#ঘর_বাধার_স্বপ্ন
#আরোহী_ইসলাম
#পর্ব:১২
অবনি রেগে বললো’ আজকে তুমি বিছানায় ঘুমাতে পারবে না। এইটাই তোমার শা’স্তি। যদি বিছানায় আসতে চাও তাহলে চিমটি প্লাস কামর খেতে হবে।’
ধ্রুব চোখ মুখ ছোট করে বললো
‘ তাহলে কোথায় ঘুমাবো?
অবনি বললো
‘ সোফায়।’
ধ্রুব কিছু বলবে তার আগেই নিলিমা এসে ধ্রুবের হাত ধরে ন্যাকা ন্যাকা কন্ঠে বললো’ ধ্রুব চলো বাহিরে ঘুরতে যায়।’
ধ্রুব আস্তে করে নিলিমার থেকে হাত সরিয়ে বললো
‘ আমার কাজ আছে তুমি আবিদকে নিয়ে যাও।’
নিলিমা তখন বললো
‘ আমি আগে না তোমার কাজ আগে ধ্রুব?
অবনি শান্ত চাহনিতে বললো
‘ নিলিমা তুমি অন্য কাউকে নিয়ে যাও ওনার কাজ আছে বললো তো তারপরও কেনো জোর করছো?
অবনি কথা শুনে নিলিমা চোখ মুখ কঠোর করে রুম থেকে চলে গেলো। ধ্রুব অবনিকে বললো’ আমাকে নিয়ে এতো জেলাস হচ্ছো কেনো?
অবনি ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে বললো
‘ আমি তোমার ভাগ কাউকে দিতে পারবো না। তুমি নিলিমার সাথে কথা বলতে যাবে না। যদি দেখি ওই শাকচুন্নির সাথে কথা বলতে তাহলে তোমাকে আজকের শাস্তির মতো সারাজীবন শাস্তি পেতে হবে।’
এই বলে অবনি রুম থেকে বের হয়ে গেলো। ধ্রুব অবনির কথা শুনে মুচকি হাসলো। অবনি তাকে অনেক ভালোবাসে ভাবতেই ধ্রুবের মুখে হাসি চলে আসলো। ধ্রুব বিছানায় বসে ল্যাপটপে কাজ করতে লাগলো।
নিলিমা রেগে ধ্রুবের রুম থেকে বের হয়ে নানির রুমে আসলো। আবিদের দাদি বললো’ কি হয়েছে তোর? রেগে আছিস কেনো?
নিলিমা রূঢ় স্বরে বললো’ ধ্রুবকে আমার পছন্দ হয়েছে আর তুমি জানোই ছোটবেলা থেকে অবনির থেকে ওর প্রিয় জিনিস আমার হয়।’
অবনির দাদি তখন শান্ত কন্ঠে বললো ‘ ধ্রুব অবনিকে ভালোবাসে আর অবনিও তুই আর কোনো অঘটন করিস না।’
নিলিমা মুখ বাকা করে বললো
‘ তুমি কি অবনির হয়ে সাফাই গাইছো নাকি? শুনো তোমাদের কাউকেই আমার প্রয়োজন নেই।’ এই বলে নিলিমা চলে গেলো। অবনির দাদি নিরবে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো। নিলিমা নিজের রুমে এসে পৈশাচিক হাসি দিয়ে বললো’ ধ্রুবকে আমার ভালো লেগেছে আর আমার পছন্দের জিনিস কাউকে নিতে দেয় না,বলেই রহস্যময় হাসি দিলো।
অবনি নিচে আসবে হঠাৎ নিলিমার রুমের সামনে এসে নিলিমার কথা শুনে বিরবির করে বললো’ এই শাকচুন্নিটাকে অতি তাড়াতাড়ি তাড়াতে হবে দেখছি।’
অবনি বিরবির করতে করতে চলে গেলো
রাতে
খাবার খাওয়ার জন্য সবাই টেবিলে বসে আছে শুধু মাত্র নিলিমা বাদে। অবনি খাবার বেড়ে দিচ্ছে। নিলিমা ড্রয়িং রুমে এসে ধ্রুবের পাশে বসে পরলো। ধ্রুব অবনির জন্য চেয়ারটা রেখেছিলো। কিন্তু নিলিমা এসে বসলো। অবনি ধ্রুব আর নিলিমার দিকে তাকিয়ে আছে। অবনি নিলিমাকে ভাত দিয়ে আফিহাকে ভাত দিবে তার আগেই নিলিমা অবনিকে বললো ‘ তুই ধ্রুবকে ভাত দেতো।’
ধ্রুব বললো
‘ আমার লাগবে না।’
নিলিমা ন্যাকামো করে বললো ‘ আমার জন্য হলেও একবার নাও।’
ধ্রুবের নানি নিলামার কথা শুনে বললো
‘এই তুই ধ্রুবকে নাম ধরে ডাকছিস কেনো? ধ্রুব তোর অনেক বড় বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় তা জানিস না?
ধ্রুবের নানুর কথা শুনে নিলিমার মুখ চুপসে গেলো। নিলিমা চুপ করে খেতে লাগলো। অবনি তো মুচকি হাসতেছে।
কিছুক্ষন পর সবার খাওয়া শেষ শুধু অবনি আর অবনির মা ধ্রুবের মা বাদে। অবনির মা অবনিকে বললো ‘ বসেক খেয়ে নে।’
অবনির খেতে ইচ্ছা করতেছে না তাই বললো আমি খাবো না তুমি খাও।’ এই বলে অবনি রুমে আসলো।
অবনি রুমে এসে দেখে ধ্রুব ভদ্র ছেলের মতো বালিশ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবনি দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ধ্রুবকে বললো ‘ তুমি বিছানায় ঘুমাও আমি সোফাই ঘুমাচ্ছি। তোমার অসুবিধা হতে পারে সোফায় ঘুমালে।’
ধ্রুব তখন শান্ত কন্ঠে বললো
‘ আমি সোফায় শুতে পারবো সমস্যা নাই।’
ধ্রুবের কথা শুনে অবনি কিছুটা জোরে বললো
‘ বললাম না আমি সোফায় ঘুমাবো?
ধ্রুব বললো’ ওকে ফাইন আমি সোফায় ঘুমাবো না তুইও না, এই বলে ধ্রুব অবনিকে কোলে নিয়ে বিছানায় নিয়ে এসে লাইট অফ করে বললো’ রেগে আছিস কেনো বউ? সরি বলছি তো?
ধ্রুবের মুখে বউ ডাক শুনে অবনির সাড়া শরীরে অদ্ভুত শিহরণ বয়ে গেলো। অবনি বললো’ আমি রেগে নেই।’ ধ্রুব মুচকি হেসে অবনির ঠোঁটে হাত দিলো। অবনি কেপে উঠলো। ধ্রুব হেসে অবনিকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলো।
কিছুদিন পর
এই কয়েকদিনে নিলিমা ধ্রুবকে নানানভাবে নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে চেয়েছে কিন্তু নিলিমা তো জানেনা ধ্রুব তার অবনিকে ভালোবাসে তাকে ছাড়া সে অন্য কোনো নারীতে আকৃষ্ট হবে না। বিকাল বেলায় অবনি ড্রয়িং রুমে বসে আছে।
নিলিমা আর তার মা এসে অবনিকে বললো ‘ অবনি শুন তোকে একটা কথা বলি?
অবনি ভ্রু উলটে বললো’ বলো।’ নিলিমার মা অবনির দিকে ফোন ধরে একটা ভিডিও দেখালো। অবনি ভিডিওটা দেখে অবাক হয়ে গেলো। ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ধ্রুবের বাবা একজনকে টাকা দিয়ে বলতেছে আজ ** এই পার্কে রফিকুল আসবে। তুই ওকে গাড়ি চাপা দিয়ে শেষ করে দিবি। তারপর তুই বাংলাদেশ থেকে চলে যাবি আর কেউ কখনো জানতে পারবে না রফিকুলকে খু’ন করা হয়েছে। ওর সব সম্পত্তি আমার নামে করে নিবো।’
অবনি প্রচন্ত অবাক হয়ে গেলো শেষ মেষ কিনা তার কাকাই তার বাবাকে খু’ন করলো। নিলিমার মা বললো’ কান্না করিস না অবনি। তোকে তোর বাবার খু’নের বদলা নিতে হবে।’
নিলিমা অবনির কাধে হাত রেখে বললো
‘ তুই কি চাস না নিজের বাবার খু’নের বদলা নিতে?
অবনি কান্না করে দিলো। নিজেকে বড্ড অসহায় মনে হচ্ছে। অবনি ভাবতেই পারছে না তার কাকাই তার বাবাকে খু’ন করেছে।অবনি দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। নিলিমা তার মাকে কিছু বলে রুমে চলে গেলো। অবনি রুমে এসে দেখে ধ্রুব বসে আছে। অবনি কোনো কথা বললো না ফোন নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলো। ধ্রুব বেশ অবাক হলো। ধ্রুব অবনির কাছে এসে বললো’ কি হয়েছে তোর?
অবনি বললো’ কোই কিছু না।’ ধ্রুব বললো ‘ কিছু তো হয়েছে
অবনি চুপ করে রইলো।
বেশ কিছুক্ষন পর
অবনি রুমে বসে আছে নিলিমা এসে অবনিকে বললো’ অবনি আম্মু তোকে ডাকে।’
অবনি আচ্ছা বলে ফুপির রুমে আসলো। নিলিমার মা অবনিকে বললো’ শুন অবনি আমার কাছে একটা আইডিয়া আছে।’ অবনি প্রশ্ন চোখে বললো কি?
নিলিমার মা বললো’ ধ্রুবকে তুই মে’রে ফেল তাহলে তোর বাবার খু’নের বদলা নিতে পারবি।’
নিলিমার মায়ের কথা শুনে অবনির মাথায় বা’জ পরলো। অবনি বললো’ মানে?
নিলিমার মা অবনিকে বললো’ হ্যাঁ।’ অবনি রেগে বললো’ জাষ্ট সেটআপ আমি কখনোই পারবো না ওনাকে খু’ন করতে। আর ধ্রুব তো তোমার ভাইয়ের ছেলে তাহলে কিভাবে বলো নিজের ভাইয়ের ছেলেকে খু’ন করতে?
নিলিমার মা চোখ মুখ শক্ত করে বললো
‘ ধ্রুবের বাবা আমার শ’ত্রু। তুই যদি ধ্রুবকে না মা’রিস সমস্যা নাই আমি আমার ভাইয়ের মৃত্যুর বদলা নিবো।’
অবনি তখন শান্ত চাহনিতে বললো’ তুমি না আমি নিবো বদলা।’
নিলিমার মা হাসি দিয়ে বললো’ এই বার সঠিক পথে এসেছিস। তুই ধ্রুবের দিকে এখন থেকে নজর রাখবি আর কালকেই ওকে শেষ করে দিবি।’ অবনির মা অবনিকে ডাক দিতেই অবনি চলে গেলো। নিলিমার মা আর নিলিমা হাসি দিলো।
অবনির মাথা ঘুরতেছে। অবনির ফোনে হঠাৎ মেসেজ আসলো অবনি মেসেজটা দেখে ঠোটের কোনে মুচকি হাসি চলে আসলো।’
#চলবে…
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন। পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো। হ্যাপি রিডিং।)