ঘর বাধার স্বপ্ন পর্ব -০৫

#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৫

আবিদের মা চিন্তিত সুরে ধ্রুবকে বললো ‘ ধ্রুব আবিদের গায়ে হলুদের বাটিটা পাচ্ছি না। তুই একটু তাড়াতাড়ি কাউকে বলে হলুদ আনা তো।’

ধ্রুব শান্ত চাহনিতে তার মাকে বললো
‘ আম্মু তুমি চিন্তা করো না আমি দেখছি।’
এই বলে ধ্রুব চলে গেলো হলুদ খুজতে। ধ্রুব রান্নাঘরে এসে হলুদ খুজতে থাকে আর পেয়েও যায়। ধ্রুব মুচকি হেসে পাটা ফ্লোরে নামিয়ে হলুদ বাটতে থাকে।

এদিকে
অবনি পানি খেতে রান্না ঘরে এসে দেখে ধ্রুব হলুদ বাটতেছে। অবনি কিছুটা অবাক হয়ে বলে
‘ ভাইয়া আপনি হলুদ বাটতেছেন কেনো? আমাকে দিন আমি বেটে দিচ্ছি।’

ধ্রুব তখন বললো
‘ না তোকে বাটতে হবে না। আমি পারবো সমস্যা নাই। তোর কি কিছু লাগবে?

অবনি তখন বললো
‘ পানি খেতে এসেছিলাম’

ধ্রুব তখন বললো
‘ গ্লাস দে আমাকে আমি পানি দিচ্ছি।’

অবনি তখন বললো
‘ তার কোনো প্রয়োজন নেই। ভাইয়া তুমি সরো আমি বেটে দিচ্ছি।’

ধ্রুব অবনির কথায় আচ্ছা বললো এমনিতেই সে কখনো বাটেনি। এই কাজ পারে না যার জন্য অবনির কথায় আচ্ছা বলে দিলো। অবনি হলুদ বাটতেছে কিন্তু চুল বার বার উড়ে মুখে আসতেছে অবনি বিরক্ত হয়ে হলুদ মাখা হাত দিয়ে চুলগুলো কানের পিঠে গুজে নিলো। ধ্রুব বললো আমি তোকে বলেছিলাম না তোর সমস্যা হবে।’

অবনি তখন ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো
‘ কিছু হবে না।’

ধ্রুব অবনির দিকে তাকাতেই অবনির মুখ দেখে ফিক করে এসে দিলো। ধ্রুবকে এইভাবে অযথা হাসতে দেখে অবনি ভ্রু কুচকে বললো ‘হাসতেছেন কেনো?

ধ্রুব তখন অবনি কানের পাশ দেখে হলুদ মুছে দিয়ে বললো হলুদ লেগে ছিলো। ধ্রুবের ছোয়ায় অবনি কেপে উঠলো। অবনি আবার হলুদ বাটতে মনোযোগ দিলো। ধ্রুব এক দৃষ্টিতে অবনির দিকে তাকিয়ে আছে। আজ অবনিকে হলুদ পরী লাগছে। ধ্রুব বলে উঠলো ‘অবনি তোকে আজ পরীর মতো লাগছে।’

ধ্রুবের এই রকম কথায় অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে বললো ধন্যবাদ ভাইয়া।’

কিছুক্ষণ পর

অবনি বাটা শেষ করে ধ্রুবের হাতে বাটা দিতে যাবে হঠাৎ অবনির মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। অবনি হলুদের বাটিতে কিছুটা মরিচগুঁড়া মিশিয়ে দিয়ে ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে হেসে বললো ‘এই নেন আপনার ভাইয়ের হলুদ।’

ধ্রুব তখন ভ্রু উ’ল্টে বললো
‘ মরিচগুঁড়া মেশালি কেনো?

অবনি তখন দাত কেলিয়ে বললো
‘ আপনার ভাই তো মহান মানুষ যার জন্য ওনার হলুদে মরিচগুঁড়া মিশিয়েছি এখন এইখান থেইকা ফোটেন তো।’

ধ্রুব মুচকি হেসে চলে গেলো। অবনি তার বত্রিশটা দাত বের করে হেসে বললো’ মাই ডিয়ার এক্স তোর হলুদ অনুষ্ঠানে হলুদ টা তো একটু স্পেশালই হবে।’
এই বলে অবনি স্টেজের সামনে আসলো। অবনির হঠাৎ আফিহার কথা মনে পরতেই স্টেজের আশেপাশ তাকিয়ে দেখে আফিহা নেই। অবনি ভাবলো আফিহা হয়তো অন্য কোথাও আছে তাই আর মাথা ঘামালো না।

একে একে সবাই আবিদ আর মাইশাকে হলুদ ছোয়ালো। অবনির কাকি অবনিকে বললো আবিদ কে হলুদ লাগিয়ে আয়।’

অবনি ওকে বলে আবিদের কাছে আসলো। আবিদ অবনির দিকে তাকিয়ে বললো মাই ডিয়ার এক্স বেশি করে হলুদ লাগিয়ে দিস।’

অবনি চোখ মুখ শক্ত করে বললো
‘ তা তো অবশ্যই, এই বলে অবনি বাটিতে থাকা অর্ধেক হলুদ আবিদের মুখে হাতে লাগিয়ে দিয়ে মুচকি হাসলো। অবনি স্টেজ থেকে চলে এসে একটা চেয়ার পেতে বসে আছে। আবিদের হঠাৎ জ্বলে উঠলো মুখ। আবিদ তার মাকে বলবে তার আগেই আবিদের সব বন্ধুরা মরিচগুঁড়া মেশানো হলুদের বাটি থেকে হলুদ আবিদর মুখে দিতে লাগলো। আবিদের ফ্রেন্ডরা আবিদ আর মাইশার হাত ধরে স্টেজ থেকে নামিয়ে নাচতে লাগলো। আবিদ কিছু বললেও গানের আওয়াজে শুনতে পেলো না কেউ।আবিদ পরলো মহা বিপদে এইখান থেকে চলে গেলে সবাই অন্য কিছু ভাববে তাই দাতে দাত চেপে সহ‍্য করতে লাগলো।

অবনি বসে বসে ওদের নাচ দেখতেছে। ধ্রুব অবনির সামনে নিজের হাত এগিয়ে দিয়ে বললো
‘ নাচবি আমার সাথে?

অবনি মুচকি হেসে বললো
‘ না।’
অবনির কথায় ধ্রুবের মন খারাপ হয়ে গেলো। অবনি তা দেখে বললো আচ্ছা চলো। তারপর অবনি আর ধ্রুব কাপালদের মতো নাচতে লাগলো। ধ্রুব অবনির চোখের দিকে তাকিয়ে নাচতেছে। অবনিও ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে আছে।

কিছুক্ষন পর
অবনি আফিহাকে খুজতেছে কিন্তু পাচ্ছে না। ধ্রুব অবনিকে চিন্তিত দেখে বললো কিছু কি হয়েছে?

অবনি কাদো কাদো কন্ঠে বললো
‘ আফিহাকে পাচ্ছি না।’

ধ্রুব তখন বললো
‘ ডোন্ট ওয়ারী! আমি দেখতেছি, তারপর অবনি আর ধ্রুব আফিহাকে খুজতে লাগলো। অবনি আফিহার রুমের সামনে এসে দেখে আফিহা কান্না করতেছে। তাড়াতাড়ি করে অবনি আফিহার কাছে এসে বললো’ কি হয়েছে বোন? কান্না করছিস কেনো?

আফিহা অবনিকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে করতে বললো
‘ আপুই ওই পচা ভাইয়াটা আমাকে কষ্ট দিয়েছে।’

অবনি তখন বললো
‘ কে সেই পচা ভাইয়াটা।

আফিহা তখন কেদেঁ নিজের হাত দেখিয়ে বললো
‘ আপুই মাইশা আপুর চাচাতো ভাই আমাকে বলেছে ছাদে তোর বোন ডাকে। আমি ছাদে এসে দেখি তুই নেই। আমি পিছনে ঘুরে দেখি ওই ভাইয়াটা আমার দিকে এগোচ্ছে। আমি কিছুটা ভয় পেয়ে বলি ভাইয়া আমি যাই। ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার হাত শক্ত করে চেপে ধরে আমি ব‍্যথা পেয়ে কান্না করে দিয়েছি কিন্তু ভাইয়া ছাড়েনি। তারপর সে আমাকে বাজে ভাবে টাচ করতে থাকে আমি ওনাকে ধাক্কা দিয়ে দৌড়ে চলে আসি রুমে।’ এই বলে আফিহা হেঁচকি দিতে দিতে আবার কান্না করে দিলো। আফিহার কথা শুনে রাগে অবনির চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো। এদিকে ধ্রুব দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো। আফিহার কথা শুনে ধ্রুব প্রচন্ত রে’গে গেলো। ধ্রুবের চোখ দিয়ে যেনো আ’গু’ন বের হচ্ছে।

ধ্রুব আফিহার কাছে এসে বললো
‘ আফিহা চল আমার সাথে।’
এই বলে আফিহাকে নিয়ে গেলো। অবনি বুঝতে পারলো ধ্রুব প্রচন্ড রেগে গেছে। অবনি ওদের পিছু পিছু গেলো। ধ্রুব আফিয়াকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে এসে দাড় করিয়ে মাইশার চাচাতো ভাইকে খুজতে লাগলো। ধ্রুব দেখে মাইশার চাচাতো ভাই একটা লোকের সাথে কথা বলছে। ধ্রুব মাইশার চাচাতো ভাইয়ের কাছে এসে ওর শার্টের কলার ধরে টেনে আফিহার সামনে এনে থা’প্প’ড় দিলো। সবাই অবাক হয়ে গেলো। ধ্রুব মাইশার চাচাতো ভাইকে রেগে বললো
‘ তোর সাহস কি করে হয় আফিহাকে ছোঁয়ার। তোকে আজ আমি মে’রেই ফেলবো।’ এই
বলে ইচ্ছা মতো মা’রতে লাগলো। ধ্রুবের মা এসে অবাক হয়ে বললো ‘কি হয়েছে ধ্রুব? মা’রছিস কেনো ছেড়েদে ওকে।’

আবিদের মায়ের কথা ধ্রুবের কান পযর্ন্ত পৌছালো না। ধ্রুব তো তার রাগ মাইশার চাচাতো ভাইয়ের উপরে ঝাড়তেছে। আবিদ স্টেজ থেকে এসে ধ্রুবকে বললো ‘ধ্রুব থামেক প্লিজ।’

ধ্রুব তখন রেগে বললো
‘ ওকে আজ কেউ আমার হাত থেকে ছাড়াতে পারবে না।’

অবনি তখন ধ্রুবের কাছে এসে ধ্রুবের থেকে মাইশার চাচাতো ভাই লিহান কে ছাড়াতে গেলে ধ্রুব ভুলবসতো লিহানকে ঘু’সি দিতে যেয়ে অবনিকে দিলো। অবনি ব‍্যথায় আহ্ করে উঠলো। অবনি লিহানকে ছাড়িয়ে ধ্রুবকে বললো’ থামেন বেচারা তো ম’রে যাবে।’

ধ্রুব অবনিকে বললো
‘ আফিহার সাথেও খারাপ আচরণ করছে কেনো? ওর সাহস হয় কিভাবে?

অবনি তখন ধ্রুবকে বললো
‘ আচ্ছা থামেন।’

অবনির মা এসে অবনিকে বললো
‘ কি হয়েছে অবনি?

অবনি তখন আফিহার সাথে লিহান যা করেছে তা বলে দিলো। আবিদের মা মাইশার বাবার কাছে এসে বললো ‘ এই সব কি? আপনার ভাইয়ের ছেলে এতোটা বাজে তা জানতাম নাতো।’

মাইশার বাবা মাথা নিচু করে বললো
‘ সরি বেয়ান আর এমন করবে না ও।’
আবিদের মা কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলেন। আবিদ অবনির কাছে এসে অবনির হাত শক্ত করে চেপে ধরে বললো’ আমার বিয়ে ভাঙার জন্য তুই এইসব নাটক করেছিস তাই না?

হাত চেপে ধরাই ব্যা’থা’য় অবনির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে লাগলো। অবনি বললো’ তোমার বিয়ে ভাঙার হলে অনেক আগেই ভেঙ্গে দিতাম। তোমার শালা যা করে তাই বলেছি।’
আবিদ অবনির হাত ছেড়ে দিলো। অবনি আফিহাকে নিয়ে রুমে চলে গেলো। ধ্রুবের ঘু’সিটা অবনির হাত লেগেছে যার জন্য ব‍্যথা হচ্ছে অনেক। আফিহা বললো’ আপু মলম নিয়ে আসছি আমি দাড়া।’

ধ্রুবের হঠাৎ মনে পরলো লিহানকে ঘু’সি দিতে যেয়ে অবনিকে দিয়েছে। ধ্রুব দ্রুতগতিতে অবনির রুমে এসে দেখে অবনি কান্না করতেছে। ধ্রুব অবনির কাছে এসে বললো’ সরি আমি তখন প্রচন্ড রেগে ছিলাম যার কারনে ভুলবসতো তোকে ঘু’সি দিয়ে ফেলেছি।’

অবনি তখন ধ্রুবের কথায় কিছুটা হেসে বললো
‘ ইট’স ওকে।’

ধ্রুব তখন বললো
‘ অনেক লেগেছে তাই না?

অবনি কাদো কাদো মুখ করে বললো
‘ তোমার ঘু’সি খেয়ে আমি অর্ধেক শেষ আর বেচারা লিহান ওই তো মনে হয় ম’রেই যাবে।
ধ্রুব তখন বললো,,

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here