টক্সিক_রিলেশনশীপ পর্ব ১২

#টক্সিক_রিলেশনশীপ
||১২তম পর্ব||
-ঈপ্সিতা শিকদার
“বড় সাহেব খান বাড়িতে না কি কে বা কারা যেন এসেছে গতকাল? খুব সম্ভবত নিয়াজ খান আর নুসরাত মোস্তফার একমাত্র ছেলেই। এমন কী তাদের মাঝে দুটো মেয়েও ছিল সাথে। আরেকটা কথা খান বাড়ি থেকেই মনে হয় একটা গাড়ি সদর হাসপাতালে গেছে। আর সেই গাড়িতে থাকা এক মেয়ের বাচ্চা হয়েছে সেই হাসপাতালে।”

রাগ প্রকাশে টেবিলে শব্দ করে এক থাপ্পড় মারেন অজানা মধ্যবয়স্ক লোকটি। তাঁর চোখে-মুখে তীব্র আক্রোশ।

“এমন তো নয় নিয়াজের ছেলে ফাজের সন্তান ভূমিষ্ঠ হয়েছে। তাহলে তো খুব বড় ক্ষতি হতে চলেছে আমার! এটা আটকাতে পারে একমাত্র মৃত্যু। আমার রাস্তায় যে আসবে তার মৃত্যুই কাম্য।”

কথার মাঝেই অলঙ্কৃত কালচে লাঠিতে ভর দিয়ে এক বৃদ্ধা প্রবেশ করে কক্ষে। মধ্যবয়স্ক পুরুষটির মুখশ্রীতে রাগের মাঝেই বিনয়ী ও নম্র ভাব ফুটে উঠে।

“আম্মা আপনি আসতে গেলেন কেন? কিছু লাগলে আমাকে বলতেন।”

“বলি বাঁচবি কয়দিন ব্যাটা? হিসাব দিতে পারবি তো সব অপকর্মের উপরওয়ালার কাছে? ওরা তো তোরই আপন জন, পর না।”

মধ্যবয়স্ক পুরুষটির চোখে-মুখে বিরক্তি দেখা গেল, তবুও মুখে কিছু বললেন না। এই নারীটি যে তাঁর জীবনে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত।

___

“আমাদের বের হতে হবে এখান থেকে যত দ্রুত সম্ভব। তুই গাড়ি বাইর কর, আমি চৈতালি, নাহিবা বাবু আর বাসন্তীকে নিয়ে আসছি।”

অস্থির চিত্তে বলল নায়িম। অনিমেষ তার কথার আগা-মাথা বুঝে উঠতে পারল না। সবই তো ঠিক ছিল, হুট করে কী হলো এই ছেলের?”

“বাবুর নাম নাহিদা রাখলি কখন? আর এককটা দিন তো ভাবীকে অবজার্ভেশনে রাখা দরকার। এত তাড়া কীসের?”

“যা বলছি তা কর তো। গ্যাঁজাইস না!”

ধমকিয়ে উঠে নায়িম। তাকে বেশ চিন্তিত ও গুরুগম্ভীর দেখাচ্ছে। বন্ধুর মুখশ্রীর ভাব ও বচন ভঙ্গি দেখে অনিমেষ আর কিছু বলে না। মাথা দুলিয়ে গাড়ি বের করতে বের হয়।

নায়িম দ্রুত এনআইসিইউ থেকে নাহিবাকে নিয়ে চৈতালির কোলে দেয়, আর অর্ধচৈতন্য বাসন্তীকে নিজের কোলে তুলে নিয়ে হাসপাতাল ছেড়ে গাড়িতে চড়ে বসে।

চৈতালি নিজের কোলে থাকা ছোট্ট শিশুটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে। মনে ছোট ছোট রঙিন স্বপ্ন বুনে ফেলছে।

“কী ছোটো ছোটো হাত-পা, রক্তিম দুটো অধর! ইশ! আমার যদি এমন একটা বাচ্চা থাকত!” নিজের খামখেয়ালি ভাবনার সাথে বাস্তবতাও মনে পড়ে যায়। চেহারায় আঁধার নেমে আসে, আঁখি জোড়ার সম্মুখে এক ঝাঁক শূণ্যতা।

গাড়িটা ধীরেধীরে এগিয়ে চলেছে নিজের পথে। নায়িম জানালা দিয়ে হাসপাতালের দিকে তাকালে পঞ্চাশ-ষাট জন গুণ্ডাপাণ্ডা ঢুকছে হাসপাতালে, কারো হাতে হকি তো কারো হাতে ধারালো ছুড়ি। শব্দ করে এক শ্বাস ফেলে নায়িম।

“তুমি বড়ও হওনি তাতেই তোমার এত ক্ষতিসাধনের প্রচেষ্টা। এ-ই প্রমাণ প্রিন্সেস তুমি আমার চেয়েও নিষ্ঠুর ও কঠোর জীবন পেতে চলেছো। কিন্তু আমি তা হতে দেব না, তার জন্য যতটা নিষ্ঠুর হতে হয় আমার, আমি হব। তুমি দূরে থাকো, তবুও ভালো থাকো এটাই এই নিষ্ঠুর, পাষাণ বাবার কামনা।”

বাসন্তীর অর্ধচৈতন্য মুখখানার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে সে। কপাল হতে গাল অবধি কলমের বল পেনে আঁকা বাঁকা দাগের মতোন পড়ে থাকা কালো চুলটি সরিয়ে দেয়।

“আমার তোমাকে কষ্ট দিতে হতে পারে, বসন্ত। খুব বেশিই কষ্ট এবং লাঞ্ছনা লাগাতে পারি আমি। ভেবেছিলাম কোনোদিন কাউকে ভালোবাসব না। জীবনের এ পর্যায়ে এসে মনে হচ্ছে ভালোবেসে ফেলেছি আমি প্রথম সাক্ষাতেই। তবে তোমাকে নয়, আমার ছোট্ট অস্তিত্বকে। ভালোবাসা সবচেয়ে দামী, জীবনরত্নের চেয়েও। যদি ভাগ্য অনুকূলে না হয় তাহলে রাজকন্যাকে বাঁচাতে যেয়ে রাজ্যের রাণীই নিঃস্ব হোক।”

পৈশাচিকতা ফুটে উঠে নায়িমের মুখশ্রীতে। অনুভূতিহীন চুমু খায় নিজের বসন্ত কুমারীর ললাটে।

___

সকাল নয়টায় ঘুম ভাঙে তাহজিবের। ঘুম থেকে জেগেই বেশ তেষ্টা পায় তার, তবে তা ক্যাফেইন কিংবা পানির নয়, নিকোটিনের ধোঁয়ার৷ চেইন স্মোকার যে সে।

বেডের পাশের ছোট্ট টেবিল থেকে সিগরেট আর লাইটার নিয়ে সিগরেট জ্বালিয়ে দুই ঠোঁটের ফাঁকে রাখে সে৷ আজ মন বেশ সতেজ তার, হাসি হাসি মুখ খানা। তার চোখজোড়া উৎসুক হয়ে আছে নায়িমের বিষয়ে ছাপানো খবরটি পড়ার জন্য।

কিন্তু এ কী এক অবস্থা! ফেসবুকে ঢুকে দেখে নামি-দামি সব পেজের কোথাও নায়িম সম্পর্কিত কোনো পোস্ট নেই। ‘গায়ক নায়িম’ লিখে সার্চ দেয় সে। দুয়েকটাই নিউস পায় নিজের কাঙ্ক্ষিত, কিন্তু তা অত্যন্ত নিম্ন মানের ও নতুন নিউস চ্যানেল থেকে পোস্ট করা হয়েছে।

মোবাইলটা ঠাশ করে মেঝেতে ফেলে “ড্যাম ইট!” বলে চেঁচিয়ে উঠে সে।

“কেন? কেন? কেন? কেন সবসময় নায়িম বেঁচে যায়? কীভাবে? মিডিয়াকে কন্ট্রোল করার শক্তি ও কই পায়? কই!”

তার কণ্ঠ ক্রমশ জোরালো হচ্ছে, একই হারে বাড়ছে রাগ, যা ঝড়ছে সে ঘরের জিনিসপত্রের উপর। কয়েক মিনিটেই পুরো বেডরুম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। বেডের সামনে রাগে ফোঁস ফোঁস করতে বসে পড়ে তাহজিব।

___

ধানমণ্ডি ফেরার পথে একের পর এক ম্যাসেজ নটিফিকেশন আসতে শুরু করে। ব্যাপারটা উপেক্ষা ফোন জ্যাকেটের পকেটে রাখে সে। এরপর কল আসে এক প্রডিউসার।

“তুমি কোথায় নায়িম? এসব কী শুনছি তোমার ব্যাপারে?”

একটু ঘাবড়ে যায় সে। তবুও দৃঢ়তা বিদ্যমান তার মাঝে।

“আমি তো বাসার বাহিরে। কেন?”

“তোমাকে কী সব নিউস ছেপেছে দুয়েকটা নিউস চ্যানেল! সবাই উড়া-ধুরা শেয়ার দিচ্ছে নিউসটা। ‘বাংলাদেশ টাইম’ (ছদ্মনাম) তুমি তাড়াতাড়ি নিউস চেক করো।”

“গায়ক নায়ক নায়িমের গাড়ি দেখতে পাওয়া গেছে সদর হাসপাতালের সামনে, সাথে ছিল এক অন্তঃসত্ত্বা নারী”

পড়তেই নায়িমের কপাল বেয়ে সূক্ষ্ম ঘাম বেয়ে পড়ে। বস্তুত, নিউস চ্যানেলটা এবং পেজটা নতুন ও ছোট সদস্য সংখ্যার হলেও নায়িমের নাম জুড়ে যাওয়ায়, অনেক শেয়ার করা হচ্ছে এবং রিচও বেশ বাড়ন্ত পোস্টটির। এবার তবে কী করবে নায়িম? আড়ালে রাখতে পারবে তো সত্য না কি ভেঙে পড়বে তার মিথ্যের রাজপ্রাসাদ!”

চলবে…
এখন থেকে গল্প রেগুলার পাবেন, অ্যাসাইনমেন্টের ঝামেলা গতকাল শেষ হয়েছে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here