তার শহরের মায়া ২ পর্ব ১৩+১৪

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১৩
#Writer_Liza_moni

তূর্যর কথা টা ঠিক বিশ্বাস হলো না ডাক্তারের। তিনি ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে কিছুক্ষণ তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

মেয়েটার এই হঠাৎ অসুস্থতায় আপনার চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে আপনার কাছের মানুষ মেয়েটা।

তূর্য ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
শুভাকাঙ্ক্ষী বলতে পারেন।এর বেশি কিছু না।এক এলাকায় থাকি।তাই চিনি কিন্তু নামটা ও জানি না আমি।

ডাক্তার তূর্যর কাঁধে হাত রেখে বললো,
সমস্যা না।জেনে যাবেন।সেলাইনটা শেষ হলেই নিয়ে যেতে পারবেন। শরীর খুব বেশি দূর্বল হওয়ায় ঘুমিয়ে আছে। কিছুক্ষণ পর ঘুম ভাঙলে খাবার খাইয়ে দিয়েন।আর হ্যাঁ, আগামীকাল সকালে এসে রিপোর্ট নিয়ে যাইয়েন।

বলেই ডাক্তার কেবিন থেকে বের হয়ে চলে গেলেন। তূর্য অনুর বেডের কাছে এগিয়ে এসে টুল নিয়ে বসলো। ক্লান্ত, ঘুমন্ত অনুর মুখে একটা স্নিগ্ধতার ভাব ফুটে আছে। দুনিয়ার সব চিন্তা ভুলে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে আছে অনু। তূর্য অনুর মুখের দিক থেকে চোখ সরিয়ে মোবাইলের দিকে নজর দিলো। জুঁই কে কল করে বললো,

জুঁই ফুল শোন,,
আমি তোর বই গুলো রাতে আসার সময় নিয়ে আসবো। এখন পারবো না।

আচ্ছা ঠিক আছে। তোর সময় হলে তুই নিয়ে আসিস। আমি চিল মুডে থাকি।মা কিছু জিজ্ঞাসা করলে সব তোর দোষ দিবো।বাই বাই।

অনু এখনো ঘুমিয়ে আছে।এই দিকে জোহরের আজান দিয়ে দিয়েছে। তূর্যর বেশ ক্ষিদা লাগছে।বসা থেকে উঠে এক পলক ঘুমন্ত অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে তূর্য কেবিন থেকে বের হয়ে গেল। উদ্দেশ্য হলো, সামনের একটা রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার খেয়ে অনুর জন্য ও নিয়ে আসা।

রেস্টুরেন্টে খাবার খেয়ে অনুর জন্য ও খাবার প্যাকিং করে নিয়ে আসলো তূর্য। কেবিনে ঢুকে দেখলো,অনু বেডে আধ শোয়া হয়ে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মুখটা কেমন মলিন হয়ে আছে।দেখে মনে হচ্ছে, মেয়েটা সত্যিই অনেক অসুস্থ।অনু শান্ত কন্ঠে তূর্য কে দেখে বললো,

আমাকে এখানে আপনি নিয়ে এসেছেন?

তূর্য অনুর বেডের উপর খাবার গুলো রেখে টুল টেনে বসে বললো,
হুম। আপনাকে তো আমি কিছুটা চিনি।তাই আর কী নিয়ে আসলাম।

অনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, অনেক ধন্যবাদ। হঠাৎ চোখ মুখ অন্ধকার হয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলাম। আমি তো ভীষণ ভয় পেয়ে গেছিলাম।মনে হচ্ছিল এই বুঝি আমি মরে যাবো।

ধুর।কী বলেন এই সব?বাদ দেন। আপনার জন্য খাবার নিয়ে আসছি খেয়ে নিন।

অনু তার ডান হাতের দিকে তাকালো। সেই হাতেই তো স্যালাইনের সুঁই ফুটিয়ে দিয়েছে বজ্জাত ডাক্তার।

সকালে শুধু দুই পিস পাউরুটি আর চা খেয়ে ভার্সিটিতে গিয়েছিল।আলসেমি করে রান্না করেনি।ক্ষিদা ও পেয়েছে ভীষণ। কিন্তু খাবো কি করে?

উনা কে কী বলবো?না থাক। চিনি না তো এরে।চিনলে নির্দিধায় বলে দিতাম।

কি হলো খাচ্ছেন না কেন? মোবাইলের স্ক্রিনে চোখ রেখেই বললো তূর্য।

অনু মিনমিনে গলায় বলল,
কী করে খাবো?

তূর্য অনুর দিকে তাকালো। কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে বললো,ওহ শিট। আমি ও না পাগল। আপনার হাতে তো ক্যানেলার লাগানো।হাত দিয়ে তো খেতে পারবেন না। ওয়েট আমি খাইয়ে দিচ্ছি।

অনু কিছু বললো না।খাইয়া আগে জীবন বাঁচাতে হবে। উনার হাতে না খাইলে আর কেউ নাই যে খেতে পারবি।সো চুপচাপ বসে উনার হাতেই খেয়ে নে।তোরি ভালো।

তূর্য হাত ধুয়ে নিয়ে খাবারের প্যাকেট খুলে অনু কে খাইয়ে দিতে লাগলো।এই প্রথম কোনো মেয়েকে নিজের হাতে তুলে খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। বুকের ভেতর কেমন অন্যরকম অনুভুতি হচ্ছে।

অনু চুপ করে শান্ত মেয়ের মতো খেয়ে যাচ্ছে।

খাবার খাইয়ে দেওয়ার পর তূর্য হাত ধুয়ে নিলো। খাবারের প্যাকেট গুলো ডাসবিনে ফেলে আবার অনুর পাশে এসে বসলো।অনু বার বার স্যালাইনের দিকে তাকিয়ে আছে। কখন শেষ হবে? এখন ও অর্ধেক বাকি।পুরোটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত ডাক্তার যেতে দিবে বলে মনে হয় না।

তূর্য অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
বোর হচ্ছেন ম্যাডাম?

তা আর বলতে,হাতটা ব্যাথা হয়ে গেল। বিরক্ত লাগতেছে রিতীমতো।

আচ্ছা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?

হুম বলুন।

আপনার নাম কি?আর আপনার বাড়ির লোকজন কোথায়?

একটার জায়গায় দুই টা কথা জিজ্ঞেস করলেন।
তূর্য হাসলো।

আমি অনু।

তূর্য অবাক হয়ে বললো,
অনু,মানে পরমানু।

ধেত পরমানু হতে যাবো কেন?অনুমেঘা রাজমিম।

বেশ সুন্দর নাম তো। কিন্তু অনেক বড়। তূর্য অনুর নামটা ভেঙ্গে ভেঙ্গে বললো অ নু মে ঘা।

জী অনুমেঘা।আর আমার পরিবার খাগড়াছড়ি তে থাকেন।

ওমা সে কি। খাগড়াছড়ি সেতো দূরে। আপনি ঢাকায় একা থাকেন?

হুম। পড়ালেখার জন্য।

ভেরি ব্যাড।একা একটা মেয়েকে এই শহরে একা থাকতে দেওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য ও অনেক বড় কলিজা লাগে।যেটা আপনার বাবা মায়ের আছে।

অনু মুচকি হেসে বললো,,
অনেক কষ্টে রাজি করিয়ে এসেছি। আব্বু আম্মু রাজি ছিলেন না আমি এই শহরে এসে পড়া লেখা করি।

যাই বলুন, আপনার আব্বু আম্মু অনেক চিন্তায় থাকেন আপনাকে নিয়ে।
বাই দা ওয়ে, আপনি যখন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলেন, তখন আপনার মোবাইলে অনেক গুলো কল এসেছিল।
দেখে নিতে পারেন।

আব্বু আম্মু আপু ছাড়া আর কেও দিবে না। কষ্ট করে আমার ব্যাগ থেকে মোবাইল টা বের করে দিননা প্লিজ।

তূর্য অনুর ব্যাগ থেকে মোবাইল বের করে অনুর হাতে দিল।১০ টা মিসড কল।চারটা আব্বু,তিনটা আম্মু আর তিন টা আপু।

অনু বাবাকে কল করলো। দুই বার রিং হতেই বাবা কল কেটে দিয়ে নিজেই ব্যাক করে অস্থির হয়ে বললেন, ঠিক আছিস মা?কল করলাম রিসিভ করিসনি কেন?

আমি গোসল করছিলাম তখন। মোবাইল সাইলেন্ট ছিল।সরি আব্বু।

আমি চিন্তায় শেষ।

চিন্তা করতে হবে না। আমি ঠিক আছি। আম্মু কেমন আছে?

ভালো।ধর কথা বল।

অনু মায়ের সাথে কথা বলে কল কেটে দিল। তূর্য এতক্ষণ মুখে হাত চেপে ধরে হাসছে।কী সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলে দিলো মেয়েটা।

অনু তূর্যর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
হাসছেন কেন?

দেখছি যে,মেয়ে মানুষ কত সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলে সব সামলিয়ে নিলো।

অনু নিজেও হাসলো।দু চারটে মিথ্যে কথা এমন বলতে হয়।না হলে আব্বু আম্মু চিন্তা করতে করতে শেষে ঢাকায় চলে আসবে।আর শুধু মেয়ে মানুষ না।ছেলে রাও মিথ্যে কথা বলে।

কই? আমি তো বাবা মায়ের সাথে মিথ্যা কথা বলতে পারি না।

পারেন না সেটা আপনার ব্যাপার তাওহীদ তূর্য।

তূর্য অবাক নয়নে অনুর মুখ পানে তাকিয়ে বললো,
আপনাকে তো আমি আমার নাম বলিনি। তাহলে কি করে জানলেন আমার নাম?

ঐ যে ঐ দিন সিএনজি তে গান গেয়েছিলেন। তার পর এক লোক জিজ্ঞেস করেছিলো আপনার নাম। তখন বলে ছিলেন। আপনার পাশেই তো বসা ছিলাম আমি।

ও মনে ছিল না ঠিক।

আপনি কিন্তু বেশ সুন্দর গান গাইতে পারেন।

তূর্য মুচকি হেসে বললো ধন্যবাদ।

একটা গান গেয়ে শোনান না। এই বোরিং সময় টা পার হোক।

এখন?

হুম।যদি আপনার আপত্তি না থাকে।

.
.
তা শুনেছি আপনার নাকি বিয়ের দিনই বিয়ে ভেঙে গেছে। আপনার প্রেমিকা নাকি আপনাকে ধোঁকা দিয়েছে?

বিয়ের জন্য দেখতে আসা মেয়ের মুখে এই কথা শুনে বেশ অবাক হলো মাহির। তার সামনেই লাল রঙের একটা শাড়ি পড়ে মেয়েটি দাড়িয়ে আছে। গাঁয়ের রং ধবধবে ফর্সা। মেয়েটার চোখে মুখে দুষ্টুমির ভাব।মনে হচ্ছে মাহির কে এমন অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে ফেলতে পেরে প্রচুর আনন্দ পেয়েছে মেয়েটি।

মায়ের জোরা জুরিতেই বিয়ে করার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও মেয়ে দেখতে এসেছে মাহির। মেয়েটাকে মোটামোটি ভালোই লেগেছে তার। কিন্তু মনের কোনো এক কোণে তনুর বসবাস এখনো রয়ে গেছে।ঐ ঘটনার পর বিয়ের কথা আর চিন্তা করেনি মাহির। কিন্তু তার মায়ের এক রোখা জেদ,,

তাকে বিয়ে করতেই হবে।তনু কে দেখিয়ে দিতে হবে না, তার ছেলে তনুর থেকে ও আরো বেশি সুন্দরী মেয়ে বিয়ে করতে পারে।

তার বাবা আসেননি মেয়ে দেখতে। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন,মাহিরের বিয়েতে উনার আর কোনো ইন্টারেস্ট নেই। এমনিতেই তিনি এখন ও মাহিরের সাথে আগের মতো আর তেমন কথা বলেন না।

কি মিস্টার ইঞ্জিনিয়ার।প্রাক্তনের কথা মনে পড়ে গেল বুঝি?
#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১৪
#Writer_Liza_moni

গান না প্লিজ একটা গান।
তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে গাইতে শুরু করলো,,

Teri Meri gallan ho Gayi mashoor
Kar na kabhi tu mujhe najron se door
Kithe chali ae,tu kithe chali ae tu, kithe chali ae…

Janda ae dil ye to
Jaandi ae tu
Teri bin main na rahun
Meri bin tu
Kithe chali ae tu, kithe chali ae tu,kithe chali ae…

.
কী হলো আপনি চুপ করে আছেন কেন?

মাহির একপলক মেয়েটার দিকে তাকিয়ে হালকা হাসার চেষ্টা করে বলল,কথা যেহেতু বলছেন সেহেতুতু প্রাক্তন এর কথা মনে পড়াটাই তো স্বাভাবিক।তাই না মিস?

আমার একটা সুন্দর নাম আছে।আপনি নাম ধরে ডাকবেন।

আমিতো জানিনা মিস আপনার নামটা।

মেয়েটা তাচ্ছিল্য হেসে বলল,কী বলেন?আমাকে দেখতে আসছেন।বিয়ের কথাবার্তা চলছে আমাদের। আর আপনি আমার নামটাই জানেন না?এটাও সম্ভব?
আসলে বিয়েতে যদি মত না থাকে বা আগ্রহ না থাকে,তাহলে নাম-না-জানা টা অস্বাভাবিক কিছু নয়।

তারমানে আপনি বিয়েতে রাজি নন?

না! আমি বিয়েটা করতে চাই না।

মাহিরের কথা টা শুনে মেয়েটা যেনো আকাশের চাঁদ হাতে পেয়েছে। খুশিতে গদগদ হয়ে বলতে শুরু করলো,আসলে আমি ও চাইনি আপনাকে বিয়ে করতে। আপনার থেকে ও কিউট হ্যান্ডসাম একটা ভালো বয় ফ্রেন্ড আছে আমার।যার ফার্স্ট এন্ড লাস্ট দুটাই আমি হতে চাই। শুধু শুধু আপনি যদি আমাদের মাঝে আসতেন তাহলে আমি বিয়ের দিন পালিয়ে যেতাম।আর আপনার অসম্মান হতো। ভালোই হলো আপনি এই বিয়েতে রাজি নন।

তা আপনার নাম টা কি?

আফরিন প্রীতি।

সুন্দর। বলেই মাহির বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।প্রীতির দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে চলে গেল ড্রইং রুমের দিকে।

প্রীতি মাথায় শাড়ির আঁচল টেনে ঘোমটা দিয়ে সে ও চললো মাহিরের পিছনে পিছনে।

.
আপনার গানের গলাটা এত্ত কিউট যে মন চায় খেয়ে ফেলি।

তূর্য অবাক হয়ে বললো কী বললেন?

অনু দাঁত দিয়ে জিভ কেটে চোখ বন্ধ করে ফেললো।ইসস কি বলে ফেললাম আমি?
সরি,সরি,সরি
আসলে আমি ঐ ভাবে বলতে চাইনি।মুখ ফোসকে বেরিয়ে গেছে। এত্ত সুন্দর করে গান গাইতে পারেন দেখে।খালি গলায় ও কি সুন্দর গাইলেন।

আচ্ছা একটা কথা বলি?

তূর্য মোবাইলের স্ক্রিনে তাকিয়ে উত্তর দিলো,
হুম বলুন।

আপনি গান গেয়ে ও তো সেলেব্রেটি হয়ে যেতে পারেন। না মানে আপনি তো গানটা কে ও,,

বুঝতে পারছি আপনার কথা। কিন্তু আমি চাই না।সেলেব্রেটি মানেই জ্বালা। সাধারণ মানুষের কাছে সেলেব্রেটি মানেই ক্যারেক্টার লেস।অবশ্য সবার কাছে না। কিছু মানুষের কাছে।আর আমি কখনো ঐ সব নিয়ে ভাবিনি।যেমন আছি তেমনি অনেক ভালো আছি।খাচ্ছি,ঘুরছি,ঘুমাচ্ছি,আড্ডা দিচ্ছি।বিন্দাস লাইফ।

আমার যদি এমন গানের গলা হতো তাহলে আমি আরো কত আগে গানটা কে গ্রাহ্য দিতাম।সেলেব্রেটি হয়ে যেতাম।

তূর্য অনুর দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো,
এটাই আপনাদের সাথে আমার পার্থক্য। আমার কাছে সাধারণ জীবনযাপন করাটাই বেস্ট মনে হয়।

আপনার স্যালাইন শেষ প্রায়। আমি ডাক্তার কে ডেকে আনছি। অপেক্ষা করুন।
বলেই তূর্য পকেটে মোবাইল ঢুকিয়ে চলে গেল।

যাদের আছে তারা মূল্য বুঝে না।আর যাদের নাই তারাই আমার মতো লাফায়।গাল ফুলিয়ে রাখলো অনু।

কিছুক্ষণ পর ডাক্তার এসে অনুর হাত থেকে ক্যানেলার খুলে ফেলল।

হাসপাতাল থেকে বের হয়ে এসে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে অনু আর তূর্য।অনু ব্যাগ থেকে ৬০০টাকা বের করে তূর্যর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো নিন আপনার টাকা।

তূর্য অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে আবার হাতের টাকা গুলোর দিকে তাকালো। কীসের টাকা এইগুলো?

ফুচকার দাম দিয়েছিলেন যে।

তো কি হইছে? ফেরত দিচ্ছেন কেন?

আপনার টাকা আপনাকে ফেরত দিবো না তো কি করবো?

আপনার কাছে রেখে দিন।

না। আপনার টাকা আপনি নিন।আমি অযথা আপনার টাকা নিতে যাবো কেন?আর এত বোকা মানুষ হয়? আপনাকে দেখে তো বোকা মনে হয় না।

তূর্য চোখ ছোট ছোট করে অনুর দিকে তাকিয়ে বললো মানে? আমি কী বোকামি করছি?

আমরা কী ৬০০ টাকার ফুচকা খেয়েছি নাকি? আপনি এত টাকা দিতে গেছেন যে?

ফুচকার দাম নাকি ৬০০ টাকা আসছে তাই তো এত টাকা দিয়েছি।

২৮০ টাকা আসছে।টাকা গুলো নিন। কতক্ষণ ধরে রাখবো এই ভাবে?

আমি কী বলেছি নাকি ধরে রাখতে?

উফফ এত কথা বাড়ান কেন বলুন তো?

টাকাটা আপনার কাছেই রেখে দিন। আমার যখন খুব বেশি প্রয়োজন হবে তখন আমি নিজেই নিয়ে নিবো আপনার কাছ থেকে।
এখন রিকশায় উঠে বসুন। আপনাকে বাড়িতে পৌঁছে দি।

আমি একা যেতে পারবো। তূর্য একটু রাগ দেখিয়ে বললো,
হ্যাঁ আমি দেখতেই পাচ্ছি আপনি কেমন একা যেতে পারবেন? আবার মাথা ঘুরে রিকশা থেকেই পড়ে যাবেন।

আরেএএ একবার পড়ছি বলে কী বার বার পড়বো নাকি?

বিশ্বাস নেই।উঠে বসুন। একদম কথা বাড়াবেন না।মেয়ে মানুষ কেমনে যে এত কথা বলতে পারে? আল্লাহ।

অনু মুখটাকে বাংলার পাঁচের মত করে রিকশায় উঠে বসে। তূর্য ও উঠে বসলে অনু কিছু টা সরে যাওয়ার সময় পড়ে যেতে লাগে। তূর্য অনুর কোমর জড়িয়ে ধরে কিছুটা কাছে নিয়ে এসে বললো,
পাগল আপনি? এখন তো পড়েই যেতেন যদি আমি না ধরতাম।

অনু একটু ইতস্তত করে বললো,
হাতটা সরান।

তূর্য ছোট্ট করে সরি বলে হাতটা সরিয়ে নিয়ে আলতো করে অনুর হাত ধরলো।

আমি এত বেশি দূর্বল না।

তূর্য তাচ্ছিল্য করে বললো, দেখতেই পাচ্ছি।
.
.
প্রীতি কে কী তোর পছন্দ হয়েছে মাহির?

না।

কেন? মেয়েটা দেখতে মাশাআল্লাহ। লম্বা,ফর্সা, শুধু তনুর মতো লম্বা চুল নেই।

তাতে কি? আমি চাইছি না এখন বিয়ে করতে।সময় দাও আমাকে।নিজেকে স্বাভাবিক করার সময় টুকু দাও।

বিয়ে কর। সংসার কর। এমনিতেই স্বাভাবিক হয়ে যাবি।ঐ ঢংগি মেয়ের জন্য আমার ছেলে কষ্ট পাবে কেন?

কারন তোমার ছেলে সেই ঢংগি মেয়ের ছোট বোনরে কষ্ট দিছে। বলেই বসা থেকে উঠে চলে গেলেন মাহিরের বাবা।

হ্যাঁ আর কীইবা বলতে পারবা? বোনের মেয়ের হয়েই তো কথা বলবা। নিজের ছেলের দিকে তো ভালো করে তাকাও ও না। বোনের মেয়ে দুইটাকে নিয়েই যত নাটক করো।ঘরের শত্রু বিভীষণ বলে না? তুমি হলা সেই রকম।
.
.
অনু কে ম্যাসের সামনে নামিয়ে দিলো তূর্য।
সাবধানে থাকবেন মিস।আর এই ভিটামিন গুলো খাবেন।ও হ্যাঁ, আগামীকাল সকালে আমি আপনাকে নিতে আসবো।

কেন?

ডাক্তারের কাছে যাবো। আপনার রিপোর্ট গুলো নিয়ে আসতে।

বলার জন্য ধন্যবাদ। আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে সাথে করে নিয়ে গিয়ে রিপোর্ট নিয়ে আসবো। আপনাকে এত কষ্ট করতে হবে না। আপনি আজ আমার জন্য অনেক কিছু করেছেন।এর জন্য আপনার আছে কৃতজ্ঞ থাকবো।

.
ছাদের এক কোনায় দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে তূর্য।আকাশে আজ চাঁদ দেখা যাচ্ছে না।মেঘে ঢেকে আছে হয়তো। বাতাস ও বইছে।একটা খবর শুনে তূর্যর মনটা খারাপ হয়ে গেল।
মানুষ এগুলো কেন এমন?ওরা কি বুঝতে পারে না যে জোর করে আর যাই হোক কারো ভালোবাসা পাওয়া যায় না।

একটু আগেই রনি কল করে জানিয়েছে এনি নাকি সুইসাইড করেছে।বা হাতের রগ কেটে প্রচুর রক্ত ক্ষরণ হয়েছে।লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

মেয়েটা কেন এমন পাগলামি করছে?এত করে বুঝিয়ে বললাম ওর প্রতি আমার কোনো ফিলিংস আসে না।ওরে আমার ভালো লাগে না।তার পর ও এই সব করার কোনো মানে হয়?

মোবাইলের রিং টোনের শব্দ পেয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো জুয়েল সাহেব কল করেছে। তূর্য কল রিসিভ করতে না করতেই জুয়েল সাহেব কান্না ভেজা গলায় বললো,
তূর্য আমার মেয়েটাকে বাঁচাও প্লিজ। আমার মেয়েটা তোমাকে না পেলে মরে যাবে। আমার মেয়েকে দয়া করে তুমি বাঁচাও প্লিজ।ও ছাড়া আমাদের আর কেউ নেই। আমার একটা মাত্র মেয়ে।

স্যার শান্ত হোন। বাঁচানোর মালিক মহান আল্লাহ।তাকে ডাকুন যেনো এনি কে সুস্থ করে দেয়। আমি আসছি।জ্ঞান ফিরলেই এনি আমাকে ওর চোখের সামনে দেখতে পাবে। চিন্তা করবেন না। নিজেকে শক্ত করুন।

চলবে,,, 🍁

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here