#জোড়া_শালিকের_সংসার
#মুন্নী_আরা_সাফিয়া
#পর্ব_২৩
৩৩.
খেয়া দু চোখে ক্রোধ নিয়ে জাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে।তার চোখ মুখ কেমন শক্ত হয়ে গেছে।হাত মুঠ করা।থরথর করে অনবরত কাঁপছে সে!রক্তলাল চোখে চেয়ে আছে জাহিদের দিকে।যেন যখন তখন হিংস্র জন্তুর মতো লাফিয়ে পড়বে জাহিদের উপর।
জাহিদ চিন্তিত মুখে তার দিকে তাকাল।খেয়ার হঠাৎ আগমন তাকে অবাক করে দিয়েছে।খেয়ার আর তার বিচ্ছেদের সময় সীমা একবছর পেরিয়েছে বহু আগেই।এতদিন পর খেয়া তার কাছে?
তবে খেয়াকে তার সুস্থ মনে হলো না।খেয়া কি নির্ঝরের সাথে ঝগড়া করে এখানে এসেছে?একেবারে তার অফিস পর্যন্ত?তার কেবিনেই?
জাহিদ তার কেবিনে চেয়ারে বসে ছিল।উঠে খেয়ার সামনে এসে ভয়ার্ত গলায় বললো,
__’খেয়া,কি হয়েছে তোমার?তোমায় এমন দেখাচ্ছে কেন?ঠিক আছো তুমি?’
খেয়া সজোরে কষে এক চড় বসিয়ে দিল জাহিদের গালে।জাহিদ থাপ্পড়ের প্রতিক্রিয়া হিসেবে একটু পিছিয়ে গেল।গালে হাত দিয়েই অবাক হয়ে তাকাল খেয়ার দিকে।
কন্ঠে একরাশ অবাকত্ব নিয়েই বলল,
__’আমি কি করেছি?’
__’তুমি কি করোনি?’
বলে খেয়া কান্নাতে ভেঙে পড়লো।কান্নাসজল কন্ঠে বলে,
__’তুমি আমার মাতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলে।আমি মা হতে পারবো না বলে তুমি আমায় ডিভোর্স দিলে,আমাকে বাঁজা,বন্ধ্যা আরো কতকিছু বললে।কেন বললে এসব?কেন করলে এসব?তুমি তো জানতে আমি মা হতে পারবো।আমি নির্ঝরের সন্তানের মা হতে চলেছি।’
জাহিদের বুকের ভেতর কেমন মোচড় দিয়ে উঠলো।কোথায় যেন জ্বলে পুড়ে গেল।কি যেন জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে ফেলল।
সে কয়েক পা পিছিয়ে পুনরায় নিজের চেয়ারে বসে পড়লো।খেয়া মা হতে চলেছে?কথাটা দুবার ভাবতেই তার প্রচুর ভালো লাগতে শুরু করলো।সে তো এটাই চেয়েছিল।
খেয়া জাহিদের টেবিলে লাথি দিয়ে বলল,
__’কথা বলছো না কেন?কেন এমন করলে?নিজের অক্ষমতা ঢাকতে আমার উপর সব দোষ চাপিয়ে দিলে?কেন করলে?’
খেয়ার কাঁদতে কাঁদতে চেয়ারে বসে পড়লো। তার কান্নারত প্রতিটি কথা জাহিদের বুকে গিয়ে বিঁধে।যেদিন সে প্রথম জানলো বাবা হওয়ার ক্ষমতা তার নেই,সেদিন তার পৃথিবী থমকে গিয়েছিল।খেয়ার সাথে ডিভোর্সের বহু আগেই সে জানতে পারে।তখন সে কেমন পাগল পাগল হয়ে যায়।কি করবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে না!
তার জন্য একটা মেয়ে মাতৃত্বের স্বাদ থেকে বঞ্চিত হবে?জীবনে মা ডাক শুনবে না?এটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি!
সে চাইলে খেয়াকে সারাজীবন নিজের কাছে রেখে দিতে পারতো।কিন্তু দিনশেষে তাদের সংসার শুধু সংসারই থাকতো।কোনো সুখ, ভালোবাসা থাকতো না।জীবনের একটা পর্যায়ে গিয়ে একে অপরের প্রতি বিরক্ত এসে যেত।অহেতুক মন বিষন্ন, মন খারাপ, কপাল কুঁচকানো খেয়াকে তখন দেখা যেত।সে এসব চায় না।
সেজন্য সে কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নেয়।খেয়ার থেকে নিজেকে আলাদা রাখার সিদ্ধান্ত।
সে এটা জানতো খেয়া তাকে সহজে ছাড়বে না।তাই সে ডিভোর্সের বহু আগে থেকেই খেয়ার সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করে।অফিস থেকে ফিরেই এটা ওটা নিয়ে বকাঝকা করতো।তরকারিতে লবণ ঠিকঠাক হওয়ার পরও ছুঁড়ে সব ফেলে দিতো।এসব নিয়ে খেয়া কত চোখের জল ফেলতো!
খেয়া কি কোনোদিন জানবে সে সময়টা তার থেকে লুকিয়ে সে ও কাঁদতো?কত রাত নির্ঘুম কাটিয়ে তার দিকে চেয়ে থাকতো?জানবে না!জাহিদ কোনোদিন জানতে দিবে না।
সত্যি বলতে কিছু মানুষ পৃথিবীতেই আসে কষ্ট নিয়ে।এদের কপালে সুখ সহ্য হয় না।এরা জন্মদুঃখী।জাহিদও সেই দলের।যা সে বহু বছর আগেই বুঝে গিয়েছিল।
ছোটবেলা থেকে আঁখি নামের একটা মেয়েকে ভীষণ ভালোবাসতো।মেয়েটা তার গ্রামের ছিল।তার প্রথম প্রেম!কিন্তু সে কলেজে থাকতেই আঁখির বিয়ে হয়ে যায়।বিয়ের দিন মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে তার চোখের সামনে কবুল বলে দিল।জাহিদের সে কি কষ্ট!
দেড় বছরের মাথায় আঁখি মা হয়।তার মা হওয়ার সংবাদটা প্রথম সে জাহিদকে দেয়।জাহিদ আঁখির সাথে সেদিন কথা বলে প্রথম বুঝতে পারে একটা মেয়ে মা হলে কতটা খুশি হয়!আঁখি তাকে সেদিন খুশিতে কাঁদতে কাঁদতে বলে,’জানো জাহিদ,মেয়েরা মা হলে বিচ্ছেদের কষ্টও ভুলে যায়।এই দেখো,আমি তোমাকে না পেয়ে যতটা কষ্ট পেয়েছিলাম,তার চেয়ে হাজার গুণ বেশি খুশি হয়েছি মা হয়ে!হয়তো আরো খুশি হতাম যদি আমার গর্ভের এই সন্তানের বাবা তুমি হতে!’
সেদিন সে বুঝতে পারে দশ বছরের ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পেয়েও মেয়েরা ততটা খুশি হয় না, যতটা খুশি তারা প্রথম মা হলে হয়!
এতকিছু জানার পরেও সে কিভাবে একটা মেয়েকে মা হওয়ার থেকে দূরে রাখবে?খেয়া যখন গভীর রাতে তাকে বলতো, ‘সে মা হতে চায়!ছোট্ট একটা বাবু হবে তার।নরম নরম হাত পা!ছোট্ট ছোট্ট আঙুল দিয়ে সব আকড়ে ধরবে!আধো মুখে প্রথম মা ডাক শুনবে তার থেকে!’
তখন জাহিদের বুকের ভেতর পুড়ে যেত।সে কি করে খেয়াকে বলবে, খেয়া তোমার স্বামীর সেই ক্ষমতা নেই।সে বাবা হতে অক্ষম!বলতে পারেনি!সেজন্যই সে খেয়াকে নিজের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
জাহিদের চোখ ভিজে উঠে।জল লুকাবার জন্য সে বড় বড় করে হাঁ করে শ্বাস নেয়।খেয়ার দিকে তাকায়।খেয়া কান্না থামিয়ে এখন চুপচাপ বসে আছে তার সামনে।একটুপর পর হিঁচকি তুলছে শুধু।
__’নির্ঝর জানে যে তুমি মা হতে চলেছো?’
খেয়া জাহিদের দিকে তাকায় না।কয়েক মিনিট নিরবতার পর বলে,
__’আমার জ্ঞান ফেরার নির্ঝরকে দেখিনি।মা হতে চলেছি শুনেই সোজা তোমার এখানে চলে এসেছি।’
জাহিদ আনমনে হেসে উঠে।তার কপালটা এমন কেন?এ জীবনে দুটো রমণীকে সে ভালোবাসলো।দুটোই অন্যের হয়ে গেল।প্রথম মা হওয়ার অনুভূতিটা তাকে প্রথম প্রকাশ করলো।এতে আনন্দ কম কিসে?অন্যের আনন্দ বসে বসে অবলোকন করলেও এক ধরনের সুখ পাওয়া যায়।সে না হয় সারাজীবন সেই সুখ কুড়াবে।
তবে মাঝে মাঝে মনে হয় সেও তো পারতো আর দশজন পুরুষের মতো বাবা হতে!ছোট্ট একটা প্রাণের জন্মদাতা হতে!যার শরীরে তার রক্ত বইবে।
সৃষ্টিকর্তা তাকে সব দিয়েও কি যেন দেয়নি।
জাহিদ খেয়ার দিকে চেয়ে ফের প্রশ্ন করে,
__’নির্ঝরকে ভালোবাস?’
খেয়া এবার চোখ তুলে তাকায়।জাহিদকে একটা থাপ্পড় মেরে তার রাগ অনেকখানি কমে গেছে।একদম নেই বললেই চলে!সত্যি!প্রতিটা মন্দ ঘটনার পেছনে একটা৷ ভালো ঘটনা ঘটে।জাহিদের থেকে আলাদা না হলে হয়তো সে কোনোদিন জানতো না নির্ঝর তাকে এখনো এতটা ভালোবাসে।তাকে ছাড়া অন্য কোনো মেয়েকে নিজের জীবনে জড়ায়নি।স্থান দেয়নি অন্য কাউকে!
সে জাহিদের চোখে চোখ রেখে বলে,
__’আমি নির্ঝরকে ভালোবেসেই নিজের একজন করে নিয়েছি।এখন আমার কি মনে হয় জানো?আমার মনে হয়, তোমার সাথে আমি প্রেম করেছি।প্রেমের সংসার করেছি।কিন্তু ভালোবাসার সংসার করিনি।প্রেম করতে হয়।কিন্তু ভালোবাসা হয়ে যায়।দিনের পর দিন,মাসের পর মাস কাউকে নিয়ে অযাচিত ভাবনারাই একসময় ভালোবাসায় পরিণত হয়ে যায়।নির্ঝর এখন অফিস থেকে ফিরতে দেরি করলে কেমন ছটফট করি।কেমন যেন লাগে!তোমার বেলা এসব এত প্রকট হতো না।তুমি অফিস গেলেই নিজেকে হালকা লাগতো।নিজেকে মুক্ত মনে হতো।বাসায় ফিরলেই আবার মনে হতো আমি বন্দী।এখন এসব মনে হয় না।এখন নির্ঝর বাসায় দেরি করে ফিরলে আমার অভিমান হয়।বড্ড বেশি অভিমান হয়।ও বাইরে থাকলেই বুকের ভেতর ভয় কাজ করে।প্রতিক্ষণে মনে হয় ওর কিছু……… ‘
জাহিদ খেয়াকে থামিয়ে দিল।সে খেয়ার মুখে এসব শুনতে চায় না।খেয়া এখনো তাকে ভালোবাসে এটাই ভাবতেই ভালো লাগে।ভাবনারা তো সবসময় সত্যতা পায় না।তার টাও না হয় না পেল।
নির্ঝরের প্রতি খেয়ার দূর্বলতা সম্পর্কে জাহিদ বহু আগে থেকে অবগত।তাদের বিয়ের পূর্ব থেকেই।নির্ঝরের জন্য খেয়ার হৃদয়ের জায়গাটাকে খেয়া শুরু থেকে বন্ধুত্ব ভেবেছে বলেই সে বুঝতে পারেনি একটা বন্ধু আরেকটা বন্ধুর জন্য এতটা উদ্বিগ্ন হয় না।তার মাইন্ডে সেট আপ হয়ে গিয়েছিল যে সে জাহিদকে ভালোবাসে আর নির্ঝরকে বন্ধু ভাবে।
কিন্তু জাহিদ তো বুঝতো নির্ঝরের প্রতি উদ্বিগ্নতা শুধু বন্ধুত্ব নয়,যা খেয়া বুঝতে পারে না।
খেয়াকে বুঝতে দিতেও সে চায় না।সে চায় খেয়া সারাজীবন তার থাকুক।আঁখির মতো হারিয়ে না যাক।সেজন্য চটজলদি খেয়াকে বিয়ে করে।কিন্তু সে চাইলে কি হবে?প্রকৃতিকেও যে চাইতে হবে!প্রকৃতি জন্মের পর থেকেই যে তার প্রতি বিমুখ।সেজন্য খেয়াকে হারিয়ে নিয়ে গেল।নাহ!নিয়ে গেল না,সে বরং প্রকৃতির কাছে হার মেনে খেয়াকে দিয়ে দিল।
খেয়ার হাতে ডিভোর্স লেটার দেয়ার আগে জাহিদ নির্ঝরের খোঁজ নেয়।জানতে পারে নির্ঝর এখনো বিয়ে করেনি।অন্যের মেয়েকে নিজের মেয়ে বলে বড় করছে।সে সেদিনই বুঝতে পারে নির্ঝর এখনো খেয়াকে ভালোবাসে।
এটাও বোঝে যে নির্ঝরের মতো ছেলেরা একবার কাউকে মন থেকে ভালোবাসলে সে মন আর কাউকে দিতে পারে না।খেয়াকে ছাড়া সে সারাজীবন চিরকুমার থেকেই যাবে।
জাহিদের বুকের ভেতর সূক্ষ্ম ব্যথা হয়।নিজেকে তুচ্ছ লাগে।সে কেন খেয়াকে নির্ঝরের মতো ভালোবাসতে পারে না?সে জানে খেয়া যদি আঁখির মতো তার জীবন থেকে সরে যায় তাহলে সে ফের অন্য কাউকে ভালোবাসবে।কিন্তু নির্ঝরের সেই ক্ষমতা নেই!
__’তুমি যে এখানে এসেছো, নির্ঝর জানে?’
__’জানুক বা না জানুক,তাতে তোমার আসে যায় না।’
জাহিদ বিড়বিড় করে বলে,
__’আমার আসে যায় খেয়া।আমার আসে যায়।’
তার কথা খেয়ার কানঅবধি পৌঁছাল না।সে চেয়ার ছেড়ে উঠে বলে,
__’তোমায় কিছু কড়া কথা বলার জন্য এসেছিলাম।বলেছি এখন…….’
কেবিনের দরজা ধাড়াম করে খোলার শব্দে খেয়া বাক্য অসমাপ্ত রেখেই মাখা ঘুরিয়ে তাকায়।জাহিদও তাকায়। নির্ঝর দরজা ধরে হাঁফাচ্ছে।দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে সে বহু দৌঁড়ঝাপ পেরে খেয়াকে খুঁজে বের করেছে।
নির্ঝর কপাল কুঁচকে ভেতরে প্রবেশ করে।খেয়ার বুকের ভেতর আবার একরাশ অভিমান এসে জমা হয়।সে একদৌড়ে নির্ঝরকে জড়িয়ে কান্না করে দেয়।
নির্ঝর খেয়াকে দুহাতে আগলে চোখ বন্ধ করে।পরক্ষণে চোখ খুলে রক্তলাল চোখে জাহিদের দিকে তাকায়।জাহিদ ইশারায় বুঝিয়ে দেয়,সে কিছু করেনি!
একটুপর খেয়া নিজে থেকে কাঁদতে কাঁদতে বলে,
__’নির্ঝর,আমি মা হতে চলেছি।ও আমাকে মিথ্যে অপবাদ দিয়েছিল।’
নির্ঝর খেয়ার চোখ মুছে তাকে পাশে দাঁড় করায়।জাহিদের দিকে তাকিয়ে কিছু কড়া কথা বলতে নিতেই থেমে যায়।যেন সে জাহিদের মনের কথা বুঝতে পারে।বুঝতে পারে জাহিদ সত্যি আজ কিছু করেনি!
খেয়ার হাত ধরে এক পা এগিয়ে বলে,
__’চলো,বাসায় যাই।’
জাহিদ নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে বলে,
__’একটা কথা।খেয়া আমি কয়েক মাস আগেই পাসপোর্ট তৈরি করেছি।বিদেশে চলে যাচ্ছি।চিরদিনের জন্য।আজ রাত তিনটায় ফ্লাইট।আর কোনোদিন দেখা হবে না।কি দরকার,অন্যের প্রতি ক্রোধ জমিয়ে রেখে?আমাকে ক্ষমা করে দিও।’
খেয়ার গলায় কাছে কিছু একটা দলা পাকিয়ে গেল।সে ঠোঁট কামড়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করলো।কিন্তু পারলো না।ঝরঝর করে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়লো।
শান্ত গলায় বললো,
__’ক্ষমা করেছি।’
জাহিদ মিষ্টি করে হাসলো।হেসেই বলল,
__’আর একটা কথা।দুজনকে একটা অনুরোধ করবো।খেয়ার গর্ভের সন্তানটার নাম আমার সিলেক্ট করা নামে রাখলে খুশি হবো।মেয়ে হলে নাম রেখো,চাঁদনী।আর ছেলে হলে রেখে সাইমুন।’
কেউ আর কোনো কথা বললো না।নির্ঝর খেয়ার হাত ধরে সামনে পা রাখল।কেবিনের দরজার বাইরে পা রেখে পেছন ঘুরে বলল,
__’ভালো থাকবেন।’
প্রতিত্তরে জাহিদ মুচকি হাসলো।খেয়া আর পেছন ঘুরে তাকাল না।সে কোনো পিছুটান চায় না।
জাহিদ তাদের গমন পথের দিকে চেয়ে থাকে।আজ রাতেও তাকে কাঁদতে হবে।যেমনটা কেঁদেছিল আঁখির বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর!
তার কয়েকটা কঠিন কথা আর কঠিন সিদ্ধান্তের জন্য আজ ওরা দুজন কতটা সুখী!নিজে খানিকটা জ্বলে এরকম দুটো মনকে এক করে দিয়েও যে প্রশান্তি অনুভব করা যায়!জাহিদ আবারও বিড়বিড় করে বলল,
__’সুখী হও খেয়া।অনেক বেশি সুখী হও!’
৩৪.
বেলকনিতে দাঁড়িয়ে খেয়া অবাক হয়ে গেল।শালিক পাখি দুটো সত্যি সত্যি উড়ে যায় নি।কাঁঠাল গাছে খড়কুটো দিয়ে বাসা বেঁধেছে।কি সুন্দর এদিক ওদিক উড়ে বেড়াচ্ছে।
একটা উড়ে গ্রিলের সামনে এসে ঘুরে ঘুরে বলল,
__’খেয়া,খেয়া!’
খেয়া চমকে নির্ঝরকে ডাক দিল।
__’এই,শুনছো!এদিকে আসো তো!’
নির্ঝর সবেমাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে হুডি গায়ে দিচ্ছিল।খেয়ার হঠাৎ তুমি তুমি করে বলা ডাকা শুনে চমকে উঠল।খেয়া তাকে এতটা আপন করে নিয়েছে?সে কেমন ঘোরের মধ্যে চলে গেল।
__’নির্ঝর!এই নির্ঝর!তাড়াতাড়ি এদিকে আসো তো!’
ফের খেয়ার জোড়ালো কন্ঠে নির্ঝরের ঘোর কাটলো।সে হেঁটে বেলকনিতে গেল।খেয়া তাকে এক ঝলক দেখেই বলল,
__’আপনি ঠিকই বলেছেন,পাখিদুটো পোষ মেনেছে।দেখুন কি সুন্দর করে কাঁঠাল গাছে বাসা বানিয়েছেন।’
নির্ঝর খেয়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে বলল,
__’আগেই তো ঠিক ছিল।বেশ তুমি তুমি করে বলছিলে।আবার আপনি কেন?’
খেয়ার যেন হঠাৎ মনে পড়লো।জিভ কেটে বলে,
__’ভুলে বলেছিলাম।’
__’এরকম ভুল আজ থেকে বাকি জীবনভর শুনতে চাই।মনে থাকবে?’
খেয়া মাথা নেড়ে সায় জানাল।হঠাৎ খেয়ার পেটে হাত রেখে বলল,
__’আচ্ছা, বলোতো এখানে কে আছে?রাজকুমার নাকি রাজকন্যা?তোমার কি মনে হয়? ‘
#জোড়া_শালিকের_সংসার
#মুন্নী_আরা_সাফিয়া
#পর্ব_২৪ (অন্তিম পাতা–প্রথমাংশ)
খেয়া মাথা নেড়ে সায় জানাল।হঠাৎ নির্ঝর তার পেটে হাত রেখে বলল,
__’এখানে কে আছে?রাজকুমার নাকি রাজকন্যা?তোমার কি মনে হয়?’
খেয়া মুচকি হেসে বলল,
__’আমি কিভাবে বলবো!তবে আমার মনে হয় আপনার মতো একটা রাজপুত্র হবে!’
__’আবার আপনি?’
__’আমার তুমি বলতে কেমন লজ্জা লাগছে।রাতে থেকে বলার চেষ্টা করবো।’
__’অকে।মাথায় রাখলাম।এখন শুনো,আমার কি মনে হয় জানো?আমার মনে হয় নুহার মতো আরেকটা রাজকন্যা হবে।নুহা যত বড় হচ্ছে, ততই তোমার মতো মিষ্টি গড়নের হচ্ছে।ওর চেহারায় তোমার ছাপ স্পষ্ট।’
__’হুঁ!’
খেয়া সামনে তাকায়।শালিক পাখি দুটি কেমন ঘেঁষে গাছের ডালে বসে আছে।একটা আরেকটা মাথায় পাখা দিয়ে কেমন আলতো করে ঘঁষা দিচ্ছে।কি চমৎকার দৃশ্য!
__’দেখুন না!শালিক পাখি দুটি ডালে বসে আছে।’
নির্ঝর এক পলক চেয়ে বলল,
__’হুঁ।কিন্তু তুমি কিভাবে বুঝলে যে পাখিদুটো বসে আছে?ওরা তো দাঁড়িয়েও থাকতে পারে।মানে ওদের যে ছোট ছোট পা!বড়জোর বলা যায়, পায়ের উপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।’
__’আপনি সবকিছুতে এত উল্টাপাল্টা লজিক দেখান কেন বলুন তো!আচ্ছা, বাদ দিন।অনেক দিন আপনার কবিতা মানে ছন্দ শুনি না।একটা বলুন।’
__’এখন মাথায় আসছে না।তবুও চেষ্টা করি!
পাখিদুটো বসে আছে হয়ে জড়োসড়ো,
এক চিলতে রোদ এসে প্রেম হয়ে ঝরো!
__’বাহ!দারুণ।’
খেয়া এবার নির্ঝরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে অভিমানী গলায় বলে,
__’আপনি আমায় নিয়ে কবিতা লিখেন না?’
নির্ঝর হেসে ফেলে।মুখটা নিচু করে খেয়ার সামনে এনে বলে,
__’আমার পদ্যের শহরের প্রতিটা শব্দ জানে তুমি আমার কাছে কতটা মূল্যবান,কতটা আপন!কতটা একান্ত আমার!’
খেয়ার মনটা খুশিতে ভরে উঠে।সে লজ্জায় মাথা নিচু করে।নির্ঝর গম্ভীর কন্ঠে বলে,
__’আজ থেকে দুই বছর আগে যখন তুমি আমার ছিলে না,যখন তোমার সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো বাস্তবতার কাছে হার মেনে ফিকে হতে শুরু করে তখন বড্ড ভয় হয়।যদি তোমাকে ভুলে যাই?কিন্তু তুমি আমার কাছে যে শেষরাতের মিষ্টি মধুর স্বপ্ন।যে স্বপ্ন দেখে মানুষ ঘুমের ঘোরেই হাসে।হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে গেলে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়।পরক্ষণে স্বপ্নের বাকি অংশ কল্পনায় মিলাতে শুরু করে এবং তার রেশ থেকে যায়।
সাধারণত স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠার পাঁচ মিনিটের মাথায় স্বপ্নের অর্ধেক আর দশ মিনিটের মধ্যে স্বপ্নের ৯০% মানুষ ভুলে যায়।কিন্তু তুমি আমার কাছে এমন এক স্বপ্ন যা আমি সারাজীবন দেখতে চাই।সারাজীবন কল্পনায় নানা রঙে সাজাতে চাই।তোমায় নিয়ে পঙক্তির পর পঙক্তি লিখতে চাই।তখন তোমায় নিয়ে লেখা আমার কিছু অংশ শুনবে?’
খেয়া মাথা নেড়ে হুঁ বলে।
নির্ঝর বলে,
__’তোমারে নিয়া দিন রাত কবিতার চরণ মিলাাইতে মিলাইতে আমার ঝুলি এহন শূন্য।এহন চাইলেই আর ছন্দ মিলাইতে পারি না।আমি প্রহরের পর প্রহর নির্ঘুম কাটাই।মধ্যিরাতে ঘুম থেইকা আচমকা জাইগা কলম নিয়া বসি।যদি তোমারে নিয়া কিছু নতুন কইরা লিখতে পারি?কিন্তু পারি না!আমার নির্ঘুম রাতগুলা জানে,আমি কতটা মন থেইকা চাই তোমারে নিয়া লিখতে।নতুন কইরা তোমার সেই ভুবন ভুলানো হাসিডারে ছন্দে তুইলা ধরতে!নতুন কইরা তোমার প্রতিটি কথার মায়ায় জড়াইতে।আমি খুব কইরা চাই তোমারে নতুন কইরা ভালোবাসতে!
সত্যি কইরা কও তো!তুমি কি জাদু করছো আমারে?তোমারে নিয়া লেখা কবিতারে অভিশাপ দিছো?সেজন্যিই কি তোমারে নিয়া আর শব্দ খুঁইজা পাই না?তোমার গন্ধে আগের মতো ডুবতে পারি না?এজন্যিই কি তুমি আমার কল্পনার রাজ্যে আসতেও আজকাল কার্পন্য করো?কেন করো এমন?তুমি তো এমন ছিলে না!
কেউ না জানুক,তুমি তো জানো তোমারে নিয়া কবিতা লেখা আমার দুরারোগ্য ব্যাধি।এ ব্যাধির কোনো চিকিৎসা নাই।তারপরও কেমনে পারলা তোমারে নিয়া পূর্ণ আমার শব্দ ভান্ডার শূন্য কইরা দিতে?
শুনতে পারছো?তোমারে ফেরত চাই না আমি।তোমারে নিয়া জমানো আমার শব্দ ভান্ডাররে এট্টু ফেরত দিবা?দোহায় লাগে তোমার!ফেরত দিবা?তোমারে নিয়া যে নতুন কইরা পদ্যের শহরে প্রবেশ করতে চাই!’
নির্ঝর থামে।খেয়া অপলক তার দিকে চেয়ে থাকে।মুহূর্তে তার দু চোখ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়।নির্ঝর তার জল মুছে মাথা নেড়ে কান্না করতে বারণ করে।ধরা গলায় বলে,
__’জানো খেয়া,প্রথম যখন ডাক্তার বললো আপনি বাবা হতে চলেছেন!আমি বিশ্বাস করিনি।ভেবেছি অন্য কারো রিপোর্ট আমাকে বলছে।কিন্তু ডাক্তার বেশ কনফিডেন্স নিয়ে বলে কোনো ভুল হয়নি।আপনার স্ত্রী প্রেগনেন্ট।তার গর্ভের ফিটাস বেশ বড় হয়ে গেছে।চার মাসের বেশি চলছে বাচ্চার বয়স।বাচ্চা অনেক সুস্থ।আমি নিজে আলট্রাসনোগ্রাফি করেছি।
তবুও আমার বিশ্বাস হতে চায় না।কাঁপা কাঁপা হাতে রিপোর্ট উল্টে দেখি সত্যি আমি বাবা হতে চলেছি।তখন কি যেন হয়ে গেল আমার।এক ছুটে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।ফুল স্পিডে ড্রাইভ করে সেদিনের সেই ব্রিজের উপর গাড়ি থামালাম।গাড়ি থেকে নেমে ব্রিজের উপর দাঁড়িয়ে রইলাম।নিচের কালো কুচকুচে পানির দিকে তাকাতেই ঝরঝর করে চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়লো।কি যে ভালো লাগছিল!সম্পূর্ণ নতুন এক অনুভূতি!যা কাউকে বলে বোঝানো যায় না।
সেখানে ঘন্টাখানেক দেরি করলাম।গাড়িতে উঠতেই তোমার কথা মনে পড়লো।নতুন এক প্রাণের জন্য তোমার কথা প্রায় ভুলতে বসেছিলাম।নিজেকে গালি গালাজ করতে করতে হাসপিটালে গিয়ে দেখি তুমি নেই!কি যে ভয় পেয়েছিলাম।অতঃপর তোমায় পেলাম।’
__’হুঁ!’
__’কিসের হুঁ?বাসায় নতুন দুটো কাজের লোক আসবে কাল থেকে।একটা কাজও করবে না তুমি।যে কোনো দরকারে তাদের বলবে।তাছাড়া আমি তো আছিই!তোমার চব্বিশ ঘন্টার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট।’
খেয়া মৃদু হাসে।নির্ঝরও হাসে। ফের বলে,
__’বানাতে চেয়েছিলাম তোমায় আমার ল্যাবের এসিস্ট্যান্ট।কিন্তু হয়ে গেলাম আমি!’
__’আচ্ছা,আপনি আমার থেকে বাচ্চাকে বেশি ভালোবাসবেন?’
__’হা হা!কেন তুমি জেলাস?’
__’একদম কথা ঘোরাবেন না।সত্যি করে বলুন তো!’
__’নো টেনশন খেয়াতরী।আমার খেয়াতরীর প্রতি ভালোবাসা এবং নুহা আর অনাগত সন্তানের প্রতি ভালোবাসা আলাদা।তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমবে না কোনোদিন।বরং বয়স বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে থাকবে।’
খেয়া হেসে নির্ঝরের বুকে মুখ লুকায়।দূরের ডালে বসে থাকা জোড়া শালিক যেন তাদের দিকে চেয়ে মুচকি মুচকি হাসে।পাখিদের সাথে পাল্লা দিয়ে প্রকৃতিও যেন সমান তালে হাসে!
৩৫.
#এগারো_বছর_পর
__’সাইমুন ভাইয়া!’
সাইমুন ড্রয়িং রুমের এক কোণায় সোফায় বসে ফোনে গেইম খেলছিল।পেছন থেকে মেয়েলি কন্ঠে তার মনোযোগে ব্যাঘাত ঘটে।কিছুটা বিরক্তি নিয়ে আবার খেলায় মনোযোগ দেয়।খেলার সময় বিরক্ত করা তার ভীষণ অপছন্দের।
__’সাইমুন ভাইয়া।কি করো?’
কেউ তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।কে দাঁড়িয়েছে তা সাইমুনের বুঝতে বাকি থাকে না।সে কপাল কুঁচকে সম্পূর্ণ ইগনোর করে।
__’তুমি শুনবে না তো?বেশ!ছাইয়ের মধ্যে চাঁদ,মানে ছাইয়ের মধ্যে মুন — সাইমুন।ছাইয়ের মধ্যে…… ‘
সাইমুন রেগে ফোন হাত থেকে সরিয়ে সামনে তাকায়।দেখে মিষ্টি দাঁড়িয়ে আছে।তার সারা মুখে হাসি যেন অথই জলের মতো উপচে পড়ছে।সে কুঁচকানো কপালের খাদটা আরো গভীর করে বলে,
__’সমস্যা কি তোর?কতবার বলেছি এসব উল্টাপাল্টা কথা বলবি না?কিসের ছাইয়ের মধ্যে মুন?হ্যাঁ?চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।’
মিষ্টি মুখ ফুলিয়ে বলল,
__’তুমি আমার সাথে এভাবে কথা কেন বলো?’
__’কিভাবে বলতে হবে?একটুখানি মানুষ! আসে আমাকে, এই সাইমুন জুবায়েরকে জ্ঞান দিতে।যাহ,সরে যা তো।জ্বালাবি না আমায়।’
__’তুমি আমাকে তুই তুই করে কেন বলছো?আমি কিন্তু আন্টিকে বলে দিবো।’
__’এই যা তো!যা বলার বল।কিন্তু খবরদার।কানের কাছে এসে ঘ্যানর ঘ্যানর করবি না।ছোটবেলার কথা মনে নেই?ছোটবেলার মতো তুলে আছাড় দিবো কিন্তু!’
মিষ্টি ভয় পেয়ে যায়।সে এক দৌঁড়ে চলে যায়।সে চলে যেতেই সাইমুন মুচকি হাসে।তার মিতু আন্টির একমাত্র মেয়ে মিষ্টিকে সে ছোটবেলায় তুলে আছাড় দেয়নি।বরং সারাক্ষণ নিজের কাছাকাছি রাখতে চাইতো।তাকে কত আদর করতো!
মিষ্টির বয়স সাতে পড়বে।যথেষ্ট বড় হয়ে গেছে। সেজন্য সে এসব বলতে চায়না।তার কেন জানি লজ্জা লজ্জা লাগে।
সাইমুন উঠে দাঁড়ায়।মিষ্টির খোঁজে সিঁড়িতে পা রাখে।আজ সারা বাসা ভর্তি মানুষ।আজ সাইমুনের একটা বিশেষ দিন।তার একমাত্র বোন নুহা আপুর এনগেজমেন্ট আজ।যার সাথে এনগেজমেন্ট মানুষটা তার অপরিচিত নয়।বেশ ভালো পরিচয়।মানুষটা হলো দিশান ভাইয়া।
মায়ের রুম পেরিয়ে সাইমুন ছাদের সিঁড়ি ঘরের দিকে যায়।কয়েক সিঁড়ি উঠতেই দিশান ভাইয়ার সাথে দেখা হয়।
দিশান আজ গোল্ডেন কালারের পাজামা পাঞ্জাবি পড়েছে। কি সুন্দর লাগছে তাকে।দিশান সাইমুনকে দেখে বেশ খুশি হয়।বেশ আবেগমাখা কন্ঠে বলে,
__’ইয়ে মানে সাইমুন একটু টিকটিকিকে থুড়ি তোমার নুহা আপুকে ছাদে পাঠাবে?একটু ইম্পোর্টটেন্ট মানে দরকারি কথা আছে।’
__’জ্বি!’
বলেই সাইমুন উল্টো ফেরে।মায়ের রুমের পাশ দিয়ে আসতেই একটু উঁকি দেয়।মা শাড়ির কুঁচি ঠিক করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।সাইমুন এগিয়ে যায়।
__’মা!’
খেয়া চমকে উঠে।প্রতিবার যখন সাইমুন তাকে মা বলে ডাক দেয় সে চমকে উঠে।কি যে ভালো লাগে!নুহা,সাইমুনের মুখে মা ডাক যেন পৃথিবীর সবকিছুকে হার মানায়।
সে হেসে বলে,
__’শাড়ির কুচি ধরতো বাবা!’
সাইমুন মাথা নিচু করে কুঁচি ধরে।খেয়া ছেলের দিকে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থাকে।ছেলেটা তার কত বড় হয়ে গেছে।একদম বাবার মতো সুন্দর চেহারার হয়েছে।এই মনে হয় সেদিন ছোট ছোট হাত পা ছুঁড়ে খেলা করেছে।
ওয়াশরুমের দরজা খুলে নির্ঝর বের হলো।
(চলবে)
ভাই শেষ পাট কবে দিবেন