তুই আমার প্রেমময় নেশা পর্ব -০৭

#তুই_আমার_প্রেমময়_নেশা
#মিফতা_তিমু
৭.

নিভ্র ভাইয়ার কথার পরিপ্রেক্ষিতে এবারও আমি কিছু বললাম না।শুধু তক্কে তক্কে আছি সঠিক সময়ের।একসময় আমারও সময় আসবে আর তখন আমিও জবাব দিবো আর সেদিন হবে আমার জীবনের সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন।সেদিন অবসান ঘটবে সকল মোহ আর অযাচিত মিথ্যে ভালোবাসার।কথাগুলো ভাবতেই আমার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠল।

আমার ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে নিভ্র ভাই আমার দিকে অবাক হয়ে তাকালেন।উনি হয়তো ভাবছেন এমন কোনো কথা তো উনি বলেন নী যে আমি হাসবো তাহলে আমি হাসছি কেন? ব্যাপারটা বড়ই জোড়ালো।আজকাল নিদ্রার মনে কি চলে কিছুই বুঝা যায়না।তার মনের খবর জানা প্রায় অসাধ্য হয়ে পড়েছে।এখন আর আগের মত কথায় কথায় ওর কথায় রিয়েক্ট করেনা আর না কাদে।শুধু ফ্যালফ্যাল চোখে তাকিয়ে থাকে যেন কথা বলতে ভুলে গেছে। নিদ্রার চোখের ভাষা বুঝার ক্ষমতা দিনদিন হারিয়ে ফেলছে নিভ্র।নিদ্রা কে বুঝা রীতিমত দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

রাত ১০.০০ টা,

বিয়ের সব আচার আচরণ করে সবেমাত্র ফিরলাম।নীলা ভাবী কে ভাইয়ার বাসর ঘরে বসানোর দায়িত্ত্ব বাকিদের হাতে দিয়ে ঘরে চলে এলাম।আমার এই ব্যবহারে সকলে এতটাই অবাক যে প্রশ্ন করার অবকাশ অব্দি পায়নি। বস্তুত ভাইয়ার বিয়ে নিয়ে সবচেয়ে বেশি এক্সসাইটেড আমি ছিলাম আর সেই আমিই যখন ভাইয়ার বিয়ের পরের অনুষ্ঠানে খাপছাড়া ভাবে অংশ গ্রহণ করলাম তখন বাকিরা অবাক হবেই।আসল কাহিনী হলো নীরা আপুর সঙ্গে নিভ্র ভাইয়ার এত হেসে হেসে কথা বলা আমার সহ্য হচ্ছে না।আমার ধৈর্য্যের বাঁধ ক্রমশ ভাঙছে।আমি আজই চাইছি না কোনো সিন ক্রিয়েট করতে কারণ সবেমাত্র ভাইয়ার বিয়ে হয়েছে আর ভাইয়ার বিয়ের বাসর এখনো বাকি আর আমি চাইনা ভাইয়ার মুড নষ্ট করতে। আজকের দিনটা যাক তারপর সবকিছুর শোধ আস্তে আস্তে তুলবো।

বাসর ঘরে মুখে ঘোমটা টেনে বসে আছে নীলা।বড্ড লজ্জা করছে তার।পাঁচ বছরের প্রেম তবুও আজ শুভ্রর সঙ্গে একঘরে থাকতে মনটা কেমন কেমন করছে।শুধু বারবার মনে হচ্ছে শুভ্র আসার আগে এই ব্যালকনি থেকে লাফ দিয়ে দিতে তাহলে যদি এই অসস্তির হাত থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।পুরো মুখে রক্তিম আভা ছেয়ে আছে। ইচ্ছে করছে যেন ঘুমিয়ে পড়ে কিন্তু তার বড় ননদের কড়া আদেশ যেন তার ভাইয়া না আসা অব্দি না ঘুমোয়। ঘুমোলে কাল অনেক জ্বালাবে।আর বাসরের পরের দিন ছোটো ননদের কাছ থেকে জ্বালানি সহ্য করা যাবে না তার পক্ষে তাই জেগে থাকাটাই ভালো।

আরও দশ মিনিট পর ঘরে এলো শুভ্র।দরজা লাগানোর শব্দে নীলা নড়েচড়ে বসলো।নীলা সাথে সাথে টাস করে ঘোমটা তুলে ফেললো। ঘোমটা তুলে দেখলো শুভ্র ওর দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর শুভ্রর পরণে টিশার্ট আর ট্রাউজার।লোকটা ড্রেস কখন চেঞ্জ করল। মাত্রই তো এলো তাহলে?

শুভ্র নীলা কে ওর দিকে বড় বড় চোখে আড়চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
শুভ্র: দেখার হলে সরাসরি দেখো। তোমারই বর আমি।এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখার কি আছে? আমারও তো লজ্জা করে। বউই যদি এভাবে নজর দে তাহলে বাকি মেয়েদের দোষ কোথায়?

শুভ্রর ঠোঁটকাটা স্বভাবের জন্য নীলা সবসময়ই লজ্জা পরে। সবসময়ই ওকে এসব বলে বিড়ম্বনায় ফেলবে।বাসর রাতেও ছাড় দিলো না।নীলা লজ্জায় আরও মিইয়ে গেল। ওর গাল রক্তিম হয়ে উঠেছে। শুভ্র হঠাৎ অট্টহাসি হাসতে লাগলো।

শুভ্র কে হাসতে দেখে ওর দিকে ভ্রু কুচকে তাকালো নীলা। শুভ্র হাসির ঝঙ্কার তুলে লাফ দিয়ে উঠে নীলার পায়ে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো।নীলার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে নিজের মাথায় রেখে বললো,
শুভ্র: নীলাদৃতা চুলগুলো একটু বিলি কেটে দিন তো।মাথা কেমন করছে।

শুভ্রর কথায় নীলা ব্যতি ব্যস্ত হয়ে ওর মাথায় বিলি কেটে দিতে লাগলো।সদ্য বিবাহিত স্ত্রী কে অস্থির হয়ে পড়তে দেখে শুভ্র আলতো হেসে বললো,
শুভ্র: এত চিন্তা করবেন না নীলাদৃতা আমার কিছু হয়নি।আমি তখন আপনাকে লজ্জা পেতে দেখে হাসছিলাম আর অনেকদিন ধরে বিয়ের এত অনুষ্ঠানে এতটা হাপিয়ে গেছি যে দম ফেলার সুযোগ অব্দি পায়নি তাই এতটা রেকলেস লাগছে।

নীলা আবারও শুভ্রর কথা শুনে লজ্জায় মিইয়ে গেলো আর কাপা কাপা হাতে বিলি কেটে দিতে লাগলো শুভ্রর মাথায়। স্ত্রীর এমন অবস্থা দেখে শুভ্র আর কথা বাড়ালো না।উঠে গিয়ে নিজের জায়গায় গিয়ে শুয়ে পড়ল আর নীলাকেও চেঞ্জ করে শুয়ে পড়তে বললো।নীলা কে সে সময় দিতে চাচ্ছে যাতে নীলা নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে।

নীলা বাথরুম থেকে ড্রেস চেঞ্জ করে এসে শুয়ে পড়লো। শুভ্রর কাছ থেকে এমনটা সে আশা করেনি।সব মেয়েরই স্বপ্ন থাকে বাসর রাত নিয়ে।সবাই চায় এই রাতে তাদের স্বামী অর্থাৎ তাদের ভালোবাসার মানুষ ভালোবেসে তাদের কাছে আসুক আর তাদের ভালোবাসার চাদরে মুরে রাখুক। নীলাও ব্যতিক্রম নয়। তারও অনেক শখ আহ্লাদ ছিল বাসর রাত নিয়ে কিন্তু সেগুরে বালি। শুভ্র তো তার কাছে তো এলোই না উল্টো ঘুমিয়ে পড়লো।

সবেমাত্র বাইরের সব গোছগাছ করে ঘরে ফিরল তন্দ্রা।গা একেবারে ছেরে দিচ্ছে।ভাইয়ার বিয়ের কারণে এতদিন অনেক ঝড় গেছে তার উপর দিয়ে।তার ছোটো বোন তো দোষ করে নিভ্র ভাইয়ের কাছে থাপ্পড় খেয়ে বিয়ে থেকে বিতাড়িত হয়ে কাজের থেকে বেঁচে গেছে কিন্তু তার কোনো নিস্তার ছিল না। পরন্তু বোনের কাজগুলোও তাকে করতে হয়েছে যার জন্য সে অনেকটাই ক্লান্ত পরিশ্রান্ত।এখন লম্বা একটা রেস্ট দরকার।কাল আর কোনো ঝামেলা নেই।শুধু বারোটা বাজে ঘুম থেকে উঠে হালকা সেজে সেন্টারে চলে যাবে।

কাল ভাইয়ার বিয়ের রিসেপশন আর আপাতত লাস্ট অনুষ্ঠান।এরপর বাড়িতে আর কারো বিয়ে হতে দেরি আছে।তার বিয়ে তো পড়াশুনা শেষ করে চাকরি করে আরও কিছুদিন পর আর তার বোন নিদ্রা তো বিয়ে করতেই রাজি না তাই আপাতত কোনো বিয়ে নেই।

জামা কাপর ছেরে একটা পাতলা টিশার্ট আর ট্রাউজার পরে ফ্রেশ হয়ে এলো তন্দ্রা।এখন বিছানায় পরেই লম্বা একটা ঘুম দিবে আর কাল বেলা বারোটায় উঠবে।ভাবনা ভাবতে ভাবতেই শুয়ে পড়লো বিছানায় তন্দ্রা। ঘুমটা সবে চোখে এসেছিল কিন্তু ফোনের রিংটোনে সাথে সাথে উবে গেল। বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে কোনমতে বিছানা হাতড়ে ফোন কানে দিয়ে ছুড়ে দিল এক বস্তা গালি,
তন্দ্রা: এই কে বে এতরাতে? ঘরে কি মা বোন নাই? মেয়েদের সম্মান করিস না? তাহলে এতরাতে ফোন দিয়ে কেন জালাচ্ছিস?

অতর্কিতে প্রেমিকার এরকম চিৎকার শুনে ফোনের ওপাশে থাকা অভ্র ঘাবড়ে গেল। কোনমতে গলার স্বর নামিয়ে বললো,
অভ্র: তন্দ্রা তুই ঠিক আছিস তো? আমি অভ্র…
সাথে সাথে তন্দ্রার চোখের ঘুম উবে গেল।এবার ধপ করে বিছানায় উঠে বসলো আর দ্বিগুণ উত্তেজিত গলায় বললো,
তন্দ্রা: ওই খাটাস এই এত রাতে ফোন করে পীড়িত দেখাস? ঘুমের বারোটা বাজিয়ে আবার ফোন করে জিজ্ঞেস করছিস আমি ঠিক আছি কিনা? ঘুম তো নষ্ট করেই দিলি ফোন দিয়ে তাহলে ঠিক কিভাবে আছি?

অভ্র ভয় পেয়ে ফোন কেটে দিলো। ভালোভাবে বুঝতে পারছে তন্দ্রার ঘুম ভাঙিয়েছে বলে অনেক রেগে আছে যেটা এখন কিছু বললে আরও অনেক রেগে যেত তাই এখন কথা না বলাটাই ভালো।তন্দ্রা ফোন কাটার পরেও যখন হ্যালো হ্যালো করে কোনো উত্তর পেলো না তখন ফোন বালিশের পাশে রেখে শুয়ে পড়লো।গায়ে কম্বল ভালোভাবে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।

ঘরে এসে শাড়ি পড়া অবস্থায় ক্লান্ত শরীরটাকে বিছানায় এলিয়ে দিলাম। শরীর খারাপ লাগছে।এত হইহুল্লোড় আমি কোনোকালেই নিতে পারিনা।এত হৈ হুল্লোড় হলেই আমার শরীর খারাপ করে।এই কারণে বাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হয় না কিংবা আমি কারোর বাড়ির কোনো অনুষ্ঠানে জাইনা।

নাহ কাপর চোপর বদলানো দরকার নাহলে সারারাত এভাবে পরে থাকলে ঠান্ডা লেগে যাবে।এমনিতেই আমার শীতকালে ঠান্ডার ধাত আছে তাই বেশীক্ষন ঠান্ডা পরিবেশে থাকি না।কাল সুইমিং পুলে পা ডুবিয়ে বসে থাকাটা ভুগাতে পারে তার আগেই শুয়ে পড়তে হবে হিটার অন করে।

যেমন ভাবা সেই কাজ।তাড়াতাড়ি জামা কাপড় চেঞ্জ করে ফ্রেশ হয়ে হিটার অন করে শুয়ে পড়লাম।এবার অনেকটা ভালো লাগছে। শীতের রাতে কম্বল সঙ্গে জড়িয়ে গরম পরিবেশে ঘুমানো বড্ড আরামের ব্যাপার।আর আরাম প্রিয় মানুষের কাছে আরাম পাওয়াটা হাতে চাঁদ পাওয়ার মত।

~ চলবে ইনশাল্লাহ্

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here