খড়কুটোর বাসা পর্ব -১৪+১৫

#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৪
#Jhorna_Islam

ইরহান নিত্য প্রয়োজনীয় সংসারের জন্য যা যা লাগে বাজার থেকে সবই এনেছে।যুথি সব ঠিক ঠাক করে ঘরে গুছিয়ে রাখছে।

চাল,ডাল,তেল,লবন,মরিচ, হলুূদ আরো নানান জিনিস। রান্না করার জন্য লা’কড়িটাও এনেছে। এসব আনতে গিয়ে মনে হয় হাতে যতো টাকা ছিলো তার বেশির ভাগ ই খরচ হয়ে গেছে।

সবকিছু সুন্দর করে গোছগাছ করে রেখে তারপর দুপুর ও রাতের খাবার রান্না করার ব্যবস্থা করে যুথি।

মাটির চুলায় ইরহানের কিনে আনা লা’কড়ি দিয়ে প্রথমে ভাত বসায়। তারপর ভাতে জ্বাল দিতে থাকে আর বসে বসে তরকারি কাটতে থাকে।

ইরহান পাশেই নতুন কিনে আনা টিন দিয়ে সুন্দর করে কল পাড়ের সাইড ও টয়লেটের চারপাশে সুন্দর করে বেড়া লাগিয়ে দিচ্ছে। এসব কাজ ইরহানের জানা আছে সেজন্য আর লোক লাগেনি এসব করার জন্য। ইরহান নিজেই পারছে করতে।

যুথি রান্না করতে করতে ঠিক করে নিলো আর লা’কড়ি কিনে আনবে না। চারপাশে অনেক গাছ পালা রয়েছে। গাছের নিচে শুকনো পাতা রয়েছে এসব সুন্দর করে রান্না করার জন্য উপযোগী করে নিবে।গাছের ডাল পালা কেটে শুকিয়ে নিবে রান্না করার জন্য। তাতে অনেকটা খরচ বেচে যাবে।

যুথি মাঝে মাঝে রান্না করতে করতে ইরহানের দিকে তাকাচ্ছে। ইরহান ও কাজ করতে করতে যুথির দিকে তাকায়। মাঝে মাঝে দুইজনের ই চোখাচোখি হয়ে যায়। বিনিময়ে একে অপরকে হাসি উপহার দিতে ভুলে না।

প্রায় অনেক সময় পর যুথির রান্না শেষ হয়।সবকিছু গোছগাছ করে ঘরে নিয়ে রাখে।কলপাড় থেকে জগ ভরে পানি নিয়ে রাখে।

ইরহানের কাজ ও বেশি বাকি নেই। যুথি সব ঠিক করে রেখে ইরহান কে এসে ডাক দেয় আগে খেয়ে নিতে তারপর অন্য সব কাজ।

এই খেতে আসুন।রান্না শেষ সব গুছিয়ে রেখে এসেছি।

আরেকটু কাজ বাকি আছে যুথি শেষ করে নেই তারপর খাবো।

পরে করবেন রাখেন কাজ।আগে খেয়ে নিন সেই কখন খেয়েছেন।এসেই কাজে লেগে পরেছেন।রাখুন এসব এখন।

— তোমার খিদে পেলে তুমি খাও যুথি রানী।আমাকে একটু কাজ টা শেষ করে আসতে দাও।

— চুপচাপ খেতে আসেন বলছি।আর আপনাকে ছাড়া আমি মোটেও খাবো না। শাক,পাতা- মাছ,মাংস সে যাই খাই না কেনো দুইজনে এক সাথে খাবো।

— তাহলে একটু অপেক্ষা করো আসতেছি।

— কোনো অপেক্ষা করতে পারবো না।এখন আসতে বলতেছি আপনাকে।

— ঠিক আছে যুথি রানী আসছি।তুমি গিয়ে বাড়ো।

যুথি মাথা নাড়িয়ে ঘরে ঢুকে যায়। ইরহান কাজ রেখে হাত মুখ ধুয়ে ঘরে ঢুকে। যুথি একমনে খাবার সাজাচ্ছে। কাজ করার সময় যুথির ওড়না টা কোমড়ে গুজে নিলেও এখন তা নাই।স্বাভাবিক ভাবেই গলায় সুন্দর ভাবে রাখা।এখন অবশ্য মাথায় ঘুমটা নেই। পিছনের দুই পাশ দিয়ে ঝুলে আছে ওড়না টা। ইরহান গিয়ে ওড়নার এক পাশ হাতে নিয়ে নেয় মুখ মোছার জন্য। লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম। যুথি মাথা ঘুরিয়ে ইরহানের দিকে তাকায়। তারপর নিজেই সুন্দর করে ইরহানের মুখ মোছিয়ে দেওয়া।

ঘরের মেঝেতে একটা পাটি বিছিয়ে ইরহান কে ইশারা করে বসার জন্য। ইরহান ও বসে পরে। যুথি যত্ন করে ইরহানের প্লেটে খাবার তুলে দেয়। তারপর নিজেও ইরহানের পাশে বসে পরে খাবার খাওয়ার জন্য।

দুইজন পাশাপাশি বসে খাবার খাচ্ছে। ইরহান আজ ইলিশ মাছ এনেছে।যুথি সেটা খুব সুন্দর করে রান্না করেছে। ইরহান মাছের কাটা বেছে খেতে পারে না। তার কাছে বিরক্ত লাগে তাই শুধু তরকারি নিয়েছে মাছ নেয়নি।

যুথি ইরহানের দিকে একবার তো ইরহানের মুখের দিকে একবার তাকিয়ে কিছু বোঝার চেষ্টা করে। ঐদিন ও যখন মাছের লেজ দিয়েছিলো ইরহান খায়নি।যুথি খাইয়ে দিয়েছিলো বেছে। যুথির আর বুঝতে বাকি নেই লোকটা এখন মাছ বেছে খেতে পছন্দ করে না। তাও বোঝার জন্য বলল,, কি হলো আপনি মাছ নিচ্ছেন না কেনো?

খেতে ইচ্ছে করছে না। তুমি খাও।

যুথি বাটি থেকে আরেকটা মাছের টুকরো নিজের প্লেটে তুলে নেয়। তারপর মাছ বেছে বেছে ইরহানের প্লেটে দিতে থাকে ।

ইরহান যুথির কাজে অবাক হয়। তারপর বলে, তুমি মাছ বাছতে বাছতে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে তো খাবে কখন?

কিছুই হবে না এতো সময় ও লাগবে না। আপনি খান চুপচাপ।

নিজের ভালো মন্দ সুবিধা,অসুবিধা আমি যেমন আপনাকে বলবো।আপনি ও আমায় বলতে শিখুন। আমরা একে অপরের পরিপূরক।

জীবনে যতো বিপদ আপদ,সুখ-দুঃখ আছে সব একসাথে থেকে উপভোগ করবো ও সামলাবো।

এই যে আপনি বললেন আমাকে খেয়ে নিতে আপনি বাড়িতে থাকা সত্যেও এটা কখনো বলবেন না।কাজে বাইরে থাকলে অন্য হিসাব। কিন্তু বাড়িতে থাকলে সব সময় এক সাথে খাবার খাবো। কি খাবার সেটা বড় কথা না।

একসাথে খাবার খেলে,,,পান্তা ভাত আর লবন মরিচ ও মাছ,মাংসের চেয়ে সুস্বাদু মনে হবে। আমি আমার স্বামীর পাশে বসে দুমুঠো ভাত লবন দিয়ে খেতে পারলেও অনেক খুশি।

ইরহান খেতে খেতে যুথির দিকে অবাক চোখে তাকায়। তার বউটা কি সুন্দর কথা বলল।

— তুমি জানো যুথি আমি কতো ভাগ্যবান?

— যুথি প্রশ্নাত্তক দৃষ্টিতে তাকায় ইরহানের দিকে।

— ইরহান নিজের হাতের ভাতের লোকমা যুথির মুখে দিতে দিতে বলে,,,আল্লাহ আমাকে তোমার মতো বউ দিয়েছে। আমি জানি না আমি কি ভালো কাজ করেছিলাম যার জন্য তোমাকে পেয়েছি।

ইরহান আর যুথিকে আলাদা প্লেটে খাবার খেতে দিলই না।যুথির প্লেটের খাবার ও নিজের প্লেটে নিয়ে নেয়।তারপর যুথি কেও খাইয়ে দেয় নিজেও খায়।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে যুথি সব ঠিক ঠাক করে রাখে।আর ইরহান একটু বিশ্রাম নিয়ে বাকি কাজ টুকু করে ফেলে।

সন্ধায় যুথি ঘরে বসে বসে বকুল ফুলের মালা গাঁথথে থাকে।বিকেলে কুড়িয়ে এনেছে। ইরহান একটু বাইরে গেছে।

মালা গাঁথা শেষ হলে,, টিনের দেওয়ালে রাখা ছোট্ট একটা আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর চুল গুলো খোঁপা করে চুলে ফুলের মালাটা বাঁধার চেষ্টা করে।

অনেক বার চেষ্টা করার পর ও লাগাতে পারে না। বরং পিছনে হাত নিয়ে লাগানোর চেষ্টা করায় হাত ধরে যায়।মালাটা পরে যেতে নেয়।
ঠিক তখনই যুথির হাত থেকে কেউ মালা টা নিয়ে নেয়। যুথি ছোট্ট আয়নায় পিছনে দাড়িয়ে থাকা লোকটার প্রতিবিম্ব দেখতে পায়। এযে আর কেউ না তার বোকা পুরুষ।

ইরহান যত্ন করে যুথির খোপায় মালাটা পরিয়ে দেয়।

——————————–

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে একসাথে দু’জনে। এখন ও ইরহান যুথিকে খাইয়ে দিয়েছে।

বিছানা গুছিয়ে শুতে যাবে,,,এমন সময় ইরহান বলে উঠে,

“যুথি রানী চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি।সুন্দর জোছনা উঠেছে। ”

যুথি ইরহানের কথায় সায় জানায়। ঘরে তালা মেরে দুইজন ই জোছনা বিলাস করতে বেরিয়ে পরে।

রাতে তেমন কোনো মানুষ নেই।মাঝে মাঝে কয়েকজন লোকের চলাচল।

যুথি আর ইরহান হাত ধরে পাশাপাশি হাঁটছে। জোছনার আলোয় চারদিক আলোকিত। কি মনোরম শান্ত পরিবেশ।

এতোসময় হাত ধরে হাটলেও এখন যুথি দুই হাত দিয়ে ইরহানের হাতটা জড়িয়ে ধরে ইরহানের কাঁধের কাছে মাথা ঠেকিয়ে আস্তে আস্তে হাঁটছে।

ইরহান কতো শতো গল্প করছে।মাঝে মাঝে যুথিও বলছে।

নিজের একজন মানুষ দরকার যার কাঁধে মাথা রেখে হাতে হাত ধরে কতো শতো পথ পাড়ি দেওয়া যায় ক্লান্তি এসে গ্রা’স করতে পারে না। পথে শতো কাটা থাকলেও দুইজন মিলে সে পথ অতিক্রম করা যায়। মানুষ কখনোই একা বাস করতে পারে না।তার একটা নিজস্ব মানুষ দরকার।যে সুখে দুঃখে সব সময় ছায়ার মতো পাশে থাকবে।বিপদে ভরসা দিবে।

এখন প্রায় অনেক রাত।দোকান পাট সবই বন্ধ। দুইজন গল্প করতে করতে অনেক টা দূরে চলে আসে। সামনে একটা টং দোকান দেখতে পায়।দোকান টা এখনো খোলা।দুইজন বৃদ্ধ বসে চা খাচ্ছে আর গল্প করছে।

ইরহান যুথি কে বলে যুথি রানী চলো চা খেয়ে আসি।

এখন অনেক রাত হয়ে গেছে চলেন বাড়ি চলে যাই।চা খেতে হবে না।

তোমার সবকিছু তে শুধু না।চলো দেখবে মজাই আলাদা।

তারপর ইরহান দোকানি কে বলে চাচা দুই কাপ চা দিন তো।দোকানি এক পলক ইরহানের দিকে তাকিয়ে বসতে বলে চা বানাতে থাকে।

চা বানাতে বানাতে ঐ বৃদ্ধ লোক দুটো চলে গেছে। এখন শুধু ইরহান আর যুথি। ইরহানের হাতে লোকটা চায়ের কাপ দিতে দিতে বলে,,,, এতো বছর আমি দোকান চালাই কখনো কাউকে দেখি নাই তার বউ কে নিয়ে এসে চা খেতে।

আপনাদের দুইজন কে দেখে চোখটা জুড়িয়ে গেলো।দোয়া করি অনেক অনেক সুখি হোন।

ইরহান মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানায়।তারপর কিছু সময় দুইজন গল্প করতে করতে চা খায়। দোকানি কে চায়ের দাম দিয়ে বাড়ির পথে রওনা দেয়।

#চলবে,,,,,,,#খড়কুটোর_বাসা
#পর্বঃ১৫
#Jhorna_Islam

টুনা-টুনির সংসারে এর মধ্যে কেটে গেছে কয়েকটা দিন। দিন গুলো খুব ভালো কেটেছে। ইরহান যুথি কে দেখে হয়তো মানুষ বুঝতে পারবে বিলাসিতা ছাড়া ও মানুষ সুখে থাকতে পারে।

সুখে থাকার জন্য এতো বেশি বিলাসিতার প্রয়োজন নেই।অল্প তেও সুখে থাকা যায়।

তাদের ছোট্ট সংসারে এক মাসের মতো কেটে গেছে। যুথি যেমন ইরহান কে নিজের জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়ে প্রতিনিয়ত শুকরিয়া আদায় করে। ইরহান ও করে একে অপরের মোনাজাতে সব সময় থাকে দুইজন কিন্তু কেউ কাউকে মুখ ফোটে বলে না।

এর মধ্যে একদিন সকাল বেলা ইরহান দাঁত মাজতে মাজতে পুকুর পাড়ের পাশে এসে দেখতে পায় পুকুর পাড়ে অনেক জন লোক রয়েছে।

ইমন ইশান তাদের বউরা আর তাছলিমা বানু ও রয়েছে । প্রথমে কিছু বুঝতে না পারলেও পরে ব্যাপারটা বুঝতে সময় লাগে না।

পুকুরে জাল ফেলার আয়োজন চলছে।

ইরহান সামনে এগিয়ে যায়। তাছলিমা বানুর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।

পুকুরে জাল ফেলতেছেন মাছ ধরতে।অথচ আমাকে বলার প্রয়োজন মনে করেন নি?

তাছলিমা বানু হুট করে ইরহানের কথা শুনে হকচকায়।তারপর ইরহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে বলে,, এটা আবার তোকে কি বলবো?

— “কি বলবেন মানে? আপনি হয়তো ভুলে গেছেন এটা আমার টাকায় কিনা পুকুর না যে জা’লি’য়া’তি করে নিয়ে যাবেন। এটা আমার বাবার জায়গায় করা পুকুর। এই পুকুরে সমান ভাগ রয়েছে আমার।তো আমাকে বলবেন না তো কাকে বলবেন?”

–” এতো কথা বলে কি কোনো লাভ আছে? তোকে নিশ্চয়ই আমি মাছ না দিয়ে খেয়ে উঠতাম না।কয়েকটা মাছ ঠিকই দিতাম।”

— ” আপনার কাছে কয়েকটা মাছ কে চাইছে? এমন ভাবে বলছেন যেনো আমায় দান করছেন।”

বাবার জায়গায় সব সন্তানের সমান অধিকার রয়েছে। আর আপনি হয়তো ভুলে গেছেন বাবার সব সম্পত্তির অর্ধেক সে আমার নামে করে গেছে। আপনি কি ভেবেছেন ছোট বেলা বাবা আমায় দেওয়ায় সব আমি ভুলে গেছি? আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে আপনি ভুলে গেছেন। কিন্তু আমি ভুলিনি।

তাই কয়েকটা মাছ দেওয়ার কথা আসছে কোথা থেকে? ভাগ হবে।অর্ধেক অর্ধেক আপনার দুই ছেলে সব মিলিয়ে পাবে অর্ধেক। আর আমি একাই পাবো অর্ধেক।

কয়েকটা মাছ দেওয়ার কথা তাই ভুলে যান।

তারপর পুকুরে জাল ফেলার সময় ইরহান যুথি ঐখানেই ছিলো। বেশ বড় বড় মাছই হয়েছে। লেখিকা ঝর্ণা ইসলাম। জেলেরা জাল ফেলে মাছ ধরছে। পুকুরটা বেশ বড়। ইরহানদের বাড়ির পাশ দিয়ে দেওয়াল থাকলেও অন্য পাশ দিয়ে নেই।কারণ অনেকেই পুকুরে গোসল করে। নানান কাজে পুকুরের পানি নিয়ে ব্যবহার করে।

প্রায় অনেক লোকই দাড়িয়ে দাড়িয়ে মাছ ধরা দেখছে।
পুকুর থেকে প্রায় অনেক বড় একটা বোয়াল মাছ ধরেছে।

বোয়াল মাছ দেখে তাছলিমা বানু খুশিতে গদগদ। জেলে কে বলতেছে উনার পাশে এনে যেনো মাছ টা রাখে।তাছলিমা বানুর বোয়াল মাছ খুবই প্রিয়। মাছ টা নিজের পাশে নিয়ে বসে আছে।

পুকুরের মাছ ধরতে বেশি সময় লাগেনি।বেশ ভালোই মাছ উঠেছে।বন্যার পানিতে আসা মাছ।নানান ধরনের মাছ রয়েছে।

জেলেদের টাকা দিয়ে আনা হয়নি।তারা অর্ধাঅর্ধি মাছ নিবে। ভাগ করে জেলেদের ভাগের মাছ তারা নিয়ে চলে যায়।

এবার বাকি মাছ ভাগ করার পালা।যুথি আগেই দুইটা বড় পাতিল এনে রেখেছে কারণ মাছ আছে প্রচুর।

ইমনের সাথে ইরহান ও মাছ ভাগ করতে থাকে। সব গুলো মাছ দুই ভাগ করতে থাকে।

তাছলিমা বানু মাছ দুই ভাগ করা দেখে বলে,, ইরহান তুই কি শুরু করেছিস? এতো মাছ দিয়ে তুই কি করবি? দুইজন মানুষ দুইটা মাছ দিয়েই তো চারদিন চলে যাবে। তোর কি ফ্রিজ আছে যে তুই ফ্রিজে রেখে খাবি? এসব তো পচে যাবে।

ইরহান তাছলিমা বানুর দিকে তাকিয়ে বলে,, আমার ভাগের মাছ নিয়ে আমি কি করি না করি সেটা আপনাকে না দেখলেও চলবে। পচিয়ে ফেলি আর নাকি অন্য কিছু করি সেটা আমি বুঝবো আপনাকে বুঝতে হবে না।

তারপর পুকুরের মাছের পুরো অর্ধেক ভাগ ইরহান নিয়ে নেয়।

তাছলিমা বানু আর কথা বাড়ায় না। নিজের পাশে রাখা বোয়াল মাছ টা হাতে তুলে নিয়ে বাড়ির দিকে এগুতে নেয়।ঠিক তখনই যুথি দৌড়ে গিয়ে তাছলিমা বানুর পথ আটকে দাঁড়ায়।

— কি হলো মেয়ে আমার পথ আটকে দাঁড়ালে কেন? তাছলিমা বানু যুথি কে জিজ্ঞেস করে।

— আপনি মনে হয় কিছু একটা ভুলে গেছেন নকল শ্বাশুড়ি আম্মা।

— কিছু একটা ভুলে গেছি মানে? কি ভুলে গেছি আমি?

— যুথি চোখ দিয়ে তাছলিমা বানুর হাতে রাখা মাছের দিকে ইশারা করে বলে এটার কথা।

— তাছলিমা বানু হাতে রাখা মাছটা আরেকটু শক্ত করে ধরে।তারপর বলে এটা আমি নিবো এটার কথা ভুলে যাও।

— কেন ভুলে যাবো নকল শ্বাশুড়ি আম্মা? আপনার মাথায় হয়তো ঢুকেনি সব কিছুর ভাগ হবে অর্ধেক অর্ধেক।আপনার দুই ছেলে পাবে অর্ধেক।আর আমার স্বামী একাই পাবে অর্ধেক।আপনার কাছ থেকেই শিখছি কোনো কিছু তে ছাড় দেওয়া যাবে না। বড়দের থেকেই তো ছোটরা শিক্ষা গ্রহন করে।

তাই এই মাছ টা ও ছাড় পাবে না।যেহেতু এটাই এই পুকুরের সবচেয়ে বড় মাছ আর নাই।তাই এটা কে মাঝখান দিয়ে কাটুন।অর্ধেক আপনারা পাবেন অর্ধেক আমরা।

ইশান তার মায়ের পাশেই ছিলো।ইমন ভাগ করা মাছ বাড়ি নিয়ে গেছে।ইশান যুথির কথায় রা’গে ফুসে উঠে। মুখ খুলে বলতে নিবে তার আগেই ইরহানের কথা শুনে থেমে যায়।

খবরদার ইশান যুথিকে একটা কথা বললেও তোর আজ খবর আছে। ঐদিনের থাপ্পড় টা আশা করি ভুলে যাস নি।

বাহ্ ইরহান ভাই বাহ্ এখন একটা মাছে ও তোর ভাগ লাগবে? তুই জানিস মা বোয়াল মাছ কতোটা পছন্দ করে।

তো আমি কি করতে পারি? তোদের মা পছন্দ করে সেটা তোরা বুঝবি।আমার মা হলে আমার কথা ভাবতো আর আমি তার।আমার মা হলে পারলে আকাশের চাঁদ এনে দিতাম।কিন্তু এই মহিলা আমার কেউ না। না তোরা আমার কেউ। বলেই ইরহান মাছ নিয়ে যেতে যেতে যুথি কে উদ্দেশ্য করে বলে ঐ মাছের অর্ধেক নিয়ে আসার জন্য।

যুথি শয়তানি হাসি দিয়ে তাছলিমা বানুর দিকে তাকায়। তারপর মাছটা ছিনিয়ে নিয়ে দুই ভাগ করে লেজের অংশ টা তাছলিমা বানুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে মাথার অংশ টা নিজে নিয়ে এসে পরে।

তাছলিমা বানু নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে রয়।

————————————–

মাছ সব কল পাড়ে এনে হাত পা ধুয়ে নেয়।ইরহান যুথিকে বলে এতো মাছ তো খাওয়া সম্ভব নয়। ফ্রিজ হলে অন্য হিসাব।ইরহানের নানুর বাড়িও অনেক দূর।মামাদের সাথে তেমন একটা যোগাযোগ নেই।তাই কিছু মাছ নিজেদের জন্য রেখে।কিছু যুথির দাদির জন্য পাঠাতে আর পাড়া প্রতিবেশিদের দিয়ে দিতে বাকি গুলো।

এতোগুলা মাছ সবাই কে দিয়ে দিবো?

তো কি করবে?

কিছু মাছ পানিতে জিইয়ে রাখবো আমাদের জন্য। কিছু পাড়া প্রতিবেশীদের দিবো।দাদিকে বেশি দিতে হবে না। দাদি মাছ তেমন একটা খায় না।

আর বাকি গুলো কি করবে?

বাজারে বেঁচে দিবো।

মানে? কে বেচতে যাবে? আমি এসব পারি না। এক মিনিট তুমি বেচতে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করছো না তো? করে থাকলে একদম মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। আমি বেচে থাকতে জীবনে ও তোমাকে এসব করতে দিবো না।

আরে পা’গল নাকি? আমি যাবো না। আমাদের দিকে একটা কাকা বিক্রি করে মাছ কিনে। উনার নাম্বার আছে আমার কাছে আজতো হাট বসবে উনার কাছে বিক্রি করে দিবো।কিছু টাকা আসবে।

আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা বুঝো করো। কিন্তু ঐ বোয়াল মাছের অর্ধেক তুমি খেলে খাও নয়তো তোমার দাদিকে দিয়ে দিও। আমি খাবো না।

কেনো খাবেন না? বোয়াল মাছে তো তেমন কাটা নেই খেতে পারবেন।দরকার পরলে আমি বেছে খাওয়াবো।

যুথি বোঝার চেষ্টা করো আমার গলা দিয়ে ওটা নামবে না।

যুথি ইরহানের ব্যাপারটা বুঝতে পারে। যতোই কঠোরতা দেখাক এক সময় তো মায়ের আসনে বসিয়েছিলো ঐ মহিলা টা কে।

ঠিক আছে আপনি না খেলে আমিও খাবো না দাদিকেই দিয়ে দিবো।

ইরহান যুথির মাথায় হাত বুলিয়ে ঘরে ঢুকে যায়।

যুথি সব মাছ নিয়ে বসে।ঐ লোকটাকেও ফোন দেয় আসার জন্য। ঐ লোকটার কাছেই দাদির জন্য কিছু মাছ দিয়ে দিবে।

#চলবে,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here