#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ২২
#Mitu-মিতু
জীবনের সব সত্য গুলো মেনে নিতে কষ্ট হলেও মেনে নিতে হয়। কেননা এই পৃথিবীতে তুমিই একমাত্র তোমার আপনজন।
যে ভালোবাসে সে জানে ভালোবাসার মানুষের পাশে অন্য কাওকে দেখতে ঠিক কতটা বিষাক্ত লাগে। আবার যদি সেই মানুষটির হাত অন্য হাতে মুঠোবন্দি থাকে সেই দৃশ্য গলায় বিদ্ধ কাটার সমতুল্য। চুপসানো মুখে রায়হান রিশাকে জিজ্ঞেস করলো
“এতো রাতে তুমি কোথায় ছিলে আর উনি?”
“উনি তাসরিফ ভাইয়া। তানিয়া আপুর বড় ভাই। ”
একজন পুরুষ অন্য পুরুষের দৃষ্টি ঠিক ধরে ফেলতে পারে। রায়হানের অবাক হওয়া,, চুপসে যাওয়া মুখ দেখে তাসরিফ ভড়কে গেলো। তার প্রাণপাখির ওপর অন্য জনের চোখ পরেছে।
“হাই ভাইয়া! আমি রায়হান আহমেদ। তানিয়ার বিয়েতে এসেছি। এতো রাতে না এসে আপনি সকালে আসলেও পারতেন। ”
তাসরিফ রায়হানের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো
“সকালেই আসতাম তবে প্রেয়সীর স্নিগ্ধ মুখটা দেখার তৃষ্ণা জেগেছিলো তাই দেরি না করে চলে আসলাম। ”
রিশার দিকে তাকিয়ে বললো
“ঘরে যা। চেঞ্জ করে ঘুমিয়ে পরবি।”
রিশা এমনিতেই এতো রাতে রায়হানের মুখোমুখি হয়ে বেশ বিব্রতবোধ করছিলো। তবুও তাসরিফের দিকে তাকিয়ে বললো
“কিন্তু মামা-মামী তো ঘুমিয়ে গেছে আর তোমার ঘরে তোমার মামা-মামী। তুমি এখন থাকবে কোথায়?”
“ভাইয়া! আঙ্কেল -আন্টি তো এখন ঘুমিয়ে গেছে। সবাই টায়ার্ড,, আপনি কিছু না মনে করলে আমাদের সাথে ঘুমাতে পারেন। এখনো অনেক রাত বাকি আছে। জার্নি করে আপনিও টায়ার্ড। ”
তাসরিফও ভাবলো এখন বাবা-মাকে ডাকা ঠিক হবে না। এত আত্মীয়ের মাঝে কোনো রুম যে খালি নেই এটা সে বুঝে নিলো। রায়হানের কথায় রিশা বললো
“না ভাইয়া! আপনাদের রুমে অনেকজন আছেন। এতেই জায়গা টানাটানি। ভাইয়া তুমি বরং আমার রুমে যাও আমি মায়ের কাছে যাচ্ছি। ”
তাসরিফ দ্বিমত করলো না। রিশা ঘর থেকে নিজের একসেট জামা নিয়ে সোজা সাহেরা বানুর রুমে নক করলো। সাহেরা বানুর ঘুম গাঢ় হয়নি তেমন। দরজায় শব্দ শুনে উঠে এসে দরজা খুলে দিয়ে রিশাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন
“এতো রাতে ঘুমাসনি পুতুল? শাড়িও খুলিসনি। ”
রিশা কোনো উত্তর না দিয়ে ঘরে ঢুকে পরলো।হাতের জামার সেটটা মায়ের হাতে দিয়ে প্রথম অভিজ্ঞতা হিসেবে শাড়ি পড়েই শুয়ে পরলো। এতক্ষণ চোখে ঘুম না থাকলেও এখন ঘুমেরা জেঁকে বসেছে চোখের পাতায়।
তাসরিফ চলে গেলে রায়হান উপরে উঠে আসলো। অয়নের পরিহিত লুঙ্গি তার গলার মালা হয়ে পেচিয়ে আছে। আন্ডারওয়্যার পড়ায় সম্মান টুকু গাছের ডালে ঝুলে আছে।
“এই কুম্ভকর্ণ উঠ! ”
রায়হানের ধাক্কায় অয়ন বিরক্ত হয়ে বললো
“এই কে রে! কোন শালা?”
বলেই আবার ঘুমের অতলে তলিয়ে গেলো
রায়হান হাতের জগটা টেবিলে রেখে বারান্দায় দাঁড়ালো। ওর মনটা অশান্ত। মনে হচ্ছে সে তার মায়াকন্যাকে হারিয়ে ফেলবে। তবে হারিয়ে ফেলতে সে চায় না। এর জন্য যা করতে হবে সে তাই করবে নির্দিধায়। গভীর রাত ওর মা ঘুমিয়েছে জেনেও ফোন দিলো। মনকে শান্ত করতে হলে মায়ের সাথে কথা বলতে হবে এমুহূর্তেই। দুবার রিং হওয়ার সাথে সাথে রাহেলা বেগম ফোন রিসিভ করলেন
“আব্বা! তুমি ঘুমাওনি এখনো?”
“আম্মা! আপনি কালকে রসুলপুর আসবেন মায়াকন্যার জন্য। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসবেন। আমি আমার মায়াকন্যাকে হারাতে চাই না আম্মা। ”
” তোমার কি হয়েছে আব্বার? ”
“আমি শান্তি পাচ্ছি না আম্মা। যেকোনো মূল্যে মায়াকন্যাকে আমার চাই আম্মা। তুমি কাল আসবে বলো”
রাহেলা বেগম চিন্তায় পড়লেন। চিন্তিত হয়েই বললেন
“আচ্ছা আসবো আমি।”
______________
ভোরের সময় পাখির কিচিরমিচির ডাকে মুখরিত হয়ে থাকে পৃথিবী। গ্রাম্য লোকজন ভোরবেলায়ই বিছানা ত্যাগ করে নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। চেয়ারম্যান বাড়ির পরিচারিকারা আগত সকল আত্মীয়ের জন্য নাস্তা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।রায়হান,, রিফাত,, অয়ন,,সুমি,,নুপুর,, তাঈবা সহ বাকি সবাই স্নিগ্ধ সকালের প্রকৃতি দেখতে বের হয়েছে। রিশা ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। রান্নাঘরে গিয়ে তার মামীকে বললো
“রাতে তাসরিফ ভাইয়া এসেছে। ”
“বলছিস কি পুতুল? আমায় তো বলেছিলো আজকে সকালে আসবে। ছেলেটা ঘুমিয়েছে কোথায় আমায় ডাকেনি তো।”
“আমার রুমে ঘুমিয়েছে। আমি মায়ের কাছে। ”
মুর্শিদা চিন্তিত হলো
” এতো কষ্ট না করে সকালে আসলেই হতো।কি যে করে না? যা তো পুতুল চা টা নিয়ে তাসরিফ কে দিয়ে আয়। কড়া লিকারের চা খেলে মাথা ভার টা কমবে।”
চা হাতে রিশা নিজের রুমের দিকে গেলো। বিছানা খালি দেখে রিশা দম নিলো। তাসরিফ ঘুম থেকে উঠে মাথা ঝিমঝিম করায় মাথা চেপে ধরে বসেছে সোফায়। রিশা তাসরিফের সামনে দাড়িয়ে বললো
“ভাইয়া! মা চা পাঠালো তোমার জন্য। এটা নাও।”
কেউ ভালোবেসেছে জেনেও তার ভালোবাসাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে দূরে ঠেলে দেওয়া কঠিনতম অন্যায়ের। আর এই অন্যায় রিশা করতে চায় না।চা হাতে নিয়ে তাসরিফ রিশার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হলো।ঘুমঘুম কাজল মাখা চোখ,,অগোছালো চুলে রিশাকে অসাধারণ লাগছে। তাসরিফের মন বলে উঠলো
কাজলভরা চোখে, রক্তজবা ঠোঁটে
তুমি রোজ সকালে এসো….
সারাটা জুড়ে ভালো বাসবো তোমায়
তুমিও একটুখানি বেসো
“এখন যাও তুমি এখান থেকে। বাড়িতে অনেক মানুষ।”
রিশা নিজেও আর একটু না দাঁড়িয়ে চলে গেলো নিজের ঘরে। তাসরিফ চা শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নিচে নামলো। মতিন সাহেব ছেলেকে দেখে অবাক হলেন।
“তুমি কখন এসেছো তাসরিফ? ”
“রাতে আব্বু”
“ছিলে কোথায় এতক্ষণ? ডাকোনি কেনো আমাদের? ”
“পুতুলের রুমে ছিলাম। তোমাদের কে বিরক্ত করতে চাইনি আর আমার একটুও অসুবিধা হয়নি।”
মুর্শিদা ছেলেকে নামতে দেখে নাস্তা টেবিলে এনে তাসরিফ কে ডাকলো। তাসরিফ নাস্তা শেষে মতিন সাহেবের সাথে বসে বিয়ে নিয়ে আলাপ করতে লাগলো। রিশা তাড়াহুড়ো করে দোতলা থেকে নিচে নেমে মতিন সাহেবের সামনে দাড়ালো।
“মামা! আমি একটু আনন্দপুর যেতে চাই। জুইকে আর রিয়াদকে এখানে আনতে চাই এই সপ্তাহের জন্য। ”
“তুমি এতকিছুর পরও কি করে ঐ গ্রামে যেতে চাও পুতুল? আমি আর কোনোভাবেই চাই না ঐ বেয়াদব মহিলার ছায়া তোমার ওপর পরুক।”
“আমি বাড়িতে যাবো না মামা। জুইকে দিয়ে রিয়াদকে ডেকে নিবোনি।মামা আমি যেতে চাই প্লিজ না করো না মামা।”
রিশার ছোটমুখ দেখে মতিন সাহেব না করতে পারলেন না।
“কিন্তু তোমাকে একা যেতে দিচ্ছি না। তাসরিফ ওকে একটু নিয়ে যাও।এসে বাকি কথা হবে।”
তাসরিফ না করলো না। মনমোহিনীর আশেপাশে থাকতে কে না চায়।
চলবে……
[ আমার গল্পের সাথে থাকার জন্য সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ 🥰🥰 ]