#কৃষ্ণবতীর_মায়ায়
#পর্ব_৩
#লেখিকা_সাদিয়া_জান্নাত_সর্মি
মুখ সামলে কথা বলো ইয়াদ, তোমার সাহস হয় কি করে আমার ভাইজি কে এই কথা বলার, পিছন থেকে কে যেন এমন কথা বলে উঠলো।নীর ঘুরে তাকিয়ে দেখে ফুপি দরজার ওখানে দাঁড়িয়ে রাগি চোখে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছেন।ইয়াদ থতমত খেয়ে বললো,সরি চাচি আম্মু আমি জানতাম না যে ও তোমার ভাইজি,ড্রেসআপ দেখে বুঝতে পারিনি আমি। আমেনা বেগম কিছু বললেন না আর,নীরের কাছে এসে নীরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন, অনেকক্ষণ গাড়ি তে বসে তোর খারাপ লাগছে, আমার সাথে রুমে চল।নীর ফুপির সাথে রুমে চলে গেল। রুমে এসে ফুপির কোলে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো নীর, আস্তে আস্তে জিজ্ঞেস করল,
আচ্ছা ফুপি আমাকে কি কাজের লোকের মতো দেখতে লাগে?
আমেনা বেগম নীরের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললেন,
নাহ, সেরকম লাগবে কেন তোকে? তাছাড়া তুই এতো সাদাসিধে কাপড় পড়িস কেন বলতো? নাহলে ইয়াদ এরকম বলতো না। আমার ভাইয়ের কি তোকে ভালো কাপড় কিনে দেওয়ার সামর্থ নেই?
নীর কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
সেটা নয় ফুপি, আমাকে ভালো জামা কাপড় কিনে দেওয়ার জন্য বাবার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে কিন্তু বাইরের চেহারায় কি যায় আসে বলো? বাবার টাকা আছে বলেই কি আমাকে দামী দামী জামা কাপড় পড়তে হবে, সবাই কে দেখাতে হবে আমার বাবার টাকা আছে এরকম টা তো না। সাধারণ জামা কাপড়েই আমি ঠিক আছি, তাছাড়াও আমাকে সেসব পোশাকে মানায় না, আমার যেরকম মানায় সেরকম টাই করা উচিত। তার পর হঠাৎ করে নীর বললো,জানো ফুপি আয়ান আমাকে ডির্ভোস দিয়ে দিয়েছে কালকে।
নীরের কথা শুনে আমেনা বেগম চমকে উঠলেন।
এইসব কি বলছিস তুই নীর, মজা করছিস নাকি আমার সাথে?
না ফুপি, আমি ঠিকই বলছি,কাল আমাদের ডির্ভোস হয়ে গেছে।
কেন ডির্ভোস হয়েছে তোদের? আয়ান তো তোকে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করেছিল।
নীর উপহাসের হাসি হেসে বললো, পছন্দ? উনি আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করেন নি ফুপি। ওনার শখ হয়েছিল একটা কালো মেয়ে কে বিয়ে করার তাই বিয়ে করেছিলেন আমাকে।এখন ওনার শখ মিটে গেছে তাই ডির্ভোস দিয়ে দিয়েছেন।
আমেনা বেগম নীরের কথা শুনে চুপ করে রইলেন। মনে মনে বললেন,
দোষ না করেও আজ দোষী আয়ান।বেচারী নীর তুই কিছু বুঝতেও পারলি না যে তোর চোখের পানির কারণ আয়ান নয় তোর খুব কাছের মানুষ। আয়ান তো শুধু হাতের পুতুল মাত্র।
ফুপি কে চুপ করে থাকতে দেখে নীর জিজ্ঞেস করল, ফুপি কি ভাবছো তুমি?
নীরের ডাক শুনে আমেনা বেগমের হুশ এলো,
কই কিছু না, ভাবছি আয়ান এটা কি করে করলো?তোর মতো এমন একটা মিষ্টি মেয়ে কে ডির্ভোস দিয়ে দিলো,রত্ন চিনলো না আয়ান।
বাদ দাও তো ওসব কথা। ভালো লাগছে না আমার,
আচ্ছা ঠিক আছে,আর বলবো না। তুই এখন বস আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি বলে আমেনা বেগম চলে গেলেন। আমেনা বেগম চলে যাওয়ার পর পরই ইয়াদ রুমে এলো,নীরের পাশে বসে বললো,
তুমি কি সত্যিই আমার চাচি আম্মুর ভাইজি হও?
নীর অবাক হয়ে বললো, কেন বলুন তো?
না মানে বলছিলাম কি চাচি আম্মুর সাথে তোমার চেহারার কোন মিল নেই তো তাই বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।
আপনার বিশ্বাসের জন্য আমার কিছু যায় আসে না, আপনি এখন আসতে পারেন।
ইয়াদ কাচুমাচু হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল,যাওয়ার সময় দরজার সামনে আমেনা বেগম কে দেখে একটু ভয় পেয়ে গেল ইয়াদ। তিনি কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই ইয়াদ বললো, আমি এমনিতেই একটু হাই হ্যালো করতে এসেছিলাম, চলে যাচ্ছি এখন।
আমেনা বেগম রাগি গলায় বললেন, কাজের লোকের সাথে হাই হ্যালো করার কি দরকার তোমার?
ইয়াদ মাথা নিচু করে বললো,
না চাচি আম্মু সরি তখনের কথার জন্য, আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি।
আমেনা বেগম ইয়াদ কে ওভাবে কথা বলতে দেখে বললেন,
দেখো ইয়াদ, আমি তোমাকে আমার ছেলের মতোই ভালোবাসি।সেজন্য আমার ছেলে হিসেবেই বলছি তোমাকে, কখনো মানুষের বাইরে টা দেখে বিচার করবে না।জামা কাপড়, চেহারা এইসব দিয়ে মানুষ কে চেনা যায় না,ভিতর টা দেখে মানুষ চিনতে হয়।আজ আমার ভাইজি কে এরকম বলেছো বলে ছাড় পেয়েছো, তার জায়গায় অন্য কেউ হলে ছাড় পেতে না। ভবিষ্যতে মানুষের পোশাক আশাক চেহারা দেখে বিচার না করে মন দেখে বিচার করো সে কেমন।
ইয়াদ অপরাধীর মতো মাথা নাড়ল শুধু তার পর দ্রুত ওখান থেকে চলে গেল। আমেনা বেগম খাবার নিয়ে রুমে এসে দেখেন নীর শুয়ে আছে। উনি নীরের পাশে বসে বললেন,
উঠে বস তো এখন। খাবার নিয়ে এসেছি,খাবি উঠ।
ফুপি এখন কিছু ভালো লাগছে না আমার, তুমি এক কাজ করো আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দাও, আমি একটু ঘুমাই। আমেনা বেগম নীরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন,এই মুহূর্তে ওনার কাছে নীরকে সবচেয়ে অসহায় লাগছে।
____________________________
অফিসে আমিন চৌধুরীর সামনের চেয়ারে চুপ করে বসে আছে আয়ান। আয়ানের মুখ টা দেখে আমিন চৌধুরীর রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু নিজেকে যথাসম্ভব সামলে নিয়ে আয়ান কে জিজ্ঞেস করলেন,
আমার মেয়ের সাথে কেন করেছো তুমি এরকম টা?
আয়ান উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল। আয়ানের চুপ থাকা দেখে আমিন চৌধুরী প্রায় চেঁচিয়ে উঠলেন,
উত্তর দাও আমাকে, কেন করেছো তুমি এরকম নীরের সাথে? তুমি তো জানতে নীর কেমন মেয়ে।আর সবার মতো সে নয়, আমার মেয়ে কালো, নিজেকে গুটিয়ে রাখে সবসময়,সবার মতো এতো স্মার্ট নয় আমার মেয়ে এসব তো তুমি জানতে। সবকিছু জেনেই তো ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলে তাহলে কেন আমার মেয়ের জীবন টা এইভাবে নষ্ট করলে?
আমিন চৌধুরীর ধমক শুনে আয়ান একটু কেঁপে উঠল। না পারছে সত্যি বলতে না পারছে মিথ্যে বলতে,এক মন বলছে সব সত্যি বলে দেই আঙ্কেল কে আরেক মন বলছে সব কিছু বলে দিলে আমার পরিবার শেষ হয়ে যাবে। দোটানায় পড়ে গেছে আয়ান। আয়ান কে তার পরেও চুপ থাকতে দেখে আমিন চৌধুরী চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন,দশ সেকেন্ডের মধ্যে যদি তুমি মুখ না খুলেছো তাহলে জীবনে আর কখনো মুখ খুলার অবস্থায় থাকবে না।
আমিন চৌধুরীর হুমকি শুনে আয়ান মুখ ফসকে বলে ফেললো,, আমি নীরের সাথে এইসব কিছুই নিজের ইচ্ছায় করিনি, আমাকে দিয়ে করানো হয়েছে।
(চলবে………. ইনশাআল্লাহ)
(