গোধুলীর শেষ প্রহরে পর্ব -০২+৩

#গোধুলীর_শেষ_প্রহরে
#পর্বঃ২_৩
#রাউফুন (ছদ্মনাম)

“উফফ হিয়া জাষ্ট শাট-আপ হা!এসব ন্যাকা কান্না একদম আমার সামনে দেখাবা নাহ।গো টু হোম এন্ড স্লিপ!দেখবে এসব চিন্তা আর মাথায় আসছে না কেমন!”

হিয়ার চোখ দিয়ে বিন্দু বিন্দু জলরাশি গড়িয়ে পরছে।ও ভেবেছিলো আস্তে আস্তে শৈবাল তাদের রিলেশনশিপ টা সিরিয়াসলি নেবে।কারণ শৈবাল এর আগে কখনোই কোনো মেয়ের সাথে এক মাসের বেশি রিলেশন রাখেনি।সেই দিক থেকে হিয়ার সঙ্গে রিলেশনশিপের প্রায় আড়াই মাস।তাই হিয়া ধরেই নিয়েছিলো যে শৈবাল হইতো তাকে নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবছে।কিন্তু সে তো একদমই ভুল!

শৈবাল ধৈর্য হারা হয়ে বলে উঠলো,
“তোমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছি তবে আবার হ্যাঁ?রিলেশন শুরুর আগের শর্ত নিশ্চয়ই তুমি ভুলে যাওনি?আমরা দুজনেই এই শর্তে উপনীত হয়েছিলাম যে পরবর্তীতে আমরা দুজনেই এই সম্পর্ক টা নিয়ে কেউ কারোর উপর কোনো রকম দাবী রাখবো না।যখন ইচ্ছে হবে রিলেশন টা ব্রেক করবো আমরা।এখন তবে এসব লেইম কথা বার্তা আসছে কোত্থেকে?”

হিয়া কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে,

“প্লিজ আমাকে ফিরিয়ে দিওনা।প্লিজ শৈবাল প্লিজ!প্লিজ একটু বুঝার চেষ্টা করো আমাকে!”

শৈবাল কপালে হাত ঘসতে ঘসতে মুখ থেকে বিরক্তিকর শব্দ বের করলো।সে শ্লেষাত্মক আওয়াজে বলে,

“কি বুঝবো হ্যাঁ কি বুঝবো?আর কি শুরু করলে একটু পর পর প্লিজ প্লিজ করছো!প্লিজ বললেই আমি তোমাকে এক্সেপ্ট করে নিবো নাকি।আমি বার বার বলছি এসব ভুলে যাও।কারণ আমাকে দিয়ে এসব প্রে’ম ভালো’বাসা হবেনা।সো এতো ঘ্যানোর ঘ্যানোর করে কোনো লাভ হবেনা।প্লিজ আমার সামনে থেকে সরে যাও এতে তোমারই ভালো হবে।”

শৈবালের এমন কথায় হিয়া শব্দ করে কেঁদে দিলো।হিয়া কেঁদেই চলছে অনবরত। থামার নাম নেই।শৈবালের এবার বিরক্তবোধ বেড়ে চারগুণ হয়ে গেছে।সে ক্ষুব্ধ হয়ে টেবিলে হাত দিয়ে জোরে বারি দিয়ে বলে উঠলো,

“ওকে ফাইন!তুমিই থাকো।সারাদিন এখানেই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁন্না করো!তবুও যদি আল্লাহ একটু রহম করে আর একটু হলেও বুঝতে পারো আমার কথা।আর হ্যাঁ যাতে তোমার কান্নার ডিস্টার্ব না হয় তার জন্য আমিই চলে যাচ্ছি।কাঁদো বেশি করে কাঁদো।”

বলেই শৈবাল ওর ফ্রেন্ডসার্কেল সাথে চলে যেতে ধরলো।শৈবাল কে চলে যেতে দেখে হিয়া নিজের চোখের পানি মুছলো।দৌঁড়ে শৈবালের পিছন পিছন গিয়ে শৈবালের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।শৈবালের মুখোমুখি হয়ে ওর কলারটা চেপে ধরে ধা’রা’লো কন্ঠে বললো,

“নিজের লেভেল নিয়ে খুব অহংকার তোমার তাইনা?দেখে নিও একদিন এমন দিন আসবে তুমি তোমার লাইফে যতগুলো মেয়েকে কাঁদিয়েছো না?সবার কাঁন্নার সমান তোমাকে নিজের একা কাঁদতে হবে।আজ আমাকে যতটা অসহায়ের মুখে ফেলেছো না সেদিন তোমার নিজেকে প্রচন্ড অসহায় মনে হবে।এমন কেউ আসবে যে তোমার জীবনটা বিষাক্তময় বানিয়ে তুলবে।তুমি একটু ভালোবাসা পাওয়ার জন্য অসহায়ের মতো ওর পায়ের কাছে পড়ে থাকবে কিন্তু সে তোমাকে পাত্তাও দিবেনা।জাষ্ট মিলিয়ে নিও।”

শৈবাল ভেবেছিলো হিয়াকে বন্ধু করে রেখে দেবে।মেয়েটা ওর খুব খেয়াল রেখেছে শুরু থেকেই।এটা সে অস্বীকার করতে পারবে না।সে জন্য না চাইতেও ওঁর সঙ্গে আড়াই মাসের মতো রিলেশনশিপ টা টিকিয়ে রেখেছিলো।কিন্তু ইদানীং বড্ড বেশিই প্যারা দিচ্ছে হিয়া।বিয়ে করতে চাইছে তাকে।কিন্তু এই অব্দি সে কখনোই ভাবে নি।হিয়া মেয়েটা যথেষ্ট সুন্দরী।ওঁকে যে কেউ নিজের লাইফলাইন হিসেবে পেতে চাইবে কিন্তু শৈবালের কখনো নিজের লাইফ রুলস ডিসমিস করে না।কখনোই না।এই অধিকার সে নিজেও নিজেকে দেইনি।আর সেখানে এই মেয়েটা তো শুধুই কয়েক দিনের প্রয়োজন ছিলো তার।শৈবাল হিয়ার হাতটা নিজের কলার থেকে ছাড়িয়ে নিলো।নিজের কলারটা হাত দিয়ে ঝেড়ে ঠিক করতে করতে বলল,

“তার জন্য তো তুমি আছো তাই না?একটু আগে না বললে আমাকে ভালোবাসো। আমার জন্য সব করতে পারবে।তখন না হয় নিজেকে উজার করে দিয়ে আমার কাছে চলে আসবে।আমার মনের ব্য’থা লাঘব করতে।ওক্কে হিয়া ডা’র্লিং।বাই বে’বস টাহ্!”

কথা শেষ হতেই শৈবাল সহ ওর বন্ধু রা হেসে উঠলো।হিয়ার কাছে শৈবালের কথা গুলো বড্ড রম্য শুনালো।এতে হিয়া যেনো আরো অপমানিত হলো।জীবনে কোনো দিনো এতো অপমান সে কখনোই কারোর কাছে হয়নি।হিয়া উলটোপথে হেঁটে চলে গেলো।কান্নারা দলা পাকিয়ে আসছে তার বার বার!

শৈবাল আর ওর বন্ধুরা মিলে সোজা ক্লাসের দিকে চলে এলো।ওর বন্ধুদের নাম, শিশির, আশিক,মোর্শেদ,শাহেদ,স্বপন,রিমন।এরা সবাই শৈবালের কথায় উঠে বসে।ওঁদের দলের লীডার শৈবাল এই কারণেই, তার যে অনেক টাকা আছে।যখন যেভাবে পাচ্ছে ওর কাছে থেকে টাকা নিয়ে ওঁরা খরচ করে।শৈবাল ও বন্ধুদের দু হাত ভরিয়ে দেই।ওর সঙ্গ কেউই ছাড়তে রাজি নয়।এমন সু্যোগ সুবিধা পেলে কেউই বা ছাড়বে এমন মাল’দার লোক কে।শৈবালের বেস্টফ্রেন্ড শিশির।

ওরা প্রত্যেকে ক্লাসে ঢুকে গেলো।ক্লাসরুমে অধ্যাপক ক্লাস করাচ্ছিলেন।সেখানে অধ্যাপকের পারমিশন না নিয়েই ওরা সোজা ক্লাসে ঢুকে পরাই স্যার বিরক্ত হলেন।ওরা লাস্ট বেঞ্চে বসে মেয়েদের বিরক্ত করছে খুব বিদঘুটে ভাবে।শৈবাল একটা বেঞ্চে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।

অধ্যাপক তীব্র ঝাপটা মেরে কঠিন মুখে বলে উঠলেন,

“কি হচ্ছে টা কি?এটা ক্লাস।আর ক্লাস করার হলে করো নয়তো তোমরা ক্লাস থেকে বেরিয়ে যাও।এভাবে বাকিদের ডিস্টার্ব কেন করছো?”

অধ্যাপকের কথা শুনে শৈবালের বন্ধুরা ক্ষেপে গেলো।শৈবালের বন্ধু রিমন বলে উঠলো,

“কি বললেন স্যার আপনি?আমাদের ক্লাস থেকে বেরিয়ে যেতে হবে?”

পাশ থেকে শিশির হেসে বলল, “আমরা বেরিয়ে গেলে আপনি এই ভার্সিটিতে থাকতে পারবেন তো স্যার?”

অধ্যাপক আবদুল্লাহ স্যার বিরক্ত হয়ে মার্কার টা ছুড়ে ফেললেন।

“বড্ড উদ্ধৃত,উদ্ধত স্বভাবের তোমরা।তোমাদের বাবা মা তোমাদের ঠিক ঠাক শিক্ষা দেইনি নাকি?স্যার দের সঙ্গে কি রকম আচরণ করতে হয় সেই সহবত ভুলে গেছো বে’য়া’দব ছেলেরা।কাদের কি বলছি এদের সাথে কথা বলাই বেকার মনে হচ্ছে।”

অধ্যাপক স্যার আর ক্লাস করালেন না।তিনি বেরিয়ে গেলেন ক্লাস রুম থেকে।

স্যার বেরিয়ে যেতেই আবার শৈবালের বন্ধুরা মিলে ক্লাসের মেয়েদের ডিস্টার্ব করতে শুরু করলো।কেউ মেয়েদের চু’ল ধ’রে টা’ন’ছে।কেউ মেয়েদের হাত ধরে টা’ন’ছে।আবার কেউ মেয়েদের গা’য়ে হাত দিচ্ছে।তাও কেউ কিচ্ছু বলতে পারছেনা।এ কলেজের প্রিন্সিপাল, অধ্যাপক সহ প্রত্যেকটা ছাত্র-ছাত্রী কেউই ওদের কিছু বলতে পারেনা।ওদের বিরুদ্ধে যদি কেউ কোনো কমপ্লেইন করে তাহলে সে আর থাকতে পারবেনা।কারণ শৈবালের বাবার সাথে সব বড়ো বড়ো লোকের পরিচয় আছে।সে কারণে ওঁরা যায়ই করুক না কেন কেউই সেটা নিয়ে কিছু বলতে পারে না।আর ওঁদের সাথে কেউ যদি বারাবাড়ি করে তাহলে ওঁদের মে’রে হাত পা ভে”ঙে দেই সে।নইলে টিচার আর স্টুডেন্টের জন্য এ ভার্সিটি থেকে বের করার বরখাস্ত চলে আসবে।অনেকেই মনে মনে চাই শৈবালকে রাস্ট্রিকেট করা হোক।ওর মতো ন’চ্ছার ছেলের হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই মরিয়া হয়ে উঠেছে।শান্তিপুর্ণ ভাবে বাঁচতে চাই তারা।শৈবাল ভার্সিটি থেকে গেলে আর তার জ্বালাতন সহ্য করতে হবে না।কবে তার এই জ্বালাতন বন্ধ হবে?কবে নিষ্কৃতি পাবে তার থেকে অসহায় মেয়েরা?কেউ কি এমন নেই যে তাকে শুধরে দেবে।ভালো পথের সন্ধান দেবে তাকে।নাকি এভাবেই তার জু’লু’ম সহ্য করতে হবে?

শৈবাল কলেজ শেষ করে বাড়ি এসে সোজা কাপড় না চেঞ্জ করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।ফোনটা হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলো একটু। যদি আবার নতুন কোনো মু’র’গী থুরি মেয়ে পটাতে পারে।শৈবালের ফেসবুকে অনেক মেয়ে ফ্রেন্ড আছে।যাদের সাথে ও ফ্লার্টিং করে সে।আজও ফোনটা হাতে নিয়ে নতুন মেয়ে খুঁজছে।যাকে আবার নিজের জালে ফাঁসানো যায়।এডফ্রেন্ড লিস্টে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ একটা খুব সুন্দর মেয়ে নজরে এলো।দেখতে খুবই সুন্দর একদম পুরো এঞ্জেল।সে আর দেরি করলোনা।সঙ্গে সঙ্গে ফ্রেন্ড রিকুয়েষ্ট পাঠিয়ে দিলো।এরপর উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো।শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে আবার ফোনটা হতে নিতেই দেখলো একটা নোটিফিকেশন।একটু আগের পাঠানো আইডির মালিক রিকুয়েষ্ট টি এক্সেপ্টে করেছে।আইডি নাম ইশরা ইনাম মুঁহু।নাম টা সহ মেয়েটার চেহারাটা বেশ আকর্ষণ করলো তাকে।শৈবালের মুখে একটা কুটিল হাসি ফুটে উঠলো।আর একটা নতুন মেয়ে পেয়ে গেলো যে ফাঁসানোর জন্য।শৈবাল মেয়েটাকে মেসেজ করলো, “হাই!”

মেয়েটা কিছুক্ষন পর রিপ্লাই দিলো, “হ্যালো!”

এরপর বিভিন্ন কথোপকথন শুরু হলো দুজনের।শৈবাল মেয়েটাকে পটা’নোর জন্য যতোভাবে ইমপ্রেস করার দরকার করতে শুরু করলো।শি’কার ধরার আগে শি’কারের সাথে এই যে লু’কো’চু’রি যার মাঝে অদ্ভুত এক নেশা কাজ করে তার।যা ওকে পৈশাচিক আনন্দ দেই।

চারপাশে সুনশান নিরবতা মাঝে মাঝে ভেঙে দিয়ে যাচ্ছে যানবাহনের মৃদু বা তীব্র গুঞ্জনে।আজকাল সবাই এই গুঞ্জন শুনেই অভ্যস্ত।কলেজের অডিটোরিয়াম রুমের ওই পাশটাই বিদঘুটে সব মিউজিক বাজানোর জিনিসপত্র এনে জড়ো করা হচ্ছে।ডিজে পার্টি হবে নাকি আজ সন্ধ্যায়।ভার্সিটিতে একটা মিনি পার্টির আয়োজন করে শৈবালের ফ্রেন্ডসরা মিলে। সেখানে ওদের ক্লাসের সব স্টুডেন্টসদের উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক।যদি কেউ না আসে তাহলে তাদের ভয়ং’কর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।তাই এই পার্টিতে শৈবালের ডিপার্টমেন্টের সকল ছেলেমেয়ে উপস্থিত আছে।একটু পর ডিজে নাইট পার্টি শুরু হলো।ছেলেরা দৌঁড়ে মিউজিকের সাইডে চলে গেলো।সবাই মেতে উঠবে উৎসবে।শৈবাল ও ড্রিং’ক করছে আর গানের তালে তালে নাচছে।

চারিদিকে উৎসনে মুখোরিত হলেও একজনের মনে জ্বলছে প্রতিশোধের আ’গু’ন’।সে ঠোঁট এলিয়ে হেসে আওড়ালো,

“আজকে যত খুশি আনন্দ করার করে নাও মিস্টার শাহরিয়ার শৈবাল।কে বলতে পারে আজকের পর থেকে আনন্দ নামক বস্তু টা আস্তে আস্তে তোমার জীবন থেকে মুছে গেলো।কাল থেকে শুরু হবে তোমার জীবনের তিক্ততাময় দিনের সূচনা।যার শেষ পরিনতি হবে খুবই ভয়া’বহ।তৈরি থাকো মিস্টার শাহরিয়ার শৈবাল।প্রতিটি মুহুর্ত হবে তোমার জন্য দুর্বীষহ,অভিশপ্ত,অহিংস।রিয়েলি আই প্রমিস ইউ!”

#চলবে

এখনো নায়ক নায়িকার এন্ট্রি হয়নি।আমি চেয়েছিলাম গল্পটা ভিন্ন ভাবে শুরু করতে।শৈবাল কে আগে আনার ও অবশ্যই কারণ আছে।

নেক্সট পার্টে নায়ক নায়িকার এন্ট্রি হবে।যারা ভাবছেন আমি মেয়েদের খুব জ’ঘ’ন্য ভাবে নিচে নামাচ্ছি তাদের বলছি আমি কাউকেই ছোট করে লিখিনি।গল্পের স্বার্থে অনেক কিছুই উল্লেখ কর‍তে হয়।তাই বলছি এটাকে শুধুই গল্প হিসেবে নেওয়ার অনুরোধ রইলো।

ভালোবাসা নিয়েন।আজকে রেসপন্স করবেন সবাই অনুরোধ রইলো। ❤️❤️❤️

#গোধুলীর_শেষ_প্রহরে
#পর্বঃ৩
#রাউফুন (ছদ্মনাম)

“শুনেছিস শৈবাল আজকে নাকি নতুন শিক্ষিকা জয়েন করবে ভার্সিটিতে!”

শিশিরের কথায় শৈবাল ওর দিকে তাকালো।তার দৃষ্টি প্রখর।ভাবলেশহীন তার চাল চলন।বাইকের সাথে আরও আয়েসি ভঙ্গিতে দাঁড়ালো সে।হাতে থাকা সিগারেটে শেষ টান দিলো মনের সুখে।এরপর সিগারেটের ধোঁয়া ফু দিয়ে উড়িয়ে দিলো শুন্যে।শিশির ওর হাবভাবে কিছুই বুঝলো না।শৈবাল একটু থেমে ঠোঁট গোল করে অনুদ্ধত কন্ঠে বললো,

“তো আমি কি করবো।শিক্ষিকা আসবে তাতে আমার কি?এই ভার্সিটিতে কি মেডামদের জয়েনিং নিষেধ নাকি।”

শিশির অবাক হলো আজকে শৈবালের কথা শুনে।নতুন টিচার জয়েনিং করলে তার সাথে আলাপ চারিতা করে শৈবাল।তাকে শৈবালের পাউয়ার সম্পর্কে অবহিত করে।যাতে পরবর্তীতে ওর চলাচলের সময় বাধা সৃষ্টি না হয়।যদিও শৈবাল গত তিন বছরে অনেক কিছু করেছে।শিক্ষক শিক্ষিকা সহ ছাত্র-ছাত্রী দের বুঝিয়ে দেই ওর কথা শুনতে হবে।শিশির অবাক চাহনি নিক্ষেপ করে বলে,

“আরে কিছু না মানে?তুই কিছু করবি না আজকে?”

“কি করবো?তাছাড়া আজকে আমার এসব করার দিন নয়।আজকের দিন টা আমার জন্য খুব স্পেশাল!আমার প্রিয় একজন আসছে আজকে।আমাকে যেতে হবে।তুই সামলে নিস এইদিক টা।আসছি।”

আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে শৈবাল চলে গেলো।শৈবালের চলে যাওয়া দেখে শিশির হতবুদ্ধির মতো দাঁড়িয়ে রইলো।পরক্ষণেই মনে পরলো ওর স্পেশাল মানুষ টি কে?শিশির হালকা ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।এই একটা মানুষের জন্য শৈবাল সব কিছু ত্যাগ কর‍তে পারে।দুনিয়ার সবার কথা না রাখলেও একটা মানুষের কথা শৈবাল কখনোই ফেলেনি।ওর লাইফ লাইন সে মানুষ টা শৈবাল সে সম্পর্কে খুব ভালো ভাবেই অবগত।ওর এতো ক্ষমতাও তার কাছে তুচ্ছ!

“কিরে মুহু!এতো বেলা হয়ে গেছে তুই এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছিস।তোর বুবু কিন্তু দেখে গেছে।ভার্সিটির ক্লাস মিস করলে কপালে শনি আছে।”

মায়ের কথা শুনে মুহু নড়েচড়ে কানে বালিশ চেপে উল্টো হয়ে ঘুমোলো।তার অভ্যাস এটা।ঘুমের মধ্যে তাকে যদি কেউ তুলেও নিয়ে যায় সে কিছুই বলতে পারবে না।এমন ঘুম কাতুরে সে।তার আরও একটা ব’দ অভ্যাস রয়েছে।সে যেকোনো জায়গায় দশ মিনিট পরে পৌঁছবে।এর জন্য তাকে স্কুল লাইফে টিচার থেকে শুরু করে বুবুর কাছে কম করে হলেও হাজার বার ব’কু’নি খেতে হয়েছে।তবুও সে তার চির চেনা অভ্যাস বদলাতে সক্ষম হয়নি।প্রিতির ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেলো।সেই কখন থেকে ডাকছেন তিনি মেয়েকে।মেয়ের উঠার নাম নেই।তিনি জগ থেকে পানি নিয়ে মুহুর মুখে মারলেন।মুহু ধড়ফড়িয়ে উঠবে ভেবেছিলেন তিনি।উহু এই মেয়ে তখনো উঠেনি।বালিশ দিয়ে মুখ মুছে আবার উবু হয়ে শুয়ে পরলো।আর পেরে উঠলেন না প্রিতি।কা’ন টে’নে ধরেন এবার মেয়ের দাঁতে দাঁত চেপে বলেন,

”ওই মেয়ে এক্ষুনি উঠ বলছি।অলসের দুই নাম্বার চাচি আম্মা।নয় টা বেজে গেলো।তোর বুবু বেরিয়ে গেছে আর তুই এখনো উঠতে পারলি না।বুবুর হাতে বে’তে’র বা’রি না খেতে চাইলে উঠে পর এক্ষুনি!”

এবার মুহু ঝাপিয়ে উঠে পরলো।বুবুর মা’রে’র চেয়ে আর ভয়ংকর কিছুই নেই তার জীবনে।চোখ কচলালো সে দুই হাতে।ঘুমু ঘুমু গলায় বললো,

“কিহ নয় টা বেজে গেছে।ওওওও মা তুমি আমাকে আরেকটু আগে ডাকতে পারলে না।”

“সেই কখন থেকে ডাকছি উঠার নাম নেই।পানি ছেটালাম তবুও উঠিস নি।আর এখন বলছিস আগে ডাকতে পারিনি।আচ্ছা জলদি উঠ এবার।আমি ব্রেকফাস্ট রেডি করেই রেখেছি।খেয়ে ভার্সিটি চলে যাস।আমি হসপিটালে গেলাম।এমারজেন্সি আছে আজ।”

“ওকে আম্মু তুমি সাবধানে যাও। আমি দশ মিনিট আগে ঠিক পৌঁছে যাবো ভার্সিটিতে।”

“দশ মিনিট আগে মানে যে দশ মিনিট পরে সে কি আর আমি জানি না।এতো জেদ করে ট্রান্সফার হয়ে এই ভার্সিটিতে এলি তোর বুবুর জন্য।বুবুর ফার্স্ট জয়েনিং আজ ভার্সিটিতে আর তুই তাকে একটা উইশ ও করিস নি।”

“স্যরি গো আম্মু।”

প্রিতি হেসে ফেললেন এবার।মেয়ের ইনোসেন্ট মুখ দেখে মন টা নরম হলো।তিনি কিছুতেই দুই মেয়ের উপর রেগে থাকতে পারেন না।তিনি নরম গলায় বলেন,

”আমাকে নয় বুবু কে বলিস স্যরি।আসছি।”

প্রিতি একজন গায়িনী বিশেষজ্ঞ।আর উনার স্বামী সালমান হোসেন ব্যবসায়ী।এই ছোট্ট পরিবার কে আরও প্রানবন্ত করে তুলেছে তাদের দুই মেয়ে।

বড় মেয়ে ইকরা কুহুলতা।ফর্সা, সুন্দরী, এক রাশ বাদামী চুল।চুলে কালার করা তার একটা শখের মধ্যেই পরে।মেদ বিহিন তন্বঙ্গী চেহারার অধিকারীনি।আজ তার একটা ভার্সিটির প্রথম জয়েনিং।ইংরেজি শিক্ষিকা।পিএইচডি করছে এখন সে।ছোট বেলা থেকেই কুহু পড়াশোনার বাইরে তেমন কোনো কিছুতেই মনোযোগ ছিলো না।বাইরের জগতের দিকে তার খুবই কম মনোযোগ ছিলো।ওর ধ্যান জ্ঞান সাধনা সবই ইংরেজি বইয়ের পাতায়।স্বভাব গত ভাবেও খুব সিরিয়াস মেয়ে কুহু।তাই অনেক ছেলেই ওর রুপে মুগ্ধ হলেও কেউ সাহস করেনি প্রপোজাল দেওয়ার।ওর ধারে কাছেও কেউ ঘেসতে পারেনি কেউ।হাসি ঠাট্টা বন্ধু বান্ধব ওর কোনো কালেই এসব পছন্দ ছিলো না।আজও নেই।স্বল্প বক্তা কুহুকে তাই বাড়ির সবাই সমীহ করে চলে।

আর ছোট মেয়ে ইশরা ইনাম মুহুলতা।তাকে মুহু বলেই ডাকা হয়।স্বভাবে ঠিক কুহুর বিপরীতে।যদিও প্রখর বুদ্ধি সম্পন্না।কিন্তু পড়াশোনাই এক নম্বরের ফাঁকি বাজ মেয়ে মুহু।যতটুকু পড়ে সব টাই বুবুর চাপে।

কলেজে তার অজস্র বন্ধু বান্ধব ছিলো।কিন্তু এখন সে অন্য ভার্সিটিতে ট্রান্সফার হলো।বুবু তাকে ছাড় দিতে চাই না বলেই ট্রান্সফার করিয়ে সে যেখানে চাকরি পেয়েছে সেখানেই তাকেও ভর্তি করালো।বুবুকে ভীষণ ভয় পাই কিনা মুহু আর মেনেও চলে তার বুবুকে।কারণ সে জানে বুবু তাকে প্রচন্ড ভালোবাসে।সালমান হোসেন আর প্রিতি বেগমের বিয়ের ত্রিশ বছর হয়ে গেছে।যদিও উনাদের বিয়ে হয়েছিলো সম্বন্ধ করে।কিন্তু প্রেম তো বিয়ের পরেও হতে পারে।

মুহু অলস ভঙ্গিমায় উঠে ফ্রেশ হয়ে এলো।অফ হোয়াইট জামা পরলো সে।কালো উড়না জড়িয়ে নিলো গায়ে।সে কখনোই নিজেকে সাজাতে পছন্দ করে না।মুখে সামান্য ক্রীম ও লাগালো না সে।এতে তার বড্ড অলসতা।অলসতা যেনো ওর রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে।এরপর হালকা ব্রেকফাস্ট করে বেরিয়ে এলো বাড়ি থেকে।তার বাবা অফিসে চলে গেছেন আগেই।সে তার অতি প্রিয় সাইকেল টা নিয়ে বের হলো।গাড়িতে চলা ফেরা করা তার একদমই পছন্দ ছিলো না।কোনো কালেই না।সে এক প্রকার জেদ করে সাইকেলে করেই স্কুলে যেতো।কিন্তু এই প্রথম বোধহয় কেউ ভার্সিটিতে সাইকেল করে যাবে।এই ব্যাপার টা হাস্যকর হলেও সত্যি।মুহু একবার ভাবলো সে তার বেস্টফ্রেন্ড কে কল করবে ভার্সিটিতে সে গেছে কিনা জানার জন্য।তার বান্ধবীও ওই ভার্সিটিতেই পড়ে।পরক্ষণেই ভাবলো আজকে ওঁকে সে ভার্সিটিতে গিয়ে সারপ্রাইজ দেবে।ক্রিং ক্রিং বেল বাজিয়ে চললো সে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে।

একটা চাপা কলরব ভেসে আসছে ক্লাস রুম থেকে।আজ কুহুলতার ফার্স্ট ক্লাস ভার্সিটিতে। সে অধ্যাপক স্যারের সাথে ক্লাসে ঢুকতেই সবাই চুপ হয়ে গেলো।সবাই কুহুকে দেখে একে ওপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করলো।
ওরা ভাবলো হইতো নতুন স্টুডেন্ট হবে।নইতো কোনো কাজে এসেছে এই মেয়েটি।কুহুলতা সবার চাহনিতে কিছুটা বিড়ম্বনায় পরলো।অধ্যাপক আব্দুল্লাহ স্যার পরিচয় করিয়ে দিলেন কুহুলতার সঙ্গে,

“হ্যালো স্টুডেন্টস।ইনি তোমাদের ইংরেজি শিক্ষিকা।আজকেই উনি জয়েন করেছেন।তোমরা পরিচিত হয়ে নাও মেমের সঙ্গে।”

সবার যেনো অক্ষিপট কোটর হতে বেরিয়ে আসবে।এতো ইয়াং লেডি তাদের ইংরেজি শিক্ষিকা।তার রুপের ছটা যেনো ছড়িয়ে পরলো পুরো ক্লাস রুমে।সবাই অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তার দিকে।ফর্সা মুখের সঙ্গে বাদামী চুলে তাকে যেনো মেম সাহেব লাগছে
সবার এমন বিস্মিত চাহনিতে যেনো কুহুলতার অস্বস্তির শেষ নেই।সে আস্তে করে গলা খাকাড়ি দিয়ে সবার উদ্দেশ্য বললো,

“আপনারা সবাই এতো চুপচাপ কেন?আমাকে কি আপনাদের শিক্ষিকা হিসেবে পছন্দ হয়নি?”

সবাই এবার যেনো আরও বিস্মিত হলো।কুহুলতার মিষ্টি কণ্ঠে সবাই মুখরিত হলো।এতো সুন্দর কন্ঠ তার।আহা কি মধুর শুনালো সে কন্ঠঃ।ছেলে গুলো গালে হাত দিয়ে তাকিয়ে রইলো কুহুর দিকে।আব্দুল্লাহ স্যার চলে যেতে কুহু সবার সঙ্গে পরিচিত হতে লাগলো।এর মধ্যেই শিশির সহ ওর বন্ধুরা ক্লাস রুমে ঢুকে পরলো হুড়মুড়িয়ে।সবার মুখের হাসি গায়েব হয়ে গেলো যেনো মুহুর্তের মধ্যে।কুহুর তীব্র ক্রোধে নরম চিবুকে খানিক কাঁপন ধরলো।

মুহু ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়িয়ে আছে আর বিরক্তিতে অতিষ্ঠ হলো।হাত ঘড়িতে একবার চোখ বুলালো।আর পনেরো মিনিট আছে দশ টা বাজতে।এদিক সেদিক তাকাতেই হঠাৎ তার নজর পরলো একজন মানুষের দিকে।তাকে দেখে যেনো ক্রাশ খেলো মুহু।আজকাল সুন্দর পুরুষেরাও ফুল বিক্রি করে।তার মন টা যেনো দু টুকরো করে ভেঙে গেলো।ছেলেটা এতো ফিটফাট যে দেখে বুঝার উপায় নেই সে ফুল বিক্রেতা।তাকে ফুল বিক্রেতা উপাধি দেওয়ার কারণ টা হলো ছেলেটার মাথায় ফুলের ডালা।গাদা ফুলের মালা আর লাল গোলাপ।মুহু ফিচেল গলায় আওড়ালো,

“এতো সুন্দর মানুষ টাকেই ফুল বিক্রেতা হতে হলো ইশ রে!মুহুরে তোর কপাল টাই পুরা।”

পরক্ষণেই সে নিজেকে তীব্র ধিক্কার জানালো।সে কিনা সে একজন ফুল বিক্রেতার উপর ক্রাশিত হলো।হর্নের আওয়াজে তার ধ্যান ফিরলো।সে চলতে শুরু করলো।ভার্সিটির সামনে এসে দাঁড়াতেই হঠাৎ কোনো একটা গাড়ির ধাক্কায় ধরাম করে পরলো সেখানেই।মুহু ঝামটা মেরে উঠে দাঁড়ালো।কোণার দিকে ছিলো সে।তবুও যখন সে ধাক্কা খেয়ে পরলো সাইকেল সমেত তখন তার রাগ তুঙ্গে উঠে গেলো।সামনে তাকাতেই তার চোখের সামনে সেই ফুলওয়ালাকে দেখলো।সে মনের ভুল ভেবে চোখ কচলালো।না না এটা কিভাবে হতে পারে।নিশ্চয়ই এটা তার হ্যালোসিনেশন।সে চোখ বন্ধ করে মিনিট দুয়েক রাখলো।এরপর চোখ খুলেও দেখলো সত্যিই তখন কার সেই ফুল বিক্রেতা।এখন সে খুশি হবে নাকি রাগ দেখাবে বুঝলো না।নিজের ব্যথা ভুলে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে।

শৈবাল গাড়ি থেকে তেড়ে নামলো।ওর ভাইয়ের পেছনে।হ্যাঁ ছেলেটা আর কেউই নয় শাহরিয়ার শৈবালের বড় ভাই শাহরিয়ার সারাফ।ইনিই শৈবালের সেই স্পেশাল মানুষ তার বড় ভাই।

শ্যাম বর্নের সুদর্শন পুরুষ!কালো খয়েরী সিল্কের শার্টের সাথে কালো প্যান্ট।গলায় ঝুলছে কালো রঙের টাই।কনুই পর্যন্ত ফোল্ড করা হাতার বাম হাতে সিলভার রঙ্গের হাত ঘড়ি।ডান দিকের ভ্রু যুগলের উপরে কালো মতো যুগলচিহ্ন যা দেখেই বোঝা যায় জন্ম চিহ্ন সেটা।যাকে ইংরেজিতে বার্থসাইন বলে।এই চিহ্নের জন্য তাকে মেয়েরা বেশি পছন্দ করে।মেয়েরা বেশিই আকর্ষিত হয় তার ভ্রু যুগলের সেই চিহ্ন দেখে।শ্যাম বর্নের হলেও তার বাচনভঙ্গি, দুর্দশিতায় সে অন্যতম।উচ্চ গ্রীবা,তীক্ষ্ণ নাক,পুরু ওষ্ঠাধরে এক অদ্ভুত মোহনীয় পুরুষ!

অপর দিকে শৈবাল ফর্সা।সে তার ভাইয়ের চেয়ে সুদর্শন হলেও চরিত্রের দিক দিয়ে তার চেয়ে হাজার গুনে ভালো।তার বিপরীত একদম।শৈবাল ক্ষোভে কিছু বলতে নিলে সারাফ বাধ সাধলো তাতে।শৈবাল দাঁড়িয়ে পরলো।এই একটা মানুষের কথা সে কোনো দিন ও অমান্য করে না।তাই না চাইতেও থেমে গেলো।সারাফ এসেছিলো শৈবাল কে ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে যেতে।এরপর বাসায় ফিরবে।সে হর্ন দিয়েছে কিন্তু মেয়েটি শুনে নি।যার দরুন সে পরে গেছে।গাড়ি থেকে নেমেছে এই মেয়েটিকে পরে যেতে দেখেই।কিন্তু মেয়েটার চাহনিতে অবাক হলো।সে ভ্রু সংকুচিত করে কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই মেয়েটি মিহি রিনরিনে কন্ঠে বলে উঠলো,

“আপনি তো সেই ফুলওয়ালা তাই না ফুল বাবু।আপনি এখানে কি করছেন?”

শৈবাল রেগে উচ্চ স্বরে বলে,

“হোয়াট?ফুলবাবু মানে?”

মুহু সারাফের দিকেই তাকিয়েই বলে,”ফুলবাবু মানে ট্যাডি বয়!”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here