জেদ পর্ব -৩৬

#জেদ(A Conditional Love Story)
#পার্ট৩৬
#আফরিন_ইনায়াত_কায়া
.
.
শহরের ব্যস্ততা আর যান্ত্রিকতার মাঝে প্রানের ছোয়া বরবরই আমাকে আর আরদ্ধকে মুগ্ধ করে।এই শহরে যেন সেই মুদ্ধতা আরও বেশি করে কাজ করে।
-হাটবে?
গাড়ি থামিয়ে দৃষ্টি না ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করল আরদ্ধ।আমি হালকা দম ফেলে বললাম
-তোমার ইচ্ছা।
আরদ্ধ আর কোন কথা বলল না। গাড়ি থেকে নেমে আমাকে টেনে নামাল।বাইরে এখন প্রচুর শীত পরছে।নিশ্বাসের সাথে ঠান্ডা হাওয়া গিয়ে শরীরের শিরা উপশিরাও যেন জমিয়ে দিচ্ছে।আমি গুটিশুটি মেরে হাটছি আরদ্ধর পাশে।আমার গায়ে তেমন কোন শীতের কাপড় নেই।শুধু একটা পাতল চাদর জড়ানো।আরদ্ধ আমাকে বাহুডোরে বেধে নিল।তার শরীরের উষ্মতায় জড়িয়ে নিল আমাকে।একটা ব্রীজের ধারে এসে দাড়ালাম আমরা।আমি রেলিং ধরে দাড়াতেই আরদ্ধ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল আমাকে।
-আরদ্ধ আমরা ভুল কিছু করছি না তো?
-You love me?
-আরদ্ধ এটা আমার প্রশ্নের উত্তর না।
-জানি কিন্তু তার আগে আমাকে বলো ভালোবাসো আমাকে?
আমি আরদ্ধর দিকে ফিরে তাকালাম।আমি চাদরটা সরিয়ে বুকের ওড়নাটা নামিয়ে দিলাম।
-আর কি চাই বলো?
আমার কাজ দেখে আরদ্ধ হালকা হাসল ।দুহাতে আমার মুখটা নিয়ে কপালে গাঢ় করে ঠোট ছোয়ালো।দুহাতে কোমড় জড়িয়ে ঠোট ডুবাল গলায় ।
.
.
-কোথায় গিয়েছিলে?
বাড়ির দরজা খুলে ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতেই আরাজের প্রশ্নের সম্মূখীন হতে হলো আমাকে।
আমি আরাজের কথার জবাব না দিয়ে রুমের দিকে পা বাড়াতে লাগলাম।
-ইনা তোমাকে কিছু বলছি আমি।
-ফার্স্ট অফ অল মি.আরাজ আপনাকে হাজার বলেছি আমি ইনায়াত ।আমাকে ইনায়াত বলে ডাকবেন।আর আমি বাইরে গিয়েছিলাম।
-বাইরে আমিও জানি ।বাট বাইরে কোথায় গিয়েছিলে?
-কোথায় না।মন ভালো ছিল না ।তাই হাটতে গিয়েছিলাম ।
-ইনায়াত আমি তোমাকে বাসা থেকে বের হতে নিষেধ করেছিলাম।
আমি আরাজের কথা উপেক্ষা করে রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম।আরাজ পেছন থেকে আমার হাতটা শক্ত করে চেপে ধরল।
-আরাজ প্লিজ ছাড়ো আমাকে।লাগছে।
-কোথায় মুখ মারতে গিয়েছিলে হ্যা?ঘরে স্বামী আছে তার কাছে যত বাহানা।আর বাইরে গিয়ে অকাম করা হচ্ছে তাই না?
দাতে দাত চেপে কথাগুলো বলেই আমাকে জোরে ধাক্কা দিল আরাজ ।টেবিলের কোনা লেগে মাথার কিছুটা জায়গা ফেটে গেল।গলগল করে রক্ত পরতে লাগল কাটা জায়গা থেকে।
-অলক্ষুনে ।কি ভেবেছিস?কিছু জানব না?অই শালা আরদ্ধ যাতে তোর কাছে পৌছাতে না পারে সেজন্যে তোকে আমেরিকায় নিয়ে এসেছি ।আর তুই এখনেও এসে ধান্দা শুরু করেছিস?
আরাজের কথার কোন জবাব খুজে পাচ্ছি না আমি ।মাথায় হাত দিয়ে চুপচাপ বসে আছি আমি ।আরাজ যা ইচ্ছে তাই বলে যাচ্ছে ।আরাজ আমার দিকে এগিয়ে এলে আমি ভয়ে পিছিয়ে গেলাম।আরাজের কথায় ব্যাঘাত ঘটল কলিং বেলের আওয়াজে।আরাজ উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই ভুত দেখার মত চমকে গেল।
আরাজের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার আর তার বাবা মা।আরাজ সেকেন্ড কয়েক মুর্তিমত দাঁড়িয়ে থেকে সহজ সরল একটা ছেলেতে পালটে গেল।হাসিমুখে সে সবাইকে ভিতরে নিয়ে আসল।আমি তখনো গুটীশুটি মেরে এক কোণে পরে আছি ।দুই জনের বাবা মায়েরই মনযোগ আরাজের দিকে।আরাজের মা তাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিয়েছেন।তা দেখে আমার মা আচলে মুখ লুকাচ্ছেন ।নিজের মেয়ের অস্তিত্বের কথা যেন খেয়াল নেই তার ।হঠাত করে আমার দিকে তাকাতেই অবাক হলেন তিনি।উৎকন্ঠা নিয়ে বলে উঠলেন
-ইনা তুই ওখানে কেন?কি হয়েছে তোর?
আমার কিছু বলার আগেই আরাজ তেড়ে এসে আমাকে জাপটে ধরে বলল
-আর বলবেন না মা আমি তখন থেকে বলছি দেখে হাটো অই কোনে পানি পরে আছে।কে শুনে কার কথা ।বাচ্চা মেয়ের মত ধপাস করে স্লিপ খায়ে পড়ল।ইশহ রে কত রক্ত গেল।থামো আমি ফার্স্টেইড বক্স নিয়ে আসছি এখুনি।
আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই আরাজ ফার্স্ট এইড আনে আমার ড্রেসিং করে দিল ।চোখ দিয়ে ইশারায় বুঝিয়ে দিল যাতে কিছু না বলি।
.
.

দুই ফ্যামিলি আমেরিকা আসায় আরাজ যে খুব একটাখুশি হয় নি তা বেশ করে বুঝতে পারছি আমি ।কিন্তু একটা রিজনে আবার সে অনেক হ্যাপি ।আরাজের মা দিন রাত নাতির মুখ দেখবে বলে মুখে ফেনা তুলছে ।আর ঠিক সেই সুযোগ টাকেই আরাজ কাজে লাগিয়ে এক সেকেন্ড ছাড়ছে না আমাকে অপমান করতে ।সপ্তাহ খানেক সময় পার হয়ে গেছে তাদের এখানে আসার ।আরাজের মা রীতিমত বাড়াবাড়ি শুরু করেছেন নাতি নাতি করে।আজ তিনি শুধু আমাকেই কথা শুনিয়ে ক্ষান্ত হচ্ছেন না।তার রাগের ভাগিদার হচ্ছেন আমার মা।আমি সেদিকে মন না দিয়ে নিজের মত করে রান্না করে যাচ্ছি।হঠাত আমার ফোণটা কেপে উঠল ।আরদ্ধর ম্যাসেজ
-আমি তোমার বাসার নিচে ।
-আমার বাসায় অনেক মানুষ ।আমি এখন নামতে পারবো না।
-তুমি নিচে আসবা নাকি আমি উপরে যাব?
আরদ্ধর ম্যাসেজ পরে চিন্তায় পরে গেলাম আমি ।আমি জানি আমি নিচে না নামলে আরদ্ধ উপরে চলে আসবে।আমি কাজ থেকে হাত গুটিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালাম ।পেছন থেকে আরাজের মা চেচিয়ে উঠলেন
-কোথায় যাচ্ছ ইনায়াত?
-বাসায় গ্রোসারী শেষ ।সুপার শপে যাচ্ছি ।
কথাটা বলে আমি তার জবাবের অপেক্ষা না করেই বের হয়ে গেলাম।
একটা কালো মার্সিডিসের সামনে পা বেকিয়ে হেলাম দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আরদ্ধ ।আমাকে দেখা মাত্রই সে গাড়িতে উঠতে ইশারা করল।
-আরদ্ধ তুমি কি পাগল হয়ে গেছ?এইভাবে হঠাত……
-শশশ……
আমাকে কোন কথা বলার সুযোগ দিল না সে।গাড়ি চলতে শুরু করল ।
একটা বড় লেকের সামনে এসে।
-আরদ্ধ তুমি এভাবে হুটহাট…
আমি কথা শেষ করার আগেই আরদ্ধ আমার ঠোটে ঠোট ডুবাল।
চোখের পলকে সে আমার ঠোট ছেড়ে গাড়ি থেকে নেমে আমাকে টেনে বের করল।লেকের পাশের একটা সাইড বেঞ্চে গিয়ে বসল সে।আমি পাশে বসতে যাব তখনি আমার হাত ধরে কোলে টেনে নিল সে।ঝাকুনি খেয়ে চুলগুলো সব সামনে এসে ভিড় জমালো।আরদ্ধ আলতো হাতে চুলগুলো সরিয়ে দিল।পকেট থেকে একটা ফার্স্ট এইড কিট বের করে পরম যত্নে আমার কপালের ক্ষত মুছতে লাগল।আরদ্ধ খুব আলগা হাতে ড্রেসিং কর‍তে লাগল।চোখ দুটো ছলছল করছে ও। যেন এখনি কেদে দিবে।
আমি আরদ্ধর মাথাটা দুহাতে নিয়ে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিলাম।সাথে সাথে বাচ্চাদের মত জাপটে ধরল সে।
বাসায় এসে ঢুকতেই আরাজের মা পথ আগলে ধরলেন ।
-কপালে কি হয়েছে তোমার?যাওয়ার সময় তো কোন ব্যান্ডেজ ছিল না ।তবে আসার সময় কোথায় কপাল ফাটিয়ে এসেছ?
আরাজের মায়ের কথা শুনে রাগে গা জ্বলতে শুরু করেছে আমার ।আমি কোন রকমে জবাব দিলাম
-গত ২৪ ঘন্টা যাবত আমি কপালে একটা কাটা দাগ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি সেট আপনার চোখে না পরে এই সামান্য ব্যান্ডেজটা হঠাত কেন আপনার নজর কারল সেই উওর জানা নেই আমার।আর যদি কোন দেশের বিধানে লিখা থাকে ব্যান্ডেজ ব্যবহার করা দোশের তাহলে যা শাস্তি লিখা থাকবে আমি মাথা পেতে নিব ।
আমার কথায় আরাজের মা হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।আরাজের বাবা আর আমার বাবাও তেড়ে বের হয়ে গেলেন তাদের রুম থেকে ।পেছন থেকে মা চেচিয়ে উঠলেন
-ইনা ভদ্রতা শিখাইনি আমি তোমাকে?বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না?
-কেউ অসৌজন্যমূলক কিছু বললে সেটার উত্তর ভদ্রতার সহিত কিভাবে দিতে হয় সেটা আমার জানা নেই ।
কথাটা বলে আমি রান্নাঘরের দিকে বাড়ালাম ।পিছন ফিরলে হয়তো দেখতে পেতাম সবাই এক রাশ বিরক্ত আর ঘৃনা নিয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।
.
.
সব কাজ শেষ করে গোছাতে প্রায় সন্ধ্যা নেমে এলো।আরাজ আজ তাড়াতাড়ি বাসায় এসেছে।বাসার সবাইকে নিয়ে মুভি দেখতে যাওয়ার কথা ।কিন্তু আমার অবস্থা নাজেহাল ।জ্বরে আমার জান যায় অবস্থা।আরাজ আমাকে কোন কিছু না বলেই বের হয়ে গেল ।মা একবার রুমে এসে জিজ্ঞেস করে গেলেন
-কি রে তুই রেডী হস নি কেন?যাবি না?
-না আমার শরীরটা ভালো লাগছে না ।তোমরা যাও।
-কেন কি হয়েছে?
-তেমন কিছু না মা ।হালকা জ্বর।
-আমি থেকে যাবো?
-না লাগবেনা তোমরাযাও ।
অবশেষে আরাজের কথায় সবাই রাজী হয়ে চলে গেল ।সবাই বেশ রাত করেই ফিরবে ।আমি সেই সুযোগে কাথা মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে গেলাম ।চোখ গুলো প্রচন্ড জ্বলছে ।চোখ বন্ধ করতেই ঘুম পরী নেমে এল ।
.
.
নিউ ইয়োর্কে এই সময় প্রচুর ঠান্ডা পরে।নাকে মুখে কাথা মুড়ি দিয়েও ঠান্ডা থেকে রেহাই পাওয়া যায় না।আমি নিশ্চয়ই ঘরের জানালা খুলে রেখে এসেছি।এখন উঠে গিয়ে লাগাতে ইচ্ছা করেছে না।আই পাশ ফিরতেই একটা উষ্ম ওম আমাকে জড়িয়ে নিল।আমি তখনো গভীর ঘুমে মগ্ন ।হুশ ফিরল ঠোটে কারও নরম ঠোটের স্পর্শ পেয়ে।কেউ একজন মনের সাধ মিটীয়ে অয়েশ করে আমার ঠোট চুষছে।বোধ পাওয়া মাত্রই ছিটকে সরে এলাম আমি ।পাশের টেবিল ল্যাম্পটা জ্বালাতেই যেন আমার বিষ্ময়ের সীমা রইল না ।আরদ্ধ বিছানায় শুয়ে ঠোট মুছছে।আমাকে দেখে একটা বাকা হাসি দিল সে।
-আরদ্ধ তুমি এখানে?আমি তো ঘরের দরজা লাগিয়েছিলাম …।তাহলে তুমি এখানে কিভাবে?প্লিজ যাও কেউ দেখলে…।
আমি আর কিছু বলার আগেই আরদ্ধ আবার আমার ঠোটগুলা নিজের দখলে নিয়ে নিল ।দুহাতে সে আমাকে জাপটে ধরে আছে ।আমি এখন পুরোপুরি তার দখলে ।আরদ্ধ ঠোট ছেড়ে আমার গলায় ঠোট ডুবাল ।আমার গলায় সে ঠোট বুলাচ্ছে আর জামা ভেদ করে তার হাত খেলা করছে আমার পিঠে।আরদ্ধর গরম নিশ্বাস আমাকে পাগল করে তুলছে এই মুহুর্তে ।মাতাল করা কন্ঠে আরদ্ধ বলে উঠল
– জানো আমার সবচেয়ে বড় নেশা কি?তুমি।আমাকে প্লিজ তোমার নেশায় ডুবতে দিবা ইনা?
আরদ্ধকে না বলার শক্তি আমার নেই ।ওর প্রতিটা স্পর্শ আমার হৃদস্পন্দন দ্বিগুন হারে বাড়িয়ে দিচ্ছে ।আরদ্ধ মাতালের মত ডুবে যাচ্ছে আমাতে ।আমি ভালোবাসায় তাকে আগলে নিলাম বুকে।
চলবে
{

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here