#খেলাঘরে_তুমি_আমি
পর্ব—০৯
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।
আমি আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলাম না।সাহিত্যের গালে সজোরে এক চড় বসিয়ে দিলাম।সে ঘুরে চেয়ারের ওপরে গিয়ে পড়ে।আমি গিয়ে তার চুলের মুঠিটা চেপে ধরে বলতে লাগলাম।
—পারমিতাকে চিনিস না?আর কতো নাটক করবি আমার সাথে,বল আমার স্ত্রীকে কেনো পুড়িয়ে মে রে ছি স তুই,কী ক্ষতি করেছিলো ও তোদের?
—বললাম তো আমি কিচ্ছু করিনি,ছেড়ে দিন আমায়।
সে কাতরস্বরে বলতে লাগলো।
—তোকে ছেড়ে দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না।কি ভেবেছিলি ক্রাইম করে পার পেয়ে যাবি।একজন ডাক্তার হয়ে নিজের রোগীকে খু ন করেছিস,তোর তো জাহান্নামেও ঠাই হবে না।আজ তোর ডাক্তারি ঘোচাবো আমি।
—আমি কোনো ডাক্তার নই,বিশ্বাস করুন।দোয়া আপনি আমার সাথে এতো বড়ো চিটারি করলেন,আপনাকে বিশ্বাস করাই ভুল হয়েছে আমার।
—দেখুন আপনি মিথিলা রহমানকে পু ড়ি য়ে মেরেছেন এটা কিন্তু আমিও জানি।এখন মিথ্যে বলে কোনো লাভ নেই।বলুন কেনো মে রে ছে ন তাকে?আর আমি আপনাকে ছেড়ে দিলেও অর্ণব সাহেব কিন্তু ছাড়বেন না আপনাকে, আপনি ওনার স্ত্রীকে খু ন করেছেন।একজন রোগীর কাছে ডাক্তার ফেরেশতার মতো হয়,আপনি সেই ডাক্তারি পেশাকে অপমান করলেন।ছিহহহ!
—আমি কোনো ডাক্তার নই,
—আবার মিথ্যে বলছিস,আজ তো তোকে শে ষ করে ফেলবো আমি।মিথিলা ঘরের দরজাটা বন্ধ করো,আজ ওকে কেটে টুকরো টুকরো করে আমার পুকুরের মাছের খাবার বানাবো।
মিথিলা ঘরের দরজাটা বন্ধ করে।তারপর ও ওর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে একটা পিস্তল বের করে আমার হাতে দিলো।আমি সত্যিই অবাক না হয়ে পারলাম না।ও আগে থেকেই পিস্তল নিয়ে এসেছিলো নিজের সাথে করে!
পিস্তলটা হাতে নিয়ে আমি সাহিত্য চৌধুরীর মাথা বরাবর ধরলাম।পিস্তল দেখে ও বেশ ভয় পেয়ে যায়।
—এবার সত্যিটা বল,নয়তো তোর ভন্ডামি আমি চিরতরে ঘুচিয়ে দেবো।ভাবিস না তোকে দয়া দেখাবো,আমার সন্তানকে মা হারা করেছিস তুই।তোকে মা র তে আমার হাত দুবার কাঁপবে না।
—বলছি সব বলছি আমি।কিন্তু তার আগে এই পিস্তলটা সরান।এটা মাথার ওপরে থাকলে আমার মুখ থেকে কথা বের হবে না।
আমি পিস্তলটা ওর মাথার ওপর থেকে সরিয়ে নিলাম।লোকটা ভয়ে পুরো কাঠ হয়ে আছে।এভাবে ভয় পেতে আজ অবধি কাউকে দেখিনি আমি।একটা জলের বোতল এগিয়ে দিলাম ওর দিকে।
—নে জল খেয়ে নে,তারপর একে একে সব খুলে বল আমাদের।
জলটা না নিয়ে সে হা করে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে।
—আরে ভয় নেই,এতে বিষ মিশিয়ে দেই নি আমি।আর তোর থেকে সত্যিটা না জেনে তোকে মারবো এটা ভাবলি কিকরে,
—সত্যিটা বলার পরে আমায় ছেড়ে দেবেন।মা র বে ন না আমায়,
–ঠিক আছে তাই হবে।এবার বল।
লোকটা চেয়ারে বসে সমস্ত ঘটনা বলা শুরু করলো।আমি আর দোয়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার কথা শুনছি।
আজ থেকে তিন বছর আগে।পারমিতার সাথে সাহিত্য নামে একটা ছেলের রিলেশনশিপ ছিলো।ওরা দুজন একে অপরকে খুব ভালোবাসতো।পারমিতারা দু বোন।ও আর মিথিলা।সাহিত্যের প্রেম পারমিতার সাথে ছিলো ঠিক কিন্তু ও মিথিলাকেও খুব পছন্দ করতো।তবে ওদের ভেতরে কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক ছিলো না।সাহিত্য মিথিলাকে বড়ো বোনের মতোই মনে করতো।এই ব্যপারটা পারমিতা কখনোই মেনে নিতে পারেনি।ওর সবসময় মনে হতো সাহিত্য আর মিথিলা ওকে ঠকাচ্ছে।একদিন ওদের বাড়ির ছাদে মিথিলা আর সাহিত্য বসে আড্ডা দিচ্ছিলো।মিথিলা এসে সেখানে উপস্থিত হয়।নিজের বয়ফ্রেন্ড আর মিথিলাকে উদ্দেশ্য করে বলতে লাগলো।
—কিসের এতো আলাপ চলছে দুজনের ভেতরে..আর সাহিত্য,মনে হচ্ছে তোমার আমার থেকে আমার আপুকে একটু বেশিই পছন্দ।
—পছন্দ হবে না?এতো সুইট একটা মানুষকে পছন্দ না করে পারা যায়।আমার লাকটাই খারাপ তোমার মতো একটা ধানী লঙ্কা সাথে প্রেম করতে হচ্ছে।
—তাহলে ব্রেকাপ করে নাও না।আমি যখন এতোই খারাপ!
—পারমিতা এগুলো কি হচ্ছে,তুই কি আজীবন ছেলে মানুষই রয়ে যাবি।ও জাস্ট ফান করে কথাটা বলেছে তোকে।
মিথিলা ওর ছোটো বোনকে বলতে লাগলো।
—ফান করেছে বলেছে,তুই সেটাও বুঝে গিয়েছিস।আমি ওর গার্লফ্রেন্ড হয়ে বুঝলাম না তুই বুঝে গেলি।তার মানে তুই ওর মনের খবর রাখিস।
—সাহিত্য আমি বরং চলে যাই এখান থেকে।আর তুমি আমার কাছে আর এসো না প্লিজ,তোমার কারণে আমি অন্য কারোর কাছে ছোটো হতে চাই না।
(মিথিলা)
—না,তুমি কোথাও যাবে না।কেউ যদি মনের ভেতরে সন্দেহর পাহাড় নিয়ে বসে থাকে সেটা তার সমস্যা।আমাদের নয়।আর যদি যাওয়ার প্রয়োজন হয় সে যাক।
(সাহিত্য)
—হ্যাঁ।আমি আমি হচ্ছি এখন বিরিয়ানির মধ্যে এলাচ।তোমাদের দুজনের ভেতরে ইন্টারফেয়ার করে খুব ভুল করে ফেলেছি।ক্ষমা করে দাও আমায়।আর কখনো এই ভুল হবে না।
(পারমিতা)
—আর একটা বাজে কথা বললে কসিয়ে এক চড় মা র বো।নিজেকে বড়ো বোনকে সম্মান না দিতেই পারিস,অন্তত হবু বরকে সম্মান দিতে শেখ।
(মিথিলা)
—কে হবু বর,আর কে হবু বৌ?ওর ইচ্ছে আছে নাকি আমাকে বিয়ে করার।ওর তো তোকে বিয়ে করার সাধ জেগেছে।যা দুজনে বিয়ে করে লাইফ টাইম সুখী থাক।
সাহিত্য আর সংবরণ করতে পারলো না নিজেকে।উঠে গিয়ে পারমিতার গালে একটা চড় বসিয়ে দিলো।
—তখন থেকে তোমার অসভ্যতামী সহ্য করে যাচ্ছি,আর নয়।আর একটা বাজে কথা বললে শেষ করে ফেলবো তোমায় আমি।
সাহিত্যের কথা শুনে মিথিলা হাসতে লাগলো।
—আপু এই আপু।এই ছেলেটাকে তুই কোন মন্ত্রে বশ করলি বল তো।ও তোর জন্য আমাকে মে রে ফেলতে চাইছে।
(পারমিতা)
—মিথিলা এটা জাস্ট কথার কথা।তুই প্লিজ নিজের মাথাটা ঠান্ডা কর।আর সাহিত্য তোমার একদম ঠিক হয়নি পারমিতার ওপরে হাত তোলা।এটা করে তুমি আমায় ছোটো করলে।
—সরি মিথিলা,কিন্তু আমি…
—তুমি চলে যাও এখন।আমার পাগলী বোনের মাথাটা ঠান্ডা করে তোমার কাছে আমি নিজে পাঠিয়ে দেবো।
সেদিনের মতো সাহিত্য মিথিলাদের বাড়ি থেকে চলে গেলো।মিথিলা পারমিতাকে অনেক বুঝিয়ে বিকেলে সাহিত্যের সাথে দেখা করতে পাঠায়।মিথিলা কখনোই চায়নি ওর কারণে ওর ছোটোবোন আর তার হবু বরের সাথে কোনো অশান্তি বা ভুল বোঝাবুঝি হোক।তাই মিথিলা সবসময় নিজেকে সাহিত্যের থেকে দূরে সরিয়ে রাখতো।
–
–
–
–
এরপর একদিন মিথিলা অফিস থেকে বাসায় ফিরছিলো।পথে সাহিত্যের সাথে ওর দেখা হয়।তখন রাত প্রায় আটটা।মিথিলাকে দেখে সাহিত্য ওর গাড়ি থামায়।
—একি মিথিলা তুমি,বাসায় যাচ্ছো বুঝি?
—হ্যাঁ,এইসময়ে আর কোথায় যাবো!
–আমার গাড়িতে ওঠো না।পৌঁছে দিচ্ছি তোমায়,
—না থাক।আমি একাই যেতে পারবো,তুমি চলে যাও।
—হুমমম,বুঝতে পেরেছি।পারমিতার ভয়ে এগুলো বলছো।আমি বলছি তোমায় ও কিচ্ছু জানতে পারবে না।আমি তোমায় বাড়ির গলির সামনে ছেড়ে দেবো।
রাতের বেলা মিথিলার সত্যিই সাহায্যের প্রয়োজন ছিলো।তাই ও আর না করলো না।এরপর পথিমধ্যে ওদের সাথে যা ঘটে দু’জন কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি।
একদল গুন্ডা মিথিলা আর সাহিত্যকে অ্যাটাক করে।মিথিলা নিজের জীবন বাঁচিয়ে কোনক্রমে পালিয়ে আসে,আর পথে ছেড়ে আসে ওর বোনের হবু বর সাহিত্যের ডেডবডি।সাহিত্যের মৃত্যুর খবর পারমিতাকে পাগলপ্রায় করে তোলে।ও কিছুতেই ওর মৃত্যুটা মেনে নিতে পারছিলো না।সাহিত্যের মৃত্যুর জন্য পারমিতা মিথিলাকে দায়ী করতে থাকে।ওর ধারণা ছিলো সাহিত্যের মৃত্যুর জন্য মিথিলা দায়ী।বোনের সাথে ঈর্ষাবশত মিথিলাই ওর হবু বরকে খু ন করিয়েছে।সেই থেকে ও প্রতিজ্ঞা মিথিলা আর ও সংসারকে পুড়িয়ে ছাই করে দেবে।আর সবই উদ্দেশ্যে ও আবার আমার সাথে রিলেশন করে,যাতে আমার সাহায্য নিয়ে বড়ো বোনের জীবনটা নষ্ট করে দিতে পারে।
—এই দাঁড়া,এক মিনিট তুই বললি।সাহিত্য মা রা গেছে।তাহলে এখন কি আমরা সাহিত্যের ভূতের সাথে কথা বলছি?
আমি সাহিত্যকে প্রশ্ন করি।
—আমি সাহিত্য নই,সাহিত্যের ছোটো ভাই আদিত্য।আমার ভাই ডাক্তার ছিলো ঠিক,আমি নই।ও মারা যাওয়ার পরে আমি খবরটা চাপা রেখে ওর জায়গায় ডাক্তার হয়ে বসলাম।দুজনের চেহারায় মিল থাকার কারণে কেউ কিছু বুঝতে পারেনি।
—সে না হয় বুঝলাম।কিন্তু সাহিত্যকে কে মে রে ছে?যার কারণে পারমিতা ওর বোনকে ভূল বুঝেছিলো?আর সেই ভূল বোঝাবুঝির সূত্র ধরেই মিথিলা নিজের প্রানটা হারালো।
—সাহিত্যকে সেদিন গুন্ডা দিয়ে আমি খু ন করিয়েছিলাম!আর কেউ নয়…আমি নিজে আমার ভাইকে মে রে ছি।আমার পথের কাঁটা দূর করেছি।
আদিত্যর কথা শুনে আমি আর দোয়া দুজনেই চমকে উঠলাম।
চলবে……