তুই আমার প্রেমময় নেশা পর্ব -০৫

#তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা
#মিফতা_তিমু
৫.

মাঝরাতে ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট খাচ্ছে নিভ্র।খুব খারাপ লাগছে।নিদ্রার সঙ্গে এমনটা না করলেও পারতো।কিন্তু তার কাছে তো উপায় ছিল না।নিদ্রা বুঝতে চাইছে না যে নীরবের এত ক্লোজ হয়ে ও নীরবের চাওয়া পাওয়া আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে যেটা একসময় গিয়ে বাঁধ ভাঙবে।কোনোকিছু একটা হয়ে যাওয়ার আগেই সব থামাতে হবে নাহলে সব শেষ হয়ে যাবে।

নিভ্র সিগারেট খেতে এসবই ভাবনা চিন্তা করতে করতে ঘরের দিকে হাঁটা দিচ্ছিল তখনই আঁধারের মাঝে কেউ হুট করে ওর নাক বরাবর ঘুষি বসিয়ে দেয়। নিভ্রর হাত থেকে সিগারেট ছিটকে পড়ে যায় আর ও নিজেও পরে যায় ফ্লোরে। নিভ্রর নাক মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বের হচ্ছে। ও অন্ধকারের মাঝে পকেট হাতড়ে ফোন বের করে।ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বালিয়ে সামনের দিকে আলো দেয়।অন্ধকারের মধ্যে শুভ্র কে বসে থাকতে দেখে অবাক হয়। শুভ্র ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আছে।তারমানে শুভ্রই ওকে পাঞ্চ মেরেছে।

শুভ্রর চোখ রাগে লাল হয়ে গেছে( নরমাল লাল, অন্য গল্পের নায়কদের মত চোখ দিয়ে লাল রক্ত ঝরতেছে না ) ।নিজেকে যে কিভাবে এখনও অব্দি আটকে রেখেছে সে একমাত্র ওই জানে। নিভ্র ওকে দেখে নিজের পকেট থেকে রুমাল বের করে রক্তমাখা নাক মুছে উঠে দাড়ায় তারপর ছাদের রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আরেকটা সিগারেট জ্বালাতে জ্বালাতে বলে,
নিভ্র: শালা বাবু কথা বসেও বলতে পারবেন।তাই বলে ঘুষি মেরে নাক ফাটিয়ে দিবেন? আমার কিছু হয়ে গেলে আপনার বোন তো বিধবা হবে।

নিভ্রর কথায় শুভ্র দাতে দাত চেপে বলে,
শুভ্র: হলে হবে। ও এখনো জানেনা তোর সঙ্গে ওর বিয়ের কথা।সেই কোন ছোটোবেলায় খেলার ছলে পড়ানো হয়েছিল যেটার কথা মনে পড়লেও হয়তো ওর কাছে সেটার মূল্য থাকবে না। ও যদি বিধবা হয়ে যায় তখন ওকে ভালো দেখে ছেলের সাথে বিয়ে দিবো।

এবার শুভ্রর কথায় নিভ্র রেগে গিয়ে শুভ্রর কলার চেপে ধরে বলল,
নিভ্র: রাতের অন্য কারোর সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার কথা মাথায়ও আনবি না নাহলে খুন করে ফেলবো।আর কি বললি? আমাদের বিয়ের কোনো মূল্য নেই? বিয়ে ছোটোবেলায় হোক আর বড় বেলায় বিয়ে বিয়েই হয় আর আমি রাতের স্বামী।
শুভ্র নিভ্রর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কলার ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,
শুভ্র: শুধু কাগজে কলমে স্বামী হলেই স্বামী হওয়া যায় না।তার জন্য প্রকৃত যোগ্যতা লাগে যেটা তোর নেই।তুই যদি সত্যিই আমার বোনের স্বামী আর ভালবাসার মানুষ হতি তাহলে ওকে এভাবে কষ্ট দিতি না।কি মনে করেছিস আমি কিছুই জানিনা?

সবকিছুর একটা লিমিট হয় নিভ্র। পরশুদিন ওর দোষ ছিল বারবার নীরবের উপর ঢলে পড়ছিল তাই ওকে তুই মেরেছিস এই জন্য কিছু বলিনি। ও আমার বোন নিভ্র।আমার আদরের বোন ও।তুই যতই ওর স্বামী ও ভালোবাসার মানুষ হস না কেন আমার বোনের গায়ে হাত তোলার অধিকার তোর নেই।আমার বোন কে আমি অনেক আদর দিয়ে বড় করেছি তোর অত্যাচার সহ্য করার জন্য নয়।মানলাম পরশুদিন ওর দোষ ছিল কিন্তু কাল।কাল তো ইচ্ছা করে পড়ে যেতে নেয়নি আর নিরবকেও তো ও বলেনি যে ওকে যেন ধরে।তাহলে কেন আমার বোন কে কষ্ট দিয়েছিস?

শুভ্রর কথা শুনে নিভ্র ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকায়। শুভ্র সেটা দেখে বলে,
শুভ্র: আমার বোন তোর নামে আমার কাছে কিছু বলেনি কারণ ও চায়না ওর ভাইয়া আর তার বন্ধুর মধ্যে সম্পর্ক খারাপ হোক।কিন্তু ও আমার বোন তাই ওর মন খারাপ হলে বা ওর সাথে অন্যায় কিছু হলে আমি বুঝতে পারি।তুই নিশ্চই ও যখন কাল ফাংশনের সময় বাথরুমে গিয়েছিলো তখন আবার মেরেছিস তাইনা? এই জন্যই ও কাল সারাদিন আর ঘর থেকে বের হয়নি। খায়নি অব্দি ও। তোর তো ওর প্রতি কোনো মায়া দয়াই নেই।নিদ্রা তোর জেদ,ভালোবাসা নয়।ভালোবাসা হলে ওকে এভাবে মারতে পারতি না।

এতক্ষণ শুভ্রর কথা শুনে এবার নিভ্র বলে,
নিভ্র: আমি জানিনা আমি ঠিক করছি নাকি ভুল কিন্তু আমি এটা জানি রাত আমার ভালোবাসা আর ওকে আমার থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না।ওকে পাওয়ার জন্য যতটা নিচে নামতে হয় নামবো কিন্তু ওকে পেয়েই ছাড়বো।সত্যি বলতে কি ওকে ওই নীরবের কাছাকাছি দেখলে রাগে আমার গা জ্বলে।আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনা শুভ্র।রাত আমার ভালোবাসা, জেদ নয়।আমি, মেহেরহান হোসেন নিভ্র রাত কে এতটাই ভালোবাসি যে তার জন্য জীবনও দিতে পারি।

শুভ্র: তাহলে তোর ভালো কোনো ডক্টরের সঙ্গে কনসালট করা উচিত নিভ্র।তোর এই রাগ তোর আর নিদ্রার সম্পর্কের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে।
শুভ্রর কথায় নিভ্র এতক্ষণ স্বাভাবিক থাকলেও শেষের কথাগুলো শুনে ও আবার রেগে যায়। দাতে দাত পিষে বলে,
নিভ্র: তুই কি আমাকে পাগল বুঝাতে চাচ্ছিস?তোর সাহস কি করে হয় আমাকে পাগল বলার?
শুভ্র নিভ্রর কথায় দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
শুভ্র: এই জন্যই বলেছিলাম ডাক্তার দেখাতে।তোর এই রাগ আমাদের ধ্বংস করে দিবে নিভ্র বলেই শুভ্র ছাদ ত্যাগ করে।

নিভ্র তারা ভর্তি আকাশের দিকে তাকিয়ে সিগারেট খেতে খেতে ভাবে,
নিভ্র: সত্যিই কি আমার এই রাগ আমাদের সব শেষ করে দিবে? রাত আমায় ছেরে চলে যাবে? না না এমন টা হতেই পারেনা।রাত আমাকে ছেড়ে যেতে পারেনা।রাত শুধু আমার, শুধু আমার।

ভোরের আলোর সূচনা হয়েছে।ঘরের মধ্য দিয়ে রোদের আলো আমার মুখে এসে পড়ছে তবুও আমি এক নাগাড়ে বেডের হেডে হেলান দিয়ে আমার হাত দেখে যাচ্ছি।সেই হাত যেই হাত কাল নিভ্র ভাইয়া চেপে ধরেছিল। হাতখানা আমার এখনো লাল হয়ে আছে।

হাতের সাথে সাথে চোখের নিচটাও ফুলে গেছে।রাতে না ঘুমানোর কারণে চোখ লাল হয়ে আছে।কাল রাতে ঘুমাতে পারিনি শুধু রাতভর কেঁদেছি তাই হয়তো।অনেক হয়েছে কান্নাকাটি।আর কান্না নয়।এবার নিজেকে সামলে নেওয়ার পালা।কেন কাদবো আমি নিভ্র ভাইয়ার জন্য? তার কাছে আমার অশ্রুর কোনো মূল্য নেই তাহলে আমি কেন শুধু শুধু নিজের মূল্যবান অশ্রু নষ্ট করবো তারজন্য। যে অন্যের অশ্রুর মূল্য দিতে জানেনা তার কথার কোনো মূল্য নেই।ভাইয়ার বিয়ে মিটে যাক তারপর তার সব প্রশ্নের জবাব আমি দিবো।ভাইয়ার বিয়ের আগে কিছু নয়। যাই হোক এখন মন খারাপ করে লাভ নেই।আজ আমার ভাইয়ের বিয়ে তাই আমি নিজের মতো করে সাজবো।

নিজেকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে গোসল করতে ঢুকে গেলাম।গোসল থেকে বেরিয়ে দেখি তন্দ্রা আমার জুয়েলারি বক্স ঘাটছে।আমার পরণে কালো রঙের ব্লাউজ আর কালো পেটিকোট।এর সঙ্গে ম্যাচিং করে নীল শাড়ী পরবো।

নিদ্রা: কিরে কি হয়েছে? কী ঘাটছিস?
তন্দ্রা: আর বলিস না আমরা যে শাড়ির সঙ্গে ম্যাচ করে কানের দুলগুলো কিনেছিলাম ওগুলো তোর এখানে ফেলে রেখে গেছি। ওটাই খুঁজছি।
নিদ্রা: ওহ তাহলে খুজ।আমি ততক্ষণে শাড়িটা পড়ে নেই।আরে দোস্ত শাড়ি আমার সেই পছন্দ হইসে।তোর আর আমার ম্যাচিং ম্যাচিং নীল কাঞ্জিভরম।কি মিল না আমাদের?

তন্দ্রা কানের দুল পড়তে পড়তে বললো,
তন্দ্রা: যমজ বোন হলে তো মিল হবেই।দুঃখ শুধু একটাই তোরে আমার জামাইয়ের লগে বিয়ে দিতে পারলাম না।তোর জামাই তো রেডি আছে।যদি না থাকতো তাহলে দুই বোন অভ্র রে বিয়ে করতাম।
নিদ্রা: আমার আবার জামাই! হুঃ ইম্পসিবল আর তোর জামাইরে কেডা বিয়ে করবো? আমি করতাম না।আমার কোনো শখ নাই শালী থেকে ঘাড়ওয়ালি হওয়ার। আধি ঘাড়ওয়ালীই ঠিক আছি, পুরি হতে চাই না।
তন্দ্রা: আমি না সব বুঝি বুঝি।তোর চোখ তো আরেকজন রে খুঁজে।
নিদ্রা: কচু বুঝিস।বেশি কথা না বলে এখানে এসে শাড়ির আঁচল টা পিন আপ করে দে।

তন্দ্রা এগোতে যাবে তখনই দেখলো নিভ্র এসেছে নিদ্রার ঘরে। নিভ্র ইসারায় তন্দ্রা কে যেতে বললো। তন্দ্রাও কথা না বাড়িয়ে মিটিমিটি হেসে চলে গেলো আর নিভ্র এগিয়ে গেলো নিদ্রার দিকে।

নিদ্রা: আরে চুপচাপ দাড়িয়ে আছিস কেন? লাগিয়ে দে না।এটা কিন্তু ঠিক না ইয়ার। তুই আমার বোন হয়ে আমার সাথে এমন না ইনসাফি করতে পারিস না।আমি তোর সোলমেট ইয়ার বলে যেই না পিছনে ঘুরতে নিবো ওমনি একজোড়া ঠান্ডা হাত আমার বাহু চেপে ধরে আমাকে আবার আগের পজিশনে দাড় করিয়ে দিল।মানুষটার ঠান্ডা স্পর্শে আমি জমে গেছি।আমি বুঝতে পারছি মানুষটা নিভ্র ভাই। নিভ্র ভাইয়া আমার হাত থেকে পিন নিয়ে আঁচলে লাগিয়ে দিল।

তারপর আমাকে ধরে এনে আয়নার সামনে দাঁড় করালো।আমার শাড়ীর আঁচলটা আমার মাথায় দিয়ে স্মিত হেসে আমার কাঁধে থুতনি রেখে বললো,
নিভ্র: শাড়ির আঁচল মাথায় দিয়ে তোকে তো একেবারে বউ লাগছে। কার জন্য এরকম বউ বউ সেজেছিস? স্পেশাল কেউ? কথাগুলো ভাইয়া ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে বলল।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here