#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ২৩
#Mitu-মিতু
মানুষ বলতেই হারাবে। সম্পর্কের মাঝে শূন্যতা থাকবে। যারা আমাদের জীবনে থেকে যায় তারা হয় শতজনের মাঝে একজন। তারা মিশে যায় মায়া নামক এক গভীরতা। যে গভীরতা সকল মানুষ পারি দিতে পারে না। এ গভীরতা সমুদ্র থেকেও বিশাল। এ গভীরতা ভাবনা থেকেও বৃহত্তম। এমনি এক মায়ায় জরিয়ে গেছে দু’প্রান্তে দুই ব্যক্তি রায়হান,, তাসরিফ রিশা নামক মেয়েটির ওপর। তাসরিফ সফল রিশাকে নিজের বাধনে বাধতে আর শহুরে রায়হান জানেই না তার মায়াকন্যার মনে তার জন্য একটু জায়গাও নেই। মতিন সাহেবের অনুমতিতে তাসরিফ রিশাকে নিয়ে আনন্দপুরের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। সাথী হয়েছে অনেক বছরের সঙ্গী বাই সাইকেল। গ্রাম আধুনিকতায় আবদ্ধ হলেও গ্রামে বসবাসরত মানুষদের মন সেকেলে। একটা ছেলে এক মেয়ে একসাথে থাকা মানে বাবা-মায়ের মুখে চুনকালি দেওয়ার সমতুল্য। তাসরিফ এখনকার পরিপ্রেক্ষিতে রিশাকে সাইকেলের পেছনে বসিয়ে রসুলপুর গ্রামের সীমানা অতিক্রম করলো। তবে এখন সে প্রেয়সীকে পেছনে বসিয়ে রাখতে নারাজ। মাঝপথে সাইকেল থামিয়ে রিশাকে বললো
“প্রাণপাখি! ফটাফট নেমে পরো তো। ”
সাইকেল থেকে নেমে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রিশা বললো
“এখনো অনেকটা পথ বাকি।এখানে থামলে কেনো ভা…”
“হয়েছে বাকিটুকু আর উচ্চারণ করতে হবে না। আমি হলাম প্রেকিম পুরুষ। সবসময় ভাইয়া ডেকে মনটা ভেঙ্গে দেওয়ার কোনো মানেই হয় ন। যেভাবে নেমেছো ওভাবেই আবার এখানে বসে পরো।”
তাসরিফ তার আর সাইকেলের হ্যান্ডেলের মাঝখানের জায়টায় বসতে ইশারা করে রিশাকে। রিশার বসার অভিজ্ঞতা না থাকায় আমতাআমতা শুরু করলো।
“আমার অভ্যাস নেই বসার।পরে যাবো আমি।”
“তুমি পড়ে যাওয়া মানে আমার প্রাণপাখি উরে যাওয়া। কিন্তু প্রাণপাখিকে সেফটি দেওয়ার মতো সক্ষমতা আমার আছে পুতুল। তুমি নির্ভয়ে বসো।বাকিটা আমি সামাল দিচ্ছি। ”
তাসরিফের কথায় না বলে উঠে বসলো রিশা তবে এবার সে অনুভব করলো এখানে বসা তার উচিত হয়নি। পিঠের ওপর ছড়িয়ে থাকা চুল যখন সরিয়ে ঘাড়ের একপাশে রেখে দিলো তাসরিফ তখন তার শরীরে বয়ে গেলো শিহরণ। খোলা ঘাড়ে তাসরিফের প্রতিটা নিঃশ্বাস রিশার শ্বাস আটকিয়ে দিচ্ছে। রিশার হাত হ্যান্ডেল শক্ত করে ধরায় সাইকেল সোজা রাস্তায় না গিয়ে একটু বেঁকিয়ে গেলো।ভয়ে রিশা তাসরিফের গলা জরিয়ে ধরে। চোখের সামনে উন্মুক্ত ফর্সা ঘাড় তাসরিফকেও ভেতর থেকে নাড়িয়ে দিয়েছিলো। মন চাইছিলো ঠোঁট বসিয়ে দিতে তবে সে তা করেনি। মনের আশা পূর্ন হওয়ার আনন্দ নিয়ে সে সাইকেল চালাচ্ছিলো কিন্তু রিশার খামচি দিয়ে গলা জরিয়ে ধরায় সে বেকায়দায় পরে গেছে। কোনো রকমে রাস্তার একপাশে সাইকেল থামায় সে।
“এখনি খামচাখামচি। পুতুল এমনিতেই তোর কাছে থাকলে আমি নিজ নিয়ন্ত্রণে থাকতে পারি না। চামড়া তুলে দিলি। এগুলো করার সময় আছে সেই সময়ের অপেক্ষায় ধৈর্য ধর।”
জড়িয়ে ধরায় রিশা নিজেও লজ্জায় আড়ষ্ট। তাসরিফের এমন কথায় কান দিয়ে ধোয়া বের হওয়ার জোগার। গলা ছেড়ে নেমে দাঁড়াতে গেলে তাসরিফ বাঁধা দেয়।
“সমস্যা নেই। প্রাণপাখিকে কাছে পেয়েও ছুতে পারি না বাঁধা থাকে। অসাবধানতায় একটু ছুয়ে দিলে মনে প্রশান্তিরা ডানা ঝাপটায়।”
আবারও আগের মতোই বসে দুজন পথ পেরুতে লাগলো। তাসরিফ গান ধরলো
এই পথ যদি না শেষ হয়
তবে কেমন হতো তুমি বলো তো…….
______________
দুপুর বারোটার দিকে রাহেলা বেগম রসুলপুর চেয়ারম্যান বাড়িতে হাজির। একমাত্র ছেলে হওয়ায় ছেলের আবদার তিনি ফেলতে পারেননি। মধ্য রাতে ছেলের অস্থির কন্ঠ উনাকেও অস্থির করে তুলেছে। ছেলের সুখের জন্য তিনি সেই সুদূর থেকে গ্রামে আসলেন। বিয়ে উপলক্ষে সেই সময়টাতে মতিন সাহেব বাড়িতেই ছিলেন। ইনভাইটেড করা আত্নীয়দের লিষ্ট চেক করছিলেন,,কোথাও ভুল থেকে গেলো নাকি? মাকে নিতে রায়হান বাসস্ট্যান্ডে গিয়েছিলো। আসার পথে রিশা সম্পর্কে তার জানা সকল কিছু শেয়ার করে রাহেলা বেগমের সাথে। রায়হান মতিন সাহেবকে বসার ঘরে পেয়ে খুশি হলো।রাহেলা বেগম মতিন সাহেবকে সালাম দিলেন।
“আসসালামু আলাইকুম ভাইজান।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম। কিন্তু আপনি…?”
“আঙ্কেল! আমার মা।”
রায়হানের কথায় মতিন সাহেব উঠে দাড়ালেন।
“আরে আপা। দাড়িয়ে না থেকে বসুন। কেমন আছেন…?”
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইজান। আমি এক দরকারে এসেছি ভাই।কিছু চাইতে। আমার বিশ্বাস আমায় খালি হাতে ফিরিয়ে দিবেন না।”
ততক্ষণে মুর্শিদা,,সাহেরা বানু বসার ঘরে উপস্থিত হয়েছেন। মতিন সাহেব এমন কথায় বেশ অবাক হলেন।
“বুজলাম না। কি চাইবেন আর খালি হাত?”
“আমি আপনার বাড়ির মেয়ের হাত চাইতে এসেছি। দয়া করে না করবেন না। দুদিন হয়ে গেলো ছেলেটা এখানে এসেছে এটা নিশ্চয় বুঝেছেন আমার ছেলেটা কেমন?”
চেয়ারম্যান বাড়ির বসার ঘরে মনে হলো কথার বাজ পরলো। দাড়িয়ে থাকা প্রত্যেক টা ব্যক্তি অবাক। কাল মেয়ের বিয়ে আর আজ এসেছে মেয়ের হাত চাইতে। মতিন সাহেবের অবাকের শেষ নেই বললেন
“আপনি বলছেন কি আপা? কাল আমার মেয়ের বিয়ে আর আজ হাত চাইতে এসেছেন। ”
“ভাইজান ঘাবড়াবেন না। আমি তানিয়া নয় আপনার বোনের মেয়েকে চাই আমার ছেলের জন্য। ”
উপস্থিত সবাই স্বাভাবিক হলেন। উচ্চ ঘরের ছেলে রায়হান। বাবার নিজস্ব ব্যবস্থা। এমন পরিবার থেকে আসা প্রস্তাব কয়জনই বা নাখোশ করে। রাহেলা বেগম আবার বললেন
“দয়া করে না করবেন না ভাইজান। আমার ছেলেটা মেয়েকে ভালোবেসে ফেলেছে। কাল মাঝরাতে ছেলেটা যখন বললো মেয়েটাকে তার চাই। আমি যেনো আজ সকালেই বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসি। ছেলের এমন অস্থিরতায় আমি ঠিকে থাকতে পারিনি বাড়িতে। চলে আসলাম। আমাদের সম্পর্কে না জানলে জেনে নিয়ে দেখুন।”
জুই,,রিয়াদকে নিয়ে রিশা তাসরিফ চলে এসেছে বাড়ি। তাসরিফ দরজার সামনে থেকে রাহেলা বেগমের কথায় স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ালো। মেয়ের জন্য পাত্র রেডি থাকার পরেও সেই মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব আসা তাসরিফের মতে খুব খারাপ বিষয়।রিশার দিকে কটমট চোখে তাকালো। ফিসফিস করে বললো
“তোকে আমি ছেলেদের থেকে দূরে থাকতে বলছিলাম কি এমন করলি যে দুদিনেই বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব চলে আসলো।”
তানিয়ার কথায় এ পর্যায়ে তাসরিফ মনে মনে বললো “ঘরের শত্রু বিভীষণ ”
“হ্যা আব্বু। রায়হান আমায় বলেছে রিশাকে ওর খুব পছন্দ হয়েছে। ”
“আমরা ছেলের সবকিছু জানলেও মেয়ের অনুপস্থিতিতে কোনো কথা দিতে পারছি না। বিংশ শতাব্দীতে মেয়েদের পছন্দ থাকে। আগের মতো এখন আর তাদের না জানিয়ে বিয়ে পাকাপোক্ত করা অন্যায়। মেয়ের সাথে কথা বলবো তারপর সবকিছু ”
হাঁটার শব্দে সবাই দরজার দিকে খেয়াল করলো। তাসরিফ কে দেখে মতিন সাহেব বললেন
“রিশার সম্বন্ধ এসেছে। ছেলে ভালো,,অপছন্দ হওয়ার মতো কিছু নেই। তুমি কি বলো?”
রিশার মনে হলো ওর মামা সিংহ কে জিজ্ঞেস করছে
“সিংহ ভাই তুমি এতো গর্জন দেও কেনো?”
তাসরিফের তো এবার রীতিমতো কান দিয়ে রাগের ঝাঁজ বের হচ্ছে। এতোদিন বিয়ে কর বলে পাগল করে ছাড়লো। যাকে বিয়ে করতে চাই তার বিয়ের মতামত আবার আমার কাছে চাওয়া হচ্ছে। মতিন সাহেবের দিকে তাকিয়ে বললো
“বাড়িতে এক বিয়ে হচ্ছে আগে সেটা কমপ্লিট হোক। আর রিশা তো মাত্র H.S.C দিলো। পড়াশোনাটা আরেকটু এগিয়ে যাক। বিয়ের কথা পরে ভাবো।”
রাহেলা বেগম বললেন
” বাবা পড়াশোনাটা আমার বাড়ি থেকে ও চালিয়ে যেতে পারবে কোনো বাঁধা আসবে না।চাইলে আংটি পরিয়ে রাখতে পারি। বিয়েটা না হয় পরে হল।”
তাসরিফের মনে হচ্ছে সবাই কোমড়ে কাপড় বেধে নেমেছে বিয়ের জন্য।
“আন্টি বিয়ে নিয়ে পরে কথা হবে। বাড়ির বিয়ে শেষ হোক।”
রিশার দিকে তাকিয়ে বললো
“জুই,,রিয়াদকে নিয়ে ঘরে যা।”
রিশা না দাঁড়িয়ে ওদের কে নিয়ে ঘরে চলে গেলো। সে ভয়ে ছিলো তার মামা বিয়েতে রাজি হয় নাকি? আরোও ভয় পাচ্ছে তাসরিফের কথা শুনলে সবাই কেমন রিয়েক্ট করবে। কাল মেয়ের বিয়ে তাই মতিন সাহেবও এখন অন্য কিছু ভাবতে চাচ্ছেন না। রাহেলা বেগমকে বললেন
“আপা। তাহলে বাড়ির বিয়ে সম্পূর্ণ হোক। অনেক কাজ এখানো বাকি এর মধ্যে অন্য কিছু ভাবতে চাচ্ছি না। আর আপনি বিয়ে সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত থেকে গেলে খুশি হবো।”
“তাহলে ভাইজান! আমি বিয়েটা সম্পূর্ণ হলেই বরং আসি। আর আজ আমি উঠি। ছেলের বাবা বাড়িতে নেই,,অফিসে আছে। কাউকে বলে আসিনি আমি। ”
তানিয়ার মাথায় হাত রেখে বললেন
“দোয়া করি মা।সংসার জীবনে সুখী হও।”
“আন্টি আজ থেকে যান প্লিজ।”
“না মা। আমি আজ থাকবো না। বাড়িতে কেউ নেই। তোমার আঙ্কেলকে বলে আসিনি।”
মুর্শিদা রাহেলা বেগমের নাস্তার ব্যবস্থা করেছে। রাহেলা বেগমকে বিকেলে যেতে বলা হলেও তিনি নাস্তা শেষে চেয়ারম্যান বাড়ি থেকে বের হলেন। রায়হান সাথে গেলো স্ট্যান্ড পর্যন্ত।
____________
“ও মামাশ্বশুর! ভাগ্নীর জন্য এতো পারফেক্ট পাত্র রেখে অন্য দিকে নজর দিচ্ছেন কেনো? এতো বড় আমিটাকে দেখতে পান না?”
ছেলের কথায় মতিন সাহেবের চোখ কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।
চলবে……
[ আমার মন খারাপ ☹️ ফলোয়ার্স কম থাকলেও এতোদিন পেজের রিচ ছিলো ভালো কিন্তু এখন তার এক আনাও নেই। প্রিয় পাঠক /পাঠিকা আপনারা নিজ নিজ দায়িত্বে কার্টেসীসহ গল্পটা শেয়ার করবেন প্লিজ☹️]