পাট ৪-৬
#ঝরা_ফুলের_বাসর
#পর্বঃ০৪
#Mst_Liza
ঠাসসস! ছিই হৃদ ছিই এতোটা নিচে নেমে গেছিস তুই? আমার ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে যে তুই আমার ছেলে।তুই শেষ পর্যন্ত এমন কাজ করবি আমি কখনো ভাবতে পারি নি।
খালাম্মাকে উচ্চস্বরে কথা বলতে শুনে আমি ঝটপট করে উঠে বসি।তারপর নিজের কাপড়টা ঠিক করে নিয়। খালাম্মা আমার দিকে তাকায়। আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে।ভয়ে আমার হাত পা থরথর করে কাঁপছে। না জানি আমাকে আজ কি শাস্তি দেবে?
একি! খালাম্মা কাছে এসেই আমাকে জোড়িয়ে ধরেছে।আমার মুখে চুমু খাচ্ছে। আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। তাহলে কি আমাদের মধ্যের সব কথা শুনে নিলো খালাম্মা?
খালাম্মা কাঁদতে কাঁদতে আমার সামনে দু’হাত জোড় করে বলে, আমাকে ক্ষমা করে দিস ফুল আমি তোর প্রতি অনেক অন্যায় করে ফেলেছি।
আমি খালাম্মার হাতটা নিচে নামিয়ে দিই।তারপর বলি, নাহ নাহ তুমি কেন ক্ষমা চাইছো? তোমারতো কোনো দোষ না।সব দোষ শুধুই হৃদের।
হৃদ বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকায়।এগিয়ে এসে কিছু বলতে গেলে খালাম্মা হৃদকে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলে।আর হৃদ আমার মুখের দিকে সেই একইভাবে চেয়ে থাকে।
কি হলো শুনতে পাস নি? এই মুহূর্তে এই বাড়ি থেকে তুই বের হয়ে যা হৃদ।উচ্চ কন্ঠস্বরে খালাম্মা কথাটা বলে হৃদকে।
হৃদ কেঁপে উঠে একটু নরেচরে উত্তর দেয় ফুলকে আমি বিয়ে করেছি মা।আমি গেলে ওকেও সাথে করে নিয়ে যাবো।
কথাটা বললে খালাম্মা ঠাসসসস! করে হৃদের গালে আরেকটা থাপ্পড় মারে। তারপর হৃদকে হাত ধরে টেনে ওর রুমে নিয়ে গিয়ে সব জিনিসপত্র গুছিয়ে ওর হাতে লাগেজটা ধরিয়ে দেয়। আর বলে, শেষবারের মতো তোকে বলছি এই বাড়ি থেকে তুই বেরিয়ে যা।তোর জন্য আমার বোন আত্নহত্যা করেছে।তোর মতোন খুনীর আমার বাড়িতে কোনো জায়গা নেই।
হৃদ লাগেজটা নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে এসে আমার হাত ধরে বলে, আমি গেলে ফুলকে সাথে করেই নিয়ে যাবো।
আমি আমার হাতটা হৃদের থেকে ছাড়াতে চেস্টা করি।এমন সময় খালু এসে হৃদকে জিজ্ঞাসা করে এভাবে আমার হাত কেন ধরেছে? হৃদ বলে আমার গর্ভের সন্তানটা ওর আর ও আমাকে বিয়ে করেছে। তাই ও যেখানেই যাবে আমাকে নিয়ে যাবে।
কথাটা শুনে খালু রেগে যায়। আর হৃদকে মারে।মারতে মারতে হৃদের অবস্থা কাহিল করে দেয়। হৃদ আর উঠে দাড়াতেও পারে না।খালু সেখান থেকে রেগে মেগে চলে যায়। আর হৃদ আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। আমার একটুও মায়া হয় না এই অবস্থায় ওকে দেখে। ও মরে গেলেও আমার কস্ট হবে না।খালাম্মা আমাকে ধরে আমার রুমে নিয়ে আসে আর বলে এখন থেকে বাড়ির কোনো কাজ না করতে।আর সারাদিন রেস্ট নিতে।
খালাম্মা আমার যত্ন নেই।আমাকে এসে খাইয়ে দিয়ে যায়। তখন হৃদকে খালু মারার পর সেই যে রুমে এসেছি আর বের হই নি।
দুপুরে রুম থেকে বের হয়ে ওইখানটাই আসি যেখানে হৃদ খালুর মাইর খেয়ে পরে ছিলো।কিন্তু হৃদ সেখানে নেই।মনে মনে আমি খুব খুশি হলাম।আমি ভাবলাম সত্যি সত্যি হয়তো হৃদ বাড়ি থেকে বের হয়ে চলে গেছে।খুশীতে আমি সেই আগের মতোন সারা বাড়িতে ঘুরঘুর করছি।এখন না আমার কোনো কাজ করতে হচ্ছে আর না খালাম্মার দূঃব্যবহার সহ্য করতে হচ্ছে। সত্যিটা জানার পর খালাম্মা ঠিক আগের মতোন আমাকে ভালোবাসছে।
সারাদিন পর আমি রাতে আমার রুমে আসলে রুমটা একদম অন্ধকার দেখতে পেলাম।আমার একদম মনে আছে রুমের বাতি জ্বালিয়ে আমি বাইরে গিয়েছিলাম তাহলে এতো অন্ধকার কিভাবে হলো? আমি অতোসতো না ভেবে রুমের ভেতরে গিয়ে বাতিটা জ্বালাতে যাবো এমন সময় পেছনের থেকে দরজা বন্ধের শব্দ শুনতে পাই।আমি ঘুরে দাঁড়াতেই কেউ এসে আমার মুখটা চেপে ধরে।আমি চিৎকারও করতে পারি না।তারপর আমার চোখের সামনে ফোনের ফ্ল্যাস লাইটটা জ্বালিয়ে ধরলে মুখটা দেখতে পেলাম।এ আর কেউ না হৃদ।তাহলে হৃদ এখনো বাড়ি থেকে যায় নি?
কি ভেবেছিলি ফুল তোকে ফেলে রেখে আমি বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো? কখনো না! কোথায়ও গেলে তোকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।আর এবাড়িতে থাকলেও তোর সাথেই থাকবো।অনেক রাত হয়েছে শুতে আয়!
আমি ধাক্কা দিয়ে হৃদকে দূরে সরিয়ে দিয়ে আলোটা জ্বালিয়ে বলি, কক্ষনো না।আমি আর কখনো আপনার সাথে শুবো না।কথাটা বলে চোখ তুলে চেয়ে দেখি হৃদের মুখে আর বুকে খালুর মাইরের দাগগুলো স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
হৃদ ঘুরে পাশের টেবিল থেকে এক গ্লাস পানি খাই।তখন ওর পিঠের দাগগুলোও দেখা যায়।
কি চাস তুই ফুল? তোর জন্য আমি আজ বাবার কাছে এতোটা মাইর খেলাম।মায়ের কাছেও পর হয়ে গেলাম।এরপরও আমাকে ঘৃণা করবি?
হ্যাঁ করবো।কারণ আপনি আজ আপনার নিজের দোষে খালুর কাছে মাইর খেয়েছেন।খালাম্মার কাছে পর হয়েছেন।এক্ষুনি আমার রুম থেকে আপনি বের হবেন নইতো আমি চিৎকার দিয়ে খালু, খালাম্মাকে ডাকবো।
হৃদ টেনে আমাকে বিছানায় ফেলে বলে, তোর যা ইচ্ছা তুই তাই কর।তবুও আমি কোথাও যাবো না।তোর রুমেই ঘুমোবো।কারণ তোকে ছাড়া আমার ঘুম হয় না।কথাটা বলে আমার হাতদুটো বিছানার সাথে চেপে ধরে। আমি চিৎকার দিতে যাবো তার আগেই আমার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেয়। আমার ঘৃণা হয় হৃদের স্পর্শে। আজ আমি না পেরে হৃদের ঠোঁটে জোড়ে কামড় বসিয়ে দিয়।তারপর চিৎকার করে খালু, খালাম্মাকে ডাকি।তারা এসে দরজায় কড়া নাড়াতে আমি ধাক্কা দিয়ে হৃদকে সরিয়ে উঠে পরে দরজাটা গিয়ে খুলে দিয়।আর খালাম্মাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদি।খালু রুমের ভেতরে গিয়ে দেখে হৃদ আমার রুমে।যা দেখে রেগে গিয়ে খালু হৃদকে টেনে বাইরে নিয়ে আসে আর মারতে থাকে। হৃদকে মারতে মারতে খালু বাড়ি থেকে বের করে দেয়।
চলবে,,,,,
#ঝরা_ফুলের_বাসর
#পর্বঃ০৫
#Mst_Liza
এই কলকলে শীতে, এতো রাতে হৃদ যাবে কোথায়? এতোটা পাষাণ মনের মানুষ আমি নই।খালাম্মাকে বোঝালাম, খালুকে বোঝালাম। আজকের রাতটা অন্তত্য হৃদকে থাকতে দিও।আমি বোঝানোর পরে খালাম্মা, খালু রাজি হয়ে যায় আর দরজাটা খুলে দেয়। হৃদকে বলে, আজকের রাতটুকু থেকে যেতে।আর হৃদ থেকে যায়।ও নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়। আমরাও আমাদের যার যার রুমে এসে শুয়ে পরি।
রাত তিনটা বাজে।আমার চোখে ঘুম নেয়। অন্য দিন এই সময়ে হৃদ আমাকে প্রচুর বিরক্ত করতো।যদি পারতো সারাটা রাত জাগিয়ে রাখতো।আর সকাল হতেই সকলে ঘুম থেকে উঠার আগে আমার রুম থেকে বেড়িয়ে যেত।কিন্তু আজ যেন বিছানাটা শূন্য শূন্য লাগছে।তবে ভালো হয়েছে ও চলে গিয়েছে।শরীর ছাড়া তো ও আর কিছুর টানে আমার কাছে আসতো না।যদি তাই না হতো তাহলে সেদিন ওভাবে আমার সম্মান নস্ট করতে পারতো না।
হৃদের কথা ভাবতে ভাবতে হঠাৎ শুনতে পায় দরজায় কড়াঘাত। আমি বুঝতে পারি এটা হৃদই হবে।হোক হৃদ! আজ কিছুতে দরজা খোলা যাবে না।কিন্তু নাহ! দরজার কড়াঘাত ক্রমশ বেড়ে চলেছে।খালু, খালাম্মা শুনতে পেলে আবার এসে ওকে মারবে।আমি চাই না ও আর মাইর খাক।তাই না চাইতেও গিয়ে দরজাটা খুলে দিই।
আমি দরজা খোলা মাত্র হৃদ আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি এক ধাক্কা দিয়ে ওকে দূরে সরিয়ে দিই।
লজ্জা করে না আপনার? এতোকিছুর পরেও সেই আমার কাছে এসেছেন? কেন? এই শরীরটার জন্য?
আমার কথাটা শেষ হওয়ার সাথেই হৃদ আমার গালে একটা কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। তারপর আমাকে টেনে রুমের মধ্যে নিয়ে এসে দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে আমাকে বলে, আজ তুই আমায় অনেক অপমান করেছিস।অনেক কস্ট দিয়েছিস ফুল।আর ভেতরটায় যে ব্যাথা অনুভব করছি সেটি কি তুই বুঝতে পারছিস না? খুব যন্ত্রণা হচ্ছে আমার।
নাটক বন্ধ করুন।একদম মন ভোলানো কথা বলার চেস্টা করবেন না। আপনার মতোন মানুষের আবার কস্ট, যন্ত্রণা। কিভাবে পারেন এসব নিখুঁত অভিনয় করতে আপনি?
ফুল…বলে হৃদ নিজের হাতটা উঠায়।আমাকে মারতে গিয়েও থেমে যায়।তারপর বলে, তোকে আমি অনেকবার বলেছি সত্যিটা বাবা-মাকে বলে দিতে।কিন্তু তুই চাস নি।কেন? আমাকে ঘৃণা করিস তাই।আর আজ আমার সব দোষ?
হ্যাঁ, আপনার সব দোষ।আপনার জন্য আমার মা আত্নহত্যা করেছে।আমি চাইলেও আপনাকে কখনো মেনে নেবো না।দরকার পরলে এবাড়িতে কাজের মেয়ে হয়ে সারাটা জীবন পরে থাকবো।যতো অপমানিত হওয়ার হবো তবুও আপনাকে কখনো আমি মেনে নিতে পারবো না।
ঠিক এই জেদটাই ধরেছিলি তুই।আমি তোকে বলেছিলাম বাচ্চাটার একটা পরিচয় লাগবে।তুই একা ওকে নিয়ে পারবি না সমাজের চোখে মাথা উঁচু করে বাঁচতে।কিন্তু তুই শুনিস নি।তাই আমি ভয় দেখিয়ে তোকে বিয়ে করেছি।আর তুই কি করলি? বিয়ের কথাটাও না নিজে কাউকে বললি আর না আমাকে বলতে দিলি।এখন সব দোষ আমার?
বন্ধ করুন তো আপনার নাটক। আজ রাতটাই তো আছেন।এই একটাদিন একটু শান্তিতে থাকুন।আমার খুব ঘুম পাচ্ছে।আপনার এসব নাটক দেখতে আমার আর ইচ্ছে করছে না।যান নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পরুন।আর আমাকেও এবার একটু ঘুমোতে দিন।কথাটা বলে দরজাটা খুলে বাইরের দিকে ইশারা করলাম।
হৃদ এসে আমাকে টেনে হাত ঘুরিয়ে পিছনে নিয়ে শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে, কোথাও যাবো না আমি।আর যদিও যাই তোকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।
দরজাটা দিয়ে আমাকে নিয়ে বিছানায় ফেলে বলে, ঘুম আসছে না তোর? যা ঘুমিয়ে পর।তারপর বিছানার অন্য পাশটায় উল্টো ঘুরে শুয়ে থাকে হৃদ।
.
.
.
🌼
.
.
.
সকালে,,, রাতে আর আমার ঘুম হয় নি।আমার উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে এখনো শুয়ে আছে হৃদ।সারাটা রাত কক কন্ঠস্বরে হালকা কান্নার আচ পেয়েছি হৃদের দিক থেকে।হৃদ কি সত্যি কেঁদেছে? কাঁদলে কাঁদুক, তাতে আমার কি? ওকে শুধুই ঘৃণা করি আমি।
খালাম্মা এসে বাইরে থেকে ডাকছে।ফুল হৃদ কি আবার তোর রুমে এসেছে? ওতো নিজের রুমে নেই। দরজাটাও বাইরে থেকে খোলা।কথা বল মা।তুই ঠিক আছিস তো?
খালাম্মার কথা শুনে আমি উঠে বসি।কি বলবো বুঝে উঠতে পারছি না।হাত দিয়ে হৃদের পিঠে খোঁচা দিয়ে বলি উঠতে।আর পিঠের কাটা জায়গায় খোঁচা খেয়ে হৃদ ব্যাথা পেয়ে চিৎকার দিতে যায় আমি ওর মুখটা চেপে ধরি।আর ফিসফিসিয়ে বলি, উসসসস! একটুও শব্দ করবেন না।আপনি এখানে আছেন জানতে পেলে আপনাকে আবার মারবে।হৃদ আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি হৃদের মাথার বালিশটার দিকে তাকিয়ে দেখি ভিজে চুপচুপ করছে।হয়তো কাল রাতে খুব কেঁদেছে।আমি হৃদের বুকে মাথা রেখে শুয়ে খালাম্মাকে বলি, নাহ খালাম্মা হৃদতো এখানে আসে নি।হয়তো সকাল হয়েছে তাই চলে যেছে।
সত্যি কি হৃদ চলে গেছে ফুল?
হ্যাঁ।কালতো সেই কথায় হয়েছিলো।সকাল হলেই ও চলে যাবে।
আচ্ছা, তুই ঘুমো তাহলে।এতো সকালে উঠার দরকার নেই। আরেকটু বেলা হোক তাই উঠিস।কথাটা বলে খালাম্মা চলে যায়।
খালাম্মা যেতেই হৃদের বুকে ধাক্কা দিয়ে আমি উঠে আসি।হৃদ অনেকটা অবাক হয় আমার এমন আচারণে।
কি হলো ফুল এইভাবে উঠে গেলি কেন?
আমি খালাম্মাকে বলে দিয়েছি আপনি চলে গেছেন।তাই এখন চুপিচুপি বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যায়। নইতো আপনি আছেন দেখলে আবার মারবে আপনাকে।
ওহহ এইজন্য? তাই ভাবি তুইতো আমার কাছে আসার মানুষ না।যাই হোক, আমি এবাড়ি ছেড়ে যাচ্ছি না।
মানে?
মানেটা তোকে আমি আগেও বলেছি ফুল।গেলে তোকে নিয়েই যাবো।
অসম্ভব আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।
তাহলে এখানে থাকতে দে।তোর কাছে লুকিয়ে রাখ আমায়।যতোদিন না মা-বাবা আমাকে ক্ষমা করছে।
চলবে,,,,,,
#ঝরা_ফুলের_বাসর
#পর্বঃ০৬
#Mst_Liza
হৃদের কোনো কথার উত্তর না দিয়ে আমি ছুটে ওয়াশরুমে চলে এলাম।কি বলবো ওকে আমি? ও যা অন্যায় করেছে তার যে ক্ষমা হয় না।তাহলে আজ কেন ওর জন্য আমার এতো কস্ট হচ্ছে? আমি তো ওকে ভালোবাসি না।
হৃদ ওয়াশরুমের দরজাটার কাছে এসে দাড়ায়।আর আমাকে ডাকে, ফুল আমার কথার উত্তর দে।বাইরে আয় প্লিজ! আমাকে আর কস্ট দিস না।তুই ছাড়া যে আমি একেবারে নিঃস্ব।
আমি চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ওয়াশরুমের দরজাটা খুলে দিলাম।হৃদ এসে আমাকে ধরে ঝাঁকিয়ে বলল, তুই কি সত্যিই চাস আমি চলে যায়?
আমি হৃদকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলি, হ্যাঁ চায়! কারণ আমি ঘৃণা করি আপনাকে।চলে যান আপনি এবাড়ি থেকে।
এমন সময়ে খালাম্মা আবার আসে। দরজার কাছে এসে বলে, ফুল তুই কি উঠে পড়েছিস? দরজাটা খোল না।ভাবছি আজ তোকে নিয়ে একটু হসপিটালে যাবো।
খালাম্মার কন্ঠ শুনে আমি হৃদের দিকে তাকায়। হৃদ তো আমার রুমে।এটা খালাম্মা জানলে তো হৃদকে আবার মারবে।খালাম্মা ডেকে যাচ্ছে আমাকে আর হৃদ সেখানেই দাড়িয়ে আছে।
আমি হৃদকে ঠেলে ওয়াশরুমের মধ্যে ঢুকিয়ে দিই।আর বলি খালাম্মা না যাওয়া পর্যন্ত এখান থেকে বের হবেন না।তারপর আমি ওয়াশরুমের দরজাটা চাপিয়ে দিয়ে রুমের দরজাটা খুলে দিয়।খালাম্মা রুমের ভেতরে আসে। আলমারি থেকে একটা কাপড় বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দেয়। তারপর বলে, গোসল করে রেডি হয়ে নিতে। হসপিটাল থেকে বেড়িয়ে বাইরে লাঞ্চ করে তাই বাড়িতে ফিরবো আমরা।
খালাম্মা আমার রুমেই বসে থাকে।আর ওয়াশরুমে হৃদ।আমি না চাইতেও ওয়াশরুমের ভেতরে যায়।গিয়ে দরজাটা আটকিয়ে পিছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখি হৃদ দাড়ানো।
আমার কিছু বলার আগে হৃদ এগিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো।
বাইরে খালাম্মা আছে।আমাকে এখানেই চেঞ্জ করতে হবে।
আচ্ছা কর।গোসল করবি তো?
আমার হাত থেকে কাপড় ও তোয়ালেটা নিয়ে পাশে রাখলো।তারপর আমায় নিয়ে পানির কাছে গিয়ে পানি ছেড়ে দিলো।
কি করছেন কি? আমাকে একদম ভিজিয়ে দিয়েছেন!
তো কি হয়েছে? মা তো তোকে গোসল করতেই বললো।
আমি এই শীতে গোসল করবো? আমি কাপড়টা চেঞ্জ করেই চলে যাবো।
কি? তুই গোসল করবি না।সারাদিন বাইরে থাকবি আর রাতে এসে সেই আমার সাথে ঘুমোবি।তোর গায়ের থেকে তো ঘামের গন্ধ বের হবে।আমি কি রাতে তোর ঘামের গন্ধ শুকবো?
আপনার সাথে ঘুমোবো মানে? আপনি আমরা বেরিয়ে যাবার পরপরই এবাড়ি ছেড়ে চলে যাবেন।
নাহ!
হ্যাঁ।
না গেলে কি করবি? বাবা-মাকে বলবি আমি তোর কাছে আছি? ঠিক আছে যা।গিয়ে বল!
আমাকে ধাক্কা দিয়ে হৃদ ইশারা করে বাইরের দিকে।
নাহ! আমি সেটা বলতে পারবো না।আপনি নিজের থেকেই চলে যাবেন।
আমার কথাটা শুনে হৃদ খুশি হয়।হৃদ আমার কাছে এসে আমার মুখটা ধরে বলে, আমি কখনো তোকে ছেড়ে যাবো নারে।এবার যাতো গোসল করে নে মা বাইরে অপেক্ষা করছে।
আমি কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থাকি।সেটা দেখে হৃদ আমার পড়নের জামাটা টেনে বলে, এখোনো দাড়িয়ে আছিস কেন?
তো কি করবো? আপনার সামনে আমি..
আমি আর কিছু বলার আগেই হৃদ আমার জামার পিছনের চেইনটা খুলে ফেলে।আর বলে, নাটক বন্ধ কর।আমার সামনে অনেক খুলেছিস কাপড়।
কথাটা বলে হৃদ আমার জামাটা খুলতে যায়। আমি হৃদের হাতদুটো ধরে বসি।আর বলি,প্লিজ এমন করবেন না।আমাকে নিজে করতে দিন।
আমি করলে তোর সমস্যা কোথায়?
না আপনি পারবেন না।
পারবো।
হৃদ জোড় করে আমার গলায়, মুখে আর পিঠে সাবান লাগিয়ে দেয়।
আমার খুব শীত করছে।
জামাটা খোল ফুল।
নাহ।জামা কেন খোলা লাগবে?
না খুললে তোর গায়ে ভালো ভাবে সাবান লাগানো যাবে না।
আপনার আর কিছু করা লাগবে না।আমি নিজেই করছি সরুন।বলে সাবানটা হৃদের কাছ থেকে টেনে নিয়ে নিলাম।আর হৃদকে ধাক্কা দিয়ে কিছুটা দূরে সরিয়ে দিলাম।
তাকিয়ে দেখি হৃদের মুখটা কালো হয়ে গেছে। আমাকে ছেড়ে দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে কিছুটা দূরে গিয়ে দাড়িয়ে আছে।
আর আমার খুব শীত করছে। না চাইতেও আজ হৃদের পাল্লায় পরে গোসল করতে হচ্ছে।
আমি জামাটা খুলে বুকের উপরে দিয়ে গায়ে সাবান লাগাচ্ছি আর কাঁপছি।বাইরে থেকে খালাম্মা ডেকে চলেছে।কি হলো ফুল এখনো হলো না?
হ্যাঁ, খালাম্মা।আর পাঁচ মিনিটের মধ্যে বেরিয়ে আসছি।কথাটা বলে সাবানটা পাশে রাখতে যাবো আমার হাত থেকে পরে যায় সাবান।আমি উঠাতে গেলে শব্দ পেয়ে হৃদ পেছনের দিকে ঘুরে তাকায়।আর আমি সাবানটা না উঠিয়েই বুকের উপর থেকে নিজের জামাটা ঠিক করে দিতে থাকি।হৃদ এই অবস্থায় আমাকে দেখলে যে কি করবে তা আমি খুব ভালো করেই যানি।তাকিয়ে দেখি হৃদের চোখদুটো একদম আমার দিকে।ও আমাকে ভেজা শরীরে এভাবে দেখলে যে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না।
ওদিক থেকে একপা দুপা করে আমার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে হৃদ।আর এদিকে আমি ভয়ে চুপসে যায়।হৃদ একদম আমার কাছে চলে এসেছে।ও আমার কাছে এসে আমাকে ছুতে যাবে অমনি আমি উল্টো দিকে ঘুরে যায়। হৃদ আমার পিঠের উপর থেকে ভেজা চুলগুলো সড়িয়ে দেয়। আর আমার পিঠে অসংখ্য চুমু খাই। তারপর আমাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। আমার গালটা শক্ত করে ধরে আর আমার ঠোঁট জোড়া নিজের ঠোঁটে বসিয়ে নেয়।কিছুক্ষণ পর আমার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে ছরি বলে আমার থেকে দূরে সরে যায় হৃদ।
আমি জানতাম হৃদ এমন কিছুই করবে।বাইরে খালাম্মা আছে ওকে কিছু বলতেও পারছি না।আমি আস্তে করে কাপড়টা নিয়ে ভেজা শরীরে ওয়াশরুম থেকে বাইরে চলে আসি।আর ওয়াশরুমের দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দিই।
একি ফুল ভেজা শরীরে রুমে কেন আসলি? খালাম্মা বসা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে জানতে চায় আমার কাছে।
আমি কিছু একটা ভেবে বলি, ওয়াশরুমে অনেকগুলো ইঁদুর দেখেছি খালাম্মা।আর আমি ইঁদুরকে খুব ভয় পাই।তাই বাইরে চলে এসেছি।এখানেই চেঞ্জ করবো।
খালাম্মা বলে, ঠিক আছে তুই চেঞ্জ করে বাইরে আয়! তারপর আমরা বের হবো। আর রাতে আসার সময় ইঁদুর মারা ওষুধও কিনে আনবো।
আমি মাথাটা ঝাকিয়ে ঠিক আছে বলি।
খালাম্মা বের হয়ে গেলে আমি রেডি হয়ে বাইরে আসি।খালু নিচে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছে। খালাম্মা গাড়ির পিছনের সিটে বসে আছে।আমি গিয়ে খালাম্মার পাশে বসি।
গাড়ি চলছে,,, আমি খালাম্মাকে জিজ্ঞাসা করি, আমরা হসপিটালে কেন যাচ্ছি? কারও কি কিছু হয়েছে?
খালাম্মা বলে, বাচ্চাটার জন্য যাচ্ছি। এতোদিন আমাকে দিয়ে বাড়িতে অনেক কাজ করিয়েছে।এর জন্য বাচ্চার শারিরীক গঠনে যেন কোনো কমতি না থাকে।বাচ্চাটা সুস্থ ও স্বাভাবিক ভাবে যেন পৃথিবীতে আসে সেজন্য ডাক্তারে কাছ থেকে খাবারের লিস্ট তৈরি করে আনবে।কখন কি খাবার আমাকে খেতে দেয়া হবে সেটা।
চলবে,,,,,,