তুমি আমার প্রাণ পর্ব -২৬ ও শেষ

#তুমি আমার প্রাণ
#পর্বঃ বোনাস+শেষ
#Mitu-মিতু

কনে বিদায় বাবা-মায়ের কাছে বেদনাদায়ক এক মুহূর্ত। জন্মগ্রহণ করার পর থেকে বাবা-মায়ের স্নেহের চাদরে বেড়ে ওঠা কন্যা সকল মায়ার বাধন ছেড়ে নতুন এক পরিবারে গমন করে নয়ন ভরা হাজারো স্বপ্ন নিয়ে। মাগরিবের নামাজ শেষে চেয়ারম্যান বাড়ির সকল সদস্য সেই বেদনাদায়ক মুহুর্তের সম্মুখীন হয়। মুর্শিদা বেগম মূর্ছা যাচ্ছেন বারবার। মতিন সাহেবের কান্না আটকানোর সকল প্রকার চেষ্টার ব্যর্থ হয়ে চোখ বেয়ে পানি পরছে। তানিয়া মতিন সাহেবকে জরিয়ে ধরে কান্না করছে। তাসরিফের চোখ লাল হয়ে আছে। কান্না আটকানোর প্রচেষ্টা তার মধ্যেও। একটু দূরে দাঁড়িয়ে থাকা তাসরিফ বোনের পাশে দাড়িয়ে বোনকে জরিয়ে ধরলো। তানিয়া বাবাকে ছেড়ে ভাইকে ধরে এবার কান্না শুরু করে। জুই রিশার কান্না থামাতে ব্যস্ত। নয় বছর বয়সে রিশা রসুলপুর চেয়ারম্যান বাড়িতে আসলে তানিয়া তাকে ছোট বোনের মতো আগলে নেয়। ছোটবেলায় তার খেলাতে সঙ্গ দেওয়া বন্ধুর বিদায় তার কাছে বড় কষ্টের। সাহেরা বানু মুর্শিদা বেগমকে ধরবেন নাকি যাকে ঘিরে মেয়ের দুঃখ ভুলতেন তার জন্য কান্না করবেন। তাসরিফ তানিয়াকে বললো

“কাঁদে না বনু। অনেক কেঁদেছিস আর কাঁদতে হবে না। কালকেই তো আমরা তোকে আনতে যাবো। শুধু রাতটাই তো। দ্যাখ তোর কান্নায় সবাই কাঁদছে। তুই কি চাস তোর জন্য সবাই কাঁদুক?”

ইরফান বেচারা মনের রানীর কান্না সহ্য করতে পারছে না। দীর্ঘ চার বছরের সম্পর্ক আজ পরিপূর্ণতা পেলো। তানিয়ার একপাশে দাঁড়িয়ে সে প্রেয়সীর দিকে তাকিয়ে আছে। কি করলে কান্না থামবে সেই পথ না খুজে পেয়ে তাসরিফ কে বললো

“ভাইয়া! এবার ওকে নিয়ে যাই। ও যতক্ষণ এখানে থাকবে আপনাদেরকে দেখবে ততক্ষণ কান্না থামবে না।”

তানিয়ার আশেপাশে কোনো হুঁশ নেই। ইচ্ছে করলেই বাবা কে দেখতে পাবেনা যখন -তখন,, মায়ের হাতে খেতে পারবে না,, ফুপির হাতের প্রিয় খাবার খেতে পাবে না ভেবেই সে আরো বেশি ভেঙ্গে পরছে।তাসরিফ ইরাফানের কথায় সহমত হলো। বোনকে নিয়ে মায়ের কাছে গেলো বিদায় নিতে। মুর্শিদাকে অনেক বুঝানোর পর শান্ত করা গেলেও মেয়েকে দেখে আবার চোখ দিয়ে পানি ফেলতে লাগলেন। তানিয়া মায়ের বুকের সাথে অনেকক্ষণ মিশে থাকলো। বাবা-মা,,ভাইয়ের হাত ধরেই বরের গাড়িতে উঠে বসলো। ইরফান সবার থেকে বিদায় নিয়ে চেয়ারম্যান বাড়ি ত্যাগ করলো।

____________

রাত ১২ টা……

বোনের বিয়েতে আমন্ত্রিত তাসরিফের সকল বন্ধু আজকে রাত চেয়ারম্যান বাড়িতে কাটাবে। দূরসম্পর্কের কিছু আত্মীয় বিয়ে শেষে চলে গেছেন। তানিয়ার বন্ধু -বান্ধবীরা চেয়ারম্যান বাড়িতেই আছে। কাল ফিরনি শেষে তারাও চলে যাবে। রাতের খাওয়া দাওয়া শেষ করে সবাই ঘুমাতে গেলো। মতিন সাহেবের প্রেসারফল হওয়াই ঔষধ নিয়ে তিনি আগেই ঘুমিয়ে গেছেন। মুর্শিদাকে জোর করে একটুখানি খাইয়ে সাহেরা বানু ঘরে পাঠালেন। রিশা তাসরিফের বাসরের আয়োজন ওর মামাতো ভাই-বোন করতে চাইলেও তাসরিফ মানা করে দেয়। মূলত রিশার কান্না দেখেই সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আটাশ বছরের তাগড়া যুবক নিজ বিছানায় নিজের প্রেয়সীকে দেখলে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারবে না নিজেকে। সেই সময়ের জন্য রিশা প্রস্তুত নেই ভেবেই মানা করেছে। তাসরিফ বন্ধুদেরকে নিয়ে ছাদে অবস্থান করলো সাথে ওর মামাতো ভাইয়েরা আছে। রায়হানের কাছে এখানের প্রতিটা মুহুর্ত কষ্টদায়ক হলেও প্রিয় বান্ধবীর মুখে হাসি দেখার জন্য থেকে গেছে চেয়ারম্যান বাড়ি। রিয়াদ চলে যেতে চাইলেও তাসরিফ নিজের সাথে রেখে দিয়েছে রিশা জানলে কষ্ট পাবে বলে। জুইকে সাথে নিয়ে রিশা নিজের ঘরে ঘুমিয়ে পরেছে। তাসরিফদের সারারাত জেগে থাকার পরিকল্পনা।

_________

পরের দিন সকালে…….

চেয়ারম্যান বাড়ির সকলের মাঝে ব্যস্ততা। শুধুমাত্র রাতটা তানিয়া বাড়িতে নেই তাতেই মনে হচ্ছে কত যুগ ধরে তাকে দেখে না। তাকে দেখতে সবার ভেতরে অধীর আগ্রহ। রিশা রিতীমত লাফাচ্ছে। সকালের খাওয়া দাওয়া শেষে তৈরী হতে শুরু করলো সবাই। বরের বাড়ির ছেলেদের মাথা নষ্ট করার জন্য মেয়েদের মধ্যে চলছে সাজগোজের প্রতিযোগিতা। ফিরনিতে মতিন সাহেব,, সাহেরা বানু,, মুর্শিদা ও তানিয়ার মামা-মামী বাদে পঞ্চাশ জনের মতো মানুষ যাবে। সকাল থেকে রিশা,,তাসরিফ কেউ কারো সাথে দেখা করেনি। রিশা জুইয়ের সাথে নিজ ঘরে কথা বলছিলো সাজ নিয়ে। কথার মাঝেই রিয়াদ এসে জুইকে ডাকলো

“আপু! একটু বাইরে এসো তো। বড়আম্মা তোমায় ডাকছে। ”

“মা ওকে এখন কেনো ডাকছে? ”

রিশার কথার প্রতিত্তোরে রিয়াদ বললো

“আমায় বলেনি তবে জরুরি কাজে ডেকেছে। আমায় বলেছে খুব শীঘ্রই যেনো জুই আপু যায়। ”

“আমিও যাচ্ছি ওর সাথে। কেনো ডেকেছে জেনে আসি।”

রিয়াদ তড়িঘড়ি করে বললো

“তোমাকে ডাকেনি আপু তুমি থাকো। জুই আপুকে নিয়ে আমি যাবো আর আসবো।”

বলেই জুইয়ের হাত ধরে টেনে নিয়ে রিয়াদ ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো।রিশা অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

“আমি গেলে কি হতো? কি এমন দরকার আছে জুইয়ের সাথে মায়ের।”

রিশা ঘরে থেকে বের হতে উদ্যত হলেও দরজার কাছে এসে বাঁধা পায়। কোথা থেকে তাসরিফ এসে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। তাসরিফের হুট করে আসায় রিশা ভয় পেয়ে যায়। জুইকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়ার বুদ্ধি তাসরিফ-ই রিয়াদকে দিয়েছে। রাত থেকে সকাল দশটা পর্যন্ত প্রাণপাখির দেখা না পাওয়ায় তাসরিফের ভেতরটা উতলা হয়ে উঠেছে। মন বলছে যা প্রেয়সীকে দেখে কলিজা শান্ত কর।তাসরিফ কিছু না বলে নিজের হাতের ব্যাগটা বিছানায় রেখে রিশাকে জরিয়ে ধরে ঘাড়ে মাথা রাখলো। কথা বিহীন কাটলো অনেকটা সময়। তাসরিফের গরম নিঃশ্বাস রিশাকে অস্থির করে তুলছে। তাসরিফ ঘাড়ের সাথে ঠোঁট ঘসতে ঘসতে মোলায়েম কন্ঠে বললো

“বউ আমার!”

এটুকুই যথেষ্ট রিশার নিঃশ্বাস আটকে দেওয়ার জন্য। হাত গুটিয়ে রাখলেও এবার সে তাসরিফের পিঠে হাত রাখলো। ঘাড়ে বারবার ঠোঁট ছোঁয়ায় রিশা কেঁপে কেপে উঠছে। কিছুক্ষণ পর তাসরিফ ঘাড় থেকে মাথা তুললো

“এতোদিন তুমি দূরে থাকলেও মনকে বুঝ দিয়ে দমিয়ে রাখতাম কিন্তু এখন আর পারছি না। কেমন নেশার মতো টানছো আমায় তুমি। ভালোবাসি প্রাণপাখি আমার।খুব ভালোবাসি। ”

কপালে চুমু দিয়ে আবার জরিয়ে ধরলো রিশাকে। রিশার ঠোঁটে প্রাপ্তির হাসি। তাসরিফের মুখের ভালোবাসি কথাটাই যথেষ্ট ওর ভালো থাকার জন্য।

“এমন জোরে জোরে শ্বাস ফেলছো কেনো? আমার মন যেমন তোমাকে চায় তেমনটা তোমার মন চায় তো?”

তাসরিফ ফের রিশার ঘাড়ে মুখ ডোবালে ও কেপে উঠে।

“রেডি হতে হবে। সবাই তৈরি হয়ে গেছে। ”

“গতরাতে ছাড় দিলেও আজ কিন্তু ছাড় নেই। নিজেকে প্রস্তুত রেখো আমার জন্য। আজ আমি ঘরের রাণীকে ঘরে চাই। ”

ঠোঁটে হালকা পরশ দিয়ে তাসরিফ নির্বিঘ্নে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। রিশার পুরো মুখ লাল আবরণে ঢেকে গেছে। তাসরিফের সাথে একান্তে থাকার কথা ভাবলেই তার দম আটকে আসে। তাসরিফ যাওয়ার কিছুক্ষণ পর জুই ঘরে আসলো। রিয়াদ ওকে নিয়ে বের হয়ে যাবার পর তাসরিফের রিশার সাথে দেখা করার কথা বলেছে।

“আর লজ্জায় লাল নীল হতে হবে না। তাড়াতাড়ি করে তৈরি হয়ে নে ওদের সবার হয়ে গেছে। ”

রিশা তাসরিফের রেখে যাওয়া ব্যাগ হাতে নিলো। ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো নেভী ব্লু কালার সুন্দর লেহেঙ্গা। জুই উল্টে-পাল্টে দেখে বললো

“বাহ! দুলাভাই এর পছন্দ আছে বলতে হয়। বউয়ের জন্য কি সুন্দর পোশাক এনেছে। ”

রিশা কিছু বললো না। জুইয়ের সাহায্যে সে তৈরি হয়ে নিলো। জুই বাড়ি থেকে আনা গোল্ডেন কালার ফ্লোর টাচ গাউন পরেছে। দুজন একসাথে দোতলা থেকে নিচে নামলো। তাসরিফ রিশার সাথে মিলিয়ে নেভী ব্লু শার্ট,,প্যান্ট পরেছে। হাতে মোটা বেল্টের কালো ঘড়ি,, চুলগুলো সুন্দর করে গুছিয়ে রাখে। সবমিলিয়ে রিশা মনে মনে বললো

“মিঃ পারফেক্ট”

সনামধন্য মতিন সাহেব মেয়ের বিয়েতে কোনো কার্পন্যতা করেননি।আত্মীয়দের যাওয়ার জন্য দুটো বাসের ব্যবস্থা করেছেন আর আসার সময় মেয়ে ও মেয়ে জামাইয়ের জন্য মাইকো। সবাই বাড়ি থেকে বের হয়ে নিজেদের স্থান ঠিক করে নিলো। বাবা-মায়ের থেকে বিদায় নিয়ে তাসরিফ,, রিশা,,মাইকোতে বসলো। তানিয়ার সকল বন্ধুদের আপ্যায়নে কোনো ত্রুটি রাখেননি মুর্শিদা ও সাহেরা বানু তাদের মেয়ের অবর্তমানে। সবাই রওনা দিলো ইরফানের বাড়ির উদ্দেশ্যে।

________

তাসরিফরা দুপুর দইটার দিকে তানিয়ার বউভাত অনুষ্ঠানে উপস্থিত হলো। একটা রাত তানিয়া বাড়ি থেকে আলাদা ছিলো। তার জন্য তৈরি করা স্টেজ থেকে ভাইকে আসতে দেখে দৌড়ে ভাইয়ের কাছে গেলো। পেছন থেকে ইরফান হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে বললো

“আরে সাবধানে। পরে যাবে তো।”

কে শোনে কার কথা। তানিয়া ভাইকে জরিয়ে ধরে কেঁদেই দিলো। তাসরিফ বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো

“বনু! আবার কাঁদছিস। তোকে কান্নার জন্য এখানে পাঠাইনি কিন্তু। ”

তানিয়া কিছু না বলে তাসরিফের পাশে দাড়িয়ে থাকা রিশার কাছে গিয়ে ওকেও জরিয়ে ধরে বললে

“কেমন আছিস পুতুল? ”

এটুকুই যথেষ্ট রিশার চোখে পানি আসার জন্য। রিশার কান্না দেখে তাসরিফ মৃদু ধমক দিলো

“এই তুই আবার ছিদকাদুনির মতো কান্না শুরু করিস না। ”

হালকা হেসে রিশাকে ছেড়ে নিজের বন্ধুদের কাছে গেলো তানিয়া। রায়হানের মুখোমুখি হয়ে জিজ্ঞেস করলো

“কেমন আছিস রায়হান? ”

ছোট করে হাসি দিয়ে রায়হান উত্তর দিলো

“এইতো বিন্দাস আছি। তোর কথা বল কেমন লাগছে শ্বশুর বাড়ি। ”

রায়হানের মুখের কৃত্রিম হাসিতে তানিয়া কষ্ট পেলো।

“I am sorry রায়হান। আমি ভাইয়ুর কথা জানতাম না।জানলে তোকে আগেই মানা করতাম। সবকিছু তুই ভুলে যা প্লিজ। নতুন করে আবার শুরু কর সবকিছু। ”

“নতুনের কথা এখন ভাবছিনা আর তুই কষ্ট পাস না এতে কারো কোনো হাত নেই। সব ওপরওয়ালার ইচ্ছেতেই হয়েছে। ”

বন্ধুর কষ্টে তানিয়া কষ্ট পাচ্ছে কিন্তু তার করার কিছু নেই। সে তার ভাইয়েরও সুখ দেখতে চায়। সবার সাথে ইরফান,, তানিয়া কুশল বিনিময় করলো। খাওয়া দাওয়া শেষ করে শ্বশুর-শ্বাশুড়ি থেকে বিদায় নিয়ে ইরফানের হাত ধরে বাবার বাড়ির পথ ধরলো তানিয়া।

__________

সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাসরিফরা বাড়ি এসে পৌছালো। গোটা একটা দিন পর মেয়েকে কাছে পেলেন মুর্শিদা। এতক্ষণ তিনি ব্যাকুল হয়ে দরজার দিকে বারবার তাকাচ্ছিলেন। এই বুঝি তানিয়া এসে আম্মু বলে জরিয়ে ধরলো। বাবা-মাকে পেয়ে তানিয়া এতক্ষণের হওয়া সকল মন খারাপ ভুলে গেলো। মায়ের সাথে মিশে বসে থাকলো ঘন্টাখানেক। মতিন সাহেব মেয়ের পাশেই বসে ছিলেন। রাতের খাবার শেষে ভাইয়ের ঘরের দিকে গেলো তানিয়া। ভাইকে ছাদে পাঠিয়ে বন্ধু -বান্ধবী আর ইরফানের সাহায্যে তাসরিফের ঘরটা বাসরঘর বানিয়ে ফেললো। বছর দুয়েক আগে ভাইয়ের ঘর গুছাতে এসে তাসরিফের আলমারিতে কালো শাড়ির কম্ব প্যাকেট দেখেছিলো। বিষয়টা এতোদিন সে গোপনেই রেখেছিলো। বাসর ঘর সাজানো শেষ হলে আলমারি থেকে প্যাকেট টা নিয়ে সুমিকে সাথে করে রিশার ঘরে যায় তানিয়া। জুইয়ের সাথে গল্প করছিলো রিশা।

“পুতুল চটপট উঠে হাত-মুখ ধুয়ে আয় তো।”

রিশা অবাক হয়ে বললো

“কেনো আপু?”

“কথা কম কাজ বেশি। যেটা বলেছি সেটা কর।”

চঞ্চলা তানিয়ার এমন রাশভারি গলায় রিশা অবাক হলো। কথা না বাড়িয়ে বাথরুমে গেলো।রিশার ওমন অবাক হওয়া মুখ দেখে সবাই হেসে ফেললো। রিশা বের হলে তানিয়া আর সুমি মিলে রিশাকে সাজাতে শুরু করে। জুই বসে থেকে সব দেখছিলো আর গল্প করছিলো।রিশা ওদের শাড়ি পড়ানো দেখে সকালে তাসরিফের বলা কথা মনে পরলো। শিরশিরানি এক অনুভূতি বয়ে গেলো পিঠ বেয়ে। প্যাকেটে কালো শাড়ির সাথে ম্যাচিং কানের দুল,,নেকলেস,, নুপুর সব ছিলো। শাড়ি পড়ানো শেষে হালকা মেক-আপ করে দিলো তানিয়া। সাজ পরিপূর্ণ হলে রিশাকে তাসরিফের ঘরে নিয়ে যাওয়া হয়। ফুল দিয়ে সাজানো ঘর দেখে রিশার গলা শুকিয়ে আসলো। পরিকল্পনা অনুযায়ী রিশাকে ঘরে বসিয়ে দরজার সামনে দাড়ালো সবাই। তাসরিফ ইরফানের সাথে তাদের কর্মক্ষেত্র নিয়ে গল্প করছিলো। তানিয়ার ম্যাসেজে তাসরিফ কে নিয়ে নিচে নেমে আসলো ইরফান।নিজের ঘরের সামনে এতোজনকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তাসরিফ জিজ্ঞেস করলো

“কি হয়েছে এখানে? তানিয়া এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”

“ভাইয়ু! কথা কম বলে ফটাফট দশ হাজার টাকা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করো।তোমার জন্য সারপ্রাইজের ব্যবস্থা করেছি।”

বুঝতে সময় লাগলো না তাসরিফের। সবার সামনে হাসি প্রকাশ করতেও পারলো না।

“কিন্তু আমার কাছে এখন এতো টাকা নেই তো। পরে নিস।”

“হবে না ভাইয়ু। টাকা দেও ঘরে যাও।”

“বিকাশ থেকে ট্রান্সপার করলে চলবে?”

“চলবে না দৌড়বে। ”

বোনের ছেলেমানুষীতে হাসলো তাসরিফ। বিকাশ থেকে টাকা ট্রান্সপার করতেই সবাইকে নিয়ে চলে গেলো তানিয়া। তাসরিফ ঘরে প্রবেশ করে বেশ অবাক হলো। এতোটাও অনুধাবন করেনি সে। চারিদিকে ফুল দিয়ে সাজানো। বিছানা তাজা ফুলে ভর্তি। বিছানা খালি,,কোথাও রিশাকে না দেখে বারান্দায় গেল তাসরিফ। প্রাপ্তবয়স্ক রিশার ভেতর চলছে অনুভূতিদের ঝড়।অস্থিরতাকে দমাতে সে বারান্দায় এসে দাড়িয়েছে। শাড়ির ফাঁক গলিয়ে একজোড়া হাত রিশাকে পেছন থেকে জরিয়ে ধরলে রিশা কেঁপে উঠে। রিশার ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে শ্বাস টানলো তাসরিফ। শাড়ির আঁচল খামচে ধরে রিশা।

“এই শাড়ি কোথায় পেলে?”

“তানিয়া আপু দিয়েছে। ”

ঘাড়ে ঠোঁট স্পর্শ করে তাসরিফ বললো

“এটা আমার প্রথম বেতনে কেনা। তোমার জন্য এনেছিলাম। আরোও একটা জিনিস আছে। এখানে দাঁড়াও আনছি আমি”

তাসরিফ রিশাকে ছেড়ে ঘরে এসে আলমারিতে রাখা একটা বক্স বের করলো। একটা সোনার কোমড় বন্ধনী বের করে রিশার সামনে হাটুমুড়ে বসলো। শাড়ি সরিয়ে নিজ হাতে পরিয়ে দিয়ে নগ্ন পেটে ঠোঁট চেপে ধরে। রিশা বারান্দার রিলিং চেপে ধরলো। রিশার কম্পন তাসরিফ কে বেসামাল করছে।উঠে দাড়িয়ে রিশাকে জরিয়ে ধরে কানে কানে বললো

“অনেক অপেক্ষা করেছি আর পারবোনা। এবার তোমাকে নিজের করে পেতে চাই। প্রাণপাখি আমার।”

রিশা চোখ বন্ধ করে আছে। তাসরিফ রিশার গলায় মুখ ডোবালে রিশা তাসরিফের পিঠ আকরে ধরে। তাসরিফের হাতের বেসামাল স্পর্শ তাকে কাতর করে তুলছে। নিজ নিয়ন্ত্রণ অতিক্রম হলে তাসরিফ রিশাকে পাজকোলে তুলে নিয়ে ঘরে ফুলে সজ্জিত বিছানার দিকে অগ্রসর হয়। রিশাকে শুইয়ে নিজের পরিধান কৃত শার্ট খুলে ফেলে। আলোর সুইচ বন্ধ করে রিশার দিকে আগ্রাসী হয়। রিশার ওপর নিজের ভর ছেড়ে পুনরায় গলায় মুখ ডোবায় দুষ্টুমি করে বলে

“ভয় পাচ্ছো প্রাণপাখি?”

রিশার ভেতরে উতালপাতাল শুরু হয়েছে। বুক ধুকপুক করছে। তাসরিফের স্পর্শে সে নিজের মধ্যে নেই। উত্তরে কিছু বললো না। তাসরিফ আবার বললো

“তুমি ঐ গানটা বলতে পারো প্রাণ ”

তুমি দিও না গো বাসর ঘরে
বাতি নিভাইয়া

সমাপ্ত ______________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here