চন্দ্ররঙা_প্রেম_২ পর্ব ৮

#চন্দ্ররঙা_প্রেম_২
#পর্বঃ৮
#আর্শিয়া_সেহের

রাত প্রায় আটটার কাছাকাছি। পিহুর এখনো জ্ঞান ফেরেনি। সবাই মিলে তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে। রুশান সেদিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসছে। এর মধ্যেই রুশানের ফোনে একটা এসএমএস এলো। এসএমএস টা সীন করে মুচকি হাসলো রুশান। নিজ জায়গা থেকে উঠে এগিয়ে এলো পিহুর দিকে। দুহাত আড়াআড়ি ভাবে বুকে বেঁধে বেশ ভাব নিয়ে বললো,
-“বেহুঁশ মানুষের হুঁশ ফেরানো যায় কিন্তু বেহুঁশ হওয়ার ভান ধরে থাকা মানুষের হুঁশ কি ফেরানো যায়?”

পিহুর আশেপাশে বসে থাকা সকলেই ভ্রু কুঁচকে রুশানের দিকে তাকালো। তারা কেউই রুশানের কথা বুঝতে পারেনি।
রুশান শব্দ করে হাসলো। পিহুর পাশে এসে বললো,
-“কাম অন মিস পিহু। এবার উঠে পড়ুন।”

পিহু চোখ বন্ধ করেই ফিক করে হেঁসে উঠলো। এতক্ষণ খুব কষ্টে হাঁসি চেপে রেখেছিলো সে। তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য যে পাড়া প্রতিবেশীর এতো আগ্রহ সেটা বেহুঁশ না হলে জানতেই পারতো না।
পিহু চোখ মেলে উঠে বসলো। তার চারপাশের মানুষগুলো কেমন অদ্ভুত দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। কেউ আবার রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করেছে পিহুর দিকে। রাফিয়া বেগমও কম অবাক হননি। তার তো হাত পা কাঁপছিলো মেয়ের চিন্তায়।

পিহুকে এভাবে উঠতে দেখে সবচেয়ে বেশি ঘাবড়ে গেলো আরিয়ান। পিহু আর রুশানের চালাকিটা এখনো ধরতে পারেনি সে।
পিহুর পাশে বসা এক বৃদ্ধা পিহুর মাথায় থাপ্পড় দিয়ে বললো,
-“হতচ্ছাড়ি,এতো নাটক করলি ক্যান? নাটক কইরাও বা লাভ কি হইলো? ওই পোলারেই বিয়া করতে হইবো তোর।”

পিহু বৃদ্ধার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। যে লোকটা তার এতো উপকার করেছে তার ক্ষতি সে কিভাবে করবে? হয়তো এটা একটা সঠিক সময় ছিলো তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে নেওয়ার কিন্তু তার ভালোবাসার মানুষেরও তো অন্য একটা ভালোবাসার মানুষ আছে। সে কেন দুটো জীবন নষ্ট হওয়ার দায় নেবে?
আজ যদি সে রুশানের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাকে বিয়ে করতো তাহলে হয়তো একদিন এই দুনিয়াতে কেউ কাউকে সাহায্য করতে একশবার ভাবতো।

পিহুর ধ্যান ভাঙলো অন্য আরেকজনের ধাক্কায়। তিনি বেশ উঁচু গলায় বললেন,
-“কস না ক্যান ছেড়ি? এমন নাটক করলি ক্যান?”
পিহু কিছু বলার আগেই তাদের বাড়ির সামনে একটা গাড়ি এসে থামলো। রুমঝুম হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো পিহুদের বাড়ির মধ্যে। এদিক ওদিক তাকিয়ে শুধু রুশানকে খুঁজছে সে। রুশান সব মহিলাদের সাইড করে বেরিয়ে এলো। রুমঝুমের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললো,
-“আমি এদিকে, আপু।”

রুমঝুম দৌড়ে রুশানের কাছে এলো। রুশানের মুখে , মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
-“সব ঠিক আছে তো, ভাই? কোনো সমস্যা হয়নি তো? দেখ আমার হাত-পা কেমন কাঁপছে। তোর দুলাভাই আমাকে সব বলার পর থেকে আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গেছিলো।”

রুশান তার বোনের পাগলামি দেখছে । ভাইয়ের কিছু হয়ে গেছে কি না ভেবে কতটা হাঁসফাঁস করেছে মেয়েটা।
বড়বোন সত্যিই মায়ের মতো হয়। মায়ের আদলে গড়ে ওঠা এক নারীর নামই বড়বোন।

শান এসে রুমঝুমের পেছনে দাঁড়িয়ে বললো,
-“তোমাকে বললাম উত্তেজিত হইয়ো না। সব ঠিক আছে তো। তোমার ভাই গাধা নাকি যে বিয়ে দিতে চাইলেই বিয়ে করে নিবে?”
রুমঝুম রাগী চোখে তাকিয়ে বললো,
-“ও কেন গাধা হতে যাবে? গাধা তো তুমি।”
শান মাথা চুলকে বললো,
-“আসলেই আমি গাধা। নাহলে কি সেদিন তোমার কথামতো তোমাকে ওভাবে বিয়ে করতে রাজি হতাম?”
রুমঝুমের রাগী দৃষ্টিতে এবার আরো রাগ জমা হলো। তবে সে কিছু বলার আগেই উপস্থিত হলো তনিম। আর তনিমের গলা জড়িয়ে ধরে তার কোলে বসে আছে সাঁঝ।

তনিমকে দেখে আরিয়ানের অবস্থা এবার পুরো খারাপ। এই ছেলে ছিলো না বলেই তো এতো প্ল্যান করলো সে।‌ কোত্থেকে চলে এলো আবার?

রুশান তনিমের দিকে ভ্রু উঁচু করে তাকিয়ে শয়তানি হাঁসি দিলো। তনিমের কোল থেকে সাঁঝকে নিজের কোলে নিতে নিতে বললো,
-“আব তো তু গেয়া মেরি ভাই। রেডি তো?”
বিনিময়ে তনিম মাথা নিচু করে হাসলো।
রুশান শব্দ করে হেঁসে বললো,
-“ছেলে আবার লজ্জাও পায়।”

সাঁঝকে নামিয়ে দিয়ে রুশান এবার সবার দিকে তাকালো। সবাই এমনভাবে তাকিয়ে আছে যেন কোনো রিয়ালিটি শো চলতেছে। রুশান গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
-“এখন যেটা বলছি সবাই শুনুন। আমার মনে হয় এলাকার সবাই এখানে আছেন। তো এখন বলি পিহু কেন বেহুঁশ হওয়ার অভিনয় করেছিলো। আসলে আমিই ওকে বলেছিলাম বেহুঁশ হওয়ার অভিনয় করতে। কারন আপনারা যেমনটা ভেবেছেন আমাদের মধ্যে তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। আজ পিহুর বাড়িতে আসারও একটা কারন আছে যেটা আপনাদের বলবো।”
শেষ কথাটা বলার সময় রুশান আড়চোখে আরিয়ানের দিকে তাকালো। তবে আরিয়ানের এদিকে কোনো খেয়াল নেই। সে ফোনে কাউকে ট্রাই করছে।

রুশান সবার দিকে তাকিয়ে রুমঝুম আর শানকে দেখিয়ে বললো,
-“এই দু’জন আমার বোন আর দুলাভাই। পিচ্চিটা আমার ভাগ্নি।”
অতঃপর তনিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আর এটা হলো তনিম। তনিম শেখ। আমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট এবং আপনাদের পিহুর হবু বর। সে যদি পিহুকে বিয়ে করতে রাজি থাকে তাহলে নিশ্চয়ই আপনাদের আপত্তি থাকবে না। আর তাছাড়া….”

আরিয়ানকে ফোন কানে পিহুদের বাড়ির পেছন দিকে যেতে দেখে কথা থামিয়ে দিলো রুশান।‌ পিহুর এলাকার দু’জন পুরুষ আর তনিমকে নিয়ে চুপিচুপি পা ফেলে আরিয়ানের কাছাকাছি চলে গেলো।
এদিকে পিহু হতভম্ব হয়ে বসে আছে। তনিমের সাথে তার বিয়ে হবে? রুশানের ইশারায় সে বেহুঁশ হওয়ার নাটক করলেও এর পরবর্তী প্ল্যানের কিছুই সে জানে না। তনিম ছেলেটা খারাপ না বা তনিমকে সে ভালোবাসতে পারবে কি না এসব নিয়ে পিহুর চিন্তা হচ্ছে না। পিহুর চিন্তা তার পরিবার নিয়ে। এমন পরিবার ছেড়ে সে বিয়ে করবে কিভাবে?

-“তনিম ক্যামনে আসলো এখানে? তুই না কইছিলি তনিম দেশের বাইরে গেছে? তোর কথা শুনে এমন প্ল্যান করছি আমি। শিকাররেও জালে আটকাইছি আর এখন তনিম হাজির।‌ কিভাবে?? তোরে সামনে পাইলে জ্যান্ত পুইতা ফেলবো আমি। আমার এতো সুন্দর সাজানো প্ল্যান সব বরবাদ হয়ে যাবে। আমি না পামু পিহুরে আর না শাস্তি দিতে পারমু ওই রুশানরে । হালায় বহুত চালাক। ”
আরিয়ান ফোনে বেশ শাসিয়ে কথাগুলো বলছে কাউকে। তনিম পেছন থেকে গিয়ে আরিয়ানের কাঁধে হাত রেখে বললো,
-“এতো কষ্ট করে প্ল্যান করতে কে বলছিলো ভাই? আমারে বললে আমি সহজ বুদ্ধি দিতাম।”

তনিমের কথা শুনে আরিয়ান লাফিয়ে উঠলো। সে তো ভেবেছিলো তাকে কেউ দেখবেনা বা তার কথা শুনবেনা। তনিমকে দেখে আরিয়ান বেশ ভয় পেয়ে গেলো। তবে ঘাম ছুটে গেলো যখন সে রুশানসহ বাকি দু’জন লোককে তার দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে থাকে দেখলো। এরকম ভাবে ফেঁসে যাবে সেটা কল্পনাও করেনি আরিয়ান।

হুট করেই আরিয়ান দৌড় দেওয়ার সাথে সাথেই তনিম চেপে ধরলো আরিয়ানকে। রুশান এবং বাকি লোক দু’জনও এগিয়ে এলো। লোক দু’জন আরিয়ানকে চ্যাঙ দোলা করে তুলে নিয়ে বললো,
-“আকাম কইরা পালাইতে চাস? পালাইতে দিতেছি তোরে দাঁড়া।”

আরিয়ানকে এনে পিহুদের উঠোনের ডান পাশের মোটা গাছের সাথে বেঁধে ফেললো লোক দুইটা। তারপর উপস্থিত সবার দিকে তাকিয়ে আরিয়ানের প্ল্যানের ব্যাপারে বললো। এলাকার সবাই এবার পিহুর দিকে সহানুভূতির দৃষ্টিতে তাকালো। পিহু একবার সবার দিকে দেখলো তারপর তাচ্ছিল্য ভরা হাঁসি ছুড়ে দিলো।
এতক্ষণ যারা তার চরিত্র নিয়ে বাজে কথা বলেছে এখন তারাই তাকে সহানুভূতি দেখাতে আসছে। কি আজব দুনিয়া।

এলাকার এক যুবক গিয়ে আরিয়ানের বাড়িতে ফোন করলো। আরিয়ানের বাবা-মাকে তাদের সন্তানের কুকীর্তি সম্পর্কে জানালো এবং বললো তারা না এলে আরিয়ানকে গনপিটুনি দিবে। আরিয়ান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে গাছের সাথে বাঁধা অবস্থায়।

রুশান এবার সবাইকে তার এখানে আসার মূল কারন বললো। এলাকাবাসী রুশানের কাছে ক্ষমা চাইলো তাদের অজ্ঞতার কারণে এমন ভুল করায়। রুশানও পিহুর মতোই তাচ্ছিল্য করে হাসলো। অতঃপর সবার উদ্দেশ্যে বললো,
-“এখন পিহুর বিয়ে না হলেও আপনাদের সমস্যা নেই সেটা আমি জানি। কিন্তু আপনারা পরবর্তীতে ঠিক এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পুনরাবৃত্তি করবেন না সেটার নিশ্চয়তা নেই। তাই পিহুর বিয়েটা হবে। আপনাদের সামনেই হবে। ”

তনিমের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তুমি কিছু বলবে তনিম?”
তনিম এগিয়ে এসে বললো,
-“আমার কোনো সমস্যা নেই। কাল আমার মা গ্রাম থেকে এলেই আমি বিয়ে করতে পারবো।”
এতোক্ষণ চুপ করে পুতুলের মতো সব কথা শুনলেও এবার মুখ খুললেন রাফিয়া বেগম। তনিমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“তুমি পিহুকে মন থেকেই বিয়ে করতে চাইছো? নাকি তোমার বসকে বাঁচানোর জন্যই বিয়ে করতে চেয়েছিলে?”

তনিম মানসম্মানের মাথা খেয়ে ফটাফট বলে দিলো,
-“আরে না না শ্বাশুড়ি আম্মা। আমি এই বিয়ে করতে চাইছি কারন আমি আপনার মেয়েকে ভালোবাসি। ”

তনিমের অকপট স্বীকারোক্তিতে পিহু অবাক হলো। তনিম তাকে ভালোবাসে? সে রুশানকে ভালোবাসে জেনেও ছেলেটা তাকে ভালোবাসে? পিহু তাকে কখনো ভালোবাসতে পারবে কি না সেটা না জেনেও ভালোবাসে? আচ্ছা মানুষ এতো ভালোবাসে কিভাবে?
পিহু উত্তর পায়না । সে শুধু চুপচাপ চেয়ে দেখছে সবার কাজকাম।

প্রতিবেশীরা একে একে চলে যাচ্ছেন সবাই। এতোক্ষণ গমগম করা বাড়িটা ধীরে ধীরে নিশ্চুপ হতে শুরু করলো। প্রিয়া এতো মানুষ দেখে ঘর থেকে বের হয়নি। পিহুর বাবাও বিছানায় পড়ে আছেন।‌ তিনি হয়তো জানেন না তার মেয়ের উপর দিয়ে এতোক্ষণ কি ঝড় গেছে । আর জানলেও বা কি? তার তো কিছুই করার নেই।

রুমঝুম রাফিয়া বেগমের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রাফিয়া বেগমের হাত ধরে মুচকি হেঁসে বললো,
-“তনিম ছেলেটা অনেক ভালো, আন্টি। পিহু খুব ভালো থাকবে।”
রাফিয়া বেগম একটু শুকনো হাঁসি দিলেন।
মলিন মুখে বললো,
-“ছেলে যতই ভালো হোক মেয়ের জন্য বাবা মা’র চিন্তা হবেই।”
রুমঝুম একটু হাসলো। শান কোথা থেকে এসে বললো,
-“আল্লাহ যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন। আপনি আপনার আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করুন আন্টি।‌ কাল ওদের বিয়েটা মোটামুটি জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই হবে। দু’জনের বড় ভাই হিসেবে সবটা আমি আর রুশান সামলাবো।”
রাফিয়া বেগম কিছুটা স্বস্তি পেলেন। এটুকু সময়ে বুঝেছে এই মানুষগুলো খারাপ না। সে উঠে গেলো তার কিছু আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত দেওয়ার জন্য। তাছাড়া বোনের বিয়েতে সবচেয়ে বেশি মজা যে করবে তাকেই তো এখনো বলা হলো না।বড় বোনের বিয়ের সময় সবচেয়ে বেশি আনন্দ করে ছোট বোন। রাফিয়া বেগম তার ছোট মেয়েকে পিহুর বিয়ের খবর দিলে সে কেমন রিয়েক্ট করবে একা ভেবেই খুশি হয়ে যাচ্ছেন। কত দিন হয়ে গেলো তার কোলের সন্তানটাকে সে দেখেনি।

রাফিয়া বেগম চলে গেলে রুমঝুম পিহুর দিকে এগিয়ে গেলো। পিহুর সামনে বসে পিহুর থুতনি ধরে মুখটা উঁচু করলো। উজ্জ্বল শ্যামলা বর্ণের মেয়েটা যেন মায়া দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে। কান্না ভেজা মুখটাও কি মিষ্টি দেখতে। পিহু হা করে তাকিয়ে আছে রুমঝুমের দিকে। তার চোখে দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি বুঝি রুমঝুমই। পিহুর এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে অবাক হলো রুমঝুম। পিহুকে ঝাঁকি দিয়ে বললো,
-“কি হয়েছে পিহু? এভাবে কি দেখছো?”
পিহু নড়েচড়ে উঠলো। মিষ্টি হেঁসে বললো,
-“আপনি খুব সুন্দর আপু।”
রুমঝুম দারুন করে হাসলো। পিহু সেদিকে তাকাতেই সাঁঝ এসে পিহুর কোলে বসে পড়লো। পিহুর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“তুমি বুঝি আমার তনিম মামার আন্টি?”

রুশান পেছন থেকে হেঁসে বললো,
-“তোর তনিম মামার আন্টি‌ না ছাগলি, ওটা তোর আন্টি।”
সাঁঝ ঠোঁট দুটো গোল করে বললো,
-“ওওও”
রুশান রুমঝুম দু’জনই হেঁসে ফেললো। তাদের হাঁসি দেখে সাঁঝও হেঁসে ফেললো। পিহু শুধু অবাক চোখে দেখছে। তিনজনের হাঁসিই যেন এক রকম। রুমঝুম আর সাঁঝের হাঁসি পুরোটাই এক। পিহুর চোখটা ঘুরে ফিরে রুশানের হাঁসিতেই আটকে গেলো। মন্ত্রমুগ্ধের মতো সে তাকিয়ে আছে রুশানের দিকে। হঠাৎ করেই পিহুর মনে হলো সে নিষিদ্ধ কাজ করছে। সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিলো সে। কাল থেকে অন্য কারো সাথে তার জীবন জুড়ে যাবে‌। নিষিদ্ধ কোনো ছেলের দিকে মুগ্ধ চোখে তাকানোটা এখন পাপ।

বাইরে থেকে তনিম পিহুকে দেখলো। তার শুকনো মুখটা তনিমকে তার অন্তর অবধি পৌঁছে দিলো। পিহুর মনের অবস্থা তনিম বুঝতে পারছে। মেয়েটাকে কষ্ট পেতে দেখতে তার মোটেও ভালো লাগে না। সে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে মেয়েটাকে সুখে রাখতে।

পিহু রুমঝুমের হাত ধরে বললো,
-“আপু,আমার পরিবারকে কে দেখবে আমার বিয়ে হয়ে গেলে?উনাকে বলবেন যেন আমাকে বিয়ের পরও চাকরি করে আমার এই সংসারটা দেখতে দেয়।”
রুমঝুম হেঁসে বললো,
-“অবশ্যই দিবে পাগলি। এটা নিয়ে চিন্তা করো না। এতোদিন এই পরিবারের কোনো ছেলে না থাকলেও কাল থেকে থাকবে‌। বুঝলে আমার কথা?”

পিহু চিন্তিত মুখে কিছু বলবে তার আগেই রাফিয়া বেগম বেরিয়ে এলেন। হাঁসি মুখে পিহুর দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“তোর মামা,খালারা কাল সকালেই চলে আসবে। সবাইকে বলে দিয়েছি।”
পিহু ছোট্ট মুখ করে বললো,
-“বোন আসবে না?”
রাফিয়া বেগম শব্দ করে হাসলেন। বললেন,
-“শোনো মেয়ের কথা। বড় আপুর বিয়েতে ছোট বোন আসবে না তাই কখনো হয়? তোর মামাতো ভাই বড়টা বাদে সবাই আসবে।”
পিহু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। সে তো ভেবেছিলো তার ছোট বোন হয়তো অভিমান করে আসবে না। অনেকদিন হয়েছে বোনটাকে দেখে না। তার সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলো তার ছোট বোনটা। পরিস্থিতির চাপে ঠিক কতটা কষ্ট মনে পুষে রেখে বোনকে দূরে রেখেছে তা শুধু সে ই জানে। আর কেউ জানবে না এই কষ্টটা আসলে কেমন। জানলেও উপলব্ধি করতে পারবে না হয়তো।

-“কোথায় আমার ছেলে? কি করেছে আমার আরিয়ান? কোথায় ও? আমার ছেলে,আমার ছেলে…।”
আরিয়ানের মায়ের বিলাপে সবাই বেরিয়ে এলো বাইরে। তনিম,রুশান আর এলাকার তিন চারজন আরিয়ানকে বাঁধা গাছটার পাশেই বসে ছিলো। আরিয়ানের মা’কে দেখে তারা দাঁড়িয়ে পড়লো। পিছু পিছু এলো আরিয়ানের বাবা। তার পিছনে আরেকজন ছেলে ঢুকলো। বেশ উঁচু স্বরে বললো,
-“আমার ভাই কই? কি করেছে ও? ওকে নাকি গনধোলাই দিবে? দেখি কার এতো সাহস।ওর দোষ কি শুনি?”

রুমঝুম সহ বাড়িতে থাকা মেয়েরা বারান্দা থেকে উঁকি মেরে দেখলো তাঁদেরকে। আরিয়ানের বড় ভাইকে দেখে রুমঝুমের চক্ষু চড়কগাছ। এই ছেলে আরিয়ানের ভাই?
এলাকার লোকগুলো আরিয়ানের পরিবারের সামনে তাদের ছেলের কীর্তিকলাপ ফাঁস করছে। রুমঝুম দৌড়ে শানের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। শানের হাত টেনে বললো,
-“চিনেছেন এই ছেলেটাকে?”

শান কপাল কুঁচকে বললো,
-“কোন ছেলেকে?”
-“আরে ওই যে, আরিয়ানের বড় ভাই। এ তো সেই ছেলেটা। কলেজে আমাকে ডিস্টার্ব করেছিলো দু’দিন। আপনি আচ্ছা মতো ধোলাই করেছিলেন। কি যেন একটা নাম ছিলো? আ..আর… হ্যাঁ মনে পরেছে। আরাফাত নাম ছিলো।‌ চিনেছেন এবার?”
শান আড়চোখে তাকিয়ে বললো,
-“বাহ! এতো বছর পরও নাম মনে রেখেছো দেখছি‌। ভালো টালো লাগতো নাকি?”

রুমঝুম শানের পিঠে কিল ঘুষি মেরে বললো,
-“কচু লাগতো। দু’টো ভাই ই একরকম হয়েছে। মেয়েদের পেছনে ঘোরা আর তাদেরকে জ্বালাতন করা ছাড়া কাজ নেই এদের।মন চায় এদেরকে কাপড় কাঁচার মতো কেঁচে দেই। তারপর কাপড় নিংড়ানোর মতন করে নিংড়ে দেই। বেয়াদপ, বজ্জাত সব।”

শান হেঁসেই চলেছে। রুমঝুমের বকা দেওয়াগুলো শুনতে তার বেশ মজাই লাগছে। পেছনে দাঁড়িয়ে তাদের দু’জনকে দেখছে পিহু। তার এখন মনে হচ্ছে নিজেরা সুন্দর করে রাখলে প্রত্যেকটা সম্পর্কই সুন্দর। সত্যিই সুন্দর।

চলবে……

(ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।
যারা রুশানের জন্য পিহুকে চেয়েছেন তাদের এই চাওয়ার ব্যাপারটা আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকলো না। আপনারা দ্বিপাক্ষিক ভালোবাসাকে ভেঙে একতরফা ভালোবাসার পূর্ণতা দিতে কিভাবে বললেন?)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here