ঘর বাধার স্বপ্ন পর্ব -০৭

#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:৭

আফিহা অবনিকে জড়িয়ে ধরে ভেজা কন্ঠে বললো
‘ আপুই ওই বাজে লিহান ওর নোংরা হাত দিয়ে আমাকে স্পর্শ করেছে।’

অবনি তখন আফিহাকে শান্ত চাহনিতে বললো
‘ কান্না করিস না বোনু ওই লিহানকে উচিত শিক্ষা দিবে ধ্রুব ভাইয়া।’

” ধ্রুব লিহানকে ইচ্ছা মতো মা’রতেছে। বেচারা লিহান ধ্রুবের শক্তির সাথে পেরে উঠছে না। ধ্রুব লিহানকে আধম’রা বানিয়ে দিয়েছে আর একটু মা’রলেই ম’রে যাবে। অবনি ধ্রুবের কাছে এসে বললো ‘আর মে’রো না মরে যাবে বেচারা।’
কিন্তু ধ্রুব তো নাছোড়বান্দা সে ইচ্ছা মতো লিহানের উপরে লা’থি ঘু’সি মারতেছে। অবনি আর কোনো উপায় না পেয়ে ধ্রুবকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো। ধ্রুব চোখ বন্ধ করে রাগটাকে নিয়ন্ত্রণ করে হুম’কি দিয়ে লিহানকে বললো’ তুই আমার ভাইয়ের শালা দেখে তোকে জানে মে’রে ফেললাম না। নেক্সট টাইম যদি তুই আফিহা বা কারো উপরে কু-দৃষ্টি নজরে তাকিয়েছিস এবং ক্ষতি করতে চেয়েছিস তাহলে তোর চোখ উঠিয়ে নিবো আমি মাইন্ড ইট!

অবনি ধ্রুবকে ছেড়ে চিন্তিত কন্ঠে বললো
‘ এইখান থেকে এখন যেতে হবে কেউ এসে গেলে বিপদ হতে পারে।’ ধ্রুব কিছুটা একটা ভেবে বললো হুম।
তারপর আফিহা ধ্রুব আর অবনি রুম থেকে বের হয়ে মেইন গেটের কাছে আসতেই দেখে কিছু লোক ওদের দিকে সন্দেহ দৃষ্টিতে তাকিয়ে কি যেনো বলাবলি করছে। ধ্রুব তাদের কাছে আসতেই একটা লোক ধ্রুবকে বললো এই ছেলে তুমি এই মেয়ে দুটোকে নিয়ে এই বাড়িতে কোন মতলবে এসেছো?

অবনি আর আফিহা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব বললো ‘ একটা কাজ ছিলো যার জন্য এসেছি, ধ্রুবকে আর কিছু বলতে না দিয়ে একটা লোক বললো জানি জানি এই মেয়ে দুটো কে নিয়ে ফষ্টিনষ্টি করতে এসেছো।’

ধ্রুব তখন লোকটার কথায় অবাক হয়ে বললো
‘ কি যাতা বলছেন এই সব আপনারা?

একটা লোক অবনির কাছে এসে ফোড়ন কেটে বললো ‘ তোমাদের তো দেখে মনে হচ্ছে ভালো বাড়ির মেয়ে তাহলে এই ব‍্যবসা করতেছো কেনো?

লোকটার কথায় অবনির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পরলো শেষ মেষ কিনা তার চরিত্র নিয়ে কথা হচ্ছে।’
ধ্রুব রেগে চেচিয়ে বললো ‘ জাষ্ট সেটআপ

আরেকটা লোক মুখ বাকা করে বললো
‘ দেখো দেখো ফষ্টিনষ্টি করে আবার চেচিয়ে কথা বলছে। এদেরকে ধরে বিয়ে দিয়ে দেওয়া উচিত।’

ধ্রুব তখন লোকটার কথায় রূঢ় কন্ঠে বললো
‘ ও আমার বউ হয়। আপনি ওকে নিয়ে বাজে কথা বলতে পারেন না।’

অবনি ধ্রুবের কথা শুনে প্রচন্ত অবাক হয়ে গেলো। একটা লোক তখন বলে’ তোরা যদি বিয়ে করেই থাকিস তাহলে আবার করবি। আমরা চায় না আমাদের এই জায়গার সম্মান নষ্ট হয়ে যাক।’

অবনি ধ্রুবের দিকে রাগি চোখ মুখ করে তাকিয়ে আছে। অবনি চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে। ধ্রুব তো ভেবেছিলো এই কথা বললে লোকজন আর কিছু বলবে তাদেরকে কিন্তু এমন যে হবে তা ভাবেনি। ধ্রুব মিনমিনে কন্ঠে বললো’ আমি তো বিয়ে করেছি আবার কেনো বিয়ে করবো?

লোকজন তখন বললো
‘ তোরা আমাদেরকে মিথ্যা বলতে পারিস আর সমস্যা কি দুইবার বিয়ে করবি।’

ধ্রুব লোকজনকে বোঝাতে চেষ্টা করলো কিন্তু তাড়া ধ্রুবের কোনো কথা না শুনে সামনেই কাজি অফিসে নিয়ে গিয়ে ওদের বিয়ে দিয়ে দিলো। আফিহা মনে মনে অনেক খুশি হলো কারন ধ্রুব যে তার আপুইকে মনে মনে ভালোবাসে সেটা বুঝতে পেরেছে। অবনি চুপচাপ শুধু দেখছে তার সাথে কি হচ্ছে অবনি যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে। লোকজন ওদেরকে বিয়ে দিয়ে যে যার মতো চলে গেলো। অবনি কাজি অফিস থেকে বের হয়ে ধ্রুবের গাড়িতে এসে চুপচাপ বসে রইলো। অবনির চোখ দিয়ে পানি পরতেছে। অবনি ভাবতে লাগলো তার সাথে কি হয়ে গেলো এই কথা যদি বাড়ির সবাই জানে তাহলে কেলেঙ্কারি হয়ে যাবে আর আবিদ তাকে তো সে ভালোবাসে তাহলে কিভাবে তার ভাইকে নিজের স্বামী হিসেবে মেনে নিবে?

ধ্রুব অবনির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। আফিহা আশ্বাস দিয়ে ধ্রুবকে বললো তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।’

তারপর ধ্রুব আর আফিহা অবনির কাছে এসে দেখে অবনি কান্না করতেছে ধ্রুব অবনির ঘাড়ে হাত রেখে বললো’ কান্না করছিস কেনো?

অবনি এক ঝাটকা দিয়ে ধ্রুবের হাত সরিয়ে রেগে চেচিয়ে বললো ‘ ছোঁবেন না আমায়। শুধু মাত্র আপনার জন্য আমার জীবনটা শেষ হয়ে গেলো আজ। কে বলেছিলো ওনাদেরকে বলতে আমি আপনার বউ হয়? এখন দেখলেন এর ফল কি হলো?

ধ্রুব তখন শান্ত চাহনিতে বললো
‘ আমি যদি ওনাদেরকে না বলতাম এই কথা তাহলে ওনারা তোমাকে অনেক খারাপ কথা বলতো।’

অবনি কান্না করে বললো
‘ না আমি আপনাকে স্বামী হিসেবে মেনে নিবো না আমি আপনাকে ক্ষমা করবো।’

ধ্রুব তখন মলিন কন্ঠে বললো
‘ তুমি চিন্তা করো না কিছু দিনের মধ্যে আমি তোমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো। বাড়ির লোকজনকে আজকের ঘটনা কেউ বলবে না। আর কখনো তোমার উপরে স্বামির অধিকার দাবি করবো না আমি।’

তারপর ধ্রুব গাড়ি চালাতে লাগলো। অবনি ডুকরে কেদেঁ উঠে বললো’ একদিকে ওনার ভাই আমাকে মানুষ থেকে তো লাশ বানিয়ে দিয়েছে এখন ওনি আমার জীবনটাকে বিষাক্ত করে দিয়েছে। অবনির এখন চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছা করতেছে সে আর কত কষ্ট সহ‍্য করবে? অবনি তার দাদির কথা ভাবতেই ভয় পেয়ে গেলো সে যদি কখনো জানে তাহলে তাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিবে। অবনি কান্না করতে করতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে। ধ্রুব মনে মনে বললো’ আমার জন্য অবনির চোখে পানি আমার ঠিক হয়নি ওই লোকদের কাছে ওকে বউ বলতে।’ ধ্রুব অবনির দিকে টিস্যু দিয়ে বললো’ চোখ মুছে নে।

অবনি তখন আস্তে করে টিস্যুটা নিয়ে চোখ মুছতে লাগলো।

এদিকে
” আবিদের মা ধ্রুবকে খুজতে লাগলো কিন্তু পেলো না। আবিদের মা আবিদের রুমে এসে চিন্তিত কন্ঠে বললো’ ধ্রুব কোথায় আবিদ?

আবিদ তখন ভ্রু উলটে বললো
‘ জানিনা আশেপাশেই আছে কোথাও।কল দাও তুমি ধ্রুবকে।”

আবিদের মা আচ্ছা বলে কল দিলো কিন্তু রিং হয়ে কেটে গেলো। আবিদের মা বললো কল ধরছে না তো

আবিদ তখন বললো
‘ চিন্তা করো না আমি দেখছি।’

এই বলে আবিদ রুম থেকে বের হবে তার আগেই দেখে ফোন বেজে উঠলো। আবিদ ফোন হাতে নিয়ে দেখে মাইশার বাবার কল। আবিদ অবাক হয়ে গেলো। আবিদ ফোন ধরে কানে নিতেই অপর পাশ থেকে মাইশার বাবা থমথমে গলায় বললো’ আবিদ মাইশাকে পাওয়া যাচ্ছে না ও বলে মেহের নামে এক ছেলের সাথে পালিয়ে গেছে ওর ফ্রেন্ড বলেছে আমাদেরকে।’
কথাটা শুনে আবিদের পায়ের তলা থেকে জেনো মাটি সরে গেলো। মাথাটা যেনো ভোঁ ভোঁ করে উঠলো। আবিদ বললো কি বলছেন এই সব?

মাইশার বাবা নিচু কন্ঠে বললো
‘ সত্যি বলছি। ও তো তোমাকে ভালোবাসে তাহলে কেনো ওই ছেলেটার সাথে!আমার মনে হয় ওকে কেউ কিডন্যাপ করেছে।’

আবিদ কিছু না বলেই কল কেটে দিলো। অপর পাশ থেকে মাইশার বাবা হ‍্যালো হ‍্যালো করতেছে আবিদের কোনো উত্তর না পেয়ে দেখে কল কেটে দিছে। কল ফুল সাউন্ডে ছিলো যার জন্য আবিদের মা শুনতে পেরেছে। আবিদের মা কিছুটা রেগে বললো’ কি বলছে আবিদ ওনারা এই সব? তুমি জানো সবাই যদি এই কথাটা জানতে পারে তাহলে আমাদের পরিবারের সম্মান সব ধুলোয় মিশে যাবে।’

আবিদ পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আবিদের মা রেগে রুম থেকে বের হয়ে তার শাশুড়ির রুমে এসে তাকে বললো’ মাইশা পালিয়েছে।’

আবিদের দাদি নিজেদের বাড়ির সম্মান বাঁচাতে সবাই কে কান্নার নাটক করে বললো’ আবিদের হবু বউ খারাপ মেয়ে ছিলো। অনেক ছেলেদের সাথে সম্পর্ক ছিলো এখন পালিয়েছে।’ সবাই তার কথা বিশ্বাস করলো। ছেলে পক্ষ যতই অন‍্যায় করুক না কেনো তাড়া যদি মিথ্যা বলে তাহলে সমাজ তাদের মিথ্যাটায় বিশ্বাস করে। আবিদের ফোনে টুং করে মেসেজ আসলো। আবিদ মেসেজটা পরে দেখে তাতে লিখা ” আবিদ তুমি যেমন অবনির সাথে প্রতারণা করেছো তেমন আমি তোমার সাথে করলাম। এইবার দেখো কষ্ট কাকে বলে।’ আবিদ মেসেজটা পরে অপরাধির মতো ফোনের দিকে তাকিয়ে রইলো। আবিদ মনে মনে বললো গায়ের রং দেখে ভালোবাসা উচিত না। অবনি কালো দেখে ওর পবিত্র ভালোবাসা কে গ্রহণ করিনি। আমি অনেক বড় অন‍্যায় করেছি অবনির সাথে এর ফল এখন পাচ্ছি।’

কিছুক্ষন পর
” ড্রয়িং রুমে বসে আছে সবাই। শুধুমাত্র ধ্রুব অবনি আর আফিহা বাদে। আবিদের দাদি একটা ডিসিশন নিয়েছে তা সবাই কে বলবে। আবিদের মা কৌতূহল নিয়ে বললো কি বলবেন বলেন?

আবিদের দাদি বললো
‘ আমি চাই অবনির সাথে আবিদের বিয়ে দিতে।’
আবিদ তার দাদির কথায় খুশি হলো কারন সেতো এটাই চেয়েছিলো।

আবিদের মা কিছু বলবে তার আগেই দেখে,,

#চলবে…
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। সামনে কি হতে চলছে অনুমান করুন। গল্প পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ‍্যাপি রিডিং।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here