ক্যাসিনো পর্ব -১৪

#ক্যাসিনো ©লেখিকা_(মায়া)
#পর্ব_১৪

মরিয়ম ওরা সবাই রাতেই চলে আসছে । রাতের জার্নিতে শরীর কাহিল অবস্থা।খাটে শরীর এলিয়ে দিতেই চোখে রাজ্যের ঘুম চলে আসল। মরিয়মের সারা রাস্তায় শুধু আবল তাবল ভেবেই সময় চলে গেছে। মাথার ভিতরে শুধু একটা চিন্তাই গিজগিজ করছে। কেন এমন করছে নিশান?? মেহমেতের কি কোন হাত রয়েছিল!! নিশানের জেলে যাওয়া নিয়ে। সব থেকে বড় কথা হলো নিশানের সাথে আসলে ঘটেই বা কি ছিল!! যে এত মেধাবী ছাত্র কে জেলে যেতে হলো!! সেটাও আবার নেশা জাতীয় জিনিস গ্রহন করায় এবং জোয়ার জন্য আর মোট কথা এসেই ঘুরপাক খাচ্ছে শাহানা কে ধ! র্ষন করে মেরে ফেলা। অথচ সে বলেছিল মহুয়া কে যে শাহানা তার স্ত্রী ছিলেন।

এসব কিছু জানতে হলে প্রথমেই ফিরে যেতে ২০১২ সালে ঢাবিতে। কি হয়েছিল ঢাবিতে??
মরিয়ম ভেবেই রেখেছে যে সে ঢাবিতে যাবে একবার। কিছু তো অবশ্যই জানতে পারবে সে।

মরিয়মের ঘুম ভাঙে সকাল ৮টাই। পাশে তাকিয়ে দেখে মেহমেত নেই। মরিয়ম কপালে খানিক ভাঁজ টেনে নিজের মনে আওড়াচ্ছে এতো সকাল সকাল মেহমেত গেল কই?? বার কয়েক ফোন দিল মরিয়ম মেহমেত কে ফোন ধরলো না একটু পর ফোন নিজেই ব্যাক করলো মেহমেত। তার পর সরল কন্ঠে বলল। অফিসে এসেছে জরুরি একটা মিটিং রয়েছে। মরিয়ম তেমন কিছুই আর ঘাটালো না শেষে বলল খাওয়া দাওয়া করে নিও । ফোন টা কেটে দিয়ে মিহি কে জোর করে উঠালো। মেয়ে টা ঘুমে অচেতন। তুলতেও মন চাচ্ছে না। কয়েক দিন স্কুল কামায় হয়েছে। মূল কথা সে বাসা থেকে বের হতে চাচ্ছে। কিন্তু মিহি থাকলে তাকে বের হতে দিবে না তার কারনে তাকে স্কুলে পাঠাতে হবে। আরিফা আজ ভার্সিটিতে যেতে চাচ্ছিল না কিন্তু মরিয়মের জরাজরিতে যেতে বাধ্য হলো। ঝটপট নাস্তা বানিয়ে তাদের খাইয়ে দিয়ে আরিফা ভার্সিটিতে গেল আর মরিয়ম কোন রকম নাস্তা করে মিহিকে নিয়ে স্কুলের জন্য বের হয়ে গেল। উদ্দেশ্য মিহিকে রেখে ঢাবির পথে রওনা দিবে। মরিয়ম নিজেই ড্রাইভ করছে । মিলন চাচা কে বলেছে মিহিকে স্কুল শেষে নিয়ে আসতে।

ঢাবির ভিসির সামনে বসে রয়েছে মরিয়ম। ভিসি মরিয়মের দিকে কিছু ক্ষন তাকালো হিজাব নিকাবে আবর্ত এক জন মহিলা যার চোখ দুটো ও দেখা যাচ্ছে না।। ভিসি হয়তো ভাবছে কোন স্টুডেন্টের অভিভাবক। ভিসি জানতে চাইলেন জ্বি বলেন কি সমস্যা??? কোনো স্টুডেন্টের অভিভাবক বুঝি আপনি? নাকি কাউকে ভর্তি করাতে এসেছেন? মরিয়ম কন্ঠ নরম করে জিজ্ঞেস করলো না স্যার!! আমি এখানে কিছু জানতে এসেছি! ভিসি ভ্রু কুঁচকে বললেন কি জানতে চান??

আমি এক জনের ব্যাপারে কিছু জানার জন্য এসেছি। কার বিষয়ে?? মরিয়ম নিজের ফোন বের করলো মহুয়ার ফোন থেকে নিশানের আর মেহমেতের ছবি টা নিয়েছিল সে। সেই ছবি টা ভিসি কে দেখিয়ে বললেন। দেখেন তো এই ছবির কাউকে চিনেন কি না আপনি? ২০১২ সালের স্টুডেন্ট ছিলেন এরা । নিশান আর মেহমেত খান তাদের নাম!!
ভিসি ভালো করে ছবিটা দেখলেন তার পর বললেন সরি আমি ২০১২ সালের কোন ব্যাচ সম্পর্কে আমার জানা নেই। আমি ২০১৭সালে জয়েন করেছি। ২০১২ সালে ভিসি ছিলেন, আতাউর রহমান। তার কাছে কিছু জানতে পারতেন। কিন্তু সে তো কয়েক মাস আগেই ট্রাক এক্সিডেন্টে মারা যান। মরিয়ম অবাক হলেন সাথে আশাহত ও হলেন। আচ্ছা আতাউর রহমান কি retread করেছিলেন?? নাহ উনি চাকরি নিজেই ছেড়ে দিয়েছিলেন ২০১৬ সালে। মরিয়ম একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তার পর কিছু ক্ষন ভেবে বললেন, আচ্ছা ২০১২ সালের কি কোন টিচার ও কি এখানে নেই?? হ্যাঁ আছেন দেবী রায়। বাংলা প্রভাষক!!;
উনার সাথে কি আমি দেখা করতে পারি একটু?? তা পারেন,, কিন্তু তাদের বিষয়ে জেনে আপনার কি হবে?? মরিয়ম হাসলেন যা ভিসি দেখতে পেলেন না। একটু কাজ ছিল স্যার।

দেবী রায় ক্লাস করাচ্ছেন। মরিয়ম ক্লাসের বাইরে অপেক্ষা করছে। মাথায় হাজার খানেক চিন্তা। প্রতি টা সেকেন্ড যেন মরিয়মের কাছে শখানেক বছরের মত লাগছে । ক্লাস শেষ হলে দেবি রায়ের সাথে ক্যাম্পাসে বসে রয়েছে। বয়সের ছাপ সুস্পষ্ট। চোখে মুখে লাবন্যের আভা। গাঢ় করে সিঁথি তে সিঁদুর দেওয়া। । চেহারা টা দেখেই মরিয়ম মাসাআল্লাহ্ বলে উঠেন। দেবি রায় কে পিক টা দেখিয়ে বললেন। এদের দুই জনের বিষয়ে আমি জানতে চাই। ২০১২ সালের ব্যাচ ছিলেন তারা। ছবি টি ভালো করে লক্ষ্য করে চোখের চশমা টা ঠিক করে বললেন। নিশান আর মেহমেত!! হ্যাঁ আপনি চিনেন?? দেবি রায় হাসলেন চিনবো না কেন। কত ভালো বন্ধু ছিলেন তারা । ভার্সিটির নজর কারা বন্ধত্ব ছিল তাদের। মরিয়ম উদ্বিগ্ন হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,, আচ্ছা কি এমন হয়েছিল যার কারণে নিশান কে জেলে যেতে হয়েছিল??

দেবী রায় পানসে মুখ করে তাকিয়ে বললেন,, ভার্সিটির সব চেয়ে ভাল ছাত্র ছিলেন নিশান। এক বার পড়া বুঝিয়ে দিলে,, দ্বিতীয় বার আর সেই পড়া বুঝিয়ে দিতে হয়না। সব দিক দিয়ে ভালো ছেলের খেতাব ছিল তার,স্যার মেডাম কে কখনো অসম্মান করেনি। এবং কি কোন দিন কোন স্টুডেন্ট কিংবা ওয়াচম্যানের সাথেও কখনো অসম্মান করেনি। কারো সাথেই কোন ঝামেলা ছিল না। সব সময় বই নিয়ে তার যত সময় ,আর কারো সাথে তেমন কথাও বলতো না ,, কেমন করে যেন মেহমেত আর শাহানার সাথে তার খুব ভাব হয়ে যায়। মেহমেতের সাথে বাড়তি সময় কাটাতো। ক্লাসের সব থেকে প্রিয় ছাত্র ছিল আমার নিশান।

তার পর ফাইনাল পরীক্ষায় টপ মার্ক উঠালো
। বাইরে পড়াশোনার জন্য চান্স পেল কিন্তু সে বাইরের দেশে সে যেতে নারাজ। বলেছিল সেদিন সে,,যদি সব মেধাবী ছাত্র ছাত্রী অন্য দেশে পড়া শোনার জন্য যায় তবে সে দেশে কোন কর্ম করতে চায় না। সে আরো বড় দেশে যেতে যায় জব করার জন্য। এবং অন্য দেশ কে উন্নতি করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। এমন করে যদি সকলে অন্য দেশে পড়তে যায় তাহলে আমাদের দেশ কি করে এগিয়ে যাবে শেষে তো দেখা যাবে আমাদের দেশে মেধাবী কোন ছাত্র ছাত্রীই পাওয়া যাবে না।
সেই দিন এমন কথা শুনে গর্বে বুক ফুলে উঠেছিল আমার। করতালি তে মুখরিত হয়েছিল পরো ক্যাম্পাস। তার এখানেই আবার মাস্টার্স করার জন্য ভর্তি হয়ে যায়। সব ঠিক ঠাকই ছিল। হঠাৎ জানতে পারলাম শাহানা মারা গেছেন। আর কিলার হিসাবে পাওয়া গেল নিশান কে ,, আরোপ করা হলো সে শাহানা কে ধর্ষণ করে মেরে ফেলেছে। এবং বিভিন্ন ভাবে তদন্ত করে জানা গেল যে সে ড্রাগ নিতো সাথে জোয়া খেলতে আর ড্রাগ নাকি অনান্য ছাত্র ছাত্রী দের কাছে বিক্রি করতো। নিশান কে শাহানার লাশের কাছে অচেতন ভাবে পাওয়া যায়। তখন ও সে নেশাগ্রস্ত ছিল। আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না যে নিশান এমন কাজ করছে। মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো। কিছুতেই আমি মানতে পারছিলাম না যে নিশান এমন কাজ করতে পারে। কখনো তাকে এমন কোন বাজে অভ্যাসের সাথে মিশতে দেখিনি। কারো সাথে তো ঠিক মত কথায় বলতো না। অথচ এমন অনেক ছেলে মেয়ে স্বাক্ষি দিয়েছে যে যেগুলো আরোপ দেওয়া হয়েছে তা প্রমান করতে। নিশান কে যখন যাবতজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। তখন ও নিশান ছিল নেশার ঘোরে। শুধু বার বার কেঁদে উঠে বলছিল আমার শাহানা কে ছেড়ে দাও তোমারা। শাহানা তোমার কিছু হবে না।

চলবে _____????

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here