ঘর বাধার স্বপ্ন পর্ব -০৬

#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৬

ধ্রুব তখন মন খারাপ করে বললো’ প্রচন্ত রাগ হয়েছিল আমার যার জন্য ওকে ঘু’সি দিতে গিয়ে তোকে দিয়েছি।’

অবনি তখন মুচকি হাসি দিয়ে বললো
‘ ধ্রুব ভাইয়া মন খারাপ করো না আমি বুঝতে পেরেছি।’

ধ্রুব তখন বললো
‘ তুই দাড়া আমি মেডিসিন নিয়ে আসি।’ ধ্রুব এই বলে উঠতে যাবে ঠিক সে সময় আফিহা এসে ধ্রুবকে বললো ‘ ভাইয়া তোমাকে যেতে হবে না আমি নিয়ে আসছি।’

ধ্রুব তখন আফিহার হাত থেকে মলমটা নিয়ে অবনিকে বললো’ কোথায় লেগেছে বল?

অবনি তখন থমথমে গলায় বললো
‘ আমি লাগিয়ে নিবো তুমি যাও রুম থেকে কেউ দেখতে পেলে খারাপ ভাবতে পারে।’

ধ্রুব তখন শান্ত চাহনিতে বললো
‘ কিছু হবে না আমি লাগিয়ে দিচ্ছি।’ এই বলে ধ্রুব অবনির হাতে মলম লাগিয়ে দিলো। ধ্রুবের ছোয়ায় অবনির সাড়া শরীর যেনো বরফের মতো জমে গেলো। অবনি চোখ মুখ বন্ধ করে আছে। ধ্রুব অবনিকে চোখ মুখ বন্ধ করে থাকতে দেখে কিছুটা হেসে আস্তে করে বললো’ আমাকে এতোটা কাছে দেখে তোর ভয় হচ্ছে নাকি?

ধ্রুবের কথায় অবনি তখন চোখ খুলে ভ্রু উলটে বললো
‘ তুমি বাঘ না ভাল্লুক যে তোমার দেখে ভয় পাবো। শুনো এই অবনি একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া আর কাউকে দেখে ভয় পায় না।’

অবনির কথায় ধ্রুব কিছুটা জোরে বলে উঠলো
‘ আরশোলাআআআ,

আরশোলার কথা শুনে অবনি ভয়ে ধ্রুবকে জড়িয়ে ধরে বললো’ আমাকে বাঁচাও।’ ধ্রুব হো হো করে হেসে বললো ‘ তুই বলে কাউকে দেখে ভয় পাস না কিন্তু এখন তো আরশোলা বলতেই ভয় পেয়ে গেলি।’

অবনি তাড়াতাড়ি ধ্রুবকে ছেড়ে মনে মনে বললো
‘ এইরে আমাকে তো এখন ভিতু বলে খেপাবে।না অবনি তোকে কোনো বুদ্ধি বের করতে হবে।’ এই বলে অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে একদমে বললো’ মানে হয়েছে কি ভাইয়া আরশোলা এইটা দেখে তো সব মেয়েরাই ভয় পাই তাই আমিও ভয় পাই। যদি ভয় না পেতাম তাহলে তো আমি মেয়েদের মাঝে পড়ি না তাই আমি চিৎকার দিয়েছি।’

ধ্রুব তখন মুচকি হেসে বললো
‘ তোর ভূগোল বুঝ তোর কাছে রাখ।’ এই বলে ধ্রুব চলে গেলো।

ধ্রুবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে অবনি আফিহাকে বললো” আফিহা ওই বিদেশী হাতি কি বললো আমায়?

আফিহা তখন বললো
‘ মাথা মোটা তুই বুঝতে পারবি না এই বলে আফিহা অবনির হাতে মা’র খাওয়ার আগেই দৌড়ে চলে গেলো।’

অবনি রেগেমেগে বললো
‘আমি মাথা মোটা তোদেরকে দেখে নিবো।’ তারপর অবনি রুম থেকে বের হয়ে সিড়ির কাছে আসতেই হঠাৎ কেউ অবনির হাত ধরে একটা রুমে নিয়ে এসে মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিলো। অবনি শ্বাস নিতে নিতে বললো কে আপনি?

আবিদ রাগি সুরে বললো
‘ আমি।’

আবিদের কন্ঠ পেয়ে অবনি রেগে বললো
‘ কি হয়েছে কি তোমার?

আবিদ অবনির মুখ চেপে ধরে রাগি কন্ঠে বললো
‘ তুই না আমাকে ভালোবাসিস তাহলে এখন কেনো অন্য ছেলেদের সাথে মেলামেশা করিস?

অবনি তখন তাচ্ছিল্য হেসে বললো
‘ আমি ভালোবাসতাম কিন্তু এখন আর বাসি না তোমার মতো একটা প্রতারক কে।আমি যার সাথে মন চায় তার সাথে মেলামেশা করবো তোমার কি?’

আবিদ চোখ মুখ শক্ত করে বললো
‘ মুখ দিয়ে বুলি ফুটছে তাই না তোর এই মুখ ভেঙ্গে দিতে আমার এক সেকেন্ডও লাগবে না।’

অবনির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো। অবনি দীর্ঘ শ্বাস আড়াল করে বললো ‘ তুমি তো আমাকে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখিয়ে অন্য কারো সাথে ঘর বাধছো তাহলে এখন কেনো আমার সাথে এমন করছো? আমাকে আমার মতো থাকতে দাও না।

আবিদ কোনো উত্তর না দিয়ে চলে গেলো। অবনি কান্না ভেজা কন্ঠে বললো’ কেনো আমার সাথে এমন করছো? আর কি চাও আমার থেকে?

অবনি রুম থেকে বের হয়ে নিজের রুমে চলে গেলো।

সকালবেলায়
” অবনি ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ড্রয়িং রুমে এসে দেখে সবাই কাজ করতেছে। কিছুক্ষন পর অবনি আফিহাকে খুজতে লাগলো হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে দুজনেই ফ্লোরে পরে গেলো। অবনি চোখ মুখ খিঁচে তাকিয়ে দেখে ধ্রুব। অবনি তাড়াতাড়ি বলে’ ধ্রুব ভাইয়া উঠো।’

ধ্রুব তো অবনির দিকে তাকিয়ে আছে। অবনির কথা ধ্রুবের কান পৌছালো কিনা সন্দেহ। অবনি ধ্রুবকে ধাক্কা দিতেই ধ্রুব তাড়াতাড়ি করে উঠে অবনির দিকে হাত বাড়ালো। অবনি ধ্রুবের হাত ধরে উঠে বললো ‘ সরি আসলে দেখিনি আমি ।’

ধ্রুব তখন শান্ত চাহনিতে বললো
‘ ইট’স ওকে।কি হয়েছে তোর?

অবনি চিন্তিত সুরে বললো
‘ আফিহাকে পাচ্ছি না।’

ধ্রুব তখন বললো
‘ চিন্তা করিস না দেখতেছি আমি।’
এই বলে ধ্রুব খুজতে লাগলো আফিহাকে।

এদিকে

” লিহান প্রচন্ড রেগে আছে ধ্রুবের উপরে। লিহান পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো’ ধ্রুব তুই কাল আফিহার জন্য আমাকে মে’রেছিস এইবার দেখ আমি আফিহাকে কি করি।’ এই বলে লিহান ধ্রুবদের বাড়িতে এসে দেখে আফিহা কিছু বাচ্চাদের সাথে খেলা করছে। লিহান মাক্স পরে আফিহার কাছে এসে বললো ‘ আফিহা তোমার ফ্রেন্ড আসছে।’ আফিহা তা শুনে খুশি হয়ে বললো ‘ কোথায়?

লিহান ওকে বললো আসো আমার সাথে। লিহান আফিহাকে বাড়ির বাহিরে এনে ওর মুখে স্প্রে মেরে ওকে অজ্ঞান করে কিডন্যাপ করলো”


ধ্রুব আর অবনি বাড়ির প্রতিটা রুম খুজেও পেলো না। অবনি ওর মায়ের কাছে এসে বললো’ আম্মু আফিহা কোথায়?

অবনির মা তখন অবাক হয়ে বললো
‘ ও তো ড্রয়িং রুমে কেনো কি হয়েছে?

অবনি তার মাকে কিছু বললো না কারন আফিহাকে পাওয়া যাচ্ছে না বললে চিন্তা করবে। অবনি বললো না এমনি অবনি রুম থেকে বের হলো।ধ্রুব অবনিকে বললো পাইছিস আফিহাকে?

অবনি কাদো কাদো মুখ করে বললো
‘ না।’

ধ্রুব অবনিকে বললো ‘বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজে দেখি কিছু পাওয়া যায় নাকি। তারপর ধ্রুব আর অবনি চেক করতেই দেখে একটা লোক আফিহাকে নিয়ে বাড়ির বাহিরে গেলো। ধ্রুব বললো এই লোকটায় আফিহাকে নিয়ে গেছে।’

অবনি কৌতুহলবশত বললো
‘ কে এই লোক?

ধ্রুব তখন অবনিকে বললো
‘ কাল আমি লিহানকে মে’রেছি যার জন্য ওই এই কাজ করতে পারে তাছাড়া আর কেউ না।’

অবনি ভেজা কন্ঠে বললো
‘ কোথায় খুজবো ওকে?

ধ্রুব কিছু একটা ভেবে বললো
‘ আমাদের বাড়িতে সিসিটিভি লাগানো আছে সেটা আমাদের পরিবার ছাড়া আর কেউ জানে না আমি যতটুকু জানি। আর লিহানও জানে না। রাগের বসে মানুষ অনেক ভুল কাজ করতে পারে। আমরা এক কাজ করতে পারি লিহানের লোকেশন ট্রাক করে কোথায় আছে তা জানতে পারি।’

অবনি বললো আচ্ছা। ধ্রুব অবনির দিকে তাকিয়ে বললো কিছু হবে না চিন্তা করিস না।’

অবনি কিছু বললো না। তারপর ধ্রুব লিহানের লোকেশন হ‍্যাক করে ও কোথায় আছে তা জানতে পারলো। ধ্রুব আর অবনি সেই জায়গাই যাওয়ার জন্য রওনা হলো। ধ্রুব অবনিকে অনেক বার বলেছে তোকে যেতে হবে না কিন্তু অবনি তো নাছোড়বান্দা সে যাবেই।

এদিকে

লিহান আফিহাকে একটা অন্ধকার রুমে নিয়ে এসে বেধে রেখেছে। আফিহার জ্ঞান ফিরতে দেখে লিহান লাইট জ্বালিয়ে বললো ‘ ফাইনালি তোর জ্ঞান ফিরেছে।’

আফিহা লিহানের কন্ঠ শুনে ভয় পেয়ে যায়। আফিহা ভয়ার্ত কন্ঠে বলে’ তুমি!আমি এইখানে কেনো?
এই বলে আফিহা দাড়াতে যাবে কিন্তু দাড়াতে পারছে না আফিহার হাত চেয়ারে বেধে রেখেছে। আফিহা ভয়ে কান্না করে বললো ‘ আমার হাত বেধেছো কেনো? খুলো আমার হাত।’

লিহান তখন হো হো করে হেসে বললো
‘ তোর জন্য কাল আমাকে সবার সামনে ওই ধ্রুব মে’রেছে। আজ দেখবো কিভাবে তোকে আমার হাত থেকে তোর প্রানের ব্রাদার বাঁচায়।’

আফিহা তখন রেগে কিছুটা জোরে বললো
‘ ছাড়ো আমাকে। ভাইয়া তোমাকে মেরেছে তারপরও তোমার শিক্ষা হয়নি?

লিহান তখন আফিহার কাছে এসে ওর চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে বললো
‘ চুপ একদম চিল্লাবি না। তোর ভাইয়ের প্রতিশোধ আজ তোর উপরে মেটাবো।’এই বলে লিহান আফিহার হাতে বাজে ভাবে স্পর্শ করতে লাগলো। আফিয়া কান্না করে দিলো। হঠাৎ দরজা ভাঙার শব্দে লিহান তাকিয়ে দেখে ধ্রুব দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব রেগে লিহানের কাছে এসে ওকে মা’রতে লাগলো। অবনি দ্রুততার সঙ্গে আফিহার কাছে এসে ওর বাধন খুলে দিয়ে বললো ঠিক আছিস তো বোনু তুই?

আফিহা অবনিকে জড়িয়ে ধরে কেদেঁ বললো,,

#চলবে…..

( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন।গল্প পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ‍্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here