#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_07
.
তুরিনের মা দরজা থেকে বের হতেই তারার সামনে পরলো। তারা এই মাত্রই নিচ থেকে উপরে উঠলো। মা কে সামনে পেয়ে বললো
– মা তুমি? কোথায় ছিলে এতোক্ষন?
– যেখানেই ছিলাম। তোর কাছে বলবো কেন?
– না এমনিতেই জিজ্ঞাসা করলাম। এখানে কখন এলে? ওর সাথে কথা হয়েছে তোমার?
– হ্যাঁ হয়েছে। খুব হয়েছে।
এতোটুকু বলেই চলে গেলো তুরিনের মা। তারা মায়ের চলে যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে রুমে গেলো।
.
ধ্রুব এখনো চোখেমুখে রাগ নিয়ে বসে আছে। তারা রুমে আসতেই রক্তবর্ণ চক্ষু নিয়ে তারার দিকে তাকালো ও। তারা কিছুটা ঘাবড়ে গিয়ে বললো..
– কি হয়েছে আপনার?
ধ্রুব কিছু না বলেই উঠে গিয়ে দরজাটা লক করলো। তারা কিছুই বুঝতে পারছে না। তারা অন্যমনস্ক হয়ে অন্যদিকে তাকালো হটাৎ ই ধ্রুব তারার চুলের মুঠি ধরে টান দিলো। আকস্মিক টানে ব্যাথায় কুকরে গিয়ে বললো..
– কি করছেন আপনি? ব্যথা লাগছে আমার। ছাড়ুন..
– ছলনা করে আমার তুরিনকে আমার কাছ থেকে সরিয়েছিস তাইনা?
– কি বলছেন আপনি?
– বুঝতে পারছিস না কি বলছি? বুঝাচ্ছি দাড়া, বলেই তারার চোখেমুখে দুইটা ঘুষি দিলো ধ্রুব।
চোখের পানিগুলো ছেড়ে দিয়ে তারা বললো..
– আমার লাগছে। কি করছেন আপনি? প্লিজ ছাড়ুন আমাকে।
– কি অপরাধ করেছিলো আমার তুরিন? কেন তোরা বাপ মেয়ে মিলে এমন করলি ওর সাথে? তোর সৎ বোন তাই?
তারা অবাক হয়ে ধ্রুবর দিকে তাকালো। বললো..
– ও আমার সৎ বোন হতে পারে। কিন্তু ওকে আমি নিজের আপন বোনের মতোই জানি। আর আমরা বাপ মেয়ে কি করেছি?
– জানিস না কি করেছিস? পার্লারে নিয়ে গিয়ে ওকে সরিয়ে ওর জায়গায় নিজে বউ সেজে এসেছিস। তোর বাবা তোকে সাহায্য করেছে।
– কে বলেছে আপনাকে এইসব? কাঁদতে কাঁদতে বললো তারা।
– তুরিনের মা বলেছে। বুঝেছিস?
– ভুল বলেছে। আমি বউ সেজে এসেছি শুধু সবার সম্মান রক্ষার জন্য। কারণ তুরিন পালিয়ে গিয়েছিলো সেখান থেকেই। ছলছল চোখে কঠোর কন্ঠে বললো তারা।
.
– সব মিথ্যা। ও তোর সৎ বোন। তাই ওকে নিয়ে মিথ্যা বলছিস। আমি সব জানি। আমার তুরিনকে যদি খোঁজে না পাই তাহলে তোকে আমি ছাড়বোনা জেনে রাখিস। ধ্রুব রুম থেকে বের হয়ে বেলকোনিতে চলে গেলো। তারা সেখানেই হতাশ হয়ে বসে পরলো। কোনোভাবেই চোখের পানি আটকাতে পারছে না ও।
..
– হ্যাঁ বল মা..
– কাজ হচ্ছে কিছু?
– হবে হবে। তোর কথামত সব কিছুই বলে আসছি ওকে। হয়তো এতোক্ষনে কাজ হয়েও গেছে।
– Good মা, ধ্রুবরা অনেক বড়লোক, আমি চাইনা তারা ওখানে রানীর হালে থাকুক।
– তাইতো আগুন লাগালাম ওদের মধ্যে। কিন্তু তুই কেন চলে গেছিলি ওখান থেকে?
– উফফফ মা, আমি যার জান্য পালিয়েছিলাম সেতো আমাকে ফাঁকি দিয়েছে। তবে আমি ভাবতেও পারিনি আমি চলে গেলে ওই তারাকে ওর সাথে বিয়ে করিয়ে দিবে। যেটা আমি মানতে পারছিনা।
– এখন কি করবি তুই?
– সেটা সময় হলেই দেখতে পাবে।
ফোনটা রেখে পিছনে ঘুরলো তুরিনের মা। আচমকাই চমকে গিয়ে বলল..
– তু তুই? এখানে কি করছিস?
– কার সাথে কথা বলছিলে এতোক্ষন?
– মানে? কার সাথে আবার কথা বলবো? আর যার সাথেই বলেছি তোকে কেন বলবো?
– তুরিনের সাথে কথা বলছিলে তাইনা?
– হ্যাঁ বলেছি, তো, কি হয়েছে? আমার মেয়ের সাথে আমি কথা বলেছি, তোর তাতে কি?
চিৎকার করে বলে উঠলো তুরিনের মা।
– কেন আমার সাথে এমন করলে মা? কি ক্ষতি করেছি আমি তোমাদের? কাঁদতে কাঁদতে বললো তারা।
– ন্যাকামি করবিনা। ভালো লাগেনা তোর এইসব ন্যাকামি।
.
তারা কাঁদছে তো কাদছেই। কাঁদতে কাঁদতে বললো..
– সেই ছোটবেলা থেকেই তোমরা মা মেয়ে আমাকে সহ্য করতে পারতে না। তাই তোমাদের মুক্ত করে আমার মামার বাড়ি চলে গেছি। ওখানেই থেকেছি। কখনো বাবার বাড়ি দাবি নিয়ে আসিনি তোমাদের কাছে। তারপরও কেন? কেন এতো বড় ক্ষতি করছো আমার? মা বাবার ভালোবাসা পাইনি। অন্তত স্বামীর বাড়িতে যেনো সুখে থাকতে পারি সেটুকু সুযোগ আমাকে দাও।
– কক্ষনো না। তুই সুখে থাকবি সেটা আমি বেচেঁ থাকতে কখনোই দিবোনা। আর তাছাড়া ওটা আমার মেয়ের প্রাপ্য। ওখানে তো তোকে থাকতে দিবোই না।
– কিন্তু তোমার মেয়েতো ওকে বিয়ে করবেনা বলে পালিয়ে গেছে।
– তো? তো কি হয়েছে? দরকার হয়েছিলো পালিয়ে গিয়েছিলো। এখন আবার আসবে। আর তাছাড়া ধ্রুব তো আমার মেয়েকেই এখনো ভালবাসে। কথাটা বলে শয়তানি হাসি দিয়ে সেখান থেকে চলে এলো ধ্রুবর মা। তারা হতভম্ব হয়ে গেলো মায়ের কথায়। তুরিন আবার আসবে মানে? ও কি আবারও ধ্রুবর জীবনে ফিরে আসবে? তাহলে আমার কি হবে? আমি কি নিয়ে থাকবো? ভাবতে পারছেনা তারা।
.
ওয়াসরুমে গিয়ে ফ্রেশ হলো তারা। ফ্রেশ হয়ে রুমে এসেই দেখলো ধ্রুব রেডি হয়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে। অবাক হয়ে তারা বললো..
– কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
– নিজের বাসায়। অন্যদিকে তাকিয়ে বললো ধ্রুব।
– মানে কি, আমাদের তো আজ যাওয়ার কথা ছিলোনা। কাল যাবো।
– তো যাওনা, না করেছে কে? কাল যাও নয়তো না যাও, আমার কোনো আফসোস নেই। ধ্রুব চলে গেলো। তারা হতাশ হয়ে রুমে গিয়ে নিজের ব্যাগ ও গুছালো। তারপর নিজেও রওনা করলো। নিচে আসতেই বাবা বললো..
– কোথায় যাচ্ছিস মা? জামাইকেও দেখলাম চলে গেলো। বারবার জিজ্ঞাসা করলাম, কোনো উত্তর দিলোনা।
তারা অবাক হয়ে বললো..
– তোমার কথার উত্তর দেয়নি ও?
– নাতো, কেন কি হয়েছে?
– কিছু হয়নি বাবা। আমি চলে যাচ্ছি।
– হটাৎ করে? কি হয়েছে বল মা আমাকে।
– আমার পোড়া কপাল বাবা। আর কিছুই হয়নি।
তারা চলে গেলো। বাবা খানিকটা ভেবে তুরিনের মায়ের কাছে গেলো। তুরিনের মা সোফায় বসে পা দুলাচ্ছে আর মিষ্টি খাচ্ছে। বাবা রেগে গিয়ে বললো..
– বাসায় এতো অঘটন ঘটছে আর তুমি এখানে বসে মিষ্টি খাচ্ছো?
– কি হয়েছে? মিষ্টি খেতে খেতে বললো তুরিনের মা।
– কি হয়নি বলো, জামাই চলে গেছে। তারাও চলে গেছে।
– তো? তো আমি কি করবো?
– তুমি কি করবে মানে? তারা কি তোমার মেয়ে না? ধ্রুব কি তোমার মেয়ের জামাই না? তোমার কি কোনো দায়িত্ব নেই ওদের প্রতি?
– তারা যে আমার মেয়ে না সেটা তুমি ভালো করেই জানো। আর ধ্রুব আমার মেয়ের জামাই হবে কিছুদিন পর।
– মানে?
– ও তুমি বুঝবে না। নাও মিষ্টি খাও। মিষ্টির বাটিটা তুরিনের বাবার দিকে এগিয়ে বললেন উনি। রাগে ফেটে যাচ্ছে তুরিনের বাবা। নিরাশ কন্ঠে বললো..
– তুমি কখনো ওই অভাগী মেয়েটার মা হতে পারলে না।
– ওই অলুক্ষনের মা হতে আমার বয়েই গেছে। মুখে ভেংচি কেটে সেখান থেকে চলে গেলো তুরিনের মা।
..
রাতের ডিনারের শেষে করিডোরে এসে বসলো তারা। ধ্রুব সেই যে এসে ব্যাগ বাসায় রেখে বেরিয়েছিলো, এখনো আসেনি। তারাকে সবাই জেকে ধরেছে কি হয়েছে বলতে কিন্তু ও কাউকেই কিছু বললো না। এড়িয়ে গেলো। রাতের খাবার ও খায়নি। ধ্রুব এলে খাবে বলে।
রাত ১:০০ টায় ধ্রুব বাসায় এলো।
রুমে এসে দেখে তারা এখনো জেগে বসে আছে। ধ্রুবকে দেখেই তারা বললো..
– এতোক্ষন কোথায় ছিলেন?
– জাহান্নামে।
– ফ্রেশ হয়ে আসুন, খাবার দিচ্ছি।
– তুমিই খাও। তোমার ওই অপয়া হাতের খাবার খাওয়ার চেয়ে না খেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
– আমার সাথে রাগ করে থাকুন সমস্যা নেই। খাবারের উপর রাগ দেখাতে নেই।
– বকবক বন্ধ করবে নাকি আবারও চলে যাবো আমি?
তারা আর কিছু বললো না। ধ্রুব শার্টটা খোলে বেলকোনিতে গিয়ে বসলো। সিগারেট টা বের করে টানতে টানতে ফোনটা বের করলো। তুরিনের নাম্বার টা বের করে সেটাতে বার বার ট্রাই করেও লাভ হলোনা। ফোনটা এখনো বন্ধ পাচ্ছে। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে চোখের পাতাগুলি এক করলো ও। তারা রুমের এক কোনে বসে আছে আর কাঁদছে। কি এমন ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে ও। যেখানেই থাকুক না কেন, দুঃখ তার পিছু ছাড়েনা।
.#জানি_দেখা_হবে ❤
Israt Jahan Tanni ✍
#Part_08
..
তারা রুমের এক কোনে বসে আছে আর কাঁদছে। কি এমন ভাগ্য নিয়ে জন্মেছে ও। যেখানেই থাকুক না কেন, দুঃখ তার পিছু ছাড়েনা।
..
কয়েকটা দিন কেটে গেলো। ধ্রুব অফিস যাচ্ছে, অনেক রাত করে বাসায় আসছে। তারা নিজের মতো করে সংসার সামলাচ্ছে। সম্পর্ক টা এখনো সেখানেই সীমাবদ্ধ রয়েছে। কোনো এদিক ওদিক হয়নি।
রাতে খাবার সার্ভ করছিলো তারা। ধ্রুবর বাবা বললো..
– মা, তুইও খেয়ে নে।
– উনি আসলে খাবো বাবা। আপনারা খান।
– ওর অপেক্ষায় থেকে তো শেষে তোকে না খেয়ে থাকতে হয়। এখন বস আমাদের সাথে।
– আরে বসে পর, এতো করে যখন তোর শশুর বলছে। পাশ থেকে ধ্রুবর মা বললো।
– আচ্ছা মা, শশুর শাশুড়ির জোরাজুরিতে বসতে হলো তারাকেও।
কয়েক লোকমা মুখে দেওয়ার পর মা বললেন_
– তোদের কি এভাবে থাকলে চলবে? সংসার টা তো আগানোর প্রয়োজন তাইনা।
– কেন মা? কি হয়েছে?
– এইযে তোরা আছিস ছন্নছাড়া অবস্থায়। কারো সাথে কারো কোনো ভালো সম্পর্ক নেই। এভাবে তো আর হবেনা।
– আমি কি করবো মা? উনি তো আমাকে মেনেই নিতে পারেনা। নিচের দিকে তাকিয়ে বললো তারা।
– একটা বাচ্চা নিয়ে নে। দেখবি সব ঠিক হয়ে গেছে।
মায়ের কথায় তারা যতোটা লজ্জা পেলো তারচেয়ে বেশি কষ্ট পেলো ও। কারণ, মা তো আর জানেনা, একই ছাদের নিচে থাকলেও সম্পর্ক টা এখনো সেইরকম হয়নি।
..
রাতে এক কাপ কফি নিয়ে ছাদে বসে আছে তারা। রাত আনুমানিক ১২ টা কিংবা তার বেশি। এখনো ধ্রুব বাসায় আসেনি। এতো রাত পর্যন্ত কি করে ও বাইরে কিছুতেই মাথায় আসেনা তারার। কিছুক্ষন থাকার পর হালকা ভয় করতে লাগলো তারার। অনেক রাত হয়ে গেছে, ছাদে থাকা ঠিক না। তাই নিচে রুমে চলে গেলো ও। তখনই কলিংবেল বেজে উঠলো। তারা তারাতাড়ি গিয়ে দরজাটা খোলে দিলো। ব্লেজার টা একটা কাঁধের উপর ফেলে ভিতরে ঢুকলো ধ্রুব। ছন্নছাড়া অবস্থায় রুমে বিছানায় গা হেলিয়ে দিলো ধ্রুব। তারা কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে বললো..
– আপনাকে খুব ক্লান্ত দেখাচ্ছে। কিছু হয়েছে কি?
– নাহ, তেমন কিছুই হয়নি। খুব কাজের চাপ ছিলো আজ। শান্ত গলায় বললো ধ্রুব।
– আচ্ছা, আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার আনছি।
– হুম যাও।
তারা চলে গেলো খাবার আনতে। আর ধ্রুব উঠে চলে গেলো ওয়াসরুমে।
.
খাবার শেষে ধ্রুব শুয়ে আছে নিজের বিছানায়। আর তারা ফ্লোরে চাদর টা বিছিয়ে নিচ্ছে শোয়ার জন্য। ধ্রুব তা অবলোকন করছে। কেন জানি তারার ফ্লোরে শোয়াটা আজ ওর কাছে ভালো লাগছেনা। কিছু না ভেবেই ধ্রুব বললো_
– তুমি বিছানায় এসে ঘুমাতে পারো।
তারা ভ্রু কুঁচকে ধ্রুবর দিকে তাকালো। ধ্রুব তা বুঝতে পেরে ইতস্তত করে বললো..
– নাহ মানে, ঠান্ডা পরছে তো, তাই বলছিলাম আরকি।
– আপনার কোনো সমস্যা হবেনা তো?
– দুরত্ব বজায় রেখে ঘুমালে আমার কোনো সমস্যা নেই।
তারা কিছু না বলেই নিজের বালিশটা নিয়ে বিছানায় উঠ গেলো। ধ্রুব কিছু বলছেনা। তারা মুচকি হেসে ধ্রুবর অপজিট পাশে শুয়ে পরলো। তারা আজ কতোটা খুশি সেটা তার চেহারাতেই ভেসে উঠছে।
.
ফজরের আযান দেওয়ার সাথে সাথেই ঘুম ভেঙ্গে গেলো ধ্রুবর। বেশ অবাক হয়ে তারার দিকে তাকালো ও। বেশ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে তারা ধ্রুবকে। ধ্রুব গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তারার মুখের দিকে। বেশ মায়াবী লাগছে এই মুহুর্তে তারাকে। কেন জানি ওর কপালে একটা চুমু খেতে ইচ্ছা করছে ধ্রুবর। নিজের মুখটা তারার কপালের দিকে এগিয়ে নিয়েই তুরিনের কথা মনে হলো ধ্রুবর। হটাৎ ই ওর মনে হলো ও তুরিনকে ঠকাচ্ছে। আকস্মিকভাবে একটা জোরে ধাক্কা দিলো ধ্রুব তারাকে। আকস্মিক এভাবে ধাক্কা খাওয়ায় হতচকিত হয়ে উঠে বসলো তারা। বললে লাগলো
– কিক কি হয়েছে?
– তোমাকে বলেছিলাম না দুরত্ব বজায় রাখতে। বেশ রাগী গলায় বললো ধ্রুব।
– আমি তো দুরেই শুয়েছিলাম।
– আচ্ছা, তাহলে আমি তোমাকে এতোক্ষন জড়িয়ে ধরে ছিলাম তাইনা??😡
– মাম মানে?
– বুঝোনা কিছু? এর জন্যই আমার পাশে এসে শুয়েছিলে??
– আপনিই তো বলেছিলাম এখানে শুতে।
– ভুল বলেছিলাম। বুঝেছো? ভুল বলেছিলাম আমি। রাগে ফুসতে ফুসতে বেরিয়ে গেলো ধ্রুব। তারার চোখদিয়ে নদীধারা বয়ে যাচ্ছে।
.
না খেয়েই ধ্রুব রেডি হয়ে চলে যাচ্ছে অফিসে। তারা পিছন পিছন বলছে..
– না খেয়ে যাবেন না প্লিজ। খেয়ে যান
– তুমিই খাও। তোমার হাতের খাবার খাওয়ার ইচ্ছা আমার নেই।
– কি হয়েছে ধ্রুব? এইরকম করছিস কেন?
– কিছু হয়নি মা।
– দেখছি তো কিছু একটা হয়েছে। না খেয়ে চলে যাচ্ছিস কেন?
– বাইরে খেয়ে নিবো। বলেই ধ্রুব চলে গেলো। ধ্রুবর মা তারাকে বললো..
– কি হয়েছে ওর?
তারা কিছুই বললো না। কেদে সেখান থেকে দৌড়ে নিজের রুমে চলে আসলো। দরজাটা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো তারা। কি এমন অন্যায় করেছে সে? যার জন্য এইরকম করতে হলো।
সারাদিন গেলো তারা আর খেলো না কিছু। না খেয়েই কাটালে সারাটা দিন। মা অনেকবার বলেছে খাওয়ার জন্য। কিন্তু ও খায়নি।
রাতে সবার খাওয়া দাওয়া শেষ করে ডাইনিং এই বসে থাকলো তারা। কখন ও আসবে সেই অপেক্ষায়। বসে থাকতে থাকতে কখন যে তন্দ্রা লেগে আসলো বুঝতে পারেনি ও। আচমকাই কলিংবেলের আওয়াজে ঘুম ভাংলো তারার। দৌড়ে গিয়ে দরজাটা খোলে দিলো ও। ধ্রুব হনহনিয়ে রুমে চলে আসলো। তারা মেইনডোর টা ভালো করে লক করে রুমে আসলো। ধ্রুব নিজের কাপড় চেঞ্জ করছে। তারা বললো..
.
– আপনি চেইঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি খাবার আনছি।🙃
– লাগবেনা।
– লাগবেনা মানে? সকালে খেয়ে যাননি। এখনো খাবেন না?
– আমি খেয়ে এসেছি।
– কোথায়?
– এতো জবাব তোমাকে কেন দিবো? তুমি কে হও আমার? চিৎকার করে বলে উঠলো ধ্রুব।
তারা বললো.
– এ বাড়িতে আরো অনেকেই আছে। তাই নিজের রুপটা নিজের রুমেই বন্দি রাখুন। সবাই ঘুমাচ্ছে।
ধ্রুব আর কিছু বললো না। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরলো। তারা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে লাইট টা অফ করে ডীম লাইটটা জালিয়ে দিলো। সারাদিন না খেয়ে ছিলো ও আসলে ওর সাথে খাবে বলে। কিন্তু সেগুড়ে বালি। তারা বিছানায় গিয়ে বালিশটা ঠিক করে শুবে এমন সময় ধ্রুব উঠ বালিশটা নিচে ফেলে দিলো। তারা অবাক হয়ে বললো..
– বালিশ ফেলে দিলেন কেন? আমি শোব কিসে?
– এতোদিন যেখানে শুয়েছিলে সেখানেই শোবে।
তারা অস্ফুট স্বরে বললো
– ফ্লোরে?
– হ্যাঁ ফ্লোরে।🙃
– কিন্তু আপনি তো বলেছলেন এখন থেকে এখানেই শুতে।
– ভুল বলেছিলাম শুনোনি তখন? আমার পাশে থেকে নিজের শরীরে লালসা দেখানো হয় তাইনা??
– আপনি আমার স্বামী। আপনাকে আমি কেন আমার শরীরের লালসা দেখবো?
– কে বলেছে আমি তোমার স্বামী? আমি মানিনা এই বিয়ে। বুঝেছো তুমি?
তারা আর কিছু বললো না। ছলছল কন্ঠে বললো
– বুঝেছি।
ফ্লোরে এসে শুয়ে পরলো তারা। ঘুম আসছেনা। কাঁদছে তো কাদছেই। কোনো বাধা মানছে না।
.
দিন যাচ্ছে। ধ্রুবর সাথে তারার সম্পর্কটা এখনো স্বাভাবিক হচ্ছেনা। তারা যতোই চাচ্ছে সম্পর্কটা এগিয়ে নেওয়ার ততোই যেনো থেমে থাকছে। ছুটির দিন বিকেলবেলায় ধ্রুব গেলো একটু ঘুরাফেরা করতে। এদিক ওদিক ঘুরেফিরে যখন পুরোনো আড্ডার জায়গাটায় গেলো সেখানে গিয়েই সামনে পেলো রাব্বি, পিয়াস আর রাফসানকে। ধ্রুব এদের দেখে এড়িয়ে অন্যদিকে চলে যাচ্ছিলো। রাফসান দৌড়ে এসে ওর হাতটা ধরে বললো
– চলে যাচ্ছিস কেন আমাদের দেখে?
– যাদের আমি বন্ধুই ভাবি না, তাদের সাথে কথা বলার কোনো প্রয়োজন আমি মনে করিনা।
– কি বলছিস তুই?
– বুঝতে পারছিস না? তোরা সবাই আমার সাথে চিটিং করেছিস। তোরা জানতি ওরা ছলনা করে আমার তুরিনকে সরিয়ে ওই তারাকে আমার কাধে তুলে দিচ্ছে। কিন্তু তোরা কেউ আমাকে বলিস নি। তোরাও আমার সাথে ছলনা করেছিস।
– মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর। ওই মেয়টা তোকে জাদু করেছে। তাই ওর ছলনা তুই বুঝতে পারছিস না। (পিয়াস)
– সবই বুঝতে পারছি। সবই বুঝতে পারছি।
– কিছুই বুঝিস নি তুই। যদি বুঝতি তাহলে তারা ভাবির মতো এমন একজন কে এভাবে কষ্ট দিতে পারতি না। (রাফসান)
ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে তাকালো ওর দিকে। বললো..
– তোকে কে বলেছে তারাকে আমি কষ্ট দিচ্ছি?
– যেই বলুক, আমরা সব জানি। ওই নষ্টা তুরিনের জন্য ভাবীকে কষ্ট দিচ্ছিস। আল্লাহ সইবে না।
– মুখ সামলে কথা বল।
– চুপ থাক শালা। হীরের টুকরো ফেলে কাচঁ নিয়ে টানাটানি করছিস। আসল নকলের পার্থক্য বুঝছিস না। আবার বলছিস মুখ সামলাতে। ঘৃণা করি তোকে।হুহ.
ধ্রুবর মাথায় আগুন ধরে গেলো। কিন্তু কিছু না বলে সেখান থেকে চলে গেলো হনহনিয়ে।
রাফসান সেখানেই ঠাই দাড়িয়ে রইলো। পিয়াশ আর রাব্বি এসে রাফসানের কাধে হাত রেখে বললো_
– না জানি আজ ভাবীর উপর দিয়ে কি ঝড় বয়ে যায়।
.
To be Continued …..
To be Continued …