জানি দেখা হবে পর্ব ৩৯+৪০

#জানি_দেখা_হবে❤️
Israt Jahan Tanni ✍️
#Part_39

ধ্রুব একভাবে তাকিয়ে আছে আকাশের মায়ের দিকে। কি বলতে চাইছেন উনি, সেটা জানার প্রচেষ্টায় সে। আকাশের মা সীমার দিকে তাকালো, সীমা চোখের ইশারায় উনাকে আস্বস্ত করলেন।
আকাশের মা ক্ষীণ আশা নিয়ে ধ্রুবর পানে তাকিয়ে বলতে লাগলেন
-আমার আকাশটা খুবই ভালো ছেলে বাবা। ওর মনে কখনোই কষ্ট জায়গা পেতোনা। কিন্তু ইদানীং ছেলেটা আমার খুবই বিষাক্ত জীবন পার করছে। ঠিকমতো খায়না, কারো সাথে ভালোকরে কথা বলেনা। কিছুদিন ধরে স্মোক করাও শুরু করে দিয়েছে আকাশ, বলতে বলতে কেদে দিলেন আকাশের মা।
ধ্রুব আকাশের মায়ের চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো
-নিজেকে শান্ত করুন আন্টি।
-ও শেষ হয়ে যাচ্ছে বাবা, আমি কিভাবে ওকে আগের মতো ঠিক করে তুলবো কিছুই বুঝতে পারছিনা। ভেজা গলায় বললেন আকাশের মা।
-আকাশ যেটা করছে সেটা ঠিক নয়, সে আবেগী হয়ে গেছে। ওর মতো একজন বুদ্ধিমান ছেলে আবেগকে এতোটা প্রশ্রয় দেয় কিভাবে সেটাই বুঝতে পারছিনা। গম্ভীর গলায় বললো ধ্রুব।
-ও কখনোই এতোটা আবেগি ছিলোনা।
-আমাকে এখন কি করতে হবে আন্টি?

আকাশের মা আঁচলের কোনা দিয়ে চোখ মুছলেন। ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে দৃঢ় কন্ঠে বললেন
-আমরা আকাশের বিয়ে দিতে চাইছি, বিয়ের পর যদি ওর অবস্থার একটু উন্নতি হয় সেই আশায়।
-ওর এমন অবস্থায় ওকে বিয়ে করানোটা কি ঠিক হবে? ও কি রাজি হবে?
-সেই জন্যই তো তোমাকে বলছি। তুমি কিছু একটা করো, ওকে বুঝিয়ে রাজি করাও।
-আমি চেষ্টা করবো।
-চেষ্টা করো বাবা। আচ্ছা, তোমার পরিচিত ভালো কোনো মেয়ের সন্ধ্যান আছে?
-আকাশের জন্য?
-হুম।

ধ্রুব স্বাভাবিক গলায় সকলের উদ্দেশ্যে বললো
-নীলিমাকে আপনাদের কেমন লাগে?
-নীলিমা কে?
-তারার বান্ধবী, আজ পার্টিতে দেখেছেন বোধহয়।
-আমি দেখেছি মেয়েটাকে, মেয়েটা অনেক চঞ্চল, স্মার্ট ও অনেক। উৎফুল্ল গলায় বললো সীমা।
-সেই সাথে অনেক অনেক ভালো মেয়েটা। একদম ফ্রেশ মাইন্ডের। প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো ধ্রুব।
-তাহলে তো ভালোয় হলো, এক ছেলের বিয়েতে এসে আরেক ছেলেরটাও ব্যবস্থা করে যাবো। এখন শুধু বাকি ছেলেটাকে রাজি করানো।
-কিন্তু ওই মেয়েটা কি রাজি হবে ভাইয়াকে বিয়ে করতে? ভাইয়া ইদানীং যেরকম গোমড়ামুখো হয়েছে, ওইরকম একজন স্মার্ট মেয়ে কখনোই এমন মুখ গোমড়া কে বিয়ে করবেনা। ভাইয়ের প্রতি প্রচন্ড অভিমান নিয়ে বললো আশা।

আশার কথায় ধ্রুব হাসলো, ওর হাসিতে কিঞ্চিৎ ভ্রু কুচকালো আশা। সে কপাল কুচকে বললো
-হাসলেন কেন ভাইয়া? আমি কি কোনো হাসির জোক্স বলেছি?
-আমার কাছে কথাটা অনেকটা জোক্সের মতোই লাগলো বোনটি।
-কেন?
-তুমি বললে নীলিমা রাজি হবেনা আকাশকে বিয়ে করতে?
-অবশ্যই। অভিমানী গলায় বললো আশা।
-কিন্তু আমার ছোট বোনটি কি জানে, নীলিমা আকাশকে দেখা মাত্রই একটা বড়সড় ক্রাশ খেয়েছে, ইনফ্যাক্ট এক দেখাতেই সে আকাশের প্রেমে পড়ে গেছে, যাকে বলে লাভ এট ফার্স্ট সাইট”
-সিরিয়াসলি ভাইয়া? প্রচন্ড খুশিতে লাফিয়ে উঠলো আশা।
-তুমি কি সত্যি বলছো ধ্রুব? কিছুটা অবিশ্বাসমাখা গলায় বললো সীমা। আকাশের মাও সেটা জানার জন্য গভীর আগ্রহে তাকিয়ে আছে ধ্রুবর দিকে।
ধ্রুব সকলের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে বললো
-আমি ঠিক বলছি আন্টি। নীলিমা আসলেই আকাশকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে। ইনফ্যাক্ট, সে আমাকেও ওর কথা বলেছে।
-তাহলে তো ভালোই হলো, একদিক দিয়ে নিশ্চিন্ত হলাম। এখন আমার ছেলেটার যদি একটু সুবুদ্ধি হয়, তাহলেই বাচা যাবে।

ধ্রুব রুমের দিকে গেলো, রুমে ঢুকে দেখলো আকাশ নেই সেখানে। আকাশ এই মুহূর্তে কোথায় থাকতে পারে সেটা মুহূর্তেই আন্দাজ করে নিলো সে। সেই হিসেবেই বেলকনিতে চলে গেলো ধ্রুব নিজেও।
ধ্রুব খেয়াল করলো সিগারেটের কালো ছাই আকাশের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। চোখ বুঝে চেয়ারে হেলান দিয়ে প্রায় শুয়ে আছে আকাশ। ধ্রুবর পায়ের আওয়াজ হয়তো আকাশের কান পর্যন্ত গেলোনা। ধ্রুব আকাশের কাছাকাছি গিয়ে ওর কাধে হাত রাখলো। হটাৎ এতো রাতে নিজের কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেয়ে কিছুটা ভড়কে গেলো আকাশ। সে তারাতাড়ি করে চোখ মেলে সামনে থাকা ব্যক্তিটার দিকে তাকালো। ধ্রুবকে দেখতে পেয়ে কিছুটা স্বস্তির দম নিলো সে। আকাশের এরুপ বিহেভিয়ারে ধ্রুব হাসলো একটু। আকাশ বললো
-আপনি কখন এলেন?
-এইমাত্রই। এখানে বসে আছো কেন?
-এমনি, ঘুম আসছেনা।
-মনের মধ্যে কষ্ট পুষে রাখলে ঘুম আসবেওনা আকাশ।
-এসব কিছুনা। ঘুমাবেন না?
-কথা ঘুরাচ্ছো আকাশ?

আকাশ বাইরে জোছনাবিহীন আকাশের দিকে তাকালো একনজর। গম্ভীর গলায় বললো
-কথা ঘুরানোর মতো কিছু নেই আমার।
-কন্ট্রোল করো নিজেকে আকাশ। বাস্তবে ফিরে এসো, মরিচিকার পিছনে ঘুরে নিজেকে এভাবে শেষ করোনা।
-আমি রুমে যাচ্ছি, ঘুমাবো। আকাশ রুমে যাবার উদ্দেশ্যেই চেয়ার থেকে উঠে দাড়ালো। ঠিক তখনই ধ্রুব ওর হাতে ধরে আবারো চেয়ারে বসিয়ে দিলো। এতে কিঞ্চিৎ ভ্রু যুগল কুচকালো আকাশ। ধ্রুবকে বললো
-কি হলো? এভাবে বসালেন যে?
-কথা আছে তোমার সাথে।
-কি কথা থাকতে পারে আমার সাথে? আপনার ঘুমের প্রয়োজন, সকালে উঠতে হবে। আকাশ তারা দিতে লাগলো ধ্রুবকে।

ধ্রুব আকাশকে হাতে ইশারা করলো চুপচাপ করে বসার জন্য। আকাশও বাধ্য ছেলের মতপ চুপটি করে বসে রইলো ধ্রুবর সামনে। ধ্রুব নিরবতা ভেঙে বললো
-জীবনটা বড়ই অদ্ভুত আকাশ, জানোতো? মানুষ কখন কি করে, কখন কার মনে কি জাগে সেটা কেউই আগে থেকে বলতে পারেনা। ইনফ্যাক্ট, সেটার ধারণা পর্যন্ত থাকেনা।
আকাশ অন্যদিকে তাকিয়ে আছে ঠিকই, কিন্তু খুবই মনোযোগ সহকারে শুনছে ধ্রুবর বলা কথাগুলো।
ধ্রুব আবারও বলা শুরু করলো।
-কোনো একসময় আমি কাউকে খুব ভালোবেসেছিলাম, তাকে নিয়ে মনের মধ্যে অনেক অনেক স্বপ্নের বাসা বুনেছিলাম। কিন্তু হটাৎ একটা ঝড় এলো। ভেংগে গেলো আমার স্বপ্ন। আমার জীবনে এলো তারা নামের একটা নক্ষত্র, কিন্তু তখন আমি বুঝিনি সেটা নক্ষত্র ছিলো, আমি সেটাকে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ ভেবেছিলাম।

আকাশ খানিক চমকালো ধ্রুবর এইসব কথায়। সে অবাক হওয়া ভংগিতে বললো
-এইসব কথা আমাকে কেন বলছেন?
-দরকার আছে তাই বলছি।
ধ্রুব কিছুক্ষণ থামলো। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আকাশপানে তাকালো একবার। আকাশ এখনো ধ্রুবর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো বুঝার চেষ্টা করছে ধ্রুবর বলা কথাগুলো।
ধ্রুব সামান্য হেসে আকাশের দিকে চোখ ফিরালো আবার। বলতে লাগলো..
-আমার ভাগ্য হয়তো অন্যকিছু চাইতো তখন। যাকে জীবনের সবথেকে মূল্যবান মানুষ হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম, সেই আমার সবথেকে মূল্যবান মানুষগুলোর সাথে বেইমানি করেছে, আমার সাথে বেইমানি করেছে, ওর প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে আমি আমার মহামূল্যবান নক্ষত্রটাকে অপমান করে বাসা থেকে বের করতেও দ্বিধা করিনি। কিন্তু এরজন্য আফসোস করতে হয়েছে আমাকে দীর্ঘকাল, দীর্ঘসময়। অনেক অনুশোচনায় ভুগেছি আমি, অনেক খোজেছি আমার হারানো নক্ষত্রটাকে।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি আর উনার ইচ্ছাতেই আমি পেয়েও গেছি আমার হারানো ভালোবাসাকে।
ধ্রুব চোখ বন্ধ করলো। ওর চোখের কোনে পানি।
আকাশ বুঝতে পারছেনা ওর কি করা উচিত এই মুহূর্তে।

সে ধ্রুবর হাত ধরলো, ধ্রুব তাকালো আকাশের দিকে। আকাশ নিরব। ধ্রুব বললো
-তুমি কি ভাগ্যে বিশ্বাস করো আকাশ? তুমি কি মানো, যা ঘটে তা আল্লাহর হুকুমেই ঘটে?
আকাশ অন্যদিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে তাতে সম্মতি জানালো। ধ্রুব হাসলো।
-তাহলে কেন নিজেকে এভাবে শেষ করছো? কেন মেনে নিচ্ছোনা, তারা তোমার জন্য নয়, আমার জন্যই সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ আমার ভাগ্যেই তারাকে রেখেছিলো, সেইজন্যই ওকে হারিয়েও আবার পেয়েছি আমি। আর আল্লাহর ইচ্ছাতেই তারাকে ভালোবাসা স্বত্বেও তুমি তাকে পাওনি।
-কে বলেছে আমি এইসব মানিনি? আমি সবটাই মেনে নিয়েছি। শান্ত গলায় বললো আকাশ।

-আমি জানি আকাশ, তুমি এখনো তারাকে ভুলতে পারোনি, ওকে এখনো ভালোবাসো আগের মতোই।
ধ্রুবর কথায় কিঞ্চিৎ চমকালো আকাশ। সে ইতস্তত করে বললো
–এটা মিথ্যা। আমি আগে ওকে ভালোবাসতাম ঠিক, তবে সেটা ভালোবাসতাম পর্যন্তই সীমাবদ্ধ আছে।
-তাহলে নিজেকে এভাবে শেষ কেনো করছো?
-কোথায় নিজেকে শেষ করছি আমি?
-স্মোক কেন করো? ঠিকমতো খাওয়া দাওয়া, কারো সাথে কথাবার্তা হয়না কেন?
-এইসব আপনাকে কে বলেছে?
-আমি কি ঠিক বলছিনা? পাল্টা প্রশ্ন করলো ধ্রুব।

আকাশ কিছুটা দমে গেলো। সে ভেজা নয়নে তাকালো ধ্রুবর দিকে। ধ্রুব ওর চোখগুলো মুছে দিয়ে বললো
-আমি তোমার ভাইয়ের মতো। তাই ভাই হিসেবে তোমার কাছে আমার একটাই আবদার, নিজেকে শেষ করে দিওনা। জীবন একটাই, আর এই জীবনটা কখনোই কারো জন্য থেমে থাকেনা, আর থাকবেও না। তাই বলছি, এই এক জীবনকে এভাবে বোকার মতো নষ্ট করে দিওনা। নিজের লাইফটাকে গুছাও। সবাইকে খুশিতে রাখো, নিজে খুশি থাকো। নিজের মতো করে চলো, পিছনে কি হয়েছে সব ভুলে জীবনটাকে নতুন করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাও।

-আমি কি পারবো?
-নিজের প্রতি কনফিডেন্স নেই?
-আছে? নির্লিপ্ত গলায় বললো আকাশ।
ধ্রুব কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো। আকাশের ভাবমূর্তি বুঝার চেষ্টা করে বললো
-নীলিমাকে এক্সেপ্ট করে নাও আকাশ।
আকাশ কিছুটা চমকে গিয়ে বললো…
-নীলিমা? ওই তারছিড়া মেয়েটা?
-হ্যাঁ নীলিমা। আর ও কিন্তু মোটেও তারছিড়া নয়। খুবই বুদ্ধিমতী একটা মেয়ে, তারার বেস্টফ্রেন্ড। তোমায় খুব ভালোবাসে। বিয়ে করতে চায় তোমাকে।
-কিন্তু আমিতো ওকে ভালোবাসিনা। অন্যদিকে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো আকাশ।

-তোমায় জোর করবোনা আকাশ। তবে ভেবে দেখো। ও অনেক ভালো মেয়ে, তোমাকে মন থেকেই ভালোবেসে ফেলেছে মেয়েটা।

ধ্রুব কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,
“একটা কথা বলি, ভালোবাসা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। কেউ অনেক সাধনা করেও একটু ভালোবাসার সন্ধ্যান পায়না, আর কারো কাছে ভালোবাসা নিজ থেকে ধরা দিতে আসে, বুদ্ধিমানেরা সেই ভালোবাসাটা খুব শক্তভাবে আকড়ে ধরে, বোকারা সেটা খেলার ছলে হেলা করে। আর তারাই পরে পস্তায়।
নীলিমা সত্যিকারের ভালোবাসা নিয়েই তোমার সামনে এসেছে, ভালোবাসার পরশে তোমায় মাতাতে চাইছে।
এখন তুমি কি করবে সেটা তোমার একান্তই পারসোনাল ম্যাটার। তবে আমি তোমাকে যথেষ্ট বুদ্ধিমান বলেই জানি।

ধ্রুবর বলা কথার প্রেক্ষিতে কিছু বললোনা আকাশ। ওর মুখেও কোনো এক্সপ্রেশন দেখতে পেলোনা সে।
আকাশ বললো
–অনেক রাত হয়েছে, ঘুমাবো আমি।
আকাশ চলে গেলো রুমের দিকে। ধ্রুবর বলা কথাগুলো এড়িয়ে যাওয়ার বাহানামাত্র এটা সেটা ধ্রুব খুব ভালোভাবেই বুঝে গেছে। নীলিমা অনেক বড় একটা শক খাবে আগামীকাল, যখন জানতে পারবে আকাশ তাকে এক্সেপ্ট করবেনা কখনো, আর ঠিক সেই মুহূর্তে ধ্রুবর উপর দিয়ে কি পরিমান ঝড় বইতে পারে সেটা আন্দাজ করেই কিছুটা ঢোক গিললো ধ্রুব। আগামীকাল ওর উপর নীলিমাথ্যারাপি প্রয়োগ হবে এটা নিশ্চিত, আর সেই নীলিমাথ্যারাপি যেনো হজম করতে পারে সেইজন্য মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করতে লাগলো ধ্রুব।

পরেরদিন খুব ভোরে ঘুম ভাংলো আকাশের। সে ব্রাশ হাতে নিয়ে ছাদের দিকে চলে গেলো। বিয়ে বাড়ির আমেজ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগলো। কোলাহলময় হয়ে গেলো পুরো বাড়ি জুরে। সীমা ওয়াশরুমে আছে, আর আশা ওয়াশরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে সীমার বের হবার অপেক্ষায়। আকাশের মা জায়নামাজের বিছানায় বসে তসবিহ জপছেন।
ধ্রুবর বাবা মা ছেলের বিয়ের ব্যস্ত সময় পার করছেন। যার বিয়ে, সেই ধ্রুবই এখনো বিছানায় পরে পরে ঘুমাচ্ছে।

আকাশ ছাদের এক কোনে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছে, এরই এক ফাকে ফোনটা হাতে নিলো সে। কয়টা বাজে সেই টাইম দেখার জন্য।
টাইম দেখে ফোনটা রাখতে যাবে, ঠিক সেই মুহূর্তে একটা আননোন নাম্বার থেকে মেসেজ আসলো ফোনে। প্রথমে সেটাকে কোনো পাত্তা না দিলেও কি যেনো মনে করে মেসেজটা ওপেন করলো আকাশ। মুহুর্তেই ওর চোখদুটো কপালে উঠে যাবার উপক্রম হলো।
মেসেজটায় লিখা আছে..

“আপনারা ঘারে কয়টা মাথা আছে? কোন সাহসে আমাকে রিজেক্ট করা হলো? আজ তো আপনি গেলেন। আপনাকে আমার হাত থেকে আজ কেউ বাচাতে পারবেনা, আমি আজ রাম দা নিয়ে আপনার জন্য অপেক্ষা করবো”

আকাশ থতমত খেয়ে গেলো, এমন হুমকিমাখা মেসেজ কে করতে পারে ওকে? ও রিজেক্টই বা কাকে করলো?
কিছুক্ষণ এটা কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করার পর কোনো উত্তর পেলোনা আকাশ। পরে এটাকে কারো দুষ্টুমি ভেবে মাথা থেকে ঝেরে ফেলে নিচে চলে এলো সে।
#জানি_দেখা_হবে❤️
Israt Jahan Tanni ✍️
#Part_40

বরযাত্রী রওনা হয়েছে কিছুক্ষন আগে।
ধ্রুবর ঘুম ভাংগার পর ওকে সকলে মিলে বিয়ের গোসল করায়। এরপর ওকে বরের বেশে সাজিয়ে বাকিরাও তৈরি হয়ে নেয় চটপট করে। আকাশ আজ ব্লু কালারের শেরওয়ানি পড়েছে। হাতে রিচ ওয়াচ, আর পায়ে ব্ল্যাক শু। প্যান্টের পকেটে ওয়ালেটটাও নিয়ে নিয়েছে মনে করে। ধ্রুবর ঠিক পাশের সিটেই আকাশ বসে আছে, আর ফোন চাপছে। ধ্রুব খেয়াল করলো আকাশকে আজ গতদিনের তুলনায় অনেকটা ফ্রেশ মাইন্ডের দেখাচ্ছে।

ধ্রুব আকাশের দিকে সামান্য ঝুকে বললো…
-কি ব্যাপার, আজ অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে আছো দেখছি।
-আপনার সেকেন্ড বিয়ে বলে কথা, মেজাজটা তো ফুরফুরে রাখতেই হবে।
-বিয়েটা সেকেন্ড, কিন্তু বউটা নয়। ধ্রুব হেসে বললো।
আকাশ প্রতিউত্তরে কিছু বললোনা।

ধ্রুব আকাশকে এক নজরে ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো..
-এতো মনোযোগ দিয়ে কি দেখছো? কি বিশেষ কিছু আছে নাকি?
-বিশেষ কিছু মানে? ভ্রু যুগল কুচকালো আকাশ।
-নাহ মানে, হতেও তো পারে কারো বিশেষ কোনো কথা।
আকাশ সন্দিহান ভাবে তাকালো ধ্রুবর দিকে। সে কপাল বাকিয়ে বললো
-আপনাকে আমার কেন যেনো খুব সন্দেহ লাগছে। আপনি কিছু করেন নি তো?
-যাহ বাবা, আমি আবার কি করলাম।
ধ্রুব কিছু জানেনা এমন একটা ভাব ধরে নিজের সিটে ঠিকঠাক ভাবে বসে পরলো।

গাড়ি চলছে আপন গতিতে। আর কিছুক্ষন সময়ের ব্যবধান , এর পরই তারা সারাজীবনের জন্য পার্মানেন্ট ভাবে আমার হয়ে যাবে। এর আগে আমি ধরে রাখতে পারিনি ওকে৷ কিন্তু এইবার আর সেই ভুল করবোনা কিছুতেই, বুকের পাজরের সাথে মিশিয়ে রাখবো সারাক্ষন। এইসব ভেবেই ঠোঁটের কোনে হাসির আভা ফুটিয়ে তুললো ধ্রুব।

তারাকে সাজিয়ে বসানো হয়েছে স্টেজে। পার্লারের কর্মীরা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে সাজিয়েছে তারাকে। বিয়ের সমস্ত জিনিসপত্র খুব সকালেই পাঠিয়ে দিয়েছিলো ধ্রুবরা। যার জন্যই তারাতাড়ি সাজানোটা কমপ্লিট করা হয়ে গেছে।

নীলিমা নিজে নিজেই ট্রাই করছে শাড়ি পড়ার। একটা গোল্ডের পাড়ের ব্লু রং এর জামদানী শাড়ি। গোল্ডেন কালারের ব্লাউজ, সেই সাথে গোল্ডেন কালারের গয়না। শাড়ি পড়া শেষ করে সামান্য মেকাপ করে নেয় নীলিমা। আয়নায় নিজেকে দেখে নিজেই নিজের প্রশংসা করতে থাকে অনেক্ষন। নীলিমা মনে মনে বলে “বাহ নীল, তোকে আজ কতো সুন্দর লাগছে রে, আজ তো জিতে নিবিই তোর স্কাই কে। দেখি ওই ব্যাটা স্কাই আজ তোর উপর থেকে কিভাবে নজর সরায়”

বরের গাড়ি চলে এসেছে কিছুক্ষন আগে। তারার বাবা গাড়ির কাছে গিয়ে ধ্রুবর আংগুলে আংটি পরিয়ে ওকে গাড়ি থেকে নামায়। ধ্রুব ও যথেষ্ট সাবলীলভাবে গাড়ি থেকে নামে। সামনেই বড় গেইট বাধা, সেখানে চেয়ার টেবিল পাতা আছে, আর তার সাথে অনেক অনেক মেয়েদের জটলা। আশা আর সীমা ওদেরকে পাশ কাটিয়ে বাসার ভিতরে ঢুকে পরে। ওদের উদ্দেশ্য তারার কাছে যাওয়া।

ধ্রুবকে বসানো হয়েছে একটা দামী চেয়ারে, সামনে টেবিলে রাখা আছে অনেক ধরনের শরবত। মেয়েরা শর্ত দিয়েছে, কারো কোনো সাহায্য না নিয়ে এখান থেকে আসল শরবত টা চিনে নিয়ে ধ্রুবকে খেতে হবে। এমন শর্তে হুমড়ি খেয়ে গেলো ধ্রুব। কিছুক্ষণ কি যেনো ভেবে নিজেকে সামলে নিলো। ঠোঁটের কোনে একটা দুষ্টু হাসি ঝুলিয়ে নিয়ে সামনে থাকা মেয়েদের উদ্দেশ্যে বললো..
–ঠিক আছে, আমি সঠিক গ্লাসটা বেছেই শরবত খাবো, তবে এর জন্য আমি কি পাবো?

মেয়েরা সমস্বরে বললো
-যদি সঠিকটা খোজে নিতে পারেন তাহলে কোনো ঝামেলা ছাড়াই এখান থেকে ভিতরে ঢুকতে পারবেন। আর যদি না পারেন তাহলে,
-তাহলে কি? শক্ত গলায় বললো আকাশ ।।
-পুরো দশহাজার টাকা দিয়েই এখান থেকে ছাড়া পাবেন। এর আগে নয়।
-দশ হাজার কেন? তোমরা কি ডাকাত নাকি? নাটকীয়ভাবে বললো ধ্রুবর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বন্ধুরা।
-হ্যাঁ ডাকাত, কোনো সমস্যা? দরকার হলে আরো বেশি চাইবো, না দিলে ঘাড় মটকাবো। বেশ তেজ দেখিয়ে বললো মেয়েরা।
-ওরেব্বাহ, এ কোথায় এসে ফেসে গেলাম। হে আল্লাহ, আমাকে উপরে উঠিয়ে নাও। উপরের দিকে তাকিয়ে বললো রাফসান। ওর কথায় সকলে হেসে দিলো।

ধ্রুব ওদেরকে হাতে ইশারা করলো থামতে। সবাই থেমে গেলো। ধ্রুব সিরিয়াস মুখ নিয়ে মেয়েদের উদ্দেশ্যে বললো..
-শিউর তো?
-অবশ্যই।

আকাশ পাশেই দাঁড়ানো। তারা সাথে ধ্রুবর সকল বন্ধু বান্ধব। রবি, পিয়াস, রাফসান, রাব্বি সকলেই ধ্রুবকে ঘিরে দাঁড়ানো আছে।

মেয়েরা ধ্রুবর মলিন মুখটা দেখছে আর মুখ টিপে হাসছে। আকাশ খেয়াল করলো, একেকটা গ্লাসে একেক রঙ এর শরবত রাখা। কোনোটা সাদা, কোনোটা হলুদ, কোনোটা কোলা ফ্লেবার, আবার কোনোটা লেমন ফ্লেবারে। কোনো গ্লাসে লাল রঙ এর শরবত, আবার কোনোটা অরেঞ্জ ফ্লেবার।

রাফসান হাসতে হাসতে মজার ছলে বললো..
–এই সবকিছুই কি তোমাদের দুলা মশাইয়ের জন্য এনেছো সুন্দরীরা? আমাদের টা কই? আমরা কি দোষ করলাম?
–হ্যা হ্যাঁ, আমাদের সাথে এমন অন্যায় করা হচ্ছে কেন? আমরাও তো বরের সাথে এসেছি। পাশ থেকে রবি বললো.

রবির বউ আজ মেয়েপক্ষ, সেও মেয়েদের সাথে এই জটালাতেই ছিলো। রবির কথার প্রেক্ষিতে সে বেরিয়ে আসলো সামনে। কালো রঙ এর একটা শাড়ি পরে আছে সে। আচলের মাথাটা আংগুলের মাথায় পেচিয়ে সেটাকে রবির চোখের সামনাসামনি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বললো..
-আপনাদের কোনো দুশ্চিন্তা নেই বেয়াইমশাই রা। আপনাদের জন্যও স্পেশাল ব্যাবস্থা করা আছে।

–এই রবি, তোর বউ তো আজ পোল্ট্রি খেলো, আমাদের সাথে সাথে তোকেও বেয়াই ডাকছে। পিয়াশ মশকরা করে বললো।
-ডাকতে দে, কার দৌড় কতদূর সেটা সময় হলেই দেখা যাবে। ডোন্ট কেয়ার ভাব ধরে রবি বাকাভাবে বললো।

ধ্রুব এক এক করে গ্লাসগুলো দেখতে লাগলো। চোখেমুখে চিন্তার ছাপ, যদি উল্টাপাল্টা কিছু করে তাহলে মান সম্মান যাবে আজ৷
ধ্রুব খুব ভালোভাবেই গ্লাসগুলো দেখছে, একটা একটা করে গ্লাস হাতে নিয়ে সেগুলো নাকের কাছাকাছি নিয়ে স্মেল নিলো সে, এভাবে সবগুলো গ্লাসই সে এক এক করে স্মেল নিয়ে টেবিলে রাখলো। মেয়েরা অনেক মানা করছে স্মেল নেওয়ার জন্য, কিন্তু, ধ্রুব এইসব কেয়ার করছেনা। সে মেয়েদের উদ্দেশ্যে বললো, “আমাকে শর্ত দেওয়া হয়েছে সঠিক গ্লাসটা খুজে বের করে সেখান থেকে শরবত পান করতে, কিন্তু গ্লাসগুলোর স্মেল নেওয়া যাবেনা, এইরকম কোনো শর্ত কিন্তু এখানে নেই। ”
মেয়েরা দমে গেলো ধ্রুবর এরুপ কথায়।

ধ্রুব ঠোঁটের কোনে বাকা হাসি ফুটে উঠলো। সে মেয়েদের উদ্দেশ্যে বললো..
-তাহলে আমার দশহাজার টাকা বাচলো।
-কিভাবে বাচলো? আপনি তো কোনোটাই টেস্ট করলেন না। খানিকটা তেজ নিয়ে বললো রবির বউ।
-টেস্ট নেওয়া হয়ে গেছে। এগুলো একটাও খাওয়ার উপযুক্ত নয়।
-টেস্ট না করেই টাকা বাচানোর ধান্ধা, আমরা এইসব মানছি না, আর মানবোও না। আমরা প্রমাণ চাই।
-প্রমাণ চান তো?
-অবশ্যই।
-তাহলে আপনারাই এগুলো টেস্ট করুন। প্রমিস করছি, যদি এগুলো খেয়ে আপনারা একটুও মুখ বিকৃত না করেন তাহলে দশ নয়, পুরো পনেরো হাজার টাকা দিবো আমি।
-ঠিক তো? কথার খেলাপ যেনো না হয়। আরেকটা মেয়ে পাশ থেকে বললো।
-এই ধ্রুব যা বলে তাই করে।

রবির বউ এক এক করে গ্লাস হাতে নিচ্ছে আর রাখছে। কোনটা টেস্ট করবে বুঝতে পারছেনা। ও তো ভালো করেই জানে, এখানে একটাও খাওয়ার উপযুক্ত নয়। সবার সামনে কথা দিয়েছে, এখন তো না খেলে মাথা কাটা যাবে।
অবশেষে সাদা পানির গ্লাসটা হাতে নিলো সে। মুখের সামনে নিতেই মুখটা ছোট হয়ে গেলো ওর।
ধ্রুব দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো..
-প্লিজ ভাবি, তারাতাড়ি করুন, ওখানে আমার বউ একা একা বসে আছে।

রবির বউ খুবই সাবধানে পানির গ্লাস থেকে কিছুটা পানি মুখে নিলো। মুখে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর ওভাবেই পানিভর্তি মুখটাকে ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো সে।। রবি ওকে উস্কানি দিয়ে বললো..
-কি ব্যাপার? হাওয়া ফুরুৎ?
কথাটা শেষ হওয়া মাত্রই রবির বউ এর মুখে থাকা সমস্ত পানি গিয়ে পরলো রবির শরীরে।
রবি আশাহত চোখে একবার নিজের বউ এর দিকে তাকাচ্ছে তো আরেকবার নিজের গায়ের দিকে। এ বুঝি এখনই কেদে দিবে। রবির বউ ওয়াক ওয়াক করতে করতে দৌড়ে চলে গেলো এখান থেকে। এতো বেশি লবন দেওয়া হয়েছে পানিতে, যেটা পেটে যাওয়ার আগেই নাড়িভুড়ি জালিয়ে দিয়েছে।

ধ্রুব আর ওর বন্ধুরা সমস্বরে হেসে বললো
-ভাবী চিৎপটাং। হাহাহা
কথাটা রবির গায়ে খুব লাগলো। সে খানিক রেগে গিয়ে বললো..
-ও তোদের ভাবী হয়। সম্মান দিয়ে কথা বল।
আকাশ এবার মুখ খোললো। সে বললো
–এইবার যাওয়া যাক..
ধ্রুব সম্মতি জানালো তাতে। ধ্রুবকে নিয়ে এক এক করে সকলে ভিতরে ঢুকতে শুরু করলো।

বিয়ের কাজ শুরু হয়েছে কিছুক্ষণ আগে। ধ্রুব আর তারাকে বসানো হয়েছে পাশাপাশি। তারাকে পরানো হয়েছে গোল্ডেন কালারের বেনারসি, সেই সাথে ম্যাচিং করা জুয়েলারি। হালাকা মেকঅাপ। ঠোটে লাল লিপস্টিক আর কপালে লাল আর গোল্ডেন কম্বিনেশনে টিপ। এতেই তারাকে গর্জিয়াস লাগছে খুব। ধ্রুব মুগ্ধ নয়নে কিছুক্ষণ দেখলো তারাকে। তারার নজর নিচের দিকে এখনো, ধ্রুবর দিকে তাকানোর সাহস ওর হয়নি এখন পর্যন্ত।

আকাশের ওয়াশরুমে যাওয়া প্রয়োজন, আর সেইজন্যই ওয়াশরুমের দিকে এগুতে লাগলো সে। একটা করিডর দিয়ে সামনে এগুচ্ছে আকাশ, ঠিক সেই মুহূর্তে কেউ একজন ঝড়ের বেগে এসে এক টানে ওকে পাশের রুমে নিয়ে ঢুকে পরে। আকাশ মুহুর্তেই বেসামাল হয়ে পরে, কিছুক্ষণ সময় লাগে, এই ঝটকা থেকে নিজেকে বের করার। ঠিক কি হয়েছে সেটা জানার জন্য সামনে তাকায় আকাশ, আর তখনই বড়সড় একটা ধাক্কা খায় সে।

কিছুটা ভড়কে গিয়ে প্রায় তুতলানোর মতো করে বলে…
-এ– এটা কি? সরাও বলছি এটা।
-সরাবোনা, কি করবে করে নাও। রামদা টা আকাশের গলার আরো কাছাকাছি নিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বললো নীলিমা।
-এটা কি ধরনের মজা। গলায় লাগলে কি হতে পারে বুঝতে পারছো তুমি?
-গলার লাগার জন্যই তো ধরেছি। অনেক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি এটার জন্য। বলেছিলাম না, অপেক্ষা করবো আজ।

আকাশ এইবার কিছুটা সিরিয়াস হলো।।সে মন থেকে যত ভয় ছিলো সবটা ঝেড়ে ফেলে দিলো। সামান্য কপাল কুচকালো তার। ভ্রু বাকিয়ে বললো
-তার মানে?
-ছোট খোকা, ফিডার খাবা? এনে দেই? কিচ্ছু বুঝো না তাইনা?
-ওই হুমকিমাখা মেসেজটা তুমি পাঠিয়েছিলে তাহলে? সামান্য রাগী হলায় বললো আকাশ।
-তো? অন্য কাউকে এক্সপেক্ট করেছিলে নাকি?
-বাজে কথা রাখো। এইসবের মানে কি?
-ভালোবাসা আদায় করা।
-এভাবে রামদার ভয় দেখিয়ে? কপাল কুচকে বললো আকাশ।
-দরকার হলে এর চাইতেও ভয়ংকর কিছু করবো।
-লাভ নেই। আমি কখনোই তোমাকে ভালোবাসতে পারবোনা।
-আমাকে ভালোবাসতে পারবে কিনা সেটা তোমার কাছ থেকে জানতে চেয়েছি আমি?
-তার মানে? অবাক হয়ে বললো আকাশ।

নীলিমা আকাশের গলার কাছ থেকে রামদা টা সরালো। আকাশ নড়েচড়ে উঠলো সামান্য। নীলিমা আকাশের শেরওয়ানির কলারের দুই দিকে দুই হাত দিয়ে আকড়ে ধরলো সামান্য। ঠোটের কোনায় সামান্য দুষ্ট হাসির আভা ফুটিয়ে তুলে আকাশের কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিস করে বললো
-তুমি আমাকে ভালোবাসো, কিংবা না বাসো, আই ডোন্ট কেয়ার। শুধু জেনে রাখো, তুমি তো আমারই। আমি তোমাকে ছাড়ছিনা।

To be Continue……
To be Continue…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here