#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৪
অবনিকে দেখে সবাই মুখ টিপে হাসতে লাগলো। অবনির মা অবনিকে ফ্লোর থেকে উঠালো। লজ্জায় মাথা নিচু করে আছে অবনি। আবিদের মা পরিস্থিতি ঠিক করার জন্য বললো ‘ আপনারা সবাই ইনজয় করেন।’
অবনির দাদি কিছুটা রাগি স্বরে বললো
‘ দেখে চলতে পারিস না?
অবনি মাথা নিচু করে রইলো। আবদিকে দেখতে না পেয়ে আবিদের মা অবনিকে বললো
‘ আবিদকে দেখছি না যে? অবনি আবিদের রুমে যেয়ে দেখ তো আবিদ রুমে নাকি?
অবনি আবিদের মাকে বলতে যাবে তার ছেলে তার হবু বউয়ের সাথে রোমান্স করছে হঠাৎ কি মনে করে যেনো অবনি আর বললো না। অবনি আবিদ কে ডাকতে তার রুমে যেতে লাগলো। অবনি আবিদের রুমের সামনে এসে দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলে গেলো। অবনি ভিতরে তাকিয়ে দেখে আবিদ মাইশার চুলে হাত বুলাচ্ছে। অবনি তাড়াতাড়ি করে চোখ নামিয়ে বললো
‘ আবিদ ভাইয়া তোমাদের ডাকতেছে কাকি।’
আবিদ তখন মাইশার দিকে তাকিয়ে অবনিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বললো
‘ মাইশা বেবি আমাদের কে দেখে অবনি জ্বলতেছে যার কারনে আম্মুর কথা বলে নিজে আমাদের দুজনের প্রাইভেসি নষ্ট করছে।’
অবনি তখন তাচ্ছিল্য হেসে বললো
‘ সবাই কে তোমার মতো ভাববে না।’ অবনি আর এক সেকেন্ডও না দাঁড়িয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। অবনি আর নিচে না যেয়ে নিজের রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে কেদেঁ বললো
‘ আমি কি করেছি আবিদ ভাইয়া তুমি কেনো আমার সাথে এমন বিহেভ করছো? আমাকে কেনো এতো কষ্ট দিচ্ছি? তুমি তো জানতে আমি তোমাকে পাগলের মতো ভালোবাসি। আমার দূর্বলতা তুমি এইটা জেনেও আমাকে কষ্ট দিচ্ছো। আমি যে সহ্য করতে পারছি না।’
এই বলে অবনি কান্না করতে লাগলো। অবনি কান্না করতে করতে সেইখানেই ঘুমিয়ে গেলো।
পাখির কিচির মিচির ডাকে ঘুম ভাঙলো অবনির। চোখ খুলে নিজেকে ফ্লোরে আবিষ্কার করতেই চমকে গেলো অবনি। অবনি ফ্লোর থেকে দাঁড়িয়ে বললো
‘ আমি এইখানে আসলাম কিভাবে?
অবনির হঠাৎ কালকে রাতের কথা মনে পরতেই দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো। অবনি ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে সবাই বসে আছে। অবনি কে দেখে অবনির দাদি মুখ গোমড়া করে বললো
‘অবনি আমার জন্য এক কাপ চা বানিয়ে দে তো।’
অবনি আচ্ছা বলে চা বানিয়ে তাকে দিলো।
কিছুক্ষন পর
অবনি ডেকোরেটরদের কাজ দেখতেছে। হঠাৎ আবিদ এসে অবনির কানের কাছে নিজের মুখ নিয়ে বললো
‘ কেমন লাগছে অবনি। ভালোবাসার মানুষটার বিয়ের কাজ নিজে হাতে করতে। অনেক কষ্ট হচ্ছে তাই না? তোর কষ্ট দেখে আমার অনেক শান্তি লাগছে।’
অবনি আবিদের কথায় আবিদের দিকে তাকিয়ে বললো
‘ ঠকবাজ, প্রতারকদের অন্যর কষ্টে শান্তি লাগে। তুমি একটা প্রতারক।’
আবিদ অবনির কথায় হাসতে হাসতে চলে গেলো অন্য দিকে। অবনির রাগে গা জ্বলছে মনে হচ্ছে আবিদ কে এক বারি দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়ে। ইচ্ছা থাকা সর্তেও তা পারবে না তাই দাতে দাত চেপে সহ্য করে নিলো। ডেকোরেটরের একটা লোক অবনি কে বললো আপু এইখানে ফুল লাগাতে হবে আপনি যদি লাগান ভালো হতো।’
লোকটার কথায় তখন অবনি মুচকি হেসে বললো
‘ সমস্যা নাই আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।’
এই বলে অবনি চেয়ারে উঠে ফুল লাগাতে লাগলো আর লোকটা চেয়ার শক্ত করে ধরে রাখলো যাতে অবনি না পরে। কিন্তু লোকটাকে আরেকটা লোক ডাকতেই লোকটা আসছি বলে ভুলে চেয়ার ছেড়ে দিলো। অবনি ফুল লাগাচ্ছে কিন্তু চেয়ার নড়াচড়া করতেছে হঠাৎ ঠাস করে চেয়ার থেকে পরে গেলো। অবনি ভয়ে চোখ মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।
অবনি কাঁদো কাঁদো মুখ করে বিরবির করে বললো
‘ আল্লাহ্ বাঁচিয়ে দাও। আমি আর কখনো কারো সাথে ঝগড়া করবো না। কারো গাছের আম চুরি করবো না। ক্রিকেট খেলবো না। আমি বাচ্চা পাখিদের চকলেট খাওয়াবো পিলিজ আল্লাহ্ হেলেপ করো।’
অবনি এইগুলো বলতেছে হঠাৎ মনে হলো সে হাওয়াই ভাসছে। অবনি চোখ বন্ধ রেখেই ভ্রু কুচকে বললো আমি কি ম’ রে টরে পেত্নি হয়ে গেলাম নাকি? কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে পেত্নি হমু? অবনি এইগুলো বলতেছে হঠাৎ একটা গম্ভীর পুরুষালি কন্ঠে বললো ‘ আপনি মরেননি আর পেত্নিও হননি। এখন চোখ খুলে দাড়ান।’
পুরুষালি কন্ঠে অবনি এক চোখ খুলে দেখে একটা ছেলে তাকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবনি তখন তাড়াতাড়ি করে দাঁড়িয়ে ভ্রু উলটে বললো
‘ আপনি কে? আপনাকে তো আগে কখনো দেখিনি। আচ্ছা আপনি কি চোর? বিয়ে বাড়িতে চুরি করতে আসছেন?
অবনি এক দমে কথাগুলো বললো। ধ্রুব নামক ছেলেটা শান্ত চাহনিতে বললো ‘ তাড়’ছিড়া মেয়ে তো আপনি।’
অবনি তা শুনে রেগে চেচিয়ে বললো
‘ আপনি জানেন আমি কে আমি এই বাড়ির মেয়ে। আপনি আমাদের বাড়িতে এসে আমাকে তাড়ছিড়া বলছেন? আপনাকে আমি..
অবনি আর কিছু বলবে তার আগেই ধ্রুব চিৎকার করে তা মাকে ডেকে বললো আম্মুওও
আবিদের মা তার বড় ছেলের কন্ঠ শুনে নিচে এসে দেখে ধ্রুব তাকে ডাকছে। তিনি দ্রুতগতিতে ধ্রুবের কাছে এসে খুশি হয়ে বললো
‘ ধ্রুব তুই? আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি?
ধ্রুব বিরক্ত চোখে তার মাকে অবনিকে দেখিয়ে বললো
‘আম্মু এই তাড়ছিড়া মেয়েটা কে?
অবনিকে তাড়ছিড়া বলতে অবনি রাগি চোখে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে বললো
‘ আমি তাড়ছিড়া না। আপনি তাড়ছিড়া। কাকি এই পাগলটা কে?
আবিদের মা তখন বললো
‘ অবনি এইটা ধ্রুব আবিদের বড় ভাই।
আবিদের বড় ভাই শুনে অবনি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে লজ্জায় দৌড় দিলো। অবনিকে দৌড় দিতে দেখে ধ্রুব মুচকি হেসে বললো
‘ পাগলি মেয়ে।’
তারপর ধ্রুব তার মায়ের সাথে কথা বলতে থাকলো। একে একে বাড়ির সবাই ধ্রুবের সাথে কথা বললো এক মাত্র ধ্রুবের দাদি বাদে। ধ্রুব সবার সাথে কথা বলে তার দাদির রুমে যেতে লাগলো। ধ্রুব বুঝতে পেরেছে তার দাদি তার উপরে ভিষন অভিমান করে আছে। দাদির রুমের ভিতরে এসে দেখে দাদি চুপচাপ বসে আছে। ধ্রুব হাটু গেড়ে দাদুর সামনে বসে কান ধরে বললো
‘ সরি দাদি। অভিমান করিও না আর।’
ধ্রুবের দাদি তখন কান্না করে বললো
‘ আমাদের কে তো একটুও মনে পরেনি তোর? এতোদিন পর আসলি।’
ধ্রুব তখন বললো
‘ দাদি তাহলে আমি চলে যাচ্ছি।
ধ্রুবের দাদি তখন ধ্রুবকে বললো
‘না দাদু ভাই তোকে আমি আর যেতে দিবো না।’
ধ্রুব তা শুনে মুচকি হাসলো। তারপর তাড়া কিছুক্ষন কথা বলতে লাগলো।
এদিকে
” অবনি রুমে এসে বিছানায় বসে আছে। লজ্জায় অবনির গাল লাল হয়ে গেছে। অবনি বললো অবনিরে তুই ধ্রুব ভাইয়াকে কি বললি ছিহ্। ওনার সামনে এখন যাবি কিভাবে?
অবনি এইগুলো বিরবির করে বলতেছে।”
—————-
রাতে অবনি হলুদের জন্য হলুদ লেহেঙ্গা পরে বসে আছে। অবনি ভাবতেছে আবিদ যা করেছে তার সাথে তার শাস্তি আবিদকে দিতে হবে। আফিহা অবনিকে বললো আপুই তোকে নিচে ডাকে।’
আফিহার কথায় অবনি আচ্ছা বলে নিচে আসলো। অবনি নিচে এসে দেখে আবিদ আর মাইশা স্টেজে বসে আছে। অবনি আবিদের দিকে তাকাতেই ধমকে গেলো।আবিদ হলুদ ড্রেস পরেছে। মুখে সেই মাতাল করা হাসি। অবনি তার দৃষ্টি সরিয়ে বললো প্রতারক একটা।’
অবনিকে তার কাকি ডেকে বললো
‘ অবনি গোলাপ ফুলের পাপড়ি নিয়ে আয় তো রান্নাঘর থেকে।’
অবনি তখন আচ্ছা বলে আনতে গেলো। অবনি পাপড়ির থালা হাতে করে স্টেজে যাচ্ছে হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে সব ফুল অবনি আর সেই ব্যক্তির মাথায় পরতে থাকলো।
অবনি তাকিয়ে দেখে ধ্রুব তাকে ধরে আছে। অবনির হঠাৎ ধ্রুবের দিকে তাকাতেই কেমন যেনো অনুভূতি হলো। ধ্রুব তো অবনির চোখের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ কারো কাশির শব্দে ধ্রুব আর অবনির ঘোর ভাঙলো। অবনি ধ্রুবকে সরি বললো ঠিক একই সময় ধ্রুবও সরি বললো। অবনি মুচকি হেসে থালাটা উঠাতে যাবে ধ্রুবও থালাটা উঠাতে গিয়েছি দুজন দুজনের মাথায় বারি খেলো। অবনি দাঁড়িয়ে গেলো। ধ্রুব থালাটা উঠিয়ে বললো ‘ আমি ফুল এনে দিচ্ছি দাড়া। অবনি আচ্ছা বললো।
__
কিছুক্ষন পর
” অবনি একটা চেয়ারে বসে আবিদ আর মাইশার দিকে কাঁদো কাঁদো মুখ করে তাকিয়ে আছে। আবিদ তাকে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য কারো সাথে ঘর বাধছে। অবনি কান্না করতেছে হঠাৎ কেউ অবনিকে টিস্যু দিলো। অবনি কে দিলো তা না দেখে টিস্যু নিয়ে আবিদদের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি মুছতে লাগলো। মুছা শেষ হলে অবনি উঠে ওইখান থেকে চলে গেলো একবারও ফিরে দেখলো না কে তাকে টিস্যু দিলো। ধ্রুব অবনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে টিস্যু টা নিজের কাছে রেখে দিলো। আবিদের মা চিন্তিত সুরে বললো,,
#চলবে…
(