।কিন্তু রিঝ বলে দিয়েছে।তাই সে পরে নেয়।রিঝ নিজের গলায় তুতুলের “ T” ঝুলিয়ে নেয়।তুতুল দাঁতে দাঁত চেপে রিঝকে শাসিয়ে বলে,
“ কয়টা প্রেম করা লাগে বলবেন??”

রিঝ অবাক হয়ে বলল,
“ আবার কোথায় দেখলে প্রেম করতে??”
“ ওই যে চিপকালিটার সাথে।”

তুতুল রেয়ানাকে দেখায়।রিঝ কঠিন গলায় বলে,
“ তোমাকে আগেও বলেছি এখনো বলেছি মানুষের এমন বাজে নাম দিবে না।”

তুতুল রাগে গিজগিজ করে উঠে বলল,
“ দিবো দিবো একশতবার দিবো।”
“ আরে রাগছো কেনো??”
“ আমার ইচ্ছে।”

তুতুল পা দিয়ে রিঝের পায়ে চাপ দেয়।রিঝ হা।এসব কি হচ্ছে!!তুতুল মুখ কঠিন করে চলে যায়।একটু যেয়ে আবার এসে বলল,
“ এতো প্রেম করিয়েন না।তাহলে অকালে মারা যাবেন।”
“ তোমাকে কে বলেছে প্রেম করলে মানুষ মারা যায়??”
“ এই যে আমি নিজে বলেছি।আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা??” তুতুল চোখ বড় করে তাকায়।

রিঝ ভয় পাওয়ার ভঙ্গীতে বলল,
“ হুম হুম হচ্ছে।
“ এই আপনার না প্রেমিকা আছে??কয়টা লাগে হ্যা??কয়টা??এসব ছেড়ে দেন।বুঝলেন।আমরা তো আপনাকে ভালো,ভোলা, ভালা ছেলে ভাবতাম।আপনি তো একটা বেড বয়।”

তুতুল যে দিক থেকে এসেছে সেদিকে চলে যায়।রিঝ নিজে নিজেই কিছুক্ষণ হাসলো।ঘুরে ঘুরে তুতুল অনেক কিছু কিনেছে।এখন সে ঝিনুকের দুল দেখছে।রিঝ পিছন থেকে এসে দাড়ায়।তুতুল ভয় পায়।পিছনে তাকায়।রিঝকে দেখে বুকে ফু দেয়।বিরক্তি নিয়ে বলে,
“ এমন ভুতের মতো পিছন থেকে আসেন কেনো??ভয় পাইছি তো।”

মৃদূ হেসে রিঝ বলল,
“ তুমি এতো ভিতু কেনো??”
“ আমি মোটেও ভিতু না।আপনি কেনো এসেছেন সেটা বলে।সবাই তো ওই দিকে।”
“ একটা জিনিস দেওয়ার ছিলো।”

রিঝ পিছন থেকে একটা বক্স বের করে।তুতুলের হাতটা নিয়ে হাতে দেয়।তুতুল অভিমানের সুর তুলে বলল,
“ সব কিছু শোধ করতে হয় বুঝি??”

রিঝ মাথা কাত করে বলল,
“ আমি মোটেও শোধ করছি না।এটা গিফট তোমার জন্য।তোমার দেওয়া কিছুই আমি শোধ করতে পারি না।করতে চাইও না।”

তুতুল বক্স খুলে।আয়না আর চিরুনি দেখে বিরক্ত চোখে তাকিয়ে বলল,
“ অন্য কিছু দেওয়া কি যায় না??এটা কোনো জিনিস হলো??”

রিঝ আয়নাটা হাতে নিলো।তুতুলকে ঘুরিয়ে মুখের সামনে ধরে বলল,
“ এটা তোমার জন্য।”

তুতুল আয়নাটা দেখে।অসাধারন আয়না।চারপাশেও লতার সবুজ কাজ।তুতুল মুগ্ধ কন্ঠে বলল,
“ অসাধার সুন্দর!অপূর্ব।”

তুতুল নিজের হাতে নেয়।রিঝ ছোট চিরুনিটা নিয়ে তুতুলের দু’পাশের চুল হালকা আঁচড়ে দেয়।তুতুল আয়নায় তাকিয়ে দেখে।রিঝকে যত্নবান লাগছে।যত্ন করে নিখুঁত ভাবে চুল ঠিক করছে সে।তুতুলের কাঁধের দিকে মাথাটা নেয়।একটি আয়নায় দু’জনের মুখই দেখা যাচ্ছে।রিঝ আয়নার দিকে তাকিয়ে বলল,
“ আমি চাই যে সৌন্দর্য আমি দেখেছি সেই সৌন্দর্য তোমার চোখেও পড়ুক।”

তুতুল নিজের দিকে তাকায়।রিঝ আবার বলে,
“ আয়না শুধু তোমাকে তোমার উপরের রূপ বা সৌন্দর্য দেখাবে না।তোমার ভিতরের অস্তিত্বকেও সে ফুটিয়ে তুলবে।যখন আয়নার সামনে দাড়াবে তুমি সম্পূর্ন নিজেকে দেখতে পাবে।নিজেকে দেখাই উত্তম।নিজের দোষ গুন নিজে চিনা উচিঁত।অন্য কেউ নয়।নিজেকে ভালোবাসো।দেখবে জগৎ তোমাকে ভালোবাসতে চাইবে।”

তুতুল মুগ্ধ চোখে রিঝের দিকে তাকায় আয়নার মাঝে।রিঝের চোখের দিকে চোখ রাখে।দুটি চোখ এক হয়।আশেপাশে থেকে ছুটে সমুদ্রের তুমুল হওয়ার দাপুটে ঝাপটানিতে তুতুলের কোঁকড়া কয়েক মুঠো চুল রিঝের চোখ,মুখ,ঠোঁট,ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে।রিঝের হাত পিছনে।শরীর না ছুঁয়েই যেনো শিহরন তুলছে তুতুলের অঙ্গে অঙ্গে।এ যেনো অন্য এক ভালোলাগয় ভাসছে সে।যে ভালো লাগা আগে কখনো,কোনোভাবে তাকে স্পর্শ করেনি।মানুষটার কন্ঠে জাদু আছে।যে জাদু সবাইকে তার প্রতি টানে।তুতুলও খুব টান অনুভব করছে।সে প্রেমে পড়ে যাচ্ছে না তো??তুতুল দ্রুত মাথা ঝাড়ে।কেউ যেনো কানে বাজাচ্ছে,” সীমাহীন প্রেমের বাঁধনে খুব দ্রুত আটকা পড়বে তুমি তুতুল।দেখে নিও।”

তুতুল ছিটকে দূরে সরে যায়।আকাশের দিকে তাকিয়ে নিজে নিজে বলে,
“ একদম আজে বাজে কথা বলবা না।আমি এমন কাজ জীবনেও করবো না।দূরে যাও।”

তুতুল মাছি তাড়ানোর মতো করে মুখের উপরে হাত নাড়ে।হঠাৎ খেয়াল হয় সে নিজে নিজের সাথে কথা বলছে।তুতুল চমকায়।এসব কি হচ্ছে ভেবে সে হতাশ।মাথায় হাত দিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে সে নিজেই বলল,
“ আমি সত্যি পাগল হয়ে গেছি।”

রিঝ কিছুই বুঝলো না।তুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল,
“ তুমি ঠিক আছো??”

তুতুল নিজেকে ঠিক করে বলল,
“ হুম আছি।”
“ তাহলে নিজে নিজে কথা বলছো কেনো??”

তুতুল ভুলে যাওয়া ভাব করে বলল,
“ কই নিজে নিজে কথা বলেছি।আপনি কানে বেশি শুনেন।এখন আমার লকেট দেন।”

রিঝ ভারী অবাক হওয়ার ভান করে বলল,
“ মানে কি??”
“ মানে সহজ।আমার লকেট আমাকে দেন।এতক্ষণ তো অনেক লাফাচ্ছিলেন আপনার নামের অক্ষর না দেখে।এখন নিজেরটা নিয়ে আমারটা দেন।”

রিঝ লকেট টি-শার্টের ভিতরে ঢুকিয়ে বাঁকা ঠোঁটে হেসে বলল,
“ এটা যেহেতু আমার গলায় তাই এটা এখন থেকে আমার।অক্ষরটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে।এটা আমার গলায়ই বেশি মানাবে।তোমার গলায় R টা সুন্দর লাগছে অনেক।”

রামিমের ডাক পরে।রিঝ সেদিকে চলে যায়।তুতুল যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।তারপর নিজের হাতের আয়নায় নিজেকে দেখে।বিড়বিড় করে বলে,
“ নিজেকে ভালোবাসা উঁচিত।”
কৃষ্ণচূড়ার রং লাল-১৯.🎈
@হাফসা আলম
_____________________
ভোর তিন টা বাজার ১৫মিনিট বাকি তখন।ঠান্ডায় হিমহিম বাতাস হচ্ছে।শীতের এই সকালে আসমা,রামিম,আকাশ,হিমেল,মায়শা,রিঝ তুতুলের জন্য অপেক্ষা করছে।হোটেলের নিচ তলার রিসেপশনে বসে আছে তারা।আসমা শীতকে খুবই অপছন্দ করে।কারন তার ঠান্ডা লেগে যায়।আজকে সকাল থেকে কাশি দিয়েই চলেছে সে।কাশতে কাশতে তার গলা বসে গেছে।ভাঙ্গা ভাঙ্গা গলা তার।গায়ে পরেছে নীল জ্যাকেট।সাথে উপরে নিয়েছে নীল শাল।তাতেও যেনো তার শীত কমছে না।মাথায় কানটুপি পরেছে।হাতে হাত মুজা।শীতে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে সোফার এক কোনে।রামিম কতক্ষণ পর পর টিসু এগিয়ে দিতে দিতে বলে,
“ আমার জ্যাকেট টা নিবি??”

আসমা কটমট করে তাকালো।কথা বলতে পারছে না সে।বাজে শব্দ হয়।সবাই তখন হাসে।রিঝ টাইম দেখে।তুতুলের এখনো আসার নাম নেই।আরো কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে রিঝ নিজেই উঠে গেলো।রিসেপশন থেকে চাবি নিয়ে তুতুলের রুমের দিকে যায় সে।তখনই রেহানা নিজের ব্যাগ ট্যাগ নিয়া হাজির হয়।রিঝকে দেখে এক গাল হেসে বলে উঠে,
“ আরে তুমি এতো কষ্ট করে আমাকে নিতে এসেছো কেনো??আমি তো সেই চার টা থেকে তৈরি হচ্ছি।ঠিক টাইমেই নিচে চলে আসতাম।আচ্ছা যখন এসেছো চলো যাই।আর কষ্ট করে আমার ট্রলিটা একটু নিচে নিয়ে যেতে হেল্প করবে??আসলে অনেক ভারী।”

বলেই সে ট্রলি টানার চেষ্টা করে।রিঝের ভ্রু দুটি বেঁকে গেলো।কিছু সময় রেয়ানার টানা টানির নাটক দেখলো।রেয়ানার ভাব এমন যেনো টানাই যাচ্ছে না।রিঝ ট্রলিটা হাতে নেয়।রেয়ানা খুশি।নাটক কাজে লাগছে।রিঝ ট্রলি একটু ঘুরিয়ে আবার ওর হাতে ধরিয়ে দেয়।বলে,
“ এবার হালকা হয়ে গেছে।তুমি নিচে কেনো বান্দরবানেও টেনে নিয়ে যেতে পারবে আশা করি।আর আমি তোমার জন্য আসিনি।নিজের কাজে এসেছি।তুমি নিচে চলে যাও।”

বলেই সে সামনে চলে যায়।রেয়ানা তাকিয়ে থাকে।তুতুলের রুমে ঢুকে রিঝ অবাক।জামা কাপড় গুলোও গুঁছিয়ে রাখে নি সে।আশ্চর্য।সোফার উপরে জামা।নিচে জামা।বিছানায় টি-শার্ট,জ্যাকেট,জুতাও পরে আছে।রিঝের মাথা গরম হয়।তুতুলের কাছে যায়।দেখে,উপুত হয়ে ঘুমাচ্ছে সে।গলার লকেট টা একদম মুখের উপরে।রিঝ তুতুলকে কয়েকবার ডাকে।তুতুল তখন ঘুমের অতীব গভীরে তলিয়ে আছে।এখন তার জন্য গভীর রাত।ঘুম থেকে উঠার টাইম হয় নি তার।হবে ঠিক দশটা কি বারোটা বাজে।যদিও ইদানিং তাকে প্রায়ই তাড়াতাড়ি উঠতে হয়।কিন্তু আজ সে ঘুমাবে।রিঝ আবার ডাকে।তুতুল প্রথমে শুনে না।জোড়ে ডাকার পরে ঘুম ছুটে যায়।কিন্তু উঠে না।রিঝ যতবার ডাকে তুতুল একটু ঘুরে এদিক সেদিক হয়ে ঘুমায়।আবার চাদর টেনে মুখের উপরে দেয়।আয়েশ করে ঘুমের ভাব নেয়।রিঝ জামা গুলো খুঁজে খুঁজে ব্যাগ গোছাতে শুরু করে।তুতুল চাদরের ভিতর থেকে মাথাটা হালকা বের করে এক চোখ বন্ধ রেখে আর এক চোখ দিয়ে তাকিয়ে দেখে।রিঝ সুন্দর করে সব ভাঁজ করছে।তুতুলের দিকে ঘুরতেই সে তরিগরি করে চাদরের ভিতরে ডুব দেয়।রিঝ বুঝে।জোড়ে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে তুতুলের কাছে যায়।চাদর সহ তুতুলকে পাঁজাকোলা করে নেয়।তুতুল চেঁচিয়ে উঠে বলে,
“ আরে আরে করেন কি??আমি পরে যাবো তো!!আর আপনি এতো সকালে আমার রুমে কি করছেন??নিচে রাখেন।ভালো হবে না কিন্তু।নিচে নামান।”

রিঝ পাত্তা দেয় না।সোজা হাঁটে।তুতুল নড়াচড়া করে অনেক।নিচে নামতে চায়।রিঝ দুই হাতের বাঁধন শক্ত করে তুতুলের মুখের উপরে ঝুঁকে তাকায়।বলে,
“ এমন তিড়িংবিড়িং করছো কেনো??ফেলে দিবো??”

রিঝ তুতুলকে সত্যিই ছেড়ে দেওয়ার ভঙ্গী করে।তুতুল ভয়ে চোখমুখ কুঁচকে রিঝের জ্যাকেট খাঁমছে ধরে।রিঝ মুখের উপরে ফু দিয়ে চুল সরিয়ে দেয়।শীতের মাঝে গরম বাতাসে তুতুল কাঁপে।মিটমিট করে চোখ খুলে তাকায়।রিঝের দিকে তাকিয়ে থাকে।ছুঁয়ে দিলে কেমন হয়??তুতুল সত্যি রিঝের দুই গালে হাত রাখে।ঠান্ডা কনকনে হাত।রিঝের গাল গরম।ঠান্ডা ছোঁয়ায় তার শরীর কখনো এভাবে কাঁপতো না।তুতুলের স্পর্শ বলেই এমন কম্পনের সৃষ্টি।রিঝ চমকে তাকিয়ে থাকে।তুতুল নিজের কাজে হতবাক।এতো বড় ভুল ঢাকতে সে রিঝের গাল টেনে দেয়।হেসে উঠে বলে,
“ এতো শীতে আমাকে উঠানোর জন্য আপনাও ঠান্ডার স্পর্শ পাওয়া উঁচিত।কেমন লাগে??”

কথাটা বলেই তুতুল শয়তানি হাসি দেয়।রিঝ মুচকি হাসি ঠোঁটে ঝুলিয়ে বলল,
“ কিছু স্পর্শ অমূল্য।অব্যক্ত,ব্যাখা করা যায় না।এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হও।চাইলে আবার একবার সমুদ্র থেকে ঘুরে আসতে পারো।আমরা কিছুক্ষণের মধ্যই এই শহর ছাড়বো।মেঘেদের শহরে যাত্রা করবো।”

তুতুলকে ওয়াসরুমে দাঁড় করিয়ে দেয় রিঝ।তুতুল চরম বিরক্ত।তার পাহাড় ভালো লাগে না আগেই বলেছে।তবুও এখন যেতে হবে।ভাবতেই ফালতু লাগছে তার কাছে।রিঝকে একবার বলেছেও সে এখন বাসায় চলে যাবে।এখানে থাকবে না।পাহারটাহার তার ভালো লাগে না।একবার বান্দরবানে গিয়ে তার তেমন ভালো লাগে নি।তাই আর যেতে চায় না।কিন্তু রিঝ চোখ লাল করে তাকাতেই ভয় লেগেছে তার।তুতুল ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়।তবুও ঘুমে ঝুরে।এতো সকালে কেনো যেতে হবে সে জানে না।আর গাড়ি কই পাবে??তুতুল প্রশ্ন ভর্তি মাথা নিয়ে নিজের রুমে আসে।রিঝ ব্যাগ হাতে নিয়ে রুমের বাহিরে দাড়িয়ে আছে।তুতুলকে দেখেই বলল,
“ চলো।”

তুতুল মুখটা কালো করে বলল,
“ আমি এখানেই থাকি??”

কথার কোনো জবাব না দিয়ে রিঝ সুরসুর করে হেঁটে চলে যায়।এক বুক কষ্ট নিয়ে তুতুল ঢুলুঢুলু হয়ে নিচে নামে।রিঝের হাতে তুতুলের ব্যাগ দেখে রেয়ানা ক্ষেপা চোখে তাকায়।সবাই মিলে সমুদ্রের পারে যেতে চায়।তুতুল রাগের চোটে যায় না।গাড়ি হোটেলের সামনে দেখেই তুতুল বলল,
“ এই গাড়িতে করে যাবো??”

রিঝ তুতুলের ব্যাগ রেখে নিজেক কাধের ব্যাগ কাধে নিলো।তারপর তুতুলের কাছে এসে বলল,
“ বাসে উঠতে ইচ্ছে করছে না।আর এতো ভোরে বাস পাওয়াও যাবে না।গাড়িতে উঠে বসো।”

রিঝ ড্রাইভিং সিটে বসে।এটা দেখে সবাই আতঁকে উঠে।রামিম চেঁচিয়ে বলল,
“ মারতে চাইলে এমনই ক।আমি এই সমুদ্রে ডুইবা মরমু।তবুও এক্সিডেন্ট করতে চাই না দোস্ত।”

রিঝ হাসলো।সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলল,
“ আমি অভিজ্ঞ।অনেক বার ড্রাইভ করে বান্দরবানে যাওয়া হয়েছে।আর আমি ওই দিকের ড্রাইভার থেকেই শিখেছি।ভয় পাওয়া লাগবো না।পিছনে বস।”

রিঝের কথা বিশ্বাস হলো না।কারণ সবাই জানে বান্দরবানের রাস্তা সাধারণ না।তাই অনেক বেশি এক্সিডেন্ট হয়।রাস্তার সামনে কি আছে তা দেখা যায় না।একপাশে থাকে পাহাড়।অন্যপাশে বিশাল গর্ত।যে গর্তে পড়লে হাড্ডিও খুঁজে পাওয়া যাবে না।রামিম সাহস করে পছনে বসলেও আকাশ বসে না।সে ভয়ে আছে।গাড়ি থেকে দু’হাত দূরে সে।তুতুলের ভয়টয় নেই।সে তো জানে রাতে গাড়িতে উঠলে সকালে বান্দরানের বাসস্ট্যান্ড দেখে।যে বার সে এসেছিলো সেবার এমনটাই হয়েছে।এক ঘুমে ঢাকা থেকে বান্দরবান।তাই তার কাছে এটা কোনো বড় ব্যাপার না।তাই সে পিছনে বসতে চায়।রিঝ ধমক দিয়ে বলল,
“ তোমাকে আমি বসতে বলেছি এখনো??”

তুতুল ভারী অবাক হলো।পরক্ষণেই ভাবলো তাকে মনে হয় নিবে না।তাই বলল,
“ আচ্ছা আমি তাহলে আমার ব্যাগ নামিয়ে নি।আকাশ ভাইয়া ব্যাগটা বের করে দিন তো প্লিজ।”

আকাশ সত্যি সত্যি নামায়।রিঝ কঠিন গলায় বলল,
“ আমি কি তোরে একবারো কইছি ব্যাগ নামাইতে??”

আকাশ আবুল বনে গেলো।ভারী ইনোসেন্ট মুখ করে বলল,
“ আমি আবার কি করলাম??তুতুল যা কইলো তাই করলাম।আর আমারও মরার ইচ্ছা নাই।তাই নিজেরটাও নামাই নিতাছি।”
“ আকাশ তুই বেশি কথা বলছ।যা তুতুলের ব্যাগ এবং নিজের দুইটাই উপরে তুলে রাখ।আর একদম পিছনের সিটে বসবি।তুই হিমেল,আর আসমা পিছনে বস।”

আসমা শীতে কাঁপতে কাঁপতে বলল,
“ আমি পিছনে বইতে পারি না।মাথা ঘুরায়।”
“ আচ্ছা তাহলে মায়শা বা রেয়ানা যে চায় বসতে পারে।”

রেয়ানা ভাবলো তুতুলের পাশে বসার থেকে পিছনে বসা ভালো।তাই আগে আগে বলল,
“ আমি পছনে বসবো।”

সামনের সাইডের দরজা খুলতে খুলতে রিঝ বলল,
“ তাহলে আর তো সমস্যা নেই।বসো।রামিম আসমা আর মায়শা মাঝের সিটে বসবে ।”

আকাশ মুখ কালো করে বলল,
“ ভাই আমি এখনো একটাও প্রেম করতে পারলাম না।আর তুই আমারে মারতে চাস ক্যান??”

“ কারন তোর কপালে প্রেম নাই।এবার যা বস।”

সবাই বসলো।কিন্তু তুতুল বসলো না।সে বসবে কোথায়?সে জানেও না।যদিও গাড়িতে চেপে বসলে ওকেও বসানো যাবে।রিঝ গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে বলল,
“ তুমি দাড়িয়ে আছো কেনো??”
“ আপনি বলছেন তাই।”
“ আমি দাড়িয়ে থাকতে বলিনি।পাশের সিটে বসো।”

সবাই বিস্মিত হয়ে তাকালো।তুতুল নিজেও অবাক।ভাবে, রিঝ মনে হয় এক্সিডেন্ট করে নিজে পাশ থেকে বেড়িয়ে যাবে আর তাকে মেরে দিবে।তুতুল বিড়বিড় করে আল্লাহকে ডাকে।রামিম মাথা সামনে নিয়ে এসে বলল,
“ তুই মর ভালো কথা বেঁচারি তুলা পাখিরে মারতে চাস কেনো??”

“ কারণ ওর জন্মই হয়েছে আমার সাথে থাকার জন্য।এখন আমি যদি মরি ওকেও সঙ্গে নিবো।জন্মের মিল রাখতে পারিনি তাতে কি আমি মৃত্যুতে মিল রাখতে চাই।” রিঝ তুতুলের দিকে তাকিয়ে বলল।তুতুল শান্ত চোখে তাকালো।কথার মাঝে ভয়ঙ্কর গভীরতা আছে।রিঝ ধমকে উঠে।তুতুল তাড়াতাড়ি উঠে বসে।সিটবেল্ট বাঁধে না।রিঝ বলল,
“ বেল্ট না বাঁধার কোনো কারণ আছে তোমার কাছে??”

তুতুল মুখ বাঁকিয়ে পা গুলো গোল করে বসে।আয়েশি ভঙ্গীতে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বুঝে।রিঝ তর্ক করতে চায় না।তাই নিজেই এগিয়ে যায়।সিট বেল্ট বেঁধে দিতে।তুতুল তরিৎ করে চোখ খুলে তাকায়।রিঝ তখন ব্যস্ত।তুতুলের কোমড়ের একটা অংশ গাড়ির দরজার সাথে লেগে আছে।রিঝ কাছে টানতে কোমড় পেঁচিয়ে ধরে।স্বর্বাঙ্গ ঝন ঝন করে কেঁপে উঠে তুতুলের।কম্পন অনুভব করে রিঝ।কোমড় একটু টেনে বেল্ট বেঁধে দেয়।তুতুল তখন বিস্মিত চোখে চোখ বড় করে তাকিয়ে থাকে।রিঝ চমৎকার একটা হাসি দিয়ে যাত্রা শুরু করে।তুতুলের অবুঝ মন নতুন পৃথিবীর আভাস পাচ্ছে।কিছু একটা অদ্ভুত হচ্ছে।ভারী অদ্ভুত!!এই হাসির মতোই অদ্ভুত!!
_______________________
কক্সবাজার থেকে বান্দরবানের দূরত্ব ৯১.৭ কিলোমিটার।২ ঘন্টা ৪০ মিনিটের রাস্তা।রিঝের গাড়ির গতি একদম কম।আস্তে আস্তে সে রাস্তা পারি দিচ্ছে।এমন নয় যে সে ভালো গাড়ি চালক নয়।খুবই ভালো এবং প্রশিক্ষিত সে।সবার ভয়ের জন্যই সে গাড়ি নিজের নয় অন্যের গতিতে চালাচ্ছে।তুতুল সিটে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে।মাঝে মাঝে আড়চোখে তাকায় রিঝ।রামিমের অবস্থা করুন।দুই মেয়েরই জানালা চাই।তাই দু’জন দুই পাশে বসেছে।মাঝে বসেছে সে।আসমা কখনো তার কাঁধে মাথা রাখছে তো কখনো মায়শা।নিজেকে পাগল মনে হচ্ছে তার।এমন সুযোগই তো সব ছেলেরা চায়।রামিম পেয়েও পাত্তা দিচ্ছে না।ব্যাপারটায় আকাশের প্রচন্ড বিরক্তি লাগছে।সে তো বসেছে এক আবুলের সাথে।সেই কখন থেকে আয়না নিয়ে বসে আছে।নিজের মুখ নিজে দেখছে।আকাশের ভারস্য মতে আটাময়দা মাখছে।আসমার ঝুলে পড়া চুলগুলো রামিমের দারুন লাগছে।কিন্তু মায়শার বেলায় ফিলিংস শূন্য শূন্য লাগছে।ভাবছে কি দরকার ছিলো এমন চিপকুর মতো লেগে থাকা??রামিম যত্নের সাথে আসমার পাশের সেই চুল সে নিজের হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়।ঠান্ডা হাতের ছোঁয়া পেতেই আসমা হিসপিস করে উঠে।হালকা নাড়াচাড়া করে রামিমকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে পরে।রামিম তখন মিটমিটিয়ে হেসে উঠে।শব্দ বিহিন সে হাসিতে অদ্ভুত আনন্দ।

রিঝের পাশের জানালা খোলা।ঠান্ডা হওয়া শোঁ শোঁ করে ভিতরে প্রবেশ করছে।ঠান্ডায় জমে গেছে তুতুল।গালের দু’পাশ লাল লাল আভার আকার ধারণ করছে।সাথে নাকটাও।গুটিশুটি মেরে তুতুল নিজের জ্যাকেট পেঁচিয়ে শুয়ে আছে।রিঝ নিজের গাড়িটা একটু থামায়।সবাই ঘুমে মরা।ভোরে ঘুম বেশি আসে।আকাশ হিমেলের গায়ের উপরে পড়ে শুয়ে আছে।রেয়ানা একটু দূরে নিজের মতো ঘুমায়।গাড়ি থামাতেই টের পায় রামিম।রিঝ নিজের জ্যাকেট তুতুলের গায়ে জড়িয়ে দেয়।তার শীত কম।এই শীতের হাওয়াও সে তেমন ফিল করতে পারছে না।তাই তার এটা প্রয়োজনও কম।বাতাসের তীব্র একটা বেগে তুতুলের ঘুম ছুটে যায়।নিভুনিভু চোখে প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্য তার মন কাড়ে।দু’পাশ ধরে সবুজের সমারহ।কুয়াশার চাদরে ডাকা দু’পাশ।তুতুলের মনে হচ্ছে সাদা ধৌয়া উড়ছে।মৃদূ ভাবে গাড়ি চলছে।তুতুল মাথা উঠিয়ে চারপাশ দেখে।জানালাটা রিঝই খুলেছে।তুতুলের ঘুম তাড়াতে।তুতুল তাকাতেই রিঝ বলল,
“ ঠান্ডা কি বেশি লাগছে??”

তুতুল হাই দিতে দিতে বলল,
“ না।ভালো লাগছে।তবে ঘুমটা উড়ে গেছে।”
“ যাওয়াই ভালো।যে কারনে এতো সকালে ড্রাইভ সেটা মিস হওয়া উঁচিত না।তবে তোমার ঘুম যে এতো তাড়াতাড়ি উড়ে যাবে ভাবী নি।ঘুমটা গভীর।”

তুতুল হেসে দিলো।৪.৫০ বাজে প্রায়।শীতের সকালের সূর্যের আলো তখনও উঠেনি।তুতুল জানালার বাহিরে চোখ রাখে।কি সুন্দর সব!!একপাশে পাহাড়।আর একপাশে গাছ।সারিসারি গাছের উপরে উড়ে বেড়াচ্ছে কুয়াশা।তুতুল কৌতুহল নিয়ে বলল,
“ ধৌয়া উড়ছে কেনো??”

রিঝ উচ্চ করে হাসলো।বলল,
“ ধৌয়ানা।কুয়াশা এগুলো।”
“ ওহ্।আমি তো ভুলেই গেছি এখন শীত কাল।”

রিঝের হাতে কফির মগ।এক্সিডেন্টের অন্যতম কারন ঘুম।চোখের পাতা এক হলেই গাড়ি গর্তে।এই রিক্স নিতে চায় না রিঝ।যদিও সে নিজের ঘুম নিয়ন্ত্রন করতে পারে।তবুও এসব জায়গায় রিক্স নেওয়া উঁচিত না।তুতুলের দিকে একটা মগ এগিয়ে দিয়ে রিঝ বলল,
“ কফি খাওয়া যাক।”

তুতুল মগ হাতে নেয়।ভারী অবাক হওয়া গলায় বলে,
“ আপনি এখানে কফি,মগ,গরম পানি এগুলো কোথায় পেয়েছেন??”
“ এগুলো আমার সঙ্গেই থাকে।তুমি খেতে পারো।বিষ দিয়ে মারার ইচ্ছে নেই।”

তুতুল হালকা দুলে হাসে।কফির মগে চুমুক দিতেই মনটা আরো ফুরফুরে হয়ে উঠে।তুতুল পাহাড় দেখছে।দূরের পাহাড় দাঁড়িয়ে আছে।একটা পাহাড় নয়।অনেক অনেক পাহাড় একসাথে হয়ে আছে।একের সাথে অপর লেগে।দেখতে কি যে অদ্ভুত,চমৎকার,সুন্দর লাগছে সেটা তুতুল বলে বুঝাতে পারবে না।ছোট ছোট পাহাড়ের উপরে সবুজ প্রলেপ।তুতুল বিস্মিত হয়ে বলল,
“ পাহাড় এতো ছোট কেনো??”

রিঝ পাশে একবার তাকালো।তারপর তুতুলের দিকে তাকিয়ে আবার সামনে তাকালো।বলল,
“ একটা মজার কথা বলি,পাহাড়,কাশবন আর নারী দূর থেকে লাগে ভারী।এখানে ভারী মানে অনেক সুন্দর বুঝিয়েছে।পাহাড় দূর থেকে সুন্দর লাগে অনেকেই বলে আমি অবশ্য এটা বলি না।তুমি যে পাহাড়কে ছোট বলছো এগুলো তোমার ধারনার বাহিরে বড়।দূর থেকে ছোট মনে হচ্ছে।কাছে গেলে আর মনে হবে না।আর আমরা অনেক উপরে আছি।তুমি পাহাড় দেখনি??”
“ আরে দেখছি তো।কিন্তু এতো সুন্দর মনে হয় নি।আজ হচ্ছে।”
“ সৌন্দর্য দেখা ,মানুষ যতটা সহজ মনে করে তত সহজ না।”
“ সহজই।শুধু দেখার ভঙ্গীর উপরে নির্ভর করে।সব সময় ক্ষেপাতে ভালো লাগে তাই না।”

রিঝ হাসলো।বলল,
“ তুমি ক্ষেপো কেনো??”
“ ভালো লাগে তাই।”

দুষ্টু মিষ্টি খুনশুটিতে কেঁটে যায় কিছু সময়।রিঝ কথার মাঝে আর প্রশ্ন খুঁজে পায় না।প্রশ্ন করা তুতুলের কাজ।পাশ ফিরে তাকায়।দেখে তুতুল ঘুম!রিঝ হাসলো।মেয়েটা ঘুম পাগল ব্যাপারটা তেমন না।রিঝের মতে পৃথিবীর বেশিরভাগ মেয়ে ঘুমাতে পাছন্দ করে।যদিও তুতুল ভিন্ন।একদম আলাদা।একটু চঞ্চল।একটু শান্ত।অনেকটা টক ঝাল মিষ্টি মেয়ে!কিন্তু অতিরিক্ত সহজ সরল।এটা রিঝের পছন্দ না খুব একটা।তবে আসল ব্যাপার হচ্ছে রিঝ জানতো কফি,চা খেলে মানুষের ঘুম হয় না।কিন্তু তুতুলের বেলায় উল্টা।চা কফি পান করলে তার আরো বেশি ঘুম আসে।তাই তো সে বলে,তুতুল আলাদা!রিঝ মগটা তুতুলের কোল থেকে নিয়ে নিলো।অন্ধকার আস্তে আস্তে কেঁটে যাচ্ছে।ভোরের হালকা আলো এসে পড়ছে তুতুলের মুখে।রিঝ নিজের চোখ সরিয়ে সামনে রাখে।এক্সিডেন্ট করতে চায় না সে।রামিম ফিসফিস করে বলল,
“ দোস্ত দেখে চালা।পরে এক্সিডেন্ট হলে একদম নিচে।”

রিঝ বলল,
“ তোরে এতো চিন্তা করতে কোইছি??”
“ না কিন্তু আমি নিজের জন্য করতাছি।মরতে চাই না।”
“ ইদানিং আসমার চিন্তা তোর বেশি।”

রিঝ একটু বাজিয়ে দিতেই রামিম ক্ষেপে।ফিসফিস থেকে কন্ঠ একটু বাড়ে।বলে,
“ আমরা শুধু ফ্রেন্ড।আজাইরা কথা কইবি না।”
“ আমি কি ফ্রেন্ডের চাইতে বেশি কিছু বললাম??চেইত্তা যখন যাইতাছস কিছু তো একটা আছে মামু!!”

রিঝ হাসলো।রামিম আগে ভাগে কথা অফ করে দিছে।কে নিজে থেকে ফাঁসতে চায়!!তবে এমন কিছু নেই রামিম মনে মনে ভাবে।রিঝ আচমকা দেখলো তুতুলের মাথাটা নেতিয়ে যাচ্ছে পাশে।বাম হাতের বাহু এগিয়ে দিলো।তুতুল আরো ঘেঁষে মাথা বাঁকিয়ে হাতে মাথা রাখে।দু’হাতে জড়িয়ে নেয় শক্ত বাহু।গরম গরম একটা অনুভুতি।রিঝের শরীরের তাপ বেশি।অনেক গরম।হাত গুলো আরো বেশি গরম।তালু গুলোও।তুতুল আরাম করে ঘুমাচ্ছে।এক হাতে ড্রাইভ করতে রিঝের কষ্ট হচ্ছে।কিছু কষ্ট আনন্দের!তুতুল পাশে থাকলেই রিঝের মনে হয়।হঠাৎ গাড়ি নড়ে উঠলো।তুতুলের একটা ঝাকুনি লাগলো।ঘুম তখনি ছুটে গেলো।চোখ খুলে দেখে রিঝের বাহু শক্ত করে ধরে আছে সে।তুতুল দ্রুত হাত ছাড়ে।তারপর বলে,
“ আর কতক্ষণ??”

রিঝ হাতটা একটু ঝেড়ে বলল,
“ অল্প।”

তুতুল প্রকৃতির মাঝে উঁকি দিয়ে রিঝকে দেখে।ছেলেটা অদ্ভুত!কখনো অনেক ভালো।কখনো খারাপের চাইতেও খারাপ।কখনো খুব আপন মনে হয়।ইয়াজের সাথে যখন এনগেজমেন্ট হয়েছিলো তারপরে অনেক দিন রিঝের দেখা পেলো না সে।তাই রিঝের রুমে উকিঁঝুঁকি দিয়েছিলো।রিঝ তখন তাকে কড়া কতোগুলো আজগুবি কথা শুনিয়ে রুমের বাহিরে বের করে দিয়েছিলো।রিঝের লাল লাল চোখ দেখেই সে ভয় পেয়েছিলো।তার উপরে ঝাঝালো কন্ঠ!!তখন খুব রাগ হয়েছিলো তুতুলের।তাই তাদের বাসায় যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছিলো।পরে অবশ্য সে বুঝতে পেরেছে রিঝ অসুস্থ ছিলো।রিঝের মাঝে অসম্ভব গভীরতা।এটা বুঝা তুতুলের পক্ষে সম্ভব না।যখন বাস বান্দরবান পৌঁছালো,ঘড়িতে তখন সকাল ছয় টা।আঁকা বাঁকা পথ।গোল গর্ত।এক পাশে মাটির স্তুব জমে পাথরে রূপ নেওয়া পাহাড়,তার উপরে সবুজের লেপ,সব মিলিয়ে অপূর্ব,অসাধান।পথ এতোই বাঁকা যে গাড়ি এঁকে বেঁকে চলছে।সবাই মোটামুটি উঠে যায়।আকাশ হাপ ছেড়ে বাঁচে।বেঁচে আছে দেখেই তার খুঁশি লাগছে।তুতুল চারপাশে দেখে।দূরে লাল একটা ব্রিজ দেখা যাচ্ছে।তার আগেই একটা দারূন অদ্ভুত জিনিস অবিষ্কার করে সে।কৃষ্ণচূড়া গাছ!!রাস্তার পাশ ঘেঁষে যে এমন দুই,একটা গাছ দেখবে তুতুল ভাবতে পারে নি।মুগ্ধতায় তার চারপাশ শীতল হয়ে উঠে।গাড়ি মোড় নেয়।বিশাল খাদের পাশ ঘেঁষে চলে তারা।দূরের একটা পাহাড়ে ঘরের মতো কিছু দেখা যায়।তুতুল একটু ভালো করে দেখে।নিচে লাঠি।তার উপরে ভর দিয়ে দাড়িয়ে আছে ঘর।কি নাম জানে না সে।তবে এটা জানে এই ঘরে মানুষ থাকতে পারে না।তার এটাই মনে হচ্ছে।বান্দরবানে ঢোকার মুখেই দেখলো গাছপালা,পাহাড় নিচু।তাদের গাড়ি উপরে,আরো উপরের দিকে উঠছে।ঢালু পথ।আবার উঁচু।রমাঞ্চিত হয়ে উঠে মন।এতো সুন্দর অনুভুতি আগে কখনো পায়নি সে।কারন পাহাড় আর এই পথের সাথে এটা তার প্রথম পরিচয়।আগের বার ঘুমিয়েই কাঁটিয়ে দিয়েছিলো সবটুকু পথ।এবার যেনো কিছু বাদ না পরে।তুতুল উঠে বসে।আরো মনোযোগী হয়ে উঠে।তার অসাধারন লাগছে সব।এই রূপ যেনো তাকে প্রেমে ফেলে দিচ্ছে।হঠাৎ বামে মোড় নিলো।আবার সোজা একটা বাঁকা পথ আসে।নেমে আসে বাসস্ট্যান্ডে।গাড়ি থামে হোটেল হিল ভিউতে।তুতুলের আর ভালো লাগছে না।প্রকৃতি দেখতেই তার ভালো লাগছিলো।এই হোটেল তো তাদের শহরেও আছে।এটা তেমন সুন্দর কি হলো??এখানে থাকবে ভেবে তার বিরক্ত লাগলো।রেয়ানা গাড়ি থেকে নেমে রিঝের পাশ ঘেঁষে বলল,
“ আমরা এখানে থাকবো??ওয়াও দারুন।”

রিঝের পাশে এসে দাঁড়ালো আর একটা লোক।রিঝ বলল,
“ এই গাড়িটা পার্ক করে রাখেন।আর আমরা আধা ঘন্টা পরেই যাবো।”

লোকটা ঠিক আছে বলে চলে গেলো।রেয়ানার দিকে তাকিয়ে রিঝ বলল,
“ আমরা এখানে ফ্রেশ হবো।খাওয়াদাওয়া করবো তারপর অন্য জায়গায় থাকবো।”
“ কোথায়??” রেয়ানার কন্ঠে কৌতুহল।
“ সাইরু হিল রিসোর্টে।আমি বুক করে রেখেছিলাম।”

হোটেলে উঠে ফ্রেশ হয় সবাই।তুতুল আসমার সাথে সাথে ঘুরে।আসমার শীত দেখে কেনো যেনো তার নিজেরই শীত করছে।এতো ভোরে তুতুল কখনো গোসল করে না।তবুও আজকে করলো।তারপর শীতে ধক ধক করে কাঁপতে লাগলো।ব্ল্যাক জিন্সের উপরে সবুজ কুর্তি।হোয়াইট জ্যাকেট।গলায় উড়না বেচিয়ে নিলো।চুল খোঁপা করে কাঠি দিয়ে লাগিয়ে নিলো।পায়ে ব্ল্যাক কনভার্স।সব মিলিয়ে তুতুলেকে ট্রেকার লাগছে।আসমা কিছুসময় হাসলো।তারপর বলল,
“ তোমার না পাহাড় পছন্দ না??”

তুতুল জ্যাকেটের হাতা তুলতে তুলতে বলল,
“ পছন্দ ছিলো না।এখন প্রিয় হয়ে উঠছে।ওয়াও সকালে যা সৌন্দর্য দেখলাম আর দেখলে পাগল হয়ে যাবো।আমি ঘুরে ঘুরে শুধু পাহাড় দেখবো।শুধু পাহাড়!”

দু’জনেই রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।আসমা আর তুতুল অনেক কথা বলে।একটা অদ্ভুত ছেলে সামনে পরে।দু’জনের কাছেই রিঝের কথা জিজ্ঞেস করে।সাথে একটা মেয়ে।তুতুল বলল,
“ ওই দিকে উনি।”

রিঝ তখন একটু দূরে দাড়িয়ে।ছেলে মেয়ে দু’জনের সাথেই সে কি কি যেনো কথা বলল।অনেক হাসলোও।জড়িয়েও নিলো।তারপর সবাই মিলে তুতুলের কাছে এসে দাড়ালো।তুতুলদের দেখিয়ে পরিচয় করিয়ে বলল,
“ ওর নাম তুতুল আর ওর নাম আসমা।আমার ফ্রেন্ড।আর ওরা হচ্ছে আমার এই শহরের বন্ধু।”

তুতুল চমকে প্রশ্ন করলো,
“ কিভাবে??”
“ উমেপ্রু আমার ভার্সিটির ছোট বোন।যদিও ভার্সিটি একুই আমাদের পরিচয় হয়েছে বান্দরবানে।কিভাবে হয়েছে পরে বলবো।আর উথৌয়ই আমার সাথের।ওর বড় ভাই।এ হচ্ছে উমেপ্রু ইসলাম।ও উথৌয়ই সিং ইসলাম।”

তুতুল আসমা মহা অবাক।এমন অদ্ভুত নাম সাথে দেখতেও অদ্ভুত এরা না কি মুসলিম!!কিভাবে!!ভারী আশ্চর্যের বিষয়।তুতুলকে কিছু বলতে না দিয়ে রিঝ আবার বলল,
“ নাস্তা করে নেও তোমরা।আমাদের আরো দূরে যেতে হবে।সাইরুতে।পরে ওদের ব্যাপারে আরো পরিচিত হবো।চলো উথৌয়ই।”

তুতুল কিছুসময় হা করে তাকিয়ে থাকলো।সাদা গায়ের রঙ্গের ছেলে মেয়েগুলো একদম অন্যরকম।দেখে অন্য জাতির মনে হচ্ছে।বাঙ্গালীর কোনো ছাপ নেই।পরেছে অবশ্য বাঙ্গালীর পোষাক।নাকের উপরের দিকটা চেপটা,কিন্তু নিচের দিক চোখা,চোখ ফুলা,ছোট,চিকন ঠোঁট,চিকন ভ্রু।তবে সব চাইতে সুন্দর আর মারাত্নক চুল মেয়েটার।লম্বা সরু বিশাল চুল।একদম পায়ের পাতার কাছাকাছি।আসমা ,তুতুল ভারী আশ্চর্যীত চোখে তাকিয়ে আছে দু’জনের দিকে।তুতুল বিড়বিড় করে বলল,
“ কোরিয়ার ছেলেদের মতো দেখতে তাই না আপু??”

“ হুম।মারাত্নক।আমি তো এই পোলার লগে প্রেম করমুই।”

তুতুল নাক ছিটকে বলল,
“ কেমন যেনো লাগে এদের??দাড়ি নাই।মেয়েদের মতো গাল।অবশ্য প্লাস্টিকে তো আর ঘাস উঠে না।”

আসমা বিরক্ত হলো তুতুলের কথায়।কতো কিউট পোলা!!BTS লাভার সে।কিন্তু তুতুল উল্টা।আসমা বলল,
“ একদম উল্টাপাল্টা বলবানা।কত কিউট।একদম BTS দের মতো।”

তুতুল হাসতে হাসতে বলল,
“ ওই গুলো ছেলে না মেয়ে সেটা বুঝতে না পারা আমি।যদি একটু বুঝাই দিতে!মানে নাচ আর চেহারা দেখে মেয়েই মনে হয়।তোমরা অবশ্য বলো ছেলে।আমি বিশ্বাস করি না।দেখে তো হাফ লেডিস মনে হয়।”

আসমা রেগে মেগে আগুন হয়ে “ তুতুল” বলে চেঁচিয়ে উঠে।তুতুল দেয় এক দৌড়।তার অনেক গুরুত্বপূর্ন কাজ আছে।হাফ লেডিস বা তাদের লাল ,নীল,সবুজ চুলের ব্যাখা এখন সে দিতে পারবে না।শুধু শুধু সময় নষ্ট।আসমাও পিছনে পিছনে দৌড়ায়।”

#চলবে…………
এই শহর থেকে গল্পের সবচাইতে বড় পরিবর্তন শুরু হবে।সবচাইতে গুরুত্বপূর্ন অংশ এখান থেকে শুরু।
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।
#চলবে…………
আমি অসুস্থ।সুস্থ হলে নিয়মিত দিবো নিজে থেকে।কাউকে কষ্ট করে বলতে হবে না।লিখতে আমারও ভালো লাগে।এটা সখের কাজ।আশা করি বুঝবেন।
ভুলগুলো আল্লাহর দেওয়া মহান গুন ক্ষমার চোখে দেখবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here