তার শহরের মায়া ২ পর্ব ১৫+১৬

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১৫
#Writer_Liza_moni

এনি,,
তূর্য এনির কেবিনে গিয়ে ওর বেডের পাশে বসে এনি কে ডাকলো।

এনি চোখ পিটপিট করে তূর্যর দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের কোনা বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে এনির।এনির মুখে অক্সিজেন মাস্ক দেওয়া।হাতে ব্যান্ডেজ।এনি কে এই অবস্থায় দেখে তূর্যর খুব খারাপ লাগছে। মেয়েটা কেন এত অবুঝ?রাত প্রায় ১১ টা বেজে ৩৭ মিনিট।

এনি তুমি কেন এমন পাগলামি করো বলো তো? তোমার আব্বু আম্মুর কথা একবার ও ভেবে দেখেছো? তুমি তাদের একমাত্র সন্তান। তোমাকে হারিয়ে ফেললে ওনারা কি নিয়ে থাকবে বলো? তুমি তো যথেষ্ট বুদ্ধিমতি মেয়ে।

আমার তোমাকে চাই তূর্য।আর কিচ্ছু চাইনা। তুমি কেন আমাকে পছন্দ করো না? কেন আমাকে একটু ও ভালোবাসো না?কী করলে আমাকে তুমি ভালোবাসবে বলো না।

তুমি ছোট নও এনি। আচ্ছা বাদ দাও।আর কখনো এমন কাজ করবে না। কথা দাও,

তুমি আমাকে বিয়ে না করলে আমি এমন কাজ করবো।আরো হাজার বার করবো।

তূর্যর রাগ উঠছে এনির কথায়। কিন্তু নিজেকে এখন শান্ত রাখতে হবে। তূর্য গাল ফুলিয়ে ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। তারপর মুচকি হেসে এনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো,
আগে তুমি সুস্থ হয়ে নাও। তার পর আমরা এই সব বিষয় নিয়ে কথা বলবো।

কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেললেন এনির মা। ছোট থেকে তার পছন্দের সব কিছু পেয়ে গেছে এনি।বড্ড জেদি হয়েছে মেয়েটা। কিছু কিছু সময় মা বাবার অতি আশকারায় ছেলে মেয়ে উচ্ছান্ন যায়। চাওয়া মাত্রই সব সময় সব কিছু দিতে নেই। তূর্য কী সুন্দর আমার মেয়েটাকে শান্তনা দিয়ে দিলো।
.
.
ভার্সিটিতে গিয়ে অনু রিফার পিঠে ঠাসস করে একটা থাপ্পড় মেরে বললো,
যাবি আমার সাথে?

রিফা বুঝতে না পেরে বললো,
কোথায় যাবো?

মরতে।

আমার এত শখ নাই।এত তাড়াতাড়ি মরলে কেমনে হবে?

মৃত্যু আসলে আটকাতে পারবি না। এখন চল আমার সাথে।কেয়া কে ও ডেকে নে।

কেয়া ওর বয় ফ্রেন্ড এর সাথে আছে।নয়া নয়া প্রেম।

নয়া নয়া প্রেম কখন?পূরোনো না?

ঐ হলো একটা।আমার আর শাকিলের মতো তো আর পাঁচ বছরের প্রেম না।

আচ্ছা বাবা বাদ দে। এখন চল তো আমার সাথে।
অনু রিফার হাত ধরে হাঁটতে লাগলো।

কোথায় যাচ্ছি তা তো বল,

হসপিটালে।

রিফা বুকে থুতু দিয়ে বললো,
আল্লাহ বাঁচাও। আমি হসপিটালে যাবো না। হসপিটালের ভেতরে কেমন একটা গন্ধ আছে।যেটা নাকে গেলে আমি বমি করে ভাসিয়ে দিবো।

অনু একটা রিকশা দাঁড় করিয়ে রিফার দিকে তাকিয়ে বললো,
একদম নাটক করবি না।মাক্স পরে নে।
.
.
হসপিটালে ডাক্তারের সামনে হাতে রিপোর্ট নিয়ে বসে আছে অনু। একটু আগেই ডাক্তার স্পষ্ট করে বললেন অনুর রক্ত শুন্যতা আছে।

শুনুন এত ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই।
আপনি যদি চান বা আপনার পরিবার যদি চায় তাহলে আমরা আপনাকে রক্ত নিতে সাহায্য করতে পারি। আপনার উচিত এই মাসেই এক ব্যাগ রক্ত নেওয়া।কারন আপনার শরীরে রক্তের পয়েন্ট কম।আই থিংক আপনি ঠিক মতো খাবার খান না।ফলের আশে পাশে ও যান না?না হলে এত চিকন মানুষ হয়?

ডাক্তারের কথা শুনে অনু মনে মনে বললো,
শালার ভূড়িয়ালা টাকলা ডাক্তার ও মজা নিলো?আজ চিকন বলে ইসস।

কিন্তু ডাক্তার আমাদের ফ্যামেলিতে o+ রক্ত কারো কাছে নেই। মানে আমার সাথে কারো রক্ত মিলে না।

এই বিষয়ে নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না। আপনি রেট কিসেন সোসাইটি তে যোগা যোগ করতে পারেন।তারা সাধারণ মানুষকে রক্ত দিয়ে সাহায্য করেন।

Thank you doctor uncle। আমি আমার আম্মু আব্বুর সাথে কথা বলে আপনাকে জানাবো।

হ্যাঁ অবশ্যই। রিপোর্ট কার্ডে আমার নাম্বার আছে। আপনি কল করে কনফার্ম করে দিয়েন।যে আপনি রক্ত নিতে চান।আর হ্যাঁ রক্ত না পেলে ও আমাকে জানিয়ে দিবেন। আমি যথা সাধ্য চেষ্টা করবো ভালো রক্ত যোগাড় করতে।

হ্যাঁ অবশ্যই। আসি আঙ্কেল। আসসালামুয়ালাইকুম।
অনু ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে আসার পর একটা নার্স ডাক্তার সাখাওয়াত হোসেন কে জিজ্ঞেস করলেন,
আচ্ছা স্যার,
আপনি মেয়েটাকে এত সাহায্য করতে চাইছেন কেন? না মানে আমি যত টুকু দেখেছি আপনি কখনো কোনো রোগি কে এই ভাবে সাহায্য করতে চান নি। তাহলে?

ডাক্তার সাখাওয়াত হোসেন দীর্ঘ শ্বাস ফেলে চোখ থেকে চশমাটা খুলে টিস্যু দিয়ে মুছতে মুছতে বললেন,
একটু আগে যে মেয়েটা এসেছিল।ওর বয়সী আমার ও একটা মেয়ে ছিল। ভয়াবহ একটা বাস এক্সিডেন্টে আমার মেয়েটা মারা যায়।তাও রক্তের অভাবে। আমি তখন দেশে ছিলাম না।তাই আমার মেয়েকে বাঁচাতে পারিনি।
.
.
বেলা ১১টা। তূর্য এখন ও পরে পরে ঘুমাচ্ছে। গতকাল বেশ রাত করে বাড়ি ফেরায় তূর্যর উপর বোম হয়ে আছে তূর্যর মা।ছোট থেকেই ছেলে মেয়েদের যেমন আদর করেছেন ঠিক তেমন শাসন ও করেছেন। রাত প্রায় আড়াইটা বাজে তূর্য বাড়ি ফিরে।এত রাত সে করতে চায়নি। কিন্তু এনির কান্না কাটি করে তূর্য কে আসতেই দিতে চায় নি।আর তার জন্যই বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গেছে।

রান্না ঘর থেকে তূর্যর মা চেঁচিয়ে যাচ্ছেন,
নবাবের ছেলে আমার।রাত করে বাড়ি ফিরবে আর সারাদিন বিছানায় পড়ে পড়ে ঘুমাবে। কাজ কর্ম তো কিচ্ছু নাই।সারা দিন টই টই করে ঘুরে বেড়াবে আর বাপ ভাইয়ের হোটেলে বসে গিলবে।নবাব পুত্র আসছেন আমার বাড়িতে।

মায়ের বক বক শুনে ঘুম ভাঙ্গে তূর্যর। মিনিট দুয়েক চুপ করে শুয়ে রইলো সে।আর চিন্তা করতে লাগলো মা এত ফায়ার হয়ে আছে কেন?

তূর্য ব্যাপারটা বুঝার জন্য জোরে জোরে কয়েক বার জুঁই কে ডাকতে লাগল।
জুঁই ফুল,ঐ জুঁই ফুল।

তূর্যর গলার স্বর শোনার জন্যই যেন ওত পেতে বসে ছিলেন তূর্যর মা।যেই তিনি তূর্যর গলার স্বর শুনতে পেয়েছেন তখনই শুরু হয়ে গেল তার একশেন।খুন্তি হাতে তেড়ে আসেন তূর্যর রুমের দিকে।

রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ বন্ধ করেই তূর্য বলতে লাগলো,
জুঁই ফুল মা এত ফায়ার হয়ে আছে কেন? এমন করে চিল্লাচ্ছে যেন আমার কানের সাথে সাথে এখনি সব কিছুর কান বয়রা হয়ে যাবে।

তূর্যর মা ফ্যান অফ করে দিলেন। তূর্য বিরক্তিকর শব্দ করে বললো জুঁই এর বাচ্চা ফ্যান কেন অফ করলি?

তূর্যর মা নিচু গলায় বললো,
নবাব জাদা আপনার মতো কি আমার মেয়ে কাজ কাম বাদ দিয়ে আপনার হুকুম শোনার জন্য বসে আছে?

তূর্য দরফরিয়ে শোয়া থেকে উঠে দুই হাত দিয়ে চোখ ডলে মায়ের দিকে তাকালো। মায়ের হাতে খুন্তি দেখে তূর্য বিছানা থেকে লাফ দিয়ে নেমে কোনায় চলে গেল।

আরেএএ আম্মু,
আমি না এখন বড় হয়ে গেছি? তুমি আমাকে মারার জন্য খুন্তি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছো?এত পাষান আমার মা জননী?
এটা আমি কিছুতেই মানতে পারছি না।

কয়টা বাজে দেখেছিস?এত রাত করে বাড়ি ফেরার অনুমতি কে দিয়েছে তোকে? সারা রাত কই ছিলি তুই? আমার চিন্তা হয় না?

তূর্য কয়েক পা এগিয়ে আসতেই তূর্যর মা খুন্তি উঁচু করে ধরলেন। তূর্য পিছিয়ে গিয়ে বললো,
ওহ আচ্ছা এই ব্যাপার। তোমার কাছে যে আমি এখন ও বাচ্চা ছেলে সেটা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।
আসলে ব্যাপারটা হলো তোমাদের কে ঐ দিন একটা মেয়ের কথা বলছিলাম না ঐ মেয়েটা আমার জন্য সুইসাইড করতে গেছিলো।করছিলো ও। হাতের রগ কেটে কী একটা অবস্থা।মরতে মরতে বেঁচে গেছে।ঐ মেয়ের জন্যই তো এত রাত হলো।

কী সাংঘাতিক মেয়ে রে বাবা। কলিজা কত বড়। সুইসাইড করতে গেছিলো।মা গো মা। আমাকে মেয়েটার সাথে দেখা করাইস তো।

তূর্য মায়ের কাছে এসে মায়ের পাশে বসে বললো,
কেন? তুমি কি করবা?

ওই মেয়েরে একটু দেখমু।

তূর্য বা হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো কে এলোমেলো করে দিয়ে বিড়বিড় করে বললো কেনো যে বলতে গেলাম? এখন যদি এনির অভিনয়ে মা গলে যায়। তাহলে কি হবে?যে করেই হোক মাকে এনির সাথে দেখা করাবো না। উটকো সব ঝামেলা আমার কপালেই লেখা থাকে কেন বুঝি না।
#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১৬
#Writer_Liza_moni

হসপিটাল থেকে বের হয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনু আর রিফা রিকশার জন্য অপেক্ষা করছে।রিফা হঠাৎ অনুর ডান হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,

তুই এমন কেন রে অনু? নিজের একটু যত্ন নিতে পারিস না?

অনু রিফার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।তিড়িং বিড়িং করেই তো নিজের জীবনের সময় গুলো কেটে যাচ্ছে।এত যত্ন নেওয়ার কী আছে?

ঢং করোস?
রিফা মুখ বাঁকিয়ে অনুর কথা রিপিট করে বললো,
যত্ন নেওয়ার কী আছে? আমি মানুষ দেখছি। কিন্তু তোর মতো মানুষ দেখলাম না।

থাক আর জ্ঞান দিস না। রিকশায় উঠে বোস।
রিফা অনুর দিকে চোখ কটমট করে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে রিকশায় উঠে বসে।তা দেখে অনু আপন মনেই হাসে।

“তোমার কী ঐ মেয়েটার সাথে দেখা করতেই হবে আম্মু?”

এই খুন্তিটা দেখেছিস? একটা কথা এক বার বললে কানে যায় না?একশো বার বলতে হয়?

আরে আম্মু,
তুমি কখন থেকে এমন রনচন্ডি রুপ ধারণ করছো বলো তো? কথায় কথায় শুধু রেগে গিয়ে খুন্তি উঁচু করে ভয় দেখাচ্ছো।

তুই আজ বিকেলেই মেয়েটার সাথে আমাকে দেখা করাবি। আমি ও একটু দেখতে চাই কোন মেয়ে তোর মতো এই বাঁদর ছেলের জন্য মরতে গেছিলো।

আম্মু তুমি তোমার এই কিউট ছেলে কে বাঁদর বলতে পারলা? একটু ও কী কলিজায় লাগেনি তোমার? তুমি এমন ভিলেন চরিত্রে আসলা কোন দিন থেকে?

মিসেস তৃনা তূর্যর দিকে চোখ পাকিয়ে তাকিয়ে গলার স্বর উঁচু করে বললেন,
যদি তুই মেয়েটার সাথে আমার দেখা না করিয়েছিস। তাহলে তোর পিঠে আমি এই খুন্তি ভাঙ্গবো এই আমি বলে দিলাম।
বলেই মিসেস তৃনা তূর্যর রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।

মায়ের চলে যাওয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বিড় বিড় করে তূর্য বলে উঠলো রিনা খান কে হার মানাবে আমার মা। নাম্বার ওয়ান ভিলেন মিসেস তৃনা। কাভার্ড থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াস রুমে চলে গেল তূর্য। গোসল করে এখন একটা মেয়ে খুঁজতে হবে।এনির সাথে এই জীবনে ও দেখা করাবো না।ন্যাকামিতে গলে গেলে পড়ে আমার গলায় ফাঁসির দড়ি থুরি এনি নামের দড়ি ঝুলবে।যা আমি একদম চাই না।

আমি ফাইসা গেছি মাইনকা চিপায়,
গানটা গাইতে গাইতে ওয়াস রুমে ঢুকে ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে দিলো তূর্য।

ম্যাসে এসে অনুর মুখটা খুশিতে উজ্জ্বল হয়ে গেল।রিয়ানা এসে গেছে।অনু খুশিতে গদগদ হয়ে রিয়ানাকে জড়িয়ে ধরলো।তার এত খুশি হবার কারন হলো,
এখন আর তাকে সব কাজ করতে হবে না।রিয়ানা আর সে মিলে সব কিছু অল্প সময়ের মধ্যে শেষ করে ফেলতে পারবে। রান্নার মতো এত ঝামেলার কাজ অনু কে আর তেমন একটা করতে হবে না বলে আনন্দে লাফাতে মন চাচ্ছে তার।

বাপরে এত খুশি হইছো কেন অনু?

আমাকে আর একা একা থাকতে হবে না। তুমি চলে আসছো না।একা একা বোর হতাম খুব।

আচ্ছা।রিয়ানা অনুর হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,
তোমার হাতে এটা কিসের রিপোর্ট অনু?

অনু বিছানায় ব্যাগ আর হাতের রিপোর্ট টা রেখে চুলে খোঁপা বাঁধতে বাঁধতে রিয়ানার উদ্দেশ্যে বললো,
আর বইলো না। গতকাল মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম।তাও কোথায়? লাইব্রেরীতে। শরীর প্রচন্ড দুর্বল ছিল। আমার একজন পরিচিত মানুষ আবার সম্পূর্ণ পরিচিত নয় এমন একজন মানুষ আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়।আর সেখানে টেস্ট করায়।আজ রিপোর্ট দিয়ে দিলো। রক্তশূন্যতা দেখা দিয়েছে।শরীরে রক্তের পয়েন্ট কম।

অনুর কথা শুনে রিয়ানা অনুর পাশে গিয়ে বসে বললো,সেকি অনু। তোমার খুব তাড়াতাড়ি রক্ত নেওয়া দরকার। আমার এক কাজিন ছিল তার ও রক্ত শূন্যতা ছিল।এই তো তিন মাস আগে তার বাচ্চা হওয়ার সময় রক্তের জন্য মারা যায়।
তার এক সপ্তাহ পর সেই বাচ্চা টা ও মারা যায়।

রিয়ানার কথা শুনে অনুর বুকের মাঝে ধক করে উঠলো। নিজের অজান্তেই কেমন ভয় হতে লাগলো তার।

রিয়ানা ব্যাপার টা বুঝতে পেরে অনুর ডান হাতের উপর নিজের হাত রেখে হালকা চেপে ধরে অভয় দিয়ে বললো,
ভয় পাওয়ার মত কিছু না। তুমি ঠিক মতো নিজের যত্ন নাও।আর ডাক্তারের পরামর্শ মতো চলো। ইনশাআল্লাহ তোমার কোনো সমস্যা হবে না।

অনু রিয়ানার মুখের দিকে তাকিয়ে জোর পূর্বক মুচকি হেসে উপর নিচ মাথা নাড়ল।

গলির পথের সরু একটা রাস্তার পাশে বাইক থামিয়ে বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তূর্য।বিকেল সাড়ে চারটা বাজে। তূর্যর বেস্ট ফ্রেন্ড অর্ক কে সেই কখন কল করে জানিয়ে দিয়েছে ওর সাথে দেখা করতে। আধঘন্টা পার হয়ে গেছে কিন্তু অর্কর আসার এখনো খবর নেই।

তূর্য দুই আঙ্গুল দিয়ে কপাল ঘষে বিরক্ত হয়ে বললো হারামিটার আসার এখনো খবর নেই।মেয়ে মানুষের থেকে ও দেখছি বেশি দেরি করে। কুত্তাডারে পাইলে আজ কানের নিচে দিবো দুই টা।

টিউশনি পড়া শেষ করেই অনু আর রিয়ানা ম্যাসে ফিরছিল। গলির পথে তূর্য কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলো অনু। কিন্তু আগ বাড়িয়ে কোনো কথা বলতে যায়নি সে।

এদিক সেদিক তাকানোর সময় তূর্যর চোখ পড়লো অনুর দিকে।এই সময় অনু কে দেখে একটা টেডি স্মাইল দেয় তূর্য।মেঘ না চাইতেই জল।

অনু আর রিয়ানা কথা বলতে বলতে তূর্য কে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় তূর্য বলে উঠলো,
এই পরমাণু দাঁড়ান।

রিয়ানা অনুর কানে ফিসফিস করে বললো
পরমাণু কে?

আমাকে বলছে। একটু দাঁড়াও। কেন ডাকছে শুনে আছি।
রিয়ানা মাথা নেড়ে সায় দিল।

এই আপনাকে বলছি না যে আমাকে পরমানু বলে ডাকবেন না।তার পর ও আপনি কেন ডাকলেন?

তূর্য ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
আমার ভালো লাগে তাই।

কেন ডাকলেন?সেই কারন টা বলুন।

আপনার শরীরের কী অবস্থা এখন? রিপোর্ট এনেছেন? আমি তো একদমই ভুলে গিয়েছিলাম। আপনার মনে ছিল তো রিপোর্ট এর কথা?নাকি আমার মতো ভুলে বসে আছেন?

একটু কমিয়ে কথা বলতে পারেন না? শরীর ভালো আগে থেকে। রিপোর্ট নিয়ে এসেছি।

তূর্য আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইলো,
কী এসেছে রিপোর্ট এ?

রক্ত শূন্যতা।

অনুর কথা শুনে তূর্য কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। তার পর ধীর গলায় বললো, রক্ত নিলে তো সব ঠিক হয়ে যাবে তাই না?ডাক্তার কী বলেছে?

ডাক্তার ও রক্ত নিতে বলেছেন।আর ফল খেতে বলেছেন।যে সব ফল খেলে রক্ত হয় সেই ফল গুলো।

তূর্য একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।যাক তেমন কিছু না হলেই ভালো। এমন সময় তূর্যর মোবাইলে কল আসে।প্যান্টের পকেট থেকে মোবাইল টা বের করে দেখে মায়ের নাম্বার থেকে কল এসেছে। তূর্যর বুঝতে অসুবিধা হলো না মা কেন কল করেছে।

কল রিসিভ করেই মাকে কিছু বলতে না দিয়ে তূর্য বলে উঠলো,
দশ মিনিট অপেক্ষা করো। আমি আমার সাথে করে নিয়ে আসতেছি।
বলেই কল কেটে দিল। তারপর অনুর দিকে তাকিয়ে বললো,
আমাকে একটা হেল্প করবেন প্লিজ?

করবো না কেন? গতকাল আপনি আমাকে হেল্প করে ছিলেন।আজ আপনা কে হেল্প করবো না তা কী করে হয়?কি করতে হবে বলুন?

তূর্যর এক কথায় যে অনু রাজি হয়ে যাবে তা ভাবতেই পারেনি সে।ভালোই হলো। তূর্য মুচকি হেসে বললো, আমার সাথে আমাদের বাড়িতে যেতে হবে আপনাকে। আমার মায়ের সাথে দেখা করেই আবার ফিরে আসবেন। না মানে আমি নিজেই পৌঁছে দিবো।

অনু ঘাড় ঘুরিয়ে এক পলক রিয়ানার দিকে তাকালো।রিয়ানা ও তার দিকেই তাকিয়ে আছে।অনু এবার তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
হঠাৎ আপনার মায়ের সাথে দেখা করতে হবে কেন?আসলে এই ব্যাপারটা ঠিক বুঝতে পারছি না।

তূর্য একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অনুকে এনি আর তার মায়ের সম্পূর্ণ ঘটনা বললো।অনু তাজ্জব বনে গেছে।হা করে তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। একটা মেয়ে যে কিনা এই লোকটার জন্য সুইসাইড করে মরতে মরতে বেঁচে গেছে সেই মেয়ের জন্য এই লোকের কোনো খারাপ লাগা কাজ করছে না। এমন ও মানুষ আছে দুনিয়ায়?

চলবে,,,, 🍁
চলবে,,,, 🍁

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here