#গোধূলী_আকাশ_লাজুক_লাজুক (পর্ব-১৮)
সিজন ২
লেখনীতে— ইনশিয়াহ্ ইসলাম।
৩৮.
ভোর হয়েছে, সূর্যের আলো উঁকি দিচ্ছে। মেহজা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। ইরফান এখনও ঘুমিয়ে আছে। মেহজার শরীরটা ভালো নেই। জ্বর এসেছে। দুর্বল লাগছে খুব। কি করবে বুঝতে পারছেনা।
রুমে এসে দেখে ইরফান বিছানায় নেই। ওয়াশরুমে আছে হয়তো। ইরফানের ফোনটা বাজছে। মেহজা এগিয়ে গিয়ে দেখল ইকরা কল করেছে। সংকোচ করেই কলটা রিসিভ করল।
-‘ইয়াজ!’
-‘আপু, আমি মেহজা বলছি।’
-‘ওহ মেহজা! কি খবর? ওদিকটায় সব ঠিক আছে তো?’
-‘হ্যাঁ আপু।’
-‘তোমার শরীর ভালো তো!’
মেহজা ভাবল ইকরাকে বলা যায়। এই মুহূর্তে আর কার কাছেই সাহায্য চাইবে। ইরফানকে তো মোটেও কিছু বলা যাবেনা। গতরাতের পর থেকে এই লোককে দেখলে সে আরো ল’জ্জা পাচ্ছে।
-‘আপু আমার আসলে শরীরটা খা’রা’প।’
ইকরা চিন্তিত হয়ে বলল,
-‘কি হয়েছে! সংকোচ না করে বলো।’
-‘জ্বর এসেছে। শরীর দুর্বল এবং ব্যথা।’
-‘ইশ! আমি এই রকম একটা আভাসই পাচ্ছিলাম। অপেক্ষা করো। আমি আর বড় আপা আসছি।’
কল কেটে দিলে মেহজা ফোনটা রেখে দিল। তারপর রুম থেকে বের হয়ে গেল। নিচে গিয়ে ঘুরে ফিরে দেখল। সোফায় গিয়ে বসে থাকল কিছুক্ষণ। হাতের কাছে রিমোট পেয়ে টিভিও অন করল। তবে চ্যানেল ঘুরাতেই থাকে। কিছুতে মন বসছেনা। এমনভাবেই চ্যানেল ঘুরাতে ঘুরাতেই টাইটানিক ছবিটা তার সামনে এসে পড়ল। যদিও অসংখ্যবার দেখা ছবি তবুও দেখতে থাকে। যখনিই জ্যাকের রোজকে কি করে থুথু ফেলতে হয় তা প্র্যাক্টিকালি দেখানোর দৃশ্যটা সামনে এলো তখন সে পুনরায় চ্যানেল বদলে দিল। ব্যাপারটা তার কাছে বি’শ্রী লাগে।
-‘ওইটাতে সমস্যা কি?’
আকস্মিক পেছন থেকে ইরফানের গলার আওয়াজ পেয়ে মেহজা একটু কেঁ’পে উঠল। ইরফান তার ডানপাশের সোফাটায় বসে তার দিকেই এক ধ্যানে তাকিয়ে রইল। মেহজার চোখ মেলাতেও পারছেনা। অদ্ভুত একটা অনুভূতি। ইরফান বলল,
-‘টাইটানিক তোমার ভালো লাগেনা!’
একটু সময় নিয়ে মেহজা বলল,
-‘লাগে। কিছু সিন ভালো লাগেনা। এর মধ্যে এইটা একটা। থুথু কীভাবে ফেলতে হয় সেটা দেখাচ্ছে। ভালো কথা! ওয়াক ওয়াক করে অনবরত আর জ্যাকের থুতনিতেও কেমন থুথু লেগে থাকে, ইয়াক! মানে পুরো ব্যাপারটা খুবই নোং’রা।
ইরফান হাসল। মেহজা আড়চোখে তাকিয়ে তাকে দেখে। ইরফান বলল,
-‘আর?’
-‘আর কি!’
-‘কিছু সিন বললে। আর কোন কোন সিন?’
মেহজা একটু লাল হয়ে উঠল। কোনো রকমে বলল,
-‘আছে কিছু। সেটা মনে পড়ছেনা।’
-‘মনে পড়ছেনা?’
-‘না।’
-‘তাহলে চলো, দেখি। দেখলে মনে পড়বে।’
-‘না দরকার নেই।’
-‘আমার তো জানতে ইচ্ছে করছে মেহজা! তোমার কোনটা ভালো লাগেনা সেটা আমি জানতে চাই।’
-‘জানার দরকার নেই।’
-‘আছে।’
-‘আমার ক্ষিদে পেয়েছে। খাবার আছে এখানে?’
খুব সুন্দর করে মেহজা টপিকটা ঘুরিয়ে দিল। ইরফান বুঝল কিন্তু কিছু বলল না আর। মেহজা টপিক ঘোরানোর জন্য বললেও ব্যাপারটা ঠিক। ক্ষুধা তার পেটেও দৌঁড়াচ্ছে। আপা তো বলল খাবার সব এইখানে রেখে গেছে। রাতে তারা কেউই খায়নি। তবে এই বাসায় যে কিছু থাকেনা তা নয়। ইরফান সপ্তাহে সপ্তাহে আসে। সকালের নাস্তার জন্য পাউরুটি, কলা, ডিম, আপেল, জুস যা যা দরকার সবই আছে। ইরফান বলল,
-‘ওঠো।’
-‘কেন?’
-‘এইমাত্রই তো বললে ক্ষিদে পেয়েছে। এখন ক্ষিদে মেটাতে হবে তো! খেতে চলো।’
-‘এইখানে খাবারও আছে?’
-‘থাকবেনা কেন!’
-‘এইখানে কি মানুষ থাকে!’
ইরফান চোখ বড় করে মেহজার দিকে তাকালো। মেয়েটা বলে কি! মানুষ থাকেনা তো কি গরু ছাগল থাকে? সে কি গরু নাকি ছাগল!
-‘মানুষ থাকেনা বলতে কি বোঝাতে চাইছ?’
-‘মানে বলতে চাইছি এইখানে তো আপনারা থাকেন না।’
-‘তোমাকে কে বলল যে কেউ থাকেনা?’
-‘আপনারা তো ওই বাসাতেই থাকেন। আমি তো কখনো দেখিনি অন্য কোথাও যেতে। অন্তত এই একমাসেও তো দেখিনি।’
-‘তুমি দেখবে কি করে? তুমি কি আমাদের বাসায় থাকো নাকি!’
তারপর কিছুক্ষণ চুপ থেকে ইরফান আবারও বলল,
-‘বাই দ্য ওয়ে, আমার উপর স্পা’ইগিরি করো নাকি!’
মেহজা একট থতমত খেয়ে গেল। লোকটা আস্ত খাঁ’টা’শ। পেট থেকে টেনে কথা বের করতে চায়। সে ন্যাকা সুরে বলল
-‘ক্ষিদে পেয়েছে।’
এভাবে বারবার মেহজার কথা ঘুরিয়ে ফেলা দেখে ইরফানের রা’গ হলো। সে একটু রা’গ প্রকাশও করল।
-‘বেশি ক্ষিদে পেলে এক কাজ করো। আমাকেই খেয়ে ফেলো।’
মেহজার হাসি পায়। আটকে না রেখে হেসেই ফেলল। তারপর বলল,
-‘আসেন, খাই। কথা হচ্ছে এত বড় মানুষটা তো কোনো পাতিল বা প্লেটে ফিট খাবেনা। কাঁচা খাবো?’
-‘হ্যাঁ চাইলে খাও।’
-‘আমি তো কাঁচা খাইনি কখনো। কীভাবে খায় জানিনা। আর তাছাড়া হালাল না তো মনে হয়।’
-‘কাঁচার মধ্যে হালাল খাবার আছে। খেতে চাও?’
-‘কোথায়?’
-‘এই যে!’
ইরফান চট করে মেহজার কাছে এসে ঠোঁটে চুমু খায়। মেহজা থমকে যায় তাতে। ইরফান সরে এসে খুব সুন্দর করে হাসল। বলল,
-‘খুব সুস্বাদুও বটে! কি বলো!’
মেহজা কিছু বলল না। ইরফান হেসে তার হাত ধরে চমকে উঠল। এত গরম কেন? ভালো করে দেখতেই বুঝতে পারল। তারপর হঠাৎ ধ’ম’কে উঠল,
-‘জ্বর এসেছে আমাকে বলো নি কেন?’
-‘কি বলব!’
ইরফান ক্রো’ধ দমন করল। মেহজা কি তবে তাকে আপন ভাবতে পারছেনা!
৩৯.
কিচেনে ইরফান অমলেট করছে। মেহজা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে শেল্ফের গায়ে হেলান দিয়ে। টোস্ট করা ব্রেডে পিনাট বাটার লাগিয়ে নিয়ে ইরফান মেহজার হাতে দিল। মেহজা হাতে নিয়ে এক কামড় দিল। ইরফান বলল,
-‘ফ্রোজেন পরোটা আছে। ভেজে দিব?’
-‘না। পরোটা খেতে ইচ্ছে করছেনা।’
-‘তবে ফল খাও।’
-‘আমার সকাল বেলা ফল খেতে ভালো লাগেনা।’
ইরফান অমলেট গুলো প্লেটে নিল। তারপর ডাইনিং টেবিলে প্লেট গুলো রেখে এসে মেহজাকে বলল,
-‘চলো। টেবিলে বসি।’
-‘আমি চা বানাবো। এই মুহূর্তে চা না খেলে মা’থা ব্য’থায় ফেঁ’টে যাবে।’
-‘আচ্ছা তুমি বসো। আমি করছি।’
-‘লাগবেনা। আমার চা আমি করতে ভালোবাসি।’
-‘আমার জন্যে করবেনা?’
-‘আপনি খাবেন?’
-‘খেতেই পারি। যদি তুমি দাও।’
-‘দিব না কেন!’
চা খুব যত্ন নিয়ে মেহজা তৈরি করল। চা পাতা একটু বেশি করে দিয়ে বলল,
-‘আমার মা’থা ব্য’থা হলে আমি কড়া করে চা খাই। আপনার কড়া চা খেতে সমস্যা নেই তো!’
-‘না। আমি চিনি ছাড়া কফি খাওয়া মানুষ। এসব কড়া ফড়াতে আমার কিছুই হবেনা।’
-‘চিনি ছাড়া কফি কোন পা’গ’লে খায়!’
ইরফান দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
-‘আমি পা’গ’ল খাই।’
ইরা আর ইকরা এলো তখনিই। ইরফান গিয়ে দরজা খুলল। ইরা আর ইকরা তাকে দেখে হেসে ফেলে। ইকরা বলল,
-‘দুলাসাহেবের কি খবর?’
-‘ভালোই খবর! দুলার কি খা’রা’প খবর থাকে নাকি?’
মেহজাকে চা বানাতে দেখে ইরা বলল,
-‘এই তোমাকে দিয়ে ও এখনই কাজ করানো শুরু করে দিয়েছে! আহারে!’
-‘না আপু। আমি নিজেই চা করতে চেয়েছিলাম।’
ইকরা পেছন থেকে এসে বলল,
-‘আমিও চা খাব।’
-‘আচ্ছা আমি তবে পানি বাড়িয়ে দিচ্ছি।’
ইরা ইকরাকে মৃদু ধ’ম’কে বলল,
-‘চা না খেয়ে এলি?’
-‘নতুন বউয়ের হাতে চা তো আর খাইনি।’
ইরফান টেবিলে বসে টোস্ট মুখে দিল। ইরাও তার পাশে বসে কথা বলতে থাকে। ইকরা মেহজার পাশে গিয়ে বলল,
-‘চা বানানো হলে আমার সাথে চলবে।’
#চলবে।
(লিখতে পারছিনা। মাথায় কিছু আসছেনা। জোর করে এটুকু লিখলাম।)