টুকরো স্মৃতির অতলে পর্ব -০৫

#টুকরো_স্মৃতির_অতলে ❤
#পর্ব_০৫
লেখনীতেঃআহানিতা

‘কিরে থেমে গেলি কেন মেহুল?কি বলছিলি?বল।’

অর্কভাই দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়েই বললেন কথাটা। আমি সরু চোখে তাকালাম।উনি ঠিক এই মুহুর্তে না আসলে কি হতো নাহ?বিয়ে হলে উনার কি স্বার্থ?কি এমন প্রয়োজন যার জন্য উনি বিয়েটা ভাঙ্গতে দিচ্ছেন নাহ?আমার চোখ টলমল করে উঠল মুহুর্তেই।ইশা আপু থাকতে উনাকে আমাকেই কেন বিয়ে করতে হবে?কেন?চোখমুখ কালো করেই উনার দিকে তাকালাম।দাঁত মুখ খিচে নিজের মধ্যে সবটুকু শক্তি সঞ্চয় করতে ব্যস্ত হলাম।যেভাবেই হোক কথগুলো বলতেই হবে আমাকে।বিয়েটা হতে দেওয়া যাবে নাহ।কিছুতেই নাহ।আমি কয়েবার নিঃশ্বাস ফেলেই উনার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ হ্য্ হ্যাঁ বলছি।’

রাতুল আঙ্কেল চোখের চশমাটা পরিষ্কার করে নিলেন। চোখে লাগিয়ে আমার দিকে স্থির হয়ে তাকালেন।আমার বলা প্রথম কথাগুলোর মানে না বুঝেই হয়তো ভ্রু কুঁচকালেন।হালকা কেঁশেই বলে উঠলেন,

‘ মেহুল মা?তুই সত্যিই এই বিয়েতে রাজি না?’

আমার নিঃশ্বাস এবার ঘন হলো।ভয়ে বার কয়েক ঢোক গিললাম।একবার অর্কভাই আরেকবার আঙ্কেলের দিকে তাকিয়েই জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিজালাম।মিনমিনে চোখে তাকিয়েই কাঁপা কন্ঠে বললাম,

‘ হ্ হ্যা্ হ্যাঁ আঙ্কেল।’

আঙ্কেলের কপালে ভাজ ফুটল মুহুর্তেই।আমার দিকে তাকিয়েই অর্কভাইয়ের দিকে তাকালেন উনি।উনাদের চোখে চোখে কোন কথা হলো কিনা জানা নেই আমার তবে তার পরপরই আঙ্কেল বলে উঠলেন,

‘ কিন্তু তোদের বিয়েটা তো হচ্ছেই মেহুল।এই সময়টা তো তোদের বিয়েটা নিয়ে আর অন্য কিছু ভাবার সময় নয় মেহুল মা।’

আমি চোখ টলমল করে তাকিয়ে রইলাম আঙ্কেলের দিকে।উনিও?উনিও জোর করে উনাদের সিদ্ধান্তটা ছাপিয়ে দিচ্ছেন আমার উপর?কেন?কি এমন দোষ আমার?আমার জায়গায় যদি আহি হতো পারত জোর করে বিয়ে দিতে? সত্যিই পারত কি?আমার চোখের কোণে জল আসতেই আঙ্কেল আবারও বলে উঠলেন,

‘ তুই হয়তো ভাবছিস আহিকে এভাবে জোর করতাম কিনা কখনো নিজের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে।তাই নাহ?সত্যি বলতে করতাম নাহ।কখনোই আহিকে জোর করতাম নাহ আমি।কিন্তু তোকে করছি।কেন জানিস?তুই অর্ককে ভালোবাসতি,বাসিস আর আমি জানি এভাবেই ভালোবাসবি।কি?ঠিক তো?’

আমি চমকে তাকালাম।আমি অর্কভাইকে এখনো ভালোবাসি?সত্যিই?একটা সময় পর্যন্ত ভালোবাসতাম উনাকে আমি এটা ঠিক কিন্তু এখন ও ভালোবাসি?নাহ!এখন শুধু এবং শুধু ঘৃণা করি আমি উনাকে।ঘৃণা।ভালোবাসাটা উনার প্রাপ্য নয়।কিছুতেই নাহ।আমি আঙ্কেলের দিকে একবার তাকিয়েই আচমকা আৎকে উঠে পেছন ঘুরে তাকালাম।অর্কভাই শুনে নেননি তো আমি উনাকে ভালোবাসি কথাটা?নাহ!এত সহজে উনার সামনে আমি ছোট হতে চাই নাহ।কোনভাবেই নাহ।উনি যেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেখানে মাথা ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখলাম উনি নেই।আমি জোরে নিঃশ্বাস ফেললাম। তারপরই ঠোট টেনে বলে উঠলাম,

‘ আঙ্কেল আমি অর্কভাইকে ভালোবাসি নাহ।এটা আপনার ভুল ভাবনা।হ্যাঁ একটা সময় আমি উনাকে ভালোবাসতাম আঙ্কেল।কিন্তু কি বলুন তো।ভালোবাসাটা বোধ হয় সবসময় একইরকম থাকে নাহ।আমি উনাকে ভালোবাসতাম কিন্তু উনি তো বাসতেন নাহ আঙ্কেল।উনি অন্যজনকে ভালোবাসতেন এবং এখনও বাসেন।আর আমার দিক থেকে এখন উনার জন্য কোন ভালোবাসা নেই আঙ্কেল।আমি উনাকে এখন আর ভালোবাসি নাহ। কোনভাবেই ভালোবাসি নাহ।শুধু ঘৃণা করি আমি উনাকে। শুধু এবং শুধু।’

আঙ্কেল মুচকি হাসলেন।সামনের চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে মুখের সামনে ধরেই বলে উঠলেন,

‘ আমার সাথে মিথ্যে বলা না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু তুই নিজের সাথেই নিজে মিথ্যে বলছিস মা?শোন?ঘৃণা যেখানে আছে সেখানে ভালোবাসাও আছে।একটু পরখ করে দেখ, পেয়ে যাবি।’

‘ নাহ,ভালোবাসি নাহ।উনাকে ভালোবাসি নাহ আমি।কেন বুঝতে চাইছেন নাহ আঙ্কেল?’

‘ মেহুল মা?তোকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখেছি।তোর কি মনে হয় আমি তোকে তোর বাবা মায়ের থেকে এটুকুও কম চিনি?হ্যাঁ যদি কম চিনেও থাকি তবে এই বিষয়ে আমি নিশ্চিত।আমি জানি তুই অর্ককে ভালোবাসিস।আমি তোর চোখে ওর জন্য ভালোবাসা সেইদিনও দেখেছি আজও দেখি।তাই বলছি, বিয়েটা মেনে নে মা।পরে নাহয় তুই ধুঁকে ধুঁকে মরবি মা।’

আমি বিস্মিত চোখে তাকালাম।ধুঁকে ধুঁকে মরব?হ্যাঁ হয়তো।ধুঁকে ধুঁকেই তো মরেছি আমি এই দুইটা বছর।জীবনে সব আনন্দ থাকলে উনি নামক শূণ্যতাটা সবসময় উপলব্ধি হতো যেন আমার। কিন্তু ঐ যে, উনার সামনে মাথা নত করা যাবে নাহ।অপমানিত হয়ে ফিরে আসা মানবী হয়ে উনার সামনে কি করে মাথা নত করি আমি?আমার কি আত্নসম্মান নেই?ভালোবাসার জন্য কি আত্নসম্মান বিসর্জন দিব আমি?উনি যেমন বিয়েতে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আমায় আমিও ফিরিয়ে দিব।কোনভাবেই বিয়ে করব নাহ উনাকে।কোনভাবেই নাহ।আমি কয়েক সেকেন্ড চুপচাপ বসে থাকলাম।বারকয়েক নিঃশ্বাস নিয়েই আঙ্কেলের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুড়লাম,

‘ কেবল আমি উনাকে ভালোবাসি বলেই কি এই বিয়েটা দিতে চান আপনারা সবাই?’

উনি হাসলেন।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন,

‘ স্বীকার করলি ভালোবাসিস অর্ককে?’

আমি শক্তকন্ঠে বললাম,

‘ নাহ!কোনভাবেই স্বীকার করছি নাহ।’

‘ বুঝলাম।’

আমি স্থির হয়ে বসে রইলাম।রাতুল আঙ্কেলের মাঝে অর্কভাইয়ের হালকা ছাপ আছে।অর্কভাইয়ের মতোই কথাবার্তা।কেমন যেন!বুঝলাম, রাতুল আঙ্কেল থেকেই এসব প্যাঁচালো স্বভাব, আচরণ অর্কভাই পেয়েছে।আমি ছোট শ্বাস ফেলেই মিনমিনে চোখে তাকিয়ে বললাম,

‘ আপনি কি জানেন অর্কভাই একজনকে ভালোবাসেন?অনেকদিন ধরে ভালোবাসেন উনি একজনকে।আপনি যদি আমি উনাকে ভালোবাসি জেনেই বিয়েটা দিতে চান এত করে তবে উনার সাথে উনার ভালোবাসার মানুষের বিয়ে কেন দিচ্ছেন নাহ আপনি?কেন?উনার ভালোবাসার দাম দিচ্ছেন নাহ কেন আপনি?আচ্ছা বাদ দিলাম সেই বিষয়টা!বিয়ের পর উভয়ের ভালোবাসাটা কি জরুরী নয় আঙ্কেল?এক্ষেত্রে এই বিয়েটা হলে কি তিনটে জীবন নষ্ট হচ্ছে নাহ আঙ্কেল?’

আঙ্কেল মৃদু হেসেই বললেন,

‘ নাহ!বরং দুটো জীবন বেঁচে যাবে মেহুল মা।’

আমি এবার বিরক্ত হলাম।উনি কি ইচ্ছে করেই মানতে চাইছেন নাহ এসব?এমনভাবে কথা বলছেন যেন সবকিছু কত সহজ। উনারা বাবা ছেলে কি একদল?আমার মাথায় আসল নাহ।হতাশ হয়ে সোফা থেকে উঠে পড়েই বিরক্তি নিয়ে পা বাড়ালাম।অর্কভাইয়ের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময়ই উনি শক্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,

‘ মেহুল?’

আমি স্থির দাঁড়িয়ে গেলাম।উনার একটা ডাকেই শীতল হয়ে গেল আমার শরীর।কেন ডাকলেন?এতক্ষনের কথাগুলো শুনে নেননি তো উনি?আমি চোখজোড়া ঘুরিয়ে উনার রুমে নজর দিতেই উনি এগিয়ে চেয়ার টেনে বসলেন।পরনে কালো রংয়ের শার্ট আর ব্লু জিন্স।হাতাগুলো গুঁটানো কনুই পর্যন্ত।চুলগুলো এলেমেলো হয়ে কপালের অর্ধেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।আমি সরু চোখে তাকাতেই উনি কঠিক কন্ঠে বলে উঠলেন,

‘ ভেতরে আয়।’

আমি স্থির দাঁড়িয়ে রইলাম আগের মতোই।উনার কথাটা শুনেও কথা মতো এগোতে মন চাইল নাহ আমার।উনি সেভাবে থেকেই কটমটে দৃষ্টি ফেলে তাকালেন আমার দিকে।দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,

‘ শুনতে পাসনি কি বলেছি?’

আমি হালকা পায়ে পা বাড়ালাম।উনার রুমে দু পা ফেলেই আবার স্থির হয়ে দাঁড়ালাম।উনার দিকে তাকিয়েই বলে উঠলাম,

‘ অর্কভাই?আপনার কাছে কখনো কিছু চাইনি আমি।চেয়েছি?চাইনি।তবে আজ একটা চাওয়া পূরণ করবেন অর্কভাই?প্লিজ?বিয়েটা ভেঙ্গে দিন প্লিজ অর্কভাই।’

অর্কভাই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে রইলেন।ঘড়িতে সময় দেখতে দেখতেই বলে উঠলেন,

‘ পসিবল নাহ।আজেবাজে আবদার করলে পূরণ করা সম্ভব নাহ এটা মাথা রাখা উচিত তোর মেহুল।’

সঙ্গে সঙ্গে টলমল করে উঠল আমার চোখ।উনি যদি আমায় ভালোবাসত তবে এই বিয়েটা করতে আমার কোন আপত্তি থাকত নাহ কিন্তু উনি তো আমায় ভালোবাসেননাহ।উনি ইশা আপুকে ভালোবাসেন।তবে থার্ড পার্সন হিসেবে আমিই কেন। দুইজনের সম্পর্কে আমাকেই কেন তৃতীয় ব্যাক্তি হিসেবে ডুকতে হচ্ছে?কেন?

‘ ভালোবাসতি আমায় তুই?’

হঠাৎ কথাটা শুনেই চমকে উঠলাম আমি।হাত পায়ে হালকা শিহরন বইল তৎক্ষনাৎ।উনি শুনে নিয়েছেন কি তবে কথাগুলো?জেনে গেলেন কি আমি উনাকে ভালোবাসি?

‘ কি হলো বল?ভালোবাসতি ?বাসিস ভালো আমায়?’

আমার চোখ বেয়ে এবার ফোটা পানি গড়াল গাল বেয়ে।চোখ বন্ধ করেই শক্ত গলায় বলে উঠলাম,

‘ না!নাহ!ভালোবাসি না আপনাকে আর নাহ ভালোবাসতাম কখনো আমি।’

অর্কভাই বাঁকা হাসলেন।চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বেরুতে বেরুতে বলে উঠলেন,

‘ বাট ইউ নো হোয়াট?আই নো দ্যাট ইউ লাভ মি।ইউ লাভ মি মিস মেহুলতা।তুমি স্বীকার করলেও ভালোবাসো আর না করলেও ভালোবাসো আমাকে।অনলি আমাকে।’

আমি আৎকে উঠলাম।অবাক হয়ে উনার দিকে তাকিয়ে ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম।কি বললেন উনি?কি বললেন?

‘ ওভাবে হা হয়ে দাঁড়িয়ে না থেকে বেরিয়ে। সবাই বেরিয়ে যাবে।কাম ফাস্ট! ‘

আমি ঠিক সেভাবেই কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে রইলাম।হৃৎপিন্ড ধুকবুক করছে। তবে কি আবারও হার মানলাম আমি অর্কভাইয়ের কাছে?আবার ও নিচু হলাম?আবারও উনি ই উঁচু হয়ে রইলেন?উনার মানটাই বজায় রইল তবে!আমার সেভাবে জমে যাওয়া রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার মাঝেই অর্কভাই আবার দৌড়ে আমার কাছে এসে দাঁড়ালেন।কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

‘ বিয়ে ভাঙ্গার প্রচুর তো চেষ্টা করলি।লাভ হলো কোন? তাই বলছি, দ্বিতীয়বার চেষ্টা করিস নাহ।ওকে?নয়তো তুই আবার বেকুব হয়ে ঠিক এভাবেই দাঁড়িয়ে থাকবি।তোর সাথে কেউ মত মিলাবে নাহ মেহুল।কেউ নাহ।দেখলি নাহ আমার বাবাও তোর পক্ষ নিল নাহ। আর তোর বাবা মা তো আরও নিবে নাহ আ’ম শিউর।বাকি রইল আম্মু।তোর কি মনে হয় আম্মুকে মানাতে পারলে বিয়ে ভাঙ্গতে পারবি তুই?ওকে তাও চেষ্টা করে দেখতে পারিস।তবে তোকে ফ্রী তে একটা সাজেশন দি?বিয়েটা মেনে নে তুই।তোর জন্যই ভালো হবে।আর নাহয় হিতে বিপরীতই হবে মেহুল।’

উনি কথাগুলো বলেই আবারও চলে গেলেন।আমি ঠিক সেভাবেই দাঁড়িয়ে রইলাম।এই মুহুর্তে সবকিছু বিরক্ত লাগছে আমার।সবটা বিরক্ত লাগছে!

.

শপিংমলে কেনাকাটা করে বাসায় ফেরার পথেই আমি আর আহি রিক্সায় উঠে বসলাম।আহিই বায়না করেছিল আমার সাথে গিয়ে বিয়ের আগ পর্যন্ত থাকবে।ও নাকি কনেপক্ষ সাঁজবে তাই।আমিও না করলাম নাহ।আহি মেয়েটা ভালোই।ওর সাথে আমার তেমন সখ্যতা না থাকলেও আজকে ঘুরেফিরে বেশ ভালোই লাগল।কিন্তু হঠাৎ আমার সাথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কেন ও?এসব ভেবেই রিক্সায় চড়ে বাসায় ফিরছিলাম।ঠিক তখনই কিছুটা দূরে রায়হানকে দেখতে পেলাম।আমি মৃদু শ্বাস ফেলেই রিক্সা থামাতে বললাম।রায়হানের সাথে আজ দুইতিনদিন দেখা হয়নি।না ভার্সিটি না রাস্তায় আর না অন্য কোথাও।কলেও কথা হয়নি সেদিনের পর।ওর বার্থডের পরে আমার রাগ করে আর রাগ দেখানো হলো না ওর উপর।ওর দেখাই পেলাম নাহ রাগ দেখানো তো দূরের কথা।আমি আহিকে বসতে বলে রিক্সা থেকে নামতে নিলেই আহিও নেমে পড়ল দেখলাম।মুখে হাসি ফুটিয়েই বলে উঠল,

‘ মেহুল আপু, ফুসকা খাবে?চলো ফুসকা খাব।’

আমি হাসলাম।মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলেই রায়হানের দিকে এগিয়ে গেলাম ও সহ।রায়হানের সামনে এসে দাঁড়াতেই ওর থমথমে চোখমুখ দেখেই ভ্রু কুঁচকালাম।তেজ নিয়ে বলে দিলাম,

‘ কি সমস্যা তোর?ফোন কল কিছু দিস নাহ কেন?ভার্সিটিতেও তো যাসনা মনে হয়।কি ব্যাপার বলতো?ছ্যাঁকা খেয়ে বাঁকা?নাকি অন্যকিছু?তোর সাথে দুইতিনদিন কথা, দেখা কিছুই হলো নাহ।’

রায়হান কপালের ঘাম মুঁছতে মুঁছতেই বলে উঠল,

‘ ওহ!খেয়াল হয় নি তোর সাথে কথা বা দেখা হয় নি কথাটা।’

‘ মানে?’

‘ কিছুই নাহ।একটু কাজ আছে।যেতে হবে।’

আমি খাম্বার মতো ওর সামনে গিয়ে কোমড়ে দুই হাত দিয়ে দাঁড়ালাম।ভ্রু উঁচিয়ে বললাম,

‘ তুই আমাকে ইগনোর করছিস রায়হান?’

রায়হান হেসে বলল

‘ ইগনোর?ইগনোর কেন করব তোকে?’

আমি চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে রইলাম।রায়হানের আচরণের কি বদল ঘটেছে?কথাবার্তা কি পাল্টেছে এই দুইতিনদিনে?আমি হালকা শ্বাস নিয়ে বলে উঠলাম,

‘ সেটা তো তুই জানিস রায়হান।’

‘ নাহ, তেমন কিছু নাহ।’

রায়হান মৃদু হেসেই কথাটা বলল।আমি সামনে দাঁড়িয়ে থাকায় পাশ কাটিয়ে অন্য পাশ দিয়ে যেতে নিতেই ধাক্কা খেল আহির সাথে।আহি ধাক্কা খেয়ে একপাশে পড়ে যেতে নিতেই রায়হান ওর ডানহাতটা ধরে নিল।হাতটা টেনে উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াতেই সরু চাহনি দিয়ে তাকাল আহির দিকে।তারপর আমার দিকে একবার তাকাতেই আমি দাঁত কেলিয়ে হেসে বললাম,

‘ ও, ও আহি।আমার হবু ননদ এবং বাবার বন্ধুর মেয়ে।’

রায়হান মৃদু হাসল।আহি ড্যাবড্যাব করেই তাকিয়ে ছিল রায়হানের দিকে।আকস্মিক পড়ে যাওয়াটা হয়তো এখনো বুঝে উঠতে পারেনি।রায়হান মৃদু কন্ঠেই বলে উঠল,

‘ আর ইউ ওকে?এক্চুয়েলি স্যরি।টের পাইনি পাশে কোউ আছে।তাড়াহুড়োতে চলে যাচ্ছিলাম তাই।’

আহি সেভাবে তাকিয়ে থেকেই বলে উঠল,

‘ এত তাড়াহুড়ো কেন যাচ্ছিলেনই বা কেন তবে?’

রায়হান মাথার চুলে হাত দিয়ে অপ্রস্তুত হাসল। তারপর বলল,

‘ একটা কাজ ছিল। ব্যস্ততায়, ‘

রায়হানের বাকি কথাটা শেষ হওয়ার আগেই আহি বলে উঠল,

‘ ইটস ওকে মিঃ।আমি কিছু মনে করিনি।মেহুল আপু?চলো ফুসকা খাব তো।’

আমি হেসে পা বাড়াতে বাড়াতেই রায়হানের হাত ধরে টেনে নিয়েই বললাম,

‘ চল ফুসকা খাবি। ইয়ে স্যরি, খাওয়াবি।চল, চল।’

#চলবে….

(কেমন হয়েছে জানাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here