“ক্রাসের_সাথে_ডাইরেক্ট_বিয়ে_ পার্ট-৩

#ক্রাসের_সাথে_ডাইরেক্ট_বিয়ে_
#লেখক_নীলার_আব্বু

পার্ট-৩

-আজব তো।
-হুম।একটু আজবই
নীলিমা চায়ের কাপ নিয়ে চা খেতে শুরু করল।

চারপাশটা অনেকটাই নীরব।ঝি ঝি পোকার আওয়াজও শোনা যাচ্ছে।নীলিমা আর আমি এক বেঞ্চে বসে আছি।বাস আসার অপেক্ষা করছি।আশে পাশে আমাদের আরো কয়েকজনকে দেখতে পেলাম।একটু ঘুমের ঘোড় ঘোড় লাগছিলো তখনই বাসের হর্ণ পেলাম।উঠে পড়লাম ব্যাগ নিলাম।নীলিমার দিকে তাকালাম।আমার মনে হয় না তাকে আর কিছু বলতে হবে।আমি বাসে উঠে পড়লাম।অবশ্য নীলিমা আমার আগেই বাসে উঠে পড়েছিল।নীলিমার সিট দেখে ভাবছিলাম,তার পাশে বসব কিনা?
-বসে পড়
-কি বললে
-না শুনলে শোনার প্রয়োজন নেই।

নীলিমার পাশের সিটেই বসে পড়লাম।কিছুক্ষ্ণ পরেই বাস চলতে শুরু করল।নীলিমা ফোনে যেনো কি করছে।তার ফোনের স্ক্রীনে তাকাতেই দেখলাম একজন ছেলের ছবি ওয়ালপেপারে লাগানো।দেখে কৌতূহল হল।তাকে জিজ্ঞেস করলাম,কে সে?
দ্রুত স্ক্রীন অফ করে দেয়।
-আপনার জানার প্রয়োজন?
-না এমনি।না বলতে চাইলে প্রয়োজন নেই।

বাস চলতে থাকে। জানালা খোলা তাই পাশ দিয়ে অবিরাম বাতাস যাচ্ছে।ভালোই লাগছিলো।পূর্নিমা রাত।নীলিমা দিকে তাকালাম।চাদের আলোতে নীলিমার মুখ যেন আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করছে।কিন্তু না নিজেকে শক্ত করলাম।তার বিয়ে হচ্ছে আর আমারও। কি লাভ মায়া বাড়িয়ে।ঘুমিয়ে পড়লাম।
———-
যখন ঘুম ভাংগলো তখন আশপাস তাকিয়ে বুঝতে পারলাম,আমার গন্তব্য আর বেশি দূর নয়।এবার নীলিমার দিকে তাকালাম।সেও গভীর ঘুমে মগ্ন।কি জানি ভেবে,তার একটি ছবি তোলে রেখে দিলাম।প্রস্তুত হচ্ছিলাম ব্যাগ নিয়ে নামব।ভাবলাম তাকে কি একবারে ডাকব।না থাক।
ব্যাগ নিয়ে নেমে পড়লাম বাস থেকে।

ভেবেছিলাম আর মনে হয় তার সাথে দেখা হবে না।কিন্তু বিধাতার ইচ্ছে অন্যকিছু ছিল।বাস থেকে নেমেই একটা রিকশা নিলাম।অনেকদিন পর নিজ গ্রামে এসে ভালোই লাগছিল।১৫ মিনিট পর নিজ বাড়ির সামনে এসে নামলাম।রিকশা থেকে নামলাম।ভাড়া টাও দেবার সুযোগ পেলাম না।যত সবাই আছে আমাকে নেয়ার জন্য এসে পড়েছে।বাড়ির পিচ্ছি গাচ্চাও বাকি নেই।বাড়ি পৌঁছাতে সবার হাজার প্রশ্ন আর অনেক কেয়ার।নিজেকে এক মুহুর্তের জন্য সেলিব্রেটি মনে করতে শুরু করলাম।
———
-যা ফ্রেস হয়ে নে
-আচ্ছা।
-আর হ্যা,কাল তোর গায়ে হলুদ আর এই খামের মধ্যে সেই মেয়ের ছবি দেখে নিতে পারিস।
-আচ্ছা।ঠিক আছে।এখন তুমি যাও তো মা।

দরজা বন্ধ করে শুয়ে পড়লাম।খামের মেয়ের ছবি দেখে কি হবে।নিজের ফোনটা বের করলাম।নীলিমার তোলা সেই ছবিটা দেখতে থাকলাম।”আমি আর এখন কি করব আমার হৃদয় টা যে আর আমার কাছে নেই।হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে এই মায়াবী চেহারাতে।এমন ভাবতে ভাবতে গভীর ঘুমে মগ্ন।
————————

বিয়ের গায়ে হলুদ পর্ব চলছে।সবাই খুব আনন্দ করছে।কপাল,আনন্দটা আমারই নেই।আগে বিয়ের জন্য লাফাতাম।শালার,এখন হয়েও আনন্দ নেই।কেন যে প্রেমে পড়তে গেলাম।

এভাবে বিয়ের রাত এসে পড়ে।আমি বর সেজে যাই।সব নিয়মের পর কণের আসার পালা।
আমি তো জাস্ট মুখ গোমড়া করে বসে আছি।আশপাশ হই হুল্লর।আমার বন্ধুরাও বসে আছে।
-ওই ব্যাটা,তোর বিয়া আর তুই মন করে বসে আছিস কে।একটু হাস।
-হারামখোর,বিয়া করতে আসছি কোনো কমেডি শো দেখে হাসার জন্য আসি নাই।বাই দা ওয়ে আমি আছি চিন্তায় একটু পর বিয়ে হবে।আল্লাহই জানে আমার বউটা কেমন জল্লাদ।
-না না এমন নেগেটিভ কথা চিন্তা করাটা মোটেও শুভ নয়।অই দেখ কণে আসছে।মানে ভাবি আসছে।
আমি মুখ তোললাম, বউ আসছে।মাথায় ইয়া লম্বা ঘোমটা দেয়া।সবাই মিলে তাকে আমার পাশে বসালো।দেখলাম কাজি সাহেবও আসছেন।আমার কুরবানীটা ভালো মতই করবেন দেখতাসি।সবার কাছে কাজি লাগলেও আমার কাছে কসাই লাগছে।খোদাই জানে কত সিংগেল পোলাগো জল্লাদের হাতে তুলে দিসে।ইশশ!আমার পাশে এই মেয়ে না হয়ে নীলিমা হতো কি ভালোই না হত।আল্লাহ এমনটা করতা তাহলে কত ভালো হত
-মামনি ঘোমটা টা উঠাও।
সে শুধু মাথাটা ঝাকালো আর ঘোমটা নামালো।আমার বন্ধু বলল,আরে শালা নিচে না তাকায় বউটারে দেখ।
না চাইতেও তাকালাম।সামনে কণের দিকে তাকাতেই চোখগুলো আমার বড় বড় হয়ে গেলো।রুমাল দিয়ে মুখ রেখে ছিলাম,তা হাত থেকে নিচে পড়ে গেল।হাত টা দিয়ে চোখ কচলালাম।এটা কি কল্পনা না বাস্তব।কিছু খায়া আসলাম নাকি।না ত তেমন তো মনে হয় না।তার মানে আমার সামনে নীলিমাই বসে আছে।যে আমার হারামী ফ্রেন্ডসগুলার ভাবী।ওয়াট।

———-
-মামনী কবুল বল।
নীলিমার চোখের দিকে তাকাতেই ভয় লাগছে।সেও আমার মত অবাক তবে তার চেয়ে রাগটাই বেশি।
-কবুল (বেশ একটা রাগী কন্ঠে)
সবাই মাশাল্লাহ বলে উঠল।
-আবার বল
-কবুল
-আরেকবার
-একবার বললাম ইতো কানে কি কম শোনো?
এইকথা বলে নীলিমা নিজেই ধ্যাত বলে উঠে-কি উল্টাপাল্টা বলে ফেললাম।

—————

বিয়ের সব কাজ ঠিকমত শেষ হল।আর বাসর ঘরে ডুকলাম।ডুকতেই আমি দরজা লাগানোর আগেই নীলিমা দরজা লাগিয়ে বলে, কানে ধর।
-কি?
-যা বলছি তাই কর।
-মানে।
-করবি নাকি???!!!
-আচ্ছা আচ্ছা।
কানে ধরে দাড় করিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।

—–সো এই ছিলো আমার ফ্ল্যাশব্যাক এর কাহিনি।এখন বর্তমানে আসা যাক—-

দীর্ঘ ১৫ মিনিট ধরে দাড়িয়েই ছিলাম।হঠাৎ নীলিমা ডাক দিলো,এদিকে আয় আর কান ছাড়।
-হুম।
তার পাশে এসে বসলাম।
-কাছে আয়।
কাছে আসতেই ঠাস!!!!!
করে একটা ধাপ্পর মেরে দেয়।
-ওইদিন বাস থেকে এভাবে চলে গেছিলিস কেনো?
-ঘুমাচ্ছিলে তাই বিরক্ত করি নি।
-জানিস বাস থেকে নেমে তোকে কত খুজেছি।
-হুম।
-তোর এভাবে চলে যাওয়ায় তোকে একটু একটু করে মিস করতে শুরু করি।না চাইতেই একসময় ভালোবেসে ফেলি।তোকে ভালোবাসি বলে বিয়ের আগে বরের ছবিও দেখলাম না।কিন্তু ভাগ্যের কারনে তুই আমারই বর কাকতালীয় ভাবে।

আমি মাথা চুলকাতে থাকি।
-তো,রেগে আছো কেন?

নীলিমা আমার বুকে ধাপরে পড়ল।আমাকে জড়িয়ে ধরল।আর বুকে ঘুষি মারতে থাকে।
-পাগল তোকে ভালোবাসি।
-*****
-ভালোবাসবে দেবে তোমায় আমার মত করে।
-হুম।তবে কখনো তুই, কখনো তুমি আবার আপনি আমার দ্বারা হচ্ছে না।যেখোনো একটা ডাকো।
-আমার প্রপার্টি যেটা খুশি সেটা ডাকবো।
-প্রপার্টি, আমায় কবে
নীলিমা আমার ঠোটে হাত রাখল।
-শশ!কোনো কথা না।
নীলিমা বাতি বন্ধ করে দেয়।

————————————-(আমি কিছু দেখি নাই😑😯)
.
.
.
.
.
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here