#জানি_দেখা_হবে ♥
Israt Jahan Tanni ✍️
#Part_29
প্রায় ১০ মিনিট যাবত শান্তভাবে বসে আছে তারা। পাশেই নীলিমা বসা। ধ্রুব কিছুটা দূরে দাঁড়ানো। যখন শুনেছে নীলিমাকে ধ্রুব এখানে আনিয়েছে তখন থেকেই চুপচাপ বসে আছে সে। কিছুতেই কিছু হিসাব মিলাতে পারছেনা সে। এই নীলিমার সাথে ধ্রুবর কানেকশন কিভাবে হলো? ভাবাচ্ছে তারাকে।
তারার এমন চুপচাপ ভাবমূর্তি নীলিমাকে বেশ বিরক্ত করছে। এক পর্যায়ে নীলিমা বসা থেকে উঠে খপ করে তারাকে টান মেরে উঠিয়ে দিলো। আকস্মিক এমন করার তারা কিছুটা বেসামাল হয়ে গেলো। দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে অবাক হয়ে তাকালো নীলিমার দিকে। ভ্রু কুচকে বললো
-এমন করলি কেন নীল? এমন কেউ করে?
-তো আর কি করতাম শুনি? এতোদিন পর তোর সাথে দেখা, কোথায় আড্ডা দিবো, দুজন দুজনার কথাগুলো শেয়ার করবো। কতো কথা জমে আছে জানিস? আর তুই কিনা এখানে ধ্যানে বসেছিস। সমস্যা কি তোর? কিছুটা রাগীমুডে বললো নীলিমা।
তারার মাথায় এখনো আগের চিন্তায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অন্য প্রসঙ্গে না গিয়ে সে সরাসরি বললো
-উনি তোকে পেলেন কোথায়?
-উনিটা আবার কে? মুখে দুষ্টুমির হাসি ফুটিয়ে বললো নীলিমা।
-আহ, মজা করিস না প্লিজ। আমি সিরিয়াস।
-তোর উনি আমাকে ফোন করেছিলো।
-আবারও মজা করছিস? হতাশ কন্ঠে বললো তারা।
-মজা করছি নারে তারু সোনা। আমি সত্যি বলছি।
-কিন্তু তোর নাম্বার পেলো কোথায়?
-আমিই অনেকদিন আগে ফোন করেছিলাম। নাম্বারটা তাই উনার ফোনেই ছিলো।
তারা এবার বেশ অবাক হলো। নীলিমা ফোন করেছিলো, কই সেতো জানেনা। পরক্ষনেই আবার নিজের চিন্তায় নিজেই হাসলো। সে জানবে কিভাবে, সেতো ওখানে ছিলোই না।
-ফোন করেছিলি কেন? আর নাম্বার পেয়েছিস কোথায়?
-আর নাম্বার। একটা হতাশা নিয়ে শ্বাস ছাড়লো নীলিমা। তারা ভ্রু কুচকে বললো
-কি হলো আবার? বল, নাম্বার পেলি কোথায় উনার?
-তোর ওই হারামী মায়ের কাছে গিয়েছিলাম নাম্বার চাইতে। নাম্বার তো দিলই না, উল্টো আমাকে খুব কথা শুনালো ওই পাজী মহিলা, ইচ্ছে করছিল পিঠের মধ্যে দেই কয়েকটা কিল। পরে মনে হইলো, ওই পাজীটা তো আমার বান্ধবী না, তাই আর কিল দিতে পারি নাই।
নীলিমার দুষ্টু কথা শুনে তারা নিঃশব্দে হাসলো।
-তারপর?
-এরপর তোর বাবার কাছে গিয়ে তোর নাম্বার চাইলাম। উনি ধরিয়ে দিলো তোর জামাইয়ের নাম্বার। তোর নাকি ফোন ছিলোনা।
-তারমানে, আমি ওই বাসাতে থাকতেই তুই ফোন দিয়েছিলি?
-হ্যাঁ। আরেকবার লম্বা শ্বাস নিলো নীলিমা।
-তাহলে আমার সাথে কথা বললিনা কেন রে বান্ধরনী। আর উনিতো আমাকে কিছু বলেওনি তোর ব্যাপারে।
-আমি ইচ্ছে করেই কিছু বলিনি তোমায় তখন। পিছন থেকে ধ্রুব বলে উঠলো।
ধ্রুবর কথায় তারা আর নীলিমা দুজনেই একসাথে পিছনে তাকালো। উনি কখন এখানে এসে দাড়িয়েছেন, সেটা টের পায়নি ওদের কেউই।
ধ্রুবর চোখদুটো লাল হয়ে আছে। তারা একভাবে তাকিয়ে আছে সে চোখের দিকে।
ধ্রুব আবারও বলা শুরু করলো..
-নীলিমা একদিন দুইদিন, বা একবার, দুইবার নয়। অনেকবার ফোন করেছিলো।
-কই, আমাকে তো কিছু বলেন নি। নিচের দিকে তাকিয়ে বললো তারা।
-বলিনি, কারণটা হয়তো তুমিও আন্দাজ করতে পারছো। জানি কথাটা শুনলে তোমার খারাপ লাগবে, তবুও বলি, যে কারণেই হোক, তখন তোমাকে আমি অপছন্দ করতাম, সহ্য করতে পারতাম না, তাই নীলিমা যখন ফোন করেই তোমাকে চাইতো, আমাকে দুলাভাই ডাকতো, খুব বিরক্ত হতাম। বার বার রং নাম্বার বলে কেটে দিতাম।
তারা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব বলেই চলেছে। ধ্রুব নীলিমার দিকে তাকালো একবার। আবার তারার দিকে তাকিয়ে বললো
-কিন্তু তোমার বান্ধবী ছিলো আস্ত একটা ঘাড়ত্যাড়া প্রাণী। বার বার রং নাম্বার বলার পরেও ফোন করে আমার মাথা খেতো।
নীলিমা মুখ বাকালো ধ্রুবর কথায়। চোখমুখ কুচকে বললো
-আমি কিন্তু মোটেও ঘাড়ত্যাড়া নয় দুলাভাই।
-সেটা আমি তখন হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলাম।
এই মুহূর্তে ওদের এইসব দুষ্টুমি মার্কা আলাপ ভাল লাগছেনা তারার কাছে। সে বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে বললো
-তারপর কি বলুন।
-তারপর আর কি, তোর জামাই আমাকে যা নয় তাই বলে অপমান করলো। রাগে ক্ষোভে আমি আর ফোন দেই নাই ওহ হারামীটার কাছে।
বলেই সাথে সাথে জিভে কামর দিলো নীলিমা।
ধ্রুব হাসতে হাসতে বললো
–আমি হারামী হলে তুমিও কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া প্রাণী বুঝলা শ্যালিকা।
তারার গভীরভাবে কিছু একটা ভাবছে। ওকে ভাবনাএ পড়তে দেখে নীলিমা আবারও বললো
-আবার শুরু করে দিলি চিন্তাভাবনা। চিন্তাভাবনা বাদ দিয়া যক জিজ্ঞেস করার করে নে না ভাই। তবুও মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকিস না।
-আজ এখানে আমরা আসবো সেটা কিভাবে জানলি?
-তোর জামাই আমারে ফোন দিছিলো বুঝলি? ফোন রিসিভ করে আমিও কিছুক্ষণ মুড নিয়া ছিলাম। আমারে অপমান করছিলো বলে কথা। শেষে আমার কাছে মাফ চাইলো। তুই তো জানিসই আমার দয়ার শরীর। মাফ করে দিলাম,ব্যাস।
-মাফ চাইলো, আর করে দিলি?
-তুই খুশি হোস না মাফ করাতে? মাফ তুইলা লমু?
-মাইর খাবি পাজি।
-হাহাহাহা
তুই বান্ধবী হাসিতে মেতে উঠলো আবার।
সন্ধ্যার আগে নীলিমাকে বিদায় দিয়ে তারাকে নিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো ধ্রুব। যদিও তারা নীলিমাকে অনেক জোরাজুরি করেছিলো ওর সাথে আসার জন্য, তেমন লাভ হয়নি তাতে। অন্যদিন ওদের বাসার যাবে এই প্রতিশ্রুতি দিয়ে সে চলে যায়। বাসার কাছাকাছি আসতেই তারার বুকের ধুকপুকানি বেড়ে গেলো কিছুটা। কিভাবে সবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে তারা। ধ্রুব কিছুটা আচ করতে পেরে তারাকে বললো
-ভয় পাচ্ছো কেন, আমি আছিতো।
-সেটাইতো ভয়। অন্যমনস্ক হয়ে বলল তারা।
তারার এমন কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো ধ্রুব। থতমত করে বললো
–মানে?
তারার হুশ হলো। নিজের এমন বোকামিতে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো। আমতাআমতা করে বললো
-না মানে,
-হয়েছে, আর কিছু বলতে হবেনা তোমাকে। আমি বুঝতে পেরেছি সব।
তারা মাথা নাড়ালো।
এতোদিন পর নিজের মেয়েতুল্য পুত্রবধুকে দেখে আনন্দে হতবিহ্বল হয়ে গেলো ধ্রুবর মা।
তারাকে নিজের বাহুডোরে আবদ্ধ করে প্রায় কেদেই দিলেন তিনি। উনার এমন কান্না দেখে তারার নিজেকে বেশ বড় ধরনের অপরাধী মনে হচ্ছে।।
তারা ধ্রুবর মাকে এক হাতে জরিয়ে ধরে বললো
-কাদবেন না মা প্লিজ। আমি এসে গেছি তো।
-উউ এসে গেছি তো। কোথায় গিয়েছিলি তুই? কেন গিয়েছিলি? এতোটা পাষাণ কিভাবে হতে পারলি? একবার ও কি আমাদের কথা মনে পড়েনি তোর? তোর সাথে আমার ছেলে অন্যায় করেছিলো, আমরা তো করিনি। তাহলে বাসা ছাড়ার আগে কেন একটাবার আমাদের কাছে আসলিনা।
ধ্রুবর মায়ের মুখ দিয়ে যেনো সব অভিমানগুলো আজ কথা আকারে ঝরে পরছে। উনার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে তারা আর কথা বাড়ালো না। বলুক আজ যত খুশি কথা। মন হালকা হবে তাতে।
রাতের খাবার আজ তারা করবে ঠিক করেছে। তাই সে কিচেনে গেল। কিচেনের চারপাশটা দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো তারা। যে বাসা ছাড়ার আগে কিচেন টা ঠিক যেমন রেখে গেছিলো, এখনো ঠিক সেইরকমই আছে। শুধু হাড়িপাতিলগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এই যা।
সর্বপ্রথম তারা আগে হাড়িপাতিলগুলো গোছগাছে লেগে পড়ল। সেগুলো ঠিক করা হয়ে গেলে রান্নার কাযে হাত দিলো সে। শাশুড়ী এসেও হাত লাগালো তাতে। তারা হাজার মানা করেও বিশেষ কিছু হলোনা। শাশুড়ি তারার মানা শুনতে নারাজ আজ৷
এক এক করে কয়েক পদের রান্না শেষ করলো দুইজন মিলে। এরমধ্যে স্পেশাল হলো গরুর গোস্তের কোফতা।।যেটা সে আগে পারতো না, আকাশদের বাসায় গিয়ে শিখেছে। এই আইটেম টা ওদের বাসার সবারই পছন্দের ছিলো, স্পেশালি আকাশের।
রান্না শেষে এক এক করে সব আইটেম টেবিলে এনে রাখলো তারা। এবার সবার খাবার পরিবেশন করার পালা। এক এক করে ধ্রুব, ধ্রুবর বাবা আর মা টেবিলে বসলো। তারা বসতে যাবে, ঠিক তখনই কলিংবেলটা বেজে উঠলো। ধ্রুব হেসে বললো..
-তোমার আরেকটা সারপ্রাইজ বাইরে অপেক্ষা করছে। ডোরটা খোলো।
তারা অবাক হয়ে বললো
–আবার কিসের সারপ্রাইজ?
-গেলেই দেখতে পাবে। আগে যাওতো।
তারা অবাক ভাবে ধ্রুবর দিক দিকে চোখ সরিয়ে বাবা মায়ের দিকে ফিরলো। ওদের ঠোটের কোনেও হাসি লেগে আছে। তারা সবকিছু ঝেড়ে ফেলে দরজার দিকে গেলো।
কলিংবেলটা এখনো বেজেই যাচ্ছে। দরজা খোলার আগ মুহুর্তেই মনে পরলো ধ্রুবর বলা সারপ্রাইজ কথাটা। কে হতে পারে? তারার অবচেতন মন ভাবতে লাগলো।
কাপা কাপা হাতে দরজাটা খোলা মাত্রই বিস্ফোরিত হয়ে গেলো তারা।
চোখদুটো ভিজে গেলো পানিতে। দুবার কিছু না ভেবেই ঝাপিয়ে পরলো বাবার উপর। এতোদিন পর বাবাকে দেখছে সে, ভাবতেই পারেনি কখনো, বাবার সাথে দেখা হতে পারে। যখন ধ্রুবর সাথে দেখা হলো, ধ্রুব ওকে নিয়ে এলো ওর সাথে, তখন ওর মনে শুধু বাবার কথায় আসছিলো বারবার। কিন্তু নীলিমাকে দেখা, বাসায় আসা, শাশুরির করা অভিমান, রাতের রান্না, সবকিছুর মাঝে বাবাকে কিছুক্ষণের জন্য ভুলেই গিয়েছিল তারা।
তারার বাবা আলতোভাবে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তারা বাবাকে জড়িয়ে ধরেই বললো
-কেমন আছো বাবা?
-ভালো রে মা। তুই ভালো আছিস? কোথায় গিয়েছিলি? একবারের জন্যও কি এই বুড়ো বাপটার কথা মনে পড়েনি রে মা?
-অনেক মনে পড়েছে বাবা। কিন্তু আমার কিছু করার ছিলোনা। পরিস্থিতিটাই এমন ছিলো। কথাগুলো বলতে বলতে কেদে দিলো তারা।
-কাদিস না মা। এইবার দেখিস সব ঠিক হয়ে যাবে।
-তুমি এতো শুকিয়েছো কেন বাবা?
-কই, আমিতো ঠিকই আছি। নিজের দিকে তাকিয়ে বললেন তারার বাবা।
-আমার চোখে ফাকি দিবে ভেবেছো?
-আমাকে কি বাইরেই দাড় করিয়ে রাখবি মা?
তারা হাসলো। বললো
–এসো ভিতরে।
রাতের খাবার শেষে সবাই মিলে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে সবাই যার যার রুমে চলে গেলো। তারার বাবা চলে যাওয়ার কথা বললেও যেতে পারেনি। কেউ দেয়নি যেতে।
ধ্রুবর রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে বসলো তারা। ধ্রুব কম্পিউটারে কিছু করছে। তারা আপনমনে বসে আকাশের তারা গুনছে বোধহয়। ধ্রুব কাজ শেষে তারার কাছে আসলো। ধ্রুবর অস্তিত্ব বুঝতে পেরে তারা বললো
-কিছু বলবেন?
-অনেক রাত হয়েছে। রুমে চলো। ঘুমাবে।
ঘুমানোর কথা শুনেই গতরাতের কথা মনে পড়ে গেলো তারার। লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো সে।
ধ্রুব বুঝতে পেরে বললো
–আমি রুমে যাচ্ছি, তারাতাড়ি আসো। লেইট করা চলবেনা।
তারা কি করবে না করবে বুঝতে পারছেনা। ইদানীং ঠান্ডাটাও বড্ড বেড়েছে। নইলে বেলকনিতে বসেই রাতটা কাটিয়ে দেওয়া যেতো।
এইসব ভাবতে ভাবতেই রুমের দিকে এগুতে লাগলো তারা। এই মানুষটার সাথে এক বিছানায় থাকাটা বড্ড কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কষ্টটা ভয়ের নয়, লজ্জার।
রুমের ভিতরে ঢুকেই বড়সড় একটা ধাক্কা খেলো তারা। ধ্রুব পাশের সোফার কুশনে মাথা রেখে কাথামুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। তারা ধ্রুবর দিকে অবাক ভাবে তাকিয়ে থেকেই বিছানায় গিয়ে বসলো। ধ্রুব মুচকি হেসে বললো
-কি দেখছো এভাবে?
-আপনি ওখানে গিয়ে শুয়েছেন কেন?
-কোথায় শুবো তাহলে?
-বিছানায় আসুন। ওখানে ঠান্ডা বেশি লাগবে।
-সিরিয়াসলি বলছো তো? ভ্রু বাকিয়ে বললো ধ্রুব।
-এটা সিরিয়াসলি বলার কি আছে। আপনার কষ্ট হতে পারে ভেবেই তো বললাম।
-থাক, এই কষ্টটা ওই কষ্টের চাইতে ঢের ভালো।
-মানে কি? চোখমুখ কুচকে বললো তারা।
ধ্রুব চোখেমুখে দুষ্টুমিভাব ফুটে উঠলো । দুষ্ট হাসি হেসে বললো..
-কি মনে হয় তোমার? আমি পাগল? একবার হাত পা ভাংগা থেকে বেচেছি, তার মানে তো এই নয় যে বারবার বাচবো।
তোমার শরীরে যা শক্তি, দ্বিতীয়বার ধাক্কা দিলে হাত পা ভাংগার সাথে সাথে নির্ঘাত হার্ট অ্যাটাক করে বসবো। আমি সেই রিস্ক দ্বিতীয়বার নিতে চাইনা।
#জানি_দেখা_হবে ❤️
Israt Jahan Tanni ✍️
#Part_30
..
আজ সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়েছে তারা। গতরাতে ধ্রুবর ওই বাকাত্যাড়া উত্তরের পর ওর মুখটা আর দেখেনি সে। সোজা উল্টো দিক হয়ে ঘুমিয়ে পরেছিলো।
ফ্রেশ হয়ে ফজরের নামাজ সেড়ে সোজা কিচেনে গিয়ে ঢুকলো তারা। একটা বড় বক্সে হাত দিয়ে দেখলো তাতে ময়দা রাখা, পাশেই সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতলটা একদম পরিপূর্ণ। এগুলো দেখা মাত্রই সোজা ফ্রিজের কাছে চলে এলো সে, ফ্রিজটা খোলে দেখলো দুই হালি ডিম রাখা আছে তাতে। ব্যাস হয়ে গেলো।
এগুলো রেখে আগে চা করে নিলো সবার জন্য। ফজরের নামাজ সেড়ে মাত্রই মসজিদ থেকে বাসায় ফিরেছেন ধ্রুবর বাবা আর তারার বাবা। ওরা দুই বেয়াই মিলে বেলকনিতে গিয়ে বসলো একটু রোদের আসায়। তারা ট্রেতে দুই কাপ চা আর একটা বাটিতে কিছু বিস্কিট নিয়ে আসল দুই বাবার কাছে। ট্রে তে থাকা চায়ের কাপ আর বিস্কিটের বাটিটা টী টেবিলে রেখে হাসিমুখে বললো…
– আপনাদের চা রেডি।
প্রথমে ধ্রুবর বাবা চায়ের কাপ নিলো, কাপে একটা চুমুক দিয়ে একটা তৃপ্তির নিশ্বাস নিয়ে বললো
-আহ, কতোদিন পর সেই পুরোনো স্বাদ পেলাম। অবশ্য তুই যাবার পর সকালে চা টাই পেতাম না। তোর শাশুড়ী রান্না করেই কুলাতে পারতো না, চা করার টাইম ছিলো কোথায়।
ধ্রুবর বাবা কথার মাঝে কিছুক্ষণ থামলেন। তারার দিকে তাকিয়ে একগাল হেসে দিয়ে বললেন
-তোকে অসংখ্য ধন্যবাদ রে মা, আবারও সেই আগের দিনটা ফিরিয়ে দেবার জন্য।
তারা হাসলো। শশুরের দিকে তাকিয়ে বললো
-আমি স্যরি বাবা, আমার জন্য সবাইকে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে।
-আবার তোকে ফিরে পেয়ে সব কষ্ট ভুলে গেছি।
তারা নিজের বাবার দিকে তাকালো। উনার মুখটা মলিন হয়ে আছে।
-চা খাবেনা বাবা?
তারার বাবা মেয়ের দিকে খুবই করুনভাবে তাকালেন। নিজের ভিতরে একটা অপরাধবোধ কাজ করছে উনার। সেদিন বিয়েতে তুরিন পালিয়ে যাবার পর উনিই তারাকে বিয়েটা করার জন্য রাজি করিয়েছিলেন। সেটাই ছিলো উনার ভুল, যে ভুলের মাশুল দিতে হয়েছে তার এই সহজ সরল মেয়েটাকে।
-কি হয়েছে বাবা? কি ভাবছো এতো?
-কই কি ভাবছি? এইতো আমি ঠিক আছি। বলেই চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে নিলেন উনি।
বাবার এমন ব্যাবহার কিছুটা অস্বাভাবিক লাগলো তারার কাছে। তবুও ব্যাপারটা এড়িয়ে তারা বললো
–আপনারা খান, আমি মাকে চা দিয়ে আসছি। কিছু লাগলে আমাকে ডাকবেন।
বাবার দিকে তাকিয়ে তারা বললো
-তোমার কোনো সমস্যা হলে আমাকে ডেকো বাবা।
-আচ্ছা মা।
তারা মুচকি হেসে চলে এলো এখান থেকে।
কিচেনে গিয়ে চা টা আরেকটু গরম করে নিলো সে, বাবা আর শশুড়ের সাথে কথা বলতে গিয়ে কিছুটা ঠান্ডা হয়ে গেছে।
এক কাপ চা নিয়ে শাশুড়ীর রুমে প্রবেশ করলো তারা। শাশুড়ী এখনো জায়নামাযে বসে আছে। বসে থেকে তসবিহ জপছেন উনি। তারা একগাল হেসে চায়ের কাপটা উনার পাশে রেখে বললো
–চা টা ঠান্ডা হয়ে যাবে মা।
বিনিময়ে শাশুড়ি হাসলো।
আরেক কাপ চা নিয়ে ধ্রুবর রুমে এলো তারা। ধ্রুব এখনো সোফাতেই পরে পরে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।
তারা কিছুটা ইতস্তত করে ধ্রুবকে ডাকলো…
-এই যে শুনছেন?
-হুউউম বলো.. ঘুমের ঘোরে বললো ধ্রব।
-আপনার চা।
চায়ের কথা শুনে চোখ মেলে তাকালো ধ্রুব।
তারা এই বাসা ছেড়ে যাবার পর এই প্রথম কেউ এতো সকালে ওর রুমে চা নিয়ে এলো, আর নিয়েও এলো সেই তারাই। ধ্রুব মনেমনে ভাবলো এই তারার কোনো তুলনায় নেই।
একটা মাঝারি সাইজের প্লাস্টিকের গামলাতে কিছু ময়দা নিলো তারা। সেটাতে কয়েকটা ডিম আর কিছুটা তেল ঢেলে নিলো সাবধানে। সামান্য লবন ছিটা দিয়ে তেল ডিম আর ময়দা গুলো ভালোভাবে মেখে নিলো কিছুক্ষণ, সামান্য পানি দিয়ে আরো কিছুক্ষণ ময়দাটা মুথে নিলো। প্যানে তেল ঢেলে সেটা বসিয়ে দিলো চুলাই। গোল আর লম্বা সাইজ করে বেলে তেলে দিয়ে দিলো সেগুলো।
ব্যাস লুচি গুলো বানানো কমপ্লিট।
এইবার বাকি শুধু আলুর দম। যদিও দেখেছে ফ্রিজে মাংস আছে। তবুও লুচির সাথে আলুর দমের কোনো বিকল্প নেই তারার মতে।
সকালের নাস্তার টেবিলে লুচি আর আলুর দম দেখে সবাই হতবাক। এই খাবারটা খুবই কমন একটা বিষয় হলেও এদের সবার কাছে এটা খুব স্পেশাল। তারার খুবই আনন্দ লাগছে সবার খাওয়া দেখে। সবাই খুব তৃপ্তির সাথে খাবারটা খাচ্ছে।
খাবার একফাকে ধ্রুব তাকালো তারার দিকে, তারারও চোখাচোখি হয়ে গেলো ধ্রুবর সাথে। ধ্রুব চোখে তারাকে কিছু বললো যার অর্থ হলো
-তোমাকে অনেক ধন্যবাদ এই স্পেশাল খাবারটা করার জন্য।
তারাও হাসিমুখে মাথা নাড়ালো।
বিকেলে হাটতে হাটতে বাগানের দিকে গেলো তারা। বাসার বাউন্ডারির ভিতরেই এক পাশে এই বাগানটা। অনেক ধরনের ফুল গাছ সেটাতে আছে, আর ফুলও ফুটে আছে হরেক রকম। ফুটন্ত তাজা ফুলগুলো চোখে আসতেই তারার মনটা ছেয়ে গেলো খুশিতে।
ধ্রুব ব্লেজারটা হাতে নিয়ে তারাহুরো করে বাগানের দিকে এলো। চোখমুখে গম্ভীর ভাব। তারার কাছে এগিয়ে চোখে মুখে গাম্ভীর্য এনেই বললো
– ভিতরে যাও তারা।
তারা অবাক হয়ে বললো
-কেনো?
-যেটা বলেছি সেটা করো, বাসার ভিতরে যাও। একদম বের হবেনা বাসা থেকে। আমি এক জায়গায় যাচ্ছি, চলে আসবো তারাতাড়ি।
-কি হয়েছে হটাৎ? ভ্রু কুচকে বললো তারা।
-উফফফ এতো জবাবদিহি চাই কেন তোমার? যেটা বলেছি সেটা করো। আর একদম বাইরে বের হবেনা বলে দিলাম। খানিক রেগে বললো ধ্রুব। যেটা একদমই সহ্য হলোনা তারার। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে শান্ত গলায় বললো
-যাচ্ছি।
ধ্রুব বের হয়ে গেছে প্রায় আধঘন্টা হয়ে গেছে। তারা রুমে পায়চারি করছে এখনো। হটাৎ মানুষটার কি হয়ে গেলো, এইরকম করলো কেন?
হটাৎ তারার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো। সে মনেমনে ভাবলো
-রাখবো না আমি উনার কথা, মানছি না উনার আদেশ। অনেক মেনেছি, কষ্টও পেয়েছি খুব। এইবার আর তা হচ্ছেনা। উনি আমাকে যেটা করতে মানা করবেন সেইটাই আমি বেশি করে করবো এইবার থেকে। দেখি উনি কি করতে পারেন। কথাটা ভেবেই একটা দুষ্টু হাসি দিলো তারা। পরক্ষণেই আবার বাগানের দিকে ছুটলো সে।
রাত প্রায় ১০ টা ছুইছুই। এখনো তারার কোনো হুদিশ পাচ্ছেনা কেউ। ধ্রুবর বাবা মায়ের চোখেমুখে আতংক, তারার বাবার মনের মধ্যে ভয় জেকে বসেছে, এই বুঝি মেয়েটাকে আবারও হারিয়ে ফেললেন উনি।
ধ্রুবর চোখমুখ লাল হয়ে আছে চিন্তায়। সেই সাথে প্রচন্ড রেগে আছে সে। রাগের চোটে হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ছুড়ে মারছে বারবার।
সেই বিকেল থেকে তারাকে পাওয়া যাচ্ছেনা, আর এই কথাটা তাকে কিছুক্ষণ আগে জানানো হয়েছে, ভাবতেই মাথাটা বিগড়ে যাচ্ছে ওর।
ধ্রুবর মা ছেলের এই অস্তিরতা দেখে ভয় পাচ্ছে মনেমনে, তারাকে না পেলে বা ওর কোনো ক্ষতি হয়ে গেলে না জানি কি করে বসে ছেলেটা।
-কোথায় ছিলে তোমরা সবাই? কিভাবে একটা মেয়ে বাসা থেকে নিখোঁজ হয়ে গেলো? তোমরা কেন ওর খবর নিলেনা? আর বিকেল থেকে যখন নিখোঁজ, তাহলে আমাকে আগে জানাওনি কেন?
রাগে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো ধ্রুব। ধ্রুবর বাবা মা ছেলেকে শান্ত হতে বললো
ধ্রুব আরো রেগে গেলো তাতে।
-শান্ত হবো মানে? তোমরা বুঝতে পারছো তারাকে পাওয়া যাচ্ছেনা? কিভাবে বলছো শান্ত হওয়ার জন্য?
ধ্রুবর মা কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই ধ্রুবর ফোনে একটা কল এলো। একটা আননোন নাম্বারে কল এসেছে। ধ্রুব কিছু না ভেবেই তারাতাড়ি করে কলটা রিসিভ করলো। ওর কেবলই মনে হচ্ছে এই নাম্বারটা থেকে ওর তারা বোধহয় ফোন করেছে।
কলটা রিসিভ করে কানে দিয়েই ধ্রুব বললো..
-হ্যালো তারা, হ্যালো, কোথায় তুমি?
-ওহ মিস্টার ধ্রুব, এতো তারাহুরো কেন? আমি তারা নয়।
-কে আপনি? ভ্রু কুচকে বললো ধ্রুব।
-আমি কে সেটা জানা কি খুবই জরুরি?
-ফালতু আলাপ করার টাইম নেই আমার কাছে। পরিচয় দিন আগে, আর না হলে কলটা কাটুন। দ্বিতীয় বার কোনো কল যেনো না আসে। বেশ রেগে বললো ধ্রুব।
ওইপাশে থাকা ব্যাক্তিটা হুহু করে হেসে দিলো ধ্রুবর কথায়।
পৈশাচিকভাবে হাসতে হাসতে বললো
-আমার সাথে কথা বলতে না চাইলে যে তোমার প্রিয়তমাকে হারাবে মিস্টার।
চমকে উঠলো ধ্রুব। খানিকটা কর্কশ গলায় বলে উঠলো
-কে আপনি? আমার তারা কোথায়?
-এতো তারাহুরো কেন তোমার? একটু ধৈর্য তো ধরো। আর তোমার তারা আমাদের কাছেই আছে, এখনো সেইফ আছে, তবে এতোক্ষণ সেইফ থাকবে সেটা এখনো বলতে পারছিনা, বলেই আবারও পৈশাচিক ভাবে হাসতে লাগলো লোকটি।
ধ্রুবর গা জ্বলে যাচ্ছে লোকটির কথায়। মাথায় আগুন ধরে গেছে এই মুহূর্তে।
-আমার তারার যদি কিছু হয়, তোকে আমি আস্ত রাখবো না বলে দিলাম।
-সেটা করতে গেলে তো আমাদের পেতে হবে আগে তাইনা। আর আমাদের তখনই পাবে, যখন আমরা সেটা চাইবো।
-কেন আটকে রেখেছিস আমার তারাকে? কেন কিডন্যাপ করেছিস?
-সিম্পল, মানুষ যেটার জন্য কিডন্যাপ করে, আমরা সে জন্যই করেছি।
-কি চাই তোর? রক্তচক্ষু নিয়ে বললো ধ্রুব।
-এইতো লাইনে এসেছো। আসলে চাওয়াটা আমার একার নয়, আমার সাথে আরেকজন আছে, উহু, একজন নয় দুইজন। আবারও হাসলো লোকটি। ধ্রুবর রাগ এইবার দ্বিগুণ হতে লাগলো, তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে নিলো সে। শান্তগলায় বললো
-আপনাদের যা চাই তাই দিতে রাজি আছি আমি, আমার তারার যেনো কিছু না হয়।
-কিছু হবে কি হবেনা সেটাতো পরে দেখা যাবে, আগে দেখি, আমাদের চাওয়াগুলো ঠিকঠাক মতো পায় কিনা।
ধ্রুবর চোখদুটো লাল হয়ে আছে, মাথার রক্ত টগবগ করছে রাগে, ফোনটা কানের সাথে চেপে ধরলো আবারও।
-হায় ডিয়ার..ভালো আছো?
একটা কন্ঠ শুনে মুহুর্তেই থমকে গেলো সে। রাগের চাইতে বেশি অবাকই হলো খুব৷ এতোটা খারাপ মানুষ কি করে হতে পারে?
ওর ভাবনা ভেদ করে ওপাশের পরিচিত কন্ঠটি বলে উঠলো..
-কি ভাবছো ডিয়ার? চিনতে পেরেছো আমাকে?
-মানুষের মন মানুষিকতা যে এতোটা নিচু সেটা আমার জানা ছিলোনা।
-এইবার জেনে নাও সোনা।
-জাস্ট শাট আপ। মুখ সামলে কথা বলো, ভুলে যেওনা তোমার সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই।
-তাইতো নতুন করে সম্পর্ক শুরু করবো, তোমার সাহায্য লাগবে যে ডার্লিং।
-বাজে কথা রাখো, তারা কোথায়।
-ওহ হো, আমিতো ভুলেই গেছিলাম, আর তুমিও ভুলে যাও ওই তারার কথা।
-কি বলতে চাও?
-আমাদের দাবীগুলো পুরন করো সোনা, তা না হলে ভুলে যাও তারা নামক ওই কীটকে।
ধ্রুব একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। বললো
-কীট তারা নয়, কীট হলে তুমি, তোমার চাইতে বড় কীট আর একটাও হতে পারেনা, যে কিনা নিজের স্বার্থে নিজেরই বোনকে কিডন্যাপ করায়।
ধ্রুবর এই কথায় আঁতকে উঠল তারার বাবা। এ কি বলছে ধ্রব। নিজের বোনকে কিডন্যাপ করিয়েছে মানে? তার মানে এই কাজটা তুরিনের?
লজ্জায় ঘৃণায় গায়ে কাটা দিচ্ছে উনার। এ কেমন মেয়ে জন্ম দিলেন উনি। এটা কি আদৌ উনার নিজের মেয়ে। তারার বাবা ধ্রুবর কাছে এগিয়ে গেলেন। ফোনটা ধ্রুবর হাত থেকে টেনে নিয়ে নিজের কানে ধরলেন তিনি। ওপাশে তুরিন কথা বলেই যাচ্ছে। ধ্রুব বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে আছে তারার বাবার দিকে।
-কি হলো ধ্রুব সোনা, কথা বলছোনা কেন? হাওয়া বেরিয়ে গেছে নাকি?
-হাওয়া তো তোদের বের হবে। সময়ই তোদেরকে তোদের সব অপকর্মের ফল পাইয়ে দিবে।
-কে? কপাল বাকা করে বললো তুরিন।
-বাহ, এতো তারাতাড়িই নিজের জন্মদাতাকে ভুলে গেলি?
-মাই গুডনেস,
তুমি আমার জন্মদাতা, হাসালে! তোমার সাথে আমাদের সম্পর্ক সেদিনই শেষ হয়ে গিয়েছিলো, যেদিন আমাদের মেরে বের করে দিয়েছিলে।
-সেদিন তোরা তোদের কর্মের ফল পেয়েছিলি, এইবারও পাবি।
-নীতিকথা ছাড়ো, ধ্রুবকে দাও।
-তারা কোথায়?
-মারিনি এখনো, বেচে আছে।
-লজ্জা করলো না, এইভাবে নিজের বোনের সম্পর্কে কথাটা বলতে?
-যেখানে বাপ মানিনা, সেখানে বাপের মেয়ে বোন হয় কিভাবে?
ধ্রুবকে দাও তো, হারি আপ।
–যদি না দেই?
তুরিন একটা পৈশাচিক হাসি দিলো। তারার বাবা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে আগের মতোই। কিছুতেই হিসাব মিলাতে পারছেন না উনি।
তুরিন হাসতে হাসতে বললো..
–আমাদের কাজের মাঝে বাধা দিওনা। ফল ভালো হবেনা।
-কি করবি তুই?
-কিছুনা, জাস্ট তোমার ওই প্রানপ্রিয় মেয়ে তারাকে হারাবে।
বলেই আবারও পৈশাচিক হাসিতে মেতে উঠলো তুরিন।
To be Continue…..
To be Continue…..