তুই আমার প্রেমময় নেশা পর্ব -০৬

#তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা
#মিফতা_তিমু
৬.

ভাইয়ার কথায় অজান্তে আমার রাগ উঠে গেলো।এখন আমি কার জন্য সাজবো না সাজবো সেটাও কি তাকে বলে সাজতে হবে।কিন্তু না এখন কিছু বলা যাবে না।আগে বিয়েটা মিটুক তারপর প্রতিটা কথার উত্তর দিবো আমি।এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।

আমি ভাইয়ার কথার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বললাম না।আমায় কিছু বলতে না দেখে ভাইয়া কিয়ঃক্ষণ আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলেন।অতঃপর আমার চুপ থাকা পাত্তা না দিয়ে আমার হাত টেনে বাইরে নিয়ে এলেন।বাইরে এসে দেখলাম সকলে তরঝোর করছে মেয়েদের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিবে বলে।ঠিক হলো আমি, নিরা আপু,তন্দ্রা, নিভ্র ভাই,অভ্র আর নিরব এক গাড়িতে যাবো।বাকিরা আলাদা আলাদা গাড়িতে যাবে।

সেই মতে সবাই উঠে বসলো।আমি আর এবার রিস্ক নিলাম না।আমি গিয়ে সামনের সিটে ভাইয়ার পাশে বসলাম।আমি পাশে বসাতে অবশ্য ভাইয়া কোনো রিয়াকশন দিল না।আমাদের পিছনে তন্দ্রা আর অভ্র আর ওদের পিছনে নীরা আপু আর নিরব।নিরা আপু তো কানে হেডফোন দিয়ে আরামসে বসে গান শুনছে কিন্তু নিরব মুখ গোমড়া করে বসে আছে।হয়তো ওর সঙ্গে বসিনি বলে।আসলে তন্দ্রা অভ্র আর আমার মধ্যে আমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। ও আমার সঙ্গেই বেশি কম্ফর্টেবল তাই এক্সপেক্ট করেছিল আমি ওর সঙ্গে বসবো কিন্তু আমি তো এক প্রকার বাধ্য হয়েই নিভ্র ভাইয়ার সঙ্গে বসলাম।

আমাদের কনে মানে নীলা আপুদের বাড়ি পৌঁছতে বিশ মিনিট সময় লাগলো।আমার বাবারা তিন বন্ধু ছোটো থেকেই।দুই বন্ধু মানে মেহেরান হোসেন ওরফে বড় বাবা আর আমার বাবা তো একসঙ্গেই নিজেদের বিশাল বড় অট্টালিকা তৈরি করলো যাতে একসঙ্গে থাকতে পারে।আমাদের বাড়ি থেকে গাড়িতে বিশ মিনিটের দূরত্বে আর পায়ে হেঁটে এক ঘণ্টার দূরত্বে শুভম চৌধুরী মানে ছোটো বাবা নিজেদের বাড়ি তৈরি করেন।উনার আলাদা বাড়ী তৈরি করার পিছনে কারণ হলো উনি অনেক বছর বিদেশে ছিলেন।

আমার তিন বাবাই তিন মা মানে তিন বান্ধবী নাদিরা, রামিসা আর রাইসা কে বিয়ে করেছে।তিন বন্ধুর শখ ছিল তিন বান্ধবী কে বিয়ে করে একসঙ্গে থাকবে সারাজীবন।সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতেই ভার্সিটি জীবনে প্রথম পা বাড়িয়েছিল বড় বাবা যখন বড় মা( নাদিরা ) সবে অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে আর বড় বাবা অনার্স থার্ড ইয়ারে। বড় মায়ের সঙ্গে প্রেম করে নিজের দুই বন্ধুকেও বড় মার দুই বান্ধবীর সঙ্গে সেটিং করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু বড় মার সঙ্গে প্রেম করতে করতে একসময় সত্যি সত্যি ভালোবেসে ফেললেন। বন্ধুকে প্রেম করতে দেখে আমার বাবাও এগিয়ে গেলেন আমার মা রামিসার দিকে। একসময় তাদেরও প্রণয় হলো।

কিন্তু মাঝপথে একা হয়ে গেলেন ছোটো বাবা আর ছোটো মা কারণ ছোটো মা ছোটো বাবা কে ভালোবাসলেও মুখ ফুটে বলতে পারছিলো না আর ঐদিকে ছোটো বাবাও বন্ধুদের হারিয়ে ফেলেছেন সেই দুঃখে সব ছেরে চলে গেলেন।আসল সত্যির খোলাসা হলো তিন বছর পর যখন অলরেডি নিভ্র ভাইয়া, আর আমার ভাইয়া হয়ে গেছে। তখন বড় বাবা আর আমার বাবা অনেক বুঝিয়ে ছোটো বাবা কে দেশে আনলেন।তারপর ছোটো মা আর ছোটো বাবার বিয়ে হয়ে গেলো।ছোটো বাবার উপর অভিমান করে ছোটো মা দীর্ঘদিন বিয়ের পরও তার সঙ্গে কথা বলেনি কিন্তু একসময় ছোটো বাবার ভালোবাসার কাছে ছোটো মার অভিমান গুড়িয়ে গেলো।অবশেষে দুই বছর পর ছোটো মার গর্ভে নীলা আপু আসে আর তারও দুই বছর পর বড় মার গর্ভে অভ্র আসে আর তার এক মাস পর মার গর্ভে আমি আর তন্দ্রা এবং সেই সাথে ছোটো মাও জানান উনি দ্বিতীয়বারের মতো প্রেগনেন্ট হতে চলেছেন।

কী সুন্দর প্রেম কাহিনী তাইনা? তিন বন্ধু একসঙ্গে তিন বান্ধবী কে বিয়ে করলো।আমার বাবার কোনো ভাই নেই আর বড় বাবা এবং ছোটো বাবারও কোনো ভাই নেই তাই আমরা সব নামমাত্র কাজিন মানে নিভ্র ভাই,ভাইয়া,নীলা আপু, অভ্র,আমি,তন্দ্রা আর নিরব সবাই একজন আরেকজনের বাবা কে ছোটো বড় যোগ করে ডাকি কারণ আমরা তাদের কেই নিজেদের চাচু মনে করি।জন্ম মাস অনুযায়ী আগে বড় বাবা তারপর আমার বাবা আর সবশেষে ছোটো বাবা।

নিভ্র ভাইয়া আর আমার ভাইয়া একই বয়সী।শুধু আমার ভাইয়া নিভ্র ভাইয়ার পনেরো দিনের বড়।আমার ভাইয়া আর নিভ্র ভাইয়ার পাঁচ বছরের ছোটো নীলা আপু।আর নিভ্র ভাইয়া এবং ভাইয়ার সাত বছরের ছোট আমি,তন্দ্রা, অভ্র আর নিরব।আমরা অবশ্য নীলা আপুর দুই বছরের ছোট।

আমার বাবারা যেমন তিন বান্ধবী কে বিয়ে করে একসঙ্গে সংসার করে খুশি তেমনি আমার মায়েরাও তিন বন্ধু কে বিয়ে করে একসঙ্গে সংসার করে খুশি।

আমার মা আর বাবাদের লাভ স্টোরি স্বর্ণাক্ষরে লেখা উচিত কারণ এত সুন্দর লাভ স্টোরি আমি আগে শুনিনি।আমার ভাবনার মাঝেই তন্দ্রা আমায় ধাক্কা দিয়ে বললো,
তন্দ্রা: কিরে? এত কি চিন্তা করিস?

আমি সামান্য হেসে বলি,
নিদ্রা: কিছু না।ভিতরে চল।আপু ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করি চল।
আমার কথায় তন্দ্রা আমার হাত ধরলো আর অভ্র ওর হাত ধরলো।আমরা তিনজন এগিয়ে গেলাম।নিরব আমার পিছন পিছন আসছে। নিভ্র ভাইয়া আর নীরা আপু দুজনে ততক্ষণে অনেক সামনে এগিয়ে গেছে।

ছোটো মা আমাকে,তন্দ্রাকে, অভ্র কে, নিভ্রো ভাইয়া কে আর নিরা আপু কে অনেক অ্যাপায়ন করে বসালেন তারপর নিরব কে বললেন,
ছোটো মা: যা বাবা এবার অন্তত কাজকর্ম কর। বন্ধুর বাড়ি যাবি বলে তো সকাল বেলা উঠেই পগার পার।এখন একটু বিয়েতে কাজ কর।একটু মেহমানদের অ্যাপায়ণ কর নাহলে বিয়ে বাড়ীতে আমার জন্য অন্তত বৌমা খোঁজ নাহলে তোর তো জীবনে বিয়ে হবে না।

নীভ্র ভাইয়া ফোন ঘাটছিলো কিন্তু ছোটো মার এই কথা ওর কানে যেতেই সাথে সাথে আমার আর নীরবের দিকে তাকালো।নিরব বেজার মুখে করুন চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে আর আমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ঘড়িতে সময় দেখছি।আসলে ছোটো মার কথা শুনে আমার তো হাসি একেবারেই আসছে না ।কিন্তু ছোটো মার কথা শুনে এই দিকে আমাদের অভ্র আর তন্দ্রা নামক দুই প্রেমিক প্রেমিকা হাসতে হাসতে একে অপরের গায়ে ঢলে পড়ছে।আমি ভ্রু কুচকে ওদের দিকে তাকিয়ে তন্দ্রা কে ধাক্কা দিয়ে বললাম,
নিদ্রা: এত হাসি তোদের কোথা থেকে আসে? আমার তো হাসি আসে না।
অভ্র: আসবে কি করে তুই তো গোমড়ামুখো আর তোর মধ্যে তো ভাইয়ার রোগ ট্রান্সফার হয়েছে।তোর হাসি এমনিতেও আসবে না ওমনিতেও আসবে না। শুভ্র ভাইয়ার পর তো আমার আর তন্দ্রার লাইন।কিন্তু তোর আর ভাইয়ার আগে বিয়ে করিয়ে দেই।তোরা একেবারে পারফেক্ট জুটি।তোদের বিয়ে হলে রাবনে বানাই জরি মনে হবে।তোরা একেবারে মেড ফর ইচ আদার।

অভ্রর কথায় আমার কোনো হেলদোল হলো না কারণ এসব কথা আমি ছোটো থেকেই নীভ্র ভাইকে ঘিরে ফেস করছি কিন্তু অভ্রর কথায় মনে হলো নীভ্র ভাই একটু বিড়ম্বনায় পরে গেছেন।উনি নড়েচড়ে বসলেন অভ্রর কথায়।আমি নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে তন্দ্রার দিকে তাকিয়ে বললাম,
নিদ্রা: তোর জামাইরে বল মুখ সামলায় রাখতে নাহলে কালকের খবরে ব্রেকিং নিউজ হবে বড় ভাইয়ের বিয়েতে ভাইয়েরি বন্ধুর ছোটো ভাই অর্থাৎ নিজের বন্ধুকে খুন করে এক অল্প বয়স্ক তরুণী।

আমার কথা শুনে চুপ করে যায় সবাই আর নিরব করুন দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চলে যায় তার মায়ের কথা মত মেহমানদের অ্যাপায়ন করতে।

প্রায় মিনিট তিরিশেক পর আমরা ব্যান্ড বাজার আওয়াজ শুনতে পাই।তাহলে ভাইয়া চলে এসেছে।ড্রাম আর ঢোলের আওয়াজে তন্দ্রা,নিরা আপু, নীভ্রো ভাই আর অভ্র নাচতে নাচতে এগিয়ে যায়। নিভ্র ভাইয়ের নাচ দেখে বিয়েতে উপস্থিত সব মেয়েরাই তার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে কারণ ভাইয়া বন্ধুর বিয়েতে মনের সুখে নাচতেছে কিন্তু আমার মনে সুখ নাই।আমি জাস্ট হাত তালি দিতে দিতে এগিয়ে গেলাম ভাইয়া কে রিসিভ করতে।ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে নিভ্র ভাইয়ের সঙ্গে নাচতেছে। অভ্র তন্দ্রার সঙ্গে নাচছে। হঠাৎ নিভ্র ভাই আস্তে আস্তে পিছিয়ে এসে আমার পাশে দাঁড়ালেন।আমার চোখ এখনো সেই মেয়েদের দিকে যারা নিভ্র ভাইকে দেখছিল।ভাইয়া আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,

নিভ্র: অনুষ্ঠানের সব মেয়েদের কে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে খারাপ লাগছে তাইনা যে আজ আমার মত একটা বয়ফ্রেন্ড নেই?তুই চাইলেই কিন্তু আমার মত বয়ফ্রেন্ড পেতে পারিস।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here