#জোর_করে_ভালোবাসবো_তোকে ❤
……. (সিজন – ২)
#শেষ পর্ব
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
🍁
দেখতে দেখতেই একটা মাস কেটে যায়।
রিমির গায়ে হলুদ আজ! আঁচল বেচারি তো অনেক এক্সসাইটেড! কিভাবে সাজলে ভালো লাগবে সেই প্রশ্নই করে যাচ্ছে রেহান কে।
বার বার কী রংয়ের শাড়ি পড়বো, কী রকম জুয়েলারি পড়বো, কেমন চুড়ি পড়বো জিগ্যেস করতেই আছে। আর বেচারা রেহান ও জবাব দিতে দিতে হাঁপিয়ে উঠে। রেগে গেলেও প্রকাশ করতেও পারছে না।
অবশেষে হলুদ রংয়ের একটা জামদানি শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। রেডি হয়ে বের হওয়ার সময় হটাৎ মাথাটা কেমন ঘুরে যায়। পড়তে গিয়েও ওয়াশরুমের দরজায় ধরে নিজের ব্যালেন্স টা রাখে আঁচল।
আঁচল – ওফফফ কী হলো আবার। এরকম কেনো লাগছে। সকাল থেকে তো কিছু খাই ও নি তাই হয়তো উইক ফিল করছি।
আঁচল রেডি হয়ে হালকা সাজে বের হয়। কারন রেহানের কড়া আদেশ হালকা করে সাজবে। বেশি মেকাপ করলে পানিতে চুবাবে! ওফফফ অসহ্য লোক একটা।
আচঁল রুম থেকে বের হয় নিচে যাওয়ার জন্য এর মধ্যেই কেউ তার পথ আটকায়।
আঁচল চোখ তুলে দেখে রেহান দাড়িয়ে আছে।
রেহান – বাবাহ আমার বউ টাকে কি সুইট লাগছে তো। ইচ্ছে করছে খেয়ে ফেলি। (চোখ মেরে)
আঁচল – বাজে কথা কম বলুন! আপনার জন্যই তো ভালো করে সাজতেও পারলাম না হুহহ। আরেকটু সাজলে কতো কিউট লাগতো! কতো ছেলে যে দেখেই ক্রাশ খেয়ে….
বলতে বলতেই রেহানের দিকে তাকায় আঁচল। রেহানের চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে আগুন বের হচ্ছে।
রেহান – ওহ! তার মানে অন্য কাউকে দেখানোর জন্যই তুমি সাজতে চেয়েছিলে তাই তো! (রেগে)
আঁচল – আ আ আমি তো… এ এমনি… বাকি টা না বলেই শাড়ির কুঁচি গুলো ধরে এক দৌড়ে নিচে!
রেহান – আঁচলললল…. এই ভাবে দৌড়ে গেলে পড়ে ব্যাথা পাবা স্টুপিড গার্ল!
সবাই খুব আনন্দের সাথে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ করে। যদিও আঁচল সারাক্ষণ ভয়ে ভয়ে ছিলো এই বুঝি রেহান ধরে ফেললো।
পরের দিন…
রিমিকে পার্লারের মেয়েরা সাজিয়ে দিয়ে যায়। রিমি নিজের ঘরে চুপচাপ বসে আছে। সাথে তার কয়েকজন কাজিন ও আছে।
কিছুক্ষণ পরই আঁচল আসে।
আঁচল রিমির মুখ টা উচু করে ধরে। বেচারির চোখ দু’টো ফুলে গেছে। মনে হই সারা রাতে কেঁদেছে। এখনো চোখের কোণে পানি স্পষ্ট!
আঁচল – আহারে গেলো রে গেলো! (ঢং করে)
আঁচলের কথায় রিমি সহ বাকি সবাই অবাক হয়ে আঁচলের দিকে তাকায় তাদের সবারই একি প্রশ্ন….. কী গেলো??
আঁচল – আমার শশুর এর এতো গুলা টাকা খরচ করে তোমাকে সাজালাম আর সেই তুমি কিনা কেঁদে কেঁদে সারা সাজ টাই পন্ড করে দিলে….!
আঁচলের কথায় রিমি হেসে দেয়।
রিমি – তুমি পারো ও বটে ভাবি! সিরিয়াস মূহুর্তে কিভাবে হাসাতে হই তোমার কাছ থেকে ট্রেনিং নেয়া লাগবে।
আঁচল – হ্যা হ্যা তা নেয়ার অনেক টাইম পাবা। এখন হাসো তো। তোমার সাথে একটা ছবিও তুলা হয়নি।
আঁচল রিমির এক কাজিন কে ফোন টা দেয়। সে আঁচল আর রিমির অনেক গুলো ছবি তুলে দেয়।
কোনো রকম সমস্যা ছাড়াই রিমি আর নেহালের বিয়েটা সম্পূর্ণ হলেও বিদায়ের সময় মহা সমস্যার সৃষ্টি করে এই মেয়টা। কখন থেকেই এক কথা বলছে আর তার বাবা মাকে ধরে কেঁদেই যাচ্ছে। আমি যাবে না তোমাদের ছেড়ে!
বেচারি আঁচলের চোখে ও পানি চলে আসে। রিমি রেহানের কাছে এসে রেহান কে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দেয়।
আঁচল রিমির কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে…
আঁচল – রিমি তোমাকে কিন্তু পেত্নীর মতো লাগছে গো। এভাবে কেউ মেকাপ নষ্ট করে বলো তো। বোকা মেয়ে।
রিমি আঁচলকেও জড়িয়ে ধরে। অবশেষে বেচারিকে এক প্রকার জোর করেই গাড়িতে নিয়ে বসায়।
রিমি চলে যাওয়ার পর রেহানের মুখ টা মলিন হয়ে যায়। যতোই হোক ছোট বোন তো!
আঁচল অনেক ক্লান্ত থাকায় রুমে এসেই বিছানায় শুয়ে পড়ে। মাথাটা কেমন ঘুরছে।
রেহান রুমে এসে আঁচলকে এভাবে শুয়ে থাকতে দেখে আঁচলের পাশে গিয়ে বসে…
রেহান – আঁচল…. ফ্রেশ হবে না?
আঁচল – হ্যা।
রেহান – তাহলে শুয়ে আছো যে? শরীর খারাপ লাগছে?
আঁচল – না।
রেহানের সাথে কথা বলার মধ্যেই আঁচল বিছানা থেকে লাফ মেরে উঠে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।
রেহান অবাক হয়ে যায় আঁচলের এমন কান্ডে।
রেহান কিছু জিগ্যেস করতে যাবে তার আগেই আঁচল বেসিনের সামনে এসে বমি করে দেয়।
রেহান – আঁচল আর ইউ ওকে? কি হয়েছে তোমার বলছো না কেনো?
আঁচল – কিছু হয়নি তো। একটু খারাপ লাগছিলো আরকি।
রেহান – আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসো আমি কফি নিয়ে আসি। ভালো লাগবে দেখো।
আঁচল ফ্রেশ হয়ে বিছানায় বসে। রেহান কফি বানাতে গেলে তার মার সাথে দেখা হয়।
রেহানের মা – কিরে… তুই এখানে? কিছু লাগবে?
রেহান – না মা আসলে আঁচল হটাৎ করে বমি করছে। তাই ওকে বলে এসেছি ফ্রে হতে কফি বানিয়ে নিয়ে যাই। তাহলে হয়তো একটু ভালো লাগবে।
রেহানের মা – আচ্ছা তুই নিয়ে আয় আমি গিয়ে দেখি কি হলো। সারা দিন তো ভালোই ছিলো মেয়েটা।
রেহানের মা দেখে আঁচল বিছানায় শুয়ে আছে।
রেহানের মা – আঁচল কি হয়েছে? বেশি খারাপ লাগছে? (মাথায় হাত বুলিয়ে)
আঁচল – না মা। ঠিক আছি।
রেহানের মা – বমি করলে যে হটাৎ?
আঁচল – এমনিই মা। আসলে কাল থেকেই কেমন কেমন লাগছিলো।
রেহানের মা – ও মা সে কি! কাল থেকে তোমার এই অবস্থা আর তুমি আজ বলছো?
আঁচল – আসলে মা আপনারা তো টেনশন করবেন তাই….
রেহানের মা – তাই তুমি কিছু না বলে চুপ আছো না? কালই রেহান কে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে বুঝছো?
আঁচল – না মা আমি তো ঠিকই আছি। এমনিই মাথাটা ধরেছে হয়তো।
রেহানের মা – কেনো কথা না আঁচল। যা বললাম তাই করো।
আঁচল – আচ্ছা মা।
রেহানের মা চলে গেলে রেহান হাতে করে কফি নিয়ে রুমে আসে।
রেহান – কি বললো মা?
আঁচল – কাল ডাক্তারের কাছে যেতে বলছে। আপনি মাকে বলুন না বুঝিয়ে শুধু শুধু কোনো মানে হই এই সবের?
রেহান – জ্বী না যেতে তো হবেই! তাছাড়া আমিও কত কিছু ভাবছি! (চোখ মেরে)
আঁচল – কী ভাবছেন? (ভ্রু কুঁচকে)
রেহান – কিছুনা। কাল ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখি আগে কী বলে… এখন কফি টা নাও।
আঁচল কফি খেয়ে কিছুক্ষণ রেহানের সাথে গল্প করে পরে শুয়ে পড়ে। রেহান আঁচলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আঁচল ঘুমিয়ে পড়লে রেহান ও ঘুমিয়ে যায়।
পরের দিন….
সেই কখন থেকে আঁচল আর রেহান বসে আছে চেম্বারে এখনো রিপোর্ট আসার নামে খবর নেই। আঁচল প্রচন্ড রকমের বিরক্তি ফিল করছে।
কিছুক্ষণ পরই একজন নার্স এসে রেহান আর আঁচলকে ডেকে নিয়ে যায়।
রেহান ভেতরে ভেতরে অনেকটা ভয়ে আছে। কিন্তু ডাক্তারের কথা শুনে তো খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরার অবস্থা!
রেহান বাবা হবে! ভাবতেই মনটা ভরে যাচ্ছে। আঁচল ও বিশ্বাস করতে পারছেনা।
রেহান আঁচলকে নিয়ে বাসায় আসে। রেহানের মা বাবাকে খবর টা দিতেই তারাও অনেক খুশি হয়। বাড়িতে নতুন সদস্য আসবে বলে কথা!
🍁
🍁
🍁
— মাম্মাম…… তুমি তই? ( মাম্মাম তুমি কই)
রেহান তার রাজকন্যার ডাক শুনতেই দ্রুত রুমে আসে।
(রেহানের রাজকন্যা রুহী ❤ রেহান আর আঁচলের পুঁচকি মেয়েটা। সবে ৪ বছর হলো! আটকে আসা কথা গুলো শুনলে যেনো রেহানের ভেতর টা শান্তিতে ভরে যায়)
রেহান – কী হয়েছে আমার আম্মুনি টার? (রুহীকে কোলে নিয়ে)
রুহী – তুমি তো মাম্মাম না। তুমি তো বাবাই। মাম্মাম তই?
রেহান – মাম্মাম গোসল করতে গেছে সোনা এক্ষুনি চলে আসবে। (রুহীর গালে চুমু দিয়ে)
এর মধ্যেই আঁচল হাজির!
আঁচল এসে রুহীর পাশে দাড়ায়।
আঁচল – কী হয়েছে আম্মু?
রুহী – তোলে নাও (কোলে নাও)
আঁচল রুহীকে কোলে নিয়ে রুহীর কপালে চুমু দেয়।
রুহী – মাম্মাম তুমি বাবাই তে তোলে নাও না তেনো? (মাম্মাম তুমি বাবাই কে কোলে নাও না কেনো?)
রুহীর কথা শুনে আঁচল চোখ বড় বড় করে তাকায় আর রেহান তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা!
আঁচল – আম্মু তুমি তো ছোট তাই তোমাকে কোলে নিই। বাবাই তো এখন বড় হয়ে গেছে না!
রুহী কিছু না বুঝেই মাথা নাড়িয়ে তার মায়ের কথায় সম্মতি দিয়ে যাচ্ছে!
এর মধ্যেই রেহান বলে উঠে….
রেহান – বউ…..কোলে নিবা..
রেহানের কথা শুনে আঁচল তেলে ভাজা বেগুন হয়ে যায় আর রেহান পেটে হাত চেপে হেসেই যাচ্ছে।
সমাপ্ত
ভালো থাকবেন সবাই😘😘