জানি দেখা হবে পর্ব ৫+৬

#জানি_দেখা_হবে
Israt Jahan Tanni
#Part_05
..
– তুই কি দিয়ে তৈরি রে মা??
– কেন বাবা? ধীর গলায় বললো তারা।
– সবেমাত্র এই বাড়িয়ে আসলি, আসার পরেই এতো বড় একটা ঝড় বয়ে গেলো তোর উপর দিয়ে , তাও তুই এতোটুকু ভেঙ্গে পড়িস নি। নিজের জায়গায় অটল আছিস। কি করে?
বাবার কথায় তারা মুচকি হাসলো। বললো..
– কি যে বলেন বাবা। এতোটুকুতেই ভেঙ্গে পরলে চলবে? এখনই যদি ভেঙ্গে পড়ি তাহলে সারাটা জীবন পার করবো কিভাবে? তাছাড়া এইরকম যে হবে সেটা আমি আগেই জানতাম। সবকিছু সহ্য করার জন্য মানুষিকভাবে প্রস্তুত ও ছিলাম আগে থেকে।
– বাহ, তুই তো অনেক বুদ্ধিমতী.. অনেক সুন্দর করে কথা বলিস।
তারা কিছু বললো না। শুধু মুচকি হাসলো।
.
পিছন থেকে কেউ একজন বললো..
– কি ব্যাপার? আমাকে রেখে এখানে কি চলছে??
তারা পিছনে ফিরে দেখলো ওর শাশুরি উঠে এসেছে। তারা এগিয়ে গিয়ে উনাকে সালাম করে বললো..
– কখন উঠলেন মা?
– এইতো এইমাত্রই। তুই কখন উঠলি?
– ও অনেক আগেই উঠেছে। উঠে নামাজ পরেছে, কুরআন তেলাওয়াত করেছে। জানো, ওর তেলাওয়াতের সুর টা খুব মিষ্টি।
– তাই নাকি, সেটা তো খুব ভালো কথা।
– আচ্ছা মা, আপনারা ফ্রেশ হোন। আমি নাস্তা রেডি করছি।
– তুই করবি কেন? বাসায় কি কাজের লোকের অভাব আছে নাকি। তাছাড়া সবেমাত্র এলি এখানে। সব তো তোকেই সামলাতে হবে। এখন নাহয় নাই করলি কিছু।
– না মা। এখন থেকে আমিই সব কাজ করবো। সব কাজ যদি কাজের লোকেই করবে তাহলে আপনাদের পুত্রবধূ আছে কি করতে?
– বেশি বুঝিস না। যা বলছি তাই কর। তবে একটা কাজ করতেই পারিস.
– কি কাজ মা?
– সবাইকে তোর হাতের চা টা খাওয়াতে পারিস।
মায়ের কথায় তারা মুচকি হেসে বললো..
– ঠিকআছে মা।
তারা চলে গেলো কিচেনের দিকে। ধ্রুবর মা বাবা হাসিমুখে দেখছে তারার যাওয়া। এক পর্যায়ে ধ্রুবর মা বললো..
– এতোদিনে একটা লক্ষি বউমা পেলাম। কি বলো।
– হ্যাঁ, কিন্তু না জানি ওকে কতো কষ্ট সইতে হবে। বেশ ব্যথিত কন্ঠে কথাটা বললেন ধ্রুবর বাবা। মুহুর্থেই তাদের হাসিমাখা মুখগুলো কালো মেঘে ঢেকে গেলো।
.
এক এক করে সবাইকে চা দিলো তারা। চা খেয়ে সবাই প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এক চুমুক চা মুখে দিয়ে মা বললেন..
– তারা..
– জ্বী মা।
– সবাইকে তো দিলি, তোর বরকে দিবিনা?
মায়ের কথায় তারা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো। লজ্জামাখা মুখেই বললো..
– উনি তো ঘুমোচ্ছেন।
– ডেকে তুল যা। আর যাওয়ার সময় চা টা নিয়ে যাস।
– কিন্তু মা..
– কোনো কিন্তু না। এতো ভয় পেলে চলবে না। শাসনের সুরে বললেন মা।
তারা আর কিছু না বলে এক কাপ চা হাতে নিয়ে উপরে গেলো। গিয়ে পরলো বিপাকে। কোন রুমে ও আছে সেটাই তোমার জানেনা তারা। চায়ের কাপ হাতে নিয়েই এ ঘর ও ঘর খোজতে লাগলো তারা। কিন্তু কোথাও পাচ্ছেনা। এমন সময় পিছন থেকে মা বললেন..
– এতো খোজতে হবেনা। আমার সাথে আয়।
তারা কিছুটা চমকে গিয়েও সামলে নিলো নিজেকে। তারপর মায়ের পিছন পিছন গেলো উনাকে অনুসরণ করে। বাসার দক্ষিণ দিকে একদম কর্নারে গেলেন ধ্রুবর মা। পিছনে তারা। কর্নারে সবচেয়ে ছোট রুমটার সামনে গিয়ে মা থামলেন। বললেনঃ
– এই ঘরেই আছে ও। তুই যা। আমি নিচে গেলাম।
তারা কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বললো..
– আপনি কিভাবে জানলেন মা, উনি এখানে আছেন?
তারার কথায় মা কিছুটা হেসে বললো..
– ও যখন খুব রেগে থাকে তখন নিজের রুম ছেড়ে দিয়ে এখানেই থাকে। এই রুমটা খুব নিরিবিলিতে তো। এদিকটায় তেমন কেউ আসেনা। তাই এখানেই নিজের রাগী মুহুর্তটা কাটায় ও।
– ওওওওও..
.
তারা ধীরপায়ে রুমে ঢুকলো। রুমের দরজাটা হালকা চাপানো ছিলো তাই ভিতরে ঢুকতে কোনো অসুবিধায় হয়নি তার।
ধ্রুব উপুর হয়ে শুয়ে ঘুমোচ্ছে। তারা চায়ের কাপটা পাশে রাখা ছোট্ট টি টেবিলে রাখলো। কিছুক্ষন ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে থেকে আস্তে আস্তে ডাকতে লাগলো..
– শুনছেন? এইযে, শুনছেন?
তারার ডাকে ধ্রুবর কোনো হুশ ই হলোনা। তারা কি করবে বুঝতে পারছিলোনা। তাই ধ্রুবর পিঠে হাত দিয়ে হালকা ঠেলে বললো..
– উঠুন, অনেক বেলা হয়ে গেছে।
কারো হাতের শীতল স্পর্শে হালকা কেঁপে উঠলো ধ্রুব। ঘুম ঘুম চোখে বলে উঠলো..
– ওও তুরিন, ঘুমাতে দাও ..
কথাটা বলেই আচমকাই উঠে বসলো ধ্রুব। তারার দিকে রাগী চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলল..
– How dare you? তোমার সাহস হলো কি করে আমাকে স্পর্শ করার?
– ইয়ে মানে, আপনাকে ডাকার পরেও উঠছিলেন না।
– আমার বাড়িতে আমি যতো ইচ্ছা ঘুমাবো, যখন ইচ্ছা উঠবো..তাতে তোমার প্রব্লেম টা কোথায়? তাছাড়া রাতে কি বলেছিলাম মনে নেই? বেশি অধিকার ফলাতে আসবে না। এখন এখান থেকে যাও.. আমাকে ডিস্টার্ব করবে না।
– চা টা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ধীরগলায় বললো তারা।
– কে বানিয়েছে এই চা? কপাল কুঁচকে বললো ধ্রুব।
– আমি।
– আমাকে বশে আনার জন্য কি মিশিয়ে এনেছো এটাতে?
– মানে?
ধ্রুব হাসলো। বললো.
– হাহ, মানেটা কি তোমাকে বুঝিয়ে বলতে হবে? –
-আমি কিছু বুঝতে পারছিনা আপনার কথা..
– তুরিনকে যেভাবে আমার কাছ থেকে দুরে সরিয়ে নিজেই তার জায়গাটা নিয়েছো, সেভাবেই আবারও আমাকে বশে আনতে চাইছো? যদি এইরকম ভেবে থাকো, তাহলে ভুল ভাবছো। এই ধ্রুব তুরিনের ছিলো, তুরিনেরই থাকবে। কোনোদিন তোমার বশীভূত হবেনা।
তারার চোখদুটো এতোক্ষনে ভিজে গেলো। বললো
– আমি কখনো এইরকম চাইছি। পরিস্থিতিটাই এমন ছিলো।
– তোমার মতো স্বার্থবাদী মেয়েরা নিজেদের পরিস্থিতি নিজেরাই তৈরি করো। তাই এইসব কথা বলে আমাকে বাগে আনতে পারবেনা কখনো।
ধ্রুব আর থাকলোনা সেখানে। পাশ থেকে টি শার্ট টা হাতে নিয়ে হনহন করে চলে গেলো সেখান থেকে। তারা আশাহত চোখে সেদিকে তাকিয়ে রইলো।
..
বিকেলবেলা তারাকে নিয়ে সবাই জড়ো হয়েছে ড্রয়িংরুমে। আগামীকাল তারাকে বাবার বাড়ি পাঠানো হবে। সাথে ধ্রুব ও যাবে। তাই কিভাবে কি করবে সেটাই ডিসকাস হচ্ছে। কিন্তু তারার নজর দরজার দিকে। একটু পর পর বাসার মেইন ডোরের দিকে তাকাচ্ছে ও। সেই সকালে রাগ করে না খেয়েই বেড়িয়েছে ও। এখনো ফিরেনি। মা বার বার ফোন করে ও পাচ্ছেনা ওকে। ফোনটা বন্ধ। বেশ টেনশনে আছে তারা।
..
বাসা থেকে কিছুটা দুরে বটতলায় বসে আছে ধ্রুব। সারাদিন এখানে ওখানে ঘুরেছে বিনা কারনেই। সেই সকাল থেকে তুরিনকে কল দিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু ফোন বন্ধ। চিন্তায় চিন্তায় অস্থির হয়ে যাচ্ছে ধ্রুব। এক পর্যায়ে ভাবতে লাগলো .. ওর কোনো বিপদ হলোনা তো? আমি কি যাবো একবার ওর বাসায়?? না না, একি করে হয়? যেভাবেই হোক, কাল আমার বিয়েটা হয়েছে ও বাড়িতেই। এখন এভাবে যাওয়াটা মোটেই ভালো দেখাবে না। তাই বলে এভাবে বসে থাকাটাও তো সম্ভব হচ্ছেনা। না জানি কি বিপদে পড়েছে আমার তুরিন। কি করবো এখন আমি?? ভাবতে পারছে না আর কিছু ধ্রুব। মাথাটা হ্যাং হয়ে আসছে ওর। কি করবে কিছুই মাথায় আসছেনা। বট গাছের নিচে বসে মাথাটা হাঁটুর উপর নুইয়ে বসলো ধ্রুব। কিছুক্ষন এভাবেই থাকলো। হটাৎ ই নিজের পিঠে কারো হাতের স্পর্শ অনুভব করলো ও। উপর দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো…
– রবি তুই??
– হ্যাঁ, তুই এখানে এভাবে বসে আছিস কেন? নতুন বিয়ে করেছিস বউ এর কাছে থাকবি এখন.. তা না, বাবু এখানে মুখ গুমড়া করে বসে আছে। কথাটা বলতে বলতে ধ্রুবর পাশে বসলো রবি।
.
নতুন বিয়ের কথা শুনে নিজেকে সামলাতে পারলোনা ধ্রুব। হুট করে রবির শার্টের কলার চেপে ধরলো ও। চোখ দিয়ে তার আগুন ঝরছে। রবি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো..
– যা বলার, শান্ত হয়ে বল প্লিজ। এভাবে মাথা গরম করিস না। এটা পাব্লিক স্পেস।
– কেন আমার সাথে এমন করলি? কেন আমার এতো বড় ক্ষতি করলি?
– শান্ত হো। আগে সবটা শুন… তারপর নাহয় রাগ দেখা।🙃
– কিচ্ছু শোনার নেই তোর থেকে। তুই বন্ধু না, তুই আমার শত্রু। বন্ধু হলে আমার সাথে এতো বড় বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারতিনা।
– প্লিজ ভুল বুঝিস না। আমি আগে কিছুই জানতাম না। যখন জানলাম তখন কিছুই করার ছিলোনা। সবার মান সম্মানের প্রশ্ন ছিলো তখন।
তবে আমি একটা কথা কিছুতেই বুঝতে পারছিনা। তুই তো বলেছিলি তুরিন তোকে ভালোবাসতো। আর তুইও ওকে ভালোবাসতি। তাহলে বিয়ের দিন ও কেন পালিয়ে গেলো??
– ও পালিয়ে যায়নি। ওটা একটা ষড়যন্ত্র। ওই কালো মেয়েকে আমার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার আর আমার তুরিনকে আমার থেকে দুরে সরানোর বিশ্রী একটা ষড়যন্ত্র এটা।
– কি বলছিস তুই এইসব? তোর মাথা ঠিক আছে?? ভাবী কিন্তু মোটেও কালো না। আর ষড়যন্ত্রের কথা বলছিস? কে ষড়যন্ত্র করবে তোর বিরুদ্ধে?
– কে করেছে সেটা জানিনা। তবে এতে তোর আর আমার নিজের বাবার হাত আছে এটা আমি নিশ্চিত।
..#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_06
..
– কে করেছে সেটা জানিনা। তবে এতে তোর আর আমার নিজের বাবার হাত আছে এটা আমি নিশ্চিত।
– কি বলতে চাইছিস তুই?
– বুঝতে পারছিস না আমি কি বলতে চাইছি??
– ভনিতা না করে সোজাসুজি বল।
– তোরা আগে থেকেই চাইতি তুরিনের সাথে আমার সম্পর্কটা না টিকুক। সে জন্য আগেও আমাকে মানা করেছিলি ওর সাথে মেশার জন্য। তখন তোদের কথাকে আমি সিরিয়াসলি নেইনি। ভাবিনি তোরা আমার সাথে এমন করবি। এখন যখন দেখলি বাবাও এটার বিরুদ্ধে, তাই এটাকেই চাল হিসেবে ব্যবহার করলি? আমার লাইফটাকে এভাবে বরবাদ করে দিলি? কাঁদো কাঁদো কন্ঠে ধ্রুব বললো.।
– মুখ সামলে কথা বল। যা জানিস না সেটা নিয়ে এতো কনফিডেন্টলি কথা বলিস কেন? আরে, তুই যদি তুরিনকে নিয়ে সুখে থাকতিস তাহলে আমাদের প্রব্লেমস টা ছিলো কোথায়? তোর মতো তুই থাকতি আর আমাদের মতো আমরা। আর আংকেলের কথা বলছিস, আঙ্কেল তো নিজে গিয়েছিলো তোর আর তুরিনের বিয়ে ঠিক করতে তাইনা? তাহলে আমরা কেন এমন করবো? এই সহজ কথাটা কেন বুঝতে চাইছিস না তুই? ওই মেয়েটা যতো নষ্টের মুল। আজ এর জন্যই এমন হচ্ছে। অন্যদিকে ফিরে কথাটা বললো রবি।

ধ্রুব রেগে গিয়ে বললো..
– খবরদার বলছি, তুরিনকে মীন করে একটা কথাও বলবিনা বলে দিলাম।
– একশ বার বলবো, হাজারবার বলবো। দেখি কে আটকায়। বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো রবি।
ধ্রুব রাগে আর ক্ষোভে কিছু না বলেই সেখান থেকে উঠে চলে আসলো। রবি একবারের জন্য বাধাও দিলোনা। ওর মাথাতেও যে রাগ চড়েছে।

কলিংবেলের আওয়াজে দরজার সামনে দৌড়ে গেলো ধ্রুবর মা। দরজা খোলতেই ছন্নছাড়া অবস্থায় ভিতরে ঢুকলো ধ্রুব। মা ব্যস্ত হয়ে বলতে লাগলো..
– কোথায় ছিলি সারাদিন? আর একি হাল করেছিস চেহারার? তোর কি কোনো কান্ডজ্ঞান নেই নাকি? কি হলো কথা বলছিস না কেন?
মায়ের কথার কোনো পাত্তা না দিয়েই ধ্রুব উপরে যেতে লাগলো। তারার সামনে দিয়ে যাওয়ার পথে হটাৎ ই থামলো ও। কিছুক্ষন সরু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো তারার দিকে। যেনো এক্ষুনি ওকে কাচা খেয়ে ফেলবে। আচমকাই বাবা বললো..
– আগামীকাল সকাল সকাল যেনো কোথাও বেরিয়ে পরোনা।
– কেনো? কপাল কুঁচকে বললো ধ্রুব।
– আগামীকাল তারাকে নিয়ে ওদের বাসাতে যেতে হবে তাই।
– কে নিয়ে যাবে ওকে?
– কেনো, তুই।
– আমি কোথাও যাবোনা। বিশেষ করে ওর বাসাতে তো নয়ই।
– যাবোনা বললেই তো আর হবেনা। যেতেতো তোকে হবেই। তাই বলছি কোনো অশান্তি করবি না। শান্ত গলায় বললো ধ্রুবর বাবা।
– আহ ছেলেটা সবে ফিরেছে। এইসব নিয়ে পরেও কথা বলা যাবে। তুই যা, ফ্রেশ হয়ে নে বাবা। সারাদিন কিছু খাসনি। মুখটা একদম শুকিয়ে গেছে।
পাশ থেকে ধ্রুবর মা বলে উঠলো। ধ্রুব আর কিছু বললো না। হনহন করে উপরে চলে গেলো। তারা কিছু বললো না। এতোক্ষন সব কথায় শুনলো ও। বাড়ি যাওয়া নিয়ে যে বেশ ঝামেলা হবে সেটা বেশ বুঝতে পারলো ও।
..
রাতে বালিশে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে আধশোয়া অবস্থায় আছে ধ্রুব। তারাদের বাসায় যাওয়া নিয়ে বেশ ভাবাচ্ছে ওকে। একবার ভাবছে যাবেনা তো আরেকবার ভাবছে যাবে। তারার উপর রেগে আছে, ওর সাথে বিয়েটা মেনে নিতে পারছে না, তাই ভাবছে যাবে না। আবার যখন ভাবছে ওখানে গেলে তুরিনের ব্যাপারে জানতে পারবে, ইনফ্যাক্ট ওকে পেতেও পারে ওখানে, তখনই ভাবছে যাবে। আসলে বেশ দুটানায় পরে গেছে ও। সবশেষে ডিসিশন ফাইনাল, ও আগামীকাল যাবে। শুধু তুরিনের জন্য।
..
সবকিছু ঠিকঠাকমতো সেড়ে রুমে আসলো তারা। ধ্রুব আগের মতোই আছে। কারো আসার শব্দে চোখ মেলে তাকালো ধ্রুব। কিছু বললোনা। তারা একটা ব্যাগ ফ্লোরে রেখে নিজের কিছু কাপর আর জিনিস গুছাতে লাগলো। ধ্রুব আড়চোখে তা পরখ করছে। তারা ব্যাপারটা বুঝতে পেরে বললো..
– কাল বাবার বাসায় যাবো তো, তাই গোছগাছ করছি। আপনি চাইলে আপনারটাও করে দিতে পারি।
– আমারটা মানে?
– মানে আপনারও তো কিছু গুছানোর আছে নাকি। সেগুলোর কথা বলছি।
ধ্রুব রেগে গিয়ে বললো_
– বলেছি না বেশি অধিকার ফলাতে আসবেনা। একদিন না যেতেই দেখছি অধিকার ফলাতে শুরু করেছো!
– যার সাথে সারাজীবন থাকতে হবে তার উপর অধিকার দেখাবো না তো কি পরপুরুষের উপর অধিকার দেখাবো? কথাটা বলেই মুচকি হাসলো তারা। তারার হাসি দেখে রাগে ফেটে যাচ্ছে ধ্রুব। তাও নিজেকে যথেষ্ট কন্ট্রোল করে বললো-
– জেগে জেগে স্বপ্ন দেখা ভালো। তবে জানোতো, সব স্বপ্ন সত্যি হয়না। যেখানে আমি পুরোটাই তুরিনের, সেখানে তোমার আমাকে নিয়ে সারাজীবন কাটানোর চিন্তাটা অনেকটা জোকস হয়ে যাচ্ছেনা?
যাইহোক, আমার জিনিস আমি নিজেই গোছাতে পারবো। তোমার চিন্তা করতে হবেনা।
.
ধ্রুবর এরুপ কথায় তারা অনেকটা কষ্ট পেলেও মানিয়ে নিয়েছে। আবার ধ্রুবর
ওদের বাড়িতে যাওয়ার বিষয়টা এতো সহজে মেনে নিয়েছে কিভাবে সেটাও ওকে ভাবাচ্ছে। সবকিছু গুছানো হলে সব চিন্তা বাদ দিয়ে নিচে একটা চাদর বিছিয়ে শুয়ে পরলো তারা। নিজেকে যথেষ্ট স্বাভাবিক রাখতে চাইলেও পারছে না কোনভাবেই। চোখের কোন বেয়ে অঝোরে পানি বেয়ে পরছে। যেভাবেই হোক, ধ্রুব ওর স্বামী। নিজের স্বামীর মুখে যখন শুনে সে অন্য কাউকে নিয়ে ঘর বাধার স্বপ্ন দেখছে নিজেকে সামলাতে পারেনা তখন সে। দুচোখের পাতা এক করার চেষ্টা করছে তারা। কিন্তু ঘুম যেনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। ধ্রুব ঘুমিয়ে গেছে অনেক্ষন আগেই।
.
কিছুক্ষন আগেই নিজের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে তারা। ধ্রুবও সাথে আছে। একই গাড়িতে। কিন্তু পাশাপাশি নয়। পিছনে তারা আর সামনের ড্রাইভারের পাশের সিটে বসেছে ধ্রুব। যদিও এটাই অনেক তারার কাছে। ওতো ভেবেছিলো শেষ পর্যন্ত ধ্রুব না আবার বেকে বসে। কিন্তু নাহ, এমন কিছুই করেনি ও। খুব স্বাভাবিক ভাবেই ওদের বাসায় যাচ্ছে ধ্রুব। যেটা তারাকে খুব ভাবাচ্ছে।
বাসায় পৌছোতেই তারার বাবা আর তুরিনের খালাতো বোন মানে রবির বউ এসেছে ওদের বরন করে নেওয়ার জন্য। তারা রবির বউকে জরিয়ে ধরে বললো..
– কেমন আছো আপু?
– ভালো রে। তুই তো দেখছি দুদিনেই কেমন শুকিয়ে গেছিস।
– কি যে বলো না।
রবির বউ হাসিমুখে ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বলল
– আপনি কেমন আছেন ভাইয়া?
– ভালো। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে কথাটা বললো ধ্রুব। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রবির বউ তারাকে বললো
– আয় ভিতরে আয়।
.
বাসায় এসেছে অনেক্ষন আগে। এসেই চোখদুটো শুধু তুরিনকে খোজেছে। কিন্তু পায়নি। এখন পর্যন্ত তারার মায়ের দেখা ও পায়নি ধ্রুব। ব্যাপারটা ও বুঝতে পারছে না। যেভাবেই হোক ও তো এ বাড়ির জামাই। নিশ্চয়ই ধ্রুবর সাথে দেখা করার উচিৎ ছিলো উনার। তারা নিচে বসে আছে রবির বউ এর সাথে। আর ধ্রুব উপরে রুমে শুয়ে আছে। অনেক কিছুই ভাবছে সে। এমন সময় দরজাটা খোলার শব্দ পেয়ে দরজার দিকে তাকালো ধ্রুব। একজন মধ্যবয়সী মহলা এলো ধ্রুবর কাছে। ধ্রুব উনাকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
– আপনাকে ঠিক চিনলাম না।
– আমি তুরিনের মা। বেশ শান্ত গলায় বললো কথাটা।
.
তুরিনের নাম শুনেই বুকের ভিতর ছ্যাঁৎ করে উঠলো ধ্রুবর। সবকিছু ভুলে গিয়ে সরাসরি তটস্থ হয়ে বললো
– আমার তুরিন কোথায়?
মহিলাটি নিরবে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বললো
– জানিনা আমার মেয়েটা কোথায় আছে। কতো খুশি ছিলো আমার মেয়েটা নিজের বিয়ে নিয়ে। কিন্তু ওরা.. এতোটুকু বলেই তিনিই ঢুকরে কেদে উঠলেন। তারপর আবারও বললেন
– ওরা আমার মেয়েটার সাথে ছলনা করে এতো বড় সর্বনাশ করে দিল। আবারও আঁচলে মুখ গুজলেন তিনি। ধ্রুব উৎকন্ঠা হয়ে বললো
– কারা? কারা আমার তুরিনকে ছলনা করে আমার কাছ থেকে দুরে সরিয়েছে?
– কারা আবার, ওরা বাপ মেয়ে। কটুক্তি করে বললেন তুরিনের মা
– মানে?
– তুরিনের বাবা আর উনার মেয়ে তারা।
ধ্রুব আশ্চর্য হয়ে বললো
– কিন্তু তারা তো আপনারও মেয়ে তাইনা?
– না ও আমার মেয়ে না। ও আমার সৎ মেয়ে।
– সৎ মেয়ে? অবাক হয়ে বললো ধ্রুব।
– সৎ বলেই তো আমার মেয়েটার এতো বড় সর্বনাশ করলো। আপন মেয়ে হলে কি নিজের বোনের সাথে এইরকম বেইমানি করতে পারতো।
ধ্রুবর চোখ মুখ রাগে লাল হয়ে যাচ্ছে। রাগি কন্ঠেই বললো
– সেদিন কি হয়েছিলো আমার তুরিনের সাথে?
– বিয়ের জন্য যখন ওকে পার্লারে নেওয়া হলো তখন সাথে নিজের মেয়ে মনে করে তারাকেও পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু বউ বেশে তুরিন না, এসেছিলো তারা। সাথে তোমার শশুরও ছিলো। এখন বুঝো ওরা কিরকম ভাবে ঠকিয়েছে আমার মেয়েটাকে। তুরিনের মা আবারও কাঁদছে। ধ্রুব রাগে ফুসছে। তুরিনের মা সেটা বুঝতে পেরে বললো
– আমি এখন যাই বাবা। দেখো, তারার সাথে আবার রাগারাগি করোনা যেনো।
.
To be Continued
To be Continued …

.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here