#ছুয়ে_দেখো_আমার_শহর
#লেখিকা_হৃদিতা_আহমেদ
পর্ব-৮
বাবার কল দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে সূর্য, এসময় তো বাবার কল দেওয়ার কথা নই।সাতপাঁচ না ভেবে ফোন টা রিসিভ করে সূর্য।ফোন রিসিভ করতেই বাবা ব্যস্ত গলায় বলা শুরু করে,
-” অবাক কোথায় তুমি?”
-” বাবা সকালেই তো বললাম দুপুরে লাঞ্চে যাবো?”
-” ওহ হ্যা বলছিলে, ভুলে গেছি।যাইহোক, আমি জরুরি কাজে আটকে গেছি।দুই টায় পুতুলের কলেজ ছুটি হবে তুমি যেয়ে একটু নিয়ে এসো।আমি চারটায় ছন্দকে নিয়ে ফিরবো।”
-” বাবা, অলরেডি দেড়টার বেশি বাজে আমার পৌঁছাতে তো লেইট হয়ে যাবে।তুমি আগে কেন বলোনি?”
-” আমি ভেবেছিলাম কাজটা শেষ হয়ে যাবে তাই আগে বলা হয়নি।সমস্যা নেই তুমি যাও আমি পুতুলকে জানিয়ে দিচ্ছি।”
-” কী করলে বলতো বাবা, আমি এখনো লাঞ্চটায় করিনি।” হতাশ কন্ঠে বলল সূর্য। মি. মাহবুব একটু দুষ্টু হাসি দিয়ে বলল,
-” ধুর বেটা কোথায় একটা সুন্দর ডেটের ব্যবস্থা করে দিলাম তা না পরে আছো লাঞ্চের পিছনে।বলি পুতুলকে নিয়েও তো লাঞ্চটা জয়েন করতে পারো।”
বাবার কথা সূর্যের মনে ধরলো, ফট উঠে দাড়িয়ে বাবাকে বলল,
– ” থ্যাঙ্কিউ বাবা, উম্মাহ।” বলেই ফোন টা রেখে দেয় সূর্য।
এতক্ষণ সকলে নিজেদের মধ্যে কথা বলায় ব্যস্ত থাকলেও সূর্যের হঠাৎ উঠে দাড়ানো দেখে সকলে ভ্রু কুঁচকে তাকায়।সূর্য ফোন টা পকেটে পুরে সকলের দিকে তাকিয়ে অমায়িক হাসি দিয়ে বলল,
-” যার জন্য ট্রিট দিব তাকে নিয়ে আসি, তোরা ততক্ষণে খাবার ওর্ডার দে।”
সূর্যের কথা শুনে সবাই একসাথে বলে উঠলো,
-” মানে!! ”
-” মানে আমার ক্রায়িং বিউটিকে নিয়ে আসি।” বলেই এক চোখ টিপ দেয় সূর্য। তারপর পিয়াসের বাইকের চাবি টা হাতে নিয়ে বের হয়ে যায়।আর সবাই বিস্মিত চোখে সূর্যের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।কল্লোল বিড়বিড় করে বলল,
– ” এই শালা বিগ বসের মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।”
পাশ থেকে রক্তিমও কল্লোলের সাথে বলে উঠে,
-” আমারও তাই মনে হচ্ছে।”
প্রথম ক্লাসেই তিতিয়া নামের একটা মেয়ের সাথে বেশ ভালো বন্ধুত্ব হয়ে গেছে পুতুলের।মেয়েটা বেশ হেল্পফুল, কিন্তু একটু বেশি কথা বলে।তবে পুতুলের বেশ ভালো লেগেছে তিতিয়াকে।এখন সে তিতিয়ার সাথে কলেজ গেইট থেকে একটু ভেতরে সূর্যের জন্য ওয়েট করছে।আর তিতিয়া তাকে বিজ্ঞের মতো কী করলে এই অল্প সময়ে ভালো রেজাল্ট করা যাবে তাই বোঝাচ্ছে।যার কিছুই তার মাথায় ঢুকছে না, কিন্তু সে বুঝদারের মতো মাথা দোলাচ্ছে।ভাবটা এমন সে ভীষণ সিরিয়াসলি কথা গুলো শুনছে।অথচ সে মনে মনে ভয় পাচ্ছে সূর্যের কথা ভেবে।বড় আব্বু যে কেন ওই রাগী বজ্জাত ছেলেটাকে পাঠালো? আমাকে দেখলেই হুমকি দেয়, ভাবটা এমন সবসময় ঝুড়ি ভর্তি হুমকি নিয়ে ঘুরে, ইডিয়ট কোথাকার।আবার এদিকে ভাইয়া ডাকা যাবে না, হুহ।ক্যাপ্টেন বলে ডাকো, হুম ক্যাপ্টেন বলেই ডাকবে তবে এডজেক্টিব যুক্ত ক্যাপ্টেন,স্টুপিড ক্যাপ্টেন,থ্রেটার ক্যাপ্টেন, ইডিয়ট ক্যাপ্টেন বলে ডাকবে।কথা গুলো ভেবেই ফিক করে হেসে উঠে পুতুল।
পুতুলের হাসি দেখে তিতিয়া অবাক হয়ে বলল,
-” আমি এতো সিরিয়াস একটা ব্যাপার বললাম আর তুমি হাসছো?”
তিতিয়ার কথায় পুতুল আমতা আমতা করে ভ্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে বলল,
-” আসলে একটা জোকস মনে পড়ে গেছিল তাই। ”
পুতুলের কথা শেষ হবার আগে তিতিয়া বলে উঠে,
-” হায় মে মার জাওয়া। পুতুল গো আমার মনে প্রেমের ব্যাকগ্রাউন্ড সং বাজা শুরু করেছে। ইসকুমে মার জাওয়া সং টা।”
তিতিয়ার কথায় পুতুল ভ্রু কুঁচকে তিতিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে পিছনে ঘুরে তাকায়।পেছনে তাকাতেই তার অনুভূতি গুলো আবার চিনচিন শুরু করে।সূর্য ধুসর রঙের গেবাডিং এর সাথে কালো শার্টের হাতা দুটো গুটিয়ে বাম হাতে সামনে চুল গুলো উঠাতে উঠাতে তার দিকে এগিয়ে আসছে।চিন্তার সুতা কাটে তিতিয়ার কথায়,
-” ইসস, ছেলেটা এতো হ্যান্ডসাম কেন?”
তিতিয়ার কথায় পুতুল রাগী চোখে সূর্যের দিকে তাকায়। ইডিয়ট ক্যাপ্টেন টা এমন পালিশড হয়ে এসেছে কেন? ভাবনার মাঝে হঠাৎ কারো হুংকারে কেঁপে উঠে পুতুল।
-” এই মেয়ে, এই ফোন কোথায় তোমার হ্যা, ফোন কোথায়? ফোন কী পাতালে রেখেছো? অসভ্য মেয়ে কোথাকার।” বলেই শক্ত করে পুতুলের হাত ধরে বাইকের কাছে নিয়ে আসে।পুতুল কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা হেলমেট ঠুসে তার মাথায় পড়িয়ে দেয় সূর্য।তারপর বাইকে উঠে পুতুলকে ধমক দিয়ে বলল,
-” রোবটের মতো দাড়িয়ে আছো কেন? তাড়াতাড়ি উঠে বসো।”
সূর্যের কথামতো পুতুল ফটাফট বাইকে উঠে বসে।
বাইক রেস্টুরেন্টের সামনে থামাতেই পুতুল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে সূর্যের দিকে তাকায়।কিন্তু সূর্য ভাবলেশহীন ভাবে বাইক থেকে নেমে পুতুলের হেলমেট টা খুলে পুতুলের হাত ধরে ভেতরে প্রবেশ করে।ভেতরে ঢুকে কয়েক পা আগাতেই কল্লোলকে দেখে পুতুল দৌড়ে গিয়ে তার বাম হাত জাপটে ধরে হেসে বলে উঠে,
-” ভাইয়া!!”
খাবার চলে আসায় সূর্যকে ফোন করার উদ্দেশ্যে উঠে দাড়িয়ে ছিল কল্লোল।হঠাৎ কেউ হাত জাপটে ধরায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পাশে তাকাতেই পুতুলকে দেখতে পায়।
অন্য দিকে একটা মেয়েকে কল্লোলের হাত জাপটে ধরা দেখে শ্রেয়া রাগে কিরমির করে কাচ্চি বিরিয়ানির মাঝখানে খট করে কাঁটাচামচ চেপে ধরে। বাকি তিনজন একবার শ্রেয়ার কাঁটাচামচ এর দিকে তো আরেক বার কল্লোলের জাপটে ধরা হাতের দিকে তাকাচ্ছে। আর সূর্য বিস্ফোরিত চোখে পুতুল ও কল্লোলের দিকে তাকিয়ে আছে।
-” আরে বেবি ডল, তুমি এখানে?” কল্লোলের কথায় পুতুল হেসে বলল,
– এই তো ভা,,,,,(সূর্যের দিকে তাকিয়ে) মানে ক্যাপ্টেনের সাথে এসেছি।” বলেই তাড়াতাড়ি কল্লোলের হাত ছেড়ে দাড়ায় পুতুল।কল্লোল সহ বাকি তিনজন অবাক হয়ে বলল,
-” ক্যাপ্টেন!!?”
সূর্য এগিয়ে এসে কল্লোলের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
-” তুই কী পুতুলকে আগে থেকেই চিনিস?”
সূর্যের কথা শুনে কল্লোল হেসে ফ্লাইটের কথা বলে।
সকলের সাথে পরিচিতি পর্ব শেষে সবাই একসাথে খেতে বসেছে।শ্রেয়া সূর্যের পাশে বসে পুতুলকে স্ক্যান করছে।সাদা ইউনিফর্মে মেয়েটাকে একদম পরীর মতো লাগছে। সিল্কি চুল গুলো চাইনিজদের মতো সামনের থেকে সুন্দর করে কেটে রাখা, বাকি চুল গুলো নিয়ে পিছনে একটা ঝুটি করা দেখে মনে হচ্ছে সদ্য এইট নাইনে পড়ুয়া ছাত্রী।একটু ঝুঁকে সূর্যের কানে কানে বলল,
-” হ্যা রে সূর্য, এই পিচ্চিই তোর ক্রায়িং বিউটি?”
সূর্য গভীর মনোযোগে বিরিয়ানি থেকে মাংস নিয়ে মুখে পুড়ে মাথা নেড়ে হ্যা জানালো। শ্রেয়া দ্বিগুণ উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞেস করল,
-” তুই না বললি নিউইয়র্কে থাকে তোর ক্রায়িং বিউটি, তো পেলি কি করে?”
সূর্য খেতে খেতে আস্তে বলল,
-” পরে বলবো, এখন ঘেনড় ঘেনড় না করে খা তো।আর ভাব কল্লোলকে কীভাবে সাইজ করা যায়।
সূর্যের কথায় দারুণ কাজ হলো, সত্যিই তো সে ভুলেই গেছিল। ফ্লাইটে একটা মেয়ের হাত ধরে এসেছে অথচ আমাকে জানাই নি কল্লোল !! হোক সেটা সূর্যের ক্রায়িং বিউটি, তাই বলে আমাকে একবারও বলেনি।আজ এর একটা ব্যবস্থা করেই ছাড়বে শ্রেয়া।ভেবেই খাবার মুখে পুড়ে কটমট করে চিবাতে শুরু করে।
অনেক সময় ধরে একটা ব্যাপার জানতে ভীষণ ইচ্ছে করছে পুতুলের। কৌতূহল মেটাতে ফট করে জিজ্ঞেস করেই ফেললো পুতুল।
-” আচ্ছা আপনারা পাঁচজন কী সবসময় একই হেয়ার স্টাইল করেন?” বলেই কল্লোলের দিকে তাকায়।কল্লোল হেসে বলল,
-” হুম, কেন ভালো লাগছে না?”
-” না না অনেক ভালো লাগছে, ইভেন আপনাদের আইডিয়া টা বেশ ভালো লেগেছে।”
পুতুল হঠাৎ কিছু মনে পড়ার ভঙ্গি করে হেসে বলল,
-” আচ্ছা ভাইয়া আপনার সেই বজ্জাত বিগ বসের কি খবর?”
পুতুলের কথায় মনে হয় খাবার টেবিলে ছোট খাটো একটা ককটেল ফাটলো।কথাটা শোনার সাথে সাথে কল্লোলের গলায় খাবার আটকে কাশতে শুরু করে।পিয়াস,রক্তিম আর সামির একবার কল্লোলের দিকে আরেক বার সূর্যর দিকে তাকিয়ে ফাঁকা ঢোক গিলল। শ্রেয়া মনের সুখে খাচ্ছে আর মনে মনে হেসে গড়াগড়ি খেয়ে বলছে ‘এবার তোকে কে বাঁচাবে কালেয়া’।আর সূর্য কঠিন চোখে কল্লোলের দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে
আর লিখতে পারিনা মাঝি, হাতেত বেদ্ না করে😔।